কাজের মেয়ে যখন ঘরের বউ♥
পার্ট :১৫,১৬
নাদিম_আহাম্মেদ
—কি ভাবছেন । (তারিন)
.
তারিনের কন্ঠে বাস্তে ফিরলাম ।
তারিনের দিকে একবার তাকালাম । তারপর বললাম ,
—কিছু না ।
—তাহলে এরকম মুখ ঘোমরা করে বসে আছেন কেনো ।
—এমনি ।
—কোনো সমস্যা হয়েছে ।
—না কোনো সমস্যা না । আমি ঠিক আছি ।
—শোনেন যদি কোনো সমস্যা হয় তাহলে বলবেন ।
—জ্বী ।
—একটু হাসেন ।
—কেনো ।
—হাসতে বলেছি হাসেন ।
—হিহিহিহি ।
—এভাবে কেউ হাসে নাকি ।
—জানি না ।
—কি জানেন হুম ।
—তাও জানি না ।
—আপনি কি গাধা ।
—হয়াট ।
—কিছুনা ।
.
আমি আর কিছু বললাম না । তারিন আর কিছু বললো না । আমার দিকে তাকিয়ে তারিন মিষ্টি হাসি দিলো । তারপর আমার কাঁধে মাথাটা রেখে হাতটি ধরলো । আমি একবার তারিনের দিকে তাকালাম । আমি আর কিছু বললাম না । শুধু মনের ভেতর সে ভয় । যে কারণে থাপ্পড় খেয়ে ছিলাম । যদি আবার দেয় কোনো ভুলের কারণে ।
মাথাটা কাঁধে রেখে আমার দিকে তাকালো । আমার এরকম চিন্তা মুখটা দেখে কি জেনো ভেবে হেসে উঠলো ।
আমি জানি না কেনো হেসে উঠলো ।
আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি । তারিন কি জেনো ভেবে আমার হাতটি আরও শক্তকরে দুহাত দিয়ে জরিয়ে ধরলো ।
আমার আরও ভয় করছে । জানিনা আবার কোনো কিছু হয়ে গেলে যদি আবার থাপ্পড় দেয় ।
এটা ভাবতে তারিনের দিকে থেকে চোখটা সরিয়ে নিলাম ।
গ্লাসের ভেতর থেকে বাহিরের দিকে তাকালাম । বাহিরে ছোট ছোট আলো ছাড়া বেশি কিছু দেখা যাচ্ছে না । মাঝে মাঝে দোকানে পাটে লোকজন দেখা যাচ্ছে । রাত অনেক হয়েছে । রাত প্রায় ৯:০৫ মিনিট বাজে ।
.
প্রায় (যমুনা) ব্রিজের কাছাকাছি চলে এসেছি । প্রায় ২০ থেকে ২৫ মিনিট লাগবে যমুনা ব্রিজে কাছে যেতে ।
কিছুখন দৃশ্য দেখার পর তারিনের দিকে তাকালাম । ঘুমিয়ে গেছে মেয়েটা । কেমন জানি খারাপ লাগছে ।
কিছুখন পর চলে এলাম যমুনা ব্রিজে ।
কি সুন্দর দৃশ্য দেখা যাচ্ছে ।
ব্রিজের থাম্বাগুলির মাথায় লাইট জ্বলছে । দূর থেকে মনে হচ্ছে জোনাকি পোকার মতো লাগছে লাইটগুলি ।
রাতে তেমন বেশি গাড়ি নেই সেজন্য জ্যাম নেই ।
গাড়ি তার আপন বেগে ছুঁটে চলেছে গন্তব্যের দিকে ।
ব্রিজের দক্ষিণ দিকে একটা বিদুৎ ট্যাওয়ার দেখতে পেলাম ।
সেখানে মিটিমিটি আলো জ্বলছে । এই দৃশ্যগুলি দেখতে খুব ভালো লাগে ।
ব্রিজের শেষ পান্তের উত্তর পাশে নাকি একটা যমুনা ইকুপ্যার্ক আছে । আমি দেখি নাই কিন্তু নাম শুনেছি ।
আর হাবিব ওয়াহিদের (বেপারওয়া) গানের মধ্যে দেখা যায় সেখানের কিছু অংশ দৃশ্য ।
.
প্রায় ২৫ থেকে ৩০ মিনিট পর ব্রিজটি অতিক্রম করলাম ।
তারিনের দিকে আবার তাকালাম । ঘুমের রাজ্যে আছে এখন তারিন ।
কিছু কিছু মানুষের অভ্যস আছে গাড়িতে উঠলে ঘুম এমনিতে চলে আসে চোখে । সেরকমও তারিনের হয়েছে । আর অনেক রাতে উঠেছে আজ ঘুম থেকে সেজন্য মনে হয় ঘুমিয়ে পড়েছে ।
.
গাড়ি ধিরে ধিরে তারিনের বাসার দিকে যাচ্ছে ।
এখন গাড়িটা সয়দাবাদ যমুনা কলেজের পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছি ।
অামার চোখে ঘুম মামা চলে এসেছে মনে হচ্ছে । কিন্তু আমার ঘুমানো যাবেনা ।
আবার ঘড়ির দিকে তাকালাম দেখি ৯:৫০ বাজে ।
তারিনের দিকে তাকালাম আবার । নিষ্পাপ চেহারা ফুঁটে উঠেছে । শিশুদের মতো মুখটা দেখা যাচ্ছে ।
এভাবে কিছুখন কেটে গেছে ।
.
কিছুখন পর বেলকুচিতে চলে এসেছে গাড়িটি ।
এভাবে গাড়ি তার আপন বেগে ছুঁটে চলেছে গন্তব্যের দিকে ।
প্রায় চলে এসেছি তারিনের বাসার কাছে ।
.
তারিনের গ্রামে নাকি একটা কবি আছে । রজনী কান্ত সেন কবি ।
সে কবি নাকি অনেক কবিতা , গল্প , কিছু ছড়া ইত্যাদি লিখেছে ।
আমি তার কবিতা বেশি পড়তে পারিনি । শুধু একটা কবিতা পড়েছি ।
.
বাবুই পাখি ডাকিয়া বলেছি চড়াই ।
কুঁড়ে ঘরে থাকি বলে শিল্পির বড়াই ।
আমি থাকি মহা সুখে অট্রলিকা ঘরে……..
.
কবিতাটি খুব ভালো লাগে আমার ।
কবিতা আমার কাছে অনেক সুন্দর লাগে ।
.
চলে এসেছি তারিনদের গ্রামে সেনভাংঙ্গাবাড়ি ।
তারিনের বাসার সামনে গাড়িটা পার্ক করে রেখে দিলো ।
বাহিরে ছোট ছেলে মেয়েদের হৌ চৌ লেগে গেছে ।
সবাই বলছে জামাই চলে এসেছে ।
তখন তারিনকে আস্তে করে ডাক দিতে লাগলাম ।
—তারিন … এই তারিন ।
—কি হয়েছে । (ঘুম ঘুম চোখে)
—আমরা চলে এসেছি ।
.
তারিন আমার কাঁধ থেকে মাথাটা সরিয়ে নিলো । সারা রাস্তা আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিলো ।
একটুপর তারিনের দাদু এসে আমাদেরকে নামিয়ে বাসার দিকে নিয়ে গেলো ।
ছোট ছেলে মেয়ের সাথে কিছু সংখ্যক বড় মানুষ আমাদেরকে দেখছে ।
.
তারিনের রুমে আমাদের বসালো ।
গ্রামের সবাই মনে হচ্ছে বর দেখতে এসেছে । কালতো দেখেছে কিন্তু আজও দেখতে এসেছে ।
আমার কেমন জানি অসহ্য লাগছে । এতো কথা আমার একদম পছন্দ হচ্ছে না । মাথাটা ব্যথা করছে ।
কিছুখন বসে রইলাম বিছানার মাঝে । অনেক মানুষ দেখে গেলো ।
কিছুখন পর রুমটা ফাঁকা হয়ে গেলো ।
আমি আর তারিন বসে আছি ।
তারিনকে বললাম ।
—আমার মাথা ব্যথা করছে আমি একটু শুয়ে পরবো ।
—খাবেন না ।
—খেয়ে তো আসলাম ।
—সেটা তো কখন ।
—আমি খেতে পারবোনা ।
—অল্প করে কিছু খেয়ে নিন । আম্মু খাবার নিয়ে আসছে ।
.
আমি আর কিছু বললাম না ।
একটু পর তারিনের আম্মু চলে আসলো খাবার নিয়ে ।
ইচ্ছে না থাকা সত্যে খাবার খেয়ে নিলাম ।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে একটু রেস নেওয়ার জন্য গা এলিয়ে দিয়ে শুয়ে পরলাম ।
দরজায় নক করে ফাতেমা চলে আসলো ।
ওহ্ আপনাদেরকে তো একটা কথা বলা হয় নি । তারিনের বান্ধুবীর কথা ।
ফাতেমা আর তারিন দুজন অনেক ভালো বান্ধুবী ছিলো । এদিকে রেজাল্ট দেওয়ারপর দুজন দুদিকে চলে যায় আর দেখাশোনা হয় নি ।
সে অনেক ভালো দেখতে অনেক সুন্দর । তারও বিয়ে হয়েছে কিছুদিন ধরে ।
তার বিয়ে হয়েছে অনিক নামে এক ব্যক্তির সাথে ।
অনিক ভাইয়া দেখতে খুব সুন্দর ।
অনিককে ভাইয়া বলছি কেনো এটা ভাবছেন তাই না ।
অনিক মানে আমার বড় ভাই ।
আমি যখন ভার্সিটেতে পরতাম তখন এক ইয়ার বড় ছিলো । সো তাকে চিন্তে ভুল হলো না বিয়ের দিন । তার সাথে অনেক কথা হয়েছে ।
অনেক দিন পর দেখা হওয়াতে খুব ভালো লেগে যায় । থাক সে কথা সেটা নাহয় অন্য একদিন বলবো ।
—দুলাভাই গল্প করতে পারি ।
—জ্বী ।
.
তারিনের কাছে ফাতেমা খাটের উপর বসে গেলো ।
একটুপর তারিনের মামাতো বোন চলে আসলো । পাজিরা যে দুষ্ট খুব ।
ফাতেমা ও তারিনের মামাতো বোনদের সাথে কিছুখন গল্প করলাম ।
রাত অনেক হয়েছে এদিকে গল্প করে যাচ্ছে সবাই । আমার ঘুম পাচ্ছে খুব ।
.
ফাতেমা সেটা লক্ষ করলো আর বললো ।
—দুলাভাই আপনার খুব ঘুম পাচ্ছে তাই না ।
.
আমি একটু হেসে বললাম ।
—আরে না সমস্যা নাই গল্প করেন ।
.
তারিনের ছোট মামাতো বোন বলে উঠলো ।
—না ভাইয়া কাল গল্প করবো কেমন । আজ ঘুমিয়ে পড়েন ।
—তাহলে চলো সবাই তোমার আপু আর ভাইয়াকে ঘুমাতে দাও ।
—ঠিক আছে আপু আমরা সবাই যাই কাল গল্প করবো ।
—গুড নাইট ভাইয়া ।
—গুড নাইট ।
.
সবাই চলে গেলো রুম থেকে ।
মাথাটা ব্যথা করছে সেই কখন থেকে । কিন্তু তবুও গল্প করে গেলাম তাদের সাথে ।
—কি হলো মাথা ব্যথা করছে নাকি আপনার ।
.
তারিন কেমন করে বুঝলো আমার মাথা ব্যথা করছে । আমি বুঝতে পারলাম না ।
—হুমমম ।
—আচ্ছা আপনি শুয়ে থাকেন আমি মেডিসিন লাগিয়ে দিচ্ছি ।
.
তারিন বিছানা থেকে উঠে গিয়ে ড্রয়ারে কি জেনো খুঁজতে লাগলো ।
তারপর হাতে করে কি জেনো নিয়ে আসলো ।
—এটা কি তোমার হাতে ।
—মেডিসিন ।
—এটা দিয়ে কি করবো ।
—আপনি ভালো করে শুয়ে পড়েন । আমি আপনার কপালে লাগিয়ে দিচ্ছি । ইনশা আল্লাহ সেরে যাবে ।
.
আমি শুয়ে পরলাম ।
তারিন আমার কপালে সে মেডিসিন লাগিয়ে দিচ্ছে ।
আমার মাথাটা হাত দিয়ে বিলিয়ে দিচ্ছে ।
ভালো লাগছে আমার ।
কখন যে ঘুমিয়ে গেছি জানি না ।
.
কারও স্পর্শে ঘুমটা ভেঙ্গে যায় ।
আমি চোখটা খুলে দেখি তারিন আমার মাথাটা বিলিয়ে দিচ্ছে ।
আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো ।
—কি এখন সেরে গেছে মাথা ।
—জ্বী মাথা আর ব্যথা করছে না ।
—জান্নাতে যাবেন না ।
.
আমি ঘুম ঘুম চোখে বলে দিলাম ।
—হ্যা যাবো । তুমি কি প্রতিদিন যাও ।
—না কিন্তু একদিন যাবো ইনশা আল্লাহ । আজকে তাহলে উঠে ওযু করে তাহাজ্জতের নামাজ পড়ে আল্লাহুর কাছে চেয়ে নিন ।
—ঠিক আছে তুমি যেদিন যাবে সাথে আমাকে নিয়ে যেও ।
.
মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো ,
—সেজন্য বলছি আল্লাহুর কাছে দুজন মোনাজাত ধরে চেয়ে নেই ।
—তুমি চেয়ে নাও আমার খুব ঘুম পাচ্ছে । তুমি যখন জান্নাতে যাও তখন আমাকে নিয়ে যেও ।
.
আবারও তারিন মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো ।
—অবশ্যই আমি যদি জান্নাতে যাই ইনশা আল্লাহ তখন আপনাকে নিয়ে যাবো ।
—তাহলে আমি ঘুমিয়ে যাই । তুমি যখন যাবে তখন আমাকে সাথে করে নিয়ে যেও কিন্তু ।
.
মিষ্টি হাসি দিয়ে তারিন বললো ।
—ঠিক আছে ঘুমিয়ে যাও । ইনশা আল্লাহ আমি যদি জান্নাতে যাই । আমি আপনাকে নিয়ে যাবো ।
.
তারিন মাথাটা বিলিয়ে দিচ্ছে । আর নাদিমের দিকে তাকিয়ে আছে ।
নাদিম আবার ঘুম রাজ্যে চলে যায় আর তারিন কিছুখন নাদিমের দিকে তাকিয়ে থেকে আল্লাহুর কাছে দোয়া করে ।
হে আল্লাহ ! আপনি আমার স্বামীকে হেদায়েত দিয়ে দিন । সে জেনো ৫ ওয়াক্ত নামাজ সময় মতো আদায় করতে পারে । আমি জেনো তার সাথে এক সাথে জান্নাতে থাকতে পারি । ( আমিন )
.
আল্লাহুর কাছে দোয়া করে আলতো করে নাদিমকে আজও চুমু দিয়ে পাশ থেকে উঠে গিয়ে ওযু করতে যায় ।
তারিন ওযু করে এসে তাহাজ্জতের নামাজ আদায় করে নিলো । আর আল্লাহুর কাছে দোয়া করে সবার জন্য আর নাদিমের জন্য আর তারিনের জন্য ।
তারপর কোরঅান শরীফ তেলোয়াত করলো ।
কোরঅান শরীফ তেলোয়াত করতে করতে ফজরের আযান দেয় ।
কোরঅান শরীফ রেখে ফজরের নামাজ আদায় করে নিলো ।
তারপরে নাদিমের পাশে আবার এসে বসে যায় । আবার চুমু দেয় তারিন নাদিমকে । কি জেনো ভেবে তারিন মিষ্টি হেসে উঠে ।
নাদিমের পাশে বসে কিছুখন নাদিমের দিকে তাকিয়ে রইলো ।
তারপর মাথার চুলগুলি হাত দিয়ে এলোমেলো করে দেয় ।
তখন নাদিমের ঘুমটা ভেঙ্গে যায় ।
—ওহ্ স্যরি ঘুম থেকে জাগিয়ে দিলাম ।
.
নাদিম মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো ।
—না আমার ঘুম শেষ ।
—ও তাহলে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিন ।
—জ্বী ।
—আর শোনেন আপনিতো শহরে থাকেন তাই গ্রামের নিয়ম কানুন মানবেন না জানি । তাড়াতাড়ি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসেন গ্রামের কিছু সংখ্যক মানুষ আপনাকে দেখতে আসবে ।
.
তারিনের কথাটা শুনে মুখটা কেমন জানি হয়ে গেলো।
—আজকেউ দেখতে আসবে ।
—হুমমম আজকেউ ।
—কেনো ।
—জামাই দেখবে ।
—ওমা কয়বার দেখতে হয় জামাই ।
—সেটা তারা জানে ।
—ও ।
—তাড়াতাড়ি যান ।
.
নাদিম উঠে ফ্রেশ হতে গেলো ওয়াশ রুমে ।
এদিকে তারিন রুমে বসে রইলো ।
কিছুখন পর নাদিম ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে আসলো ।
এসে দেখে তারিন রুমে নেই ।
কোথায় গেলো তারিন । মনে হয় কেউ ডেকেছে সেখানে গেছে ।
নাদিম ফোনটা বের করে কিছু কাজ করতে লাগলো এর মধ্যে তারিনের সে মামাতো দুই বোন চলে এসেছে ।
কিছুখন গল্প করলাম তাদের সাথে ।
একটুপর তারিন চলে এলো রুমে ।
তারিনও আমাদের গল্প শুনছে ।
এভাবে কেটে যেতে লাগলো সময় ।
অতঃপর
সন্ধ্যায় বাসার উদেশ্যে রওনা দিলাম ।
তারিন অনেক কাঁন্না কাটি করেছে আসার সময় ।
প্রায় কয়েক ঘন্টা পর বাসায় পৌছে গেলাম ।
বাসায় এসে শুয়ে পরলাম ।
কেমন জানি শরীর ক্লান্ত লাগছে তাই শুয়ে পরলাম ।
রাতের খাবার খেয়ে রুমে বসে আছি ।
তখন তারিন বললো ,
—এখন কি করবেন ।
.
কথাটা শুনে কেমন জানি লাগলো হঠাৎ করে একথা বললো ।
—এখন কি করে মানুষ শুয়ে থাকে সেরকম আমিও ।
—ও আচ্ছা ঘুমিয়ে পড়েন ।
—তুমিও ঘুমিয়ে পড়ো ।
—জ্বী আপনি আগে ঘুমিয়ে পড়েন ।
—ঠিক আছে ।
—হুমমম ।
—আর সেদিনের কথা মাথায় রেখে কাজ করবেন । ভাববেন না ভালো ব্যবহার করছি দেখে আমি আপনাকে বউ হিসাবে মেনে নিয়েছি । আমি কোনো (কাজের_মেয়ের) সাথে সংসার করবো সেটা ভাববে না । আমি তো বিয়ে করেছি শুধু আপনাকে দেখাতে যে , আমি আপনার শরীরের প্রতি লোভ নাই । সো সেটা মাথায় রেখে কাজ করবে সব সময় । কিছুদিন যাওয়ার পর ডিভোর্স দিয়ে দিবো ।
.
কথাটা শুনে মুখটা শুকিয়ে গেলো । আমি কি বলছি এগুলি আমি নিজে জানি না ।
তারিনের চোখের কোণে পানি আসতে দেখলাম ।
তারিন বেজা কন্ঠে বললো ,
—ঠিক আছে মনে আছে সে কথা । (কাঁন্না কন্ঠে)
—মনে থাকলে ভালো কথা । আমি ঘুমিয়ে পরলাম তুমিও ঘুমিয়ে পরো ।
—জ্বী । (কাঁন্না কন্ঠে)
.
নাদিম ঘুমিয়ে পরে অপর পাশ হয়ে ।
এদিকে তারিন চোখের পানিকে বাঁধা দিতে পারলোনা । চোখের পানি অঝরে ঝর্তে লাগলো । তারিন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে বালিশ ভিজিয়ে ফেলে । কেনো এরকম হলো তার সাথে । সেতো কিছু করেনি । শুধু একটা থাপ্পড় দিয়েছিলো তাই বলে কি এভাবে প্রতিশোধ নিতে হবে । এটাই কি বড় অপরাধ ছিলো আমার ।
কাঁদতে কাঁদতে ভাবতে থাকে তারিন ।
তারিন কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে যায় ।
.
এদিকে নাদিম ঘুমের ভান করে সব বুঝতে পারে ।
নাদিম মনে মনে বলে তারিন আমাকে ক্ষমা করে দিও আমি জানি না কেনো এমন করছি ।
তোমার একটা কথা আমাকে ঘুমাতে দেয়নি ফিক মতো তাই প্রতিশোধ নিচ্ছি । ক্ষমা করে দিও ।
নাদিম উঠে চাঁদরটা তারিনের গায়ে দিয়ে দেয় নাদিম ।
তারপর সেই ড্রয়ারে ভেতর থেকে ডায়রিটা বের করে কি জেনো লিখতে থাকে নাদিম ।
কিছুখন লেখার পর চোখের পানি মুঁছে আবার ডায়রিটা সেখানে রেখে দেয় ।
আবার খাটে এসে তারিনের কাছে বসে পরে ।
কিছুখন তারিনের দিকে তাকিয়ে থাকে ।
আবার নাদিম শুয়ে পরে ।
.
এদিকে তারিনের প্রতিদিনের অভ্যস রাতে উঠে তাহাজ্জতের নামাজ পড়া ।
আজও উঠে নাদিকে একিভাবে ঘুম থেকে জাগিয়ে এক কথা বলে ।
নাদিম প্রতিদিন সেরকম কথা বলে আবার ঘুমিয়ে যায় ।
এদিকে তারিন একিভাবে নাদিমকে চুমু দিয়ে ওযু করতে যায় ।
ওযু করে এসে তাহাজ্জত নামাজ পড়ে ।
কোরঅান শরীফ তেলোয়াত করে ।
তারপর ফজরের নামাজ আদায় করে ।
নাদিমের পাশে বসে থাকে ।
তারপর ঘরের কাজ করতে থাকে ।
এভাবে কেটে যায় দিন ।
প্রতিদিন একটা কোনো কিছু বলে তারিনকে কাঁদাবে। আর তারপর একিভাবে উঠি গিয়ে ডায়রিটা বের করে কিছুখন লিখে আবার ডায়রিটা সেখানে রেখে দেয় ।
এভাবে কাটতে থাকে দিন ।
এদিকে তারিনের রেজাল্ট দেয় । তারিন ও খুশি দুজনে গোল্ডেন A+ পায় ।
সো দুজনে ঢাকা মেডিকেল কলেজে চান্চ পেয়ে যায় ।
তারিন কলেজে যায় আবার বাসার সবাইকে রান্না করে খাওয়ায় ।
বাড়িতে কাজের মেয়ে থাকতে তবুও সে রান্না করবে ।
তারিনকে তেমন কাজ করতে দেয় না নাদিমের ছোটমা ।
এভাবে কয়েক মাস কেটে যায় ।
কিন্তু নাদিম এখনো তারিনকে স্ত্রী বলে অস্বিকার করে তারিনকে বলে ।
কিন্তু রাতে কি জেনো ডায়রিতে লিখে নাদিম ।
এভাবে কেটে যায় দিন ।
এদিকে তারিনকে প্রচুর পরিমান পড়তে হয় ।
নাদিম আর আগের মতো বেশি কাদায় না তারিনকে ।
এভাবে কাটতে থাকে এক এক করে দিন ।
.
তারিন ছোটমার রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমের আসে ।
রুমে এসে দরজা লাগাতে দেখে নাদিম পোশাক চেন্জ করছে ।
তখন তারিন বললো ,
—কখন আসলে তুমি ।
.
নাদিম তারিনের দিকে তাকালো ।
আজ কেমন জানি লুক নিয়ে তারিনের দিকে তাকালো । সেটা ভালো করে লক্ষ করলো । মনটা হাসি খুশি আজ নাদিমের ।
—কি হলো কথা বলছোনা কেনো ।
.
নাদিম তারিনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো । তারিন কিছু বুঝতে পারছেনা । কেনো এদিকে আসছে । মনে হয় ছাঁদে যাবে এখন । মাঝে মাঝে ছাঁদে যায় নাদিম ।
নাদিম ধির ধির পায়ে তারিনের কাছে যেতে লাগলো ।
তারিন কেমন জানি ভয় করতে লাগলো । আর পিছুতে লাগলো ।
নাদিম তবুও থামছেনা এগিয়ে যাচ্ছে তারিনের দিকে ।
তারিন পিছুতে লাগলো আর নাদিম তারিনের দিকে কেমন জানি হয়ে তার দিকে এগুতে লাগলো ।
এভাবে তারিন পিছুতে পিছুতে দেওয়ালের সাথে ধাক্কা খায় । তখন তারিন কিছু বুঝতে পারলো সে দেওয়ালের সাথে ঠেকে গেছে পিছুনে যাওয়ার যায়গা নাই ।
নাদিম ধির পায়ে তারিনের কাছে চলে যায় ।
তারপর আস্তে করে তারিনের হাতদুটি দেওয়ালের সাথে ঝাপটে ধরে । তারিন নাদিমের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে । নাদিম কি করছে এসব ।
ধিরে ধিরে তারিনের ঠোঁটের দিকে নাদিমের ঠোঁট অগ্রসর হতে থাকে ।
তারিন চোখদুটি বন্ধ করে ।
চলবে