মন পাজড়ে শুধু তুমি আছো?,পর্ব_৩,৪

0
1454

মন পাজড়ে শুধু তুমি আছো?,পর্ব_৩,৪
লেখিকা_মাইসারাহ_আরোহি?
পর্ব_৩

অল্প সময়ের মধ্যেই আয়ানাদের বাসা থেকে সবাই এবং কিছু আমন্ত্রিত অতিথিরা চলে আসেন।অর্থি এসে আয়ানাকে নিচে নিয়ে যায়‌।নিজের পরিবারের সবাইকে দেখতে পেয়ে আয়ানা খুব খুশি।আয়ানাদের বাসার সবাই উনাদের জামাই মানে অর্থের খোঁজ করছে।কিন্তু অর্থ এখনো বাসায় না আসায় অর্থের বাবা ভীষণ চিন্তিত!
— “অর্থি এদিকে শোন তো।” (অর্থের বাবা)
— “হ্যাঁ বাবা বলো।” (অর্থি)
— “বলছি অর্থকে একটা কল কর।ওকে বারবার করে বলেছিলাম তাড়াতাড়ি আসতে। এদিকে সবাই চলে এসেছে।বেয়াই মশাই তো বারবার ওর খোঁজ করছে।তুই একটু ওকে ফোন করে দেখ ও কোথায়।” (অর্থের বাবা)
— “বাবা আমি ভাইকে ফোন করেছিলাম কিন্তু ওর ফোন সুইচড অফ।আমিও বুঝতে পারছি না ভাই কি করবে।” (অর্থি)
— “আচ্ছা তুই যা আমি দেখছি কি হয়।” (অর্থের বাবা)
— “আচ্ছা ঠিক আছে।” (অর্থি)

সবাই যখন অর্থের আসার প্রতিক্ষায় গেটের দিকে তীর্থের কাকের মতো চেয়ে আছে তখন অর্থ কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে দু হাত ট্রাউজারের পকেটে ঢুকিয়ে হুইস্টলিং করতে করতে বাসায় প্রবেশ করলো।সবাইকে এমনভাবে তাকাতে দেখে অর্থের মনে হচ্ছে সে যেনো কোনো বড় অপরাধ করে ফেলেছে,আর আয়ানা এমনভাবে তাকিয়েছে যে মনে হচ্ছে ও অর্থকে কাঁচা গিলে খাবে।সবার এমন মুখভঙ্গি দেখে অর্থ ভ্রুযুগল সামান্য উঁচু করে বললো,
— “হোয়াট হ্যাপেন্ড?সবাই এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? কি হয়েছে?”
— “কিছু হয় নি তুই তাড়াতাড়ি ঘরে যা। বিছানার উপর তোর ড্রেস দেয়া আছে ফ্রেশ হয়ে সেগুলো পরে দ্রুত রেডি হয়ে আয়।” (অর্থের বাবা)
— “কিন্তু…” (অর্থ)
— “কোনো কিন্তু নয় যা বললাম কর।” (অর্থের বাবা)
অর্থ আর কথা না বাড়িয়ে হেলে দুলে ঘরে চলে গেলো।অর্থকে ফিরতে দেখে আয়ানা স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো।

কিছুক্ষণ পর অর্থ রেডি হয়ে নিচে নামলো।আয়ানার শাড়ির রং আর অর্থের শেরোয়ানির রং এক। দুটোই মেরুন রঙের।অর্থের বাবা ম্যাচিং করেই পোশাক দুটো কিনেছেন।মেরুন রঙে অর্থকে মন্দ লাগছে না,বরং বেশি‌ই সুদর্শন লাগছে।ফর্সা শরীরে রঙটা ফুটে উঠেছে।অর্থ নিচে নেমে মাঝখানে এসে দাঁড়ালো,আয়ানা ওর চাচাতো বোনের সাথে কথা বলছিলো।ওর বোন অর্থকে দেখে আয়ানাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে অর্থের দিকে ইশারা করলো।আয়ানাও তাকালো। কিছুক্ষণের জন্য আয়ানা একদম নীরব হয়ে গেলো,ও গভীর মনোযোগ দিয়ে অর্থের পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করছে। “৫ ফুট ৮ ইঞ্চির উপরে হাইট, ধবধবে ফর্সা সুঠাম দেহ,মাথা ভর্তি ঘন কালো চুল,কালো ভ্রু যুগল,ঘন পাপড়িযুক্ত আয়তকৃষ্ণ নয়ন,গোলাপি সরু ঠোঁট আর মুখমন্ডল ভর্তি ঘন কালো চাপ দাঁড়ি।ব্যাস এসব কিছু একটা মেয়েকে আকৃষ্ট করতে যথেষ্ট।অবশ্য অর্থের এই লুক,স্টাইল,খেলার ধরণ এবং ওর স্মাইল এগুলো দেখে ওর অনেক মেয়ে ফ্যান ওর জন্য ফিদা। কতশত মেয়ে যে ওকে প্রপোজ করেছে তা অর্থের নিজের‌ও অজানা।
— “আরেহ আর কতোক্ষণ এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকবি?মুখে মাছি ঢুকে যাবে তো।” (রিয়া,আয়ানার চাচাতো বোন)

রিয়ার কথায় আয়ানা নিজের মধ্যে ফিরে এলো, এতক্ষণ তো স্বপ্নের রাজ্যে হারিয়ে গিয়েছিল।আয়ানা রিয়াকে মুখ ভেংচি দিয়ে বললো,
— “আমার বয়েই গেছে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে।আমি ওসব যার তার দিকে তাকাই না।আমার ঠিক পোষায় না।দেখতে তো সেই সাদা বকের মতো আর আমি নাকি ওর দিকে তাকিয়েছি।তুইও আপু কি সব বলিস‌।”

আয়ানার কথা শুনে রিয়া হাসলো। অর্থ ওর কথাগুলো শুনতে পেয়েছে এবং এটাও বুঝতে পেরেছে আয়ানা ওর সম্বন্ধেই এসব বলছিলো। অর্থ রেগে তেড়ে গিয়ে বললো,
— “কি বললে তুমি আমাকে,আমি সাদা বক?”
— “হুম কোনো সন্দেহ আছে নাকি।” (পাত্তা না দিয়ে আয়ানা)
— “হাউ ডেয়ার ইউ? তুমি জানো আমার পেছনে কতশত মেয়ে লাইন লাগিয়ে রয়েছে। একবার শুধু মিট করার পার্মিশন দিলে পুরো এলাকা ভরে যাবে।” (অর্থ)
— “চিড়িয়াখানার প্রাণীকে সবাই দেখতে আসে।” (আয়ানা)
— “হোয়াট তুমি আমাকে অ্যানিম্যালস্ এর সাথে তুলনা করছো?” (চোখ বড় বড় করে অর্থ)
— “জ্বি করছি।আপনি আসলে যেটা আমি তো আপনাকে সেটাই বলবো তাই না।” (আয়ানা)
— “আমি যদি অ্যানিম্যাল হ‌ই তাহলে তুমি একটা পেত্নী।একেবারে দাঁত বড়বড় চোখমুখ বিশ্রী দেখতে একটা পেত্নী।” (অর্থ)
আয়ানা কিছু একটা বলতে যাবে কিন্তু রিয়া ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
— “আরেহ আরেহ চুপ কর তোরা এভাবে ঝগড়া করিস না।চাচ্চু আর চাচিমা তোদের ডাকছে।যা দুজনে গিয়ে শুনে আয় কি বলে।”
— “আমি এই পেত্নীটার সাথে যেতে পারবো না।” (অর্থ)
— “যাবেন না মানে আপনার ঘাড় যাবে।নাহলে কিন্তু আমি আপনার ঘাড় মটকাবো।” (আয়ানা)
— “অ্যা??” (ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে অর্থ)
— “অ্যা নয় হ্যাঁ,এখন চলুন তো।” (আয়ানা)
কথাটা বলেই আয়ানা অর্থের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলো।

মেয়ে-জামাইকে একসাথে দেখে আয়ানার আব্বু-আম্মু দুজনেই খুশি হলেন‌।আয়ানার আব্বু অর্থকে বললেন,
— “আমি জানি বাবা আমার মেয়েটা খুব‌ই চঞ্চল।কিন্তু ওর মনটা খুব ভালো।ও সবসময় সকলকে আগলে রাখতে চায়‌‌।”
— “হ্যাঁ আর আমার মেয়েটা একটু চাপা স্বভাবের।কোনো সমস্যা হলে কাউকে জানাতেই চায় না।তুমি একটু ওর সুবিধা অসুবিধাগুলো দেখো।জানি তুমিও সারাদিন ব্যস্ত থাকো। তবুও তোমরা স্বামী-স্ত্রী তোমাদেরকে তো একে অপরের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।তাই নিজেরা সবসময় মিলেমিশে থেকো।” (আয়ানার আম্মু)

অর্থ উনাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে মুচকি হেসে বললো,
— “জ্বি আন্টি,জ্বি আংকেল।আপনারা কোনো চিন্তা করবেন না,আমাদের বাসায় আপনাদের মেয়ের কোনো অসুবিধা হবে না।আর তাছাড়া আমি তো আছি‌ই আপনারা অতো ভাববেন না।আপনারা বরং নিজেদের যত্ন নেবেন।আমাদের নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।আমরা ভালো থাকবো।”
অর্থের কথা শুনে আয়ানা স্তম্ভিত।ও শরীরের মধ্যে কেমন যেনো করছে,মনে হয় এই বুঝি মাথা ঘুরে পড়ে যাবে।আয়ানা নিজেকে কোনোমতে ঠিক রেখে মনে মনে বললো,
— “আমি কি মঙ্গল গ্রহে আছি নাকি? না মানে মিস্টার অর্থ আমার আব্বু আম্মুর সাথে এতো সুন্দর করে কথা বলছে। একেবারে আদর্শ জামাই।আমি তো ভেবেছিলাম লোকটা ইনোসেন্ট বাচ্চা টাইপ কিন্তু না ইনি তো বড়ো খেলোয়াড়।এখন দেখছি ফুটবলের পাশাপাশি এসব বিষয়‌ও ভালোই সামাল দিতে পারে।”

অর্থের কাছে আশানুরূপ উত্তর পেয়ে আয়ানার আব্বু আম্মু খুশি হলেন।আয়ানার আম্মু আয়ানার দিকে তাকিয়ে বললেন,
— “আর আয়ানা তুই‌ও জামাইয়ের খেয়াল রাখবি। কোনোরকম ঝামেলা করবি না।জামাই সারাদিন বাইরে থাকে,রৌদ্রে খেলাধুলা করে তাই বাসায় আসার পর একদম বিরক্ত করবি না।”
— “তোমার মেয়ে ছোট নেই আম্মু যে যাকে তাকে বিরক্ত করবে।আমার অতো শখ নেই উনাকে বিরক্ত করার।আমি নিজের মতোই থাকবো।” (আয়ানা)
— “দেখেছেন আন্টি আপনার মেয়ে কিভাবে আমায় কথা শোনাচ্ছে।কালকে রাত থেকে আমায় জ্বালিয়ে মারছে।কালকে তো সারারাত কান্না করেছে আপনাদের জন্য।” (ইনোসেন্ট হ‌ওয়ার অভিনয় করে অর্থ)

এই কথাটা শুনে আয়ানার চোখ দুটো আপনাআপনি রসগোল্লার মতো বড় আকার ধারণ করলো।
— “ওহ আচ্ছা পেটে পেটে এতো! এই ছেলেটা এতো মিথ্যে কথা বলে। দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা।” (মনে মনে আয়ানা)

অর্থের মিথ্যেটা বলার কারণ হচ্ছে যাতে আয়ানার আব্বু আম্মু আয়ানাকে আজ সঙ্গে করে নিয়ে যায়।কারণ অর্থের কাল একটা ম্যাচ আছে তাই ও আয়ানাদের বাসায় যাবে না। সেজন্য অর্থের বাবা বলেছে আয়ানার‌ও যাওয়ার প্রয়োজন নেই,বরং অর্থ যখন ফ্রি থাকবে তখন দুজনে গিয়ে ঘুরে আসবে।আর ঠিক এই কারণেই অর্থ কথাগুলো বললো যাতে আয়ানার আব্বু আম্মু ভাবে উনাদের মেয়েটা খুব কষ্ট পাচ্ছে আর তাই উনারা ওকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবে।কিন্তু অর্থের প্ল্যান সফল হলো না,উল্টো ভেস্তে গেলো।আয়ানার আব্বু বললেন,
— “জানি ও কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু কিছু তো করার নেই ওকে এখন‌ থেকে এখানেই থাকতে হবে।আমার বিশ্বাস আমার মেয়ে মানিয়ে নিতে পারবে।”
— “হুম আব্বু তুমি ঠিক বলেছো।আমি সব মানিয়ে নেবো।” (শয়তানি হাসি দিয়ে আয়ানা)
মেয়ের এমন কথায় আয়ানার আব্বু আম্মুও মুচকি হাসলেন।

!!
ভোরের আলো ফুটে নতুন দিনের সূচনা হলো। সকালের প্রকৃতিটা অন্যরকম।জনকোলাহলপূর্ণ এই শহর ভোরবেলা একদম নিশ্চুপ থাকে।আর সকালের প্রকৃতির সবচেয়ে সুন্দরতম দৃশ্য হচ্ছে পাখিদের আনাগোনা আর কিচিরমিচির শব্দ।পাখিদের কিচিরমিচির আওয়াজ আর এক চিলতে রোদ্দুরের ছোঁয়ায় ঘুম ভেঙে যায় আয়ানার। কাঁচের জানালা ভেদ করে রোদ্দুর সোজা ফ্লোরে এসে আয়ানার মুখের উপর পড়ছে।আয়ানা নিজেকে শুভ সকাল জানিয়ে আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে দাঁড়ায়।তারপর ফ্লোরের বিছানা গুছিয়ে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসে। এদিকে বিছানায় শুয়ে আরামে ঘুমুচ্ছে অর্থ।যাকে বলে কুম্ভকর্ণের ঘুম,দেখে মনে হয়না যে দু একবার ডাকলে ঘুম ভাঙবে।তবুও আয়ানা বিছানার কাছে গিয়ে বললো,
— “অর্থ,এই অর্থ শুনতে পাচ্ছেন আমার কথা।কি হলো শুনতে পাচ্ছেন?…..উহু এই ছেলের ঘুম এতো সহজে ভাঙবে বলে মনে হয় না।আমাকে কিছু একটা করতে হবে।”

বিছানার পাশেই পানি দিয়ে পরিপূর্ণ একটা কাঁচের গ্লাস ঢাকা ছিলো।আয়ানা গ্লাসটা নিয়ে এসে পানিটুকু অর্থের গায়ে ঢেলে দিলো।সঙ্গে সঙ্গে অর্থ ঘুম ছেড়ে লাফিয়ে উঠলো।
— “হোয়াট দ্যা হেক!আমার গায়ে এভাবে পানি দিয়েছো কেনো?” (পানি মুছতে মুছতে অর্থ)
— “আপনার ঘুম ভাঙানোর জন্য।যে হারে কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমুচ্ছিলেন আজকে আর উঠতেন না তাই বাধ্য হয়ে পানি ঢেলে দিয়েছি।” (আয়ানা)
— “উহ তুমি কি আমায় শান্তি দেবে না। মাত্র দুদিন হয়েছে এসেছো এখন‌ই জীবনটা তেজপাতা বানিয়ে দিলে।নেক্সট ছয় মাস তোমায় কিভাবে টলারেট করবো?” (মাথায় হাত দিয়ে অর্থ)
— “তা তো জানি না।ওটা আপনি‌ই ভালো জানবেন।যাই হোক যান একটু চোখে মুখে পানি দিয়ে আসুন তারপর আমরা দুজনে জগিং করতে যাবো।” (আয়ানা)
— “কিহ জগিং?দেখো আমার ভালো লাগছে না। এমনিতেই সারাদিন দৌড়াতেই হবে বাসায় যতটুকু সময় আছি একটু রেস্ট নিতে দাও।” (অর্থ)
— “না তা বললে চলবে না।আপনি যেরকম অনিয়ম করছেন কিছুদিন পর দেখবেন আপনার ভুড়ি বেড়ে গেছে।তখন আপনি আনফিট হয়ে যাবেন।” (আয়ানা)
— “সেটা আমি বুঝবো।তোমাকে আমার বিষয়ে নাক গলাতে নিষেধ করেছি।” (অর্থ)
— “নাক যখন আছে তখন তো গলাবোই।দেখুন ভালোভাবে বলছি তৈরি হয়ে আসুন নাহলে কিন্তু আমি‌।” (আয়ানা)
— “নাহলে কি করবে তুমি?” (ভ্রু কুঁচকে অর্থ)

আয়ানা দুষ্টু হেসে বললো,
— “নাহলে আমি চিৎকার করে আমার শ্বশুড় বাবা আর শাশুড়ি মা কে ডাকবো আর বলবো তাদের ছেলে আমায় ভীষণ টর্চার করছে। অতঃপর তারা যা ভালো বুঝবেন আপনার সঙ্গে সেটাই হবে। আপনি কি চাইছেন আমি তাদের ডেকে এসব কথা বলি?”

চলবে

#মন_পাজড়ে_শুধু_তুমি_আছো?
#লেখিকা_মাইসারাহ_আরোহি?
#পর্ব_৪

আয়ানা দুষ্টু হেসে বললো,
— “নাহলে আমি চিৎকার করে আমার শ্বশুড় বাবা আর শাশুড়ি মা কে ডাকবো আর বলবো তাদের ছেলে আমায় ভীষণ টর্চার করছে। অতঃপর তারা যা ভালো বুঝবেন আপনার সঙ্গে সেটাই হবে। আপনি কি চাইছেন আমি তাদের ডেকে এসব কথা বলি?”

আয়ানার কথায় অর্থ খানিকটা ঘাবড়ে যায়।কারণ এই দুইদিনে অর্থ আয়ানাকে যতটুকু চিনেছে ওর পক্ষে এটা করাই সম্ভব।যদিও আয়ানা মিথ্যে বলে তবুও অর্থের বাবা-মা তাই বিশ্বাস করবে এবং ব্যাপারটা অনেকটাই খারাপ হবে।সেজন্য পরিস্থিতি যাতে ঠিকঠাক থাকে তাই অর্থ ভেবে-চিন্তে বললো,
— “পাঁচ মিনিট দেরি করো আমি চেঞ্জ করে আসছি।”
— “এই তো দ্যাটস লাইক ভদ্র ছেলে।যান চেঞ্জ করে আসুন।” (মুচকি হেসে আয়ানা)
অর্থ কাবার্ড থেকে একটা নেভি ব্লু কালার ট্রাউজার,হোয়াইট কালার টি শার্ট আর তার উপরে পরার জন্য নেভি ব্লু কালার জিপার জ্যাকেট বের করে ওয়াশরুমে গেলো।

পাঁচ মিনিট পর অর্থ জগিং ড্রেস পরে বের হয়। অর্থ বেরিয়ে দেখে আয়ানাও জগিংয়ের জন্য উপযুক্ত ড্রেস পরেছে আর তার সাথে মাথায় হেয়ার ব্যান্ড দিয়ে চুলগুলো উঁচু করে বেঁধেছে।অর্থ একবার ওর দিকে তাকিয়ে আবার অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো,
— “আমি রেডি চাইলে যেতে পারো।”
— “হ্যাঁ আমিও তৈরি চলুন যাই।” (আয়ানা)

দুজনে একসাথে জগিং করতে বের হলো।সকালে উত্তাপ কম সেজন্য জগিং করে আরাম আছে।আয়ানা অবিরাম ছুটে চলেছে বরং অর্থের এসবের সাথে সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও ওর দৌড়াতে অসুবিধা হচ্ছে।একটু দৌড়েই ও কিছুটা হাঁপিয়ে পড়ছে।
— “এই দাঁড়াও একটু আস্তে দৌড়াও,আমি পারছি না।” (কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে অর্থ)

আয়ানা বেশ দূরেই চলে গিয়েছিল অবশেষে অর্থের ডাকে আবার পিছনে ব্যাক করলো।
— “কি হয়েছে কি ডাকছেন কেনো? এটুকুতেই হাঁপিয়ে গেলেন।” (আয়ানা)
— “জানি না আজ এমন কেনো লাগছে।প্রতিদিন‌ই তো দৌড়াই।কিন্তু আজকে কেমন যেনো লাগছে।” (অর্থ)
— “লাগবেই তো!আপনি সেই আটটায় দৌড়ান তাও আবার মাঠে।এভাবে তো জগিং করেন না যার কারণে শরীরে জ্যাম ধরেছে।কাল থেকে রোজ আমার সাথে জগিং করবেন।ন‌ইলে কিছুদিন পর আর খেলতেও পারবেন না‌।” (আয়ানা)
— “হুম ঠিকই বলেছো।কিন্তু তুমি তো এমনি চিকন আর তোমার তো জগিং করার প্রয়োজন নেই তাহলে তুমি করছো কেন?” (অর্থ)
— “ওটা আমার পার্সোনাল বিষয় আপনাকে বলবো না। আচ্ছা চলেন আজকে বাসায় যাই।কালকে থেকে জোর কদমে লেগে পড়বো।” (আয়ানা)
— “হুম চলো।ওহ হ্যাঁ আজকে যেনো কালকের মতো পরোটা বানাবে না।আমি কিন্তু খাবো না।” (অর্থ)
— “জানি তো।ওইজন্য আজকে চিড়া আর দ‌ই খেয়ে যাবেন।আমি সব রেডি করে রেখেছি।” (আয়ানা)
— “হোয়াট?দ‌ইচিড়ে,মাথা খারাপ নাকি তোমার? ওসব আমি খাই না।” (অর্থ)
— “সবই তো খান না। আপনার জন্য কি আমি খাবার আবিষ্কার করবো? চুপচাপ বাসায় গিয়ে ভদ্র ছেলের মতো খেয়ে নিবেন নাহলে কিন্তু আমি এখানেই চিৎকার করবো।” (আয়ানা)
— “আচ্ছা ড্যাঞ্জারাস মেয়ের পাল্লায় পড়েছি,কথায় কথায় খালি ব্ল্যাকমেইল করে।ডিজগাস্টিং।” (অর্থ)
কথাগুলো বলে অর্থ গটগট করে আগে চলে গেলো।আয়ানা ওর অবস্থা দেখে মুচকি হেসে হাঁটতে শুরু করলো।

সাড়ে আটটার দিকে অর্থ ব্রেকফাস্ট করে রেডি হয়ে ব্যাকপ্যাক গুছিয়ে একাডেমীর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়।ও যাওয়ার পর আয়ানাও ব্রেকফাস্ট করে নেয়।তারপর ঘরে এসে লাগেজ থেকে কিছু জিনিস বের করে নিয়ে বিছানার উপর বসে।এরপর কাঁধে ঝোলানো একটা ব্যাগে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস রেখে ও একটা ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে চুল বেঁধে আয়ানা ঘর থেকে বের হয়।

আয়ানা নিচে নামতেই দেখে অর্থি, অর্থের বাবা আর আয়ানার আম্মু সোফায় বসে চায়ের কাপ হাতে গল্প করছে।আয়ানাকে দেখে অর্থের বাবা বললেন,
— “আয়ানা কোথাও যাবে নাকি?”
— “হ্যাঁ বাবা আমার একটা বান্ধবীর বাসায় যেতে হবে।ওর কিছু জিনিস আমার কাছে ছিলো। ওগুলো লাগবে ওর তাই দিতে যাচ্ছি।তারপর একটু কলেজে যাবো।আসতে আসতে দুপুর হয়ে যাবে।” (আয়ানা)
— “আচ্ছা আমি ড্রাইভারকে বলি,গাড়িটা নিয়ে যা।” (অর্থের বাবা)
— “না বাবা আমি এমনি চলে যেতে পারবো।গাড়ি লাগবে না।মা,অর্থি আপু আমি আসছি।” (আয়ানা)
— “ঠিক আছে সাবধানে যেও মা।” (অর্থের আম্মু)

আধা ঘন্টা পর আয়ানা একটা গ্রাউন্ডের সামনে এসে দাঁড়ায়।ওখানে গ্রাউন্ডে অনেক মেয়ে সারি ধরে দাঁড়িয়ে থেকে ওয়ার্মস আপ করছে।তাদের মধ্যে এশাও আছে। এশা আয়ানাকে দেখে ছুট্টে চলে এলো।
— “আনান‌ইয়া তুই এসেছিস?” (এশা)
— “হুম,স্যার কোথায়?” (আয়ানা)
— “স্যার সবাইকে ওয়ার্মস আপ করতে দিয়ে বাইরে গেলো। আচ্ছা তুই চল চেঞ্জ করবি তো।” (এশা)
— “হ্যাঁ চল।” (আয়ানা)
আয়ানা এশার সঙ্গে একটা রুমে গেলো। ওখানে সবার জন্য আলাদা আলাদা কেবিনেট আছে।আয়ানা ওর কেবিনেটের চাবি বের করে কেবিনেটটা খুলে ওর ভেতরে ব্যাগ আর প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র রাখলো।আর হাতে একটা ড্রেস নিয়ে চেঞ্জ করতে গেলো।

পাঁচ মিনিট পর আয়ানা চেঞ্জ করে বের হয়‌।ওকে দেখে এশা বলে,
— “উফ আনান‌ইয়া জিও।তোকে জার্সি আর প্যান্টে জোশ লাগছে।আজকে তো তোকে থ্রি পিছে দেখে আমি ভাবলাম আর বোধ হয় এই ড্রেসগুলো পরবি‌ই না।বাট এখন তো আমি পু্রাই স্তম্ভিত।”
— “এগুলো আমার সঙ্গী। এগুলো আমি ছাড়তে পারবো না রে। ফুটবল ইজ মাই ড্রিম,আমার প্যাশন।আমি কিছুতেই এটাকে হারিয়ে যেতে দেবো না।সেজন্যই তো আমি আয়ানা থেকে আনান‌ইয়া। দরকার পড়লে আনান‌ইয়া পরিচয়েই আমার স্বপ্ন পূরণ করবো।” (আয়ানা)
— “ইনশাআল্লাহ তোর স্বপ্ন পূরণ হবে। কিন্তু একটা কথা বলি?” (এশা)
— “হুম বল।” (আয়ানা)
— “দেখ তোর হাজব্যান্ড তো নামকরা ফুটবলার।আমি তো ভেবেছিলাম তোর স্বপ্নটা খুব সহজেই পূরণ হবে।তোর হাজব্যান্ড পূরণ করবে।কিন্তু তা সত্ত্বেও তো তুই লুকিয়ে এসেছিস এবং সব লুকিয়েই করছিস।” (এশা)
— “সে সৌভাগ্য আমার নেই রে।আমাকে এভাবেই আমার স্বপ্ন পূরণ করতে হবে।যাই হোক বাদ দে।চল প্র্যাকটিস শুরু করি।” (আয়ানা)

আয়ানা আর এশা একাডেমী থেকে বেরিয়ে গ্রাউন্ডে যায়। ততোক্ষণে ওর কোচ‌ও চলে আসে।তিনি আয়ানাকে দেখে খুব খুশি হন,আয়ানাও উনাকে সবকিছু বুঝিয়ে বলে।
— “ঠিক আছে আনান‌ইয়া কোনো সমস্যা নেই।আমরা সবাই তোমার পাশে আছি। তুমি বরং তোমার প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো কেবিনেটে রেখে যেও।তাহলে রোজ এসে সুবিধা হবে।” (কোচ)
— “জ্বি স্যার সেটাই করবো।” (আয়ানা)
— “হুম অল দ্যা বেস্ট।চলো লেটস স্টার্ট দ্যা প্র্যাকটিস।” (কোচ)
— “ওকে স্যার।” (আয়ানা)

কোচ বাঁশিতে ফুঁ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবাই প্র্যাকটিসে নেমে পড়ে।সকলেই বলের পেছনে ছুটছে।আয়ানাও নিজের স্বপ্নকে পূরণ করার জন্য দৃঢ় সংকল্প নিয়ে এগিয়ে চলেছে।
একটানা নব্ব‌ই মিনিট প্র্যাকটিস করার পর সকলে একটু ব্রেক পেলো।এত সময় প্র্যাকটিস করতে গিয়ে আয়ানা বড্ড ক্লান্ত।ও ঘামার্ত শরীর নিয়ে এক সাইডে এসে বসে পড়লো।এই মুহুর্তে ওর প্রচন্ড পানি পিপাসা পেয়েছে।কিন্তু একটু যে উঠে গিয়ে পানি নিয়ে আসবে তার শক্তি নেই।আয়ানা জোরে একটা শ্বাস নিয়ে চোখ মেলতেই দেখে একটা হাত ওর দিকে পানির বোতল ধরে আছে।

আয়ানার বেশ খানিকটা খটকা লাগে,ও সাথে সাথে মুখ তুলে তাকায় আর অনেকটাই অবাক হয়ে যায়।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here