অনুভবে_তুমি,পর্বঃ৪,৫

0
2001

অনুভবে_তুমি,পর্বঃ৪,৫
ফারজানা_আক্তার
পর্বঃ৪

আরে তুলি মামনি কান্না করছো কেন?
দৌড়ে এসে তুলিকে কোলে নিয়ে বলে আদিবা।
তুলি বলে আদিবার সাথে রান্না ঘরে যাওয়ার জন্যই নাকি সে কান্না করছে, এটা শুনে বেশ হাসি পেলো আদিবার।



বিকালে আাদিবাকে দেখতে আসলো আদিবার বাড়ির লোক, শিরুফা আর তাদের এক খালাতো ভাই আসছে দেখতে। তিয়ান আদিবার খালাতো ভাই, আদিবা আর তিয়ান সমবয়সী। ছোট থেকেই তিয়ান আদিবাকে পছন্দ করে যদিও আজও তা আদিবার কাছে অজানা। তিয়ান এখনো স্টুডেন্ট যার কারণে হাজার চেয়েও আদিবার বিয়েটা আটকাতে পারলো না তিয়ান, তবে সে খুব করে চায় আদিবা যেন সুখী হয় এই ঘরে।
আদিবা খুব খুশি ওদের কে পেয়ে। ড্রয়িংরুমে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো আদিবা শিরুফা শোভা তিয়ান আর নিহান। সন্ধ্যা ৫টা, রাহিল অফিস থেকে ফিরতেই শিরুফা সালাম দিলো রাহিলকে, কিছুক্ষণ শালির সাথে কৌশলবিনিময় করেই নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায় রাহিল।

~তোমরা আড্ডা দাও, আমি একটু আসি।
আদিবা সবাইকে কথাটা বলেই রাহিলের পেঁছন পেঁছন গেলো, কুটকুট করে হেসে উঠে সবাই। শিরুফা হঠাৎ বলে উঠে “বাহ একদিনেই দেখছি বোন আমার স্বামী পাগলী হয়ে গেছে”।
আবারো কুটকুট করে হেসে উঠে সবাই। কিন্তু তিয়ানের মন বেশ খারাপ, যদিও সেটা ও কাউকে বুঝতে দিচ্ছে না।।



রাহিল রুমে এসে পা ঝুলিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো, রাহিল চোখ বন্ধ করে আছে, আদিবা এসে রাহিলের পা থেকে জুতা খুলতে নিলেই লাফ দিয়ে উঠে রাহিল

~এই মেয়ে কি করছো কি তুমি এসব?একদম বউ সাজবেনা, শুধু তুলির মা হয়েই থাকবে। বুঝেছো?
~নাহ বুঝিনি
রাহিল বেশ বিরক্ত হচ্ছে আদিবার উপর, আদিবার চোখে জল চিকচিক করছে।
~আচ্ছা শুনো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি, ততক্ষণে আমার জন্য এক কাপ কফি নিয়ে আসো।
~আচ্ছা
~কফি বানাতে পারো তো?
~হুম
মাথা নিচু করে বলে আদিবা।
~ভালো করে বানাবে।

আদিবার মুখে এবার হাসির রেখা দেখা যায়, রাহিল ওয়াশরুমে চলে যায় কথাটি বলে, আদিবা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে কফি আনতে নিচে যায়।

আদিবা সিড়ি দিয়ে নামতেই শিরুফা বলে “কিরে আপু স্বামী সেবা শেষ?
কিছুটা লজ্জা পেলো আদিবা, তবুও মুখে হাসির রেখা টেনে বলে তোমরা কি খাবে কফি?
সবাই বলে খাবে,
~আচ্ছা বসো তোমরা, আমি বানিয়ে আনি।
শোভা বলে আচ্ছা তোমরা কথা বলো আমি ভাবিকে হেল্প করতে যায়।
এটা বলে চলে যায় শোভা।

~ভাবি আমি কি হেল্প করবো?
~নাহ আপু, তুমি যাও আড্ডা দাও, আমি পারবো
~উঁহু যাবোনা, আমি আপনাকে সাহায্য করতে এসেছি।
~আচ্ছা তবে একটা কাজ করো,
~কি কাজ বলো।
~তুলি আম্মুর সাথে ঘুমাচ্ছে, ওরা উঠছে কিনা দেখে আসো।
~আচ্ছা
শোভা চলে গেলে আদিবা মুচকি হাসে। ভাগ্য করে ননদ পেয়েছে।

কিছুক্ষণ পর সবাইকে কফি দিয়ে রাহিলের কফি নিয়ে কয়েক সিড়ি উপরে উঠতেই দেখে খালি গায়ে টাওয়াল পরে নিচে নামতেছে রাহিল, আর একটুর জন্য বেঁচে গেলো আদিবা নয়তো ধাক্কা লেগে কফি সব ওর মাথায়ই পরতো।

~আরে আপনার কি কোনো কান্ডজ্ঞান নেই, এভাবে নিচে আসলেন কেন? ছি ছি কি লজ্জা
এক হাত মাথায় দিয়ে কথাগুলো বলে আদিবা,
~ওই এতো লজ্জা লজ্জা করো কেন যখনতখন? তোমার জন্যই নিচে আসতে হলো আমাকে। এক কাপ কফি বানাতে কতক্ষণ লাগে।
চুপ হয় আছে আদিবা, নিহান নিচে থেকে চিল্লিয়ে বলল ‘আরে ভাইয়া চিল, ভাবি আমাদের সবার জন্য সহ কফি বানিয়েছে তাই দেরি হয়েছে”
রাহিল আর কিছু না বলে চলে যায় রুমে, আদিবাও পেঁছন পেঁছন যায়।

নিন কফি।
হাত বাড়িয়ে কফি নিয়ে নিলো রাহিল। রাহিল কফিতে চুমুক দিয়েই বিড়বিড় করে বলে বাহ্ কফি তো দারুণ হয়েছে, একদম রেশমার হাতের স্বাদ পেলাম। আদিবা পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো। রাহিলের কথা শুনে মুচকি হাসলো আদিবা।

রাহিল মাথা তুলে আদিবার দিকে তাকিয়ে বলে “সারাদিন আর কাপড় চেঞ্জ করোনি কেন?
~আসলে আমি তো শাড়ি পরতে পারিনা, আর শোভা বলল কয়েকদিন শাড়ি পরতে কারণ প্রতিবেশী মহিলারা দেখতে আসবে তাই।
আমতাআমতা করে বলে আদিবা।
~তো এখন কি আমিই শাড়ি পরিয়ে দিতাম সবসময়? কান খুলে শুনে রাখো আমি আর পারবোনা শাড়ি পরাতাম বারবার তোমায়।

মন খারাপ হয়ে যায় আদিবার। চোখ এড়ালো না রাহিলের।

~তুলি কোথায়?
~আম্মুর সাথে ঘুমাচ্ছে।
~ওও, উঠিয়ে নিয়ে আসো, সন্ধ্যা হয়ে আসছে।
~আচ্ছা।
~আর শুনো
~বলুন
~এভাবে মুখ গোমড়া করে থেকোনা, সবাই মনে করবে তখন আমি তোমায় টর্চার করছি।

কিছু না বলে চলে যায় আদিবা।



সন্ধ্যা ৭টার দিকে চলে যায় শিরুফা আর তিয়ান। যাওয়ার সময় নিহান শিরুফার কানে কানে বলে খুব মিস করবো। চমকে উঠে শিরুফা। সে আশেপাশে তাকায়, দেখে কেউ খেয়াল করেনি। লজ্জায় আর নিহানের দিকে তাকানোর সাহস পায়নি শিরুফা।
সারা রাস্তা নিহানের কথা ভাবতে থাকে শিরুফা।



রাতে ঘুমানোর জন্য কিছুতেই তুলিকে আনতে পারছেনা দাদা দাদির রুম থেকে। অনেক চেষ্টা করেও যখন ব্যার্থ হলো তখন রাহিল আর আদিবা চলে যায় নিজের রুমে। রোকেয়া বেগম আর রমজান সাহেব হাসে। কারণ তারা তুলিকে চকলেটের লোভ দেখিয়েছে বলেই সে যায়নি মা বাবার সাথে। রাহিল তুলিকে তেমন একটা চকলেট খেতে দেয়না যদিও তুলির চকলেট খুব প্রিয়।

রুমে এসে রাহিল সোফায় ঘুমাতে যাবে তখনই আদিবা দৌড়ে গিয়ে এক জগ পানি ঢেলে দেয় সোফায়। রাগ উঠে যায় রাহিলের। এক টান দিয়ে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে আদিবাকে, ভয়ে গলা শুকিয়ে যায় আদিবার,

~প্লীজ ছাড়ুন, ব্যাথা পাচ্ছি আমি।
ভয়কে কন্ট্রোলে রেখে রাহিলের চোখে চোখ রেখে কথাটি বলে আদিবা।
~তোমার সাহস তো কম নাহ, রাহিল আহমেদ এর সাথে চোখ রাঙিয়ে কথা বলছো তুমি।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে রাহিল।
~হ্যাঁ বলছি, কি করবেন আপনি? ঢং,, আরে আপনি বুইরা হলেও আমি তো কচি মেয়ে, আমি তো অনেক আশা নিয়ে বিয়ের পিরিতে বসেছি, আমারো তো শখ আহ্লাদ থাকতে পারে,, তাই ময় কি??
চোখ-মুখ খিঁচে শক্ত কন্ঠে বলে কথাগুলো আদিবা। তৃষ্ণা পেয়েছে খুব আদিবার।

~তুমি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছো।
চোখ লাল করে কথাটি বলে রাহিল।
~মোটেও বাড়াবাড়ি করছিনা আমি, ছাড়ুন আমায়।
ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় রাহিলকে আদিবা, শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে রাহিল, এই মেয়ে এতো সাহস পায় কোত্থেকে?
দৌড়ে গিয়ে ঢকঢক করে এক বোতল পানি খেয়ে নেয় আদিবা। রাহিল অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আদিবার দিকে। বেশ চঞ্চল স্বভাবের মেয়েটা, মনে যা আছে সব মুখ দিয়ে পরপর করে বলে দেয়। কিন্তু কিভাবে বুঝাবো ওকে আমি যে শুধু রেশমাকেই ভালোবাসি আমার অনুভবে শুধু রেশমার-ই আনাগোনা।

কিছু না বলে নিচে বিছানা করে শুয়ে পরে আদিবা,, রাহিল বেলকনির দিকে চলে যায়, ঝিরিঝিরি বাতাস গায়ে মাখতে বেশ লাগছে রাহিলের।।

চোখে পানি চিকচিক করছে আদিবার।। ধ্যাৎ কিসব বলছি আবোলতাবোল আমি? বেশ করেছি বলেছি, না বলে কি করবো? উনি যা ইচ্ছে করবে আর আমি কিছু বললেই দোষ, কত ব্যাথা পাচ্ছি হাতে, এতো শক্ত করে কি কেউ ধরে? কিভাবে বুঝাবো উনাকে আমি রেশমা আপুর জায়গা নিতে চায়না শুধু নিজের জন্য একটা আলাদা জায়গা বানাতে চায়, আর এটা তখনই সম্ভব হবে যখন উনি আমায় সেই সুযোগটা দিবেন।।
কান্নাজড়িত কন্ঠে কথাগুলো বিড়বিড় করতে করতে ঘুমিয়ে যায় আদিবা।।।



স্নিগ্ধ সকাল, সারাঘরে আলো ছড়িয়ে পরেছে,, হঠাৎ জেগে যায় রাহিল। মিটিমিটি করে চোখ খুলেই চমকে উঠে সে, সকাল সকাল এতো বড় সারপ্রাইজ এর জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা রাহিল। বেশ রাগ উঠে গেছে রাহিলের, পাশের টেবিলে রাখা বোতলটা নিয়ে চাপা খুলে পানি সব____

চলবে

#অনুভবে_তুমি
#পর্বঃ৫
#ফারজানা_আক্তার

পাশের টেবিলে রাখা বোতল টার চাপা খুলে আদিবার মুখে পানি ঢালতে চেয়েও ঢালেনি কারণ আদিবা রাহিলের বুকে ঘুমাচ্ছে ছোট বাচ্চাদের মতো জড়সড় হয়ে, এখন যদি আদিবার মুখে পানি ঢালে তবে সব পানি রাহিলের গায়েও পরবে তাই পানির বোতলটা জায়গা মতো রেখে দেয় আবার। ঘুমন্ত আদিবাকে দেখতে খুব মায়াবী লাগছে তাই রাহিলের আর আদিবাকে জাগাতে ইচ্ছে করছেনা। রাহিল ধীরে ধীরে খুব যত্নসহকারে আদিবাকে বালিসে শুইয়ে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।

আদিবা চোখ খুলে দেখে সে বালিসে, পাশে তাকিয়ে দেখে রাহিল নেই।
আরে কোথায় গেলেন উনি? কয়টা বাজে?
হাতে মোবাইল নিয়ে দেখে মাত্র ৬টা। কয়েকদিন ধরে এই বোতাম ফোনটাও ডিস্টার্ব করতেছে। অনেক পুরোনো মোবাইল কিনা। ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে যখন পড়ছিলো তখন একজন থেকে পুরোনো ফোনটা কিনেছিলো টিউশনির টাকা জমিয়ে।

আদিবা উঠে চুপচাপ বেলকনিতে চলে গেলো। সকালের বাতাস গায়ে লাগলে মনটা ফুরফুরে হয়ে যায়। বেশ ভালো লাগে আদিবার। সকালে ভেজা ঘাসে হাঁটতে বড্ড ভালোবাসে আদিবা।

রাহিল রুমে এসে দেখে বিছানা গুছানো, আদিবা নেই।
কোথায় গেলো মেয়েটা এই সকাল সকাল। আদিবা,,, আদিবা
দুই বার ডাকতেই আদিবা দৌড়ে এসে রুমে ঢুকে।
~কি হয়েছে? সকাল সকাল এভাবে ডাকছেন?
কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে আদিবা।
~সকাল সকাল ওড়না ছাড়া এই টিশার্ট পরে বেলকনিতে কাকে শরীর দেখাতে গিয়েছিলে?
একটু কর্কশ কন্ঠে বলে রাহিল।
~ছি আপনি এতো বাজে ভাবে কথা বলছেন কেন? আমি তো একটু সকালের ঠান্ডা বাতাস উপভোগ করছিলাম। এতে মন সতেজ থাকে, আর আপনি,, ছিঃ
~তো ওড়না টা সাথে নিলে কি বাতাস গায়ে লাগতো নাহ?
~আপনার সাথে কথা বলাই বেকার।

এটা বলে আদিবা ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াতেই হাতে হেঁচকা টান অনুভব করে। রাহিল একটানে আদিবাকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেই। দু’জনের নিঃশ্বাস ভারী হচ্ছে, একে অপরের নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছে স্পষ্ট। রাহিলের গরম নিঃশ্বাস আদিবার মুখে পরতেই কেঁপে কেঁপে উঠে আদিবা।

~ক কি করছেন আপনি? ছাড়ুন আমায়।
~তুমি তো এটাই চাও,, তাই
~বলছিতো ছাড়ুন আমায়।
রাহিলকে পুরো কথা বলতে না দিয়ে একটু চিল্লিয়ে কথাটি বলে আদিবা।

চরম রাগ উঠে যায় রাহিলের। সে কিছু চিন্তা না করেই ঠোঁট ডুবিয়ে দেয় আদিবার ওষ্ঠদ্বয়ে। বরফের মতো জমে যায় আদিবা, আদিবা এমন কিছুর জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা।

প্রায় ১০মিনিট পর রাহিল আদিবাকে ছেড়ে দিয়ে বেলকনিতে চলে যায় দ্রুত পায়ে হেঁটে। আদিবা শক্ত হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ তারপর ধীর পায়ে এগিয়ে যায় ওয়াশরুমের দিকে।



রাহিল চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে বেলকনির রেলিং ধরে।
সরি রেশমা বিশ্বাস করো আমি এমন কিছু মোটেও করতে চায়নি, আমি ওকে অনুভব করিনা, আমার অনুভবে শুধুই তুমি। হয়তো তুমি নেই এই পৃথিবীর বুকে কিন্তু এই বুকে অনন্তকাল শুধু তুমিই রবে। ভালোবাসি তোমায়।।।।
তুমি তো জানোই রাগ উঠলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনা, কি করি তখন তা নিজেরই অজানা। প্লীজ ক্ষমা করে দাও আমায়, আর কখনো আদিবাকে স্পর্শ করবো নাহ।

বিড়বিড় করে কথাগুলো বলছে রাহিল, কথাগুলো বলতে বলতে গলা ধরে আসছে রাহিলের। ভেতরটা যেন ভেঙ্গে চূর্ণ চূর্ণ হয়ে যাচ্ছে তার। কে বলেছে পুরুষ রা কাঁদেনা, পুরুষদের কলিজা শক্ত, তীব্র ব্যাথায় একজন কঠোর পুরুষও কাঁদে, রাহিল তার প্রমান।



অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে রাহিল ঠিক তখনই তুলি এসে বলে “আব্বু দাদু আমাতে এত্ততুলা তকলেট দিতে” (দাদু আমাকে এত্তগুলা চকলেট দিছে)
~আচ্ছা তবে চকলেটের লোভেই রাতে পরিটা আব্বুর সাথে ঘুমাতে আসেনি,,
তুলিকে কোলে নিয়ে তুলির নাকে নাক ঘসে বলে রাহিল। কুটকুট করে হাসে তুলি। মুগ্ধ হয়ে মেয়ের হাসি দেখছে রাহিল।

আদিবা রুমে ঢুকে বাবা মেয়ের খুনসুটি দেখে মুচকি হাসে। টিফিন বাক্সটা বিছানায় রাখতে রাখতে বলে “আপনার টিফিন বাক্স রেখেছি এখানে ” বলেই রুম থেকে চলে যেতে নিলো আদিবা। তখনই পেঁছন থেকে ডাক দেয় রাহিল, থেমে যায় আদিবা।

আদিবা রাহিলের দিকে না তাকিয়েই বলে “কিছু কি বলবেন?
~হুম এদিকে এসো।
ঢুক গিলে আদিবা, কি বলবেন উনি? আবার বকাঝকা করবেনা তো? কিন্তু এখন তো আমি কোনো ভুল করিনি।।
সাতপাঁচ চিন্তা করে ধীর পায়ে রাহিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় আদিবা।

~তোমার ফোনটা কোথায়?
~কেন?
~দাও আমায়

আদিবা আর কথা না বাড়িয়ে আধভাঙা ফোনটা এনে রাহিলের হাতে দেয়। রাহিল তুলিকে আদিবার কোলে দিয়ে কাবাড থেকে একটা বাক্স বের করে সোফায় গিয়ে বসে। নিহান এসে বায়না করে তুলিকে নিয়ে যায়, ছাদে যাবে বলে।
আদিবা রাহিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়, রাহিল আদিবার ফোন থেকে সিম টা খুলে নেয় তারপর বাক্স থেকে একটা বড় টাচ মোবাইল বের করে সেটাতে সিম আর একটা মেমোরি সেট করে দেয়।

আদিবা হা হয়ে দেখছে শুধু।

~নাও আজ থেকে এই ফোনটা তোমার,
আদিবার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে রাহিল।
~আ আসলে আমি তো পারিনা।
আমতাআমতা করে বলে আদিবা।
~কি পারোনা তুমি?
~এগুলো কিভাবে ব্যবহার করে জানিনা আমি।
মাথা নিচু করে বলে আদিবা।
~সমস্যা নেই, আমি রাতে এসে শিখিয়ে দিবো, এখন অফিসের দেরি হচ্ছে আমার।
এটা বলেই চলে যায় রাহিল।

রাহিলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে আদিবা।
উনি আমায় নিয়ে ভাবছে, তবে আর বেশি দূরে নয় সেই শুভ ক্ষণ, যখন উনি রাগ করে নয় ভালোবেসে কাছে টেনে নিবেন আমায়। খুশিতে চোখে পানি চলে আসে আদিবার।



একা একা ছাদে কি করছো নিহান ভাই, আর তুলি কোথায়?
~ওই যে একমনে ফুল দিয়ে খেলছে আপনার মেয়ে,, ভাবি আপনি আমায় ভাইয়া না ডেকে নাম ধরেই ডাকতে পারেন, সমস্যা নেই ।
~নাহ ভাই, তুমি সম্পর্কে আমার ছোট হলেও বয়সে আমার বড়, এভাবে নাম ধরে ডাকা ভালো দেখায় নাহ।
~আচ্ছা আপনি যা ভালো বুঝেন।
~তো আজ কলেজ নেই তোমার? শোভা আপু তো চলে গেছে সেই কবে।
~নাহ ভাবি আজ আমার ক্লাস নেই।
~ও আচ্ছা।
~ভাবি আপনি আবার পড়াশোনা শুরু করলে ভলো হতো, আপনার তো ইন্টার সার্টিফিকেট আছেই।
~নাহ ভাই, এখন শুধু সংসার নিয়ে থাকতে চাই, তুলিকে নিয়েই এখন আমার সবকিছু। এখন আমি পড়াশোনা শুরু করলে ওর অযত্ন হতে পারে আর তা আমি মোটেও চায়না।
কথাগুলো বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আদিবা, খেয়াল করে নিহান সেটা। নিহান কিছু বলতে চেয়েও বলল না আর।



তুলিকে কোলে নিয়ে আদিবা নিচে চলে যায়।
নিহান আরো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে ছাদের রেলিং ধরে। খুব মনে পরছে শিরুফার ফর্সা চেহেরাটা তার। শিরুফাকে দেখতে এতোই সুন্দর লাগে যে যেকেউই প্রথম দেখায় প্রেমে পরে যাবে ওর। নিহানও এখন সেই জলে সাঁতার কাটছে।
ইস্ শিরুফা যদি থেকে যেতো কয়েকদিন, বেশ ভালো হতো।



সন্ধ্যায় রোকেয়া বেগম, তুলি, শোভা, আদিবা সবাই ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছিলো, রমজান সাহেব আর রাহিল ঘরে আসতেই রোকেয়া বেগম স্বামীর পেঁছন পেঁছন রুমে চলে যায়, কিছুক্ষণ পর আদিবাও চলে যায় রাহিলের জন্য কফি বানাতে।

শোভা তুলিকে জড়িয়ে ধরে বলে “আজ সিঙ্গেল বলে”

তখনই রান্না ঘর থেকে চিৎকার করে উঠে আদিবা, শোভা তুলিকে সোফায় বসিয়ে রেখে দৌড়ে গিয়ে যা দেখলো শোভার চোখ যেন কপালে উঠে গেলো, সে আতংক হয়ে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে ভাই, বাবা-মা সবাইকে ডেকে নিয়ে আসে ____

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here