মন_পাজড়ে_শুধু_তুমি_আছো?,পর্ব_১৭,১৮
লেখিকা_মাইসারাহ_আরোহি?
পর্ব_১৭
সকালে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম ভাঙ্গে আয়ানার। পিটপিট করে চোখ মেলতেই ও নিজেকে কেমন আবদ্ধ উপলব্ধি করে।আয়ানা চোখ মেলে পাশে তাকাতেই দেখে অর্থ ওকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে আর ওর মাথাটা অর্থের বুকের উপরে।আয়ানা তৎক্ষণাৎ জোরে একটা চিৎকার করে লাফিয়ে উঠে পড়ে।আয়ানার চিৎকার শুনে অর্থ আর শুয়ে থাকতে পারে নি,ভয় পেয়ে অর্থ নিজেও লাফিয়ে উঠেছে।
— “এই কি হয়েছে তোমার,এই সাত সকালে এত জোরে চিৎকার কেনো করছো?” (অর্থ)
— “তো করবো না?কাল তো খুব কনফিডেন্সের কথা বললেন আর এই আপনার কনফিডেন্সের নমুনা।ছিঃ সুযোগ পেয়ে আপনি আমাকে টাচ করেছেন,এতোটা ক্যারেক্টার ঢিলা আপনার?” (আয়ানা)
— “হাজার বার বলেছি আমার সামনে এসব বাজে কথা না বলতে।তারপরেও বারবার একই ধরণের কথা কেনো বলো?আর ক্যারেক্টার আমার ঢিলা না ক্যারেক্টার টিলা তোমার।আমি ঠিকই শুয়ে ছিলাম নিজেই ঘুমের ঘোরে কোলবালিশ সরিয়ে দিয়ে আমার কাছে চলে এসেছো।” (অর্থ)
— “কি আমি এসেছি?এটা হতেই পারে না।” (আয়ানা)
— “ওহ তোমার কথা কথা আর আমার কথা গল্প?আচ্ছা তোমাকে মিথ্যে বলে আমার কি লাভ?” (অর্থ)
আয়ানা সাথে সাথে চুপ হয়ে গেলো আর মনে মনে ভাবতে লাগলো,
— “আমার তো একটা সমস্যা আছে,রাতে আমি একদিক থেকে অন্যদিকে চলে যাই।প্রতিদিন আমি একাই ঘুমাই আজ নিশ্চয়ই ঘুমের ঘোরে এসব করে ফেলেছি।ইস কি লজ্জাজনক ব্যাপার।”
আয়ানাকে চুপ করে থাকতে দেখে অর্থ বললো,
— “এখনো বিশ্বাস হয় নি আমার কথা?”
— “আচ্ছা আমি নাহয় ভুল করে চলে গেছি কিন্তু আপনি তো পারতেন আমাকে সরিয়ে দিতে।তা না করে আপনি কি সুযোগ নিলেন নাকি?” (আয়ানা)
— “তোমার সুযোগ নিতে আমার বয়েই গেছে। তোমার যাতে ঘুম নষ্ট না হয় তাই জন্য কিছু বলি নি।আর তার প্রতিদানে এই সকালবেলা
তুমি আমার ঘুমটা নষ্ট করলে এখন সারাদিন আমার মাথাব্যথা করবে।” (অর্থ)
— “আ’ম স্যরি।আমি আপনার মাথা ম্যাসেজ করে দেবো।আপনি প্লিজ মাইন্ড করবেন না।” (আয়ানা)
— “আচ্ছা ঠিক আছে,এখন তাহলে আরেকটু ঘুমাতো দাও।আর হ্যাঁ মাথাটাও ম্যাসেজ করে দাও।” (অর্থ)
— “হুম দিচ্ছি।” (আয়ানা)
আয়ানা বসে ছিলো আর অর্থ টুপ করে ওর কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো।আয়ানা এতো মতো ওকে ডাকছে কিন্তু সেগুলো ওর কর্ণভেদ করছে না।বাধ্য হয়ে আয়ানা আর কিছু না বলে অর্থের চুলে বিলি কেটে দিতে থাকে।
বিকেলে ওরা দুজনে আবার অর্থদের বাসায় চলে আসে।এই একদিনের জন্য গিয়ে আবার চলে এসে আয়ানার মন ভীষণ খারাপ।ও মন খারাপ করে এক কোণে বসে আছে।অর্থ আয়ানার কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো,
— “একই শহর তো আবার নাহয় কিছুদিন পরে গিয়ে দেখা করে আসবে।এতে এতো মন খারাপ করে থাকার কি আছে?”
— “না কিছু নেই তো।আমি তো মানুষ না। আপনি কি করে বুঝবেন আমার কষ্টটা।সব মেয়েদেরই বাপের বাড়ি থেকে আসতে খারাপ লাগে।আর তাছাড়া কতদিন পরে গেছিলাম আর আপনি আমাকে থাকতে দিলেন না আজই চলে আসতে হলো।” (আয়ানা)
— “বেশ করেছি।বিয়ের পর তো শশুড়বাড়ি মেয়েদের একমাত্র বাড়ি হয়,তাই এখানে থাকাটাই অভ্যাস করে নাও।বাপের বাড়ি একমাস পরপর গেলেও চলবে।কিন্তু এখানে সবসময় থাকতে হবে।” (অর্থ)
কথাটা বলে অর্থ ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো কারণ বেশিক্ষণ ওখানে থাকলে ও কি বলতে কি বলবে শেষে আবার আয়ানা কষ্ট পাবে। কিন্তু অর্থের কথার কোনো মানে আয়ানা বুঝতে পারে না।ইদানিং অর্থের ব্যবহার অনেকটাই বদলে গেছে।আগের মতো তর্কও করে না,আয়ানার সাথে খুব একটা বাজে ব্যবহারও করে না আবার মাঝেমাঝে এমন কথা বলে যেটা আয়ানা বুঝতেই পারে না।এই সবকিছু মিলিয়ে আয়ানার মনের মধ্যে খচখচ করছে।
— “নাহ এই ছেলেটার কোনো মতিগতি আমি বুঝতে পারছি না।এতো ভালো ব্যবহার করছে আমার সাথে তাহলে কি আমাকে পছন্দ হয়ে গেলো নাকি আমাদের ডিভোর্স হলে আমি চলে যাবো তার জন্য একটু সহানুভূতি দেখাচ্ছে।কিন্তু এতো জোর দিয়ে স্বামী,শশুড়বাড়ি এগুলো বলছে এসব তো ঠিক মাথায় ঢুকছে না।” (মনে মনে আয়ানা)
!!
হুইস্টলিং করতে করতে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলোতে জেল লাগাচ্ছে অর্থ।ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব সিরিয়াস মুড নিয়ে রেডি হচ্ছে।আয়ানা পেছনে দাঁড়িয়ে অর্থের এতো রং-ঢং দেখে ভ্রুযুগল নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— “এতো সিরিয়াস মুড নিয়ে তৈরি হচ্ছেন,তা কোথায় যাবেন শুনি?”
অর্থ হাত দিয়ে চুলগুলো ঠিক করে একটু স্টাইল নিয়ে বললো,
— “পার্টিতে।বন্ধুদের সাথে স্পেশাল পার্টি আছে।আমার ফিরতে রাত হবে।বাড়িতে একটু বলে দিও।”
— “ওসব আমি পারবো না।আর আপনার পার্টিতে যাওয়াও হবে না বলে দিলাম।” (আয়ানা)
— “আচ্ছা দেখি কিভাবে তুমি আমাকে আটকাও।” (অর্থ)
— “ওকে জাস্ট ওয়েট।” (আয়ানা)
আয়ানা সেন্টার টেবিলের উপর থেকে অর্থের গাড়ির চাবিটা নিয়ে নিজের ওড়নার এক কোণায় বেঁধে নিয়ে বললো,
— “আপনার গাড়ির চাবি আমার কাছে।অর্থি আপু গাড়ি নিয়ে গেছে আর আরেকটা গাড়ি তো বাবা নিয়ে গেছে।তাহলে এখন দেখি আপনি কিভাবে যান।”
— “আচ্ছা দেখো।” (অর্থ)
বলেই অর্থ দুষ্টু হাসি দিয়ে আয়ানার দিকে এগোতে থাকে।ব্ল্যাক টি শার্ট তার উপর হোয়াইট ডেনিম,সাথে ব্ল্যাক জিন্স,পায়ে হোয়াইট এন্ড ব্ল্যাক মিক্সড কেডস পরে আয়ানার দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে অর্থ।আয়ানাও এক পা এক পা করে পিছিয়ে যাচ্ছে।না আর পেছোনোর কোনো সুযোগ নেই আয়ানা একদম দেয়ালের সাথে লেপ্টে গেছে। এদিকে অর্থ একদম ওর কাছে দাঁড়িয়ে আছে মাঝে শুধু কয়েক ইঞ্চির গ্যাপ।অর্থ ধীরে ধীরে আয়ানার দিকে আরেকটু ঝুঁকে পড়ছে।
— “এইইইই ককককি কককরছেন কককি?সরুন বলছি।” (আয়ানা)
কিন্তু অর্থ আয়ানার কথায় কান দিলো না নিজের এগিয়ে যাওয়া অব্যাহত রাখলো।অর্থকে এতো কাছে থেকে দেখে আয়ানা সাথে নিজের চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে।
অনেকক্ষণ হয়ে গেলো আয়ানা চোখমুখ খিচে রয়েছে।আয়ানা অর্থেরও কোনো সাড়াশব্দ পায় না,তাই ও চোখ মেলে তাকায়।কিন্তু ওর সামনে অর্থ নেই এমনকি ঘরেও অর্থের কোনো চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না।আয়ানা সাথে সাথে নিজের ওড়নার দিকে নজর দেয়,ও দেখে ও যেখানে চাবিটা বেঁধে রেখেছিল সেটা ওখানে নেই।আয়ানার আর বুঝতে বাকি থাকলো না যে অর্থ এতোক্ষণ ওর সাথে ফ্লার্ট করে চাবি নিয়ে বেরিয়ে গেছে।
— “শয়তান ছেলে আমার সাথে ফ্লার্টিং।আচ্ছা আজ আসুক বাসায় শায়েস্তা যদি না করেছি আমার নামও তবে আয়ানা নয়।” (রেগে আয়ানা)
আয়ানার কাছ থেকে চাবি নিয়ে অর্থ বন্ধুদের সাথে মিট করতে চলে আসে।ওর সব বন্ধুরাই এসেছে সাথে দু একটা মেয়ে বন্ধুও আছে। এতো দিন পর অর্থকে পেয়ে সবাই খুব খুশি।সবাই অর্থকে ঘিরে ধরে।
— “তা বস কি খবর তোমার?রিকোভারি সাকসেসফুল?” (আরমান)
— “ইয়াহ ব্রো।” (অর্থ)
— “এটা ভালো হয়েছে রে অর্থ তুই তাড়াতাড়ি রিকোভার করতে পেরেছিস।” (রাফাত)
— “আরেহ হবে না আবার ওর বউ ওকে যে আদর যত্ন করে।অর্থ কে তো তাড়াতাড়ি সুস্থ হতেই হবে।” (ইমরান)
— “বাট অর্থ ব্রো শুধু কি রিহ্যাব প্রসেসিংয়েই ছিলে নাকি এর মাঝে ভাবির সাথে ভালোবাসাও হয়েছে?” (দুষ্টু হেসে রুদ্র)
রুদ্রের কথা শুনে সবার মুখেই দুষ্টু হাসি।সকলেই অর্থের উত্তর জানার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।কিন্তু অর্থ ওদের সমস্ত কাঙ্ক্ষিত উত্তর বাদ দিয়ে অসহায় ফেইস করে বললো,
— “আর ভালোবাসা,ওর সাথে আমার ভালোবাসা কখনোই সম্ভব না।সারাদিন তো শুধু ঝগড়াই করে।আর যদিও বা একটু সুন্দর করে ভালোভাবে ওর সাথে কথা বলি ওমনিই শুরু করে আমার সাথে এতো ভালো ভাবে কথা বলবেন না,আমাকে এসব বলছেন কেনো,নিজের গার্লফ্রেন্ডকে বলুন।যখনই ভাবি ভালো ব্যবহার করবো তখনই মেজাজটা খারাপ করে দেয়।।”
— “সে কি রে দোস্ত এমন হয়েছে?” (আরমান)
— “আরেহ দ্যা লাভার বয় অর্থ আজ তোরও তাহলে এই অবস্থা।হায় রে বিয়ের পর বউরা আসলেই কাউকেই পাত্তা দিতে চায় না।” (রাফাত)
— “আসলে তা না আমাদের সম্পর্কটা ওরকম না।” (অর্থ)
— “দেখ অর্থ তোদের সম্পর্ক যাই হোক না কেনো আমি যতটুকু ভাবিকে দেখে বুঝেছি সে তোকে ভালোবাসে অর্থ।” (আরমান)
— “ওগুলো তোর ভুল ধারণা।” (অর্থ)
— “ভুল নয় ঠিকই।ব্যাপারগুলো পরপর ভাব তাহলে নিজেও বুঝতে পারবি।শুধু ঠান্ডা মাথায় একবার চোখ বন্ধ করে ভাববি দেখবি সব ক্লিয়ার বুঝতে পারছিস।” (আরমান)
— “হুম দেখ অর্থ এভাবে চুপ করে থাকবি না এবার একটু রিস্ক নে।আমরা তোকে সব শিখিয়ে দিচ্ছি বস।দেখবি ভালোবাসা আপনাআপনি হয়ে গেছে।” (রাফাত)
— “আচ্ছা আচ্ছা ওসব ছাড় এবার।পার্টিতে এসেছি এনজয় করতে হবে তো গাইস।সো লেটস এনজয় এভরিবডি।” (অর্থ)
!!
রাত এগারোটা বাজে অর্থের প্রতিক্ষায় ঘরের মধ্যে পায়চারি করছে আয়ানা।পায়চারি করতে করতে আয়ানা দেখলো অর্থ হাতে চাবি ঘোরাতে ঘোরাতে ঘরে ঢুকছে।
— “সেই পার্টি করেই ফিরলেন তবে।” (আয়ানা)
— “ইয়েস বেবি।” (অর্থ)
— “কি বললেন?বেবি?এসব বেবি টেবি আবার কি?আমি কি বাচ্চা নাকি?এসব বাজে কথা একদম আমার ভালো লাগে না।” (আয়ানা)
— “ওকে ওকে স্যরি।” (অর্থ)
— “হুম অনেক রাত হয়েছে ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে নিন।আমি খাবার আনছি।” (আয়ানা)
— “খেয়ে এসেছি আমি।” (অর্থ)
— “ওহ তাহলে আর কি সব ফ্রিজে তুলে রাখছি।” (আয়ানা)
আয়ানা কিচেনে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। কিন্তু অর্থ ওকে পেছন থেকে ডাক দেয়।আয়ানা দাঁড়িয়ে গিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো,
— “কি?”
অর্থের হাতে একটা শপিং ব্যাগ ছিলো,ও ব্যাগটা এগিয়ে দিয়ে বললো,
— “ইস লিবে দিস।”
— “মানে?” (জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আয়ানা)
অর্থ কোনো উত্তর দেয় না ব্যাগটা আয়ানার হাতে ধরিয়ে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।আয়ানা বেকুবের মতো দাঁড়িয়ে থেকে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করে।
চলবে
#মন_পাজড়ে_শুধু_তুমি_আছো?
#লেখিকা_মাইসারাহ_আরোহি?
#পর্ব_১৮
অর্থের হাতে একটা শপিং ব্যাগ ছিলো,ও ব্যাগটা এগিয়ে দিয়ে বললো,
— “ইস লিবে দিস।”
— “মানে?” (জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আয়ানা)
অর্থ কোনো উত্তর দেয় না ব্যাগটা আয়ানার হাতে ধরিয়ে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।আয়ানা বেকুবের মতো দাঁড়িয়ে থেকে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করে।
— “কি হলো ব্যাপারটা?কি বলো গেলো উনি?আমি তো কিছুই বুঝতে পারলাম না।আর এই ব্যাগেই বা কি আছে?খুলে দেখতে হচ্ছে তো।” (মনে মনে আয়ানা)
আয়ানা শপিং ব্যাগটা নিয়ে বিছানায় এসে বসে,তারপর ব্যাগের ভেতরে থাকা জিনিসগুলো একে একে বের করে।শপিং ব্যাগের মধ্যে একটা পায়েল,দুই ডজন নীল রঙের কাঁচের চুড়ি,এক পাতা টিপ,কাজল,গাজরা (ফুলের খোঁপা), লিপস্টিক,সেফটিপিন,এক জোড়া কানের দুল আর একটা নীল রঙের জর্জেট শাড়ি ছিলো।এসব জিনিসপত্র দেখে আয়ানা যেনো আকাশ থেকে পড়লো।ও কিছুতেই হিসেব মিলাতে পারছে না যে অর্থ এগুলো আনলো কেনো।মনের মধ্যে জমে থাকা প্রশ্নগুলোর উত্তর চিন্তা করতে করতে আয়ানার চোখ যায় ব্যাগের এক কোণে পড়ে থাকা চিরকুটের দিকে।ও চিরকুট খোলে,তাতে লেখা ছিলো: “এই সবকিছু শুধুমাত্র তোমারই জন্য প্রিয়দর্শিনী।”
আয়ানা এখনো কিছু বুঝতে পারে না। কিছুক্ষণ অবুঝের মতো বসে থেকে পরে বাধ্য হয়ে সবকিছু ব্যাগে ভরে আলমারিতে তুলে রাখলো।
!!
আজ বহুদিন পর অর্থ একাডেমিতে যোগ দিলো।চারমাস ও ইনজুরির জন্য মাঠের বাইরে ছিলো তবে আজ ফিট সার্টিফিকেট নিয়ে আবার দলে যোগ দিয়েছে।সামনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ আছে আর তাতে অধিনায়ককে খুব দরকার।যার কারণে অর্থ নিজে থেকেই যোগ দিয়েছে।ওর টিমমেট,কোচ,ম্যানেজমেন্টের সবাই খুব খুশি হয়েছে।প্রথম এসেই অর্থ জোর কদমে অনুশীলনে নেমে পড়ে।ও এখন ফুটবলের বিষয়ে ভীষণ সিরিয়াস।
!!
বিকালের দিকে মানে বিকাল আর সন্ধ্যার মাঝামাঝি সময়।নীল আকাশে কালো মেঘের আস্তরণে প্রকৃতি একেবারে নিস্তব্ধ হয়ে আছে। চারদিকে ঠান্ডা ঠান্ডা বাতাস হইছে আর ধূলোকণাগুলো উড়ে উড়ে যাচ্ছে।প্রকৃতির এই অশান্ত রূপকে শান্ত করতে মুহুর্তের মধ্যেই আকাশ থেকে বড় বড় ফোঁটায় বৃষ্টি পড়তে শুরু করলো।এ বৃষ্টি যেনো থামার নয়, একেবারে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে।আর বারান্দায় দাঁড়িয়ে থেকে এই বৃষ্টি এবং বৃষ্টি ফোঁটা উপভোগ করছে আয়ানা।বহুদিন পর বৃষ্টি হওয়ায় প্রকৃতি যেমন শান্ত আয়ানাও ঠিক তেমন ভাবেই শান্ত হয়ে গভীর মনোযোগ নিক্ষেপ করে বৃষ্টি পড়া দেখছে।তবে হঠাৎ আয়ানার কানে একটা গুণগুণ আওয়াজ ভেসে আছে।ও বারান্দা থেকে ঘরের দিকে অল্প সামান্য অগ্রসর হয় এবং দেখতে পায় অর্থ বিছানায় বসে খাতায় কিছু লিখছে আর গুণগুণ করে গান গাইছে।
~”আমি তোমার কাছেই রাখবো
আজ মনের কথা হাজার
দিয়ে তোমার কাজল আঁকবো
আজ সারা দিনটা আমার
তুমি বৃষ্টি হয়ে নামলে
তুমি বৃষ্টি হয়ে নামলে
আর কমলো চিন্তা আমার!”~
আয়ানা ঘরের ভেতরেই আসছিল কিন্তু হঠাৎ বারান্দার গন্ডি পেরোনের সময় ও কিভাবে যেনো পা মচকে পড়ে যায়।আয়ানা বেশ খানিকটা জোরেই “আহ” বলে কঁকিয়ে উঠলো।আয়ানার গলা পেয়ে অর্থ কাজ বন্ধ করে তাড়াতাড়ি বারান্দার দিকে তাকায় এবং আয়ানাকে পড়ে থাকতে দেখে দ্রুত ওর কাছে ছুটে যায়।
— “আর ইউ ওকে?পড়ে গেলে কিভাবে?” (অর্থ)
— “জানি না, হঠাৎ পা টা মচকে গেলো।আমাকে একটু সাহায্য করবেন আমি উঠবো।” (আয়ানা)
— “হুম অবশ্যই।” (অর্থ)
অর্থ আয়ানাকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করে। কিন্তু আয়ানা এক পায়ে দাঁড়াতে পারছে না বারবার ভারসাম্য হারিয়ে যাচ্ছে।এসব দেখে অর্থ কোনো কিছু না বলে আয়ানাকে কোলে তুলে নেয়।ব্যাপারটা এতো তাড়াতাড়ি হলো যে আয়ানা কিছু বুঝতেই পারলো না।অর্থের এমন কান্ডে আয়ানা পুরোই বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে,ওর মুখ দিয়ে কোনো বাক্যই নিঃসৃত হচ্ছে না।অর্থ আয়ানাকে এনে বিছানার উপর বসায়, তারপর ড্রয়ারের ভেতর থেকে মেডিসিন বক্স নিয়ে এসে আয়ানার পাশে বসে।বক্স থেকে মেডিসিন বের করে অর্থ খুব যত্নের সাথে আয়ানার পায়ে ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছে,আয়ানার যাতে কষ্ট না হয় সেজন্য অর্থ ধীরে ধীরে ফুঁও দিচ্ছে।আয়ানা টু শব্দ করছে না শুধু এক দৃষ্টিতে অর্থের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। ওষুধ লাগানো শেষে অর্থ মেডিসিন বক্সটা নির্দিষ্ট স্হানে রেখে আসে।ড্রয়ার লাগানোর শব্দে ধ্যান ভাঙে আয়ানার।
ও অর্থের দিকে চোখ রাঙিয়ে বলে,
— “এই মিস্টার বিচুটি পাতা,এই আপনি আমাকে না বলেই কোলে তুললেন কেনো?আর কোন সাহসে আপনি আমার পায়ে হাত দিলেন?আপনাকে কি আমি বলেছিলাম আমায় কোলে তুলতে?”
— “জ্বি না।এক পায়ে দাঁড়িয়ে তো ভারসাম্য রক্ষা করতে পারছিলে না তাই তো বাধ্য হয়ে একটা আটার বস্তাকে কোলে তুলতে হলো।” (অর্থ)
— “কিহ আমি আটার বস্তা?একে তো আমাকে কোলে তুলেছেন আবার এখন আটার বস্তা বলছেন,আজকে আমি আপনাকে…..”
আয়ানা অর্থের দিকে তেড়ে যেতে নেয়।
— “আরে ধীরে ধীরে, বসো তো আগে।দেখছো পায়ে ওষুধ লাগিয়ে দিলাম তারপর আবার আমার দিকে ছুটছো,বড্ড চঞ্চল মেয়ে তো তুমি!!এখানে চুপচাপ বসে থাকো,ঘর থেকে এক পাও নড়বে না।” (অর্থ)
— “না আমি এখানে থাকবো না,আমি মা’র ঘরে যাবো।মা’র সাথে আমি এখন টিভি দেখবো।” (আয়ানা)
— “বলে দিলাম না এখন কি করণীয়।তারপরেও এত কথা বলছো কেনো?বেশি কথা বলা মোটেও ভালো নয়।চুপচাপ বসে থাকো।” (অর্থ)
অর্থ আয়ানাকে আদেশ দিয়ে ঘর থেকে চলে গেলো,আয়ানা অর্থের উপর রাগটা বালিশের উপর ঝাড়লো।একে একে সব বালিশগুলো ছুঁড়ে নিচে ফেলে দিলো।
!!
রাতে আয়ানা মুখ মলিন করে এক কোণায় বসে আছে।অর্থও চুপচাপ বসে আছে,তবে ওর মনের মধ্যে একটা আকাঙ্ক্ষা রয়েছে যে এই বুঝি আয়ানা ওর সঙ্গে কথা বলবে।কিন্তু না এক ঘন্টা ধরে দুজনে ওরকম ভাবেই বসে আছে,বিন্দু পরিমাণ কথাও হয় নি একে অপরের সাথে।অর্থ নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না বাধ্য হয়ে বলেই ফেললো,
— “কি হয়েছে তোমার?এমন চুপচাপ কেনো রয়েছো?”
— “ভালো লাগছে না।” (আয়ানা)
— “কেনো?পায়ে কি ব্যথা করছে? আরেকবার ওষুধ লাগিয়ে দেবো?” (অর্থ)
— “না না একদম না।আমি ঠিক আছি।” (আয়ানা)
— “ওকে।আচ্ছা শোনো না এভাবে বসে থাকতে বোরিং লাগছে চলো লুডো খেলি।” (অর্থ)
— “এখন?” (আয়ানা)
— “হুম।খেলবে?” (অর্থ)
— “ঠিক আছে তবে আমার একটা শর্ত আছে।” (আয়ানা)
— “কি শর্ত?” (ভ্রু কুঁচকে অর্থ)
— “সেটা হচ্ছে আমি যদি বিজয়ী হই তাহলে আমি যা বলবো আপনাকে সেটাই শুনতে হবে।” (আয়ানা)
— “ওকে ডান, আর যদি আমি জিতে যাই তাহলে?” (অর্থ)
— “তাহলে আপনি যা বলবেন আমি তাই শুনবো।” (আয়ানা)
— “ওকে লেটস প্লে দ্যা গেম।” (অর্থ)
অর্থ ওর মোবাইলে লুডো কিং অ্যাপলিকেশনটা অপেন করে এবং দুজনে গেমস খেলতে শুরু করে।অনেক গভীর মনোযোগ দিয়ে দুজনে খেলছে,কেউ কারো চেয়ে কম যায় না।দুজনেই পাকা খেলোয়াড়।তবে খেলায় তো হার জিত আছেই,তাই খেলা শেষে দেখা গেলো অর্থ জিতে গিয়েছে আর আয়ানা হেরে গিয়েছে।হেরে গিয়ে আয়ানার মুখটা একদম শুকিয়ে গিয়েছে।কিন্তু অর্থ তো মহাখুশি!!
— “তাহলে আমি জিতে গেলাম তো।এখন আমি যা বলবো তুমি তাই শুনবে।” (অর্থ)
— “হুম বলুন কি শুনতে হবে।” (মন খারাপ করে আয়ানা)
— “বেশি কঠিন কিছু নয় আমি এটাই চাই যে আজ থেকে তুমি আর মেঝেতে শোবে না।আজ থেকে তুমি আমার সঙ্গে বিছানায় শোবে অবশ্য মাঝখানে কোলবালিশ থাকবে।” (অর্থ)
— “অসম্ভব,এটা কিছুতেই সম্ভব নয়।” (বিছানা থেকে উঠে গিয়ে আয়ানা)
অর্থও আয়ানার পেছন পেছন উঠে গেলো আর বললো,
— “কেনো সম্ভব নয়? দেখো আমি অতো শতো বুঝি না।কথা ছিলো আমি যা বলবো তুমি শুনবে।সুতরাং আজ থেকে তুমি বিছানায় শোবে এটাই ফাইনাল।আমি আর কোনো কথা শুনবো না।”
— “ওহ খোদা এই ছেলে তো আমাকে জ্বালিয়ে মারলো।” (বিরক্ত হয়ে আয়ানা)
— “এতদিনে বুঝছো!!দেখো ভবিষ্যতে আরো কত কি হয়।” (অর্থ)
কথাটা বলে অর্থ পকেটে হাত ঢুকিয়ে হুইস্টলিং করতে করতে বেরিয়ে গেলো।
!!
সকালে অর্থ ব্রেকফাস্ট করে একাডেমিতে চলে যায়।আয়ানা ঘরে বসে অর্থের জামাকাপড় গুছিয়ে রাখছিলো এমন সময় ওর মাথায় একটা কথা ভীষণ ঘুরপাক খায়। অর্থের এমন পরিবর্তন ওকে খুব ভাবাচ্ছে।নিজের মনের অজানা কিছু প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার আশায় আয়ানা জামাকাপড়গুলো বিছানার উপর রেখে অর্থির ঘরে যায়।
অর্থি আধশোয়া অবস্থায় বসে বই পড়ছে।আয়ানা গিয়ে বললো,
— “অর্থি আপু তোমাকে আমার একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিলো।কিন্তু কিভাবে বলবো বুঝতে পারছি না।”
— “এতো ভেবো না আয়ানা,নিঃসংকোচে বলো কি জিজ্ঞেস করবে।” (অর্থি)
আয়ানা একটু ইতস্তত বোধ করেই বলে,
— “আসলে আপু তোমার ভাইয়ের কি সত্যি কোনো গার্লফ্রেন্ড আছে? না মানে তুমি কি এই বিষয়ে কিছু জানো?”
চলবে