কাজের মেয়ে যখন ঘরের বউ♥ পার্ট :০৪

0
2593

কাজের মেয়ে যখন ঘরের বউ♥
পার্ট :০৪
লেখক : নাদিম আহাম্মেদ

সকাল সকাল ঘুমটা ভেংঙ্গে গেলো । মামনি অবশ্য ফজরের নামাজ পড়ার জন্য ডেকেছিলো । কিন্তু নামাজ পড়তে যায় নি । কেমন জানি নামাজ পড়ি না । অাগে মানে ছোট থাকতে নামাজ ঠিকমতো অাদায় করতাম । কিন্তু এখন কেমন জানি শয়তানের নানা হয়েগেছি ।
ঘুম থেকে উঠে ঘড়ির দিকে তাকালাম । দেখি সকাল ৬ঃ৫০ বাজে । ব্রাশ করার জন্য ওয়াশ রুমে চলে এলাম ।
অতঃপর
ফ্রেশ হয়ে রুমের দিকে চলে গেলাম ।
রুমের দরজার কাছে গিয়ে থেমে গেলাম । তারিন কোরঅান শরীফ তেলোয়াত করছে । বাহ্ খুব সুন্দর লাগছে কোরঅান শরীফ তেলোয়াত ।
তারিন অাসলে খুব ভালো মেয়ে । কাল থেকে যতটুক দেখছি তা বুঝে বলছি ।
অামি দরজার কাছে দাড়িয়ে কোরঅান শরীফ তেলোয়াত শুনতেছি । কোরঅান শরীফ তেলোয়াত শুনতে লাগলাম মন দিয়ে ।
হঠাৎ অার শুনতে পেলাম না কোরঅান শরীফ তেলোয়াত । ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ০৭ঃ৩৮ বাজে । মানে প্রায় ২০ মিনিট দাড়িয়ে ছিলাম । মানে ২০ মিনিট ধরে কোরঅান শরীফ তেলোয়াত শুনতে ছিলাম ।
কেমন জানি মনের ভেতর শান্তি এলো । কেমন জানি মনটা ফ্রেশ হয়ে গেলো বুঝতে পারলাম না ।
হঠাৎ কারও ডাকে চুমকে উঠলাম ।
—এই যে এখানে দাড়িয়ে অাছেন কেনো ভেতরে আসেন ।
.
অামি তারিনের দিকে তাকালাম । কেমন জানি একটা ভালো লাগছে । সেটা কি বুঝতে পারছিনা । কাল তো এরকম লাগছিলোনা । তার মানে কাল সুন্দরী ছিলো না । অাজ সেই রকম লাগছে । হয়তো সবার মতো ফর্সা চেহারা না । একটু কালো মানে শ্যামলা । তবুও সব সুন্দরীকে হার মানাবে । কি এমন কাজ করেছে যেটা তার চেহারা , তার সুন্দর্য ফুঁটে উঠেছে ।
অাবারও তারিন বললো ,
—কি হলো সমস্যা নাই ভেতরে আসেন । অামি চলে যাচ্ছি ।
.
কি বলবো বুঝতে পারছি না ।
তখন তারিন অাবার বললো ,
—অারে কালকের জন্য এখনো রাগ করে অাছেন । অাসলে গ্রামে মানুষ তো তাই বিশ্বাস করতে পারি নাই ।
.
অামি তারিনের চোখের দিকে এক পল্কহীন ভাবে তাকিয়ে অাছি । সেটা সে বুঝতে পেরেছে । কিন্তু কিছু বলছে না । সে বুঝতে পারছেনা । অামি এমন করে তাকানোর কি রহস্য ।
তখন তারিন অাবার বললো ,
—অাপনি ভেতরে অাসেন অামি চলে যাচ্ছি ।
—অারে সেরকম কিছু হয়নি । অাচ্ছা অাপনার কি কোরঅান শরীফ তেলোয়াত করা শেষ ।
.
তারিন মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো ,
—কেনো ? অাপনি কি অামার কোরঅান শরীফ তেলোয়াত শুনিতেছিলেন ।
—না মানে হ্যা শুনিতেছিলাম ।
—ও । অাপনি কোরঅান শরীফ তেলোয়াত করতে পারেন না ।
—না মানে অামি পারি না ।
—কেনো অাপনাদের এখানে হুজুর বা মক্তব বা মাদ্রাসা নাই ।
—হুমম মাদ্রাসা ছিলো কিন্তু ভালো লাগে নি পড়তে তাই অব্বু জোর করে নি আর আমিও পড়ি নি ।
—ও সমস্যা নাই শিখে নিবেন ।
—এখন আর এই বয়সে ইম্পসিবল । অামাকে দিয়ে হবে না ।
—অারে এই বয়সে মানে । অাপনি জানেন না যে শিক্ষার কোনো শেষ নাই অার শেখার কোনো বয়স নেই । যে কেউ যেকোনো বয়সে শিক্ষা নিতে পারে সে ছোটট বয়সে হোক বা যুবক হোক বা ববয়স্ক মানুষ হোক তার যদি ইচ্ছে থাকে তাহলে শিখতে পারবে । তেমনি অাপনারও ইচ্ছা হয় তাহলে শিখতে পারবেন । অার প্রতেক মুসলমানের উচিত কোরঅান শরীফ শিক্ষা করা । অাল্লাহুর হুকুম সঠিক মতো পালন করা । অার হুজুর পাক ( সঃ ) এর দেখানো পথে চলা তাহলে সে জান্নাতে যাবে । তেমনি অাপনারও কোরঅান শিক্ষা করা জরুরী ।
.
তারিনের কথাটা মন দিয়ে শুনছিলাম । বাহ্ অনেক সুন্দর করে কথা বলে তো । অাসলে তারিন তো ঠিক বলেছে ।
—ইনশা অাল্লাহ চেষ্টা করবো ।
—শুধু চেষ্টা করলে হবে না । যেরকম অফিসের কাজকর্ম করছেন সেরকম ভাবে এটাতে পরিশ্রমী করতে হবে ।
—ঠিক অাছে দেখা যাক ।
—অাল্লাহ অাপনাকে কোরঅান শরীফ তেলোয়াত করার তৌওফিক দান করুক । অামিন ।
.
অামি তার দিকে তাকিয়ে অাছি । সে তো খুব ভালো ।
তখন তারিন অাবার বললো ,
—কেউ যদি ভালো কিছু বা দোয়া করে তখন অামিন বলতে হয় । যেরকম অামি বললাম সেরকম ভাবে কেউ বললে অামিন বলবেন ।
—অামিন বললে কি হয় ।
—অারে অাপনি এটাও জানেন না । অামিন বললে অাল্লাহ কবুল করুন । মানে অামিন মানে অাল্লাহুর কাছে কবুল করেন এরকম বলা ।
—ও ।
—ও অাপনার সাথে কথা বলতে বলতে অনেক দেরি হয়েগেছে । রান্না করতে হবে ।
—মানে অাপনি রান্না করবেন কেনো । কাজের মেয়ে তো অাছে ।
—অারে অামি কাজের মেয়ের মতো সব কাজ করতে পারি । তাই বলে দিছি একটা কাজের মেয়ে দরকার ছিলো তাকে লাগবে না । অামি কাজের মেয়ের সব কাজ করে দিবো । বলতে পারেন কাজের মেয়ে ।
—অাপনি কাজের মেয়ের কাজ করবেন ।
—হ্যা তাতে কি হয়েছে । অামি এ বাসায় এসেছি থাকবো তাতে অনেক খরচ হবে এতে কাজের মেয়ের মতো কাজ করলে কিছুটা খরচ কোমে যাবে ।
—অাপনাকে ছোটমা কাজ করতে দিবেনা ।
—অারে সমস্যা নেই অান্টিকে বলেছি সে প্রথমে না করেছিলো কিন্তু আমি বলাতে বলেছিলো তুমি এখানে থেকে পড়াশোনা করবে তাছাড়া এগুলি করার জন্য কাজের মেয়ে আসবে কাল থেকে । তখন আমি বললাম সমস্যা নেই । অামি সব করতে পারি সো আমার জরাজরিতে না করে দেয় কাজের মেয়েকে ।
—ও ।
—ওহ্ মনে নেই অাপনার অফিস ১০ টার দিকে অার অামি কথা বলে যাচ্ছি । অাচ্ছা পর কথা হবে ।
.
বলে চলে গেলো । অামি তার চলে যাওয়া দেখছি । মেয়েটা অনেক জ্ঞানী । কিভাবে সব কথা গুছিয়ে বললো ।
অামি রুমের ভেতর চলে গেলাম । রুমে এসে অবাক হলাম । এটা কি অামার রুম নাকি ভুল করে অন্য কোনো রুমে চলে এসেছি ।
সবচায়তে বেশি অবাক হলাম বিছানা দেখে । কাল রাতে যেরকম করে রেখে দিয়েছি সেরকম ভাবে গোছানো । তাহলে কি বিছানা বাধে সব কিছু গুছিয়ে রেখেছে ।
বাহ্ অসাধারণ এক ঘর বানিয়েছে ।
তাহলে সে কি বিছানা না শুয়ে ফ্লোরে শুয়েছিলো । সেরকম ভাবে তো শুয়েছিলো না । ফ্লোরে তো কিছু বিছানো নেই যে তার উপর শুয়ে থাকবে । তাহলে সারারাত কি করেছে । নাকি সারারাত অামারটা গুছিয়েছে ।
পিছনের দিকে তাকাতে বুঝতে পারলাম ছোঁফায় ঘুমিয়ে ছিলো । বালিশটা দেখে বোঝা যাচ্ছে ।
যাক সে কথা এখন অফিসের কিছু কাজ করা যাক । আরে ল্যাপটপ তো অানি নাই ।
অতঃপর
সেই রুমে থেকে ল্যাপটপ নিয়ে এলাম ।
তারপর অফিসের কাজ মন দিয়ে করতে থাকলাম ।
কিছুখন অফিসের কাজ শেষ করে শুয়ে পরলাম ।
তখন ফোনটা ব্রাইব্রেটের শব্দে ফোনটা বুন বুন করে উঠলো তখন ফোনের দিকে তাকাতে একটু অবাক হলাম । হঠাৎ অনেক দিন পর ফোন দিচ্ছে ।
অামি কলটা ধরতে যাবো তখন কলটা কেটে গেলো । তাই অাবার অাশাদুজ্জাম_রাজ নামটে ফোনের স্কিনে ভেসে উঠলো । তখন ফোনটা রিসিভ করে বললাম ,
—হ্যালো ভাইয়া ।
—তাহলে চিন্তে পেরেছো ।
—জ্বী ভাইয়া । অার কেনো চিন্তে পারবোনা বলেন তো ভাইয়া । যে বড় ভাইয়া অামাদেরকে সব সময় কলেজের সব কাজ করে দিয়েছে এবং কি কোনো কিছু দরকার হলে সেটা সল্ট করেছে তাকে কিভাবে ভুলে যাবো বলেন তো ।
—নাদিম তুমি এখন ভালো কথা বলতে পারো ।
—জ্বী ভাইয়া অনেক পাল্টে গেছি ।
—অাচ্ছা অফিসের খবর কি তোমার ।
—অালহামদুলিল্লাহ্ অাল্লাহুর রহমতে ভালো । অাপনার ?
—অাল্লাহুর রহমতে ভালো । তা তোমার গল্পের খবর কি মানে নাদিম আইডি কোথায় । এখনতো গল্প পাইনা ।
—না মানে ভাইয়া এখন ব্যস্ত মানুষ তাই সময় হয়না তাই লেখালেখি কাজটা বন্ধ করে দিয়েছি ।
—ও আর তোমার গল্প বেশ কয়েক জায়গায় কপি করে পোষ্ট দিয়েছে মনে করতাম সেটা তোমার আইডি কিন্তু না পরে টাইমলাইন ঘুরে দেখি তোমার আইডি না । পরে অানফেন্ড করে দেই ।
—কিছু কিছু কপিবাজদের জন্য লেখালেখির কাজটা আর করি না । আর যদি টুকটাক লেখি সেটা নাদিম আইডি ছাড়া কোথাও পাবেন না । আর কোথাও পেলে সেটা কপিবাজদের কপি করে নিজের নাম দিবে । আর এই একটা গল্প লেখছি সেটা সবাই কপি করছে । তাই অার লেখিনা ।
—অাচ্ছা পরে কথা হবে তোমার ভাবি ডাকছে ।
—ঠিক আছে অাল্লাহ হাফেজ ।
—অাল্লাহ হাফেজ ।
.
ফোনটে কেটে দিলাম ।
এতখন যার সাথে কথা বললাম সে হলো কলেজের বড় ভাই । সব কাজে সাহায্য করতো । অনেক দিন বাধে কথা বলে খুব ভালো মানুষ তিনি ।
থাক সেসব কথা ।
খাবার খেতে ডাকছে খেতে যাই ।
.
একটুপর চলে এলাম খাবার টেবিলে । সবাই বসে আছে এক সাথে খাবে । অামার জন্য অপেক্ষা করতেছিলো ।
খাবার খেতে লাগলাম ।
একটু খানি খাবার মুখে দিয়ে বুঝতে পারলাম খাবারের মজা । অনেক সুস্বাদু হয়েছে খাবারটা । সবাই খেয়ে একি কথা খাবারটা অনেক সুস্বাদু হয়েছে ।
ছোটমা বলে উঠলো ,
—তারিন তুই এতো ভালো রান্না করতে পারিস ।
—না মানে জানি না সুস্বাদু হয়েছে কিনা । এসব রান্না আম্মু শিখিয়েছে ।
—সত্যি খুব সুস্বাদু হয়েছে তারিন ।
.
অাব্বু বলে উঠলো ,
—সত্যি খাবারটা সুস্বাদু হয়েছে মা ।
.
অাঙ্কেল তখন বলে উঠলো ,
—নামের সাথে কাজকর্ম ঠিকঠাক ।
.
তখন মামনি বলে উঠলো ,
—দেখা লাগবে না রহিমের ভাতিজি ।
.
তখন অামি বলে উঠলাম ,
—সত্যি মামনি খাবারটা অসাধারণ সুস্বাদু হয়েছে ।
.
তখন খুশি বলে উঠলো ,
—আম্মু খাবার গুলি ফ্রিজে রেখে দাও প্রতিদিন খাবো ।
.
সবাই হেসে দিলো । তারিনের দিকে তাকালাম মিষ্টি হাসছে ।
সকালের খাবারটা খেয়ে রুমে এলাম ।
এখন অফিসের জন্য রেডি হচ্ছি ।
তারপর অফিসে চলে গেলাম ।
সন্ধ্যায় বাসায় এসে রেস নিলাম । রাতে খাবার খেয়ে শুয়ে পরলাম । আজ আর অন্য রুমে না । অাজ অামার রুমে শুয়ে পরলাম । তারিনের রুম পরিস্কার করে নিয়েছে ।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে অফিসে যাই । আবার সন্ধ্যায় বাসায় চলে আসি । প্রতিদিন সুস্বাদু খাবার খেতে খুব ভালো লাগে ।
এভাবে কেটে গেলো ৪ টি দিন ।
অাজ সকালে খাবারের টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছি তখন ছোটমা বলে উঠলো ,
—নাদিম ।
—জ্বী ছোটমা ।
—অাজ তারিনকে অফিসে যেতে কলেজে নামিয়ে দিয়ো ।
—ঠিক অাছে ।
—তারিন তুমি রেডি হয়ে থেকো নাদিম তোমাকে নামিয়ে দিয়ে যাবে কলেজে । আজ প্রথমদিন প্রথম কলেজ । একটু সেঁজেগুঁজে যেও ।
—জ্বী আন্টি ।
—তাড়াতাড়ি করে খেয়ে রেডি হয়ে নাও ।
—ঠিক আছে ।
.
সকালের খাবার খেয়ে রুমে চলে এলাম ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here