“তৃ-তনয়া” পর্ব- ৭১

0
2489

“তৃ-তনয়া”
পর্ব- ৭১
(নূর নাফিসা)
.
.
জহিরুল ইসলাম বাড়ি ফেরার পরদিনই নাহিদা অফিসের কাজকর্মে নিয়োজিত হওয়ার জন্য ইচ্ছা পোষণ করছিলো। অত:পর তিনি ম্যানেজারকে ডেকে গাড়িতে করে পাঠিয়ে দিলেন অফিসটা ঘুরে দেখানোর জন্য। তাদের এমন সব কান্ড দেখে মেহেদীর খুব রাগ হচ্ছিলো! যার ফলে সে আর যায়নি অফিস! সারাদিন বাসায়ই থেকেছে আর নিজের ভ্রান্তিময় কর্মের জন্য মনমরা হয়ে বসে ছিলো বাসায়।
অফিসে নাহিদাকে প্রথমে সিইও, পিএ, ম্যানেজার এবং স্টাফদের ডেস্ক দেখানো হলো। এমন অফিসে তাদের কি কাজ হয় সেটাই তার মাথায় ঢুকছে না! একটা অফিসের কাজকর্ম কি শুধু খাতা কলম আর ফাইল নিয়েই আবদ্ধ থাকে!
ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে সে ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করলো,
– আংকেল, এখানে তো সবাই খাতা কলম নিয়ে ব্যস্ত! কাউকে তো কোনো প্রোডাকশনের কাজ করতে দেখা যাচ্ছে না!
– আছে তো মেডাম। আপনাকে এতোক্ষণ যাবত শুধু অফিসিয়াল কাজকর্মের প্লেসটা দেখালাম। কেননা আপনার কাজ এখানেই সীমাবদ্ধ থাকবে। আপনি কি ফিল্ড ওয়ার্ক দেখতে চান?
– হ্যাঁ।
– তাহলে চলুন, আমরা নিচ তলায় যাই।
ম্যানেজারের সাথে ছয় তলা থেকে লিফটের সাহায্য প্রথম তলায় নেমে এলো নাহিদা। এই হচ্ছে একটা কোম্পানির মূল কর্মস্থল! এখানে মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের অবস্থান! সাধারণ বাতির আলোয় আলোকিত সম্পূর্ণ ভবন! সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত। মাথার উপর বৈদ্যুতিক পাখা চলছে তবুও বেশ গরম! মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ক্ষুধা নিবারণ করছে, সংসারের চাহিদা মেটাচ্ছে শত শত মানুষ! আর উপর তলা ছিলো সচ্ছল! পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন! রকমারি লাইটিং! পরিবেশ শীতল করে রেখেছে এয়ার কন্ডিশনার! এ যেন এক নরক আর সে যেনো এক স্বর্গ! বিষয়টা এমন হয়ে দাড়িয়েছে নাহিদার দৃষ্টিতে! তবে প্রকৃত জীবন দেখতে হলে সেই ছয় তলা নয়, এই প্রথম তলায়ই অবস্থান করতে হবে এবং উপলব্ধি করতে হবে তাদের জীবন ব্যবস্থা। সেই ভেবে দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়লো নাহিদা। সম্পূর্ণ এরিয়া ঘুরে সে আবার ষষ্ঠ তলায় চলে এলো। তাকে জহিরুল ইসলামের কেবিনেই বসার জন্য বললো ম্যানেজার। নাহিদা কেবিনে প্রবেশ করেছে ঠিকই, কিন্তু জহিরুল ইসলামের আসন দখল করেনি। সে বিপরীত দিকের ছোট চেয়ারে অবস্থান করেছে। ওটা তার সম্মানিত শ্বশুরের জন্য বরাদ্দ। সেই সম্মানের জায়গা সে দখল করতে চায় না। তবে নিচু পদে যুক্ত হয়েই নিজেকে একটু স্বাবলম্বী করতে চায়।
আজ তার কাজ কিছুই ছিলো না। শুধু পরিচিত হওয়া আর ঘুরেফিরে দেখাটাই যেন তার কাজ।
বিকেলে বাড়ি ফিরেছে সে। মেহেদীকে বাড়িতেই পেয়েছে। ঘুমাচ্ছিলো মেহেদী। সে চুপচাপ ফ্রেশ হয়ে নামাজ আদায় করে নিলো। সন্ধ্যায় আবার অফিসের গল্প করতে করতে নাহিদা মেহেরুনের সাথে রাতের খাবার তৈরি করে ফেললো। জহিরুল ইসলামকে খাবার দিতে গেলে তখন তিনি জানতে চাইলেন অফিসে কেমন কাটলো তার সময়। নাহিদা উত্তরে জানিয়েছে তার বেশ ভালো লেগেছে।
প্রথম দিন নাহিদা বোরকা হিজাব পড়ে অফিস গেলেও, দ্বিতীয় দিন থেকে শাড়ি আর হিজাব পড়ে অফিস যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। শাড়িতে বেশ সুন্দরী হয়ে উঠে বাঙালি নারী। নিজের কাছেই এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে। শাড়ি পড়লে মনে হয় যেন নতুন করে বাঙালীর ঐতিহ্যের বিকাশ ঘটেছে। আর সে প্রকৃত বাঙালির রূপ ধারণ করতে পেরেছে! যদিও সবসময় সম্ভব হয় না তবুও ভালো লাগে শাড়ি।
নাহিদা যাওয়াতে মেহেদী রাগ করে অফিস না গেলেও পরদিন ঠিকই গিয়েছে। কেননা বাসায় সময় ভালো কাটছে না। অফিসে গেলে সময়ও কাটবে আবার কাজও হবে। যদিও এটা ভালো লাগছে না যে, নাহিদা অফিস যাচ্ছে!
অফিসের জন্য বের হওয়ার পূর্বে বারবার সে তার মাকে বলে গেছে প্রয়োজন হলে যেন কল করে। আর বাবা তো কোনো কথাই বলে না! নাস্তা শেষ করে চালাকি করে সে নাহিদার আগে বেরিয়ে গাড়ি নিয়ে অফিস চলে গেছে! নাহিদা নিচে এসে ড্রাইভারের কাছে জেনে বিরক্ত হলো মেহেদীর উপর! কেননা জহিরুল ইসলাম তাকে শুরুতেই বলে দিয়েছে গাড়িতে আসবে এবং যাবে! কিন্তু এই মেহেদীটা হতে দিলো না তা! এখন যদি তিনি জানতে পারে, তাহলে কি টেনশন করবে না! সেই ভেবে নাহিদা ড্রাইভারকে বলে দিলো জহিরুল ইসলাম জিজ্ঞেস করলে যাতে বলে দেয়, সে মেহেদীর সাথেই অফিস গেছে।
নাহিদা রিকশা নিয়ে একটু লেট করেই চলে এলো অফিস। জহিরুল ইসলামের কেবিনে এসে দেখলো মেহেদী টেবিলের কাছে দাড়িয়ে ফাইল দেখিয়ে দেখিয়ে কথা বলছে ম্যানেজারের সাথে। কারো উপস্থিতি টের পেয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে নাহিদাকে দেখতে পেল সে। তারা কথা বলছে বিধায় নাহিদা বেরিয়ে এসে ডেস্কের সামনে দিয়ে হাটতে লাগলো। কেউ কেউ তাকে দেখে জিজ্ঞেস করছে ভালোমন্দ, সে-ও তার উত্তর দিয়ে যাচ্ছে। সবাই যখন কাজে ব্যস্ত তখন নাহিদার এক রকম বোরিং লাগছে! কেননা, কর্মস্থলে কেবল সে ই এমন অবসর সময় কাটাচ্ছে! কি-ই বা তার কাজ সেটাই তো জানে না! যে জানাবে সে তো মেহেদীর সাথে মিটিংয়ে ব্যস্ত! তিন দিকের সারি সারি ডেস্কগুলোর মধ্যে একটা ডেস্ক ফাকা! স্টাফ আসেনি মনে হয়। বেশ কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকায় নাহিদা সেখানেই বসে পড়লো। ফোনটা নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করলো কিন্তু মন টিকছে না! পরক্ষণে আশেপাশের মানুষদের দেখে দেখে পর্যাবেক্ষণ করতে লাগলো। কে কতটা মনযোগ দিয়ে কাজ করছে, কে কতটা ফাকি দিচ্ছে সবটাই স্পষ্ট ধরা দিচ্ছে চোখে। হঠাৎ কেউ একজন তার সামনে এসে দাড়ালে আৎকে উঠলো নাহিদা! সামনে দাড়িয়ে থাকা লোকটার মুখের দিকে তাকাতেই কিশোর ছেলেটা দাতের পাটি বের করে হাসি দিয়ে বললো,
– মেডাম, আপনের কফি।
নাহিদা একটু নেড়েচেড়ে বসে বললো,
– আমি কি কফি অর্ডার করেছিলাম?
ছেলেটা শব্দসহযোগে হেসে বললো,
– না, মেডাম। তবে স্যারের অর্ডার দেওয়া আছে।
– কোন স্যার?
– ম্যানেজার স্যার।
– ম্যানেজার স্যার কেন অর্ডার করবে! আমি তো উনাকেও বলিনি!
– আপনে না কইলেই কি, বাড়ি থাইকা বড় স্যার তো ঠিকই অর্ডার কইরা দিছে।
নাহিদা হাত বাড়িয়ে কফির কাপটা তার নিজের দিকে টেনে আনলো। ছেলেটা এখনও দাড়িয়ে আছে কেন! না বুঝতে পেরে নাহিদা বললো,
– আপনাকে কি আবার বকশিস দিতে হবে?
– না, মেডাম! দোয়া দিলেই হইবো।
– তাহলে দাড়িয়ে আছেন যে! কিছু বলবেন?
– কফির লগে কি টোস্ট দিমু?
– না, এটাই ঠিক আছে।
– আইচ্ছা। বড় স্যার কিরুম আছে?
– আলহামদুলিল্লাহ। ভালো।
– মেডাম আরেকটা কথা, আপনে খুব সুন্দরী। মাইন্ড কইরেন না, আমি সত্যি কথা কইয়া দেই।
কথাটা বলেই ছেলেটা হাসিমুখেই চলে গেলো। কিন্তু নাহিদা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছে এমন মন্তব্যে! পরক্ষণে কফির মিষ্টি সুবাসে কাপটা হাতে নিয়ে গরম কফিতে চুমুক দিলো। একটা লোককে বেশ কিছুক্ষণ ধরে ফোনে কথা বলতে দেখছে নাহিদা। এই মাত্র মেহেদী আর ম্যানেজারকে কেবিন থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে সাথে সাথেই লোকটা ফোন নামিয়ে নিয়েছে। মেহেদী তার ডেস্ক অতিক্রম করে আসতেই ফোন কানে দিয়ে ফিসফিস করে কিছু একটা বলে কল কেটে ফোন রেখে দিলো! পরক্ষণে কলম হাতে নিয়ে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো! কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে লোকটার চালাকি দেখছিলো নাহিদা। এতোক্ষণে মেহেদী যে তার পাশে চলে এসেছে সেই খেয়ালই নেই তার! ধ্যান ভাঙলো ম্যানেজারের কথায়!
– মেডাম, আপনি স্যারের রুমে গিয়ে বসুন। আমি নিচ থেকে একটু আসছি।
নাহিদা একবার মেহেদীর দিকে তাকিয়ে আবার ম্যানেজারকে বললো,
– না, থাক। এখানেই ঠিক আছি। আপনি যান, আমি এখানেই আছি।
ম্যানেজার চলে গেলো কিন্তু মেহেদী এখানেই দাড়িয়ে থেকে বললো,
– এখানে ঠিক থাকা যাবে না। উঠুন এবং প্রয়োজনে বাসায় গিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমান। অফিসে আপনার প্রয়োজন নেই।
নাহিদা তার দৃষ্টিতে দৃষ্টি রেখে নিচু স্বরে বললো,
– প্রয়োজন আছে কি নেই সেটা আপনার না জানালেও চলবে। নাকে তেল দেওয়া আপনার কাজ হতে পারে কিন্তু আমার না। আমি আমার কাজেই এসেছি এখানে!
কথাটুকু বলে নাহিদা দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে পায়ের উপর পা তুলে বসলো। মেহেদী তার পকেটে দুহাত রেখে বললো,
– তা অন্যের কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করাই কি আপনার কাজ?
– মানে!
– আপনি আমার চেয়ারে বসে আছেন কেন! আমার কাজগুলো কি আপনি করে দিচ্ছেন?
– আমি আপনার চেয়ারে বসতে যাবো কেন! এখানে কি আপনার নাম লেখা আছে!
– চেয়ারে নাম থাকতে হবে, এমন কোনো কথা আছে! কিন্তু টেবিলে যে আমার নামটা লেখা আছে সেটা কি পড়ছে না চোখে?
নাহিদা টেবিলের দিকে চোখ বুলিয়ে দেখলো সত্যিই মেহেদীর নাম লেখা! এতোক্ষণ তো খেয়ালই করেনি এটা মেহেদীর ডেস্ক! তাহলে বসতো নাকি এখানে!
সে মুখ মলিন করে তড়িঘড়ি করে উঠে পড়লো। জহিরুল ইসলামের কেবিনের দিকে পা বাড়ালে পেছন থেকে মেহেদী বললো,
– আপনার কফি নিয়ে যান মেডাম! এটা আবার রেখে যাচ্ছেন কার জন্য?
মেহেদীর কথা শুনে আশেপাশের সবাই হেসে উঠলো। কেউ কেউ কমেন্ট করছে, “নাইস এক্টিং, স্যার!”
নাহিদা তাদের দিকে এক পলক তাকিয়ে কফির কাপ নিয়ে আবার কেবিনের দিকে চলে গেলো।
বাকি কফিটুকু আর খাওয়া হলো না! ঠান্ডা তেতোমিঠা পানি হয়ে গেছে! চুপচাপ বসে আছে নাহিদা! কখন ম্যানেজার আসবে আর কখন তার কাজকর্ম বুঝিয়ে দিবে! একটু পর আবার মেহেদী এলো এখানে। নাহিদা প্রথমে হেলান দিয়ে বসে থাকলেও তাকে দেখে সোজা হয়ে বসলো। মেহেদী সেল্ফ থেকে ফাইল নিতে নিতে বললো,
– এই চেয়ারে বসে আছেন কেন মেডাম! আপনার চেয়ার তো মেবি ওটা।
– আমার ইচ্ছে।
– ওহ্, আচ্ছা। তা কোন পদে নিযুক্ত হয়েছেন সেটা জানেন তো?
নাহিদা কোনো জবাব দিলো না। বড্ড বিরক্ত লাগছে মেহেদীকে! সব কিছু নিয়ে অতিরিক্ত কথা বলে! কে বলেছে তাকে এসে উপচে পড়ে কথা বলতে! সবকিছুর বিপরীতে এটাও খুব ভালো বুঝতে পারছে মেহেদীও তাকে অফিসে দেখে বিরক্ত! এজন্যই নিশ্চয়ই সে এমন খোচা মেরে কথা বলছে! বলুক, তাতে কার কি আসে যায়! পিতামাতার কাছে সাপোর্ট পেয়ে গেছে যখন সে অগ্রসর হবেই তার পথে! এটাই নাহিদার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত!
বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেছে। ম্যানেজারও কিছুক্ষণ আগেই এসেছে এখানে। কিন্তু অন্যান্যদের সাথে সাক্ষাৎ এবং কাজে ব্যস্ত। নাহিদা যে অফিসে আছে সেই খেয়ালই যেন তার নেই! আরেকবার মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য নাহিদা কেবিন থেকে বেরিয়ে ম্যানেজারের মুখোমুখি হলো।
– আংকেল, আপনি কি খুব ব্যস্ত? আমি অনেক্ক্ষণ যাবত বসে আছি। আমার উপর কোনো দায়দায়িত্ব পড়ছে না কেন?
ম্যানেজার সরাসরি ভাবে নাহিদাকে না জবাব দিয়ে আগে মেহেদীর দিকে তাকিয়েছে! মেহেদী তার কাজের ফাকে মাথা না নাড়িয়ে শুধু দৃষ্টি উপরে তুলে তাকিয়েছিলো নাহিদার কথা শুনে। পরক্ষণে আবার কাজে মনযোগ দিলো। যেটা নাহিদা লক্ষ্য করেছে। ম্যানেজার নাহিদাকে বললো,
– মেডাম, আপাতত আপনার কোনো কাজ নেই। তবে আমাদের একটু ব্যস্ততা আছে। যখন আপনার কাজ হবে তখন আমি বুঝিয়ে দিবো। একসাথে তো আর সবটা বুঝিয়ে দেওয়া যায় না। ঠিক বলিনি?
– হ্যাঁ, একদম ঠিক বলেছেন। আপনি একসাথে বোঝাতে চাইলেও কিন্তু আমি বুঝবো না। তবে আমার একটু একটু বুঝে নেওয়া প্রয়োজন, যেটা আমি একটুও আয়ত্তে আনতে পারছি না। বাবা কিন্তু আমাকে বলেছিলো কাজ দুএক সপ্তাহের মধ্যেই বুঝে নিতে পারবো। অথচ আজ দুদিন পেরিয়ে গেলো আমি একটুও বুঝতে পারলাম না!
– বুঝবেন তো। ওই যে বললাম যখন সময় হবে তখন বুঝিয়ে দিবো।
নাহিদা আর কোনো কথা বললো না। একই জায়গায় দাড়িয়ে থেকে সে জহিরুল ইসলামের কাছে কল করলো। সালাম দিয়ে বললো,
– বাবা, কাজ বুঝে নেওয়ার সময়টা কখন আসে?
ম্যানেজার একটু অন্যদিকে চলে গিয়েছিলো। নাহিদার মুখে এমন উক্তি শুনে মেহেদী এবং ম্যানেজার ও পাশের একজন স্টাফ নাহিদার দিকে তাকালো। তিনজন তার কথা শুনলেও ম্যানেজার ও মেহেদীর দৃষ্টি অন্যরকম ভাবে নিক্ষেপ হয়েছে নাহিদার দিকে! ওপাশ থেকে জহিরুল ইসলাম কিছু বুঝতে না পেরে ক্লিয়ার বলতে বললো। তখন নাহিদা মেহেদী ও ম্যানেজারকে শুনিয়ে বলতে লাগলো,
– বাবা, মানে ম্যানেজার আংকেল জানালো অফিসের কাজকর্মের নাকি নির্দিষ্ট সময় আছে তাই আমি কোনো কাজ শিখতে পারলাম না গত দুইদিনে। আপনি যেহেতু উচ্চ স্তরের কর্মকর্তা তাই ভাবলাম সময়টা আপনার কাছে জেনে নেই যাতে আমাকে বসে বসে সময় না কাটাতে হয়। বরং অবসর সময় কাজে লাগাতে পারি।
জহিরুল ইসলাম ম্যানেজারের সাথে কথা বলতে চাইলে নাহিদা ফোন দিয়ে দিলো। ম্যানেজার যেমন কিছুটা ভয়ে ভয়ে কথা বলছে আর মেহেদী যেন ইলেক্ট্রিক মেশিনের মতো কাজ চালিয়ে যাচ্ছে! যেটা সে সন্দেহ করেছিলো ঠিক সেটাই হলো! তাদের আচার-আচরণ ও ভাবভঙ্গিতে বুঝে গেছে মেহেদী নিষেধ করেছিলো নাহিদাকে কাজ শিখিয়ে দিতে! যাতে সে অফিসে মনযোগী না হয়। কিন্তু এতে কোনো লাভ হলো না! নাহিদার ভেতর যেন আরও বেশি অনুপ্রেরণা কাজ করছে মেহেদীর ইচ্ছাকে এমন উপেক্ষা করতে পেরে! জহিরুল ইসলামের সাথে কথা বলার পর বাকিটুকু সময় ম্যানেজার নাহিদাকে কাজকর্ম বুঝিয়ে দিয়েছে।
অফিস টাইম শেষে মেহেদী নাহিদার সামনে গাড়ি নিয়ে এসেছিলো। কিছু বলেনি তবে এমনভাবে গাড়ি সামনে ব্রেক করেছে, বুঝাই যাচ্ছে তাকে উঠার সিগনাল দিচ্ছে! আসার সময় যেহেতু গাড়ি দিয়ে আসেনি সেহেতু যাওয়ার সময়ও যাবে না। তাই নাহিদা তাকে ইগনোর করে বিপরীত পাশে এসে রিকশা ঠিক করে নিলো। রিকশায় উঠে একবার মেহেদীর দিকে তাকিয়েছিলো। সানগ্লাস পড়নে থাকায় মেহেদীর দৃষ্টিভঙ্গি না দেখলেও মনোভাবটা একটু হলেও বুঝতে পেরেছে নাহিদা। কিন্তু সেদিকে তার ভ্রুক্ষেপ নেই! সে রিকশায় চড়ে বাসায় ফিরে এলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here