মন পাজড়ে শুধু তুমি আছো?,সূচনা_পর্ব
লেখিকা_মাইসারাহ_আরোহি?
“তোমার মতো থার্ডক্লাস মেয়েকে আমি নিজের স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারবো না।তাই আমার ওপর কখনো নিজের কর্তৃত্ব ফলাতে আসবে না।”
–বাসর ঘরে দাঁড়িয়ে সদ্য বিয়ে করা বউকে কথাগুলো বললো অর্থ।অর্থের কথা শোনার পর তার বউয়ের তেমন কোনো হেলদোল নেই, কেননা এমনটা হওয়ারই ছিলো।সে অর্থের পুরো কথাটা শুনে মৃদু হেসে বললো,
— “সে আপনি মানবেন কি না মানবেন সেটা আপনার ব্যাপার।কিন্তু আমাদের তো বিয়ে হয়েছে এবং বিয়ে একটা পবিত্র জিনিস।এটাকে তো অস্বীকার করা যায় না।”
— “যায় না মানে আলবাত যায়।আমি তো এই বিয়েটাকেই মানি না।আমাকে জোর করা হয়েছে।নাহলে কি আর তোমার মতো মেয়েকে বিয়ে করি।” (অর্থ)
অর্থের এই একটা কথা যেনো মুহুর্তেই ওর স্ত্রীর রূপকে বদলে দিলো। এতক্ষণ শান্তভাবে কথা বললেও এবার সে একটু রেগেই বললো,
— “আমিও না আপনার মতো ছেলেকে বিয়ে করতাম না। এতক্ষণ ভালো কথা বলে আপনাকে পরীক্ষা করে দেখলাম।না আপনি মোটেও ভালো মানুষ নন।আর আমাকে আপনি কোন সাহসে থার্ড ক্লাস বলছেন? আপনি নিজে একটা থার্ড ক্লাস। নেহাতই পরিবারের চাপে বিয়েটা করেছি নাহলে কি আর আপনাকে বিয়ে করি?আমি তো আপনার মুখ দেখেই বুঝে গেছিলাম এমনটাই হবে।তবে ভাবি নি যে আপনি এতোটা থার্ডক্লাস!”
— “কিহ তুমি আমাকে থার্ড ক্লাস বলছো? তোমার এতো বড়ো সাহস? তোমার কোনো আইডিয়া আছে আমার সম্বন্ধে?” (অর্থ)
— “অবশ্যই আছে।আপনি মিস্টার সারহান ইন্তেহাব অর্থ।পেশায় একজন ফুটবলার এবং জাতীয় দলের অধিনায়ক।ফুটবলটা বেশ ভালোই খেলেন কিন্তু ব্যবহার আচরণের দিক থেকে আপনি একেবারেই সভ্য নন।”
— “তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি।যেখানে সবাই কি না আমায় দেখে ভয় পায় সেখানে তুমি আমাকে থার্ডক্লাস,অসভ্য এসব বলে যাচ্ছো!!আনবিলিভেবল।” (অর্থ)
— “তো বলবো না তো কি করবো? আপনি আমায় থার্ডক্লাস বলবেন আর আমি চুপ করে শুনবো সেটা তো হতে পারে না।আর আমিও আপনাকে যেচে বিয়ে করি নি যে আপনার সব কথা শুনতে হবে।তাই আমায় অপমান করলে তার জবাবটাও পাবেন।”
মেয়েটার কথা শুনে অর্থের ভীষণ রাগ হচ্ছে, কিন্তু ও নিরুপায় এখন তো কিছু করারও নেই।অর্থ কিছু সময় নীরব থাকলো।তারপর হঠাৎ করে বললো,
— “এই মেয়ে শোনো।”
— “স্যরি কাওকে ডাকছেন বুঝি?”
— “হুম তোমাকেই ডাকছি।” (অর্থ)
— “কিন্তু আমার নাম তো এই মেয়ে নয়।আমার সুন্দর একটা নাম আছে।পারলে সেই নামটা ধরেই ডাকবেন।”
— “তা তোমার নাম কি?” (অর্থ)
— “জ্বি আমার নাম আয়ানা।” (আয়ানা)
— “আচ্ছা আয়ানা দেখো তুমিও তোমার বাবা-মার চাপে বিয়েটা করেছো এবং আমিও তাই আমি কি বলতে চাইছি সেটা তুমি বুঝতে পারছো।আসলে আমার পক্ষে এটা এক্সেপ্ট করা সম্ভব নয়।” (অর্থ)
— “কিন্তু মিস্টার অর্থ আপনাকে তো সারাদেশ এক নামে চেনে আর আপনার এই বিয়ের খবর তো মিডিয়া, সংবাদপত্র সবকিছুতে ছড়িয়ে গেছে।তাহলে আপনি যদি আমার সাথে কোনো সম্পর্ক না রাখেন তাহলে পাবলিক তো আপনার সম্বন্ধে খারাপ ভাববে।” (আয়ানা)
— “সে যা ভাবার ভাবুক কিন্তু আমি এটা মানতে পারবো না।আমার গার্লফ্রেন্ড আছে, সেখানে তোমাকে আমার মনে জায়গা দিয়ে স্ত্রী হিসেবে মানতে পারবো না।” (অর্থ)
অর্থের কথা শুনে আয়ানা ফিক করে হেসে দিলো।অর্থ ওর হাসির মানে না বুঝে জিজ্ঞেস করলো,
— “এভাবে পাগলের মতো হাসছো কেনো? মাথায় কি সমস্যা আছে নাকি সবগুলো তার ছেড়া?”
— “উহু কোনো সমস্যা নেই সব কারেক্ট আছে।আমি তো আপনার অবস্থা দেখে হাসছি।আচ্ছা আপনাকে অধিনায়ক কে বানাইছে হুম? আপনি তো এখনই এতো ভয় পাচ্ছেন তাহলে দলের কঠিন অবস্থায় কি যে করেন আল্লাহ-ই ভালো জানে।যাই হোক আপনি এসব নিয়ে ভাববেন না,আমারও এসবের প্রতি ইন্টারেস্ট নেই। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন আমি আপনার কাছে স্ত্রীর অধিকার চাইবো না।” (আয়ানা)
— “তার মানে তোমারও কি কেউ আছে নাকি? আই মিন ভালোবাসার মানুষ?” (অর্থ)
— “সে আপনাকে না জানলেও চলবে। আচ্ছা অনেক রাত হয়েছে সারাদিন খুব পরিশ্রম করেছি বড্ড ক্লান্ত আমি।এখন ঘুমাবো কিছু বলার থাকলে কালকে বলবেন।” (আয়ানা)
অর্থ আর কিছু বললো না,আয়ানা নিজের লাগেজ থেকে নরমাল একটা ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হওয়ার জন্য।
আয়ানা ফ্রেশ হতে হতে আমি পরিচয়টা ভালোভাবে ক্লিয়ার করে দিই,
এতটুকু পড়ে বুঝতে পেরেছেন যে আমাদের গল্পের নায়িকা আয়ানা এবং গল্পের নায়ক অর্থ। “আয়ানা আহমেদ” বাবা-মায়ের একমাত্র মিষ্টি মেয়ে।আয়ানা অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী।আর “সারহান ইন্তেহাব অর্থ” বাবা-মায়ের দুইমাত্র সন্তান,মানে অর্থের একটি বড় বোন রয়েছে যার নাম অর্থি।অর্থ পেশায় একজন ফুটবলার,দেশের সবাই ওকে এক নামে চেনে।আসলে অর্থ বাবা-মায়ের চাপে পড়ে আয়ানাকে বিয়ে করেছে।আয়ানাও ঠিক তাই।দুজনের কারোরই বিয়েতে মত ছিলো না শুধু মাত্র বাবা-মার কথা চিন্তা করে তারা বিয়েতে রাজি হয়েছিলো।আর তার পরের ঘটনা তো সকলে জানেন-ই এবং বাকি পরিচয় গুলো গল্প পড়তে পড়তে জানতে পারবেন।
আয়ানা ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে দেখে অর্থ বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।ও রেগে অর্থের কানের কাছে গিয়ে জোরে একটা চিৎকার দিলো।ভয় পেয়ে অর্থ তাড়াতাড়ি লাফিয়ে উঠলো।
— “এই কি সমস্যা তোমার? এভাবে কানের কাছে এসে চিৎকার করছো কেনো?” (অর্থ)
— “তো চিৎকার করবো না, আপনি কেনো বিছানায় শুয়েছেন?” (আয়ানা)
— “বিছানায় শুয়েছেন মানে? আমার রুম আমার বিছানা, আমি শোবো না তো কে শোবে?” (অর্থ)
— “হাহা এবার আপনি পুরাই পাগল হয়ে গেছেন।আরে বাবাহ আমিও তো এ ঘরে থাকবো নাকি? তা আপনি যদি বিছানায় ঘুমান তাহলে আমি কোথায় ঘুমাবো?” (আয়ানা)
— “সেটা আমি কি করে জানবো?তবে একটা উপায় আছে সেটা হচ্ছে তুমি ফ্লোরে শুয়ে পড়ো।” (অর্থ)
— “আমি কেনো ফ্লোরে শোবো? দরকার পরলে আপনি শোবেন আমি পারবো না।” (আয়ানা)
— “আমি পারবো না,আমি কখনো ফ্লোরে ঘুমাই নি।” (অর্থ)
— “তাহলে আর কি!আমিও বিছানায় শুয়ে পড়লাম আপনার ঘুমাতে হলে ঘুমান নাহলে বসে থাকেন।” (আয়ানা)
কথাটা বলেই আয়ানা বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো।এই মেয়েটার কোনোকিছুই অর্থের ভালো লাগছে না, ভীষণ রাগ হচ্ছে। অর্থ অনেক ভেবে চিন্তে একটা বুদ্ধি বের করে বললো,
— “দেখো এভাবে হয় না।আমার কাছে একটা আইডিয়া আছে।”
— “কি আইডিয়া?” (আয়ানা)
— “আইডিয়াটা হচ্ছে একদিন তুমি খাটে ঘুমাবে আর একদিন আমি।এভাবে পালাবদল করে চলবে,কি ঠিক আছে?” (অর্থ)
— “আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু আজকে আপনি ফ্লোরে শোবেন।এই যে বালিশ আর এই যে বেডশিট।নাও গুড নাইট।” (আয়ানা)
আয়ানা অর্থের দিকে বালিশ আর বেডশিটটা ছুঁড়ে দিয়ে শুয়ে পড়লো।অর্থও মেঝেতে বিছানা করে শুয়ে পড়লো।
!!
ভোর ৫টা বেজে ৩ মিনিট কারো জোরে জোরে লাফানোর আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় অর্থের।ধীরে ধীরে পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায় সে। কিন্তু চোখ মেলে যা দেখলো সেটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না অর্থ।
চলবে