কারনে_অকারনে_ভালোবাসি
পর্ব:25,26
Suraiya_Aayat
পর্ব:25
আরিশ বেশ গম্ভীর সুরে প্রশ্ন করে উঠলো
” কি হলো উত্তর দাও?”
আরু ভয়ে আরিশের চোখের দিকে তাকাচ্ছে না, কি ই বা বলবে সত্তিই তো ও কালকে অনেক নাড়ু খেয়ে ফেলেছে আর যার কারনে এখন রাস্তার ধারে বমি করতে হচ্ছে৷ আরিশ পুনরায় প্রশ্ন করে উঠলো
“আমি কিছু জিজ্ঞাসা করেছি আরুপাখি৷”
আরু এবার বোতল থেকে জল নিয়ে মুখ পরিষ্কার করে ঢকঢক করে জলটা খেয়ে বোতলটা দূরে ছুড়ে ফেলছ দিয়ে নির্বিকার ভঙ্গিতে প্রশ্ন করে উঠলো যেন আরিশের কোন কথা কোন কানেই এসে পৌছায়নি৷ আরু ওড়না দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলল
” কিছু বলছেন?”
আরিশ বুঝতে পারলো যে আরু ইচ্ছা করে এমনটা করছে তবুও অযথা মেজাজ না হারিয়ে বেশ শান্ত ভাবেই বলল
” কালকে রাতে নাড়ু খেয়েছিলে?”
আরু ফটাফটা মাথা নাড়িয়ে অতি সাবলীল ভাবে উত্তর দিলো
“একদম না৷”
আরিশ আরুর ইশারা পেতেই পুনরায় বলল
“সত্যি করে বলো নাহলে কিন্তু এখানেই রেখে চলে যাবো৷”
আরু ভ্রু কুঁচকে বলল
“আপনার কি আমাকে মিথ্যা বাদী মনে হয়?”
আরিশ আল কথা বাড়ালো না, ফটাফট গাড়িতে উঠে স্টার্ট দিতে নিলো আরুকে ছাড়াই৷ আরু দৌড়ে গাড়ির কাছে ছুটে গিয়ে দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলল
” এই যে মি অভদ্র দরজা খুলুন,দরজা বন্ধ করলেন কেন?”
আরিশ জানালা খুলে বলল
“তোমার মিথ্যা বলার শাস্তি, বাকিটুকু রাস্তা নিজে হেটে এসো৷”
কথাটা বলে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেল৷ আরু রাস্তার ধারে আহাম্মকের মতো দাঁড়িয়ে রইলো, ভাবলো আরিশ আসবে কিন্তু আসছে না দেখে আরু রাস্তায় বসে গেল আর বিড়বিড় করে বললো
“উনি যতখন না আসবে আমিও ততখন এ পা ও এগোবোনা এখান থেকে, কয়েকটা নাড়ুর ই তো ব্যাপার, খেয়েছি খেয়েছি বেশ করেছি , আমার শাশুড়ি আম্মার বানানো নাড়ু উনি কি বানিয়েছেন নাকি? হাহ!”
এরকম নিজের সাথে বেশ কিছুখন কথা বলেও লাভ হলো না কারন আরিশ আসছেনা৷ আরু এবার উঠে দাঁড়ালো,এদিক ওদিক তাকাচ্ছে আর দেখছে যে আরিশ আসছে কি, ফোনটাও গাড়ির ভিতরেই রেখে দিয়েছিলো তাই আর কোন উপায় নেই৷ আরু এবার একটু এগোতে গেলেই পিছন থেকে একটা পুরুষালি কন্ঠ থেকে ডাক আসলো
” এই যে মিস, তুমি আরুশি না? আসরাফ সাহেবের নাতনি৷”
আরু থমকে গেল, আরিশের ওপর রাগে বিড়বিড় ও বন্ধ হয়ে গেল৷ এই সুনশান রাস্তায় ওর নাম ধরে কেউ ডাকছে বিষয়টা সহজ হলেও সুবিধার না,আরু পিচের রাস্তায় পা 30ডিগ্রি করে ঘেষড়াতে ঘেষড়াতে পিছন ঘুরছে , মনের মাঝে ভয় ও কাজ করছে ভীষনরকম৷ পিছন ঘুরে তাকাতেই দেখলো একটা অল্পবয়সী ছেলে যাকে দেখে আরুর চিনতে অসুবিধা হলো না, বাইকে বসে আছে সে৷ আরু এক নিমেষেই পুনরায় 180 ডিগ্রি ঘুরে চম্পট হাটতে শুরু করলেই ছেলেটা বাইক স্টার্ট দিয়ে ওর কাছে এগিয়ে এলো
” এই যে মিস চললেন কোথায়?”
আরু পা চালিয়ে হাটছে আর এদিকে লোকটাও আরুর পাশে পাশে আসছে৷ আরুর এই মুহূর্তে আরিশের ওপর রাগ হচ্ছে ভীষন৷ পিছন থেকে আবার “এই মেয়ে” ডাক আসতেই আরু থেমে গেল আর বেশ মুড নিয়ে বলল
” সমস্যা কি আপনার? এই মেয়ে এই মেয়ে বলে ডাকছেন কেন? আমার একটা বিশেষ নাম আছে!”
ছেলেটা হেসে বলল
“ওহহ আচ্ছা তাই নাকি৷”
আরু রাগের চোটে আর কিছু বলল না, পুনরায় হাটতে শুরু করলে ছেলেটা বলল
” মনে আছে সেদিনের কথা যেদিন তোমার নানাভাই তোমরা আর আমার বিয়ের ব্যাবস্থা করেছিলেন কিন্তু একটা ছেলে এসে সবার সামনে তোমার সাথে এনগেজমেন্ট করে চলে যায়৷”
আরুর গলা শুকিয়ে কাঠ, ছেলেটা পুরোনো কথা টেনে আনছে নিশ্চয়ই তার কোন মতলব আছে তা বুঝে আরু আবার হাটতে হাটতে আমতা আমতা করে বলল
“তো?”
ছেলেটাও ধীরে ধীরে আরুর পাশ দিয়ে আসতে আসতে বলল
” তো কিছুই না, এমনিই মনে হলো তাই আর কি!”
আরু কিছু বলল না৷
ছেলেটা বলে উঠলো
” তা নানুবাসায় যাচ্ছো বুঝি? এতোটা পথ হেটে? এখনো 10 কিলোমিটার হেটে?”
আরু কিছু বলছে না, হাটছে ও, তখনই ছেলেটা বলে উঠলো
“আমার বাইকে ওঠো আমি নামিয়ে দিচ্ছি৷”
আরুর হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল কথাটা শুনে, রাস্তায় না আছে কোন মানুষজন আর না আছে আরিশ, কান্নাও পাচ্ছে ভীষন, এই মুহূর্তে ওর যদি কোন বিপদ আপদ হয় তখন ওকে কে বাঁচাবে? কথাগুলো আরু ভাবছে, তখনই খেয়াল করলো আরিশ গাড়ি নিয়ে আসছে আরিশকে দেখে আরুর রাগ আকাশ ছুঁয়ে গেল আর ভাবলো আরিশকে আজ ও শিক্ষা দেবে, ততখনে আরিশ ওর কাছে এসেছে৷ আরিশ গাড়ি থেকে নামলো, ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আরুর দিকে ভ্রু উচিয়ে বলল
” আরুপাখি গাড়িতে ওঠো৷”
আরু ছেলেটার দিকে একবার তাকালো তারপর আরিশের দিকে বেশ গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো৷ ছেলেটা বলে উঠলো
“কে তুমি?”
আরিশ কোন উত্তর না দিয়ে আরুর হাতটা ধরে গাড়ার দিকে নিয়ে যেতে গেলেই ছেলেটা বলে উঠলো
” এই ছেলে এই,জোর করে নিয়ে যাচ্ছো যে, জানো ও কে?”
আরিশ সানগ্লাসটা খুলে পকেটে রেখে বলল
” কে ও?”
ছেলেটা কতো সাবলীল ভাবে বললো
” ও আমার গার্লফ্রেন্ড৷ তোমার তো সাহস কম না আমার সামনে দিয়ে আমার গার্লফ্রেন্ডে নিয়ে যাচ্ছো”
আসলে ছেলেটা এতোদিনে আরিশের মুখশ্রী ভুলে গেছে তাই অরিশকে দেখে চিনতে পারেনি৷
আরিশ আরুর হাত ছেড়ে দিয়ে আরুর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল
” ওহ রিয়েলি৷”
আরু ছেলেটার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আরিশের দিকে মিউমিউ করে বললো
” এই আপনি কি যা তা বলছেন এসব,আমি আপনার জি এফ হলাম কি করে? আমি কি আপনাকে চিনি?”
ছেলেটা আরুকে একটু ধমকে বলল
” এই তুমি এতো কথা বাড়িও না তো, কে না কে ওই ছেলে নিশ্চয়ই তোমার ক্ষতি করার ধান্দায় আছে,তুমি তাড়াতাড়ি গাড়িতে ওঠো৷”
কথাটা শোনার সাথে সাথে আরিশ বেশ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল
” আচ্ছা আপু আপনি তাহলে আপনার বি এফ এর সাথে আসেন,হ্যাভ আ সেফ জার্নি৷?”
কথাটা বলে আরিশ গাড়িতে উঠে গেল তবে স্টার্ট দিলো না৷ আরু রেগে গিয়ে ছেলেটার কাছে গিয়ে জামার কলার ধরে ঝাকিয়ে বলল
” এই আমি তোর কোন জন্মের প্রেমিকা লাগি হু! কোন জন্মের প্রেমিকা ৷ আর ওটা আমার জামাই বুঝলি! যা ভাগ৷”
ছেলেটার কলারটা ছড়তেই ছেলেটা হুমড়ি খেয়ে বাইক নিয়ে পড়ে গেল আর বোকা বনে গেল একদম, ছেলেটা ভেবেছিলো যে আরুকে সাহায্য করবে আর এদিকে কি হয়ে গেল৷ আরিশ এদিকে লুকিং গ্লাস দিয়ে সবটা দেখছে আর মুচকি হাসছে, আরু দৌড়ে আরিশের পাশে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসে আরুশকে একপ্রকার ঝাপটে ধরে বলল
” এই মি অভদ্র আপনি বিশ্বাস করুন উনি মিথ্যা বলছে৷”
আরিশ ইচ্ছা করে বলল
” আপু আপনি সরে যান প্লিজ,আপনার বডি থেকে ভোমিটিং এর স্মেল আসছে৷”
আরু নাজের জামা কাপড় একবার স্মেল নিয়ে বলল
“কই না তো৷”
আরিশ মুচকি হাসছে৷ আরু বুঝতে পারলো আরিশ ইচ্ছা করে তাই এমন করছে আরও শয়তানি করে আরিশকে আরও জোরে জাপটে ধরে বলল
” ধরে ফেলেছি ,এবার নো মোর ওয়ার্ডস৷”
আরিশ লূকিং গ্লাস দিয়ে ছেলেটার দিকে তাকালো, ছেলেটার শরীরের তুলনায় ওর বাইকটা বেশি ভরী ,বেচারা অনেক ওঠার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না, আরিশ মুচকি হেসে গিড়ি স্টার্ট দিলো ৷
চলবে,,,,,
#কারনে_অকারনে_ভালোবাসি
#পর্ব:26
#Suraiya_Aayat
বাসার ভিতরে ঢুকছে আরিশ আর আরু, আরিশ প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে আরুর প্রতি আপাতত রাগটা দমিয়ে দিয়ে আরুর কথা শুনছে। আরুর বাসার ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল
‘সব হয়েছে শুধু আপনার জন্য, আপনার মতো নিষ্ঠুর আর খারাপ লোক আমি আর দুটো দেখিনি নাহলে আপনি আমাকে ওখানে একা রেখে চলে আসতে পারতেন না, আর আমার যদি কোন বিপদ হতো তখন আপনি তো নাচতে নাচতে আবার একটা বিয়ে করে নিতেন তাইনা! ‘
কথায় কথায় আর রাগের চোটে আরু কথাটা বলে ফেলেছে ঠিকই কিন্তু ওর মাথাতে নেই যে কথাটা আরিশের ওপর ঠিক কতোটা এফেক্ট ফেলতে পারে। আরু র পা দু টো হঠাৎ থেমে গেল আর দ্রুত আরিশ এর দিকে ঘুরে তাকালো, আরিশ নির্বিকার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে আর চোখ মুখের অবস্থা দেখে ভাবশাব বোঝার উপায় নেই । আরু একটু শুকনো ঢোক গিলমোর ভয়ে এই বুঝি আরিশ রেগে গিয়ে আবার ঢাকা ফিরে যায় সেই ভয়ে। আরু আর আরিশ এর মাঝের দূরত্ব টা বেশ দুই কি তিন হাতের। আরু আর কোন কিছু না ভেবে আরিশকে জড়িয়ে ধরলো ঝাপটে এই বুঝি না আরিশ রাগ করে। আরু জড়িয়ে ধরে আছে শক্ত করে কিন্তু আরিশ এখনো ধরছে না, আরিশ আরুর দৃষ্টির অগোচরে মুচকি হাসলো যা এই মুহূর্তে আরুর ভাবনার ধরা ছোয়ার বাইরে। আরু জড়িয়ে ধরে বলল
‘সরি সরি আমি যা বলেছি ভেবে বলিনি। ‘
আরিশ আরুর হাতটা ছাড়িয়ে নিতে গেলেই আরু আরিশের দিকে তাকিয়ে আরও জোরে জাপটে ধরে বলল
‘ বললাম তো আমি ইচ্ছে করে আপনার বিয়ের কথা বলিনি, যেচে আবার চড় খেতে চাইনা আমি। ‘
কথাটা বলে আরিশের বুকে মাথা রাখলো। আরিশ এবার আলতো হাতে আরু কে দূরে সরিয়ে আরুর হাতটা ধরে হাটতে হাটতে বলল
‘ রাতে তোমার ক্লাস নেবো আমি। ‘
আরু বিরক্তিতে চোখ মুখ কোচকালো।
দুজনেই বাসায় ঢুকতেই হঠাৎ আরুর মামী ওদেরকে দেখতেই দ্রুত পায়ে ওদের দিকে গিয়ে বললেন
‘আরিশ আর আরু মা যে, তোমরা হঠাৎ এভাবে, চমকে গেলাম তো। ‘
আরু গিয়ে ওর মামিকে জড়িয়ে ধরলো, উনিও আরু কে আগলে নিলেন।
‘কেমন আছো মামী? ‘
‘এই তো আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছি, আরিশ বাবা তুমি কেমন আছো? ‘
‘ জ্বি মামী আমিও ভালো আছি, মধুকে দেখছিনা যে! ”
কথাটা শোনার সাথে সাথে আরু আরিশের দিকে রাগী চোখে তাকালো যা দেখে আরিশের বেশ মজাই লাগছে কিন্তু আরুর সামনে তা প্রকাশ করলে চলবেনা।
আরু আর আরিশের এমন চাওয়া চাইয়ির কারন যদিও আরুর মামীর পক্ষে বোঝা সম্ভব না তাই উনি সহজ ভাবেই বললেন
‘ মধু তো বাসাতেই ছিলো কিছুখন আগে কিন্তু এখন তো বাসাতে নেই, টিউশন গেছে। চলে আসবে তাড়াতাড়ি। ‘
আরু যেন আরিশের দিক থেকে জহুরি টাইপ দৃষ্টিটা সরাতে পারছে না। উনি বলে উঠলেন
‘তোমরা গিয়ে বিশ্রাম করো আমি নাশতা বানায় ততখনে।’
আরিশকে কিছু না বলে আরু গটগট করে হেটে রুমে চলে গেল, আরিশ বিষয়টা বুঝলো, হাসি পাচ্ছে ভীষন তবে মেয়েটাকে এখনো জালানো বাকি আছে কথাটা ভেবে আরিশ ও আরুর পিছন পিছন গেল। আরিশ রুমে ঢুকতেই আরু আরিশের জামাটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল
‘ আমি তো এতদিন ভাবতাম যে মধু চিপকু টাইপের কিন্তু এখন এটাও ভালোই বুঝতে পারছি যে আপনিও কিছু কম জান না, আপনিও গায়ে পড়া ব্যাটাছেলে। হু! ‘
আরিশের ভ্রু জোড়া আপনা আপনিই কুচকে গেল কারন এমন ওয়ার্ড ও আগে শুনেছে বলে ওর মনে পড়ছে না। আরিশ এবার বেশ গম্ভীর কন্ঠে বলল
‘ আরু পাখি, এটা কি ভাষা হমমম?এই শিখিয়েছিলেন আমি তোমাকে? ‘
আরু মুখ ভাঙচি দিয়ে বলল
‘এমন ভাবে বলছেন যে আপনিই আমাকে মানুষ করেছেন ছোট থেকে হাহ! ”
আরিশ এক ঝটকায় আরুর হাতটা ধরে কাছে টেনে এনে বলল
‘ পুরোনো কথা মনে থাকলে তোমার তাহলে তুমি কখনো আমার থেকে দূরে সরে যাওয়ার কথা মাথায় আনতে না আরু পাখি। ‘
আরুর শরীরের ভিতর দিয়ে এক দমকা হাওয়া বয়ে গেল যেন, ঠোঁটটাও শুকিয়ে গেছে কি বলবে বুঝতে পারছে না তবে এটুকু ভালোই বুঝলো যে আরিশ অভিমান থেকে কথা গুলো বলছে না হলে আরিশ আরু কে হার্ট করে কখনো কোন কথা বলে না। আরু আরিশের চোখের দিকে তাকিয়ে রইল কি বলবে বুঝতে পারছেন না কিন্তু যখনই কিছু বলতে যাবে তখনই বাইরে থেকে কারোর পড়ে যাওয়ার মতো ধপ করে আওয়াজ আসতেই আরু আরিশকে ছেড়ে ছুটে গেল দেখার জন্য যে কি হয়েছে তারপর আরুর চিৎকার শুনে আরিশ ও বাইরে গেলেই দেখলো আরুর নানা ভাই তিনি মাটিতে পড়ে আছেন, হাতের লাঠিটা দূরে ছিটকে পড়েছে। আরু ওনাকে ধরে আছে, আর অন্য দিকে আরুর মামী ছুটে আসছেন। আরুর নানা ভাই রাতীমতো হাপাচ্ছেন কারন বয়স হয়েছে আর পড়ে গিয়ে শরীরের ওজনের বিরুদ্ধে নিজেকে সামলে উঠতে পারছেন না। আরিশ গিয়ে ওনাকে ধরে তুললেন, উনাকে ধরে আরু আর আরিশ দাড় করালো, ওনার শরীরের ভার ওদের ওপর, ধীরে ধীরে ওনাকে ঘরে নিয়ে গেল আর বিছানায় ওনাকে শুইয়ে দিতেই উনি বড়ো বড়ো শ্বাস ফেলতে লাগলেন তা দেখে আরু আরিশের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো ভয়ে, আরুর চোখের কোনে জল জমে রয়েছে। আরিশ একবার আরুর দিকে তাকিয়ে আরুর নানা ভাইয়ের কাছে যেতেই আরুর মামী বলে উঠলেন
‘ বাবার শরীরটা ভালো নামে এখনই ডক্টর ডাকা উচিত, আমি ডক্টরের কাছে ফোন করছি। ‘
আরিশ আর কিছু বললো না, আরু বলে উঠলো
‘ মামী উনি ডক্টর। ‘ আরিশকে উদ্দেশ্যে করে বলল।
আরুর মামি থতমত হয়ে বলল
‘ ওহহ তাই তো আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম যে আরিশ বাবাই ডক্টর।’
আরিশ আরু কে ডেকে বলল
‘আরু পাখি! ”
আরু তড়িঘড়ি উত্তর দিলো
‘হমমম বলুন। ‘
‘গাড়িতে আমার ব্যাগে স্টেথোস্কোপ আছে আর মেডিসিনের বক্স আছে একটু আনো তো। ‘
আরু দৌড়ে ছুটে গেল আনতে। আরিশ ওনার দিকে তাকিয়ে আছেন, ওনার চোখের বর্ন ঘোলাটে, উনি বড়ো বড়ো শ্বাস নিচ্ছেন মৃত্যু পথযাত্রী দের মতো। আরিশ ওনার থেকে চোখ সরিয়ে নিতেই আরু চলে এলো ঘরে। আরিশ একটু চেক আপ করে বলল
‘ মামী একটু বেশি মিষ্টি করে শরবত নিয়ে আসেন তো, নানা ভাই এর প্রেশার লো। ‘
উনি আর বিলম্ব করলেন না, শরবত করে আনলেন। আরু গালে হাত রেখে ওর নানা ভাইয়ের পাশে বসে আছে, মানুষটাকে ও অনেক ভালোবাসে। আরিশ খেয়াল করলো যে আরুর নানা ভাই একবার ও আরিশের দিক তাকাচ্ছেন না তাই আরিশ ভাবলো উনি হয়তো এখনো আরিশকে মেনে নিতে পারেননি তাই আরিশ সেখান থেকে উঠে গেল। আরিশ বাইরে বারান্দায় দাড়ালো, কিছুখন পর আরুর মামী শরবত নিয়ে ঢুকলেন তখন আরিশ ওনার হাতে একটা ঔষুধ দিয়ে বললেন
‘ এই ঔষধ টা ওনাকে খাইয়ে দেবেন এখনই। ‘
‘আচ্ছা।’
কথাটা বলে উনি চলে গেলেন। আরিশ কিছু একটা ভাবছে, এক ভাবনা ওর মাথায় চেপেছে।
কিছুখন পর আরও বেরিয়ে এলো দেখলো আরিশ দাড়িয়ে আছে, আরু বেশ দিতে কন্ঠে প্রশ্ন করলো
‘নানা ভাই ঠিক হয়ে যাবে তো? ‘
আরুর কথা শুনে আরিশ আরুর দিকে ফিরে তাকালো কিছু না বলে শুধু একটা কথায় বলল
‘ যার হায়াত যতোদিন আরু পাখি। ‘
আরু কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলল
‘মানে। ‘
আরু কে কাদতে দেখে আরিশ ম্লান হেসে বলল
‘চিন্তা করো না ঠিক হয়ে যাবে, তাছাড়া আমার সাথে ঝগড়া করার জন্য ওনাকে তো সুস্থ হতেই হবে তাইনা। ‘
আরু চোখ মুছে আরিশের শরীরের সাথে হেলান দিয়ে দাড়ালো আর আরিশের কাধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলো।
চলবে,,,