তৃষ্ণার্থ_প্রেয়সী,পর্ব ১১
লাবিবা_ওয়াহিদ
সানাম সেদিন আর রুম থেকেই বের হয়নি, রাতে অন্তু খাবারের জন্যে ডাকলেও সানাম বলে তার খিদে নেই। খিদে পেলে খেয়ে নিবে। অন্তু সানামের সাথে আর জোড়াজুড়ি করেনি। এদিকে সানামের কন্ঠ ফারিশ লিভিংরুমে বসে ঠিকই শুনলো। ফারিশ মুখ বাঁকিয়ে মনে মনে বললো,
-“নিজে দোষ করে আবার খাবারের সাথে রাগ দেখায়। আমি জানি তুমি খেতে বের হবে, তখন দেখিও তোমায় কী করি.. স্টুপিড!!”
অবশেষে সানামকে ছেড়েই ওরা ডিনার শেষ করলো। ডিনার করে যে যার মতো ঘরে চলে গেলো। যাওয়ার আগে ফারিশ সানামের খাবারের কথা মনে করিয়ে দিলো অন্তুকে। অন্তু সম্মতি জানিয়ে খাবার একটা প্লেটে সাজিয়ে সেটা ঢেকে ডাইনিং টেবিলে রাখলো। কিচেনের যে লাইটটা সবসময় জ্বালানো থাকে সেটা ফারিশ আজ ইচ্ছা করে বন্ধ করে দিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো।
ফারিশের ধারণা অনুযায়ী সানাম আধঘন্টা পরপরই রুম থেকে বের হলো। খুদায় তার পেটের মধ্যে বিশ্বযুদ্ধ চলছে। সেই ক্যান্টিনে একটা বাটারবন খেয়েছিলো এরপর থেকে আর কিছুই পেটে পরেনি। সানাম পা টিপে টিপে লিভিংরুমে আসতেই দেখলো সব অন্ধকার। সানাম অন্ধকারে এখন কী করবে বুঝলো না। পেটের সাথে সাথে তার মাথাটাও খালি হয়ে আছে। তাও সানাম না থেমে সামনের দিকে হাত বাড়িয়ে হাতড়াতে শুরু করলো৷ একসময় না দেখতে পেয়ে সানাম ধুম করে সোফার সাথে কোমড়ে বারি খেলো। ব্যথায় কিছুটা চোখমুখ খিঁচে রইলো তাও একটা শব্দও করলো না। সানাম সেই সোফাতেই কিছুক্ষণ বসে রইলো। কিন্তু ব্যাপার কী, প্রতিদিন তো কিচেনের লাইট জ্বালানো থাকে, আজ কী লাইট ফিউজ হলো নাকি? সানাম মনে মনে ভাবলো। কী ভাবতেই সানামের ফারিশের কথা মনে পরলো। সানাম খাওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে রাগে ফুঁসতে লাগলো এবং ভাবতে লাগলো আজ সে ফারিশকে বালিশচাপা দিয়েই মেরে ফেলবে। পরের ছেলে হয়ে তার এতো বড় সাহস আমায় চড় মারে।”
সানাম আবারও তার অজানা পরিকল্পনায় দেয়াল ধরে হাঁতড়াতে হাঁতড়াতে অনুমান অনুযায়ী ফারিশের রুমের সামনে আসলো। দরজা প্রতিদিনের মতোই হালকা ভেঁজানো ছিলো। সানাম দরজা খুলে পা টিপে টিপে ঘরে প্রবেশ করলো। সানাম অন্ধকারে বোঝার চেষ্টা করলো ফারিশ ঘুমিয়েছে কী না, ধীরে ধীরে ফারিশের বেডের দিকে এগোতেই আবছা আলোয় দেখলো কেউ একজন কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। আরে ধুর কেউ একজন কেন বলি, ফারিশের বেডে তো ফারিশই হবে নাকি!! সানাম যেই এগোবে ওমনি পেছন থেকে দরজা বন্ধ করার শব্দ শুনলো। সানাম যেন বরফের মতো জমে গেলো ভয়ে। ফারিশ তো বিছানায় ঘুমোচ্ছে তাহলে দরজা লক করলো কে? এর মানে কী ভূ…ত!!”
সানাম যখন এগুলো ভাবছিলো তখনই পেছন থেকে সানামকে কেউ ঝাপটে ধরলো। এতে যেন সানাম ঝকটা খেলো আর চিল্লিয়ে উঠলো,
-“ভূ…..ত!!”
পেছনের কেউ চিল্লিয়ে উঠলো,
-“চো…..র!!”
দুজনের উচ্চকন্ঠ ফারিশের রুমের চার দেয়ালে প্রতিফলিত হয়ে ঘর যেন কেঁপে কেঁপে উঠলো। একসময় ফারিশ যখন বুঝলো মেয়েটা সানাম, ফারিশ চুপ করে তৎক্ষনাৎ সানামের মুখ চেপে বললো,
-“ওই ফাটাবাঁশ চুপ করো! কানের মাথা খাওয়ার প্ল্যান করেছো নাকি?”
বলেই ফারিশ তার পাশে থাকা লাইটের সুইচ অন করলো। সানাম রাগে, জেদে ফারিশের হাতে জোরে কামড় দিয়ে পিছে ফিরলো। ফারিশ “আউচ” বলে হাত সরিয়ে নিলো।
-“আপনি তো সাধু পুরুষ! চোর করে চিল্লিয়ে তো আপনি আমার কানের মাথা খাইসেন! উফফ কান আমার শেষ!”
-“আমি তো ভাবসি আমার ঘরে চোর ঢুকসে!”
-“আপনি একটু বেশিই ভাবেন!”
-“আমি বেশি ভাবি বুঝলাম কিন্তু তুমি এতো রাতে আমার ঘরে কী করো?” ভ্রু কুচকে বললো ফারিশ। ফারিশের প্রশ্নে সানাম থতমত খেয়ে গেল। সানামকে চুপ থাকতে দেখে ফারিশ আবারও একই প্রশ্ন করলো। সানাম আমতা আমতা করে বললো,
-“জানতে এসেছি, কিচেনের লাইট ফিউজ হয়েছে কি না.. আচ্ছা আমি যাই!” বলেই ফারিশের পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিলো, ফারিশের কেন যেন সানামের কথা বিশ্বাস হলো না। সে সন্দেহ করলো।
সানামের কী মনে হতেই সে বেডের দিকে তাকালো। আরে ওটাতো কোলবালিশ! সানামের এখন নিজের উপরেই রাগ হতে লাগলো। কোলবালিশকে কি না সে ফারিশ ভাবছিলো। তাইতো বলি সুঠাম দেহি যুবক এতো রোগা কেন লাগছিলো? আর ফারিশও কেমন! ব্ল্যাংকেটের তলায় কে এভাবে কোলবালিশকে ভরে রাখে? যত্তোসব। ফারিশ পিছে ফিরে সানামের দিকে তাকাতেই দেখলো সানাম কেমন করে তার বিছানার দিকে তাকিয়ে আছে।
-“কী হলো, ওভাবে তাকিয়ে কী দেখছো!”
-“কিছু না।”
বলে সানাম যখনই ফারিশের দরজা খুলতে যাবে ফারিশ আবার পেছন থেকে সানামের মুখ চেপে ধরে লাইটের সুইচ অফ করে দিলো। ফারিশের এহেম কান্ডে সানাম নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগলো কিন্তু ফারিশ সানামকে পাত্তা না দিয়ে জলদি আলমারির পাশে দেয়ালের সাথে লেগে রইলো। সানামের মাত্রাতিরিক্ত নড়াচড়ায় ফারিশ সানামের কানের সামনে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বললো,
-“একদম নড়াচড়া করবে না, পায়ের আওয়াজ শুনছো না?”
ফারিশের উষ্ণ নিঃশ্বাস সানামের কানে এবং ঘাড়ে পরায় সানাম খানিক কেঁপে কেঁপে উঠলো। ফারিশের কথায় সানাম এবার থেমে কান খাড়া করে শোনার চেষ্টা করলো আসলেই একজোড়া পায়ের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে। কিছুক্ষণের মাঝে পায়ের আওয়াজটা ফারিশের দরজার সামনে এসে থেমে গেলো এবং কেউ দরজায় কড়াঘাত করে বলে উঠলো,
-“ফারিশ! তুই চেঁচালি কেন? কিছু কী হয়েছে?”
ফারিশ কিছু বললো না চুপ করে রইলো সানামের সাথে। এদিকে সানাম আল্লাহকে ডাকতে ব্যস্ত। যদি কোনো ভাবে জানতে পারে এই মধ্য রাতে একটা অবিবাহিত ছেলের সাথে একই ঘরে একটা অবিবাহিত মেয়ে দরজা বন্ধ অবস্থায়, তাহলে ইজ্জত কী আর থাকবে?
ইকরাম ফরিদ দরজার নিচে দিয়ে কিছু একটা পর্যবেক্ষণ করে নিলো। অন্তু তখনই তাকে ঝাঁকিয়ে বললো,
-“কী হলো বলুন তো, স্পষ্ট এই ঘর থেকে চিৎকার শুনলাম কিন্তু ফারিশ কেন দরজা খুলছে না?”
-“আমার মনে হচ্ছে আমরা একটু বেশি-ই চিন্তা করছি। আওয়াজটা নিশ্চয়ই উপর অথবা নিচের ফ্লোর থেকে এসেছে। দেখছো না ফারিশের রুমের লাইট বন্ধ। ফারিশ নিশ্চয়ই ঘুমোচ্ছে তাই হয়তো তোমার ডাক শুনতে পায়নি। ওকে ঘুমোতে দেও ছেলেটা অনেক খাটছে ইদানীং। ওর ঘুমানো প্রয়োজন।”
অন্তু আর কিছু বললো না। ইকরাম ফরিদের কথায় সম্মতি জানালো। ইকরাম ফরিদ তাকে নিয়ে ঘরের দিকে চলে গেলো। বাইরে ওদের কথোপকথন ফারিশ এবং সানাম স্পষ্ট শুনতে পেলো। যখন বুঝলো তারা চলে গেছে ফারিশ সানামকে ছেড়ে দূরে সরে দাঁড়ালো। সানাম একটা লম্বা শ্বাস ফেলে ফারিশের জানালার পর্দা সরাতেই তার চোখে কেউ টর্চ লাইটের আলো ফেললো। সানাম আলোটা নিতে না পেরে চোখ খিঁচে কিছুটা জানালার সাইডে চেপে গেলো।
ফারিশদের এপার্টমেন্টের অপর এপার্টমেন্টের বুশরাই টর্চটা এদিকে মেরেছে। সে স্পষ্ট কোনো মেয়েকে জানালার সামনে দেখতে পেলো। সানামের সরে আসা দেখে ফারিশ দূর থেকে জানালার দিকে তাকালো। যখন বুঝলো কে বা কারা টর্চ মারছে ফারিশ তৎক্ষনাৎ পর্দা টেনে দিলো। বিপদ যেন তাদের ছাড়তেই চাচ্ছে না। ফারিশের পর্দা টানা দেখে সানাম বলে উঠলো,
-“কী হলো? পর্দা টানলেন কেন? কী সুন্দর ঠান্ডা বাতাস ছিলো..!”
-“যা বুঝো না তা নিয়ে একদম কথা বলবা না, তোমাকে জানালার সামনে দেখলে কেলেঙ্কারি ঘটে যাবে।”
-“মানে? এতো রাতে কে আপনার রূপ দেখতে বসে আছে?”
সানামের ত্যাড়া কথায় ফারিশের সেইরকম রাগ হলো। সে সানামকে পাত্তা না দিয়ে পর্দার আড়ালে থেকে তার জানালার থাই গ্লাস টেনে দিয়ে রুমের ড্রিমলাইট অন করলো।
-“যখন জানালার সামনে দাঁড়াইসো তখন সরে আসছিলা কেন?”
-“লাইটের আলো চোখে লাগছিলো, মনে হচ্ছিলো কেউ আমার চোখে টর্চ তাক করে রেখেছিলো।”
-“তো বুঝলা তো কেউ ঠিকই আমার দিকে নজরদারি করতে দাঁড়ায় ছিলো! এইসময়ে তোমায় কে বলেছিলো এতো জোরে চিল্লাইতে?”
-“এই দেখেন দোষ আমার একার না, আপনিও চেঁচাইসেন! মধুও খাবেন আবার মধুর খরচ দিবেন না এটা কোন ধরণের হিসাব?”
-“তুমি একটু বেশিই পকপক করো। এখন জলদি বিদায় হও আমার রুম থেকে। যত্তোসব ঝামেলা সব আমার ঘাড়েই ঝুলছে!”
-“ঝামেলা আপনি নিজে ডেকে আনেন তাইতো সেই ঝামেলার জেদ আমায় চড় মেরে উশুল করেন।” কথাটা সানাম ফারিশকে খোঁচা মেরেই বললো। ফারিশ এতে আরও রেগে বললো,
-“আমার এতো সখ পরে নাই তোমার গায়ে হাত তুলে নিজের রাগ মেটাবো! তোমার উচিত ছিলো আমাকে আগে থেকে ইনফর্ম করা কিন্তু তুমি ফোন অফ করে মাস্তিতে ঘুরাফেরা করেছো! এদিকে আমি দুপুরের কাঠফাঁটা রোদে তোমায় খুঁজতে বের হয়েছি অফিস থেকে ছুটি নিয়ে। পাক্কা সাড়ে তিনঘন্টা তোমাকে খুঁজেছি, তুমি কী মনে করো সবকিছু এতোই সোজা? তাই মেজাজ গরম ছিলো।”
-“আমি আপনার কে হই যে আপনি আমায় পাগলের মতো খুঁজবেন? আমি কী বলেছি আমি ইনফর্ম না করলে আমায় রাস্তায় রাস্তায় পাগলের মতো খুঁজুন?”
-“দেখো তুমি জাস্ট আমার দায়িত্ব। আর আমার চিন্তা থাকবে কেন? আমি বাবার জন্যই তোমায় খুঁজতে বের হয়েছিলাম।”
ফারিশের কথাগুলা সানামের বুকে তীরের মতো বিঁধলো। সে কিছুক্ষণ এদিক সেদিক তাকিয়ে নিজের চোখের জল আড়াল করার চেষ্টা করলো। অতঃপর নিজেকে সামলে বলতে শুরু করলো,
-“আপনার বাবার জন্য আপনি আমায় সাড়ে তিন ঘন্টার মতো খুঁজেছেন, সেটা আমায় বিশ্বাস করতে বলছেন? আপনি তো জানেন আমি বিভিন্ন সময়ে ফ্রেন্ডদের বাসায় গিয়ে থাকি, আপনি তো আপনার বাবাকে চাইলেই বলতে পারতেন আমি আমার কোনো ফ্রেন্ডের বাসায় আছি তাই হয়তো ফিরতে লেট হচ্ছে। কিন্তু আপনি তা করেননি। একটা এতিমের জন্য এতো চিন্তা করা কী আদৌও ভালো চোখে দেখায় মিস্টার সায়মান ফারিশ? আমি জানি আমি আপনার দায়িত্ব, বলা চলে আপনার ঘাড়ের আলগা বোঝা। তবে আপনার কাছে অনুরোধ রইলো আমার মতো এতিমের জন্য এতো ট্রেস নিবেন না। আমি কিছুদিন পর থেকে একটা জব করবো তখন ধীরে ধীরে আপনার এতোদিনের সব খরচের টাকা শোধ করে দিবো। জব পাওয়ার পরে চাইলে আমি হোস্টেলে গিয়েও উঠতে পারি কিন্তু আমি তা পারবো না কারণ, আপনার বাবা-মায়ের কাছ থেকে যে ভালোবাসা পেয়েছি এতে করে তাদের কষ্ট দিয়ে দূরে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমাদের হিসাবটা নাহয় আমাদের মধ্যেই থাকুক, শুভ রাত্রি!”
বলেই সানাম দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। দরজা খুলে যেই বের হবে তখনই সানাম থেমে বললো,
-“কাল থেকে আপনার আর আমায় ভার্সিটি ছেড়ে আসার প্রয়োজন নেই। আমি নিজের পথ একাই চলতে জানি!”
বলেই হনহন করে সানাম নিজের ঘরে চলে গেলো। খাবার ওভাবেই ডাইনিং এ পরে রইলো। কিছুক্ষণ আগে সানামের যেই খিদেটা ছিলো সেটা যেন মরে গেছে।
ফারিশ তখনো নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সানামের কথাগুলো ফারিশ কেন যেন হজম করতে পারছে না। বুকের বা-পাশে কেমন চিনচিন ব্যথা করছে তার। কথাগুলো এখনো যেন তার কানে বারি খাচ্ছে। এই চিনচিন ব্যথার মানে কী?
★
-“নাহ! আর অপেক্ষা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়, কিছুদিনের মধ্যেই পাপা-মাম্মাকে সবটা জানাতে হবে। আমি শিওর ফারিশের ঘরে কোনো মেয়ে ছিলো। যে করেই হোক ফারিশকে আমি হাসিল করবোই!” বলেই বুশরা রাগে ফুঁসতে লাগলো। এই বুশরার পাগলামি ফারিশ বেশ হারে হারে জানে তাই সে সবসময় বুশরা মেয়েটার থেকে একশো হাত দূরে থাকে। বুশরা হচ্ছে ফারিশদের পাশের এপার্টমেন্টের মালিকের মেয়ে। বুশরা তাকে ভার্সিটি লাইফ থেকেই পছন্দ করে। অনেকবার প্রপোজালও দিয়েছে কিন্তু ফারিশ বরাবরই এসব প্রেম-ভালোবাসার থেকে নিজেকে দূরে রেখেছিলো। তারও আলাদা ইচ্ছা আছে। সে চায় না বিয়ের আগে কোনো মেয়ের প্রতি সে দূর্বল হোক, তাই তার কোনোদিনও কোনো মেয়ের প্রতি ইন্টারেস্ট ছিলো না। তবে এই একজন সানামই তাকে দূর্বল করেছে। কিন্তু তার দূর্বলতা ঠিক কোথায় ফারিশ আজ অবধি ধরতে পারেনি।
সানাম বেলকনিতে হাটুতে দুই হাত ভাঁজ করে বসে নির্বাক হয়ে আকাশের পানে তাকিয়ে আছে। বাইরে থেকে তাকে স্বাভাবিক দেখালেও তার ভেতরে কঠিন তুফান বয়ে যাচ্ছে। সানাম যেই তার অতীতে ডুব দিবে ওমনি বাইরের কুকুরের ঘেউ ঘেউ শুনে সানামের ধ্যান ভাঙলো। সানাম বেশি চিন্তা না করে একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভেতরে চলে গেলো। এসব আজেবাজে চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলার একমাত্র উপায় হচ্ছে ঘুম। তাই দেরী না করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।
পরদিন,
নাস্তার সময় ফারিশ প্রায় কিছুক্ষণ পরপরই আড়চোখে সানামের দিকে তাকিয়েছে কিন্তু সানামকে একবারের জন্যেও নিজের দিকে তাকাতে দেখলো না। এতে ফারিশের কিছুটা খারাপ লাগলেও সে প্রকাশ করলো না। নাস্তার পর্ব সেরে ফারিশ এবং সানাম একসাথেই বের হলো। ফারিশ লিফটে গিয়ে উঠলেও সানাম সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালো। সানামের এমন এভয়েড কেন যেন ফারিশ মেনে নিতে পারছে না। ফারিশের সানামকে পিছু ডেকে বলতে ইচ্ছা করছে, “আমি তোমায় ভার্সিটি ড্রপ করে দিবো।” কিন্তু এই কথাগুলো কেন যেন ফারিশের গলাতেই দলা পাকিয়ে যাচ্ছে, বলতে পারছে না। সামান্য একটা বাক্যতেই তার দ্বিধাবোধ আকাশ সমান।
সানাম রিকশার জন্য বাসার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো হুট করেই একটা মেয়ে এসে সানামের সামনে দাঁড়ালো। পোশাক-আশাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে মেয়েটা বেশ বড়লোক ঘরের মেয়ে। মেয়েটা সানামকে এমন কিছু কথা বললো যে থেকে সানামের পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে গেলো।
-“তুমি ফারিশের কাজিন হও রাইট?”
সানাম কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে মেয়েটার দিকে তাকালো। প্রায় সকলেই জানে সানাম অন্তুর বোনের মেয়ে। সানাম নিজেও এ বিষয়ে অবগত, তাই সে কিঞ্চিৎ মাথা নাড়ালো। বুশরা চোখের সানগ্লাস খুলতে খুলতে বলে,
-“গুড! তোমাকে কিছু কথা বলার ছিলো তাই মাঝরাস্তায় তোমার পথ আটকালাম। বাই দ্যা ওয়ে, ফারিশ আমার বয়ফ্রেন্ড, আমরা একে অপরকে ভালোবাসি। কিছুদিন পর আমাদের বিয়েও হতে যাচ্ছে। তাই তুমি কাজিনের মতোই থেকো নয়তো তোমায় ননদ হিসেবে দেখবো না, সোজা গেট আউট করে দিবো, বুঝলে মিস? আমার ফারিশের থেকে দূরে থাকবা! বাই চান্স যদি কথার খেলাপ করো, তোমায় আমি ছাড়বো না।”
বলেই বুশরা চোখে সানগ্লাস দিয়ে চলে গেলো।
কেউ একজন মনে মনে জ্বলতে লাগলো।
-“সুন্দর পোলার প্রেমে পরার এই এক জ্বালা। দুদিন পরপর এসে কেউ না কেউ বলবে ফারিশ তার প্রেমিক, তার ভালোবাসা, সবশেষে হ্যান ত্যান ভাতের ফ্যান। যত্তোসব আজারে ঝামেলা।”
ভেবেই হনহন করে হাঁটা ধরলো।
চলবে