কারনে_অকারনে_ভালোবাসি পর্ব:23,24

0
1607

কারনে_অকারনে_ভালোবাসি
পর্ব:23,24
Suraiya_Aayat
পর্ব:23

কম্বল মুড়ি দিয়ে আছে আরু,সকাল হয়েছে তা বুঝতে পেরেছে অনেক আগেই,সকালের ঠান্ডা বাতাসে জানালার কাছের পর্দাটা সরে সরে যাচ্ছে তাই তার ফাঁক দিয়ে আলোর ছটা এসে মুখে পড়ছে৷ আরিশ ব্ল্যঙ্কেটের ভিতর ঘুমিয়ে আছে আর আরু মুখ বার করে রেখেছে শরীরের থেকেও মনের ভিতর অসস্তি কাজ করছে ভীষন কারন আরিশ ওর উন্মুক্ত কোমর জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে,বিছানা থেকে নামবে কিন্তু লজ্জায় নামতেও পারছে না৷ এভাবেই থাকতে থাকতে বেশ 20 মিনিট আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতেই কাটিয়ে দিলো আরু৷
“নাহ এভাবে থাকলে হবে না অলরেডি 8.30টা বাজে,বাসার লোক কি ভাববে?”

আরুর আধোস্বরে বলা কথা গুলো শুনে আরিশ আরুর কোমরে আলতো করে স্লাইড করতে করতে বলল
” কিছু ভাববে না আরুপাখি,আর ভাবলে ভাবতে দাও কারন মানুষের ভাবনার ওপর আমাদের কোন কন্ট্রোল থাকে না৷”

হঠাৎ করে আরিশের কন্ঠস্বর শুনে আরু চমকে গেল আর চোখ মুখ কুঁচকে বলল
” আপনি জেগে আছেন?আমি ভাবলাম যে!”

আরিশ মুখ বার করে বলল
” কি ভাবলে তুমি?”

কথাটা বলে হো হো করে হেসে উঠলো আরিশ
“দেখেছো তো প্রমান হয়ে গেল যে মানুষের ভাবনার ওপর আমাদের কন্ট্রোল থাকে না তাই যে যা ভাববে তাকে ভাবতে দাও৷”

আরু ঠোঁট ফুলিয়ে বলল
“তবুও!”

“কালকে কি হয়েছিলো তোমার মনে আছে?”

আরু কালকে রাতের কথা ভেবেই লজ্জায় কুঁকড়ে গেল,ঠোঁট চেপে লজ্জা মিশ্রিত হাসিটাকে সংযত করার চেষ্টা করতেই আরিশ আরুর মুখের হাবভাব দেখে বলল
“এই মেয়ে আমি ভাবতে বললাম কি আর ভাবছো কি? বেশি পেকে গেছো তুমি৷”

মুহূর্তেই আরুর মুখের হাসি উড়ে গেল,অবাক হয়ে বলল
“মানে?”

আরিশ আরুকে কাছে টেনে এনে আরুর গলায় মুখ ডুবিয়ে বলল
“মানে তুমি যা ভেবেছো তাই!”

আরু তো আহাম্মক বনে গেল,আরিশ ওর শরীরের সথে লেপ্টে আছে,শরীরে হরমোনের ক্রীয়া পতিক্রিয়া খুবই প্রখর৷ আরু বেশ কাঁপা কাঁপা হাতে আরিশের উন্মুক্ত পিঠটা জড়িয়ে ধরলো৷
আরিশ ঠোঁটের স্পর্শ দিচ্ছে আর ততই আরুর হাতের স্পর্শ আরিশের পুরো পিঠ জুড়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে৷ আরিশ বলল
“তোমার আর আমার মাঝে কি হয়েছে সেটা তো আর লোকে জানবে না, তারা যতটুকু জানে ততটুকু নিয়েই ভাববে আর তারা জানে তুমি অসুস্থ, কালকে রাতে তোমার জ্বর ছিলো কিন্তু হুঠ করে নিমেষেই জ্বর কমে যাওয়ার সায়েন্স টা বুঝলাম না আরুপাখি৷”

আরু চোখ বন্ধ করে মুচকি হাসছে, আরিশের স্পর্শ গুলো পাগল করার জন্য যথেষ্ট৷ আরিশ সরে যেতে নিলেই আরু আরও শক্ত করে আরিশকে জড়িয়ে ধরলো, আরিশ আরুর সম্মতি পেয়ে আর সরে এলো না আরুতেই হারিয়ে গেল৷
……..
আরুকে সাইড থেকে জড়িয়ে ধরে বেশ বড়ো বড়ো নিশ্বাস ফেলছে আরিশ, আরু রিতীমতো ঘামছে, ঘরে এসি চলা সত্বেও, ঘড়ির দিকে আর তাকাতে ইচ্ছা করছে না আপাতত৷ কতো যে সময় পেরিয়ে গেছে হিসাব নেই৷ আরুর ভাবনা ভেঙে আরিশ আরুর কাধে একটা চুমু দিয়ে সরে যেতে গেলেই আরু বেশ কম্পিত স্বরে ডেকে উঠলো
” শুনুন?”

আরিশ বরাবরের মতোই ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলল
” হমম বলো৷”

আরু বেশ মিনতির সুরে বলল
“আমার একটা রিকোয়েস্ট রাখবেন?”

আরিশের কপালে সূক্ষ ভাঁজ, ও আশঙ্কা করছে যে আরু বোধহয় আবার বেবির কথা বলবে তাই বেশ কড়া কন্ঠে বলল
” আগে শুনে নিই কি বলবে৷”

আরু ফিচেল হেসে বলল
” আম্মু ফোন করেছিলো, বলল যে আমি যখন হসপিটালে ছিলাম তখন নানাভাই বাসায় চলে গিয়েছিলো অভিমান করে, বাবার সাথে নাকি কথা কাটাকাটি হয়েছিলো আর আপনাকেও নাকি অনেক কিছু বলেছিলো!”

আরিশের কপালের ভাজ গুলো সরে গেল৷ স্বাভাবিক ভাবে বলল
“হমম তারপর?”

আরু এবার ওঠে বসে ব্ল্যাঙ্কেটটা শরীরের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিজেকে যথেষ্ট সম্ভব ঢেকে নিয়ে বলল
” তারপর নানাভাই মধুকে নিয়ে বাসায় চলে গেছে, ওনার রাগ এতো সহজে কমবার নয়, নাকি আম্মুর কল ও তুলছে না তাই আম্মু বলল যে আপনাকে আর আমাকে ওনার সাথে গিয়ে দেখা করতে আর এইসব মান অভিমানের পর্ব শেষ করতে যদিও আমি জানি যে সামনে আপনার এক্সাম৷”

আরাশ গম্ভীর কন্ঠে বলল
” আর তোমার ও৷”

কথাটা শুনে আরু মাথা নীচু করে নিলো৷ নির্লিপ্ত কন্ঠে বলল
“আমি আপনাকে জোর করবো না কারন আপনার ও সুবিধা অসুবিধা আছে৷ আমি আম্মুকে বারন করে দেবো, এক্সাম শেষ হলে না হয়!”

আরিশ বিছানা থেকে নেমে টাওয়ালটা কাধে রেখে বলল
“লাগেজ রেডি করে রেখো কালকে সকালে রওনা দেবো৷”

কথাটা বলে বেরিয়ে গেলো৷ আরু খুশিতে লাফিয়ে উঠতেই পেটের সেলাই করা জায়গায় হালকা টান ধরতেই দমে গেল,ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ব্যাথা সহ্য করে নিলো‌৷
তবুও আনন্দ হচ্ছে ভীষন এটা ভেবে যে আরিশ ওর প্রত্যেকটা কথার গুরুত্ব দেয় ভীষন, সব ইচ্ছা পূরন করার চেষ্টা করেন ভাবনা গুলো ভবলেই আরুর ঠোঁটের কোনে আপনা আপনিই হাসি ফুঁটে ওঠে৷

……

আরু আর আরিশ দুজনেই শাওয়ার নিয়ে রেডি হয়ে নীচে নামলো,আরিশ 5 মিনিট আগেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে আর আরু ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে থ হয়েই দাঁড়িয়ে আছে আর বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে,11.25 বাজে৷ এতো দেরি করে দুজনেই নামছে৷ তবে আর বেশিখন কিছু ভাবতে পারলো না তার আগেই নীচে থেকে ডাক এলো
” আরুপাখি নীচে নামো, ফাস্ট৷”

কথাটা শুনে আরু দৌড়ালো আর নীচে নামলো নীচে গিয়ে দেখলো সানা সোফায় বসে কেমিস্ট্রি বই নিয়ে বসে আছে আর অনিকা খান কিচেনে রয়েছেন তবে আরিশের সামনে খাবারের প্লেট দেখে বুঝতে অসুবিধা রইলো না যে উনি এখন খাবার গুলো গরম করলেন৷ আরু এবার ধীরে ধীরে হেটে এসে আরিশের পাশের চেয়ারে বসতেই অনিকা খান অনেকটা ছুটে এলেন আরুর কাছে,আরুর কপালে হাত রেখে বললেন
“কই দেখি আরু মা তোর আর জ্বর নেই তো?”

আরু হেসে বলল
“নাহ ফুপি নেই‌৷”

উনি আরুর কপালে চুমু দিয়ে বললেন
“কালকে যা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম৷ সব আরিশের জন্য ৷ শুধু মেয়েটার ওপর জুলুম করে৷”

আরিশ রাগী স্বরে বলল
“আম্মু আমাকে ব্লেম করা বন্ধ করো৷”

উনি চোখ গরম করে বললেন
“একদম চুপ, তোর কোন কথা আমি আর শুনতে চাই না৷তোর আব্বু তো বলেই দিয়েছে যে এবার যদি আর কখনও আরুর গায়ে হাত তুলিস তুই তাহলে তোকে এই বাড়িতে আর থাকতেই দেবে না৷”

ওদের দুজনের এমন মিষ্টি ঝগড়া শুনে আরু মুচকি মুচকি হঅসছে৷ আরিশ ব্রেডে বাটার লাগাতে লাগাতে বলল
“আরুপাখি স্টপ লাফিং৷”

অনিকা খান ধমকে বললেন
” তুই চুপ কর,তোর সাহস তো কম না ,আমার সমনে আমার মেয়েকেই বকছিস৷”

আরিশ চুপ হয়ে গেল৷ আরু নিজে খেতে গেলেই উনি বললেন
“থাক তোকে আর কষ্ট করতে হবে না আমি তোকে খাইয়ে দিচ্ছি৷”
কথাটা বলে আরুকে খাইয়ে দিলো,আরিশ একটা প্রশান্তির হাসি হাসলো ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে ৷ হঠাৎ সানা পাশ থেকে বলে উঠলো
” ভাইয়া আরু না হয় অসুস্থ ছিলো তা তুই তো সুস্থ তুই এতখন কি করছিলি রুমে?”

আরিশ সানার দিকে ফিরে চোখ গরম করে বলল
“বউয়ের সেবা করছিলাম আর কিছু?”

কথাটা শুনতেই অরু বিষম খেলো,অনিকা খান তাড়াতাড়ি করে জুসটা আরুর দিকে এগিয়ে দিলো৷ উনি সানাকে ধমকে বললেন
” সানা চুপ কর তুই,ওরা খাচ্ছে কথা বলিস না৷”

সানা ফাজলামি করে বলল
“আম্মু তোমার ছেলে ভালোই ডিউটি করছেন , চালিয়ে যাও চালিয়ে যাও৷”

সানাকে থামানোর জন্য আরু বলে উঠলো
“ফুপি আমরা কালকে ভাবছি একটু নানু বাসায় যাবো,আসলে বুঝতেই তো পারছো৷”

“হমম,তোর আম্মু আমাকে কালকে বলেছে৷ যাস তবে তাড়াতাড়ি ফিরিস মা,তোদেরকে ছাড়া বাসা ফাঁকা ফাঁকা লাগে বড্ড৷”

আরু মুচকি হাসলো‌৷ অনিকা খান হঠাৎ ধমকের সাথে বললেন
“আর তুই আমাকে ফুপি বলছিস কেন হমম?
আমি এখনো কি তোর ফুপি?আমি তোর শাশুড়ি আম্মু না? শাশুড়ি আম্মু ছাড়া আমি তোর মা বুঝলি?”

আরু চোখ টিপ মেরে বলল
” তুমি হলে আমার মাদার ইন্ডিয়া বুঝলে শাশুড়ি আম্মু!”

উনিও হেসে উঠলেন আরুর সাথে৷

চলবে,,,,

#কারনে_অকারনে_ভালোবাসি
#পর্ব:24
#Suraiya_Aayat

“এদিকে ফেরো,ওদিকে তাকিয়ে ঘুমাতে কে বলেছে?”

বেশ কপাল কুঁচকে আদেশ দিয়ে উঠলো আরিশ৷ আরু আরিশের ধমক শুনে মুচকি মুচকি হাসছে, আরিশের দিকে ফিরলো না আরু আগের মতোই শুয়ে রইলো কারন আরিশকে বিরক্ত করতে ওর ভালোই লাগে৷

আরিশ পুনরায় ধমকের সাথে বলল
” কি হলো কথা কানে যাচ্ছে না?”

আরু এবার জোরে জোরে হেসে ফেলল,আরিশ ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো
” কি হয়েছে হাসছো যে?”

আরু আরিশের দিকে হাসতে হাসতে ফিরে বলল
” এমনি হাসি পাচ্ছে তাই হাসছি”

আরিশ খানিকটা ভড়কে গেল তাই পুনরায় বলল
“হাসি থামাও আর চুপচাপ ঘুমাও৷”

“ওকে৷”

কথাটা বলে আরু অন্য দিক ঘুরতেই আরিশ কোমরটা জড়িয়ে কাছে টেনে বলল
” চেষ্টাও করবেনা একদম৷”

কিছুখনের জন্য আরুর বুকের ভিতরটা থমকে গেল যেন,বড়ো একটা শ্বাস ছেড়ে আরিশের দিকে ঘুরতে গেলেও পারলো না কারন আরিশ এতো জোরে ওকে নিজের সাথে চেপে রেখেছে যে নড়াচড়া করায় মুশকিল৷ আরু কিছু বলছে না হঠাৎ গলার আশেপাশে গরম নিশ্বাস পড়তেই হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল আরুর৷ বেশ কিছুখন গলায় আরিশের নিশ্বাস এসে পড়তেই হঠাৎ তা থেমে গেল,আরুর চমকটা যেন কেটে গেল৷ আরিশ আরুর থেকে সরে এসে পুনরায় বালিশে মাথা রেখে আগের মতোই আরুকে জড়িয়ে রাখলো৷ এবার আরু জোরে জোরে প্রশ্বাস নিতে লাগলেই আরিশ বেশ নম্র কন্ঠে বলে উঠলো
“আরুপাখি!”

আরু বেশ গভীর অকুতি নিয়ে বলল
“হমম৷”

আরুর কথাটা শোনামাত্রই আরিশ আরুর কানে ঠোঁট ছোঁয়াতেই আরু কিঞ্চিত কেঁপে উঠলো৷ আরু নিজেকে সামলাতে না পেরে বলল
” কিছু বলবেন?”

আরিশের ঘোর কেটেও কাটছেনা ওর আরুপাখিটাই ওর কাছে নেশাময়৷ আরিশ কিছু বললো না,আরুর কাছ থেকে সরে এসে হাতের বাধন আলগা করে দিতেই আরু একটু দূরে সরে গেল৷ আরিশ প্রশ্ন করে উঠলো
“জামা কাপড় গুছিয়েছো?”

আরু উত্তর দেওয়ার ভাষা পেলো না শুধু না নাড়িয়ে সম্মতি জানালো৷ আরুর নিস্তব্ধতা মেনে নিয়ে আরিশ বলল
” বেশিদিন না একদিনের জন্য যাচ্ছি তারপর এক্সাম হয়ে গেলে আবার না হয় যাবো৷”

আরু আবার ও মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো৷ আরিশ আরুর কাছে এগিয়ে গিয়ে আরুকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিজে আরুর কাছে স্থান দখল করে বলল
” ভয় পাচ্ছো?”

আরু কিছুখন আরিশের মুখের দিকে তাকালো,আরিশ ওর মুখের ভাব ভঙ্গি দেখে কিভাবে যে এতো কিছু বুঝে যাই তা আরুর জানা নেই,হ্যাঁ সত্যিই ও ভয় পায় তবে তা ভালোবাসা থেকে আসে,আরিশের কাছে যেতে যতোটা বেশি লজ্জা পায় তার থেকে বেশি ভয় পায় হয়তো সময়ের সাথে সাথে সেই ভয়টাও নিমেষে দূর হয়ে যাবে৷ চোখ নামিয়ে নিলো আরু৷ আবহাওয়ার অবস্থা খুব একটা ভালো নয় তা আগেই টিভিতে খবর দেখে জানতে পেরেছে,বাইরে শো শো করে হাওয়া বইছে হয়তো গুটিকতক বৃষ্টিও হচ্ছে ঝিরঝির করে তবে তা বোঝার উপায় নেই তাই ঠান্ডাও বেশ৷ হঠাৎ কি মনে হতেই আরু আরিশের দিকে সরে গেল তারপর বেশ গুটিশুটি হয়ে আরিশের বাহুডোরে আবদ্ধ হলো৷
আরিশ আর কিছু বললো না নির্বিকার ভঙ্গিতে আরুকে জড়িয়ে ধরলো৷

……

“বাবা কিছু খেয়ে নাও নাহলে তোমার শরীর খারাপ করবে,এমনিতেই তো আফসানা আপুর বাসা থেকে ফেরার পর থেকে কিছুই খাচ্ছেন না,কি হয়েছে তাও বলছেন না৷”

আরুর মামীর এমন মায়াময়ী কথা শুনে আরুর নানাভাই রফিক আশরাফ বলে উঠলেন
” আমি কইছি না যে কিছু খামু না তাও তুমি বারবার খাওনের লগে এতৈ জোর করতাছো কেন? তুমি কি জানো না যে কোন কাজে এতো জোর করা আমার পছন্দ না৷”

ওনার এমন কথাতে আরুর মামী বেশ কিছুটা দমে গেলেন তবুও হাল ছাড়লেন না,হাল ছাড়লে চলবে না, ওনার শ্বশুরের দেখভাল করার দায়িত্বটা সম্পূর্ণ ওনার আর তা উনি বেশ ভালভাবেই পূরন করেন তাছাড়া ওনার যত্নতে কোনরকম কোন ক্রুটি হলে আরুর মামা আরুর মামীকে কথা শোনাতে ছাড়েন না তাছাড়া উনিও ওনার শ্বশূরকে যথেষ্ট ভালোবাসেন ও শ্রদ্ধা করেন৷ উনি থেমে না থেকে বললেন
“আমি কোন কথা শুনবো না বাবা আপনার কথা অনেক শুনেছি আর তার ফলাফল হিসাবে আপনি বিগত এক সপ্তাহ ধরে কিছু খাচ্ছেন না,প্রেশার বাড়ছে কমছে তাই আর কোন কথা না৷”

কথাটা বলে খাবারটা ওনার সামনে রাখতেই উনি রাগ করে ছুড়ে ফেলে দিলেন,আজকাল খুব সহজেই রেগে যান আর অবশেষে ওনার মৃত স্ত্রীর নাম ধরে ডেকে একা একা কথা বলতে বলতে ঘর ঢুকে দরজা দিয়ে দেন,ওনার এই অদ্ভুত আচরনের সমাধান খুঁজে পাচ্ছেনা কেউ৷ উনি খাবারটা ছুড়ে ফেলে দিতেই আরুর মামী ছিটকে দূরে সরে গেলেন ভয়ে৷ আশরাফ সাহেবের মুখের দিকে উনি তাকিয়ে রইলেন অবাক হয়ে কারন তিনি কখনো খাবারের অসম্মান বা অপচয় করতে পছন্দ করতেন না আর তিনিই খাবার ছুড়ে ফেলে দিলেন৷ উনি বেশ কাঁপা কন্ঠে বললেন
” বাবা আপনি খাবারটা ফেলে দিলেন?”

উনি লাঠিটা নিয়ে হাটতে গেলেই খানিকটা টলমল হয়ে গেলেন,খানিকটা হাপাচ্ছেন উনি৷ বেশ ঝাঁঝিয়ে উঠে বললেন
” কারোর লাগবো না আমার,আমার আফসানার মা হলেই চলবো,তোমরা কেউ আমারে বোঝো নাই৷”
কথাটা বলে উনি ঘরে ঢুকে আরুর মামীর মুখের ওপর সপাটে দরজা বন্ধ করে দিলেন৷ উনি বেশ কেঁপে উঠলেন ভয়ে,আজকাল ওনার ব্যাবহারে বেশ আতঙ্কিত উনি,কখন কি হয়ে যায় সেই ভয়টা বেশি পান৷

খাবারের প্লেটটা সৌভাগ্যবশত ভাঙেনি,উনি পড়ে থাকা খাবার গুলো তুলতে লাগলেন সেই মুহূর্তে মধু এসে এটা দেখতেই বলে উঠলো
“আম্মু খাবার নষ্ট হলো কিভাবে? জলদি উঠাও দাদাজান দেখলে কথা শোনাবেন অনেক৷”
উনি বেশ মনমরা হয়ে বললেন
” তোর দাদাজান ই ফেলেছে মধু৷”

মধু অবাক হয়ে বলল
” আম্মু তুমি এটা কি বলছো? দাদাজান খাবার ফেলতে যাবে কেন?”

উনি খাবারটা তুলে হাটতে শুরু করলেন আর মধুও ওনার পিছন পিছন হাটতে হাটতে বললো
” কি হলো আম্মু কিছু বলছো না কেন?”

“জানি না তোর দাদাজানের কি হয়েছে,ঢাকা থেকে ফেরার পর কিছু খাচ্ছে না,মেজাজ ও তিরিখ্খি হয়ে রয়েছে কিছু বললেই খালি রেগে যাচ্ছে৷”

মধু বেশ নরম সুরেই বলল
“আমি কি দাদাজানের সাথে কথা বলে দেখবো?”

“নাহ দরকার নেই,তোর আব্বু বাসায় আসুক আগে তাকে বলে দেখি তিনি কি সিদ্ধান নেন৷”

মধু আর কিছু বললো না,তবে শুনে খারাপ লাগছে,ও নিজেও লক্ষ করছে বেশ কয়েকদিন ধরে এইসব তবে আজকে ওনার খাবার ফেলে দেওয়ার বিষয়টা ও যেন মানতে পারছে না কারন উনি এই কাজটা সহ্য করতে পারেননা ৷
একবার আরু খাবার নষ্ট করেছিলো বলে উনি অনেক কথা শুনিয়েছিলেন তার পর থেকে আরু আর ভয়ে খাবার নষ্ট করেনা৷ সেই কথা মধুর মনে আছে তবে খারাপ লাগছে বিষয়টা ভেবে যে আশরাফ সাহেবের মাঝে হঠাৎ এমন পরিবর্তন আসায়৷
মধু নিজের রুমে গেল,সামনেই প্রি টেস্ট এক্সাম পড়তে হবে৷

…….

“একটু থামাবেন গাড়িটা প্লিজ?”
ব্যাস্তাতার সাথে বললো আরু৷ আরিশ চটজলদি গাড়ি থামাতেই আরু দৌড়ে ছুটে গিয়ে রাস্তার একপাশে বমি করতে শুরু করে দিলো৷ আরিশ আরুর কাছে গেল যদিও আরু হাতের ইশারায় ওর কাছে যেতে না করছে তবুও গেল আরিশ,কে শোনে কার কথা৷ আরিশ জলের বোতলটা আরুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল
“কালকে তুমি নারিকেলের নাড়ু খেয়েছিলে?”

কথাটা শুনে আরু ভয়ে চোখ মুখ খিঁচে নিলো,আরিশের বারন করা স্বত্তেও ও খেয়েছিলো তারপর হজম হয়নি আর সকালে নাস্তায় পরোটা খেয়ে বেরোনোর দরুন আরো উল্টো রিয়েকশান হয়ে বমি হয়ে গেছে‌,আরিশ এখন ওর আচ্ছা ক্লাস নেবে এই মাঝ রাস্তায়‌ ভাবতেই আরুর মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠলো‌৷

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here