নীল ক্যানভাস,পর্বঃ০৩

0
833

নীল ক্যানভাস,পর্বঃ০৩
লেখিকা:তানজিল_মীম

“হা হয়ে তাকিয়ে আছে ক্লাসরুমের সবাই দিয়ার দিকে’!!আর দিয়ার রাগে দুঃখে মাথা গরম হয়ে গেছে’!!রাগি লুকিং এ তাকিয়ে আছে সে অনিকের দিকে!’

“কিছুক্ষন আগে….

“মেঘলা আর দিয়া ঢুকলো ক্লাসরুমে’!!এমন সময় পিছন থেকে দিয়ার মাথায় হাত ভরা বালি এনে ওর মাথায় দিয়ে দিল অনিক ঘটনাক্রমে দিয়ার চোখ বড় বড় হয়ে যায় আর বাকি সবাই জাস্ট হা হয়ে তাকিয়ে আছে দিয়ার দিকে’!!অনিক দিয়ার মাথায় বালি দিয়ে হাসতে হাসতে বলে উঠলঃ

—“কেমন দিলাম “এলইডি বাল্ব” কালকে আমাদের বল নিয়ে যাওয়ার জন্য এটা তোর শাস্তি….

“দিয়া অনিকের দিকে রাগি লুকিং এ তাকিয়ে বললোঃ

—“ফাটা টেনিস বলের” বাচ্চা তোরে আজকে আমি খাইছি আজ তোর একদিন কি আমার একদিন…

“বলেই দিয়া দৌড়াতে লাগলো অনিকের দিকে!’

“এদিকে…

“দিয়ার কান্ডে অনিকের প্রান যায় যায় অবস্থা অনিক বুঝে গেছে দিয়া ভয়ংকরভাবে রেগে গেছে আর তাই এখান থেকে বাঁচতে হলে তাকে পালাতে হবে!’এই ভেবে সেও দিল দৌড়,তারপর শুরু হলো টম এন্ড জেরির দৌড়!’পুরো ভার্সিটি কাঁপিয়ে ফেলেছে দিয়া আর অনিক!’ওদের কান্ডে ক্লাসরুমের সবাই হাসতে হাসতে শেষ!’এটা নতুন কিছু নয় এই ক্লাসের দিয়া আর অনিকের মধ্যে টম এন্ড জেরির সম্পর্ক,এরা কোনোদিন ভালোভাবে নিজেদের সাথে কথা বলেছে কিনা সেটায় সবার সন্দেহ আছে,কারন কেউ কখনো দিয়া আর অনিককে ঝগড়া করা ছাড়া দেখে নি,তবে আজ অনিক যা করলো তারপর দিয়া অনিককে ছাড়বে কিনা সন্দেহ আছে সবার…

“মেঘলা দুজনের কান্ডে হাসতে হাসতে গিয়ে বসে পরলো নিজের জায়গায় উদ্দেশ্য হচ্ছে কখন দিয়া আসবে সাথে শুভ্রতাও!’

_______

“সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে শুভ্রতা,চোখের চশমাটা একবার ঠিক করে শ্বাস ফেলে উপরে উঠছে সে,কালকের চেয়ে আজ খুব ভালো লাগছে শুভ্রতার এর দুটো কারন এক আজকে কালকের মতো কোনো ছেলের মুখোমুখি হতে হয় নি তাকে,দুই তার চেনা প্রান প্রিয় বেস্টু আছে সাথে!’ঠোঁটের কোনে এল চিলতে হাসি ফুটে উঠলো শুভ্রতার,ভালো লাগছে তার এমন সময় সিঁড়ির উপর থেকে তুমুল বেগে দৌড়ে নিচে নামতে লাগলো অনিক আর দিয়া,হঠাৎই দিয়ার সাথে বারি খেয়ে নিচে পড়ে যেতে নেয় শুভ্রতা,সাথে সাথে পিছন থেকে কেউ তাকে ধরে ফেলে!’আর অনিক দিয়া বিষয়টা তেমন খেয়াল না করে তাদের মতো দৌড়াতে ব্যস্ত…

“ভয়ে কাচুমাচু হয়ে চোখ বন্ধ করে আছে শুভ্রতা!’কি থেকে কি হলো সব যেন তার মাথার উপর দিয়ে গেল কারো হাত শক্ত করে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে সে,চোখ খোলার সাহস হচ্ছে না তাঁর!….

“এদিকে…

“শুভ্রতার ভয়ার্ক মুখের দিকে তাকিয়ে আছে আয়ুশ!’শুভ্রতাকে সে অনেক আগেই দেখেছিল সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে তারও কিছু কাজ ছিল উপরে তাই সেও পিছন পিছন আসছিল শুভ্রতার,তাই তো শুভ্রতার পড়ে যেতে নিলেই ধরে ফেলে সে!’আয়ুশ শুভ্রতার দিকে তাকিয়েই বলে উঠলঃ

—“এই যে মিস চাশমিশ ভয় পাওয়া বন্ধ হয়ে গেলে এখন চোখ খুলতে পারেন…

“কোনো ছেলের কন্ঠ কানে আসতেই কেঁপে উঠল শুভ্রতা!’থরথর করে কাঁপতে লাগলো তার শরীর,কোনোভাবে আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালো সে, উপরেই আয়ুশকে দেখে কিছুটা ঘাবড়ে গেল সে’!!তাড়াতাড়ি আয়ুশকে ছাড়িয়ে ভয়ে ভয়ে বললো সেঃ

—“সরি ভাইয়া বিশ্বাস করুন আমি ইচ্ছে করে কিছু করি নি,হুট করেই হয়ে গেছে সবটা,আই এক্সটেমলি সরি ভাইয়া..

“পুরো এক শ্বাসে কথাগুলো বলে মাথা নিচু করে ফেললো শুভ্রতার’!!শুভ্রতার কান্ডে আয়ুশ বলে উঠলঃ

—“কুল ডাউন মিস চাশমিশ সবটা দেখেছি আমি,সো সরি বলার দরকার নেই,এখন ক্লাসে যাও…

“আয়ুশের কথা শুনে মাথা নাড়িয়ে চটজলদি চলে যায় শুভ্রতা’!!শুভ্রতার কান্ডে হাল্কা হাসলো আয়ুশ তারপর দৌড়ে উপরে উঠতে লাগলো সে,আয়ুশ বুঝতে পারে না___

“এই মেয়েটার এত ভয় কিসের?’

______

“ভার্সিটির মাঠের যত ময়লা আর বালি আছে সব দিয়ে দিয়া আর অনিক ভূত হয়ে গেছে,দুজনেই দুজনের উপর পুরো রেগে ফায়ার ঝগড়াও করছে সাথে বালি দেওয়া তো আছেই,হঠাৎ দুজনেই ক্লান্ত হয়ে বসে পরলো মাঠের উপর তারপর ক্লান্ত ভরা কন্ঠে বলে উঠল দিয়াঃ

—“শালা, শয়তান, উগান্ডা,রানু মন্ডলের দাদীর জামাই, বান্দর, খচ্চর আমারে বালি দিয়া ভূত বানাইছোস তোর কপালে ভালো বউ জুটবে না, একটা ঝগড়াটে বউ জুটবে সারাদিন শুধু তোর সাথে ঝগড়া করবে আর মারামারি করবে হুহ…

“দিয়ার কথা শুনে অনিকও ক্লান্ত কন্ঠে বলে উঠলঃ

—“কি বললি তুই?’ আমার কপালে ভালো বউ জুটবে না,আমার কপালে যদি ভালো বউ না জুটে তবে তোর কপালেও ভালো জামাই জুটবে না দেখিস সারাদিন তোরে দিয়া মাজা কোমড় মাথা টিপাইবে,সারাদিন ঝগড়া মারামারি তো করবেই সাথে তোরে দিয়া ঘরের যতো কাম আছে সব করাইবে তোরে কাজের বুয়া বানাইয়া রাখবে…

“অনিকের কথা শোনার সাথে সাথে দিয়া অনিককে কলার চেপে ধরে মাঠের মাঝখানে শুয়ে দিয়ে রাগী কন্ঠ বললোঃ

—“কি বললি তুই আজকে তো তোরে আমি…

—“আরে কি করছিস ছাড় আমায়…

—“ছাড়বো মানে তুই কি বললি আমায়, আমার জামাই আমাকে কাজের বুয়ার মতো রাখবে…

“অনিক কিছু বলতে এর আগেই দূর থেকে পিন্সিপালকে আসতে দেখে বলে উঠল সেঃ

—“আরে ছাড় আমায় পিন্সিপাল আসছে…

—“কি…

“বলেই দিয়া তাকালো পিছনে বেশ খানিকটা দূরত্ব রেখে পিন্সিপাল এগিয়ে আসছে এদিকেই’!!দিয়া পিন্সিপালকে দেখেই তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেয় অনিককে তারপর বললোঃ

—“শুধুমাএ স্যার চলে আসলো তা না হলে…

—“তা না হলে কি হুহ জানা আছে তোর দৌড়ে কত দূর,ভাঙা এলইডি বাল্ব কোথাকার…

–“হু যা যা ফাটা টেনিস বল…

“এরই মাঝে পিন্সিপাল এসে হাজির ওদের সামনে’!!কাটকাট গলায় বলে উঠল উনিঃ

—“এখানে কি হচ্ছে?’

—“না মানে ছাড় কিছু হয় নি..(অনিক)

“পিন্সিপাল দুজনের অবস্থা দেখে বলে উঠলঃ

—“এসব কি অবস্থা করেছো নিজেরদের…

—“না আসলে হয়েছে কি স্যার বালিগুলো শুকনো না ভিজা পরিক্ষা করছিলাম…(অনিক)

—“ইডিয়ট..(বিড়বিড় করে বললো দিয়া)

“পিন্সিপাল দুজনের দিকে’ তাকিয়ে রইলো রাগী লুকিং এ!’ হয়তো উনি কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে এখানে কি হচ্ছিল?’

“কিছুক্ষন পর পিন্সিপাল দুজনকে শাস্তি দিয়ে চলে গেলেন!’

“পাশাপাশি কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে দিয়া আর অনিক!’দুজনেরই লজ্জা লাগছে কিন্তু কি করার ভুল যখন করেছে শাস্তি তো পেতেই হবে!’হঠাৎই হেঁসে উঠল অনিক আর বললোঃ

—“বেশ হইছে স্যারে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছে এলইডি বাল্ব কোথাকার,,

—“হুম বেশ হইছে তোকেও কান ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছে ফাটা টেনিস বল কোথাকার,,

“লে বুঝো ঠেলা কান ধরেও দুজন ঝগড়া করছে!’..

!!

“ক্লাস শেষে করিডোরের বাহিরে পাশাপাশি হাঁটছে শুভ্রতা আর মেঘলা আজকের মতো আর ক্লাস করতে ইচ্ছে করছে না তাদের,পুরো ক্লাসে দিয়ার কোনো খবর ছিল না তাই দিয়াকে খুঁজতেই হাঁটছে শুভ্রতা আর মেঘলা!’হঠাৎই শুভ্রতার ফোনটা বেজে উঠল তাই সে একটু সাইডে চলে গেল!’

“আনমনেই হাঁটছে মেঘলা,আজকে একবারও তানভীরকে দেখে নি সে’!!এমনটা নয় মেঘলা চায় না তানভীরকে দেখতে,মনে মনে চায় সে আড়ালেই দেখা হোক তার আর তানভীরেরে কিন্তু সামনাসামনি নয়,মেঘলা তো এটাও ভেবে নিয়েছে কাল তানভীর তাকে দেখে নি!’ছোট্ট দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসলো মেঘলার!’আজও সে তানভীরকে সেই আগের মতো ভালোবাসে হয়তো তানভীরের জায়গা সে কোনোদিনও অন্য কাউকে দিতে পারবে না তাই তো আজও ভুলতে পারে নি সে তানভীরকে!’মেঘলার ভাবনা মাঝখানে পিছন থেকে বলে উঠল কেউঃ

—“মেঘুপরী”…

“বহুদিন পর হঠাৎই সেই চিরচেনা মানুষের কাছ থেকে চিরচেনা নাম শুনে কেঁপে উঠল মেঘলা’!!পিছন ঘোরার সাহস হচ্ছে না তাঁর!’বুকের হার্টবিট বেড়ে চলছে তার!’মেঘলা নীরবেই দাঁড়িয়ে পরলো ওখানেই’!!মেঘলাকে দাঁড়িয়ে পরতে দেখেল তানভীর আবারো বলে উঠলঃ

—“তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে মেঘুপরী…

“মেঘলা পিছন ঘুরে না তাকিয়ে বললোঃ

—“কিন্তু আপনার সাথে আমার কোনো কথা নেই…

—“প্লিজ একবার আমার কথাটা তো শোনো সেদিন..

“আর কিছু বলার আগেই সেখানে আয়ুশ এসে হাজির’!!আয়ুশ বলে উঠল তাকেঃ

—“তুই এখানে আর তোকে আমি সারা ভার্সিটি খুঁজে বেড়াচ্ছি,,

—“হুম কি হয়েছে..?'(মেঘলার দিকে তাকিয়ে)

.
.
.

“এদিকে মেঘলা আর কিছু না বলেই হন হন করে দ্রুত গতিতে চলে গেল’!!এখানে থাকলে সে আবার দূর্বল হয়ে পরবে আর সে চায় না এটা হতে…

“আর তানভীর হতাশা নিয়ে তাকিয়ে রইলো মেঘলার যাওয়ার পানে’!!আজও বলা হলো না মেঘলাকে…

“মেঘলা যেতেই তানভীর বলে উঠল আয়ুশকেঃ

—“কি হয়েছে তোর…

—“আরে ভুলে গেলি আজকে আমরা সবাই মিলে রেস্টুরেন্টে খেতে যাবো…

—“ওহ হ্যাঁ মনে পরছে চল…

—“এখানে কি করছিলি তুই?’

—“না তেমন কিছু নয় চল…

“এতটুকু বলে তানভীর চললো আয়ুশের সাথে!’

_______

“একরাশ অস্থিরতা নিয়ে হেঁটে চলছে মেঘলা কষ্ট হচ্ছে তার বড্ড কষ্ট,এমন সময় কাঁধে হাত রাখলো কেউ সাথে সাথে কেঁপে উঠল মেঘলা!’ভয়ে ভয়ে পিছন ঘুরে তাকালো সে সামনেই দিয়াকে দেখে আর দিয়ার অবস্থা দেখে অবাক হয়ে বললো সেঃ

—“এসব কি অবস্থা করেছিস নিজের…

—“আর বলিস না সব ওই ফাটা টেনিস বলের জন্য হয়েছে তা তুই এখন যাচ্ছিস কোথায়?’

—“কোথায় যাচ্ছি মানে আমি তো তোকেই খুঁজতে ছিলাম..

—“ওহ,চল তাহলে বাড়ি যাই…

—“হুম চল…

“এর মধ্যে শুভ্রতাও হাজির ওদের সামনে,দিয়ার অবস্থা দেখে অবাক হয়ে বললো সেঃ

—“এগুলো কি?’

“শুভ্রতার কথা শুনে দিয়া বলে উঠলঃ

—“কি আর কমু দুঃখের কথা বোইন,সবই আমার কপাল…

“শুভ্রতা দিয়ার কথার আগামাথা বুঝতে না পেরে বলে উঠলঃ

—“মানে…

—“মানে জানতে হলে ফ্লাসবেকে যেতে হবে

এতটুকু বলে দিয়া তার আর অনিকের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর কথা বললো,সব শুনে শুভ্রতা আর মেঘলা হাসতে হাসতে শেষ!’

”ওদের হাসি দেখে বলে উঠল দিয়াঃ

—“তোরা হাসছিস আর আমার মান সম্মান সব প্লাস্টিক হয়ে গেল…

“বলে হাঁটা শুরু করল দিয়া!’আর ওর পিছন পিছন মেঘলা, শুভ্রতা!’

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here