কারনে_অকারনে_ভালোবাসি পর্ব:29,30

0
1841

কারনে_অকারনে_ভালোবাসি
পর্ব:29,30
Suraiya_Aayat
পর্ব:29

“শোন ওই গোবিন্দ কে বলবি আমাকে যেন রেসপেক্ট দিয়ে কথা বলে বুঝলি? যতোই হোক বয়সে না হলেও সম্পর্কের দিক থেকে আমি ওর বড়ো বুঝলি? আর দরকার পড়লে চড় থাপ্পড় দিয়ে ওকে মানুষ করে নিবে ? ”

বেশ গুরুগম্ভীর কন্ঠে দৃঢ় উক্তি করে উঠলো আরু।

মধু বেশ ইতস্তত বোধ করে আর গলা নামিয়ে বলল
” আপু তুমি ওকে শুধু শুধু গোবিন্দ বলে ডাকছো ওর নাম ভোলা। ”

আরু রেগে গিয়ে বলল
” আহা আহা, কি সুন্দর নাম ভো লা। হাটটট, গোবিন্দ আর ভোলা যাই হোক মুখটা এমন করে রাখে যে মদন মদন লাগে। ”

মধু চোখ মুখ কুঁচকে বলল
” আপু থামবে? প্লিজ! ”

আরু মধুর সেন্টি খাওয়া ফেস দেখে বলল
” ওকে ওকে আর বলছি না, তা এতো কিছু হলো কীভাবে হমম হমমম! মি অভদ্র না বললে তো বোধহয় কিছু জানতেই পারতাম না, তলে তলে এতো কিছু হমম?

“আরে আপু শোনো, প্রথমে তো আমিও এতো কিছু বুঝি নাই তারপর ধীরে ধীরে হয়ে গেছে আমার কোন দোষ নেই কিন্তু এতে। ”

আরু মধুর কান ধরে বলল
” কি বলো এসব, তুমি কি বাচ্চা যে বোঝোনি হম! ”

মধু আরুর এই টপিক টা থেকে বাঁচতে বলল
” অরিও লাগছে আমার, কান ছাড়ো প্লিজ। দাদাভাই অসুস্থ উনি এখন কেমন আছে ওনাকে দেখি নাই আমি অনেকখন চলো দেখে আসি। ”

কথাটা শোনার পরপর ই আরু মধুর কান টা ছেড়ে দিলো, ওর মন খারাপ লাগছে ওর নানা ভাইয়ের জন্য। আরু ও বেশ মন খারাপের সুরে বলল
” আমি নানা ভাইকে দেখে আসি মধু। ”

মধু ফিক করে হেসে বলল
“হমম চলো যাই। ”

আরু বেশ অন্যমনস্ক হয়ে বলল
” আচ্ছা চলো। ”

আরু এক পা বাড়াতে আবার পিছিয়ে মধুর দিকে তাকিয়ে বলল
” এই তুমি হাসলে কেন? ”

মধু প্রায় হেসে বলল
” অরিও তুমি আমাদেরকে মেনে নিয়েছো তো? ”

আরু রেগে বলল
” ফাজিল মেয়ে একটা। ”

মধু হেসে ফেলল আবার।
আরু আর মধু দুজনেই ওনার রুমে গেলেন, উনি বুকের ওপর এক হাত রেখে আর এক হাত বিছানায় রেখে শুয়ে আছেন, আরু আর মধুর ফিসফিসানির কন্ঠস্বর ওনার কানে গেল না। উনি হয়তো ঘুমিয়ে আছেন। আরু ওনার রুমের ভিতর গিয়ে থেমে গেল, কতো শক্ত মানুষটা এভাবে অসুখের জেরে বিছানায় কাতর হয়ে আছেন হয়তো এই মুহূর্তে উঠে বসার শক্তি টুকু ওনার মাঝে নেই কিন্তু এই উনিই এতোদিন অবধি এই বাড়িতে নিজের দাপটে বাড়ির মানুষগুলোর মাঝে এক অপূর্ব মেলবন্ধন গড়ে রেখেছেন, সকলকে সঠিক শিক্ষার সাথে রিতী নীতীতে বড়ো করেছেন। আরু এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেল যেন, চোখের কোনে নোনা জলের ভীড় জমতে লাগলো না চাইতেও আজ বড্ড কষ্ট হচ্ছে মানুষটার জন্য। আর কখনো ওর নানুকে দেখেনি এমনকি জানেও না কেমন দেখতে ও শুধু ওর নানাভাইকেই দেখেছে, আর ওনার মুখ থেকে কেবল ওর নানুর গল্প শুনেছে। মানুষটাকে এভাবে বিছানায় পড়ে থাকতে দেখে কষ্ট লাগছে, মানুষটাকে হারাতে ভয় পায় ও। আরিশ ও ঠিকঠাক করে আরু কে কোন জবাব দেয়নি যে আরু চিন্তামুক্ত হতে পারবে তাই যেন ভিতর থেকে সস্তি অনুভব টা আর আসছে না, মনের অবস্থা ভীষনরকম খারাপ। আরু এগোচ্ছে না আবার পিছিয়ে যাওয়ার সাহস ও পাচ্ছে না। আরু কে নিস্তব্ধ হয়ে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মধু হালকা ফিসফিসানির সুরে বলল
” অরিও কাম হেয়ার, ওখানে কি করছো। ”

আরুর ভাবনার ঘোর ভাঙলো। এক পা এক পা করে এসে মধুর কাছে এগিয়ে এলো এবার ওর নানাভাইকে অনেক কাছ থেকে আগের তুলনায় অনেক ভালো ভাবে দেখা যাচ্ছে। ওনার থমথমে ঘুমন্ত মুখটা দেখে আরুর আর ওনাকে ঘুম থেকে ডাকতে ইচ্ছা করলো না। মধু আরুর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো
“অরিও, দাদাভাই কে ডাকবো? ”

আরু আর মধুর কথার কোন উত্তর না দিয়ে ওর নানা ভাইয়ের পাশে বসলো, ওনার বয়সের ছাপে ঢেকে যাওয়া কোঁচকানো হাতের চামড়া টাতে হাত রেখে মৃদু স্বরে ডাকে উঠলো
“নানাভাই! ”

হঠাৎ করে আরুর গলার আওয়াজ পেতেই উনি একপ্রকার কেঁপে উঠলেন, হয়তো ওনার আন্তঃশক্তি আরুর উপস্থিতি কে জানান দিয়েছে। উনি যেন একপ্রকার বিচলিত হয়ে উঠে বসার চেষ্টা করলেন, আরু ওনাকে বাঁধা দিয়ে বলল
” একি তুমি উঠছো কেন, তুমি উঠো না, শুয়ে থাকো তুমি অসুস্থ। ”

উনি একটা লম্বা দম নিয়ে বললেন
” আরু দিদি ভাই! ”

ওনার এমন কন্ঠ শুনে আরুর বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো। আরুর গলা বেশ ধরে এলো কারন এর আগে এতো ভেঙে পড়তে ওনাকে দেখেননি ও।
আরু বেশ থমথমে গলায় বলল
” বুঝেছি তোমার অনেক কষ্ট হচ্ছে, থাক তোমাকে এখন আর কথা বলতে হবে না তুমি ঘুমাও আমি আছি। ”

মধু এসে আরুর পাশে দাঁড়ালো। আরুর হাতটা কাঁপা কাঁপা হাতে উনি ধরে বললেন
” এই তো মোর কাঁকন রে দেখতে পাইতাছি আমি। ”

আরু বুঝলেন যে ওনার এই অসুস্থতার দিনে উনি ওনার পুরোনো স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরতে চাইছেন, আরুর নানুর নাম ছিলো কাঁকন তা আরু বহুবার শুনেছে। যদিও ওনার আসল নাম ছিলো কাকনমালা তবে আরুর নানাভাই ভালোবেসে ওনাকে কাঁকন বলে ডাকতেন। আরু ফিঁচেল হাসি হাসলো।

উনি আবার বললেন
” জানিস তো দিদি ভাই বারবার মনে হচ্ছে কাঁকন যেন আমাকে ডাকতেছে আর বলতেছে বারবার যেন তার কাছে মুই যাই, কাল রাতেও আমারে স্বপ্নে এসে ডাকতে ছিলো, আমিও কইছি যে আমার আমি গেলে আমার আরুকে কে দেইখা রাখবো কে? হেতি কই তোমার না বয়স হইছে, আমি আর ওর মুখের ওপর কুনো কথা কইতে পারি নাই রে দিদিভাই।

কথাটা শুনতেই আরু ওনার হাতটা ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো, নিজেকে আর সামলাতে পারলোনা, মধুর ও চোখের কোনা ভারী হয়ে আসছে কি বলবে বুঝতে পারছে না। আরুর নানাভাইয়ের চোখেও জল, ওনার মুখের কোঁচকানো চামড়ার ভাঁজ দিয়ে জল গড়াচ্ছে। আরু ওনার চোখটা মুখিয়ে বললেন
” একদম যাবে না তুমি তোমার কাঁকনের কাছে বুঝলে? তোমার কাঁকন তো আর জানে না যে তুমি চলে গেলে গেলে তোমার আরু কতোটা একলা হয়ে যাবে। তোমার কাঁকন না হয় স্বার্থপর হয়ে চলে গেছে এখন তোমাকেও স্বার্থপর করার ধান্দায় আছে তাইনা! তুমি কোথাও যাবে না। ”

কথাটা বলতে আরু কাঁদতে কাদতে ওর নানা ভাইয়ের বুকের ওপর মাথা রাখলো, আজ না চাইতেও ওনার বুকটা ভারী হয়ে যাচ্ছে কষ্টে তবে তা কিসের কষ্ট উনি বলতে পারেন না। উনি কাঁপা কাঁপা হাতে আরুর মাথায় হাত রাখলেন, আর বলতে শুরু করলেন,,,
” তোরে একদম আমার কাকনমালার মতো দেখতে তাইতো কহনো তোরে আমি আমার কাকন মালার ছবি দেহাইনাই , দেহালেই তুই বলতি যে এটা কি তোর জমজ কেও! ”

কথাটা বলে উনি দম ছাড়লেন, অল্পতেই হাপিয়ে পড়ছেন উনি, নিশ্বাস প্রশ্বাস ও বেশ ঘনঘন চলছে ওনার তা আরু ওনার বুকে মাথা রেখে বুঝতে পারছে।

” তুই আশেপাশে থাকলে আমার মনে হয় আমার কাকন আমার সাথেই আছে। কিন্তু এতো বছর পর কাকন আমারে ডাকতেছে কেন দিদি ভাই। ”

আরুর ও শ্বাস আটকে আটকে আসছে, কি বলবে বুঝতে পারছে না। আরু ওনার কাছ থেকে সরে এসে বললেন
” কোথাও যাবে না তুমি, তোমার কাঁকন ডাকলেও না। ”

উনি মৃদু হেসে বললেন
” আমার কাঁকনের একখান ছবি আছে মোর কাছে অনেক যত্ন করে রাখছিলুম আমি, কাওকে দেহাই নাই তুই দেখবি? ”

আরু ওনার হাতটা ধরে বলল
” দেখবোনা আমি, তোমার কাঁকনের ওপর অভিমান জন্মেছে আমার যেদিন তোমার কাঁকনের ওপর থেকে আমার এই অভিমান ভাঙবে সেদিন আমি দেখবো। ”

উনি মৃদু হেসে বললেন
” আমার আলমারীর ভিতর একখান সাদা রঙের পাঞ্জাবী আছিলো ওইটা কাঁকনের দেওয়া ওর ভাজে আমি মোর কাঁকনের একখান ছবি যত্ন করে রাখছি, তোরে আমি কইয়া গেলুম, যদি আর কখনো সুযোগ না পাই রে দিদি ভাই। ”

আরু শিউরে উঠলো, বাকরুদ্ধ লাগছে নিজেকে, পৃথিবীর সবচেয়ে দূর্বল মানুষ লাগছে নিজেকে। আরু নিজেকে সামলে বেশ রুক্ষ কন্ঠে বলল্
” তুমিও তোমার কাঁকনের মতোই স্বার্থপর হয়ে গেছো নানাভাই, কথা নেই তোমার সাথে, একদম কথা নেই। ”

কথাটা বলে আরু কাঁদতে কাঁদতে রুম থেকে ছুটে বেরিয়ে গেল। আরুর নানাভাই উনি কেঁদে দিলেন, ঠোঁট ফুলিয়ে বললেন
” যাইস না রে দিদিভাই আমাকে একা করে, মুই যে বড়ো একা, যাইস না। ”

আরু রুমে ছুটে গেল কাঁদতে কাঁদতে, রুমে গিয়ে দেখলো আরিশ হাতের ওপর মাথা রেখে শুয়ে আছে চোখ বন্ধ করে। আরু গিয়ে আরিশের বুকের ওপর মাথা রেখে ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদতে লাগলো। আরিশ জেগেই ছিলো এতখন ধরে আর আরুর আসার জন্য অপেক্ষা করছিলো। আরিশ জানতো যে এমন কিছুই হবে কারন কিছুটা আগে আরু যখন ওর নানা ভাইয়ের বুকে মাথা রেখে কাঁদছিল তখন মধু আরিশকে এসে ততখনাত তা বললো কারন একমাত্র আরিশ ও আরুকে সবরকম অবস্থায় সামলাতে পারে। আরিশ দরজা অবধি গিয়ে ছিলো তারপর আর ভিতরে যাইনি কোন কিছু একটা ভেবে। আরিশ আরুর মাথায় হাত রেখে বলল
” কি হয়েছে আরু পাখি কাঁদছো কেন? ”

আরু ফুঁপিয়ে উঠে বলল
“নানাভাই অনেক স্বার্থপর শুধু আমাকে একা করে দেওয়ার ধান্দা। ”

আরিশ আরুকে আগলে নিয়ে বলল
” কেন কি হয়েছে আরু পাখি?

“নানাভাই তার কাঁকনমালার কাছে যেতে চাই, সে আমার কথা ভাবেনি একবার ও। ” কথাটা বলে আরু আবার কেঁদে দিলো। ”

আরিশ আরুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
“সে যে তার কাকনমালা কে ভালবাসে তাই তার কথা সে ফেলতে পারছে না আরু পাখি। আজ আমার কিছু হলে,,,, ”
কথাটা বলতে না বলতেই আরু আরিশের মুখটা চেপে ধরলো, কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল
” ভালোবাসি আমি আপনাকে, প্লিজ এমন কথা আপনি আর বলবেন না আমার সহ্য করতে কষ্ট হয়। প্লিজ। আমরা একে অপরের পরিপূরক।”

আরিশ আরুকে জড়িয়ে নিলো আষ্টেপৃষ্ঠে, কেও ই কখনো তার কাছের মানুষটাকে ছেড়ে চলে যেতে চাই না কিন্তু নিয়তি বাধ্য করে।

আমরা সকলেই ভালোবাসালর কাঙাল, একটু ভালোবাসা পেলেই নিজেদেরকে গুটিয়ে নিই আর প্রানপনে চেষ্টা করি ভালোবাসার মানুষটাকে আঁকড়ে বাঁচার জন্য, হারাতে কে চায়? কিন্তু ওই যে বাংলায় একটা প্রবাদ আছে না, জন্ম, মৃত্যু বিয়ে বিধাতার লিখন তাকে খন্ডানোর সাধ্য আছে কার?

চলবে,,

#কারনে_অকারনে_ভালোবাসি
#পর্ব:30
#Suraiya_Aayat

রাতের গভীরতার সাথে নির্জনতার হয়তো বিশেষ একটা সমানুপাতিক সম্পর্ক আছে, রাত বাড়লে অন্ধকারের সাথে সাথে যখন ঝিঁঝি পোকার ডাক গুলো আরও বেশি করে শুনতে পাওয়া যায় তখন যদি একা সময় কাটাও তো তখন হয়তো বোঝা যায় যে পৃথিবীটা বিরাট এক মায়ার গোলকধাঁধা, একা এসেছো তাই যেতেও হবে একা, কেও কারোর নয়।

আরুর মনের অবস্থা বিশেষ ভালো নেই সেই দুপুর থেকে মন খারাপ করে রয়েছে, দুপুর পেরিয়ে বিকেল গড়ালো আর বিকেল গড়িয়ে রাত, সময় ঠিক বহমান তেমনি আমাদের জীবন ও। ঘড়ির কাটা হয়তো হাতেনাতে গুনলে ঠিক বারোটা ছোঁব ছোঁব, হঠাৎ করে একবার ঘুম ভাঙতেই আর ঘুম আসেনি আরিশের তাই কোন করম কোন ভাবনা কাটিয়ে উঠতে না পেরে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। এই বাড়িটা নেহাতই বড়োসড়ো তাই নির্দিধ্বায় চলাফেরা করা যায় যেখানে সেখানে। আরিশ নিঃশব্দে হাটছে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পাছে অন্ধকার কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়ে এক হুলুস্থুলু কান্ড না ঘটে। খুব যে অন্ধকার তেমনটা বলা ভুল, অমাবস্যা কি পূর্নিমা তার ধারনা নেই তবে রাতের মধ্যে গগনে পূর্নিমা রাতের ঝলসানো রুটির মতো একটা চাঁদ বিদ্যমান, আশপাশটা দেখা যাচ্ছে বেশ। ধীর পায়ে হাটতে হাটতে হঠাৎই হাটার গতিটা বাড়িয়ে দিয়ে ছুটলো আরিশ,বৃদ্ধ মানুষটাকে পড়তে পড়তে ধরলো আরিশ। চাঁদের আবছা আলোতে আরুর নানা ভাইয়েই মুখটা আরিশের স্পষ্ট দৃষ্টিতে দেখতে কোন রকম কোন বাঁধা সৃষ্টি করছে না, তার চেহারাটা যেন পূর্বের ন্যায় আরও জ্বলজ্বল করছে। আরিশ বেশ শক্ত হাতে ওনাকে ধরলেন, ভারী শরীরের ভার আরিশ ঠিক সামলে নিয়েছে, উনি হয়তো কিছু বলতে চাইছেন যা ওনার চোখের চাহনিতেই স্পষ্ট।
আরিশ ওনাকে খানিকটা সোজা করে দাড় করিয়ে বলল
” চলুন আপনাকে ঘরে দিয়ে আসি। ”
উনি আরিশের দিকে ভেজা ভেজা চোখে তাকিয়ে রইলেন। আরিশ ওনার শরীরের ভার বইতে ওনার এক হাত নিজের কাধে নিয়ে বলল
“হাটুন। ”

উনিও আরিশের সাথে পা বাড়ালেন আর ছলছল দৃষ্টিতে আরিশের দিকে চেয়ে রইলেন বেশ অনেকখন।

রাত প্রায় তিনটের কাছাকাছি, আরুর নানা ভাইয়ের ঘর থেকে বার হলো আরিশ, বুকের মাঝে এক ঈষৎ চিনচিন ব্যাথা করে উঠছে যা ওর হুদয়কে ভারাক্রান্ত করার জন্য যথেষ্ট। কখন যে চোখের কোনে একটু জল জমে এলো আরিশ বুঝতেই পারলো না, তবে পুরুষ মানুষরা হয় কঠোর, ভীষন করম কঠোর তাদেরকে যে কাঁদতে মানা।
একটা উষ্ণ দীর্ঘশ্বাস মুখ থেকে আপনার আপনিই বেরিয়ে এলো, হাটা দিলো ঘরের দিকে। নাহ আজকে আর ঘুম আসবে না সারাটা রাত হয়তো এভাবেই কাটবে আর এভাবেই কখন যে মধ্য রাত কাটিয়ে ভোর হয়ে যাবে তা বুঝতেই পারবে না।

*

“আর একদিন থাকলে হতো না মামনি? না মানে এমনিতেই তো তোমরা আসো না তার ওপর আসলে তাও এতো তাড়াতাড়ি চলে যাচ্ছো। ”
বেশ আকুতির সুরে কথাগুলো বলে উঠলেন আরুর মামী। আরু ব্যাগ গোছাতে গোছাতে বলল
“নাহ মামনি, অন্য কোনদিন আসবো আবার, আমারা তো এসেছিলাম ই একদিনের জন্য বলো। তাছাড়া ওনার এবার ফাইনাল এক্সাম আছে আর তাছাড়া আমারো তো আর একমাস পর মেডিকেল এর এক্সাম, পড়াশোনার ও অবস্থা একটা। আসবো পরে আবার, আর মধুর এক্সাম হলে ওকে পাঠিয়ে দিও।
পাশ থেকে মধু বলে উঠলো
” আবার কবে আসবে অরিও? ”

আরু মধুর প্রশ্নের কোন উত্তর দিলো না, মন ভালো নেই ওর। আরুর মামী মধুকে বলে উঠলো
” কানে তুলো দিয়ে ছিলে তুমি এতখন মধু? আরু এতোখন ধরে কি বললো। ”

মধু চুপ হয়ে গেল, সত্যিই ভুলটা ওর যে ও এমন বোকা বোকা প্রশ্ন করেছে। আরু ব্যাগটা নামিয়ে বলল
” আসছি। ”

কথাটা বলেই আরু দরজার বাইরে পা রাখতে গেলেই আরুর মামী বলে উঠলেন
“তোমার নানা ভাইয়ের সাথে দেখা করবে না মামনি? ”

আরু থেমে গেল, কান্না পাচ্ছে খুব, কালকে থেকে অভিমানের দাঁড়ি পাল্লাটা তে কেবল অভিমান ই বেড়ে যাচ্ছে। আরু একটু ধরা গলায় বললো “নাহ! ”

আরুর মামী বেশ নরম সুরে বললেন
” উনি কষ্ট পাবেন আরু। ”

আরু কিছু বললো না বেরিয়ে গেল, বেশ দ্রুত পায়ে হাটতে শুরু করলো। নানা ভাইয়ের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো, ঘরে ঢুকবে না এমনটাই মনো স্থির করে নিয়েছে আগে থেকে। আরু দরজার আড়াল থেকে দেখলো ওনাকে, আরিশ কেও দেখলো আর বেশ অবাক হলো দুজনে হয়তো কথা বলছেন। আরু একটু খুশি হলো এটা দেখে, ওনাকে এক ঝলক দেখেই আরু গাড়িতে গিয়ে বসলো।
আরিশের জন্য অপেক্ষা করছে, হঠাৎ মধু এসে বলল
” অরিও তুমি থেকে যাও না প্লিজ। অন্তত আমার কথা ভেবে থেকে যাও, তুমি একটু আম্মুকে আর বাবা কে ভোলার কথাটা বলে যাও ওনারা তোমার কথা ফেলতে পারেনা অরিও। ”

আরু মধুর দিকে তাকিয়ে বেশ নরম সুরে আর গরম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
” সব কিছুর একটা সময় থাকে তাই বিষয়টা তোমার ব্রেন অবধি পৌছালে খুশি হবো। ”

আরুর এটুকু বলা তেই মধু আর কিছু বলার সাহস পেলো না, মধু দাঁড়িয়ে রইলো চুপচাপ, আরিশ এলো, মধুকে দেখে বলল
” মধু আজ আসি, আবার দেখা হবে। ”

মধু ঈষৎ মুচকি হাসলো, আরুর এমন নরম কন্ঠে ধমক শুনে ও আর কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না। আরিশ ও মুচকি হেসে গাড়িতে উঠলো, দেখলো আরুর সিট বেল্ট বাঁধা নেই তা দেখে আরিশ আর কিছু বললো না চুপচাপ আরুর সিট বেল্ট বেঁধে দিলো।

*

“কি হয়েছে মন খারাপ? সেই থেকে দেখছি মন খারাপ করে বসে আছিস কি হয়েছে বল। ”

কথাটা শোনার পরপর ই আরু অনিকা খানের কাধে মাথা রেখে বলল
” আচ্ছা ফুপি আমরা সবাই এমন কেন বলোতো? ”

আরুর কথাতে উনি বেশ ঘাবড়ে গেলেন তারপর আমতা আমতা করে বললেন
” কেমন রে আরু মা। ”

আরু বলল
” এই যেমন। ”

কথাটা শেষ হত্তয়ার আগে আরিশের ডাক এলো ” আম্মু শোনো। ” আরু ওনার কাধ থেকে মাথা সরিয়ে নিলো, উনি আরুর দিকে তাকিয়ে বললেন
” একটু অপেক্ষা কর আমি আসছি। আরিশের হয়তো কিছু দরকার। ”

আরু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। উনি আরিশের কাছে গেলেন। আরিশের কাছে গিয়ে বললেন
” কি রে ডাকছিস যে কিছু দরকার? ”

আরিশের চোখ মুখ শুকিয়ে এসেছে প্রায়, শুকনো ঠোঁট দুটো একটু ভিজিয়ে বলল
” নানাভাই উনি আর নেই। ”

কথাটা শোনার জন্য হয়তো অনিকা খান মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না, ভর সন্ধ্যায় এমন একটা খবর পাবেন তা হয়তো ভাবতেও পারেননি উনি।থতমত খেয়ে গেলেন উনি।

” কি বলছিস এটা।”

” উনি অনেক অসুস্থ ছিলেন, তাছাড়া ওনার অবস্থা ও খুব একটা ভালো ছিলো না, আরুকে কালকে এমন কিছুই বোঝাতে চেয়েছিলেন তাই আরুপাখির এতো অভিমান। ”

উনি চেয়ারে বসে পড়লেন।
” মেয়েটাকে এখন কি করে সামলায়? আফসানা কি জানে? ”

“হমম মামী জানে, আমি আরুপাখিকে নিয়ে এক্ষুনি যাচ্ছি, তুমি বাবা সানা মামা আর মামীর সাথে আসো। ”

কথাটা বলে আরিশ একপ্রকার তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেল। নীচে গিয়ে দেখলো আরু সোফা তে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে আছে। আরিশ ধীর পায়ে আরুর কাছে গিয়ে বলল
” আরুপাখি? ”

আরু চমকে উঠলো, উঠে বসে বলল
” আপনি। কিছু বলবেন? ”

আরিশ আরুর হাতটা ধরে বলল
” নানা ভাই এর শরীরটা ভীষন খারাপ দেখতে যাবো এক্ষুনি চলো। ”

আরিশ আরু কে কিছু বলার সুযোগ দিলো না, আরু কে নিয়ে গাড়িতে বসালো। আরু কে সত্যি কথাটা এখনি বললো না নয়তো আরু সারাটা রাস্তা কাঁদবে।

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here