বেস্টফ্রেন্ড থেকে স্বামী স্ত্রী পর্বঃ ২য়

0
1557

বেস্টফ্রেন্ড থেকে স্বামী স্ত্রী
পর্বঃ ২য়
লেখাঃ MD Sumon Kobir

ইরিনার মাঃ বুঝলাম,কিন্তু ছেলেটা দেখতে কেমন।
ইরিনাঃ দেখতে আমার কাছে লাখে একটা।তবে তুমি যা ভাবছো তা কোনো দিন সম্ভব না। (নিজের রুমের দিকে যেতে যেতে)
ইরিনার মাঃ কি ভাবছি আর কেন সম্ভব না। ( একটু উচ্চশরে)
ইরিনাঃ কারন সুমন আমার বেস্টফ্রেন্ড। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি তারপর গল্প করবো।( রুম থেকে উচ্চশরে বললো)
ইরিনার মাঃ হ্যা আর একদিন তোমার বন্ধুকে নিয়ে আসবে কেমন। (উচ্চশরে)
ইরিনাঃ ঠিক আছে।( উচ্চশরে)

ইরিনা ফ্রেশ হয়ে এসে খাবার খেয়ে ঘুমাতে চলে গেলো।
#পরের_দিন
ইরিনার মাঃ ইরিনা আজ আমরা একটা অনুষ্টানে যাবো। আজ স্কুলে যেতে হবে না।
ইরিনাঃ কিসের অনুষ্ঠান মা।
ইরিনার মাঃ আমরা আজ মেলায় যাবো।
ইরিনাঃ আচ্ছা মা তাহলে সুমনদের বাড়ি থেকে ঘুর আসি।
ইরিনার মাঃ যাও তাড়াতাড়ি এসো।
ইরিনাঃ জ্বী মা।আসবো।

ইরিনা সুমনদের বাড়িতে চলে গেলো।দেখে সুমন বাড়ি নেই।

ইরিনাঃ আন্টি সুমন কোথায়।
সুমনের মাঃ সুমন তো স্কুলে গেছে।
ইরিনাঃ আচ্ছা আমি তাহলে আসি।
ইরিনা মনে মনে ভাবছে,, অসুস্থ অবস্থায় স্কুলে যাওয়াচ্ছি।
ইরিনা সোজা স্কুলে চলে যায়।স্কুলে গিয়ে দেখে সুমন বসে আছে।ইরিনা সুমনের কাছে গেলো।ইরিনাকে দেখে সুমন বলে,,,,,,
সুমনঃ তুমি এসেছো তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
ইরিনাঃ তোমার না জ্বর। তাহলে স্কুলে আসতে কে বলেছে।
সুমনঃ আমার জ্বর তো সেরে গেছে।এই দেখো।
ইরিনার হাত সুমনের কপালে দিয়ে।
ইরিনাঃ এখনো জ্বর আছে।তোমার স্কুলে আসা ঠিক হয় নি।তোমার যদি কিছু হয় তাহলে আমি কার সাথে সময় কাটাবো।কার সাথে গল্প করবো।কার সাথে ঘুরতে যাবো।বলতে পারো।আর সব থেকে বড় কথা হলো আমি তোমাকে ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারি না।তোমার কিছু হলে আমি বড় একা হয়ে যাবো।( কাদো কাদো কন্ঠে)
সুমনঃ সেতো আমি জানি।কিন্তু নিয়মিত ক্লাস না করলে যে হবে না।আমাকে তো অনেক বড় হতে হবে।আমার মায়ের মুখে হাসি ফুটাইতে হবে। (ইরিনার চোখের পানি মুছে দিয়ে)
ইরিনাঃ হ্যা সব বুঝি। তাই বলে অসুস্থ শরীরে না।
সুমনঃ বাড়ি আর কত সুয়ে থাকবো বলো।ভেবেছিলাম তোমার সাথে একটু গল্প করে সময় কাটাবো। কিন্তু তুমি মনটাই খারাপ করে দিলে।যাই বাড়ি যাই।কাল থেকে আর স্কুলে আসবো না দেখে নিও। (অভিমানী সুরে)
সুমন রাগ দেখিয়ে চলে আসছিলো।ইরিনা সুমনের হাত ধরে ফেলে।আর বলে,,,,
ইরিনাঃ আরে আমি স্কুলে আসতে না করেছি নাকি।আমি তো শুধু বলেছি তোমার এখনো জ্বর আছে। এখন আসা ঠিক হয়নি।আচ্ছা সরি। ভুল হয়ে গেছে ক্ষমা করে দিও। (দুই কান ধরে)
সুমনঃআচ্ছা ঠিক আছে।কিন্তু তোমার বই কোথায়?
ইরিনাঃ আমি তোমাকে বলতে এসেছিলাম আমি 3 দিন স্কুলে আসবো না। তোমাদের বাড়িতে গিয়ে না পেয়ে এখানে এসেছি।
সুমনঃ কেন স্কুলে আসবে না কেন।কোথাও যাবে নাকি।
ইরিনাঃ হ্যা আমরা আজ গ্রামে যাচ্ছি শীত মেলা দেখতে।
সুমনঃ আচ্ছা যাও।আমিও যাবো আগামী পরশু দিন।
ইরিনাঃ আচ্চা আমি তাহলে আসি।
ইরিনা চলে গেলো।সুমন বাড়ি চলে আসলো। এভাবেই কেটে যেতে লাগলো ওদের জীবন।সুমন একদিন ইরিনাকে না দেখে থাকতে পারে না।ইরিনাও সুমনকে না দেখে থাকতে পারে না।
দুজন একসাথে এক গতি নিয়ে পথ চলছে।JSC পরিক্ষা দিয়েছে অনেক ভালো ভাবে।দুজনই A+ পাবে।।
রেজাল্ট বের হয়েছে সুমন A+পেয়েছে।কিন্তু ইরিনা নাকি অল্পের জন্য A+ পাই নি।ইরিনার মন খুব খারাপ।সুমন A+পেয়েছে শুনে পুরো স্কুলে আনন্দের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে।সুমনসহ মোট ২৬ জন A+ পেয়েছে।ইরিনাকে সুমন অনেক খন ধরে খুজে বেড়াচ্ছে।কিন্তু পাচ্ছে না।অনেক খোজার পরে সুমন ইরিনাকে পেয়ে যায়।ইরিনাকে দেখে সুমন বলে,,,,,,,,,
সুমনঃ ইরিনা তুমি এখানে আর আমি সারা স্কুলে তোমাকে খুজে বেড়াচ্ছি।
(সুমন ইরিনার পাশে বসে)
আরে ইরিনা তুমি কাদছো কেন।
ইরিনাঃ আমি এখন বাড়িতে কিভাবে মুখ দেখাবো।
সুমনঃ মানে, কি হয়েছে তোমার
ইরিনাঃ আমি A+ পাইনি। এই খবর বাড়ি গেলে আমি মুখ দেখাতে পারবো না। (কান্না করতে করতে)
সুমনঃ কে বলেছে তুমি A+ পাও নাই।
ইরিনাঃ অনেকেই বলেছে।
সুমনঃ এই দেখো তোমার রেজাল্ট। তুমি A+পেয়েছো।
ইরিনাঃ সত্যি আমি A+ পেয়েছি।
সুমনঃ না আমি মিথ্যা বলছি।
ইরিনাঃ ওরে আমার বাটপার রে। ( একরাশ মিষ্টি হাসি হেসে)
বলে ইরিনা সুমনকে কিল ঘুশি মারতে লাগলো
সুমনঃ আরে কি করছো ব্যাথা লাগছে তো।
ইরিনাঃ ব্যাথা লাগার জন্যই তো মারছি।
সুমনঃ এবার একটু হাসো তো দেখি।আমার পাগলিটাকে কেমন লাগে দেখতে।
ইরিনাঃ কি আমি পাগলি না। তোকে তো আমি আস্তো গিলে খাবো।
বলে ইরিনা সুমনকে মারতে লাগলো।
সুমনঃ আরে এতো জোরে মারে কেউ।
ইরিনাঃ মারবো আর জোরে মারবো।পাগলি বললি কেন?
সুমনঃ পাগলি ছাড়া কি বলবো।
ইরিনাঃ পাগলি বাদে যা মন চাই বলতে পারো।
সুমনঃ আচ্ছা আর পাগলি বলবো না তোমাকে।মাঝে মাঝে টুনটুনি বলে ডাকবো কেমন।
ইরিবাঃ না তাও বলতে পারবে না।
সুমনঃ আচ্চা তাহলে কি বলে ডাকবো।
ইরিনাঃ পাগলি আর টুনটুনি বাদে যা ইচ্ছা হয় তাই বলে ডাকতে পারো।
সুমনঃ আচ্ছা তাহলে জানু বলে ডাকবো।
ইরিনাঃ তুমি না আসলে অনেক দুষ্টু।
সুমন আর ইরিনা দুজনে মিলে আর কিছু খন খুনশুটি করে বাড়ি চলে আসলো।
ইরিনা আর সুমন একসাথে বাড়ি যাচ্ছে।কিছু দুর যাওয়ার পর সুমন চলে যায় এক দিকে। ইরিনা চলে যায় আরেকদিকে।রাস্তা পার হওয়ার সময় সুমন একটা বাইকের সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায়।সাথে সাথে সুমন ইরিনা বলে জোরে চিৎকার দিয়ে উঠে।
ইরিনা পেছন ঘুরে দেখে সুমন রাস্তায় পড়ে আছে। মানুষজন ছুটে আসছে সুমনের দিকে।ইরিনা দৌড়ে গেলো সুমনের কাছে।সুমনের মাথা দিয়ে রক্ত পড়ছে।সবাই সুমনকে ধরে হাসপাতালে নিয়ে গেলো। ডাক্তার সুমনকে OT তে নিয়ে গেলো।কিছু খন পরে ডাক্তার এসে মীমকে বললো,,,,,
ডাক্তারঃ রুগি তোমার কে হয়।
ইরিনাঃ ও আমার জীবন।
ডাক্তারঃ এখন ফাজলামো করার সময় না।রুগির মাথা থেকে অনেক রক্ত ক্ষরন হয়েছে। এখনি এক ব্যাগ রক্ত লাগবে।রক্তের গ্রুপ O+।
ইরিনাঃ যা করার আপনি করেন। যত টাকা লাগে আমি দেবো।আমি আব্বু কাছে ফোন দিয়েছি।এখনি চলে আসবে।ঐ তো আমার আব্বু চলে এসেছে।
ইরিনার বাবাঃ কিরে মা এখানে কেন আসতে বললি।
ইরিনাঃ আব্বু আমার সুমন এক্সিডেন্ট করেছে।
ইরিনার বাবাঃ ডাক্তার ছেলেটার অবস্থা কি।
ডাক্তারঃ অবস্থা খুব বেশি ভালো না।জরুরি এক ব্যাগ রক্ত লাগবে।গ্রুপ O+
ইরিনার বাবাঃ আমার রক্ত O+। আমি রক্ত দেবো।
ডাক্তারঃ আসুন তাহলে।
ইরিনার বাবা সুমনকে রক্ত দিয়েছে।সুমন এখন সুস্থ। কিছুদিন বেডরেস্টে থাকতে হবে।ইরিনা সব সময় সুমনের সাথে থাকে।
ইরিনা অক্লান্ত পরিশ্রম করে সুমনকে দ্রুত সুস্থ করে তোলে।
সুমনঃ ইরিনা তুমি আর কত কষ্ট করবে আমার জন্য। আমি তো এখন পুরো সুস্থ।
ইরিনাঃ তুমি একদম চুপ করে থাকো।কোনো কথা বলবা না।
ইরিনার মাঃ কিরে মা ওকে বকা দিচ্ছিস কেন।
ইরিনাঃ মা তুমি এখানে।
ইরিনার মাঃ কি ভেবেছিলি বাপ মেয়ে মিলে চুক্তি কারবি আমি জানতে পারবো না। তা কি করে হয়। বাবা সুমন কেমন আছো তুমি?
সুমনঃ আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন।
ইরিনার মাঃ আমি ভালো আছি।তোমার মা কোথায়।
সুমনঃ বাড়িতে গিয়েছে।খাবার আনতে।
ইরিনাঃ মা তুমি বসো আমি আসছি।
ইরিনা চলে গেলো।ইরিনার মা আমার সাথে কথা বলছে।তিনি আমাকে কয়েকটা প্রশ্ন করলেন।আমি উনার প্রশ্নে অবাক না হলেও ভয়ে ছিলাম,মনে মনে ভাবছিলাম যদি অপমান করে।ইরিনার আর আমার বন্ধুত্বটা যদি ভেঙে যায়।আমি কোনো কিছু গোপন না করে সঠিক উত্তর দিয়ে দিমাম।

চলবে,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here