কৃষ্ণাবতী পর্ব-৯,১০,১১

0
1351

কৃষ্ণাবতী
পর্ব-৯,১০,১১
মুশফিকা রহমান মৈথি
৯ম_পর্ব

হঠাৎ করেই বুকের বা পাশে চিনচিনে ব্যাথা অনুভূত হলো কৃষ্ণার। না বুঝেও তার মাষ্টারমশাইকে মন দিয়ে দিয়েছে যে সে। এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই। তাই তো মনটা বারে বারে হাহাকার করছে। বিদ্রোহ করছে। দাদানের পিছু পিছু ঘরের চৌকাঠ পার হবে ঠিক তখনই পিছন থেকে চিরচেনা কন্ঠ শুনতে পায় কৃষ্ণা। পেছন ফিরে তাকালে দেখতে পায় দেবব্রত কঠোর দৃষ্টি প্রয়োগ করে তাকিয়ে আছে। নির্লিপ্ত কন্ঠে দাদানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– নিজে যাচ্ছো যাও, আমার বউকে নিয়ে যাচ্ছো কেনো?

দেবব্রতের নির্লিপ্ত কন্ঠের কথাটা শুনে হতবাক হয়ে যায় উপস্থিত সবাই। অবন্তীকা দেবী যেনো ছেলের এরুপ কথায় বিষম খেয়ে উঠেন। আজ দুদিনে এরুপ কোনো কথাই ছেলের কাছ থেকে শুনেন নি তিনি। ছেলের এমন ১৮০° ঘুর্ণণে অবাক হয়ে গেলেন তিনি। প্রদীপ বাবু ভ্রু কুঞ্চিত করে তার নাতীর দিকে তাকিয়ে আছেন। দেবব্রত ও স্থির দৃষ্টিতে প্রদীপ বাবুর দিকে তাকিয়ে রইলো। কৃষ্ণা যেনো স্বপ্ন দেখছে। যে ব্যাক্তি বিয়েটাকেই মানে না, সেই ব্যাক্তি আজ দৃঢ় কন্ঠে তাকে নিজের বউ দাবি করছে। দেবব্রত আবারও বলে উঠলো,
– তোমার থাকতে ইচ্ছে না হলে চলে যাও। কৃষ্ণা এ বাড়িতেই থাকবে। এটা যে ওর অধিকার।

বলেই কৃষ্ণার হাত থেকে ট্রাংকটি নিজের হাতে নিয়ে নেয় সে। বা হাতে ট্রাংকটি নিয়ে ডান হাতে কৃষ্ণার হাতটি ধরে হাটা শুরু করে দেবব্রত। দেবব্রতের কাজে মুচকি হাসি হাসেন প্রদীপ বাবু। তিনি এতোদিন পর পাপবোধ থেকে মুক্তি পেয়েছেন। বুকে একটি স্বস্তি বয়ে যাচ্ছে। এদিকে নারায়ন বাবুর মনে স্মিত খটকা লাগে। দেবব্রত কি অতীতের কিছু জেনে গেলো তবে!!

৭.
দেবব্রতের খাটে পা দুলিয়ে বসে রয়েছে কৃষ্ণা। দেবব্রত তার সামনে বসা। মাথা নিচু করে আছে। কিভাবে কথা শুরু করবে বুঝে উঠতে পারছে না। কৃষ্ণা অবাক নয়নে তার বরকে দেখে যাচ্ছে, কপালে চিন্তার ভাজ, মুখে গ্লানির ছাপ স্পষ্ট, নত চোখে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে আর ক্ষণে ক্ষণে নখ খাচ্ছে। কৃষ্ণার বেশ হাসি পেলো, এতো বড় মাষ্টারমশাই এমন অবাক করা কাজ করবে এটার হিসেব মিলাতে পারছে না সে। এবার একটু রাগী কন্ঠ বানিয়ে দেবব্রতের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো সে,
– নিচে এটা কি বললেন সবাইকে? আমি আপনার বউ? আর আমাকে তো আপনার৷ সহ্যই হয় না তবে কেনো আটকে রাখলেন আমাকে?

এবার দেবব্রত মাথা তুললো। কৃষ্ণা তার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। দেবব্রতের বুঝতে বাকি রইলো না, সকালের ব্যাবহারে মেয়েটি বেশ কষ্ট পেয়েছে। গ্লানিমিশ্রিত কন্ঠে বললো,
– সকালে কথাটা আমি সেভাবে বলতে চাই নি।
– তো কিভাবে বলতে চেয়েছেন? অপয়াকে কে শুদ্ধ ভাষায় ও অপয়াই বলা হয়।
– আমি সে সব কিছুই বলতে চাই নি। আসলে কালকে মন- মেজাজ ভালো ছিলো না। সব কিছু মিলিয়ে বেশ অসহায় হয়ে গেছি। তুই বুঝবি না ছোট তো? এই শেষবারের মতো ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আর এমন করবো না আমি।
– বেশ আমি ক্ষমা করে দিলাম। কিন্তু মাষ্টারমশাই, আমাকে আটকালে কেন? আমি চলে গেলে আপনার সব সমস্যাই তো দূর হয়ে যেতো। দিদিমনিকে ও কষ্ট পেতে হতো না।

কৃষ্ণার সরল মনের প্রশ্নের উত্তর যে দেবব্রতের কাছেও নেই। হয়তো গ্লানি বোধে, দায়িত্ববোধের কারণে এই কাজটা করলো সে। যে ত্যাগ কৃষ্ণার মা-বাবা তার জন্য করেছে, তার তুলনায় এটা হয়তো খুব সামান্য। স্মিত হাসি ঠোটে টেনে বললো,
– তুই যে আমার দায়িত্ব কৃষ্ণা। সেটাকে এড়ানোর শক্তি মহামায়া আমাকে দেয় নি। ভালোবাসাকে অস্বীকার করলেও এই দায়িত্ব এড়ালে নরকেও আমার ঠায় হবে না। শ্যামলী মাসির অনেক ঋণ যে বাবার উপর আছে। সেটা কে আমার ই বয়ে যেতে হবে।
– মার ঋণ যদি থাকে সেটা তো বাবামশাই এর উপর। আপনার উপর তো নেই। অন্যের ভার নিজের কাধে নিবেন না মাষ্টারমশাই। একটা সময় নিজেই দিশেহারা হয়ে যাবেন। আর আমার মতো পিতৃপরিচয়হীনা মেয়ের জন্য এতো ব্যাকুল হবেন না। দয়ার ভার সহ্য করার ক্ষমতা যে আমার ও নেই

কৃষ্ণার কথাগুলো দেবব্রতকে অবাক করে দেয়। এতো ছোট মেয়ে এতো সুন্দর করে কথাও বলতে জানে। কৃষ্ণার চোখজোড়া উজ্জ্বল, উদ্দীপ্ত; মুখের তেজ যেন দেবব্রতকে ও ছুয়ে যাচ্ছে। সৎ বাবার মেয়ে বলে কথা। কই সে তো এভাবে দৃঢ় কন্ঠে কাউকে কোনো কথা বলতে পারে না। কারণ তার বাবা একজন অপরাধী। দেবব্রত ঠান্ডা কন্ঠে বললো,
– আমাকে ঋণের বোঝা থেকে মুক্তি দিবি?
– কিভাবে?

অবাক নয়নে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় কৃষ্ণা। দেবব্রত দেরী না করে উচ্ছ্বাসিত কন্ঠে বললো,
– লেখাপড়া করতে হবে। অনেক বড় হতে হবে। এই ভট্টাচার্য পরিবারের যোগ্য বউ হয়ে উঠতে হবে। আমি যাতে গর্বের সাথে বলতে পারি তুই আমার বউ, আমার অর্ধাঙ্গিনী। পারবি না?
– পারবো, তবে আপনি আমাকে সাহায্য করবেন তো?
– হ্যা করবো। যেদিন তুই আমার যোগ্য হয়ে উঠবি সেদিন আমার আবারও অগ্নিকে সাক্ষী করে তোকে বিয়ে করবো। সম্মানের সাথে তোকে সিঁদুর পড়িয়ে দিবো। কথা দিলাম

দেবব্রতের কন্ঠ দৃঢ়। সে ঋণের বোঝা থেকে মুক্তি চায়। সে শ্যামলী দেবী এবং সোমনাথ বাবুর সব ঋণ পরিশোধ করতে চায়। কৃষ্ণাকে তার যোগ্য স্থানে পৌঁছে দিয়ে। কে বলেছে ভালোবাসাই সব সম্পর্কের ভিত্তি। কিছু কিছু সম্পর্ক ভালোবাসা ব্যাতিত ও গড়ে উঠে। সেই সম্পর্কগুলো ভালোবাসার সম্পর্কের চেয়েও মজবুত হয়। হয়তো এমনই একটি সম্পর্ক কৃষ্ণা এবং দেবব্রতের। একবার ভেবেছিলো কৃষ্ণাকে তার বাবার পরিচয়টা দিয়ে দিবে। পরে তার মাথায় অন্য একটি ভাবনা আসলো। যেকারণে চুপ মেরে গেলো সে।

সৌদামিনীর ঘরে তার এবং দেবব্রতের ভালো বান্ধবী সারা বসে রয়েছে। সারা এক নজরে সৌদামিনীকে দেখে যাচ্ছে। সৌদামিনী তার কাগজপত্র গুছাচ্ছে। বাহিরে পড়াশোনা করার জন্য যাবে বলে ভাবছে সে। এই দেশে দেবব্রতের টান ছাড়া আর কিছুই খুজে পাচ্ছে না। শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। মুক্তি চায় এই যন্ত্রণা থেকে। বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ায় আত্নীয়রা কথা শুনাতেও থামছে না। কেউ কেউ তো তাকে দূর্ভাগাও বলে হা হুতাশ করছে। এসব একেবারেই সহ্য হচ্ছে না সৌদামিনীর। এর থেকে বাহিরে চলে যাওয়াটাই ভালো হবে। সারার খুব বিরক্ত লাগছে। সৌদামিনী এভাবে নিজের অধিকার ছেড়ে দিচ্ছে বলে। তাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাই জানে দেবব্রত কতোটা ভালোবাসে সৌদামিনীকে, আর সৌদামিনী ও দেবব্রততে মত্ত। তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে উঠলো সে,
– পালিয়ে গেলে কি আদৌ বেঁচে যাবি সৌদামিনী?
– কি বলছিস তুই?

কাগজ গুলো হাতেই রেখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি প্রয়োগ করে সারার দিকে সৌদামিনী। সারাও দমে যায় না। ঠান্ডা গলায় বলে,
– দেবব্রত কোথা থেকে একটা মেয়েকে বিয়ে করে আনলো আর তুই ও সেই শোকে বনবাসে যাচ্ছিস। আমি যাস্ট মেনেই নিতে পারছি না। দেবব্রত আর তুই ছোটবেলা থেকে একে অপরকে ভালোবাসিস। কোন এক মেয়েকে বিয়ে করলো বলে সেই ভালোবাসাকে দান করে দিবি তুই?
– তোদের ধর্মের মিতো আমাদের ধর্মে যে চারখানা বিয়ে করা যায় না

বিদ্রুপের স্বরেই সৌদামিনী কথাটা বললো। সারাও দ্বিগুণ তেজ দেখিয়ে বললো,
– তোকে দ্বিতীয় বিয়ে তো করতে বলি নি। বলেছি নিজের অধিকার কেড়ে নিতে। ভালোবাসাকে এতো সহজেই অন্যের হাতে তুলে দিবি। তোর কি কষ্ট হচ্ছে না? বিদেশে গেলেই কি ভুলে যাবি দেবব্রতকে?
– হয়তো না। হয়ত কেনো বলছি। দেবব্রত যে আমার রক্তে মিশে আছে নেশার মতো। পারবো না তাকে ভুলতে কিন্তু একটা সতেরো বছরের বাচ্চার সাথে দেবকে নিয়ে লড়বো?
– যে জিনিসটা তোর তা নিয়ে তো লড়াই এর প্রশ্নই আছে না। দানবীর হাজী মোহাম্মদ মহসিন না সেজে নিজের ভালোবাসাকে অন্যের হবার আগেই নিজের করে নে। পালিয়ে গেলে দেবব্রত নামের সিঁদুরটার সাথে পুরো দেবব্রত টাই ওর হয়ে যাবে।

সৌদামিনী সারার কথাগুলো মন দিয়ে শুনে। কথাগুলো তাকে ও ভাবাচ্ছে। কাগজগুলো রেখে সারার পাশে বসে সে। অধীর কন্ঠে বলে,
– কি করবো আমি?

সারা এবার প্রশান্তির হাসি হাসে। তারপর বলে,
………..

চলবে

#কৃষ্ণাবতী
#১০ম_পর্ব

সৌদামিনী সারার কথাগুলো মন দিয়ে শুনে। কথাগুলো তাকে ও ভাবাচ্ছে। কাগজগুলো রেখে সারার পাশে বসে সে। অধীর কন্ঠে বলে,
– কি করবো আমি?

সারা এবার প্রশান্তির হাসি হাসে। তারপর বলে,
– কিছুই না, তুই শুধু দেবকে নিজের কাছে রাখ। ওকে নিজের থেকে দূর হতে দিস না। ওই মেয়ের প্রতি ওর সমোবেদনা রয়েছে। তুই এই সমোবেদনাটা সমোবেদনাই থাকতে দে। এমন যেনো না হয় ওই কৃষ্ণা নামক মেয়েটাকে দেব ভালোবেসে ফেলে।
– দেব কখনোই ওকে ভালোবাসবে না। আর কৃষ্ণাকে বিয়ে করেছে কেবল ই ওর জীবন বাঁচাতে, এখানে ভালোবাসার প্রশ্নই উঠে না।

দৃঢ় কন্ঠে বলে উঠলো সৌদামিনী। সৌদামিনীর বিশ্বাস দেখে সারার মনটা খানিকটা হলেও খারাপ হয়ে যায়। এতো বিশ্বাসের পরিণতি এতোটা কঠোর হতে পারে এটাই যেনো ভাবতে কষ্ট হচ্ছে সারার। সৌদামিনীর ঘাড়ে হাত রেখে ঠান্ডা কন্ঠে বলে সে,
– সৌদামিনী বিশ্বাস ভালো, অন্ধঃবিশ্বাস ভালো নয়। দায়িত্ব ব্যাপারটা ও অনেক বড় একটা জিনিস। এমনতো নয় দায়িত্বের বিয়ে গুলো টিকে না। ঠিক ই টিকে থাকে। তুই ভেবে বল তো, কৃষ্ণার জন্য তোর সাথে কি কখনো খারাপ আচারণ করে নি দেবব্রত। নাকি তোর কারণে কৃষ্ণাকে এভোয়েড করেছে। দুটোর একটাও করে নি দেবব্রত। তার কাছে কৃষ্ণার গুরুত্ব তোর থেকে কম নয়। এটাই ভয়। কখন যে এই গুরুত্বটা তোর থেকে বেশি হয়ে যাবে। তখন কিন্তু কেঁদেও কুল পাবি না। তুই আর দেব একই কলেজে চাকরি করিস। সুতরাং তুই ওর কাজের সময়টুকু ওর সাথেই কাটাতে পারবি। এই সুযোগটাকে কাজে লাগা।

সারার ইঙ্গিত বুঝতে দেরি হলো না সৌদামিনীর। মুচকি হেসে জড়িয়ে ধরলো সে সারাকে। আদুরে গলায় বললো,
– তোর মতো বান্ধবী না থাকলে আমি সত্যি একটা ভুল করে বসতাম। কাপুরুষের মতো পালিয়ে যেতাম। থ্যাংক্স রে

বন্ধুত্ব জিনিসটা সত্যি খুব ভাবনার। বন্ধু যেমন ভালো বুদ্ধি দেয়, আবার কিছু বন্ধু খারাপ বুদ্ধি ও দেয়। আমাদের বন্ধুদের এই উপদেশ বিভিন্ন সময়ে আমাদের ভবিষ্যৎ বদলে দেয়। সৌদামিনীর ক্ষেত্রেও তার বিপরীত কিছু ঘটলো না। সারার উপদেশ সৌদামিনী, দেবব্রত এবং কৃষ্ণার জীবনে নতুন মোড় নিয়ে আসবে_____

সন্ধ্যা ৬টা,
রুমে ধুপের গন্ধে ম ম করছে। কৃষ্ণা এখন স্নান করে এসেছে মাত্র। সকালে গোপালের আরতি করা হয় নি। এখন সন্ধ্যা বেলায় আরতি করবে। আয়নার সামনে ভিজে চুলগুলি মুছছিলো কৃষ্ণা। আজকাল মনটা বেশ ভালো কৃষ্ণার। দেবব্রত তাকে দূর দূর করছে না। কিছু বইপত্র কিনে দিয়েছে যাতে পড়াশুনা করতে পারে। চুল মুছে সিঁথিতে সিঁদুর দিতে যাবে তখনই দরজায় নক পড়লো। অন্না তখন পড়ায় ব্যস্ত। তাই মাথায় আঁচলটা টেনে কৃষ্ণা এগিয়ে যায় দরজা খুলতে। দরজা খুলতেই দেখে দেবব্রত দাঁড়িয়ে আছে।
– ব্যস্ত?

কৃষ্ণাকে দেখেই দেবব্রত প্রশ্ন করে উঠে। নম্র স্বরে কৃষ্ণা উত্তর দেয়,
– না, কিছু লাগবে মাষ্টারমশাই?
– তোকে লাগবে
– হ্যা??

দেবব্রতের কথাটা শুনে অবাক হয়ে যায় কৃষ্ণা। খানিকক্ষণ নিজের দিকে অবাক চোখে দেখতে দেখে দেবব্রত বুঝতে পারে সে কি বলেছে। নিজের বোকামিতে নিজেই লজ্জা পেয়ে যায় সে। হালকা কাশি দিয়ে বলে,
– না মানে তোর সাথে কথা ছিলো
– জ্বী বলুন
– কাল থেকে অন্নার সাথে কলেজে যাবি। আমি তোর ভর্তি করিয়ে দিয়েছি। সেকেন্ড ইয়ারেই ভর্তি করিয়েছি তোকে। ফার্স্ট ইয়ারে যে গ্যাপ আছে। সেটা আমি তোকে কমপ্লিট করিয়ে দিবো।
– সত্যি আমি কলেজে যাবো?
– হ্যা যাবি, বইখাতা তো এমনি এমনি কিনে দেই নি আমি। তবে একটা কথা, সেই কলেজেই আমি শিক্ষাকতা করি। সুতরাং কেউ যাতে না জানে আমার আর তোর সম্পর্ক। ওকে?
– হুম

কৃষ্ণার সম্মতি পেয়ে দেবব্রত মুচকি হাসি দেয়। একটা মানুষের হাসি এতো সুন্দর হতে পারে, দেবব্রতকে না দেখলে হয়তো কৃষ্ণা জানতোই না। পেটের মধ্যে যেনো হাজারখানিক প্রজাপতি উড়ছে কৃষ্ণার। কাল কলেজে যাবে, আবার পড়াশুনা করবে। আহা কি আনন্দ।

দেবব্রত চলে গেলে মিটিমিটি হাসি হেসে রুমের ভেতরে আসে কৃষ্ণা।
– দাদাভাই কি ভালোবাসার কথা বললো নাকি তোকে?

অন্নার প্রশ্নে খানিকটা অবাক হয়ে তাকালো কৃষ্ণা। অন্না তখন তার দিকে দুষ্টু হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে। অন্না আর তার মাঝে একটা চুক্তি হয়েছে। তারা দুজন দুজন কে ঘরের মধ্যে তুই করেই কথা বলবে। কিন্তু ঘরের বাহিরে তাদের সম্পর্কটা থাকবে ননদ ভাবির।
– ওরে আমার রায়বাঘিনী ননদিনী, এতো কৌতুহল কেনো তোমার মনে?
– বাহ রে, আমার দাদাভাই এই কদিন ধরে যেভাবে তুইতে মত্ত হয়েছে তাকে প্রশ্ন জাগাটা স্বাভাবিক নয়?
– তুই সত্যি লাজ লজ্জার মাথা খেয়েছিস তাই না?
– যাহ আমি কি বললাম, এখন বলবেন দাদাভাই এই সাজগ সন্ধ্যায় আমার রুমে কি করতে এসেছে। আমার খোঁজ নিতে তো আসেন নি জানা আছে

অন্নার কথায় বেশ লজ্জা পায় কৃষ্ণা। গাল জোড়া একবারেই টমেটোর ন্যায় রঙিন হয়ে উঠে। লজ্জামিশ্রিত কন্ঠে বলে,
– আমাকে উনি তোর কলেজে ভর্তি করেছেন
– সত্যি?
– হুম, কাল থেকে যাচ্ছি তোর সাথে
– কিন্তু একটা সমস্যা আছে
– কি সমস্যা?
– তোর এই সিঁথি ভর্তি সিঁদুর নিয়ে কিন্তু আমার সাথে যাওয়া যাবে না বলেদিলুম

অন্নার কথা শুনে বেশ অবাক হয়ে উঠে কৃষ্ণা। সিঁদুর,শাখার ব্যাপারটায় তার চিন্তা আগের কালের মতোই। প্রাণ যাবে তবে এই শাখা সিঁদুর সে কিছুতেই নিজ থেকে দূর করবে না। বেশ ক্ষ্রিপ্ত কন্ঠে বললো,
– না না, এই সিঁদুর আমি মুছবো না। মা বলতেন, শাখা সিঁদুর এয়োস্ত্রীর অলংকার। এটা খুললে স্বামীর অকল্যাণ হয়।
– ওরে বলদ, এটা ঢাকা। তোর গ্রাম নয়। যদি তোর সিঁথিতে সিঁদুর দেখে না মানুষ তাহলে আমাদের শুদ্ধ বাল্যবিবাহের কেসে জেলে ভরে দিবে। তাতে না আমার দাদাভাই এর অকল্যাণ বই কল্যাণ হবে না। বুঝলি পাগল?
– তাহলে উপায়?
– একটা উপায় অবশ্য আছে। কাল সকালে আমি তোকে তৈরি করে দিবো। তাতে তোর সিঁদুর ও থাকবে আর দাদাভাই ফাসবেও না

অন্নার কথায় বেশ নিশ্চিন্ত হয় কৃষ্ণা। এবাড়িতে এই মেয়েটার সাথেই তার ভালো বনে। মনেই হয় না গ্রামের বান্ধবীদের ছেড়ে এসেছে সে।

সকাল ৯টা,
কলেজের গেটে দাঁড়িয়ে আছে কৃষ্ণা৷ অন্নার একটি সাদা সালোয়ার কামিজ তার পরণে। অন্নার খুব সুন্দর করে তার চুল বেধে দিয়েছে। তাতে সিঁদুর রাঙানো সিঁথি ও দেখা যাচ্ছে না। অন্নার সাথেই হেটে ক্লাসে যাচ্ছিলো। তখনই……..

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি

#কৃষ্ণাবতী
#১১ম_পর্ব

কলেজের গেটে দাঁড়িয়ে আছে কৃষ্ণা৷ অন্নার একটি সাদা সালোয়ার কামিজ তার পরণে। অন্নার খুব সুন্দর করে তার চুল বেধে দিয়েছে। তাতে সিঁদুর রাঙানো সিঁথি ও দেখা যাচ্ছে না। অন্নার সাথেই হেটে ক্লাসে যাচ্ছিলো। তখনই কিছু ছেলেমেয়ে তাদের পথ আটকায়। কৃষ্ণা বেশ ভয় পেয়ে যায়। এই পরিস্থিতিগুলো তার জন্য নতুন। গ্রামের কলেজে এসব কিছুই তার সাথে হয় নি। ভয়ে অন্নার হাতটা চেপে ধরে সে। অন্না ধীর কন্ঠে বলে,
– এরা আমাদের অনার্সের ভাইয়া, আপুরা। তুই নতুন তো তাই ওকে আটকেছে, ভয় পাস না
– আমাকে বকবে?
– আরে না, নাম টাম জিজ্ঞেস করবে

তখনই একটা ছেলে বলে উঠে,
– এতো ফিসফিসানির কি আছে? এদিক তাকাও। অন্না এই নতুন মেয়ে কে রে?
– ভাই ও আমার দূর সম্পর্কের মাসতুতো বোন। গ্রাম থেকে এই কলেজে ভর্তি হয়েছে

অন্না স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে কথাটা বলে। অন্নাকে দেখে কৃষ্ণা একটু সাহস পায়৷ তার দিকে ছেলেমেয়েগুলো বিদ্রুপের চোখে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ একটা মেয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়,
– নাম কি তোমার?
– কৃষ্ণাবতী সাহা
– কৃষ্ণাবতী সাহা, মনে হচ্ছে কোনো উপন্যাসের ক্যারেক্টর উঠে এসেছে। ছোট কোনো নাম নেই?

নিজের নামের এমন ব্যঙ্গাত্মক উক্তি শুনে খানিকটা রাগ হলো কৃষ্ণার। যতই হোক তার বাবা এই নামটা রেখেছিলো। এই নাম নিয়ে কোনো ব্যঙ্গ একেবারেই সহ্য হলো না তার। খানিকটা শক্ত কন্ঠে নির্ভীকভাবে সে বলে,
– কারোর নাম নিয়ে ফাযলামি করাটা হয়তো আপনাদের মতো শিক্ষিত মানুষের মানায় না। আমার বাবা নামটা রেখেছে। সেটা নিয়ে ফাযলামি করবেন না দয়া করে।

কৃষ্ণার দৃষ্টি স্থির। কন্ঠে জড়তা নেই। উদ্যম কন্ঠেই কথাটা বলে সে। উপস্থিত সিনিয়ররা খানিকটা হলেই হতবাক হয়ে যায়। আজ অবধি এভাবে কেউই তাদের সাথে কথা বলে নি। একটা ছেলের অবশ্য বেশ অপমানিত বোধ হলো। জুনিয়রের চোখে কোনো ভয়ের ছাপ না দেখতে পেরে তাদের সিনিয়রত্বের উপর যেনো হানি এসেছে। কর্কশ কন্ঠে বলে উঠে,
– আমাদের মুখের উপর কথা বলার বেশ সাহস আছে দেখছি তোমার? জানো আমরা কে? সিনিয়র তোমার। সিনিয়রদের সাথে সম্মানের সাথে কথা বলতে হয়।
– জানি, আপনারা আমার গুরুজন। তবে একটা কথা না বলে পারছি না। আপনাদের আচারণ দেখে আমি সন্দীহান আপনাদের থেকে আমি নতুন কি কিছু আদৌ শিখতে পারবো?
– কৃষ্ণা অফ যা, এরা সিনিয়র। কেনো এদের থেকে পাঙ্গা নিচ্ছিস?

কৃষ্ণার কথা শুনে অন্নার মাথায় হাত। এই র‍্যাগিং করা সিনিয়ররা সব পলিটিক্সের সাথে জড়িত। এদের সাথে পাঙ্গা নেওয়া অর্থাৎ নিজের পায়েই কুড়াল দেওয়া। খুব চেষ্টা করে কৃষ্ণাকে থামানোর। কিন্তু কৃষ্ণা তো কৃষ্ণা। সে কি কারোর বারণ শুনে!
– আমি তো ভুল কিছুই বলি নি অন্না। কেনো অফ যাবো?

ছেলেটা কৃষ্ণার নির্ভীক কথাটা শুনে তার দিকে এগিয়ে আছে। ছেলেটার এগিয়ে আসার ভঙ্গিমায় কৃষ্ণার একটু নড়েচড়ে উঠে। হঠাৎ একটা মৃদু ভারী কন্ঠে কানে ভেসে আসে কৃষ্ণার।
– এখানে কি হচ্ছে?

ডানে তাকাতেই দেখে সাদা শার্ট, গাড় নেভি ব্লু প্যান্ট পরিহিত একজন শ্যাম বর্ণের পুরুষ দাঁড়িয়ে আছেন। চুল গুলো বেশ কায়দা করে কপালে ফেলিয়ে রেখেছে। চোখে রিমলেস চশমা। লম্বা মাষ্টারমশাই এর থেকে খানিকটা বেশি। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কৃষ্ণাকে দেখছে সে। ছেলেটার আগমনে উপস্থিত সিনিয়রগুলো বেশ ভয়ে শিটিয়ে গেলো। ছেলেটা কৃষ্ণা এবং সিনিয়র ছেলে মেয়েদের মাঝ বরাবর দাঁড়ালো। ঠান্ডা কন্ঠে বললো,
– কি হচ্ছে এখানে?
– কিছু না অর্জুন দা। আসলে নতুন তো পরিচিত হচ্ছিলাম।
– তোমাদের অনার্স ফার্স্ট ইয়ার কে র‍্যাগিং এর পারমিশন দেওয়া হয়েছে। সেটাও যাতে মজার ছলেই হয়। কোনো ভয়-ভীতি তৈরি করতে মানা করা হয়েছে। তোমরা তো দেখছি ইন্টারদের ও র‍্যাগিং এ নেমে গেছো।
– সরি দা, আর হবে না।
– মনে থাকে যেনো

এবার ছেলেটা কৃষ্ণার দিকে তাকায়। অন্না একটু সাহস নিয়ে বলে,
– আসলে অর্জুন দা, কৃষ্ণার নাম নিয়ে কেউ ফাযলামি করুক তার সেটা পছন্দ নয়। এমনিতে ও বেয়াদব নয়।

অর্জুন নামের ছেলেটা সূক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কৃষ্ণাকে কিছুক্ষণ অবলোকন করে। টানাটানা চোখ, সিগ্ধ মায়াবী মুখখানি, মাজা অবধি লম্বা বেণুনী। ঠিক যেনো কোনো দূর্গা প্রতিমা। মাথা থেকে পা অবধি দেখে মৃদুস্বরে কৃষ্ণাকে বললো,
– ক্লাসের দেরি হচ্ছে, ক্লাসে যাও।

অর্জুনের কাছ থেকে সম্মতি পেয়ে অন্না যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। কৃষ্ণা মাথা কাত করে, ক্লাসের দিকে হাটা দিলো। পেছন থেকে তখন অর্জুন “কৃষ্ণাবতী” বলে ডাক দিলে সে পেছনে ফিরে। অর্জুন তখন ঠোঁটে হাসি একে বলে,
– নামটা সুন্দর।

কৃষ্ণার মুখ থেকে কোনো কথা বেরোলো না। সে আবার ফিরে অন্নার সাথে হাটা শুরু করলো। অর্জুন তখন ও কৃষ্ণার যাবার পথে এক মনে তাকিয়ে ছিলো, যতদূর কৃষ্ণাকে দেখা যায়। কৃষ্ণার সাদা ওরণাটা যখন মিলিয়ে গেলো তখন একটা ছেলে বলে উঠলো,
– অর্জুন দা আবহাওয়া তো ভালো ঠেকছে না। বিপদ সংকেত দেখা যাচ্ছে যে।
– চব্বিশ বছরের জীবনে এই প্রথম বিপদ সংকেতের আভাস পেলাম। খবরদার, যদি কেউ এই সাগরে নৌকা বাইতে যাস! এই নেশার সাগরে শুধু আমি ডুব দিবো বলে দিচ্ছি।

অর্জুনের উত্তর শুনে উপস্থিত সবাই হেসে উঠে। অর্জুনের ঠোঁটে অন্য রকম হাসি। গুনগুন করে গাণ ধরে সে,

“প্রেমের জোয়ারে ভাসাবে দোঁহারে– বাঁধন খুলে দাও, দাও দাও দাও।

ভুলিব ভাবনা, পিছনে চাব না,– পাল তুলে দাও, দাও দাও দাও॥

প্রবল পবনে তরঙ্গ তুলিল, হৃদয় দুলিল, দুলিল দুলিল–

পাগল হে নাবিক, ভুলাও দিগ্‌বিদিক,– পাল তুলে দাও, দাও দাও দাও॥”

হঠাৎ করেই কৃষ্ণার হাতে অন্না চিমটি কাটে। কৃষ্ণা “উহহ” করে উঠতেই বেশি তেজী স্বরে বললো সে,
– কি দরকার ছিলো এতো দাপট দেখানোর?
– আমি কি কিছু ভুল বলেছি? আমার নাম নিয়ে কি বিদ্রুপটাই না করছিলো তারা।
– আরে ভাই সিনিয়র, এদের সাথে লাগতে হয় না। তোর জন্য আমার দিকেও তারা ক্ষিপ্ত দৃষ্টি দিলো।
– অহ

কৃষ্ণার অনুতাপ হতে লাগলো। এভাবে তর্ক না করলেও হয়তো হতো। মাষ্টারমশাই দেখলে হয়তো ভাববে সে বেয়াদব। কিন্তু তখন হুট করেই মেজাজটা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। কৃষ্ণার নিভু মুখটা দেখে অন্না একটু নরম স্বরে বললো,
– ঠিক আছে, আর প্যাঁচার মতো মুখ বানাস নে। অর্জুন দা এসে তো বাঁচিয়েই দিলেন।
– আচ্ছা এই অর্জুন দা টা কে?
– উনি আমাদের কলেজের মাস্টার্সের স্টুডেন্ট। পলিটিকাল নেতাদের একজন। এই কলেজের সবাই তাকে ভয় পায়। কেউ উচ্চবাচ্য করতে পারে না তার উপর। শুধু একটা মানুষকে অর্জুন দা ভয় পায়। তা হলো তোমার মাষ্টারমশাই। আর এক কথায় বলতে গেলে সব হিন্দু জুনিয়রদের ক্রাশ সে। একটা মানুষ এতো সুন্দর হবার সাথে সাথে এতো গুণবান এটা যেনো ভাবাই যায় না।
– তুই তো দেখছি তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
– মানুষটাই এমন। তুই ক্রাশ খাশ নি?
– ক্রাশ আবার কি? খায় কিভাবে তা?
– বাদ দে, বইন। চল ক্লাসেই যাই।

অন্নার কথা শুনে খিলখিল করে হেসে উঠে কৃষ্ণা। মেয়েটার হাসিতেও যেনো অন্যরকম মাদকতা আছে। দূর থেকে কেউ মুগ্ধ হয়ে সেই হাসি দেখতে ব্যস্ত_______

৮.
নিজের রুমে এসে কিছু কাগজ পত্র নিয়ে ঘাটাঘাটি করা শুরু করে দেবব্রত। গোটা দেড় মাস পর এসেছে কলেজে সে। বেশ কাজ জমে গেছে তার। আজ তিনটে এক্সট্রা ক্লাস ও নিতে হয়েছে তাকে। খুব ক্লান্ত লাগছে। দুপুর ঘনিয়ে বিকেল হতে চললো। এখনো দুটো দানাও পেটে পড়ে নি তার। হঠাৎ টেবিলে কিছু রাখার শব্দ পেলে মাথা তুলে তাকায় দেবব্রত। তার সামনে হলুদ শাড়ি পরিহিতা সৌদামিনী দাঁড়িয়ে আছে। মায়াবন বিহারিনী শব্দটা যেনো তার জন্যই প্রযোজ্য। কি দারুণ লাগছে মেয়েটাকে। শ্যামলা বরণে হলুদ রঙটা যেনো মিশে আছে। কোকড়া চুলগুলো ছেড়ে দিয়েছে সে। সেদিনের দামিনী আর আজকের দামিনী যেনো রাত আর দিনে পার্থক্য। হঠাৎ হৃদয় হুহু করে উঠে দেবব্রতের। আলতো করে ছুয়ে দিতে পারছে না সে তার রাইকে। অস্পষ্ট কন্ঠে বলে উঠে,
– হঠাৎ আমার পানে আসা?
– তোর জন্য খাবার নিয়ে এসেছি। খাওয়া তো হয় নি নিশ্চয়ই
– তুই জানলি কি করে?
– যে কাজ পাগল ছেলে তুই! এটা জানতে বিবিসি চ্যানেলের প্রয়োজন হয় না। তোর পছন্দের পোস্ত নিয়ে ইলিশ রেধেছি

আজ যেনো দামিনীকে দেড় মাস আগের দামিনী লাগছে। যে তার পছন্দ অপছন্দের খুটি নাটি জানে। কিন্তু সে তো দেড় মাস আগের দেব হতে পারছে না। তার যে কাধে তার বাবার দেনা রয়েছে। মলিন হাসি হেসে বলে,
– আমার পছন্দের খেয়াল এখনো রাখছিস তুই? আর মায়ায় জড়াস নে দামিনী। আমি যে তখন অথৈ সাগরে পড়ে যাবো।
– প্রেমিকা নয়, বন্ধু হিসেবে তো এটুকু করাই যায়। দেখ এখন দুঃখ বিলাস করতে আসি নি। আমার ও কিন্তু খাওয়া হয় নি।

বলেই প্লেট বের করতে লাগতো সৌদামিনী। দেবব্রত ফাইলটা বন্ধ করে সৌদামিনীর কাছে গেলো। মেয়েটা স্বাভাবিক হতে চাইছে, থাক না সে তার মতো। পুরোনো কাসন্দি ঘেটে কি লাভ!
– কি হলো? কি দেখছিস?
– কিছু না, চল খেয়ে নি।

সৌদামিনী নিপুনভাবে দেবব্রতকে খাবার বেড়ে দিলো। খেতে খেতে দেবব্রত বলে উঠলো,
– দিহান বলছিলো, তুই নাকি বিদেশ চলে যাচ্ছিস?
– ভেবেছিলাম চলে যাবো। দম বন্ধ লাগছিলো। হুট করে মনে হলো পালিয়ে যাবার মানেই হয় না। দেখি না হাওয়ার সাথে টিকে থাকতে

সৌদামিনীর কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে যায় দেবব্রতের। দেবব্রতের মলিন মুখটা দেখে স্মিত হাসি দিয়ে বলে দামিনী,
– হয়েছে আর মুখ কালো করতে হবে না। আমি ঠিক মানিয়ে নিয়েছি। রান্নাটা কেমন হয়েছে সেটা বল
– আমাকে পুরস্কার হিসেবে কি দিবি তাই বল?
– কেনো?
– বারে কি কষ্ট করে গিলতে হচ্ছে জানিস? ভয় হচ্ছে পেট না খারাপ হয়

দেবব্রতের কথাশুনে মুখ ফুলিয়ে তার হাতের প্লেটটা কেড়ে নেয় দামিনী।
– খেতে হবে না তোর।
– না না মজা করছিলাম৷ দে দে। ক্ষুধা লেগে রে

দুজনের খুনশুটির যেনো অন্ত নেই। তখন……

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here