বেস্টফ্রেন্ড_থেকে_স্বামী_স্ত্রী পর্বঃ ৩য়

0
1470

বেস্টফ্রেন্ড_থেকে_স্বামী_স্ত্রী
পর্বঃ ৩য়
লেখাঃ MD_Sumon_Kobir

তিনি সুমনকে কয়েকটা প্রশ্ন করলেন। সুমন কোনো কিছু গোপন না করে সঠিক উত্তর দিয়ে দিলো।

ইরিনার মাঃ আচ্ছা তোমার মা কি করে?
সুমনঃ আমার মা এক ধ্বনির বাড়ি রান্নার কাজ করে।
ইরিনার মাঃ হুম তোমার বাবা কি করেন?
সুমনঃ আমার বাবা নেই।আমি যখন অনেক ছোট তখন আমার বাবা মারা যায়।
ইরিনার মাঃ ও তাহলে তোমার লেখাপড়ার খরচ কে চালায়।
সুমনঃ আমি অবসর সময়ে একটা মুদিদোকানে কাজ করি তাতে যা দেই তাই দিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি।
ইরিনার মাঃ তোমাকে দেখেই বোঝা যায় তুমি খুব পরিশ্রমী।একদিন তুমি আমাদের বাড়িতে এসো কেমন।

ইরিনার মা যখন প্রশ্ন করছিলেন তখন সুমনের খুব ভয় হচ্ছিল।ও ভেবেছিল ইরিনার মা হয়তো সুমনকে অপমান করবে।এখানেই সুমন-ইরিনার বন্ধুত্ব ভেঙে যাবে।কিন্তু এমন কিছুই হলো না।বরং তিনি সুমনের প্রশংসা করলেন।এরই মাঝে ইরিনা এসে বলে,,,,,,,,,,,
ইরিনাঃ হ্যা কাল বাড়ি ফেরার পথে আমাদের বাড়িতে নিয়ে যাবো
ইরিনার মাঃ ঠিক আছে।সুমন তোমার মা আসলে আমার সালাম দিও।আমি এখন চলে যাবো।বাড়িতে কিছু কাজ আছে।
সুমনঃ দোয়া করবেন।
ইরিনার মাঃ আচ্ছা আমি তাহলে আসি।
ইরিনাঃ মা,,,
ইরিনার মাঃ হ্যা বল,,
ইরিনাঃ কিছু টাকা দিবেন।কিছু ঔষধ কিনতে হবে।
ইরিনার মাঃ হ্যা আমি তো ভুলেই গেছি তোমার আব্বু কিছু টাকা দিয়েছে।এই নাও।
ইরিনাঃ ধন্যবাদ মা আপনাকে এবং আব্বুকে।
ইরিনার মাঃ আমি আসি তাহলে।
ইরিনার মা চলে গেলো।

এদিকে সুমন স্কুলে যাচ্ছে না দেখে স্কুলের সব স্যার ম্যাডামরা চলে এসেছে সুমন কে দেখতে।
প্রধান শিক্ষক ইরিনাকে দেখে বলেন,,,,,,
প্রধান শিক্ষকঃ ইরিনা তুমি এখানে কি করছো।
ইরিনাঃ আসসালামু আলাইকুম। স্যার। স্যার আমি সুমনকে দেখাশোনা করি।
স্যারঃ তুমি কেন সুমনের মা কোথায়।
ইরিনাঃ স্যার আন্টি একটু বাড়িতে গেছে।ঐ তো চলে এসেছে।
স্যারঃ আসসালামু আলাইকুম।
সুমনের মাঃ ওয়ালাইকুমুসসালাম।কেমন আছেন স্যার।
স্যারঃ ভালো সুমনের কি অবস্থা এখন।
সুমনের মাঃ জ্বি ভালো।আসেন আপনারা। সুমনের মা স্যারদের সাথে নিয়ে সুমনের কাছে গেলো।স্যার সুমনকে দেখে বুকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিয়েছে। সুমন স্যারকে বলছে,,,,,,,,
সুমনঃ স্যার আপনি কাদছেন কেন। আমি তো এখন সুস্থ হয়ে গেছি।
স্যারঃ তুই কি জানিস না তোকে না দেখলে পুরো স্কুলটা আধার মনে হয়।
সুমনঃ জানি স্যার। আপনার জন্যই তো আমি আজ এই পর্যন্ত আসতে পেরেছি।কিন্তু কি করবো বলেন আল্লাহ তো আমাকে সামান্য একটা পরিক্ষা নিয়েছে মাত্র।
স্যারঃ এতো বড় দুর্ঘটনাকে তুই সামান্য বলছিস।
সুমনঃ আলহামদুলিল্লাহ আমি আল্লাহর রহমতে এখন বেচে আছি।তিনি চাইলে আমার জন্য রাস্তায় মালাকুল মাউতকে পাঠাতে পারতেন।কিন্তু তিনি আমাকে মৃত্যু হতে রক্ষা করেছেন।এখন বলেন এটা কি সামান্য নয়।

স্যার সুমনের কথা শুনে কেদে দিয়েছেন আর বলেন,,,,,
স্যারঃ হ্যা তুই ঠিকি বলেছিস।মৃত্যু কখন কার চলে আসে বলা যায় না।আমি আজ থেকে প্রতিজ্ঞা করছি। আমি আর কখনো নামাজ কাজা করবো না। আর স্কুলে নামাজ বাধ্যতামূলক করে দেবো।
সুমনঃ স্যার আমার খুব ইচ্ছা হচ্ছে আপনাকে সালাম করতে।আর আপনার বুকে মাথা রাখতে।
স্যারঃ হ্যা নিশ্চয় করবে।আর আমার বুকটা তো তোর জন্যই।

সুমন বেড থেকে নেমে স্যারকে সালাম করলো।স্যার সুমনকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাদছে।বাকি স্যার ম্যাডামদের চোখেও অশ্রু জমছে।স্যার সুমনকে বুক থেকে উঠিয়ে বলেন,,,,,
স্যারঃ এখন বল কবে থেকে স্কুলে যাবি।

সুমন যেই কিছু বলতে যাবে তখনি ইরিনা বলে,,,
ইরিনাঃ স্যার সুমন শনিবার থেকে স্কুলে যাবে।
স্যারঃ আর তুমি কবে যাবে।

ইরিনাঃ আমরা দুজন একসাথেই যাবো।
স্যারঃ একসাথে কেন।তুমিও কি অসুস্থ।
ইরিনাঃ জ্বি স্যার! আমার জান যদি বুকে না থাকে তাহলে তো আমিও অসুস্থ।
স্যারঃ জান মানে?
সুমনের মাঃ স্যার সুমন ইরিনার আত্তার সাথে মিশে আছে।সুমন কে ছাড়া ইরিনা আর কিছুই বোঝে না।ইরিনাই তো আজ এই কয় দিন সুমনের পাশে থেকেছে।ইরিনা যদি না থাকতো তাহলে সুমনের কি হতো আল্লাহ ভালো জানেন।
স্যারঃ ধন্য তুমি ইরিনা। সুমনের মতো বন্ধু পেয়েছো।সুমনের মতো মানুষ লাখে একটা হয়।
ইরিনাঃ ধন্যবাদ স্যার।দোয়া করবেন সারাজীবন যেন এমনই ভাবে মিলেমিশে থাকতে পারি।
স্যারঃ দোয়া রইল তোমাদের দুজনের জন্য।এই নেন আপা।সাধ্য মতো কিছু সাহায্য করলাম।

সুমনের মা টাকা গুলো হাতে নিলেন।
স্যারঃ আমরা আসি তাহলে।
সুমনঃ আসসালামু আলাইকুম স্যার।আমাদের বাড়িতে আসবেন স্যার।
স্যারঃ হ্যা আসবো।
স্যারেরা সবাই চলে গেছে।

এদিকে দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়ে গেছে।ইরিনা সুমনের সাথে খুনশুটি কারছে।তখনি ইরিনার বাবা এসে বলেন,,,,,,,
ইরিনার বাবাঃ বাহ কি মিল দুজনের। তা দুপুরে খাওয়া দাওয়া হয়েছে।
ইরিনাঃ জ্বি আব্বু হোটেল থেকে খাবার এনেছিলাম।
ইরিনার বাবাঃ কেন বাড়ি থেকে তোমার মা খাবার আনে নি।
ইরিনাঃ হ্যা এনেছিল।আমি ফিরিয়ে দিয়েছি।
ইরিনার বাবাঃ কেন ফিরিয়ে দিয়েছো।
ইরিনাঃ সুমনের তো গরুর গোসত খাওয়া নিষেধ।
ইরিনার বাবাঃ গরুর গোসত নিষেধ কেন?
ইরিনাঃ আব্বু সুমনের আধিক কোলেস্টেরল জাতিয় খাবার খাওয়ানো নিষেধ।
ইরিনার বাবাঃ বুজলাম। তা সুমন তুমি এখন কেমন আছো বাবা।
সুমনঃ জ্বি আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন।
ইরিনার বাবাঃ হ্যা আমি ভালো আছি।তোমার মা কোথায়।
সুমনঃ ঔষধ আনতে গেছে।ঐ তো চলে এসেছে।মা এই দেখো কে এসেছে।
সুমনের মাঃ কে এসেছে।

তখনি ইরিবার বাবা পেছন ফেরে।তারপর যা ঘটে তাতে সুমন আর মীম অবাক হয়ে যায়।
ইরিনার বাবা দৌড়ে গিয়ে সুমনের মায়ের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে। সুমন আর ইরিনা অপলোক দৃষ্টিতে দেখতে থাকে।

সুমনের মাঃ আসাদ তুমি?
ইরিনার বাবাঃ হ্যা ভাবি আমি।আপনি কেমন আছেন ভাবি।কোথায় ছিলেন এতো দিন। আমি কত খুজেছি আপনাদের। কিন্তু কোথাও পায় নি।আমি আল্লাহর কাছে প্রতিদিন দোয়া করতাম আপনাকে যেন শেষ জীবনে হলেও একবার দেখতে পাই।
সুমনের মাঃ তোমার ভাইয়ের মৃত্যুর পর একদিন এতিম সুমনকে নিয়ে তোমার কাছে গিয়েছিলাম।কিন্তু তোমাদেরকে সেদিন পাই নি।যাদের পেয়েছিলাম তারা ছিল তোমার ভাইয়ের খুনি।
ইরিনার বাবাঃ হ্যা আমাদের কে আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল। তারপর থেকে প্রতিদিন আপনাদের খুজে ফিরি।আল্লাহ আমার ফরিয়াদ শুনেছেন।
সুমনের মাঃ হ্যা আল্লাহ আমার দোয়াও কবুল করেছেন।
ইরিনাঃ আব্বু সুমন কি আমার বড় চাচ্চুর ছেলে।
ইরিনার বাবাঃ হ্যা মা সুমন তোমার বড় চাচ্চুর ছেলে।তোমার বড় ভাই।
সুমনঃ আম্মু আমি তো আপনাদের কথা কিছুই বুঝতে পারছি না।
সুমনের মাঃ ইরিনার বাবা তোর ছোট চাচা।যাকে তুই ছোট বাবা বলে ডাকতিস।
সুমনঃ কি বলছেন এসব।ইরিনার আব্বু আমার ছোট বাবা।

এবার সুমন যা করে তাতে সুমনের মা,ইরিনা,ইরিনার বাবা সবাই অবাকের চরম শীর্ষে উঠে যায়।তারা কেউই ভাবতে পারেনি এমন কিছু ঘটবে।

To be continue,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here