কাজের মেয়ে যখন ঘরের বউ♥
পার্ট :০৫
লেখক : নাদিম আহাম্মেদ
অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি ।
একটুপর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৯ঃ১৫ বেজে গেছে ।
পরিপাটী হয়ে রুম থেকে ভের হয়ে এলাম ।
সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছি তখন মামনি পিছনে থেকে ডেকে উঠলো ,
—নাদিম।
.
আমি পিছনে ঘুরে তাকালাম ।
—জ্বী মামনি ।
—একটু আমার রুমে আয় তো ।
—আসছি ।
.
মামনি রুমে চলে গেলো পিছনে পিছনে আমিও চলেগেলাম ।
কি জন্যে মামনি তার রুমে যেতে বললো । নাকি কিছু দিবে আমাকে । নাহ্ তো কিছু দেবার মতো কিছু নাই ।
আমি রুমে গিয়ে মামনিকে বললাম ,
—মামনি কেনো রুমে এলাম ।
.
আমার দিকে একবার তাকালো । তারপর কি জেনো ভেবে ডয়ারে কি জেনো খুঁজতে লাগালো ।
হঠাৎ কি খুঁজতেছে মামনি বুঝতে পারছিনা । কি হতে পারে সেটা ।
ঘড়ির দিকে তাকালাম দেখি ০৯ঃ২২ বাজে । কলেজে যেতে প্রায় ২৫-৩০ মিনিট লাগবে । আর অফিসে যেতে তো অনেক ধেরি হবে ।
একটু পর খেয়াল করলাম একটা পায়েল ভের করে আমার দিকে দিয়ে বললো ,
—নাদিম এটা জুয়েলারি দোকানে দিয়ে যাবি ।
—কেনো মামনি ?
—জুয়েলারি দোকানে গিয়ে কি করে ।
—গহনা কিছু মেয়েদের সামগ্রী বানায় ।
—আমি ফোনে কথা বলেছি শুধু তুই এটা দিয়ে আসবি ।
—এখন যেতে দিয়ে যাবো । এখন তো কলেজে দিকে গেলে এমনি ধেরি হবে তারপরে আবার ব্যাক করে এসে সেখানে দিতে হবে ।
—আরে গাধা বলেছি আমি যে যাওয়ার সময় দিয়ে যাবি ।
—তাহলে ।
—বাসায় ফেরার সময় মনে করে দিয়ে আসবি ।
—আপনি তো ছোটমাকে নিয়ে যেতে পারেন ।
—গেলে তোরে বলতাম ।
—না ।
—তাহলে ।
—কিন্তু আমার যে মনে থাকে না । ( বির বিরিয়ে )
—কিছু বললি ।
—কই না তো ।
—এই নি ।
.
আমি পায়েলটা নিয়ে মামনির রুম থেকে চলে এলাম ।
নিচে আসতে দেখে টাস্কি খেলাম । এটা কে তারিন নাকি অন্য কেউ । এতো সুন্দরী লাগছে কেনো । যতটুকু সুন্দরী তার চেয়ে বেশি সুন্দরী লাগছে । এতো মেকআপ কেনো নেয় মেয়ে মানুষ বুঝতে পারি না ।
তবুও সুন্দরী লাগছে তারিনকে । চুলগুলি দেখা যাচ্ছে না হিজাব দিয়ে ডাকা । চোখে কাজল নিয়েছে । মুখে হালকা মেকআপ , ঠোঁটে হালকা লিপিষ্টিক নিয়েছে । না না হালকা বললে ভুল হবে গাঢ় করে ঠোঁটে লিপিষ্টিক নিয়েছে । আর একটা জামা পড়েছে সেটার নাম জানি না তাই বলতে পারছিনা । কারণ মেয়েদের পোশাকের উপর এতো পারদশী না । তাই বলতে কষ্ট হচ্ছে কিন্তু মনে হচ্ছে লেগিস পোশাক পড়েছে । পায়ে এক জোরা চটি পরেছে ম্যাসিং করে । বাহ্ সব মিলিয়ে একদম পেত্নির মতো লাগছে । আরে আরে পেত্নি বললে ভুল হবে অসাধারণ সুন্দর লাগছে । মনে হচ্ছে কোনো এক অপ্সরী । হয়তো শ্যামলা হতে পারে কিন্তু এখন কেউ বলতে পারবোনা মেয়েটা কালো । সবাই বলতে হবে একটা সুন্দরী কোনো একটা মেয়ে । তার দিকে তাকিয়ে আছি সেটা কেবল লক্ষ করলো । আমি চোখটা তার দিক থেকে সরিয়ে নিলাম ।
আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে । আমি তারিনের দিকে আর চোখে তাকিয়ে দেখলাম । তারপর বললাম ,
—এখন চলেন ।
.
আমার দিকে হাবলার মতো তাকালো । আরে আমি কি বলেছি যে এভাবে তাকাতে হবে ।
—আচ্ছা চলেন ।
.
বাসা থেকে বের হয়ে গাড়ির কাছে চলে এলাম ।
গাড়ির ভেতর বসে আছি । গাড়ি স্টার্ট দিচ্ছি না কারণ আমার একটা বদ অভ্যস আছে । সেটা একটু পরে বুঝতে পারবেন ।
আমি তার দিকে আর একবার তাকালাম । আমার পাশে বসে আছে মানে গাড়ির সামনে সিটে ।
আমার তাকানো দেখে একটু লজ্জা করছে । কারণ এরকম একটা ছেলে তার দিকে বারে বারে তার দিকে তাকাচ্ছে । বিষয়টা সে বুঝতে পারছে । হয়তো নেগেটিভ ভাবছে আমার তাকানো দেখে । কিন্তু বিষয়টা সেটা না । আমি সামনের দিকে তাকিয়ে বললাম ,
—আচ্ছা লিপিস্টিক কি আছে আপনার কাছে ।
.
আমার কথাটা শুনে আমার দিকে কেমন করে তাকালো । সে বোঝার চেষ্টা হঠাৎ এই কথা বলছি । একটু হেসে বলে উঠলো ,
—কেনো আপনি কি নিবেন নাকি ।
.
আমি একটু হেসে বললাম ,
—আপনার ঠোঁটে কোম হয়েছে তাই যদি আর একটু…
.
কথাটা পুরো বললাম না ।
কথাটা বলে সামনের দিকে তাকালাম । তার দিকে আর চোখে তাকিয়ে দেখলাম । রাগে ফুলতে থাকে । গ্লাসটা তার দিকে বাকা করে তার ঠোঁটের লিপিস্টিক দেখছে ।
আসি তো মনে খুব হাসছি । কারণ এটাতে আমি খুব মজা পাই । কলেজে দুইটা মেয়ের থাপ্পড় খেয়েছি এই কথাটা বলে । আরও অনেক মেয়েকে বলেছি কিন্তু তারা মারতে সাহস পাইনি । কারণ এই দুই মেয়ে সে ঘরের মেয়ে না বরং তারা হলো একজন মন্ত্রীর মেয়ে ছিলো আর একটা এলাকার মাস্তানের মানে এলাকার বড় ভাইয়ের বোন ছিলো । সেদিন যে ফোন দিয়েছিলো তার বোনকে । পরে প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলাম কিন্তু মন্ত্রীর মেয়েকে পারি নি সেরকম ভাবে প্রতিশোধ নিতে । এই বড় ভাইয়ের বোনকে তো কান ধরে দাড়িয়ে রেখেছিলাম ২ মিনিট ২৫ সেকেন্ড । হাহাহাহাহা সে কি মজা ।
আমি গাড়ি চালাতে লাগলাম ।
রেগে ফুঁলে আছে । গোলগাল চেহারা কেমন জানি দেখাচ্ছে ।
আমি টিসু বের করে তার দিকে বাম হাত দিয়ে এগিয়ে দিলাম ।
আমি যে টিসু এগিয়ে দিলাম সেটা লক্ষ নেই । কারণ মুখটা কালো করে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে ।
—এই টিসু পেপার টা নিন আর ঠোঁটের লিপিস্টিক মুছে ফেলেন ।
—নিশ্চুপ ।
.
আরে কথা বলছেনা কেনো । খুব রেগে আছে তারিন ।
—কি হলো এটা নিন ।
.
হাত থেকে ধপ করে নিলো । এতো রাগ তাহলে তো আরও বেশি দুষ্টুমি করা যাবে ।
—কি হলো মুঁছে ফেলেন আমার সহ্য হচ্ছে না ।
.
চোখের পানি মুঁছে ফেললো । আরে মেয়েটা কাঁন্না করছে । বুঝতে পারি নি এটা বলাতে কাঁন্না করবে ।
—স্যরি ।
—নিশ্চুপ ।
—কি হলো কথা বলছেন না কেনো ।
—নিশ্চুপ ।
.
গাড়িটা রাস্তার এক পাশে ধপ করে ব্রেক করলাম ।
এরকম ব্রেক করাতে একটু ভয় পেয়ে গেলো । আমার দিকে তাকালো । আমি তো আগে থেকে রেগে আছি ।
—আপনি এখানে গাড়ি ব্রেক করলেন কেনো ।
.
আমি রাগি লুক নিয়ে তার দিকে আবার তাকালাম ।
তারিন কিছুটা ভয় পেয়ে গেছে ।
—কি হলো কেনো ব্রেক করলেন ।
.
আমি কিছু না বলে আবার গাড়ি চালাতে লাগলাম ।
আমি আর কিছু বলি নি । এমনি তে তো কালো মেয়ে তার উপর ভাব নেয় । আপনার মতো অনেক মেয়ে আছে যে প্রেমের অফার দিছে । তাদেরকে কোনো পাত্তা দেই নি আর এনি তো হলো (কলো_মেয়ে) ।
ধ্যাত কলেজের কাছাকাছি এসে আবার আর একটা টুসু বের করে দিলাম । টিসুটা নিয়ে ঠোঁটের লিপিস্টিক মুছে ফেললো ।
বাহ্ সুন্দর লাগছে এখন । কারণ ঠোঁটের লিপিস্টিক তো ঠোঁটের সাথে মিশে যাচ্ছে ।
তারপর গাড়িটা কলেজের ভেতরে গিয়ে থামালাম ।
চোখের কাজলটা একটু ভিজে কেমন দেখাচ্ছে ।
—এই নিন এটা দিয়ে চোখের নিচে মুঁছে ফেলেন ।
.
আমার দিকে তাকালো । সে একটু বুজতে চেষ্টা করছে ।
টিসুটা নিয়ে চোখের নিচে মুঁছে ফেললো ।
তারপর গাড়ি থেকে নেমে পরলো ।
দাড়িয়ে রইলো গাড়ি থেকে নেমে । বুঝতে পারলাম না ।
আমিও গাড়ি থেকে নেমে পরলাম । আমি তারিনের কাছে চলে এলাম ।
—দাড়িয়ে গেলেন যে ।
—আমি তো ভালো করে চিনি না কোন ডিপার্টমেন্ট কোথায় ।
.
আসলে তো ঠিক সে তো জানে না কোন ডিপার্টমেন্ট কোথায় । মামনি প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলেছে সব তাই কোনো প্রব্লেম নাই ।
—আসেন আমি নিয়ে যাচ্ছি ।
.
তারিন আমার পিঁছু পিঁছু আসছে ।
আমি ফোনটা বের করে খুশিকে ফোন দিলাম ।
—হ্যালো ভাইয়া ।
—খুশি তোর বান্ধুবীর বৃষ্টির ফোন নাম্বারটা দে তো ।
—কেনো ভাইয়া ।
—তারিন একা একা কোথাও চেনে না তাই তোর বান্ধুবীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই তাহলে সুবিধা হবে ।
—ঠিক আছে বৃষ্টির নাম্বারটা দিচ্ছি ফোন দে ০১৭********
—ঠিক আছে বাই ।
—বাই ।
.
আমি বৃষ্টিকে ফোন দিলাম ।
—হ্যালো ।
—তুমি কি বৃষ্টি ।
—হ্যা । কিন্তু আপনি কে ?
—আমি খুশির ভাইয়া ।
—ও ভাইয়া কেমন আছেন ?
—আলহামদুলিল্লাহ । তুমি ?
—ভালো । হঠাৎ আমাকে ফোন করলেন ভাইয়া যে কোনো কিছু হয়েছে ।
—না কিছু হয়নি তোমাদের কলেজে এসেছি ।
—কলেজে কেনো ভাইয়া ।
—বলছি পরে বলো তুমি কোথায় ।
—এই তো আড্ডা দিচ্ছি বসে ।
—কোথায় ?
—দেখুন পাম্প গাছের নিচে ।
—ঠিক আছে আমি আসছি ।
—ওকে ভাইয়া ।
.
ফোনটা কেটে পাম্প গাছের কাছে চলে যাচ্ছি । তখন তারিন বলে উঠলো ।
—কাকে ফোন দিয়েছিলেন ।
—আপনার সেম ইয়ার ।
—ও ।
.
চলে এলাম বৃষ্টিদের ফেন্ড সার্কেলের আড্ডা খানায় ।
তাদের কে চিন্তে কোনো অসুবিধা নাই কারণ খুশির সাখে বাসায় এসেছিলো ।
—ভাইয়া খুশি আজ আসলো না যে ।
—ও একটু ছোটমার সাথে কোথায় যাবে তাই আজ আসে নি ।
—ও ।
—বৃষ্টি উনি হলেন তারিন মানে মোছাঃ মেহজাবীন রহমান তারিন । তোমাদের সেম ইয়ার । নতুন আজ জয়েন করেছে কলেজে । তোমরা খুশিকে যেরকম ভাবো সেরকম তারিনকে ।
—জ্বী ভাইয়া ।
.
তারিনকে বললাম ,
—তারিন ও হচ্ছে বৃষ্টি মানে খুশির বান্ধুবী আর এখানে সবাই খুশির বান্ধুবী ।
—জ্বী ।
.
বৃষ্টিকে বললাম ,
—তাহলে আমি আসি আজ লেট হয়ে গেলো ।
—ঠিক আছে ভাইয়া ।
—হুমম ।
—ভাইয়া ।
—কিছু বলবে ।
—তারিন আপনার কি হয় ।
—খুশির কাছ থেকে যেনে নিও ।
—ঠিক আছে ।
—বাই ।
—বাই ।
.
সেখান থেকে চলে আসতে লাগলাম ।
তখন তারিন বলে উঠলো ,
—এই যে ।
.
আমি আবার তারিনের কাছে গেলাম ।
তারিন আমার দিকে আসতে লাগলো ।
—কিছু হয়েছে ।
—না মানে আজ ভালো লাগছে না ।
—মানে ।
—আমি আজ ক্লাস করবোনা ।
—পাগল নাকি আপনি । আর আপনাকে বাসায় পৌঁছে দিতে আমার সময় নেই ।
—ঠিক আছে ।
.
চলে যেতে লাগলো তখন ডাক দিলাম ,
—তারিন ।
.
আমার দিকে ঘুরে তাকালো তারপর বললো ,
—কিছু বলবেন ।
—হ্যা ।
—আচ্ছা বলেন ।
—যদি তারা আপনার সম্পর্কে জানতে চায় মানে কি হই তাহলে বলবেন আমি আপনার মামাতো ভাই ।
—কেনো ।
—কেনো সেটা জানতে হবে না । যেটা বললাম সেটা বলবে ।
—ঠিক আছে ।
—এখন জান ।
.
তারিন চলে গেলো আমিও অফিসের দিকে চলে গেলাম ।
জানি কোনো সমস্যা হবেনা । বৃষ্টিরা অনেক ভালো তাই কোনো সমস্যা হবে না ।
অতঃপর
অফিসে চলে এলাম । আজ একটু দেরি হয়েছে । সমস্যা নেই আব্বু আর আঙ্কেল আছে অফিসে তাই কোনো সমস্যা নেই ।
.
অফিসের কাজ করার সময় হঠাৎ মনে হলো ঋতুর কথা । তারিনের সাথে কথা বলার সময় ঋতু বলে ছিলো । এটা মনে হয় ভাইয়ার গার্লফেন্ড হবে ।
আসলে সবাই বলবে গার্লফেন্ড হয় । কিন্তু সবাই আসল কি সেটা জানতে পারবেনা ।
সারাদিন অফিসের কাজ শেষ করে বাসার দিকে রওনা দিলাম । আব্বু আর আঙ্কেল তাদের গাড়িতে গেছে ।
আসার সময় জুয়েলারি দোকানে পায়েলটা দিয়ে আসলাম ।
মামনি সব কিছু ফোনে বলে দিয়েছে তাই আর কিছু বলা লাগলো না ।
জুয়েলারি দোকান থেকে বের হয়ে বাসার দিকে রওনা দিলাম ।
চলবে