গল্পঃ পরিণতি,পর্বঃ ৩

0
2356

গল্পঃ পরিণতি,পর্বঃ ৩
লেখাঃ কামরুল ইসলাম ইথান

সেদিন ইথান মেয়েটাকে ধর্ষন করে ছিল আর আমি ধর্ষণ করতে ইথানকে সাহায্য করেছিলাম।
সুমনের সব কথা শুনে রানা বলল,
– তো, কি হইছে এখন? এই ঘটনা বলার জন্য নিয়ে চলে আসলি আমাকে?
– সে দিনের মেয়েটা আর কেউ না, ইথানের বউ।
– কি! ইথান ধর্ষণ করে আবার এই মেয়েকেই বিয়ে করছে?
– আরে ও তো রাতকানা রোগে আক্রান্ত ছিলো। সে রাতে ভালো করে দেখে না, তাই হয়তো বিয়ে করে নিয়েছে।
– তাহলে ইথানের বউ তোকে বা ইথানকে কেন চিনলো না?
– মুখ ঢাকা ছিলো সে দিন, এত কথা বাদ দে ইথানকে এইসব বলিস না। বললে হয়তো ইথান খুব কষ্ট পাবে তারচেয়ে এসব না জেনেই ওরা দুজনে ভালো থাক।

সুমন আর রানা যার যার বাড়ি চলে গেলো। কয়েকদিন বাড়ি থেকে আবার চলে গেলো ঢাকায়। এই কয়েকদিনে একবারও রানা বা সুমন কেউ আমাদের বাড়ি আসেনি।

এদিকে আমি শুধু সময় গুনছি কখন বাচ্চা হবে আর প্রাচীকে ডিভোর্স দিব। আমি যে আর ভার্জিনহীন মেয়ের সাথে থাকতে চায় না। কয়েক মাস পরই প্রাচীর বাচ্চা হবে তাকে হাসপাতাল নিয়ে গেলাম, সেদিন ছেলে সন্তান হলো। ছেলে সন্তানের উপর আমার কোন আগ্রহ নেই।

প্রাচীর সামনেই ডাক্তার কে জিগ্যেস করলাম,
– ডাঃ প্রাচী সুস্থ হতে কয়দিন লাগবে?
– ১৫-১৬ দিন!
– আচ্ছা

প্রাচী অবাক চোখে তাকিয়ে রইল আমার দিকে। সে হয়তো ভাবছিল, বাচ্চা হয়ে গেলে আমি আর ডিভোর্স দিব না। আমার সেই আগের কথাই যে ভার্জিন না তাকে আমি রাখবো না।

প্রাচী সুস্থ হয়ে গেলে, প্রাচীকে বাড়ি না নিয়ে চলে গেলাম কোর্টে। প্রাচীকে যে ডিভোর্স দিতে হবে। বিচারক বলে, এই বাচ্চার সকল খরচ ইথানের দিতে হবে। এ কথা শুনে আমি বলি, আমি বাচ্চার বাপ না, এই বাচ্চা অন্য কারো।

বিচার জানতে চাইলো এটাই প্রাচীকে ডিভোর্স দেওয়ার কারন কিনা? আমি সেদিন বলেছিলাম, আমার বউ সতী না আর এই কারণেই ডিভোর্স দিতে চাই, আমি এই বাচ্চাও চাই না।

বিচারক এবার প্রাচীর কাছে জানতে চাইলো, ইথানের সাথে কি থাকতে চাও! প্রাচী বলে, আমি আর কি বলবো আমিও চাই দুজন আলাদা হয়ে যাই। দুজনের কথা শুনে বিচারক বলে,

– বাচ্চাকে ইথান ১লাখ টাকা দিবে আর প্রাচী যেহেতু নিজেই ডিভোর্স চাই তাই প্রাচীকে কোন প্রকার জরিমানা দিতে হবে না।
বিচারকের মুখে জরিমানার কথা শুনে বললাম,
– এই সন্তান আমি মানি না তাই টাকা ও দিতে পারবো না।
বিচারক প্রাচীর দিকে তাকিয়ে বলে,
– প্রাচী, তুমি কি টাকা চাও বাচ্চার জন্য!
প্রাচী আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
– আমার কিছু লাগবে না।

বিচারক প্রাচীর আর আমার ডিভোর্সের সকল কাগজ রেডি করে দিল। বিচারক আমার আর প্রাচীর কাছ থেকে ডিভোর্সের কাগজে সাক্ষর করিয়ে নিল। আমি আর প্রাচী ডিভোর্সের কাগজে সাক্ষর করে দিলাম, আমরা এখন আলাদা কারো উপর আর কোনো অধিকার নেই।

প্রাচী বাচ্চাটা কোলে নিয়ে কোর্ট থেকে বের হচ্ছে। যদিও আমি তার পিছনে একটু দূরে ছিলাম। প্রাচী যখনই কোর্টের বাহিরে আসলো তখনই কেউ একজন বলল,

– প্রাচী, কেমন আছো তুমি?
কন্ঠটা শুনে পিছনে ফিরেই প্রাচী অবাক,
– রাজিব তুমি এখানে?
– একটা জমির ব্যাপারে কোর্টে আসছি।
– তোমার বউ কেমন আছে?
রাজিব অপরাধী ভঙ্গিতে বলে,
– ভালো, তুমি বিয়ে করেছো তো?
– কোলে দেখো না?
– তা ওনি কই?
– আছে, আজ আমি যাই।

প্রাচী মাথা নিচু করে পথচলা শুরু করে। রাজিব অবাক চোখে দেখছে প্রাচীর পথ চলা। রাজিব ভিতর যাওয়ার সময়ই ডাক দিলাম আমি,

– এই যে শুনেন!
রাজিব দাঁড়ালো আর আমার দিকে কিছুটা এগিয়ে এসে বলে,
– আমাকে ডাক দিলেন যে?
– একটু কথা বলার ছিল!
– বলেন?
– আচ্ছা, একটু আগে যে মেয়েটার সাথে কথা বললেন তাকে চিনেন?
– হুম, ও আমার পুরাতন প্রেমিকা!
আমি কিছুটা অবাক হয়ে বললাম,
– মানে?
– এখন থেকে প্রায় বছর খানেক আগে, আমি আর প্রাচী প্রেম করতাম। আমাদের প্রেম চলাকালীন আমার পরিবার প্রাচীর মা-বাবাকে বিয়ের কথা বলে তখন প্রাচীর বাবা-মা আমার কাছে বিয়ে দিতে রাজি হয় নি। আমি তখন প্রাচীকে পালিয়ে বিয়ে করার কথা বলি কিন্তু প্রাচী রাজি হয়নি। পরে বাধ্য হয়ে বাবা-মার পছন্দ মতো বিয়ে করে ফেলি। তা হঠাৎ প্রাচীর কথা জিগ্যেস করলেন, প্রাচী কি আপনার পরিচিত!

রাজিবের কথায় কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বললাম,
– না, এমনিই।
– আচ্ছা চলি আমার আবার কাজ আছে।

বলেই রাজিব চলে গেলো। রাজিব প্রাচীর পুরাতন প্রেমিক হলে, প্রাচীর কুমারীত্ব কে নষ্ট করছে! এইসব আর ভাবতে পারছিনা, বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পরলাম। আজ থেকে অসতী কোনো মেয়ে থাকবে না আমার পাশে।

অন্যদিকে প্রাচী কোর্ট থেকে বের হয়ে, মা বাবার কাছে ফিরে যায়নি! প্রাচী সোজা ট্রেনে করে চলে আসলো কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকা। প্রাচীর এক চাচাতো ভাই থাকে ঢাকায়, তাকে কল দিলো স্টেশন থেকে নিয়ে যেতে। প্রাচী ঢাকায় পৌঁছে যাওয়ার পর তার চাচা ভাই নিয়ে গেলো বাসায়।

এদিকে আমি ঘুমানোর কিছুক্ষণ পরই কল আসলো মোবাইলে তাই ঘুম ভেঙে গেলো। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি সুমন কল করেছে। কলটা রিসিভ করতেই সুমন বলল,

– কিরে বন্ধু কি খবর?
– ভালো, তোর!
– আছি ভালোই, ভাবীর কি খবর? বাচ্চা হয়ছে?
– হয়েছে!
– একটা পিক দে ভাতিজার!
সুমনের কথা শুনে নিচু কন্ঠে বললাম,
– আমার কাছে ও নাই।
– নাই মানে?
– আমি প্রাচীকে ডিভোর্স দিয়ে দিছি আজকে!
– কেনো?

আমি সব কিছু খুলে বলতে শুরু করলাম সুমনের কাছে! আমার সব কথা শুনে সুমন বলল,
– মনে পরে, তোর বিয়ের সপ্তাহ খানেক আগে তুই আর আমি রাতে পাশের এলাকায় গিয়েছিলাম।
– হুম, মনে আছে।
– সেদিন তুই একটা মেয়েকে ধর্ষণ করেছিলি আর আমি তোকে ধর্ষণ করতে সাহায্য করেছিলাম, মনে পরে?
– হুম, সব মনে আছে!
– সে দিনের ধর্ষীতা মেয়েটা আর কেউ না, প্রাচী ভাবীই ছিল।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here