সে_আমার_পৌষমাস,পর্ব-৪

0
1904

সে_আমার_পৌষমাস,পর্ব-৪
লেখিকা:-সোনালী_আহমেদ

“নবনী” ছোট্ট শব্দটি বলে উঠলো সাইফুল। তারপর কি যেনো হলো তার, নিরাকে সোহেলের কাছে ফেলে ছুটতে লাগলো ব্যাকইয়ার্ডের দিকে। একবার শুধু ফিরে বলেছিলো, ভেতরে যাতে কেউ না আসে। নো এন্ট্রি সিল দিয়ে দিতে। ঝুপড়ির মতো ঘরটিতে প্রবেশ করতেই এক টুকরো হলদে স্মান আলো ধপ করে এসে পড়ে নবনীর উপর। চোখের সামনে ফুটে ওঠে নবনীর অশ্রুসিক্ত স্নিগ্ধ মুখশ্রী। তার দৃষ্টি উপরের টীনসিটের দিকে নিবদ্ধ। গালের উপর ছড়ানো একরাশ কালো চুল। উপরের দিকে তাকিয়ে কি যেনো ভাবছে। সাইফুলের জানা নেই।
“নবনী” বলে সে ছোট্ট করে। মুহূর্তেই ঘুরে তাকায় ও। কেমন যেনো সে চাহনি।
-“তুমি?” বলল নবনী।
সাইফুল এগিয়ে ঝাপটে ধরলো তাকে। কান্নাভাঙ্গা আওয়াজে বলে,-” তুমি এমন টা কেনো করলে? কেনো? আমি তোমাকে এখন কীভাবে বাঁচাবো বলো?”
নবনী কেঁদে বললো,-” ও বলেছে, তোমাকে ভালোবাসে। কেনো বলবে ও? তুমি শুধু আমাকে ভালোবাসো, আমাকে।”
-” ওহ,গড! নব, তোমাকে আমি কীভাবে বোঝাবো আমাদের মধ্যে কিছু নেই। একুশ টা দিন আমি শুধু কর্মচারীর বেশে ছিলাম ওখানে। লাস্ট দিন উনি আমার পরিচয় জেনেছে। কীভাবে আমাদের মধ্যে কিছু হবে? বলো?” অধৈর্য্য গলায় বললো সাইফুল। নবনী কাঁদতে থাকলো। নাক টেনে টেনে বললো,
-” তুমি বলেছো ওর জন্য ফিলিংস আছে। সে নাকি এখন আর পেছনে যাবে না। তুমি বলে তার জীবনের দেবদূত, তার রক্ষাকর্তা। তোমার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।”
-“ইডিয়েট, তুমি উনাকে এ কথা বলে দিয়েছো? হাউ কুড ইউ ?এ কথা তো তোমাকে বুঝাতে না পেরে ধৈর্য্যহারা হয়ে বলেছিলাম আমি।”
নবনী মাথা নাড়িয়ে নাড়িয়ে বললো,
-” আমি বলেছি, তুমি বিবাহিত, তোমার বউ আছে, সংসারও আছে, তুমি কখনো আমাকে ছাড়বে না। সে বলে,’আমি রাজি’।”
সাইফুল বললো,-” এজন্য তুমি উনাকে মেরেছো?” নবনী মাথা দুলায়। দুঁফোটা অশ্রুকণা চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো। সাইফুল অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়। শ্বাস ফেলে বললো, -” আচ্ছা, আগে বলো -তুমি এখানে কীভাবে এসেছো?কেনো এসেছো? আর মিস নিরাই বা এখানে কীভাবে? এক্সাক্টলি হয়েছে কি?”
নবনী চুপ করে থাকে। কিছু বলতে পারে না। মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো। অস্থির হতে লাগলো সে। তাকে আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না সাইফুল। নবনীকে সাথে করে বাড়ী ফিরে রেখে হাসপাতালে চলে গেলো। সোহেল ফোন দিয়ে জানালো সেখানে ঝামেলা হচ্ছে। সাইফুল বাহিরে চক্কর কাটছিলো। হুট করেই হাসপাতালে নবনীর বাবা এসে উপস্থিত হলেন। হড়বড়িয়ে নানান কথা বলছেন। সাইফুল কিছুই বুঝতে পারছে না। সে বললো, নিরাকে ঘুমের ঔষধ দেওয়া হয়েছে। দেড় থেকে দুই ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান ফিরে আসবে।
-” এখন কি হবে?কি হবে? সবাই এসে গেছে। কীভাবে আমি সামলাবো? কীভাবে? ওহ্…আল্লাহ!” এদিক-ওদিক চক্কর কেটে বলতে লাগলেন নবনীর বাবা।
-” বাবা!” নবনীর বাবা তাকাতেই সাইফুল বললো, “আপনি ওখানে কীভাবে পৌঁচেছেন? পুলিশ মিডিয়া সবাই ওখানের নিউজ কীভাবে জেনেছে? এটা তো শুধু আমি জানতাম।”
-” ডোন্ট টক ইট! কথাটা হাত মুষ্ঠি বদ্ধ করে ফেললেন। তারপর বলতে লাগলেন… সকালে হুট করে নবনী আমার অফিসে এসে বললো, ওর সাথে যেতে। আমি প্রশ্ন করলাম কই যাবো?কেনো যাবো?, সে জবাব দেয় না। পরে গাড়ীতে উঠার পর বললো যে, নিরা মায়ের লোকেশন সে জানে। সেখানেই নাকি যাচ্ছি। আমি তো অবাক। যাই হোক, পরে আমি কন্ট্রোল রুমে জানিয়ে দিলাম ওখানের কথা। যখন পৌঁছালাম তখন কয়েকটা ছেলের সাথে হাতাহাতি হলো, ওরা না পেরে দৌড়ে পালিয়ে গেলো। নবনীকে নিরা মায়ের কাছে রেখে আমিও তাদের পেছন পেছন ছুটলাম। কিন্তু যখন ফিরে আসি তখন দেখি….. ”
” দ্যাট মিনস, পুলিশ -মিডিয়া আপনার মাধ্যমে জেনেছে।”
“আনফরচুনেটলি হ্যা।” একটু দম নিয়ে নবনীর বাবা আবারো বললেন, ” উফফ্… নবনী এত বড় ব্ল্যান্ডার কীভাবে করলো? আমাদের হাতে এখন কিছুই নেই। নিরা মা যদি বলে দেয় নবনীর এট্যাকের কথা তাহলে কোনভাবেই ওকে বাঁচাতে পারবো না। এখন তো মিডিয়াও এটাচড হয়ে গিয়েছে।শিট!”
সাইফুল উঠে দাড়ালো। হাসপাতালের বাহিরের শোরগোল ক্রমশ বেড়েই চলছে। ডজন ডজন হাবিলদার সক্ষম হচ্ছে না আটকাতে। মানুষজন পারলে দেওয়াল ভেদ করে যেনো ডুকে যাবে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নিজে এসে উপস্থিত হলেন হাসপাতালে। নবনীর বাবার সাথে সাইফুলও দৌড়ে গেলো তাকে অভর্থ্যনা জানাতে। পিছনেই র‍্যাব আর আর্মির গাড়ী এসে থামলো। বেশ কজন সাংবাদিক পিঁছিয়ে গেলো ভয়ে।
হেড ইনভেস্টিগেশন অফিসার আসলেন কেস বিষয়ক তথ্য জানিয়ে পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক করতে।
“দেখুন, আপনারা শান্ত হোন। মিস নিরার সেন্স ফিরে আসলেই আমরা আসল ঘটনা জানতে পারবো। কে বা কারা এট্যাক করেছেন উনাকে, তিনি নিজেই বলবেন। বাকি ইনফরমেশন অফিসার সাইফুল আপনাদের দিবে।” হেড ইনভেস্টিগেশন অফিসার কথাটি বলে ভেতরে যাচ্ছিলেন ঠিক তখনই সাইফুলের কথা শুনে থেমে গেলেন।
“মিনিস্টার স্যারের মেয়ের উপর আমি এট্যাক করেছি।” সহজ সরল বাক্যে বললো সাইফুল। হাতদুটো পেছনে ক্রস চিহ্নের মতো রাখা,দু পায়ের মাঝে বেশ খানেক ফারাক, মাথা সোজা অথচ চোখ মাটির দিকে। গুন গুন আওয়াজে গুঞ্জন শুরু হয়ে গেলো। বিষ্ময়ে একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো লোকজন। হেড অফিসার যত দ্রুত উপরে যাচ্ছিলেন ঠিক তত দ্রুত নিচে নেমে আসলেন। সাইফুলের কানের কাছে মুখ নামিয়ে ফিসফাস করে বললেন, ” কি বলছো তুমি জানো? এরপর কি হতে পারে ভেবে দেখেছো?”
“ইয়েস,স্যার। আমি জানি।কিন্তু স্বীকার করা ছাড়া আমার কাছে কোনো সেকেন্ড অপশন নেই। আসলেই আমি কাজটা করেছি।”
” দেখো,পাগলামি করো না। পরে পস্তাতে হবে তোমায়। চুপচাপ এক্ষুণি সব ক্লিয়ার করো।”
” সরি, স্যার। আই এম অপশনলেস।” মাথা নিচু করে বলে সে।

ব্রেকিং নিউজ তরতর করে ছড়িয়ে পড়লো দেশজুড়ে। চারদিকে শুধু এ বিষয়ে চর্চা হতে লাগলো। পদ থেকে সাইফুলকে স্যাসপেন্ড করা হলো দ্রুততর। নিরার ব্রেইনে মাইনোর এট্যাক হয়েছে। সেজন্য তাকে হসপিটাইলজড করা হয়েছে। ১৬ ঘন্টা ১৬ মিনিট পর জেল থেকে ছাড়ানো হয় সাইফুলকে। আর্জেন্ট শুনানি তৈরী করা হয়েছে। বিচারকার্য প্রশাসনিক কার্যালয়ের ভেতরে হবে। নবনীকে পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ তার উপর অভিযোগ তোলা হয়েছে। বিচারের শেষের দিকে নিরা বললো,

“জজসাহেব, মিস্টার সাইফুল সম্পূর্ণ মিথ্যা বলছেন। উনার স্ত্রী নবনী এবং শশুড় কে বাঁচাতে এ মিথ্যা বলছেন। সত্য হলো উনারা দুজন আমাকে মারার চেষ্টা করেছেন। আমার বাবা মরহুম সোলেমান শেখ কে ও মোঃ নিজাম উদ্দিন হত্যা করেছেন। এবং আমাকেও হত্যা করার চেষ্টা করেছেন। উনার মেয়ে যখন মারতে সক্ষম হন নি তখন উনি হাসপাতালের মধ্যে আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছেন। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত আমার মামা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ায় সক্ষম হন নি।” একটু দম নিয়ে সে আবার বলে,” এরপূর্বেও আমাকে মাসের পর মাস টর্চার করা হয়েছে। আমি সম্পূর্ণ নিশ্চিত এ ঘটনাতে মোঃ নিজাম উদ্দিনের হাত রয়েছে। কারণ আমার বাবার মার্ডার কেইসে সাক্ষী দিতে আসার পথেই আমাকে কিডন্যাপ করা হয়। আর সেদিন আমার মোঃ নিজাম উদ্দিনের বিপক্ষে প্রমাণসহ হাজির হওয়ার কথা ছিলো। শেষবার আমার বাবার সাথে উনি ছিলেন। ” নিরা থামে। কন্ঠ কেঁপে উঠছে। এরপরের কথা বলার জন্য যথেষ্ট সাহস প্রয়োজন। দু হাতে জামা খামছে ধরলো, ঢোক গিলে বললো, ” মাই লর্ড, আমাকে একটা বন্ধ রুমে দিনের পর দিন আটক করে টর্চার করা হয়েছে। ইদুঁর, তেলাপোকা আরো অন্যন্যা ইনসেক্টের দ্বারা কষ্ট দেওয়া হয়। এমনকি গায়েও হাত তোলা হয়। যার দাগ এখনো আমার শরীরের প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে রয়েছে। ওই ঘরের, প্রতিটি ইট-দেওয়াল সাক্ষী আমার চিৎকারের,আমার কান্নার,আমার কষ্টের।” নিরা কেঁদে ফেলে। সেকেন্ড খানেক কেঁদে নিয়ে আবারো বললো, ” এরপর গত কয়েকদিন পূর্বে মিস্টার সাইফুল আমার জীবনে মেঘদূতের মতো আসলেন। আমাকে ওখান থেকে বের করাতে সক্ষম হন। কিন্তু মিস নবনী সেখানে হুট করে এসে মিস্টার সাইফুলের অগোচরে আমাকে আবারো তাদের হাতে তুলে দেন। তার বাবার হাতে। কারণ এসব উনাদের দুজনের মিলিত চক্রান্ত। আর আমি সম্পূর্ণ শিউর এ ব্যাপারে। এর পেছনে আমাদের প্রোপার্টি উনাদের মূখ্য উদ্দেশ্য ছিলো। কেননা গতকাল আমাকে সম্পত্তির উইল প্যাপারে সই করতে বলা হয়। যেখানে সবকিছু মিস্টার নিজাম উদ্দিনের নামে হয়ে যাবে। তখনই চট করে আমি চিনে ফেলি উনাদের। এর পূর্বে আমি যাতে চিনতে না পারি সেজন্য উনারা একেকবার একেক বেশে আমার সামনে এসেছিলেন। কখনো সাইকো সেজে,কখনো পাগল সেজে। আমি কখনোই চিন্তা করেনি ওই একজন সাইকোর বেশে ইনারা বাবা মেয়ে থাকতে পারেন। আমি এর বিচার চাই মাই লর্ড। বিচার চাই। কঠিন বিচার।” নিরা কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়লো। উপস্থিত অনেকের চোখ ইতোমধ্যে অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠেছে। জজ সাহেব চোখের উপর থেকে চশমা নামালেন। টিস্যু পেপার দিয়ে মুছে আবারো পরে নিলেন। বিপক্ষ দলের থেকে মন্তব্য শুনতে চাইলেন। কিন্তু তাদের নিকট কোনো প্রমাণ ছিলো না। আলোচনা-সমালোচনায় নিরার সকল কথা সত্য হলো। প্রমাণিত হলো সবকিছুই সত্য। আদালত থেকে আধ ঘন্টা পর শেষ শুনানি শোনানো হবে। এর মধ্যে পুলিশকে বলা হলো নবনীকে বের করে উপস্থিত করতে। শুনানির পার্বে নিরা সাইফুলের সাথে দেখা করতে আলাদা কক্ষে উপস্থিত হয়।
নিরাকে দেখা মাত্রই সাইফুল বললো, -” মিস নিরা, আপনার কাছে হাতজোড় করে বলছি নবনীকে ছেড়ে দিতে বলেন। বিশ্বাস করেন ও এসবের কিচ্ছু জানে না।আপনি আমাকে শাস্তি দিন। প্লিজ।”
” আপনার অনুনয় দেখে আমার দয়া হচ্ছে। যারা আপনাকে ফাঁসিয়ে পালিয়ে যেতে চেয়েছে আপনি তাদের জন্য কাঁদছেন? এই দেখুন আজ কি অবস্থা আমার? এরাই আসল কালপ্রিট। এদেরকে শাস্তি পেতেই হবে।”
“কিন্তু….”
” মিস্টার সাইফুল” সে চুপ করে যায়। নিরা চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিলো। শান্ত কন্ঠে বললো, ” আমি চাইলে উনাদের শাস্তি কমাতে পারি। কিন্তু একটা শর্তে…”
“আমি রাজি।”
“শর্ত শুনে নিন। আপনাকে নবনীকে ডিবোর্স দিতে হবে। এবং আমার সাথে আমার বডিগার্ড হিসেবে থাকতে হবে লাইফ টাইমের জন্য।”
সাইফুল চমকানো কন্ঠে বলে,” হোয়াট!কি বললেন? না না,আমি কখনো পারবো না এটা করতে। ”
“তাহলে ফাঁসিতে ঝুলতে দেখুন তাকে।” নিরা গটগট পা তুলে বেরিয়ে যেতে লাগলো। সাইফুল তখনই বললো সে রাজি। তার ঠোঁটে হাসি ফুটলো। বিজয়ের হাসি। অথচ এ ছিলো তার জীবনের সবচেয়ে বড় পরাজয়।

” এটা কেমন কথা ভাগ্নে? তুমি ওই কালপ্রিটের হ্যাসবেন্ডকে বডিগার্ড করতে চাইছো? আবার বলছো শাস্তি কমাতে।”

” আমি ভেবেচিন্তেই করছি মামা। ওরা আমার জান নিয়ে খেলেছে। আমি ওই মেয়ের জান কেড়ে নিয়ে বোঝাবো। তিল তিল করে কষ্ট দিবো। আমাকে আজ এ কঠিন পরিস্থিতিতে ওরা এনে দাড় করিয়েছি।”

“কিন্তু আমার তো এমন মনে হচ্ছে না। তোমার চোখমুখ অন্যকিছু বলছে। ” নিরার মামা সন্দিহান কন্ঠে বললো। নিরা বিরবির করে বললো,” তুমি বুঝবেনা মামা। সে আমার পৌষমাস। আমার সর্বনাশ।”


নিরার কথামতো সব হলো। বাবার খুনীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়েছে। নবনীর বাবার যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়েছে। নবনীকে আট বছরের জেল ঘোষণা করা হয়েছে। কেটে গেলো একদিন। সবকিছু ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে লাগলো। বসন্তের মতো নীরার জীবনের রং বদলাতে শুরু হলো। সাইফুল আজ থেকে তার বডিগার্ড হিসেবে কাজ শুরু করবে। কিন্তু এখনো তার খবর নেই। সে বসে রয়েছে বিছানায়। মন খারাপ করে তাকিয়ে আছে বিছানার দিকে। সাইফুলের কালো শার্টটিতে দাগ লেগে গিয়েছে। এর জন্য তার মন ভীষণ খারাপ। সে অন্য কোনো জামা পরতে চাইছে না। সোহেল অবাক হয়ে দেখছে। জেল থেকে বেরোনোর দ্বিতীয় দিনে মন্ত্রীর মেয়ের বডিগার্ড হিসেবে যাচ্ছে। অথচ এ নিয়ে কোনো মাথ্যাব্যাথা নেই। কেনো নেই? বিষয়টা তাকে খুব ভাবাচ্ছে। সে বললো,” স্যার, ইনারা সবাই আপনাকে ফাঁসিয়েছে।”

সাইফুল একটুখানি হেসে শার্ট টি হাতে নিয়ে বললো,
” তোমার কি মনে হয় সোহেল, আমাকে আদৌ ফাঁসানো হয়েছে?”
“মানে স্যার?”
” হা হা হা। এতদিনেও তুমি বুঝতে পারলে না? আমি ভাবলাম তুমি সব বুঝেছো। যথেষ্ট বুদ্ধিমান তুমি। তোমার তো বুঝে ফেলার কথা। কিন্তু আফসোস বুঝতে পারলে না। আমার পইপই খবর নোট করেও বুঝলে না।” সোহেল ঢুক গিলতেই সে বললো, “ডু ইউ নো? নবনী তোমাকে তার গুপ্তচর বানায় নি, বানিয়েছি আমি। যাতে আমার খবরগুলো তার কাছে পৌঁছাতে পারে। আর সে ইনডাইরেক্টলি আমার প্ল্যানে শামিল হতে পারে।” সোহেল এবার বিষ্ময় নিয়ে তাকাতেই সাইফুল হেসে বললো, ” সবকিছুই আমার দু-বছরের প্ল্যান। ওই সাইকো নবনী আর নবনীর বাবা নয়,আমিই ছিলাম।”

সোহেল অবাক হয়ে বললো, ” তার মানে নবনীকে বিয়ে,তাদের বাড়ীতে পৌঁছা, তার বাবার বিশ্বস্ত হওয়া, নিরার বাবাকে মেরে ফেলা, নিরাকে বন্দী করা, আবার ওদেরকেই ওদের মধ্যে ফাঁসানো সবকিছুর পেছনেই রয়েছেন আপনি?”

সাইফুল হাসতে হাসতে বললো,
“হ্যা,শুধু আমি। এমনকি নবনীর দোষ নিজের উপর নেওয়া, নিরার সামনে অসহায় হওয়া সবকিছুই আমার অভিনয় ছিলো। নবনীকে আমি এতটা উত্তেজিত করে দিয়েছি,ওর মনে এতটা সন্দেহ ডুকিয়ে দিয়েছি যে ও নিরাকে মেরে ফেলতে একটুও দ্বিধা করে নি। এমনকি মিস নিরার মনে ফিলিংস ও আমিই তৈরী করেছি। কিন্তু এটা ছিলো আমার প্ল্যানের সবচেয়ে কঠিন অংশ। একুশ দিন,পুরো একুশ দিন তার পেছনে সময় দিয়েছি। নবনীর পেছনেও এত সময় আর এত অভিনয় করেনি। কিন্তু তারপরেও ওর মনে পুরোপুরি জায়গা করতে এখনো পারি নি, তখনো পারি নি। সে আমাকে বডিগার্ড বানিয়েছে, লাইফ পার্টনার নয়। এত শক্ত এই মেয়ে। আচ্ছা তুমি,জানতে চাইবে না আমি এসব কেনো করেছি ?” হাসতে হাসতে বললো সাইফুল।
সোহেল উৎসুক দৃষ্টিতে তাকাতেই সে বলে উঠলো,”প্রতিশোধ নিতে। প্রতিশোধ।” ক্ষোভে সাইফুলের চোখ উজ্বল হয়ে উঠলো। বিষ্ময়ে সোহেল কিংকর্তব্যবিমূঢ়।

চলবে….

সোনালী আহমেদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here