ভালবাসি_শুধু_তোমায়_আমি,পর্ব:১২,১৩

0
1633

ভালবাসি_শুধু_তোমায়_আমি,পর্ব:১২,১৩
তাসনিম_জাহান_রিয়া

ছিঃ ছিঃ বোন এসব কী বলছো? তোমরাই তো আমার নিজের লোক। ( এহসান খান একটু নাটক করে বললেন। )

পলা ( আরনিয়ার মা ) এহসান ভাই আজ থেকে এখানেই থাকবেন তুই রহিমাকে ( স্পর্শকদের বাসার কাজের লোক ) গেস্ট রুম পরিষ্কার করতে বল।

৬ বছরের ছোট স্পর্শক দৌড়ে এহসান খানের কোলে ওঠে। স্পর্শক ছোটবেলা থেকেই তার মম আর মিষ্টি মা ছাড়া অন্য কোনো মেয়ের দাঁড়ে কাছেও যেতো না। সে বরাবরই ছেলেদের সাথে মিশতে পছন্দ করতো। স্পর্শকের মা তার বাবা-মার একমাত্র সন্তান হওয়ায় স্পর্শকের কোনো মামা ছিল না। তাই এহসান খানের সাথে বেশ ভাব ছিল।

__________________

বিকেলে দুই ভাই নিলয় আহম্মেদ ( স্পর্শকের বাবা ) আর নিল আহম্মেদ ( আরনিয়ার বাবা ) অফিস থেকে ফিরলেন। দুই ভাই এসেই ড্রয়িংরুমের সোফায় গা এলিয়ে দিলেন। পলা আহম্মেদকে সিঁড়ি দিয়ে একা নামতে দেখে রেগে যান নিল আহম্মেদ। পলা আহম্মেদ ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ছোট স্পর্শক তো এখন থেকেই ঠিক করে রেখেছে বড় হয়ে সে আরনিয়াকে বিয়ে করবে। স্পর্শিয়া আহম্মেদ আরনিয়া নামটাও স্পর্শক নিজের নামের সাথে মিলিয়ে রেখেছে। দেখতে দেখতে কেটে যায় ২ টা মাস জন্ম হয় আরনিয়ার। আরনিয়াকে কোলে নিয়ে স্পর্শকের সেকি আনন্দ। সে তার বউকে সবার প্রথম কোলে নিয়েছে। নিলয় আহম্মেদ আর নিল আহম্মেদ স্পর্শক আর আরনিয়ার বিয়ে ঠিক করে রাখেন।

__________________

আরনিয়ার বয়স ১ বছর। হঠাৎ করেই নিল আহম্মেদের বাল্ড ক্যান্সার ধরা পড়ে। লাস্ট স্টেইজে হওয়ায় চিকিৎসা করেও কোনো উন্নতি হয়নি। বেশ কিছুদিনের মাঝেই আরনিয়াকে বুকে জড়িয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন নিল আহম্মেদ। পরিবার প্রিয়জন সবাইকে ছেড়ে চিরকালের মতো চলে যান নিল আহম্মেদ। নিজেকে স্বামিকে হারিয়ে ভেঙে পড়েন পলা আহম্মেদ। তখন এহসান খান দায়িত্ব নেয় আরনিয়ার। যখন থেকে আরনিয়া কথা বলতে পারে তখন থেকেই এহসান খানকে বাবা ডাকে।

সময় সময়ের মতো চলতে থাকে। সময় কারো জন্য থেমে থাকে না। তেমনি কারো জন্য কারো জীবন থেমে থাকে না। পলা আহম্মেদ নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে ছাড়া বাঁচতে শিখে গেছে। আরনিয়ার বয়স ১৪ বছর আর স্পর্শকের বয়স ২০ বছর। দুজনের মধ্যে সাপে নেউলের সম্পর্ক। আবার কেউ কাউকে ছাড়া এক মিনিটের জন্য থাকতে পারে না। দুজন দুজনকে ভালোবাসে ঠিকই কিন্তু কেউ কারো কাছে প্রকাশ করে না। স্পর্শক লন্ডনের নামকরা ভার্সিটিতে চান্স পায়। কিন্তু সে যাবে না। সে তার আরনিয়াকে ছাড়া থাকতে পারবে না। সবাই মিলে তাকে অনেক বুঝায় সে রাজি হয় তবে তার একটা শর্ত আছে। আরনিয়ার সাথে যদি তার বিয়ে দেয় তবেই লন্ডন যাবে আর নাহলে না। আর কোনো উপায় না পেয়ে সবাই রাজি হয়ে যায়।

ঘরোয়া ভাবেই স্পর্শকের সাথে আরনিয়ার বিয়ে ব্যবস্থা করেন নিলয় আহম্মেদ। দুজনই প্রাপ্ত বয়স্ক হলে ধুমধাম করে বিয়ে দেওযা় হবে। এক সপ্তাহ পড়ে স্পর্শক লন্ডন চলে যাবে তিন বছরের জন্য। তাই আজকে স্পর্শক আর আরনিয়ার বিয়ে। স্বাভাবিক ভাবে তাদের বিয়ে হয়। স্পর্শকের ইচ্ছেতে আরনিয়া আজকে লাল টুকটুকে বউ সেজেছে। আজকে আরনিয়ার থেকে চোখ ফেরানো দায় হয়ে গেছে। গোল্ডেন কালার শেরওয়ানীত প্রিন্সের থেকে কোনো অংশে কম লাগছে না স্পর্শককে।

বাসর ঘরে বসে আছে আরনিয়া তার থেকে ৫ ইঞ্চি দূরে বসে আছে স্পর্শক। এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে আরনিয়ার দিকে। আরনিয়া পড়নে নীল শাড়ি যেটা স্পর্শক নিজে হাতে পড়িয়ে দিয়েছে আরনিয়াকে। কেটে যায় একটা সপ্তাহ আজকে স্পর্শক তিন বছরের জন্য চলে যাবে লন্ডনে। স্পর্শকের যাওয়ার সময় হলেই স্পর্শককে জড়িয়ে ধরে আরনিয়ার সেকি কান্না। কিছুতেই স্পর্শককে ছাড়তে চাইছে না। এহসান খান অনেক কষ্টে আরনিয়াকে আটকে রাখে।

__________________

তিন বছর পর

আজকে আহম্মেদ বিলায় খুশির সীমা নেই। কারণ তিন বছর পর বাড়ির ছেলে বাড়ি ফিরে আসছে। নতুন রুপে সেজেছে আহম্মেদ বিলা। তিন দিন পর খুব ধুমধাম করে স্পর্শক আর আরনিয়া বিয়ে দিবে নিলয় আহম্মেদ। আরনিয়া আজকে খুব সুন্দর করে সেজেছে।
লাল পাড়ের সাদা শাড়ি পড়েছে। স্পর্শক ইচ্ছে ছিল সে তার পিচ্চি বউকে লাল পাড়ের সাদা শাড়ি নিজের হাতে পড়িয়ে দিবে। নিজ হাতে পায়ে আলতা দিয়ে, চোখ ঘন কালো কাজল, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, খোলা চুলে সাদা গোলাপ ফুল গুঁজে দিবে। আরনিয়া স্পর্শকের মনের মতো করে সেজেছে। স্পর্শক তাকে এয়ারপোর্টে এমন সাজে দেখে চমকে যায়। কিন্তু আফসোস স্পর্শক নিজের হাতে আরনিয়াকে সাজাতে পারেনি। আরনিয়া ড্রয়িংরুমে আসে। আরনিয়াকে দেখে তার মা জিঙ্গেস করে,

কিরে তুই এভাবে সেজেছিস কেনো? আর গ্রামের মেয়েদের মতো শাড়ি পড়েছিস কেনো?

আরনিয়া কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না? সেতো আর তার মাকে বলতে পারবে না স্পর্শকের মনের মতো করে নিজেকে সাজিয়ে তুলেছে। আরনিয়া আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাবে তখনি স্পর্শকের মা মুচকি হেসে আরনিয়ার মায়ের কাধে হাত রেখে বলে,

পলা দেখছিস আমাদের মেয়েটা কত বড় হয়ে গেছে। নিজের স্বামীর মনের মতো করে নিজেকে সাজিয়ে তুলেছে।

স্পর্শকের মায়ের কথা শুনে আরনিয়া লজ্জায় মাথা নামিয়ে ফেলে। আরনিয়া আমতা আমতা করে বলে,

আমি গাড়িতে বসছি তোমরা এসো। এয়ারপোর্ট যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।

কথাটা বলে আরনিয়া দৌড়ে চলে যায়।

__________________

এয়ারপোর্ট

স্পর্শক দাঁড়িয়ে আছে আরনিয়ার সামনে। তিন বছর পর দুজন দুজনকে দেখছে। এই তিন বছর স্পর্শক ইচ্ছে করেই আরনিয়ার সাথে কথা বলেনি। বলেনি বললে ভুল হবে বলেছে মাসে এক থেকে দুইবার তাও দুই থেকে তিন মিনিট । স্পর্শক চায়নি আরনিয়া আবেগে ভেসে গিয়ে নিজের পড়াশোনার ক্ষতি করুক।

তিন বছর আগের আরনিয়া হলে এতক্ষণে স্পর্শকের বুকে ঝাপিয়ে পড়তো। কেঁদে কেঁদে স্পর্শকের বুক ভাসিয়ে দিতো। হাজার অভিযোগ তুলে ধরতো স্পর্শকের সামনে। অভিমানে গাল ফুলিয়ে রাখতো। তিন বছর পরের আরনিয়া যে ম্যাচিওর হয়ে গেছে। স্পর্শক ভাবছে তার পিচ্চি বউটা বড় হয়ে গেছে। আরনিয়া স্পর্শকের সাথে কথা বলেনি স্পর্শকও আরনিয়ার সাথে কথা বলেনি। সবার সামনে কথা বলতে দুজনেরই অস্বস্তি হচ্ছে।

__________________

সবাই ডিনার করছে আর আরনিয়া রুমে বসে আছে। আরনিয়া রাতে এক গ্লাস দুধ ছাড়া আর কিছু খায় না। স্পর্শককে সবাই রীতিমতো জামাই আদর করছে। বেচারা স্পর্শক ফেসে গেছে কাউকে কিছু বলতে পারছে না। এত দিন পর পর বাড়ির ছেলে বাড়ি ফিরেছে এতটুকু করা স্বাভাবিক। এক ঘন্টা পরে সবার কাছ থেকে ছাড়া পেলো স্পর্শক। ড্রয়িংরুমে থেকে পা বাড়ালো নিজের রুমের উদ্দেশ্যে।

রুমের সামনে গিয়ে দরজা ধাক্কা দিতেই খুলে যায়। দরজা ভিতর থেকে লক ছিল না শুধু চাপানো ছিল। রুম দেখে স্পর্শক অবাক হয়ে যায়। কারণ সে রুমটা যেমন রেখে গিয়েছিল ঠিক তেমনি আছে। সামান্য তম পরিবর্তনও রুমটির হয়নি। স্পর্শক রুমের চারপাশে চোখ বুলায় কিন্তু আরনিয়াকে কোথাও দেখতে পায় না। হঠাৎ তার মনে হলো আরনিয়ার তো ঘুমানোর আগে ছাদে যাওয়ার অভ্যাস আছে।

স্পর্শক কাউকে একটা ফোন করে মুচকি হেসে ছাদের দিকে চলে যায়। ছাদে দরজার কাছে স্পর্শক দাঁড়িয়ে যায়। স্পর্শক ভেবে পাচ্ছে না এই ঘুট ঘুটে অন্ধকারের মাঝে আরনিয়া ছাদে কি করছে? স্পর্শক ফোনের ফ্ল্যাস অন করে পা বাড়ায় সামনের দিকে। স্পর্শকের পা কিছু একটার মাঝে আটকে যায়। পড়তে পড়তে নিজেকে সামলে নেয়। হঠাৎ ছাদ আলোকিত হয়ে যায় আর স্পর্শকের ওপর জরি পড়তে থাকে। সবাই একসাথে চিৎকার করে বলে,

হ্যাপি বার্থডে স্পর্শক

স্পর্শক ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ১২ টা বাজে। আজকে যে তার জন্মদিন সেটা স্পর্শকের মনেই ছিল। স্পর্শক আরো বেশি অবাক হয়ে যায় তার ফুফু আর ফুফাতো বোন অনুকে দেখে। অনু এসে স্পর্শককে বলে,

কেমন লাগলো সারপ্রাইজ?

বলে বুঝাতে পারবো না।

সব কিন্তু ভাবির প্লেন।

ভাবি শব্দটা শুনে স্পর্শকের ভ্রু কুচকে আসে। কিছু একটা ভেবে স্পর্শক মাথা চুলকে মুচকি হাসে। সবাই একসাথে স্পর্শকের বার্থডে সেলিব্রেইট করে। সেলিব্রেশন শেষে ঘুমানোর জন্য সবাই নিজের রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। আরনিয়া যেতে নিলে স্পর্শক আরনিয়ার হাত টেনে ধরে। এক টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে। কোমর জড়িয়ে ধরে আরনিয়াকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় স্পর্শক।

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here