কাজের মেয়ে যখন ঘরের বউ♥
পার্ট: ১৭
লেখক :নাদিম আহাম্মেদ
তারিন চোখ বন্ধ করে আছে ।
নাদিম তারিনের ঠোঁটের দিকে তার ঠোঁট আগ্রসর করছে ।
তারিনের ঠোঁট দুটি কাঁপছে । তারিন চোখ বন্ধ করে আছে । বোঝার চেষ্টা করছে এরকম হঠাৎ করে কেনো এমন করছে নাদিম ।
এ পযন্ত তারিনের কাছে আসে নাই ভালো করে আর আজ নাদিম তাকে কিস করতে যাচ্ছে ।
নাাদিম তারিনের ঠোঁটের কাছাকাছি নিয়ে যায় । তারিন খুব শক্ত করে চোখ বন্ধ করে আছে ।
নাদিম তারিনের হাত দুটি ছেড়ে দেয় । তারপর নাদিম তারিনকে ছেড়ে দিয়ে ছাঁদের দিকে চলে যায় ।
তারিন কিছুটা অবাক হয়ে যায় । হঠাৎ এমন করলো কেনো নাদিম ।
তারিন দেওয়ালের সাথে দাড়িয়ে আছে । আর ভাবতে থাকে মাঝে মাঝে এমন আচারণ করে কেনো । আগে তো এমন ছিলো না ।
তারিন এসে বিছানায় গুটিসুটি মেরে শুয়ে পরে । তারিন বিছানাতে শুয়ে কাঁদতে থাকে । সে জানেনা আসলে নাদিম কি তাকে এখন স্ত্রী হিসাবে মেনে নিতে পারেনি ।
ঠিক আছে মেনে নিতে পারে নি ভালো কথা কিন্তু এভাবে কষ্ট দেওয়া তো ঠিক হচ্ছে না । তারিন কাঁদছে আর এগুলি ভাবছে ।
.
এদিকে নাদিম চোখ দুটি মুছতেছে বারে বারে । সে তো ইচ্ছে করে এগুলি করছেনা । কোথাও জেনো তাকে এসে বলে দেয় প্রতিশোধ নি । কেনো এমন করি তারিনের সাথে । আচ্ছা তারিনকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো কি । না না এটা কি বলি আমি একটা মেয়ের জীবন এভাবে নষ্ট হবে এটা করা যাবেনা ।
নাদিমের মাথাটা কেমন জানি এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে ।
আজকে তারা নেই ছাঁদে অন্ধকার ভরা আকাশ । কিন্তু ছাঁদে আলো আছে । আবছা আবছা আলো ছাঁদে বোঝা যাচ্ছে ।
কিছুখন ছাঁদে থেকে আবার রুমের দিকে চলে গেলো নাদিম।
রুমের কাছে এসে থেমে যায় । ভেতরে প্রবেশ করছেনা নাদিম । নানা রকম প্রশ্ন বাসা বেদেছে মাথার ভেতরে ।
সব কিছু বেবে রুমে চলে গেলো । রুমের ভেতর গিয়ে দেখে তারিন গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে বিছানার মাঝে ।
নাদিম গিয়ে শুয়ে পরে বিছানায় এক পাশে । মনে হচ্ছে তারিন অনেক কেঁদেছে ।
এলোমেলো কিছুখন ভেবে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ে নাদিম জানে না ।
.
নাদিম সকালে উঠে অবাক হয় আজ তারিন ঘুম থেকে উঠে নাই । তার মানে আজ তারিন নামাজ পড়ে নাই ।
নাদিম তারিনের দিকে তাকায় বাহ্ কি মায়াবি মুখ । দেখতে দেখতে তারিন নাদিমের দিকে চলে আসে ।
তারিনের শরীরে স্পর্শ পেয়ে নাদিম অবাক হয় । শরীরটা অনেক গরম এর মানে জ্বর এসেছে তারিনের । কিন্তু তবুও কিছু বলেনি আমাকে ।
নাহ্ আগে জ্বর ছিলোনা । যখন তারিনের হাতটা ধরলাম তখনতো বেশ সাভাবিক ছিলো । কিন্তু রাতে অনেক জ্বর এসেছে ।
নাদিম উঠে গিয়ে ওয়াশ রুম থেকে পানি এনে তারিনর কপালে জলপট্টি করে । এতে তারিন কিছুটা ঠান্ডা অনুভব করে নাদিমের হাত শক্ত করে জরিয়ে ধরে ।
নাদিম তারিনের কপালে কিছুখন জলপট্টি করতে থাকে । এক সময় তারিন উল্টাপাল্টা কথা বলছে জ্বরের কারণে । তখন নাদিম বুঝতে পারলো এতে কাজ হবেনা ডাক্তারকে ডাকতে হবে । আর এতো সকালে ডাক্তার আসবেনা । আবার তারিনকে জলপট্টি করতে থাকলো কপালে ।
তাই কিছুখন পর একটু শান্ত হয়ে গেলো । কিন্তু জ্বর বেরে যাচ্ছে তারিনের । তখন মনে হলো ড্রয়ারের ভেতর জ্বরের মেডিসিন আছে সেটা খাওয়ালে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আসবে । তাই ড্রয়ারের ভেতর থেকে মেডিসিন বের করে এনে তারিনের কাছে বসে যায় । তারিন জ্বরে কেঁপে কেঁপে উঠছে । কেমন জানি নাদিমের ভয় করছে মনের ভেতর । যদি মেয়েটার কিছু হয় তাহলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেনা ।
চোখটা মুঁছে তারিনের মাথায় হাত বুলিয়ে তারিনকে ডাকতে থাকে ।
—তারিন… এই তারিন ।
—নিশ্চুপ । (ঘুমে)
—এই তারিন কি হলো কথা শুনছো না ।
.
তারিন কিছু বলছেনা । এর মানে তারিন জ্বরে কারণে আবল তাবল বলছে ঘুমের মাঝে ।
আবার ডাক দিলো ,
—তারিন… এই তারিন ।
.
তারিন চোখটা একটু খুলে বললো ,
—কি হয়েছে ডাকছো কেনো । ( চোখটা খুলে )
—তুমি কি পাগল নাকি হুমম । জ্বর হয়েছে বলবেনা ।
—আমি ঠিক আছি তুমি ঘুমিয়ে পড়ো না হলে অফিসে যেতে লেট হবে ।
.
কি বলে মেয়েটি জ্বরের ভেতর । কি করা যায় এখন এতো সকালে তো ডাক্তারকে বললে আসবেনা । তারাও তো ঘুম এসেছিলো ।
—তুমি কি বলছো জানো ।
—কি বলছি আমি ।
—কিছুনা । উঠে এই মেডিসিন খাও তো ।
.
আমার কথা শুনে কেমন জানি হয়ে গেলো । কি জেনো ভাবছে ।
—কি হলো উঠো ।
.
তারিন উঠতে চেষ্টা করছে কিন্তু উঠতে পারছেনা । এতো টা জ্বর এসেছে এই রাতের ভেতর বোঝা যাচ্ছে না ।
আমি ধরে উঠিয়ে বসালাম ।
—এই টা খেয়ে নাও ।
—কেনো ।
—তুমি কি পাগল নাকি নিজের শরীরের অবস্থা দেখে বুঝতে পারছোনা ।
.
আমার দিকে তাকালো তারিন ।
তারপর উঠে যেতে চেষ্টা করলো কিন্তু এতোটা জ্বর এসেছে উঠে ধারাতে পারছেনা ।
—এই তুমি কি পাগল হলে নাকি ।
.
আমার কথাটা শুনে আমার চোখের দিকে তাকালো ।
—আমি পাগল হবো কেমনে । আমাকে যেতে দিন আপনার জন্য নাস্তা বানাতে হবে ।
—এই তুমি কি বুঝতে পারছোনা । তুমি ঠিক মতো দাড়াতে পারবেনা ।
—আরে কিছু হবেনা ।
—বেশি কথা না বলে শুয়ে থাকো । ( জোরে বললাম )
.
কথাটা শুনে আর উঠতে চাইছেনা ।
সে কখন থেকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ।
—এই মেডিসিন খেয়ে নাও ।
—আমি ঠিক…
—চুপ খেতে বলছিনা ।
—হুম দাও ।
.
নাদিম মেডিসিন খায়ে দিলো ।
নাদিম তারিনের কপালে জলপট্টি করতে লাগলো ।
কিছুখন জলপট্টি করার পর তারিন আবার ঘুমিয়ে পরলো ।
ঘড়ির দিকে তাকালো দেখে সকাল ৮ বেজে গেছে অলরেডি ।
এদিকে নাদিম তারিনকে একভাবে জলপট্টি করে দিচ্ছে ।
ছোটমা ডাকছে নাদিমকে ।
—নাদিম ।
—জ্বী ছোটমা ভেতরে আসুন ।
.
ছোটমা ভেতরে চলে এলো এসে বললো ,
—কি হয়েছে তারিনের । জলপট্টি করছিস কেনো ।
—খুব জ্বর উঠেছে ।
—কি বলিস মেডিসিন খায় নি ।
—না আমাকে কিছু বলেনি ।
—মেয়েটা অনেক কষ্ট করে । এই সংসারের কাজ করে আবার অনেক রাত পযন্ত পড়াশোনা করে ।
—মামনিকে পাঠিয়ে দাও তো ।
—কেনো ।
—তারিনের মাথায় একটু জলপট্টি করে দিতে । আমি ডাক্তারকে ফোন করি দেখি কি বলে ।
—আমি জলপট্টি করে দিচ্ছি তুই ডাক্তারকে ফোন দে ।
—ঠিক আছে ।
.
আমি ফোন দিলাম ডাক্তারের কাছে ।
ডাক্তারের সাথে কথা বলা শেষ করলাম ।
—কি রে ডাক্তার কি বললো ।
—ডাক্তার বলেছে আধঘন্টা ধেরি হবে ।
—ও তুই গিয়ে ফ্রেশ হও আমি তারিনের কপালে জলপট্টি করছি ।
—না আমি জলপট্টি করে দিচ্ছি আপনি আপনার রুমে যান ।
—দূর পাগল তুই গিয়ে ফ্রেশ হও ।
.
আমি ওয়াশ রুমে গিয়ে দাঁত ব্রাশ করে ফ্রেশ হয়ে বের হলাম ।
.
মামনি খুশি বসে আছে খাটের উপর ছোটমার পাশে । আর তারিনের কাছে আঃ রহিম আঙ্কেল দাড়িয়ে আছে ।
প্রায় আধঘন্টা পার হয়ে গেলো কিন্তু ডাক্তার আসছে না ।
আমি ফোনটা বের করে আবার ফোন দিলাম ।
একবার রিং হয়ে বেজে কেটে গেলো ।
আবার কল দিলাম । কিছুখন বেজে তারপর রিসিভ করলো ,
—হ্যালো ।
—আপনি কোনে ডাক্তার ।
—এই তো রাস্তায় আছি তোমাদের বাসার কাছাকাছি ।
—আচ্ছা তাড়াতাড়ি আসেন ।
—জ্বী তাড়াতাড়ি আসছি ।
.
মামনি বলে উঠলো ,
—কোথায় এখন ।
—বললো কাছাকাছি চলে এসেছে ।
—ও ।
.
বসে পরলাম ছোঁফায় । কেমন জানি খারাপ লাগছে আমার । কিছু ভালো লাগছেনা ।
একটুপর চলে এলো ।
.
ডাক্তার এসে দেখে খুব জ্বর । থ্যামোমিটার দিয়ে জ্বর মাপা হলো । ১০২ ডিগ্রি উঠেছে জ্বর । অনেক জ্বর উঠেছে । তারপর চোখ দেখলো ।
ডাক্তার কিছু ঔষুধ লিখে দেয় । সেগুলি কিনে এনে খাওয়াতে বলে ।
তারপর ডাক্তারকে এগিয়ে দিয়ে আসলাম ।
ডাক্তারকে এগিয়ে দিয়ে আবার রুমে এলাম ।
এখন জলপট্টি দিতে হবে না তাই বসে আসি সবাই ।
ছোটমা বললো ,
—আব্বু বসে রইলি যে মেডিসিন নিয়ে আস ।
—ও হ্যা জ্বী যাচ্ছি ।
—ওই শোন ।
—জ্বী ছোটমা ।
—আমার হার্টের মেডিসিন নিয়ে আসিস তো আব্বু ।
—ঠিক আছে ।
.
আমি বাসা বের হয়ে ফার্মেসীর দোকানের দিকে যাচ্ছি ।
ফোনটা বেজে উঠলো ।
ফোনটা বের করে দেখি Enamul ফোন করেছে ।
—হ্যালো ।
—তুই কোনে ?
—কেনো ?
—বল তো কোনে তুই ।
—ফার্মেসির দোকানে যাচ্ছি ।
—কেনো কি হয়েছে ?
—তারিনের খুব জ্বর ।
—ওহ্ তাহলে যা ।
—কেনো কিছু হয়েছে ?
—না তেমন কিছুনা ।
—বুঝলাম না । ভালো করে বলতো কি হয়েছে ।
—মিষ্টি ।
.
কথাটা শোনার পর ভেতরটা কেমন করে উঠলো ।
—কি হয়েছে মিষ্টির ।
—খুব অসুস্থ ওর দুটি কিডনি ড্যামেজ হয়েগেছে ।
.
কথাটা শোনার পর আমি আর গাড়ি চালাতে পারছিনা । রাস্তার পাশে গাড়িটা থামালাম ।
—কি হলো কথা বলছিস না কেনো । তুই ঠিক আছিস তো ।
—হ্যারে ঠিক আছি । মিষ্টি এখন কোন হসপিটালে আছে ।
—ঢাকা জেনারেল হসপিটালে আছে । আর হয়তো…
.
এই টুকু বলে থেমে গেলো সায়েম ।
—কি আর হয়তো বল ?
—বাঁচবেনা ।
.
কথাটা শুনে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছি কিছু সময়ের জন্য । কি শুনলাম এটা । মেয়েটার জীবন এমন হলো কেনো । অনেক কষ্ট পেয়েছে মেয়েটি ।
—কে বলেছে বাঁচবেনা হুম মিষ্টি বাঁচবে । আমি আসছি হসপিটালে ।
—প্লিজ একটু তাড়াতাড়ি আয় । না হলে…
—চুপ একদম চুপ এ কথা ভুলে মুখে আনবিনা ।
—প্লিজ একটু তাড়াতাড়ি আয় ।
—আমি আধঘন্টার পর আমি আসছি ।
.
ফোনটা রেখে দিলাম । ঘেমে গেছি আমি । ভালো লাগছেনা আমার একদম কথাটা শোনার পর ।
মামের বোতলটা নিয়ে ডক ডক করে পানি খেয়ে নিলাম ।
তারপর আবার ফার্মেসির দোকানের দিকে চলে গেলাম ।
তাড়াতাড়ি করে মেডিসিন কিনে নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিতে মনে হলো ছোটমার মেডিসিনের কথা । আমি আবার গাড়ি থেকে নেমে ফার্মেসির দোকানে এলাম ।
ছোটমার মেডিসিন নিয়ে চলে এলাম বাসায় ।
বাসায় এসে মেডিসিন খায়ে দিলো তারিনকে ছোটমা ।
আমার এরকম চিন্তিত অবস্থা দেখে আমাকে ফাঁকে ডেকে নিলো মামনি ।
—কি হয়েছে নাদিম।
.
মামনির কথায় কেমন জানি অশান্তি বিরাজ করেছে । মনে করেছে কিছু করে ফেলেছি ।
—কো কিছু হয়নি ।
—মামনিকে মিথ্যে বলে লাভ নেই । কি হয়েছে সেটা বল ।
.
এই একটা মানুষ মা যে সব বুঝতে পারে ।
কোনো কিছু লুকানোর যায়গা নেই । যেটা করি না কেনো সব বুঝতে পারে ।
—কি হলো চুপ করে আছিস যে । মিষ্টির কিছু হয়েছে ।
.
কথাটা শুনে অবাক হলাম । মামনি কেমনে জানলো এসব কথা । মিষ্টির কি হয়েছে এটা তো সায়েম শুধু আমাকে বলেছে । মামনিকে বলবেনা আমার নিষেধ আছে ।
—মিষ্টির দুইটা কিডনি ড্যামেজ হয়ে গেছে মামনি ।
.
কথাটা বলে চোখের দু ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরলো ।
—এটা কি বলিস তুই ।
—হ্যা মামনি সত্যি বলছি ।
.
কথাটা শুনে চুপ হয়ে গেছে । মামনি জানে এই মিষ্টি মেয়েটি কে আর কেমন ।
—মামনি ও এখন ঢাকা জেনারেল হসপিটালে আছে । আমাকে দেখতে চাচ্ছে বারে বারে আমি এখন কি করি বলো তো । এদিকে তারিন আর এদিকে মিষ্টি ।
—তুই মিষ্টির কাছে যা । আমি তারিনের কাছে আছি ।
—না মামনি যদি…
.
কথাটা না বলতে দিয়ে মামনি বলে উঠলো ।
—সমস্যা নেই তুই যা আমি তারিনের কাছে আছি ।
.
কিছু একটা ভাবছি আমি । কিন্তু কি ভাবছি আমি নিজে সঠিক জানি না ।
—কি ভাবছিস যা তুই ।
—ঠিক আছে আমি যাচ্ছি তুমি তারিনের কাছে থাকো ।
.
আমি মামনির সাথে কথা বলে হসপিটালের দিকে রওনা দিলাম ।
.
বলেছিলো আধঘন্টা মধ্যে আসছি কিন্তু অনেক ধেরি হয়ে গেছে ।
ভাবতে ভাবতে গাড়ি স্টার্ট দিলাম ।
গাড়ি নিয়ে হসপিটালের দিকে রওনা হলাম ।
প্রায় ২০ মিনিট অতিক্রম করার পর য্যামে আটকে পরে গেলাম রাস্তায় ।
এদিকে ঘড়ির কাটা দ্রুত অতিক্রম করছে ।
কিছু বুঝতে পারছি না । চোখের সামনে শুধু মিষ্টির মুখ খানা ভেসে উঠছে । কিছু ভালো লাগছে না ।
একটু পর য্যাম ছাড়লো ।
আবার হসপিটালের দিকে ছুঁটে চলেছি ।
কিছুখন পর হসপিটালে চলে এলাম ।
প্রায় ৪০ মিনিট লেগেছে আসতে ।
ফোনটা বের করে সায়েমকে ফোন দিলাম ।
—হ্যালো ।
—তুই কোনে ?
—মিষ্টির কেবিনের পাশে বসে ।
—ও কয় নাম্বার কেবিনে ।
—৩০০ নাম্বার ।
—ওকে আমি আসছি ।
.
ফোনটা রেখে কেবিনের দিকে চলে গেলাম ।
সামনের দিকে যাচ্ছি আর ভাবছি কি বলবো মিষ্টিকে বুঝতে পারছিনা ।
ভাবতে ভাবতে পৌঁছে গেলাম ।
কেবিনে ঢোকার ভয় করছে । কি বলবো মিষ্টিকে জানি না ।
আর এতে আমার দোষ কিসের তার আব্বু তো জোর করে বিয়ে দিয়ে দেয় । এতে মিষ্টির বা আমার দোষ কিসের । কিন্তু মনের ভেতর এক প্রকার সংকোচ করছে ।
ভাবতে ভাবতে ঢুকে পরলাম ।
মিষ্টিকে দেখে দাড়িয়ে গেলাম । চোখে পানি চলে এসেগেলো ।
কি অবস্থা হয়েছে মিষ্টির । মনে হচ্ছে কোনো কংকাল শুয়ে আছে । শরীরটা এতো শুকিয়ে গেছে । বোঝা যাচ্ছে না এটা একটা মানুষ ।
সায়েম বলে উঠলো ,
—দাড়িয়ে গেলি কেনো ।
.
মিষ্টি আমার দিকে তাকালো । দেখে কেঁদে দিলো ।
—এম…
.
কথাটা বলতে পারছিনা আমি । হয়তো প্রথম ভালোবাসার মানুষটি যদি চোখের সামনে এরকম কেউ দেখে তাহলে কেউ ঠিক থাকতে পারবে না । ঠিক তেমনি আমিও পারছিনা চোখের সামনে দেখে ।
আমি আস্তে আস্তে মিষ্টির কাছে চলে যাচ্ছি ।
মিষ্টির কাছে গিয়ে ফ্লোরে ধপ করে বসে গেলাম ।
মিষ্টির হাত ধরলাম । জানি না এ কেমন অনুভুতি হচ্ছে আমার ।
মিষ্টি বলে উঠলো ,
—এই তুমি কাঁদছো কেনো ।
—কই না তো । ওটা কিছুনা ।
—এই তুমি কি আগের মতো আছো । নিজেকে একদম পাল্টাতে পারোনি হুম । দেখো একদম কাঁদবেনা বলে দিলাম হুম । আমার তো কিছু হয় নি । জানো ডাক্তার বলেছে কাল বলে লাষ্ট ডেট ছিলো । কিন্তু দেখো আল্লাহ তা’আলা আমাকে আজকেউ বেঁচে রেখেছে । তুমি একদম চিন্তা করবেনা । আমি ভালো হয়ে যাবো । আর শোন তোমার বউকে না আমার কাছে নিয়ে আসবে । আমি দেখবো একটু । আমি তো আর হতে পারলাম না । সে কথা বাধ দাও । আমাকে তোমার বউ দেখাবে কিন্তু । আর একটা কথা তুমি কি আমাকে এখনো ভালোবাসো । দূর আমি কতো বোকা তুমি যদি আমাকে না ভালোবাসতে তাহলে আমি তোমাকে দেখবো বলে তুমি ছুঁটে আসতেনা । আমি না খুব বোকা । আচ্ছা একটা কথা মনে আছে ? ( কেঁদে কেঁদে )
.
আমার চোখের দিকে তাকিয়ে সব কথা বলে দিচ্ছে ।
আমি কিছু বলতে পারছিনা । কি বলবো মুখের ভাষা সব হারিয়ে গেছে । শুধু চোখের পানি ছাড়া কিছু বের হচ্ছে না ।
—আমি জানি তোমার ঠিক মনে আছে । কারণ আমার মতো তুমি না যে সব ভুলে যাও । বলেছিলাম না যে একদিন চাঁদনি রাতে তোমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাবো । খুব সখ ছিলো আমাদের বাসর রাত হবে চাঁদনি রাতে । দুজন চাঁদনি রাতে দুজন চাঁদ দেখবো আর গল্প করে সে রাত পার করে দিবো । কিন্তু ভাগ্যে যে হলোনা । এটা যে আল্লাহুর হাতে । তুমি এটা নিয়ে ভেবেছো আমি জানি ।
এই তুমি আজ রাতে তোমার কাঁধে মাথা রেখে সারারাত গল্প করে কাটিয়ে দিবো । দিবে না বলোনা ? আমি জানি তুমি না করতে পারবেনা । ঠিক আছে রাতে মনে থাকে জেনো ।
একটা কথা বলি ? ( কেঁদে কেঁদে )
.
আমি মাথা দিয়ে বলে দিলাম বলো । আমার যে কথা বের হচ্ছে না মুখ থেকে ।
তারপর মিষ্টি আবার বলে উঠলো ,
—আমি জানি তুমি কথাটা রাখবে । শোন আমার না কেমন জানি লাগছে । প্লিজ আমাকে একটু জরিয়ে ধরবে । আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে । একটু তাড়াতাড়ি ধরোনা প্লিজ ।
.
আমি ফ্লোরে থেকে উঠে মিষ্টিকে বসিয়ে দিলাম । জানি মিষ্টির সময় শেষ । সে কি কথা বলছে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে ।
—কি হলো কি ভাবছো তুমি । আব্বু ও সবাই আছে বলে লজ্জা করছে । আরে সমস্যা নেই ।
.
তারপর মিষ্টি সবাইকে বললো ,
—আব্বু একটু বাহিরে যাবে … ভাইয়া তোমরাও যাও ।
.
তারপর সবাই রুমের বাহিরে চলে গেলো ।
—সবাই চলে গেছে এখন ধরো না । আমি যে আর কথা বলতে পারছিনা । নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে । নাদিম প্লিজ একটু তাড়াতাড়ি করো ।
.
আমি মিষ্টিকে জরিয়ে ধরলাম । এই প্রথম মিষ্টিকে জরিয়ে ধরেছি । আমাদের সম্পর্কের সময় ও বলেছিলো বিয়ে ছাড়া আমাকে টার্চ করতে পারবেনা । তাই আমিও সেটা মেনে নিয়েছিলাম ।
—এই আর একটু জোরে জরিয়ে ধরোনা ।
.
আমি আমার সমস্ত শক্তি দিয়ে জরিয়ে ধরলাম ।
তবুও মিষ্টি বলছে ,
—কি হলো আরও জোরে জরিয়ে ধরো ।
.
আমি আমার সমস্ত শক্তি দিয়ে জরিয়ে ধরলাম ।
—এই একবার বলবে আমি তোমাকে ভালোবাসি । আমি জানি এখন আর সেটা সম্ভব না । কিন্তু তুমি তো বিয়ে করেছো । প্লিজ আর একটি বার বলোনা আমাকে মিষ্টি আমি তোমাকে ভালোবাসি ।
.
এদিকে ফোনটা বেজে উঠলো ।
—এই তোমার ফোন ধরো ।
—ও হ্যা ।
.
মিষ্টিকে ছেড়ে দিলাম ।
ফোনটা বের করে দেখি মামনি ফোন করেছে ।
আমি সায়েমদের ডাক দিলাম । সবাই ভেতরে চলে আসলো ।
ফোনটা বেজে কেটে গেলো ।
একটুপর আবার ফোন দিলো । মিষ্টি আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আমি একটা মিষ্টি হাসি দিলাম ।
তারপর ফোনটা রিসিভ করলাম ।
—হ্যালো মামনি ।
—মিষ্টির কি অবস্থা ।
—ভালো ।
—কি বললি শুনতে পাচ্ছি না ।
—এখন ভালো অবস্থা ।
—শোন আমি কিছু শুনতে পাচ্ছি না । একটু বাহিরে আয় ।
.
আমি মিষ্টির দিকে তাকিয়ে ইশারা করলাম । আমি বাহিরে থেকে কথা বলে আসছি । আমি বাহিরে গেলাম ।
—হ্যালো মামনি শুনতে পাচ্ছেন এখন ।
—হ্যা এখন বল ।
—মিষ্টি সুস্থ আছে কিন্তু যেকোনো সময় মৃত্যু হতে পারে ।
—কি বলছিস এখন ।
—হ্যা মামনি ঠিক বলছি । কারণ ডাক্তার বলেছিলো কাল লাষ্ট ডেট কিন্তু কাল তো চলে গেছে তাই ডাক্তার কিছু বলতে পারছেনা ।
—ও কিভাবে হলো এগুলি ।
—আমি জানতাম না সায়েম বলেছে আজ ।
—ও তুই তো কন্ট্রোল থাকতে পারছিস ।
—জ্বী মামনি ।
—দেখিস তোর কিছু না হয় ।
—তারিনের কি অবস্থা ?
—এখন সুস্থ আছে । একটু কমেছে জ্বর ।
.
ভেতরে থেকে চিৎকারের শব্দ শুনতে পেলাম ।
—মামনি এখন ফোনটা রাখি মিষ্টির কি জেনো হয়েছে ।
.
মামনি কথা বলার সুজুক না দিয়ে ফোনটা কেটে ভেতরে চলেগেলাম ।
আমি একদম স্থির হয়েগেলাম । আমি আর এগুতে পারলাম না । এটা কি হলো মিষ্টি না ফেরার পথে চলে গেছে ।
আমি দৌড়ে মিষ্টির কাছে চলে গেলাম ।
মিষ্টির আব্বু আম্মু সবাই কাঁন্না করছে ।
আমি মিষ্টির হাত ধরে বললাম ।
—মিষ্টি…. এই মিষ্টি ।
.
জানি মিষ্টি আর কথা বলবেনা কিন্তু মনতো আর মানছে না ।
—এই মিষ্টি কথা বলছোনা কেনো । তুমি শুনতে চেয়েছিলেনা আমি আর একবার বলি , মিষ্টি আমি তোমাকে ভালোবাসি ।
.
চোখের পানি অঝরে জরে যাচ্ছে ।
—এই মিষ্টি কথা শুনতে পাচ্ছো না তুমি । আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসতাম । এখন তুমি আমার মনের মাঝে রয়ে গেছো । আমি তোমাকে ভালোবাসি এই কথা শুনতে পেলে না শেষ বারের মতো । আমাকে ক্ষমা করে দিও তুমি ।
.
সায়েম আমার কাঁধে হাত রাখে ।
আমি উঠে সায়েমকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেই ।
সবাই কাঁন্না করছে মিষ্টির পাশে বসে ।
অতঃপর
মিষ্টিকে সিট কেটে এনে বাসায় নিয়ে আসা হয় ।
সবাই কাঁন্নাকাটি করছে । আবার কিছু মানুষ কোরঅান শরীফ পড়তে থাকলো ।
মিষ্টিকে দৌত করে জানাজার জন্য তৈরি করা হয়েছে ।
সব আত্মীয় স্বজন আছে তাই জানাজার জন্য দেরি করা হয় না ।
কিছুখনের মধ্যে জানাজা করা হলো ।
তারপর মিষ্টিকে কবরস্থানে নিয়ে আসা হলো ।
মানে আখেরি নিবাসে রেখে আসা হয় মিষ্টিকে ।
মাটি দিয়ে হুজুর দোয়া করে দেয় ।
আমরা চলে আসি কবরস্থানে থেকে ।
.
আমি বাসার উদেশ্যে রওনা দিলাম ।
বাসার কাছে আসা মাত্র মনের ভেতর কেমন জানি মনে হলো একটুপর মাগরিবের আযান দিবে তাহলে নামাজ আদায় করে যাই ।
আমি বাসার দিকে না গিয়ে মসজিদের দিকে রওনা হলাম ।
.
মসজিদে তবলিগ মানে জামাত এসেছে ।
আমি ওযু খানায় এসে ওযু করে মসজিদে প্রবেশ করলাম ।
একটু পর আযান দেওয়া হলো ।
৩ রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করে নিলাম ইমামের পিছনে ।
সালাম ফিরানোর পর একজন উঠে দাড়িয়ে একটা এলান দেওয়া হলো ।
ইনশা আল্লাহ ! বাকী নামাজ পর ঈমান ও আমলের সম্পর্কে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বয়ান হবে । আমরা সবাই বসি এতে অনেক ফায়দা হবে ।
.
তারপর মোনাজাত করে ।
২ রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করে নিলাম ।
আমি মোনাজাত ধোরে সবার জন্য দোয়া করলাম ।
তারপর সেই কথা মতো সামনের দিকে বসে পরলাম ।
.
জানি না কেমন জানি মনের ভেতর শান্তি বর্সিত হচ্ছে । মনের ভেতর কেমর জানি ভালো লাগা কাজ করে ।
আমি হুজুরের কাছে শুনেছি যদি কারও ভালো না লাগে তাহলে মসজিদে এসে ২ রাকাত নফল নামাজ আদায় করলে মনটা ভালো হয়ে যাবে । আর মনের অজান্তে ভালোলাগা কাজ করবে । কারণ এটা জান্নাতের এক স্থান পৃথিবীতে । তাই হয়তো এরকম শান্তি লাগে মসজিদের ভেতর আসলে ।
আবার শুনেছি ভালো না লাগলে বা ঘুম না আসলে মসজিদে বা ঘরে ২ রাকাত নফল নামাজ পরলে ইনশা আল্লাহ ঘুম আসবে । এবং আল্লাহুর নাম নিয়ে জিকির করলে ইনশা আল্লাহ অবশ্যই ঘুম এসে যাবে অটোমেটিক ভাবে ।
যদি প্রতিদিন ,
১০০ বার → সুবহানআল্লাহ ।
১০০ বার → আলহামদুলিল্লাহ্ ।
১০০ বার → আল্লাহুআকবার ।
.
কেউ যদি উপরুক্ত নাম মোট ৩০০ বার পরে ইনশা আল্লাহ তার ঘুম এসে যাবে ।
আর নেকি পাওয়া যাবে ।
.
এদিকে একজন মসজিদের মেম্বরে বসে বয়ান করতে লাগলো ।
মন দিয়ে শুনছি । আর ভাবছি জীবনে কি করেছি রবের জন্য । সব তো খারাপ কাজ করেছি । তাহলে কি আল্লাহ তা’আলা ক্ষমা করে দিলেন ।
.
যে বয়ান দিচ্ছে সে বলেছে ।
কালেমা : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মদুর রাসূলুলা । (সঃ)
.
যে ব্যক্তি একিন ও এখলাসের সাথে এই কালেমা একবার পাঠ করিবে তাহলে , আল্লাহ তা’আলা তার পিছনের সমস্ত গুণা মাফ করে দিবে । ( সুবহানআল্লাহ )
.
তিনি আরও বললেন ,
যদি কোনো বেদিন মহিলা ( খারাপ মেয়ে ) একিন ও এখলাসের সাথে একবার এই কালেমা একবার পাঠ করিবে আল্লাহ তা’আলা তার পিছনের সমস্ত গুণা মাফ করে দিবেন । ( সুবহানআল্লাহ )
.
তিনি আরও বললেন ,
যদি কোনো কাফের ( বিধর্মি ) এই কালেমা একিন ও এখলাসের সাথে পাঠ করিবে আল্লাহ তা’আলা তার পিছনের সমস্ত গুণা মাফ করে দিবেন । ( সুবহানআল্লাহ )
.
তিনি আরও বলতে থাকে ।
আমি মন দিয়ে শুনে যাচ্ছি । আর নিজের ভেতর নিজেকে প্রশ্ন করছি । কে আমাকে সৃষ্টি করেছে । কেনো সৃষ্টি করেছে । সেটা খোঁজার চেষ্টা করছি । কিন্তু পারছিনা । আমাকে শেষ পযন্ত শুনতে হবে তাহলে বুঝতে পারবো ।
.
তিনি আরও বললেন ,
দেখেন ভাই ,
আমরা কি বলি , যে এই ব্যবসা আমাকে খাওয়াই । এই ব্যবসা না থাকলে আমি চলতে পারতাম না । না ভুল । আপনি যখন গর্ভে ছিলেন তখন কে আপনাকে সেখানে খাইয়াইছেন । আপনি যখন শিশু ছিলেন তখন কে খাওয়াইছেন । আপনার বাবা , দাদা , চাচা ইত্যাদি । না ভাই ভুল । কারণ যখন কোনো ব্যক্তি কোনো কাজ কর্ম না করে তখন ও তো তাকে খাওয়াই ।
.
ভাই মেহতেরাম দোস্ত বুযুর্গ ,
আমরা বলি গাভি ( গরু ) আমাদের দুধ দেয় । না ভুল । কারণ দেখুন গাভিকে জোবাই তরলে এক ফোঁটা দুধ পাওয়া যায়না । কেনো পাওয়া যায়না বলেন । গাভি বলে দুধ দেয় তাহলে তো গাভির ভেতর দুধ থাকবে । না ভুল কারণ দুধ তো সেই দেয় যে আপনাকে আমাকে ও এই গাভিকে সৃষ্টি করেছে । তিনি তার খাজনা থেকে দিয়ে দেয় ।
.
ভাই মেহতেরাম দোস্ত বুযুর্গ ,
আমরা যে ভাত খাই । সবাই তো এক চাউলের ভাত খাই তাই না । কেনো সে একই ভাত খেয়ে দাদা বুড়ো হচ্ছে আর নাতিন যুয়ান ( যুবুক/বড় হচ্ছে ) হচ্ছে । যদি ভাতের শক্তি থাকতো তাহলে দাদাকে বুড়ো করছে নাতিকে পারতো বুড়ো করতে এবং দাদাকে পারতো নাতির মতো যুয়ান ( যুবুক/বড় হচ্ছে ) করতে তাই না ভাই । কিন্তু পারছেনা কেনো । কারণ ভাত যেরকম মাখলুক দাদা/নাতিন সেরকম মাখলুক । কারণ মাখলুক কিছু করতে পারেনা আল্লাহ ছাড়া । আল্লাহ সব কিছু করতে পারে সব মাখলুক ( সব কিছু ) ছাড়া ।
.
ভাই মেহতেরাম দোস্ত বুযুর্গ ,
আমাদের কাকে স্মরণ করা উচিত বলেন ।
যিনি সৃষ্টি করেছেন তাকে । তিনি সৃষ্টি করেছেন কেনো । তার তো উদেশ্য আছে আমাদের যেরকম কোনো উদেশ্য নিয়ে কিছু তৈরি করি সেরকম সৃষ্টিকর্তার উদেশ্য আছে ।
তার কি উদেশ্য ।
আল্লাহুর উদেশ্য কি ।
৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ।
আল্লাহুর হুকুম মতো চলা ।
হুজুর পাক ( সঃ ) এর দেখানো পথে চলা । ( হুজুর পাক (সঃ) কি কাজ করেছেন সে কাজ করা । )
তাহলে জান্নাত পাওয়া যাবে ।
.
ভাই মেহতেরাম দোস্ত বুযুর্গ ,
যদি আমাদের সৃষ্টিকর্তা যদি এই পুতুল হয়ে থাকে তাহলে ।
গিয়ে তাকে হত্যা করেন । যদি সে সৃষ্টিকর্তা হয় তাহলে নিজেকে রক্ষা করবে আর যদি না পারে তাহলে কেনো সে সৃষ্টিকর্তা । সে তো নিজের জীবন রক্ষা করতে পারেন নি সে কেমনে আপনার জীবন বা আপনাকে রক্ষা করবে । একটু ভাবুন । একটু চিন্তা করুন ।
.
ভাই মেহতেরাম দোস্ত বুযুর্গ ,
সৃষ্টিকর্তা তো সে যিনি নিজেকে রক্ষা করতে পারে । যার কোনো মৃত্যু হয় না ।
আপনারা হয়তো এটা ভাবছেন । আল্লাহ কোথায় ।
.
ভাই মেহতেরাম দোস্ত বুযুর্গ ,
আল্লাহ আছেন এবং আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন ।
তিনি একমাত্র সৃষ্টিকর্তা । তিনি ব্যাতিত কোনো সৃষ্টিকর্তা নাই ।
আল্লাহ আমাদের সৃষ্টিকর্তা , আল্লাহ আমাদের পালনকর্তা , আল্লাহ আমার জন্ম,মৃত্যু তার হাতে ইত্যাদি ।
এই বিশ্বাসের নাম হচ্ছে ঈমান ।
.
সে ব্যক্তি আরও অনেক কিছু বলছে ।
অতঃপর
বয়ান শেষ করে মোনাজাত করে দিলেন ।
আমি সেটা শুনে মনটা নরম হয়ে গেলো ।
আমি বাসায় রওনা দিলাম ।
রাস্তায় দিয়ে বাড়ি যাচ্ছি আর ভাবছি । তারিন মাঝে মাঝে হাদিস বলতো কিন্তু মন দিয়ে শুনতাম না আর বিশেষ করে বোঝার চেষ্টা করিনি এবং কি চিন্তা ফিকির করিনি ।
ইনশা এখন তো বুঝতে পারছি জীবনে কি করেছি ।
.
কিছুখন পর বাসায় পৌঁছেগেলাম ।
বাসার এসে রুমে চলে গেলাম ।
দেখি তারিন শুয়ে আছে । আমি কিছু বললাম না । হয়তো খারাপ লাগছে তাই ঘুমিয়ে গেছে ।
আমি গিয়ে তারিনের পাশে শুয়ে পরলাম ।
আমি শুয়ে পরেছি তখন তারিন আমার দিকে ঘুরে তাকালো ।
রাগি ভাব আছে চোখে । মনে হচ্ছে রেগে আছে ।
আমি কিছু বলছিনা তারিনকে । তারিন রেগে আছে খুব ।
—কোথায় ছিলেন হুম । কতবার ফোন করেছি হ্যা । একটু খেয়াল আছে । কেনো এতো বারে বারে ফোন দিয়ে যাচ্ছে আর ফোন রিসিভ করার টাইম নাই । কত টেনশন ফিল করেছি জানেন । তা জানবেন কেনো নিজে তো আমাকে কেয়ার করেন না । সব সময় প্রতিশোধ নিতে হয় । সে ভুলের ক্ষমা কি করা যায় না । ( আভিমানী কন্ঠে )
.
আমি তারিনের কথা শুনে ফোনটা বের করে দেখি ঠিকই তো অনেক বার ফোন দিয়ে ছিলো ।
আমি তারিনের দিকে তাকিয়ে হাসি দিলাম ।
—একদম এই হাসি হাসবেন না ।
—কেনো কি হয়েছে । ফোন তো সাইলেন্ট ছিলো ( Silent ) ।
—আবার বলছে কেনো কি হয়েছে । কোথায় ছিলেন সেটা বলেন ।
—মসজিদে ।
.
আমার কথাটা শুনে তারিন অবাক হয়ে গেলো ।
—সত্যি বলছো তুমি ।
—হ্যা সত্যি বলছি ।
—আলহামদুলিল্লাহ্ । আল্লাহ আপনাকে অনেক অনেক শুকুরিয়া ।
—কেনো ।
—আরে আল্লাহুর কাছে আমি প্রতিদিন আপনার জন্য দোয়া করতাম । আল্লাহ তা’আলা জেনো আপনাকে হেদায়েত দান করুক । সেটা মনে হয় আল্লাহ কবুল করেছেন ।
—হয়তো তাই । জানি না আমি হেদায়েত পেয়েছি কিনা ।
—ইনশা আল্লাহ প্রতিদিন নামাজ পড়ে আল্লাহুর কাছে দোয়া করবেন । আল্লাহ জেনো আপনাকে হেদায়েত দান করে । আল্লাহ তা’আলার কাছে হেদায়েত চেয়ে নিতে হয় ।
—ইনশা আল্লাহ দোয়া করবো ।
.
কথা বলতে বলতে আযান দিলো ।
—এই আযান দিয়েছে এখন যাও ।
.
আমি উঠে ওযু করে নামাজ আদায় করতে মসজিদে রওনা দিলাম ।
.
নামাজ পড়ে এসে খাওয়া দাওয়া করলাম ।
খাওয়া দাওয়া করে শুয়ে পরলাম ।
কিছুখন তারিনের সাথে কথা ।
কথা বলার পর শুয়ে ভাবতে লাগলাম । সেই শোনা কথা গুলি ।
ভাবতে ভাবতে লাগলাম ।
ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি মনে নেই ।
ফজরের সময় তারিন আর আমি দুজন উঠে ওযু করে নামাজ আদায় করার জন্য প্রস্তুতি ।
আমি মসজিদে চলে এলাম আর তারিন রুমে নামাজ পড়বে ।
মসজিদে নামাজ পড়ে কিছুখন তবলিগের বয়ান শুনতে পেলাম ।
তাদের জিম্মাদার ( আমির ) সাহেবের সাথে কথা বলে এলাম তারা কবে যাবে ।
জিম্মাদার ( আমির ) বললেন আর ২ দিন থাকবে মসজিদে ।
আমি তাদের সাথে কথা বলে বাসার দিকে রওনা হলাম ।
আমার এরকম দেখে সবাই অবাক হলো । হঠাৎ করে কি দেখছে আমার কাছ থেকে ।
আমি আমার রুমে চলে এলাম ।
দেখি তারিন কি জেনো করছে ।
আমি গিয়ে শুয়ে পরলাম । তারিন বললো ,
—আজ কেমন লাগছে ।
—জ্বী আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো ।
—দেখছেন বলেছিলাম না নামাজ পড়লে সব দিক দিয়ে ভালো থাকবে মন , শরীর ইত্যাদি ।
—ইনশা আল্লাহ আমি ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবো ।
—আলহামদুলিল্লাহ্ । সব আল্লাহুর ইচ্ছা ।
—সেখানে জামাত ( তবলিগ ) এসেছে । তারা বলেছে ।
যে ব্যক্তি ৫ ওয়াক্ত নামাজ সময়ের প্রতি লক্ষ রেখে , গুরুত্বসহ কারে আদায় করিবে আল্লাহ তা’আলা ৫ টি পুরুস্কার দান করিবেন ।
—সুবহানআল্লাহ । কি কি ?
—১ টি কবরে আর বাকী ৪ টি আখিরাতে ।
১ → রিযিকের পেরেশানি দূর করে দিবেন ।
আমরা অফিসে কাজ করি , খেতে খামারে কাজ করি ইত্যাদি কাজে বরকত দিবে । ৫ ওয়াক্ত নামাজ সঠিক সময়ে আদায় করলে গুরুত্বসহকারে ।
অল্প কাজের মাঝে বরকত দান করবে আল্লাহ তা’আলা ।
২ → কবরের আযাব হটায়া দিবে ।
৩ → পুলসিরাতের পুল বিদুৎ ন্যায় গতিতে পার করে দিবেন ।
৪ → আমল নামা ডান হাতে দিবে ।
৫ → বিনা হিসাবে জান্নাতে দিবে ।
—সুবহানআল্লাহ ।
—আরও অনেক কিছু বলেছে ।
—ঠিক আছে এখন ফ্রেশ হয়ে আসো খাবার খাবে ।
—ওকে ।
.
আমি ওয়াশ রুমের দিকে যাচ্ছি । তখন পিছন থেকে ডাক দিয়ে উঠলো ,
—শুনুন ।
.
আমি দাড়িয়ে গেলাম ।
—জ্বী ।
—সায়েম ভাইয়া ফোন দিয়েছিলো তাড়াতাড়ি যেতে বলেছে ।
—ঠিক আছে ।
.
আমি ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে খাবার খেতে যাই ।
খাবার খেয়ে রেডি হচ্ছি সায়েমদের বাসায় মানে মিষ্টিদের বাসায় ।
সায়েম আর মিষ্টি দুজন চাচাতো ভাই বোন ।
আমি রেডি হয়ে রওনা দিলাম মিষ্টিদের বাসায় ।
.
প্রায় ১ ঘন্টা মধ্যে আমি চলে এলাম মিষ্টিদের বাসায় ।
কিছু মানুষ খাওয়ানো হবে ।
অতঃপর
বাসায় চলে এলাম ।
বাসায় এসে সোঁজা রুমে চলে গেলাম ।
রুমে এসে দেখি তারিন নাই ।
একবার ডাক দিলাম তারিন বলে কিন্তু কোনো উত্তর পেলাম না ।
আমি ওয়াশ রুমে চলে গেলাম ।
.
ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে দেখি তারিন নেই ।
বাসাটা কেমন জানি মনে হচ্ছে । সবার কি হয়েছে ।
আমি কিছু না বেবে শুয়ে পরলাম ।
শুয়ে ভাবতে লাগলাম । তারিনকে আর কষ্ট দিবোনা ।
আজ থেকে স্ত্রীর মর্যাদা দিবো ।
আজ সকালে স্ত্রীদের সম্পর্কে বয়ান দিয়েছে ।
তাই মসজিদ থেকে নিয়ত্য করেছি তারিনকে স্ত্রীর মর্যাদা দিবো ।
শুয়ে ভাবতে ভাবতে এপাশ হতে একটা চিরকুট পেলাম বালিশের পাশে ।
শোয়ার সময় তো এটা দেখতে পেলাম না নাকি খেয়াল ছিলোনা ।
চিরকুটটা হাতে নিয়ে ভাবতে লাগলাম ।
কে রেখেছে এখানে । তারিন তো রাখে নি ।
আবার তারিনকে ডাক দিলাম ।
—তারিন…. এই তারিন ।
.
কোনো উত্তর নাই ।
হাতে নিয়ে ভাবলাম । তারিন তো রেখে যায় নাই । কথাটা মনে হতে চিরকুটটা ভাজ খুললাম ।
আমি অবাক হলাম ।
আমার চোখ দিয়ে অশ্রু আসতে লাগলো ।
কেনো এমন করলো আমার সাথে ।
চলবে