অনুভবে_তুমি,পর্বঃ৬,৭

0
1920

অনুভবে_তুমি,পর্বঃ৬,৭
ফারজানা_আক্তার
পর্বঃ৬

সবাই এসে দেখে শোভা হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আর আদিবা দাঁড়িয়ে আছে যে টেবিলে গ্যাসের চুলা রাখা আছে সেই টেবিলে। রাহিল আদিবার সামনে গিয়ে চেঁচিয়ে বলে “কি হচ্ছে এসব আদিবা? তুমি কি ছোট বাচ্চা? কমনসেন্স নেই তোমার?

আদিবা কিছু বলেনা। চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, চোখেমুখে প্রচুর ভয় দেখা যাচ্ছে আদিবার। রোকেয়া বেগম রাহিলকে বলে ” আহ্ বাবা কেনো বকছিস মেয়েটাকে শুধু শুধু? দেখ তো ভয়ে আছে মেয়েটা, দেখি নামা ওকে টেবিল থেকে?

~আমি কেনো নামাবো? যেভাবে উঠছে সেভাবে নামবে।
শক্ত গলায় বলে রাহিল, মনে মনে ভাবে “রেশমাকে প্রমিস করেছি আদিবাকে আর কখনো স্পর্শ করবো নাহ।

নিহান গিয়ে নামায় আদিবাকে, জোরে জোরে শ্বাস নেই আদিবা। সবাই জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে, কেন সে টেবিলের উপরে উঠে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু আদিবা কিছু না বলে চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে, শোভা এগিয়ে এসে আদিবার পাশে দাঁড়িয়ে হাসতে হাসতে বলে “ইঁদুরের ভয়ে ভাবি এক লাফে টেবিলে উঠে গেছে, দুই টা ইঁদুর নাকি ভাবির দিকে এগিয়ে আসছিলো আর সেই ভয়ে ভাবি “আর কিছু বলতে পারছেনা হাসির জন্য শোভা। রমজান সাহেব সহ সবাই কুটকুট করে হাসতে লাগলো। কিন্তু হাসি নেই রাহিলের মুখে, বেশ গম্ভীর হয়ে আছে রাহিল, আদিবা রাহিলের দিকে তাকাতেই রাহিল হনহন করে নিজের রুমের দিকে চলে যায়।



রাহিল বেলকনিতে বসে বসে ফেসবুকে নিউজফিড দেখছিলো এমন সময় আদিবা এসে কাঁপা কাঁপা হাতে কফির মগ টা এগিয়ে দেয় রাহিলের দিকে, রাহিল শান্তভাবেই জিজ্ঞেস করে “এতো দেরি হলো কেন?

” আসলে আমি মানে……
~থাক আর তোমার আসলে মানে বলতে হবেনা, যাও সকালে যে ফোন দিয়েছিলাম সেটা নিয়ে আসো।

আদিবা বাধ্য মেয়ের মতো ফোনটা এনে রাহিলের হাতে দেয়। রাহিল কফি খেতে খেতে সব শিখিয়ে দিলো আদিবাকে, আদিবা খুব খুশিমনে শিখে নিলো সব।



খাবার টেবিলে সবাই বসে রাতের খাবার খাচ্ছিলো, আদিবা তুলিকে খাইয়ে দিয়ে ঘুম পারিয়ে এসে সেও বসলো সবার সাথে। রমজান সাহেব বলল “আদিবা মা তোমার কি এখানে ভালো লাগছে? কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো তোমার?

” নাহ আব্বু ঠিক আছি আমি।
রাহিল খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে আঁড়চোখে তাকায় আদিবার দিকে।

“রাহিল
রমজান সাহেব মুখে ভাত পুরে দিয়ে ডাকলো রাহিলকে।
” জি আব্বু।
মাথা তুলে বাবার দিকে তাকিয়ে বলে রাহিল।
“আগামীকাল অফিসে যাওয়া লাগবেনা তোর, তুই বরং আগামীকাল বউমা কে নিয়ে একটু ওর বাবার বাসা থেকে ঘুরে আয়। মনটা ফুরফুরে থাকবে ওর।
” বাবা নিহান তো ফ্রী আছে, নিহান নিয়ে গেলে হবেনা?
“নাহ হবেনা, আদিবা নিহানের নয় তোর স্ত্রী, তাই তোকেই নিয়ে যেতে হবে।

আর কিছু না বলে দ্রুত খাওয়া শেষ করে উঠে চলে যায় রাহিল, আদিবা এতক্ষণ চুপচাপ সব শুনছিলো।
খাওয়া শেষে আদিবা রুমে এসে দেখে রাহিল নেই, বেলকনি ওয়াশরুম সব জায়গা দেখেছে, কোথাও নেই।
কোথায় গেলেন উনি, সবসময়ই তো বেলকনিতে থাকেন তবে আজ কোথায় গেলো। ছাদে নয় তো, একবার গিয়ে দেখে আসি নয়তো মনটা ছটপট করবে ভীষণ।



আদিবা ছাদে গিয়ে দেখে রেলিং ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাহিল।

“বিশ্বাস করুন আমি রেশমা আপুর জায়গা নিতে চায়না, শুধু নিজের জন্য আলাদা একটা জায়গা বানাতে চায় আপনার মনকুটিরে। আমি জানি আপনি রেশমা আপুকে অসম্ভব ভালোবাসেন, আমি চায়না সেই ভালোবাসার ভাগ, শুধু এইটুকু চায় যে আমাকেও একটু ঠাঁই দিন আপনার হৃদমাজারের কোনো এক কোণে।

রাহিল কথাগুলো শুনে অবাক হয়ে পেঁছনে ফিরে তাকায় আদিবার দিকে, পানি টলমল করছে আদিবার চোখে। রাহিল কিছু না বলে আবার আকাশের দিকে তাকায়।
আদিবা আবারো বলে “থাক আপনার ইচ্ছে না করলে যেতে হবেনা আমাদের ভাঙাচোরা বাসায়,, আমি আর কখনো আপনাকে বিরক্ত করবোনা,, ঘুমাতে আসুন

বলেই আদিবা রুমে চলে যায়। রুমে এসে তুলিকে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পরে আদিবা। কিছুক্ষণ পর রাহিল এসে বিছানা থেকে বালিশটা নিয়ে সোফায় চলে যায়, আবার চোখ যায় তুলির দিকে। তুলির কপালে আলতোভাবে একটা চুমু দিয়ে আবার সোফায় গিয়ে শুয়ে পরে রাহিল। আদিবার চোখেমুখে কান্নার দাগ লেগে আছে, চোখ এড়ালো না রাহিলের।



পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙে আদিবার, চোখ ডলতে ডলতে বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমে যায় আদিবা। ওয়াশরুম থেকে এসে বেলকনিতে চলে যায় সে, সকালের ঠান্ডা বাতাস গায়ে না মাখলে যেন তার দিন শুরু হয়না তবে আজ ওড়না নিতে ভুলেনি।
কিছুক্ষণ পর তুলির কান্নার শব্দ পেয়ে দৌড়ে রুমে আসে আদিবা, দেখে রাহিল আগেই গিয়ে কোলে তুলে নেই তুলিকে, আদিবা সামনে আসতেই ওর কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে তুলি আর কান্নাও বন্ধ হয়ে যায়, রাহিল আদিবার আর বুঝতে বাকি রইলো না তুলি কেন কান্না করছিলো, চোখ মেলে আদিবাকে পাশে দেখতে না পেয়েই তুলির এতো কান্না।

রাহিল কিছু না বলে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায়। আদিবা তুলিকে নিয়ে নিচে চলে যায়।



রাহিল অফিসে যেতে চাইলেও রোকেয়া যেতে দেয়না, আদিবা অনেক বলেছে সে নিহান আর শোভাকে নিয়ে চলে যেতে পারবে কিন্তু কার কথা কে শোনে, রোকেয়া বেগম এর একটাই কথা রমজান সাহেব যেটা বলেছে সেটাই হবে, রাহিলকেই যেতে হবে আদিবার সাথে।

তুলি তো মহা খুশি বেড়াতে যাবে, শোভা তুলিকে নিয়ে যায় তৈরি করে দেওয়ার জন্য। আদিবাও যায় তৈরি হতে।
হালকা বাদামি রংয়ের একটা গাউন পড়েছে আদিবা, জামার রংয়ের সাথে যেন গায়ের রং মিলে গেছে।
আদিবা জামা পড়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই রাহিলের চোখ আঁটকে যায় ওর দিকে তাকিয়ে। নিজের অজান্তেই রাহিল বলে “নিদারুণ ”

আদিবা রাহিলের দিকে না তাকিয়েই আয়নার সামনে গিয়ে তৈরি হয়ে নেই, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক, চোখে কাজল, ব্যাস এইটুকুতেই অপূর্ব লাগছে আদিবাকে। চুলগুলো খোঁপা করে নেই আদিবা, বেশ গরম পরছে এই কয়দিন।

শোভা তুলিকে কোলে নিয়ে রুমে আসতেই বলে “এমা… ভাবি তুমি খোঁপা করছো কেনো? ভাইয়া তো খোলা চুল পছন্দ করে।
” আমাকেই তো পছন্দ করে না, আমার চুল তো অনেক দূরের কথা।
বিড়বিড় করে কথাটি বলে আদিবা, শোভা খেয়াল করেনি আদিবার কথাটি কিন্তু রাহিল ঠিকই খেয়াল করেছে।

তুলি শোভার কোল থেকে নেমে বিছানায় বসে পুতুল দিয়ে খেলতে লাগলো।
শোভা চলে যেতে নিয়ে আবার পেঁছন ফিরে আদিবার দিকে তাকিয়ে বলল “ভাবি আপনাকে তো আম্মু শাড়ী একটা দিয়েছে ওখানে পড়ে যাওয়ার জন্য তবে আপনি এটা কেন পড়েছেন?

” আসলে আমি তো শাড়ী পরতে পারিনা।
আমতাআমতা করে বলে আদিবা।
“তাতে কি ভাইয়া তো পারে, ভাইয়া ভাবিকে সুন্দর করে শাড়ীটা পরিয়ে দাও নয়তো কিন্তু আম্মু ভীষণ বকবে।

~শোভা আপু তুমি এখনো তৈরি হওনি কেন? তুমি না গেলে কিন্তু আমিও যাবোনা।
বায়না করে বলে আদিবা।
~এই তো ভাবি এখনই তৈরি হতে যাচ্ছি, এই পিচ্চিটারে তৈরি করতেই তো যত সময়।
হাসে দুজনে।

এটা বলেই শোভা চলে যায় সেখান থেকে আর তুলিকেও নিয়ে যায় আবার।

রাহিল রাগী চোখে আদিবার দিকে তাকাতেই আদিবা বলে “থাক লাগবেনা, এমনিতেই শাড়ী পড়ে হাঁটতে কষ্ট হয় আমার। আমি নিচে আছি, আপনি আসুন।
এটা বলেই আদিবা রুম থেকে বের হতে নিলেই রাহিল বলে উঠে ” আর এক পা-ও এগোবেনা, দরজা বন্ধ করে আসো।
ভয়ে ঢুক গিলে আদিবা,

“কি বলছি কানে দিয়ে যায়না? দ্রুত দরজা বন্ধ করে শাড়ীটা বের করো।
একটু চিল্লিয়ে বলে রাহিল কথাটি। ভরকে যায় আদিবা।

আদিবা দরজা বন্ধ করে কাবাড থেকে শাড়ীটা বের করে।
” যাও ব্লাউজ আর পেটিকোট পড়ে আসো ওয়াশরুম থেকে।
আদিবা সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়। শাড়ী রাহিলের হাতেই রয়ে গেছে। ব্লাউজ পেটিকোট পড়ে গায়ে একটা ওড়না জড়িয়ে রুমে আসে আদিবা, রাহিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় সে, পুরো শরীর কাঁপছে তার।

“ওড়না সরাও।
“এ্যাঁ
” ষ্টুপিড, ওড়না না সরালে শাড়ী পরাবো কিভাবে?
দাঁত গিজগিজ করে বলে রাহিল।
“আগে ওইদিনের মতো চোখ বাঁধুন।
” তার প্রয়োজন নেই।
রাহিলের কথাটি শুনেই রসগোল্লার মতো বড় বড় চোখ করে রাহিলের দিকে তাকায় আদিবা।
রাহিল কিছু না বলে আদিবার ওড়না টান দিতেই______

চলবে

#অনুভবে_তুমি
#পর্বঃ৭
#ফারজানা_আক্তার

রাহিল আদিবার ওড়না টা আলতোভাবে সরিয়ে নেই আদিবার গায়ে থেকে, চট করে চোখ-মুখ খিঁচে ফেলে আদিবা।
~আরে চিল, ওড়না ছাড়া বেলকনিতে গিয়ে পরপুরুষ রে দেখাতে পারলে আমার সামনে এতো নাটক কিসের?
শাড়ী পড়াতে পড়াতে বলে রাহিল।
~ছি এই বয়সে এসেও এতো বাজে আপনার মাইন্ড,, আপনার থেকে তো ইয়াং বয়সের ছেলেদের চিন্তাভাবনা অনেক ভালো।
রাহিলের চোখে চোখ রেখে বলে আদিবা, ভয়কে জয় করতে শিখে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।
~তো কোনো ইয়াং বয়সের ছেলেকে বিয়ে না করে এক বাচ্চার বাবাকে বিয়ে করতে আসলে কেন?
শাড়ীর কুঁচি ধরতে ধরতে বলে রাহিল।
~এটা তো আমার কপাল,
নিজের কপালে নিজেই থাবর দিয়ে বলে আদিবা।

~নাও কুঁচি গুঁজে নাও।



গাড়িতে সামনের সিটে রাহিলের পাশে আদিবা বসে আর শোভা তুলিকে নিয়ে পেঁছনে বসে।

গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার আগে রাহিল আদিবার দিকে তাকিয়ে বলে “বেল্ট টা পড়ে নাও।
আদিবা কিছু না বলে রাহিলের দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে, আসলে আদিবা বুঝেনি রাহিলের কথা কারণ আজকে ফার্স্ট ও এমন গাড়িতে উঠেছে, তবে বিয়ের দিনও উঠেছিলো কিন্তু সেদিন পেঁছনে বসেছিলো। আর আগে তো রিক্সা,টেক্সি এসবই ছিলো আদিবার যাতায়াতের সঙ্গী,, একটা কথা না বললেই নয় “ভাগ্য মানুষকে কোথায় থেকে কোথায় এনে দাঁড় করিয়ে দেয় সেটা কেউই বলতে পারেনা”

~কি হলো,মশা ঢুকবে তো মুখে, এভাবে হা হয়ে আছো কেন?
~আসলে আমি বুঝতে পারিনি আপনি কি বলেছেন।
~বুঝোনি মানে কি?
ভ্রু কুঁচকে বলে রাহিল।
~আমি কুঁড়েঘরের মেয়ে, এসব গাড়িতে উঠা তো দূরের কথা এসব গাড়ি কখনো ছুঁয়েও দেখিনি আমি।
মাথা নিচু করে মন খারাপ করে বলে আদিবা।

~সরি
রাহিল ধীর কন্ঠে এটা বলে আদিবাকে, আদিবা এখনো মাথা নিচু করে আছে, রাহিল আদিবার দিকে একটু ঝুঁকে গাড়ির সিটবেল্ট বেঁধে দেয়, হকচকিয়ে যায় আদিবা।

গাড়ি চলছে আপন মনে, কিছুক্ষণ পর তুলি একটা দোকান দেখে বলে “আমি চকলেট খাবো”
রাহিল দ্রুত গাড়ি থামিয়ে তুলি আর শোভার জন্য চকলেট নিয়ে আসে, শোভার হাতে চকলেট দিয়ে গাড়িতে উঠে আদিবার হাতে একটা চকলেট ধরিয়ে দেয়, আদিবা অবাক হয়ে তাকায় রাহিলের দিকে।

~এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? চকলেট কি পছন্দ করো না?
গাড়ির সিটবেল্ট বাঁধতে বাঁধতে বলে রাহিল।
~নাহ আসলে এতো দামি চকলেট।
~চিল, তোমার বুইরা বর এতোও কিপটা নয়।

শোভা মুচকি হাসে ভাই ভাবির কথা শুনে, আদিবা সেটা খেয়াল করে আর মুহুর্তেই লজ্জায় লাল টুকটুকে হয়ে যায় মুখটা।



আদিবাদের কুঁড়েঘরে বসে আছে রাহিল তুলিকে কোলে নিয়ে, মাত্র দুই রুমের ঘর, আদিবা শোভাকে নিয়ে ভেতরের রুমে গেছে। ততক্ষণে শিরুফা এসে তুলি আর জিজুর সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছে।

আদিবার মা বাবা বেশ ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে শোভা আর রাহিলের জন্য খাওয়া দাওয়ার আয়োজন নিয়ে। আদিবা শোভাকে শিরুফাদের সাথে আড্ডা দিতে বলে মায়ের কাছে রান্না ঘরে চলে যায়।
ওরা সবাই বসে চায়ের সাথে আড্ডা দিচ্ছে, শিরুফা মনে মনে ভাবছে “ইস্ এই আড্ডায় নিহানসহ থাকলে মন্দ হতো না”

~আম্মু দেখি সরে আসো তুমি, আজকে আমি রান্না করি।
~নাহ মা, কয়দিন পর তুই বাড়িতে আসছিস, তুই আজকে কাজ করতে হবেনা, যা মা সবার সাথে বসে খুশগল্প কর।
আদিবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন শাহানা বেগম।
~আরে আম্মু আমি তো ওই বাড়িতে সারাক্ষণ শুয়ে বসেই দিন কাটায়, ওখানে কাজের লোক আছে তাই কোনো কাজ করতে হয়না আমাকে, আর রান্নাটা শ্বাশুড়ি আম্মু করে, আমি শুধু একটু সাহায্য করি তাও উনি করতে দেয়না তেমন। তাই আজকে আমিই রান্না করবো, তুমি অন্য কাজ দেখো।

মেয়ের কথা শুনে খুশিতে কান্না করে দিলেন শাহানা বেগম, আদিবা বেশ বুঝতে পারছে মায়ের অনুভূতি, খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আদিবা তার মাকে।

রাহিল আঁড়াল থেকে সব শুনে মুচকি হাসলো। রাহিল ফোনে কথা বলতে বলতে রান্নাঘরের দিকে কখন চলে গেছে সে নিজেও জানেনা, শাহানা বেগম কে রান্না ঘর থেকে বের হতে দেখে রাহিল দ্রুত সেখান থেকে চলে যায়।



সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেলো, আদিবা এখনো রান্না ঘরে, ঘামে ভিজে একাকার সে। রান্না শেষ করে রান্না ঘর থেকে বের হতেই রাহিলের চোখাচোখি হয় আদিবার সাথে, রাহিল উঠোনে দাঁড়িয়ে ছিলো বাতাসে, ঘরে প্রচন্ড গরম তাই।
আদিবা কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই রাহিল হাত ধরে ফেলে আদিবা, ভরকে যায় আদিবা।

~ছাড়ুন কেউ দেখবে।
এক হাত দিয়ে শাড়ীর আঁচল দিয়ে মুখ মুচতে মুচতে বলে আদিবা।
~দেখলে দেখুক, তোমার এই অবস্থা কেন? এখন তো গোসল করা প্রয়োজন তোমার কিন্তু কাপড় তো আনা হয়নি।
~সমস্যা নেই, শিরুর জামা একটা পড়ে নিবো।
~এই শিরু কে আবার?
চোখ বড় বড় করে বলে রাহিল।
~শিরুফা
~ওও তাই বলো, আচ্ছা যাও গোসল সেরে আসো।
~আমার হাত??
একটু নড়েচড়ে বলে আদিবা।
~ওও সরি, যাও
আদিবার হাত ছেড়ে দিয়ে বলে রাহিল।

আদিবা ঘরের দিকে পা বাড়ালো।
শিরুফা আর শোভা দরজায় দাঁড়িয়ে সব দেখছিলো আর হাসছিলো,

~এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসতেছো কেন তোমরা?
হঠাৎ আদিবার কথায় চমকে উঠে দুজন। ওরা খেয়ালই করেনি আদিবা কখন চলে আসছে, কারণ ওরা দুজন একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসছিলো আর দুষ্টুমি করছিলো।

~আসলে আপু আমরা তো এমনি হাসাহাসি করতেছিলাম।
শিরুফা আদিবার গলা জড়িয়ে ধরে বলে।
শোভা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসছিলো।

~আচ্ছা শোভা তুলি কোথায়?
শোভার দিকে তাকিয়ে বলে আদিবা।
~ভাবি তুলি তো ঘুমিয়ে গেছে।
~কি বলো? এই সময় তো ও কখনো ঘুমাইনা।
~আসলে ভাবি আজকে জার্নি হয়ছে তো তাই ঘুমিয়ে গেছে, তোমাদের বাড়ি তো আর কম দূরে নাহ।
~ও আচ্ছা।

আদিবা শিরুফার থেকে একটা জামা নিয়ে পুকুরে চলে গেলো গোসল করতে, পেঁছন পেঁছন রাহিলও গেলো কিন্তু আদিবা খেয়াল করেনি।

আদিবা পুকুর ঘাটে গিয়ে শাড়ী খুলতেই দেখে রাহিল হা হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
শাড়ীটা কোনোরকমে পেঁচিয়ে উপরে উঠে এলো আদিবা।
~আপনি এখানে? কিছু কি লাগবে আপনার?
রাহিলের সামনে এসে বলে আদিবা।
~ হ্যাঁ লাগবে তো।
~কি লাগবে?
তোমাকে যত দেখি ততই আমি মুগ্ধ হয়।
মনে মনে বলে রাহিল।
~মানে যাও গোসল করো। আমি একটু এদিক ওদিক হেঁটে দেখি ততক্ষণে।
রাহিল চলে যায় অম্যদিকে, আদিবা দ্রুত গোসল সেরে নেই।



দুপুরে সবাই মিলে খেতে বসছে, একটা শীতল পাটি বিছিয়ে বসেছে সবাই, রাহিলের একটু অসুবিধা হলেও সে কাউকে বুঝতে দেয়নি।
রাহিল খাবার মুখে দিয়েই আদিবার দিকে তাকালো, চোখে পানি টলমল করছে রাহিলের, কেউ দেখার আগেই মুছে ফেলে। আজ প্রথম সে আদিবার হাতের রান্না খাচ্ছে।
কিভাবে সম্ভব এটা? সবকিছু কিভাবে মিলে যায়? রেশমা কি আদিবার রুপে এসেছে আমার কাছে পুনরায়? নাহ এগুলো আবেগের ভাবনা, আর এটা আমার মোটেও আবেগের বয়স নয়।

~মাছ আরেকটা দিবো আপনাকে?
আদিবার কথায় ভাবনার ঘোর কাটে রাহিলের। হকচকিয়ে উঠে রাহিল।
~নাহ আর লাগবেনা।
~কেন? রান্না ভালো হয়নি বুঝি?
লাজুক সুরে রাহিলের দিকে তাকিয়ে বলপ আদিবা, রাহিল কিছু বলেনা, মুখটা গম্ভীর করে রেখেছে। আদিবার মন খারাপ হয়ে যায়।
শাহানা বেগম বলেন “আপনাদের ভালো করে আপ্যয়ন করতে পারিনি, গরিবের ঘরে এসে এই গরিবি খাবার খাওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ তোমাদের।
মুখে একটু হাসির রেখা টেনে বললেন শাহানা বেগম।
শোভা কিছু বলেনা, শুধু গোল গোল চোখ করে তাকায় শাহানা বেগমের দিকে, শোভার তো ভালোই লাগছে সবকিছু, বিশেষ করে পুটিমাছ ভাজা টা।

রাহিল শ্বাশুড়ির দিকে তাকিয়ে বলেন ” নাহ মা, এতই পর করে দিবেননা আমাদের, এখন আমরা সবাই একই পরিবারের, আর এই খাবার গরিবি নয় বড় বড় ধনীরাও আজকাল এভাবে সম্মান দিতে পারেনা যা আপনরা দিচ্ছেন এই অল্প সময়ের মধ্যে।
রাহিলের কথা শুনে শাহানা বেগম আর রহিম সাহেব এর চোখে পানি চলে আসছে খুশীতে। মনে মনে তারা এটাই ভাবছে যে ভাগ্য করে এমন জামাই পেয়েছে।
আদিবা কিছুক্ষণ অবাক চোখে রাহিলের দিকে তাকিয়ে ছিলো, মানুষটা খুব সরল মনের।

শোভা আদিবার দিকে তাকিয়ে বলে “ভাবি একটা কাঁচা মরিচ হবে?
আদিবা মুচকি হেসে বলে ” হুম।
আদিবা শিরুফাকে বলে উঠোনের মরিচ গাছ থেকে একটা মরিচ আনতে। শিরুফা হাসিমুখেই মরিচ আনতে যায়।

অপেক্ষা কী ছিলো আমার? নাকি ভুলে গেছেন? দেখে তো মনে হচ্ছে বেশ খুশিতে আছেন আজকে।।।

হঠাৎ কারো এমন কথা শুনে চমকে উঠে শিরুফা, সে দ্রুত পেঁছনে ফিরে তাকিয়ে হকচকিয়ে যায়।
শিরুফা চোখ বড় বড় করে বলে “আপনি?????

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here