মহব্বত❤️,পার্ট ৩,৪,৫
Writer-❤️ Israt_Jahan_Isu❤️
পার্ট ৩
মাইশার মা চলে যায়,,কিন্তু মাইশা কিছুতেই তার দুই চোখের পাতা এক করতে পারছে না,,, চোখের পানিতে আজ বালিশ ভেজাচ্ছে কিন্তু কাউকে বুজতে ও দিচ্ছে না সে কষ্টে আছে,,,
ফজরের আজানের সময় মাইশা উঠে অযু করে নামাজ আদায় করে হাত তুলে আল্লাহর কাছে সাহায্য চায়,
মাইশাঃ আমার কি করা উচিত আমি কিছু বুজছি না আমাকে সাহায্য করুন আল্লাহ,,,এতো বড় সিদ্ধান্ত কিভাবে আমি নিবো কিন্তু পরিবারের সুখের জন্য যে এই মুহূর্তে এই প্রস্তাবে রাজি হওয়া ছাড়া যে উপায় নেই আমার কি করবো আমি জানি না আমাকে পথ দেখান আল্লাহ সাহায্য করুন,,,
মাইশা মোনাজাতে চোখের পানি ফেলে,,,
নামাজ শেষ করে মাইশা বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে চারপাশ টা ভালো লাগছে শীতল বাতাস কিচিরমিচি পাখির ডাক যেন এক মুহূর্তে সব চিন্তা কষ্ট ভুলে যায়,,,
সকাল ১০ টায়,
রাইশা আজ কিছুতেই স্কুলে যেতে চাচ্ছে না,,মা অনেক করে বলছে স্কুল যেতে তবুও যে যাচ্ছে না
মাইশাঃ কি ব্যাপার রাইশা এতো করে বলছে আম্মু স্কুল না গিয়ে চুপচাপ কিজন্য বসে আছিস হ্যাঁ?
রাইশাঃ স্কুল গিয়ে কি প্রতি দিনের মতো আজও অপমানিত হবো আপু?
মাইশাঃ মানে?কিসের অপমান?
রাইশাঃ স্কুলের বেতনের জন্য,,প্রতি দিন ম্যাম এসে কত কিছু বলে চুপচাপ শুনি আর পারছি না আপু,,ম্যাম বলেছে স্কুলের বেতন না দিলে স্কুলে যেন আর না যাই,,,
মাইশা কিছু আর বলে না চুপ করে আছে সত্যি দরিদ্রতা না আসলে হয়তো কখনো বুজাই যাইতো না মানুষ আসলে কেমন,,,টাকা দিয়েই যেনে এখন সব কিছু কেনা যায় সব কিছু করা যায়,যার টাকা আছে তার দাম আছে যার টাকা নেই তাকে কে মুল্য ও দেয় না,,,মধ্যবিত্ত পরিবারের একটা অভ্যাস খুবই খারাপ আসলে তারা না খেয়ে মরবে তবুও কারো কাছে মাথা নথ করে হাত পেতে টাকা নিবে না,,,কি করবে মধ্যবিত্তের যে আত্নসম্মানটা একটু বেশি তারা হাজার কষ্ট পেলে ও সহজে কাউকে বলে বেড়াতে যায় না যে তারা খুব কষ্টে আছে,,,,
এক কাপ রঙ চা আর এক মুটো মুড়ি খেয়েই মাইশা বের হয়,,,রাস্তায় হাঁটছে আর ভাবছে মিরাজ সাহেবের প্রস্তাবে রাজি হলে তার পরিবার অনন্ত মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারবে ভালো মন্দ কিছু হলে ও খেতে পারবে ছোট ভাই বোন স্কুলের বেতনের জন্য স্কুল যাবে না এমন বাহানা হয়তো আর করবে না,বাড়িওয়ালা ও আর এসে দিন দিন অপমান করবে না,,,
এইদিকে,
মিরাজ সাহেবের কথা পুরো বাড়ি সকাল থেকে আজ সাজানো হচ্ছে,,এতো সুন্দর করে সাজানো হয়েছে যে সবাই অবাক কিন্তু মিরাজ সাহেব কাউকে কিছু বলছে না,,,
শাহেদাঃ এইসব কেন?
মিরাজ শাহেদার কথায় পাত্তা না দিয়ে ফোনে ব্যস্ত থাকে,,,
ম্যানেজার কল দিয়ে বলে
ম্যানেজারঃ স্যার মাইশা ম্যাডাম এসেছে কি করবো?
মিরাজঃ আমি জানতাম সে আসবে অপেক্ষা করতে বলো আমি আসছি কিছু ক্ষনের মধ্যেই,,
এইদিকে মিরাজের মা ও আসে এসে বলে
মিরাজের মাঃ এইসব আয়োজন কেন মিরাজ?আজ বাড়িতে এমন কি যে এইভাবে বাড়ি সাজালি?
মিরাজঃ বিয়ে বাড়ি তো এইভাবেই সাজায় আম্মা,,,
মিরাজের মাঃ বিয়ে বাড়ি মানে?কার বিয়ে?
মিরাজঃ আকাশের বিয়ে,,আজ আকাশের বিয়ে আম্মা আর হ্যাঁ সবাই রেডি থাকবে আমাদের আকাশের যে বিয়ে
মিরাজের মা ও শাহেদা পুরো অবাক হয়ে যায় এই শুনে,মিরাজ সাহেব আর একটা কথা ও না বলে চলে যায়,,,
মিরাজের মাঃ ছোট বউমা এইসবের মানে কি?আকাশের বিয়ে মানে?তুমি জানো না আকাশ যদি সামান্য টুকু টের পায় তাহলে কি হবে?
শাহেদাঃ আমি কিছু জানি না আম্মা,,,মিরাজের মাথায় চলছে কিছু বুজতেছি না,,আকাশের এমন অবস্থায় বিয়ে এইসব কিছু আমি বুজতেছি না আম্মা,,
মিরাজের মাঃ আল্লাহ জানে আজ কি তুফান হবে আর এমন কে যে আকাশকে এই অবস্থায় বিয়ে করতে চায়?
শাহেদা ও মিরাজের মা এইবার চিন্তায় পড়ে যায়,,,
এইদিকে
মিরাজ অফিসে আসে এসে দেখে মাইশা বসে আছে,,,,
মিরাজঃ আমি জানতাম তুমি আজ আসবে,,,
মাইশাঃ আমার টাকার সত্যি অনেক প্রয়োজন তাই আমি আপনার সব প্রস্তাবে রাজি
মিরাজঃ তোমার টাকার প্রয়োজন আর আমার তোমাকে,,,,এই সিদ্ধান্ত নিয়ে তুমি ভালোই করলে তোমার পরিবারের সব দায়িত্ব আজ থেকে আমার কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে
মাইশাঃ শর্ত?
মিরাজঃ হ্যাঁ শর্ত তুমি তোমার পরিবারের সাথে এই এক বছর কোনো রকম যোগাযোগ করতে পারবে না,,না তাদের সাথে দেখা করতে পারবে মোট কথা তুমি এই এক বছরে এই ভুলে যেতে হবে তোমার পরিবার আছে,,,
মাইশাঃ আমার পরিবারের সাথে সব সম্পর্ক শেষ করতে বলছেন?মানে কি?
মিরাজঃ কারন ছাড়া কিছু হচ্ছে না মাইশা,,এক বছর পর তুমি মুক্তি চিন্তা করিও না তোমার গায়ে দাগ লাগতে আমি দিবো না শুধু তুমি আমার ছেলের বউ হয়ে থাকবে এক বছর পর্যন্ত তারপর তুমি মুক্ত,,,আর এই এক বছরের মুল্য তুমি পেয়ে যাবে সাথে তোমার পরিবারের সকল দায়িত্ব টুকু আমার
মিরাজ মাইশার দিকে একটা দলিল এগিয়ে দেয়
মিরাজঃ এইটা তোমার নতুন বাড়ির দলিল যেটা শুধু তোমার যেখানে তোমার পরিবার খুব সুখে থাকবে,,তোমার বাবার চিকিৎসা ভালো ভাবে হবে আর ছোট ভাই বোনদের ভালো ভাবে পড়াশোনা,
মাইশার চোখ ভিজে যায়,,,আজ পরিবারের সুখের জন্য তাকে যে অনেক ত্যাগ করতে হবে,,,
মিরাজঃযাও মাইশা আজ পরিবারের সাথে দেখা করে নাও কারণ তোমার কাছে মাত্র তিন ঘন্টা আছে এর পর তুমি আর তোমার পরিবারের কাছে যেতে পারবে না,,,আর হ্যাঁ তোমার বাড়িওয়ালাকে অলরেডি সব ভাড়া দেওয়া হয়ে গেছে প্লাস তোমার ভাই বোনের স্কুলের বেতন,,,
মাইশা এই তো বুজতে পারে যে মিরাজ সব কিছু আগে থেকে প্লেন করে রেখেছে তার দূর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে কিন্তু কি করবে এখন যে তাকে রাজি হতেই হবে এই ছাড়া যে উপায় নেই,,,
মিরাজঃ তিন ঘন্টা পর তোমার নতুন বাড়ির সামনে গাড়ি থাকবে উঠে পড়বে,,আর হ্যাঁ পরিবারকে কিছু একটা বলে আসবে যাতে তারা তোমায় না খুঁজে,,,
মাইশা চুপচাপ চলে যায়,,বাসায় গিয়ে দেখে মা বসে আছে,,,
মাইশাঃ আম্মু কথা ছিলো
মাইশার মাঃ কি ব্যাপার মা এতো চিন্তিত লাগছে কিছু কি হয়েছে?
মাইশাঃ আমার সাথে আসো কথা আছে
মাইশা তার মাকে রুমে নিয়ে যায়,,,
মাইশাঃ আম্মু আমার একটা চাকরি হয়েছে,,,
এই শুনেই মাইশার মা খুব খুশি হয়ে যায়,,,
মাইশার মাঃ এই তো অনেক খুশির খবর এইভাবে বলছিস কেন?
মাইশাঃ আমার পুরো কথা শুনো,,
মাইশার মাঃ হ্যাঁ বল
মাইশাঃ অফিস টা অনেক বড়,অনেক বড় একটা চাকরি পেয়েছি অনেক বড় দায়িত্ব আমার ঘাড়ে আম্মু,,,
মাইশার মাঃ এই তো ভালো কথা,,,
মাইশাঃ আম্মু অফিস থেকে থাকার জন্য একটা বাড়ি দিয়েছে সাথে কিছু টাকা যাতে আমরা ভালো ভাবে চলতে পারি,,,
মাইশার মা এই শুনে খুব খুশি হয়
মাইশাঃ কিন্তু আমাকে কয়েক মাসের জন্য রাজশাহী যেতে হবে অইখানে বড় একটা ফ্যাক্টরি আছে অইখানেত পুরো দায়িত্ব দিয়েছে স্যার৷
মাইশার মাঃ মানে?আজ চাকরি হয়েছে আর আজকেই যেতে হবে এতো মাসের জন্য,,শুন একা যাওয়া লাগবে না আমরা ও সাথে যাবো তোর
মাইশাঃ আরে আম্মু আমি একা যাচ্ছি না অফিস থেকে অনেক গুলো মেয়ে ও যাচ্ছে তাদের ও সেম প্রথম দিন কারো বছর,,,তুমি শুধু সবার খেয়াল রাখবে আর আমি তো যোগাযোগ রাখবো ব্যস কয়েক মাস আম্মু তারপর এসে যাবো আবার,,,
মাইশার মাঃ লাগবে না এমন চাকরি আমাদের,,,কষ্টে দিন কাটাবো তবুও নিজের মেয়েকে একা কোথাও যেতে দিবো না,,
মাইশাঃ আম্মু এই মুহূর্তে চাকরিটা আমার জন্য আর পরিবারের জন্য অনেক প্রয়োজন,,,রাইশা মাহেরের পড়াশোনা বাবার চিকিৎসার খরচ খাওয়ার খরচ সব কিছুর জন্য করতে হবে,,,আর তুমি আমাকে বুজি বিশ্বাস করো না হুম?আমি এমন কিছু কখনও করবো না যার কারনে তোমার আর বাবার মাথা নিচু হয়,,এই মনে রাখিও শুধু যা করছি এর পিছনে একটা উদ্দেশ্য নিয়ে করছি,,,
মাইশার মা কিছু বলে না মাইশা কোনো রকম বুজিয়ে নেয়,,,
মাইশাঃ কিছু ক্ষনের মধ্যে আমাকে যেতে হবে,,আর তোমরা কালকের মধ্যে নতুন বাড়িতে চলে যাবে এই নাও বাড়ির দলিল আর হ্যাঁ সবার খেয়াল রাখার সাথে সাথে নিজের খেয়াল ও রাখবে কেমন
মাইশার মা কেঁদে উঠে,,,মাইশা ও কেঁদে উঠে,,এমন সময় রাইশা আর মাহের আসে তারা ও এসে জড়িয়ে ধরে মাইশাকে,,,
মাইশাঃ কেউ দুষ্টুমি করবি না ভালো ভাবে পড়াশোনা করবি
কিছু ক্ষন পর
সময় হয়ে যায় মিরাজ সাহেব যে টাইম দিয়েছে তা শেষ ও হয়েছে বাহিরে গাড়ি এসে দাঁড়িয়ে আছে,,,,মাইশা তার মাকে আর বাবাকে সালাম করে জড়িয়ে ধরে রাখে চোখ থেকে পানি পড়তে দেয় না জানে যদি কাঁদে মা বাবা সন্দেহ করবে,,,
মাইশার মাঃ গিয়ে কল করবি আর হ্যাঁ নিজের খেয়াল রাখবি,,,তাড়াতাড়ি আসবি কেমন আমরা ও যাবো দেখা করতে
মাইশা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে বের হয়,,,গাড়িতে উঠে পড়ে একটি বারের জন্য ও পিছনে তাকায় না জানে তাকালে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারবে না,,,
মাইশাঃ আজ যে আমাকে পারতেই হবে,,,
মাইশা চোখের পানি মুছে নেয়,,,,
গাড়ি একটা বড় পার্লারে সামনে এসে থামে মাইশাকে ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়,,,পার্লারের মেয়েরা মাইশাকে খুব সুন্দর করে বউ সাজিয়ে দেয়,,,কথায় আছে মেয়েরা সব চেয়ে বেশি সুন্দর লাগে বউ সাজে,,,তেমন আজ মাইশাকে ও অপরুপ সুন্দর লাগছে,,,
বউ সাজার পর মাইশা আয়নায় নিজেকে নিজে দেখছে কত না শখ ছিলো ছোট বেলায় বউ সাজবে কিন্তু আজ সেজেছে ঠিক কিন্তু ইচ্ছেতে নয়,,,,
মিরাজ সাহেব ও পার্লারে এসে দেখে মাইশা বউ সাজে দাঁড়িয়ে আছে,,একটা রকেট দেয়
মিরাজঃ এইটা পড়ে নাও কখনও এইটা খুলবে না আর হ্যাঁ আজকের পর তোমার নাম মাইশা নয় তোমার নাম মাহি,,,,
মাইশাঃ স্যার কিন্তু কেন?
মিরাজঃ প্রশ্ন করার জন্য তোমায় টাকা দেওয়া হয় নাই ব্যস তাই করবে যা বলা হবে,,,আজকের পর তুমি মাহি আর মাহি হয়ে থাকবে এই এক বছর, কখনও যেন কেউ বুজতে না পারে তুমি কে,,,তোমার পরিচয় শুধু একটাই তুমি মাহি৷
মাইশা যেন কিছু বুজতে পারে না,,,মিরাজ মাইশাকে নিজের বাড়ি নিয়ে যায়,,,মাইশা পুরো অবাক এতো বড় বাড়ি যেন একটা বড় প্রাসাদ,,,,অনেক গুলো গাড়ি বাড়ির সামনে,,,গাড়ি থেকে মিরাজ নিমে বলে
মিরাজঃ মাহি নামো এসে গেছো তুমি,,,
মাইশা চুপচাপ নামে,,,বাড়ির দাড়োয়ান কাজের লোক গুলো পুরো অবাক মাইশাকে দেখে,,সবার চোখ যেন কপালে,,,
মিরাজ বাড়ির ভিতরে ডুকে হল রুমে সবাই আছে,,কাজী সাহেব ও উকিল ও এসে গেছে,,,
সিরাজঃ ভাই সাহেব আকাশের বিয়ে মানে? এতো কিছু কেন বলবেন কি?
মিরাজঃ সবার প্রশ্নের উত্তর এখনই পাবে,,,আসো ভিতরে
মাইশা ভিতরে আসে,মাইশাকে দেখে সবাই অবাক হয়ে যায়,,বউ সাজে মাইশাকে দেখে সবাই একটা কথাই বলে উঠে
সবাইঃ মাহি????
মাইশা ও এই নাম শুনে একটু অবাক কে এই মাহি?কেম বা তাকেই সবাই মাহি ডাকছে তাহলে কি সবাই জানে যে সে মাইশা তাকে এই নামে থাকতে হবে,,এই মাহির নামের পিছনে কি রহস্য আছে যা মাইশার মাথায় ঢুকছে না,,
চলবে,,,,
❤️ #মহব্বত❤️
Writer-❤️ #Israt_Jahan_Isu❤️
Part-4
মাইশা ও এই নাম শুনে একটু অবাক কে এই মাহি?কেম বা তাকেই সবাই মাহি ডাকছে তাহলে কি সবাই জানে যে সে মাইশা তাকে এই নামে থাকতে হবে,,এই মাহির নামের পিছনে কি রহস্য আছে যা মাইশার মাথায় ঢুকছে না,,
শাহেদাঃ কি করে সম্ভব এইটা?মাহি কিভাবে আমাদের সামনে?
মিরাজের মাঃ মিরাজ কি হচ্ছে বলবি?এই মেয়ে কে?মাহির মতো দেখতে কেন?সে কি আসলে আমাদের মাহি?
সিরাজঃ কিভাবে সম্ভব এইটা মাহি কিভাবে ফিরে আসতে পারে মাহি তো…..।
সিরাজ আর বলতে পারে না এর আগেই মিরাজ উঁচু সুরে বলে উঠে
মিরাজঃ তোমরা কি হেপ্পি নও মাহিকে দেখে?আর আম্মা এইটা আমাদের সবার মাহি,,হ্যাঁ মাহি ফিরে এসেছে সবার মাঝে আবারও,,,
শাহেদাঃ মানে কি মিরাজ?মাহি ফিরে এসেছে মানে কি?ফিরে যদি আসার ছিলো এই দুই বছরে সে কেন আসে নাই?কই ছিলো সে?
মিরাজঃ আস্তে শাহেদা,,উঁচু আওয়াজ আমার পছন্দ নয় ভালো করে জানো তো একটু আস্তে কথা বলো
মাইশা শুধু চুপচাপ দেখছে কি বলবে সে তার কিবা বলা আছে কিছু তো তার মাথায় ঢুকছে না,,কিন্তু এই বুজেছে সে মিরাজ সাহেব তাকে এই বাড়িতে এনেছে কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে,,,,আর সেটা কি সে জানে না।
মিরাজের মাঃ ছোট বউমা জিজ্ঞেস করতে না পারলেও আমি তো করতে পারি,এইবার বল যদি সে মাহি হয়ে থাকে এই দুই বছর কই ছিলো সে?
মিরাজঃ সব কিছু জানবে,,,কিন্তু হ্যাঁ মাহি আমাদের মাঝে ফিরে এসেছে এইটা সব চেয়ে বড় সত্যি,,,আর আম্মা মাহি একটা ছোট গ্রামে ছিলো এই দুই বছর তার চিকিৎসা চলছিলো এতো দিন সে কোমায় ছিলো,,, আমার এক লোক তাকে দেখে আমাকে জানিয়েছে ব্যস আমি নিয়ে এসেছে ভালো চিকিৎসা পেয়ে সুস্থ হয়েছে কিন্তু তার ছোট মেমোরি লস হয়েছে,,,
মাইশা হা হয়ে তাকিয়ে আছে৷
মাইশাঃ(স্যার এতো গুলো মিথ্যা কেন বলছে?)
রিমাঃ কেন জানি না মনে হচ্ছে ছোট বাবা সব কিছু মিথ্যা বলছে,,আমার পুরো সন্দেহ হচ্ছে ছোট বাবার প্রতি (আসতে করে বলে সাগরের কানের কাছে গিয়ে)
সাগরঃ উফফ রিমা সব সময় তো পজেটিভ চিন্তা ভাবনা করো,,,এইটা যদি মাহি না হত তাহলে এতো মিল বা কিভাবে? একটু ব্রেন লাগিয়ে ভাবিও খালি মাথা একটা
রিমাঃ হু
মিরাজের মাঃ তুই মাহিকে যেহেতু পেয়েছিস তাহলে আমাদের কাছে কেন বা আনলি না আর কেন বা ওকে এইভাবে বউ সাজিয়ে আনলি?
মিরাজঃ এতো প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারছি না আম্মা৷ ব্যস সবার জন্য এখন এই জানা দরকার যে মাহি ফিরে এসেছে,
শাহেদা মাইশার কাছে যায়,,গালে হাত দিয়ে বলে
শাহেদাঃ আমার আকাশটা এইবার তাহলে আবার আগের মতো হবে,,,আমার আকাশটাকে আবার আমাদের কাছে ফিরিয়ে দে মাহি,,,তুই জানিস না মাহি তুই যাওয়ার পর আকাশের কি অবস্থা হয়েছে,,আজ পর্যন্ত নিজের রুম থেকে বের হয় নাই,,
শাহেদা কান্নার জন্য কথাও বলতে পারছে না,,মাইশা শাহেদার হাত ধরে বলে
মাইশাঃ সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে চিন্তা করিয়েন না,,,
মিরাজঃ রিমা মাহিকে আকাশের রুমে নিয়ে যাও আর মাহি আকাশকে নিয়ে নিচে আসো বিয়ের কাজ কিছু ক্ষনে শুরু হবে,,,,
রিমাঃ কিন্তু ছোট বাবা মাহি তো আকাশ ভাইয়ার রুম চিনে তাহলে কিজন্য নিয়ে যাবো?
মিরাজঃ তোমাকে যা বলেছি তা করবে অযথা প্যাচাল করবে না রিমা(ধমক দিয়ে)
রিমা মাইশাকে নিয়ে যায় আকাশের রুমে,,,আজ মাইশা এই তো বুজতে পারে এই ঘরে শুধু মিরাজ সাহেবের কথা চলে,,,,
রিমাঃ আচ্ছা মাহি তুমি কি সত্তি কোমায় ছিলে এতো দিন??
মাইশা কি বলবে বুজতে পারছে না,
মাইশাঃ হুম
রিমা আর কিছু বলবে এর আগেই মিরাজ সাহেব তাকে ডাক দেয়,,,সে রুম দেখিয়ে চলে যায়,,,,
মাইশা ভয়ে দাঁড়িয়ে আছে,, দরজা খুলার যেন সাহস পাচ্ছে না
মাইশাঃ এই আমি কই এসেছি কি করছি কিছু বুজছি না,,,এরা আমাকে কেন এইভাবে মাহি মাহি করছে কে এই মাহি?আর এই আকাশটা কে?
মাইশা এইসব ভাবতে থাকে৷ ভাবতে ভাবতে দরজা খুলে ভিতরে যায়,,দরজা খুলার আওয়াজ পেয়ে আকাশ ভিতর থেকে ফুলের দানি ছুড়ে মারে,,,সোজা এসে মাইশার কপালে লাগে
মাইশাঃ আহায়ায়া
হাত কপালে সাথে সাথে নেয়,,কপাল টুকু অনেক টুকু কেটে যায়,,পিছন থেকে মাইশার আওয়াজ পেয়ে শাহেদা দৌড়ে এসে দেখে মাইশার কপাল অনেক টুকু কেটে গেছে,,,,
শাহেদাঃ সেকি অনেক টুকু কেটে গেছে তোমার কপাল?
মাইশাঃ কিছু হবে না আ,,,সলে ভিতর থেকে কে যেন এই ফুলের দানি টা ছুড়ে মারে যার কারনে,,,,,
শাহেদাঃ আকাশ মেরেছে,,,,
ভিতর থেকে একটা আওয়াজ
আকাশঃ বের হও আমার রুম থেকে একদম কেউ আসবে না আসলে মেরে ফেলবো,,,
শাহেদাঃ ভিতরে যাও
মাইশার সাহস হচ্ছে না আর যাওয়ার তবুও সে সাহস করে ভিতরে যায় লাইট দিতেই দেখে খাটের এক কোণায় এক লোক হাঁটু ঘেরে বসে আছে,,,লম্বা লম্বা চুল চোখ গুলো দেখতে অনেক টা ভয়ানক,,শার্ট যেটা পড়েছে সেটাও ছিড়া,,দাড়িতে যেন মুখটা ভালো করে দেখাই যাচ্ছে না,,,,
শাহেদা মাইশার কাঁধে হাত রেখে বলে
শাহেদাঃ তোমার আকাশ৷ তাকে বলো তুমি এসেছো দেখবে সে কিভাবে ছুটে আসে তোমার কাছে,,,
মাইশা শুধু তাকিয়ে আছে এই আকাশ?আর তাকেই বিয়ে করতে হবে? কিন্তু তাকে দেখে তো বুজা যাচ্ছে সে স্বাভাবিক নয়,,,
মাইশাঃ আকাশ,,,,আমি ফিরে এসেছি দেখো
মাইশা অনেক সাহস করে তার হাতটি বারিয়ে দেয়,,,আকাশ উপরে তাকিয়ে দেখে তার মাহি,নতুন বউ সাজে তার মাহি,,,সে চোখ সে ঠোঁট সে চাহনি তার মাহি তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে,
আকাশঃ মা,,,হি তুমি এসেছো?তুমি আমার কাছে ফিরে এসেছো?
আকাশ দাঁড়িয়ে যায় মুখে এক রাশ হাসি নিয়ে দৌড়ে এসে ঝাপটা মেরে জড়িয়ে ধরে মাইশাকে,,,মাইশা পুরো থমকে যায় এই প্রথম কোনো ছেলে তাকে এইভাবে জড়িয়ে ধরেছে,,হাত যেন কাঁপছে সাহস আর দিচ্ছে না আকাশের পিঠে হাত রাখার,,,,,
আকাশঃ আমি জানতাম আমার মাহি আমাকে ছাড়া থাকতেই পারবে না সে অবশ্যই আমার কাছে ফিরে আসবেই,
আকাশ মাইশাকে ছেড়ে গালে হাত দেয়,,,কপালে নজত যেতেই যেন আকাশ ঘাবড়ে যায়
আকাশঃ র,,,রক্ত
মাইশার কপালে রক্ত দেখে আকাশ চটপট করতে থাকে,,,কেঁদে দেয় সে পুরো
আকাশঃমাহি রক্ত,,,আমার মাহির রক্ত
শাহেদাঃ মাহি তাড়াতাড়ি রক্ত মুছো আকাশ রক্ত দেখলে ঘাবড়ে যায় কিভাবে আমার মাথা থেকে বের হয়ে গেলো উফফ আল্লাহ,,
মাইশা তাড়াতাড়ি হাত দিয়ে রক্ত মুছে নেয় কিন্তু তবুও যেন মুছছে না তাই সে রুম থেকে বের হয়ে যায়,,ততক্ষণে রিমাও ব্যান্ডেজ নিয়ে আসে তাড়াতাড়ি মাইশার কপালে ব্যান্ডেজ করে দেয়,,
এইদিকে
আকাশ পুরো চটপট করছে ভয়ে সে এক পাশে গুছে যাচ্ছে৷
রিমাঃ মাহি শেষ যাও তাড়াতাড়ি আকাশের কাছে
মাইশা আবার ভিতরে যায় আকাশ এক পাশে বসে বলছে
আকাশঃ মাহির রক্ত মা,হি র,,,ক্ত
মাইশা আকাশের কাছে গিয়ে বসে,,,
মাইশাঃ আমি ঠিক আছি দেখো আমি পুরো ঠিক আছি,,,,আমার দিকে তাকাও
আকাশ মাইশার দিকে তাকায় দেখে মাইশার কপাল থেকে আর রক্ত পড়ছে না,,,,,
মাইশাঃ তুমি আমায় বিয়ে করবে আকাশ?
আকাশ এই শুনে খু্শিতে মাইশাকে জড়িয়ে ধরে হ্যাঁ বলে,,,এইদিকে শাহেদা নিজের চোখের পানি মুছে নেয়,,,
শাহেদাঃ হয়তো এইবার আমার আকাশ সুস্থ হয়ে যাবে তার মাহি যে ফিরে এসেছে,,,
মাইশা আকাশকে নিয়ে যায় নিজের সাথে নিচে,,আকাশ এই দুই বছরে নিচে নামে নাই,,মাইশার হাত শক্ত করে ধরে নিচে নামছে,,মিরাজ আর তার পুরো পরিবার খুশিতে তাকিয়ে আছে,,,
রিমাঃএইটা মাহি কি করে হতে পারে?মাহি এইভাবে কখনও কথা বলতো না,,আর এতো শান্ত কিভাবে তার কপালে আঘাত করার পর ও,,নিশ্চয়ই কিছু লুকাচ্ছে ছোট বাবা আর এই মেয়ে মিলে,,,,
এইদিকে
কাজি সাহেব বিয়ে পড়ায়,,আকাশ শুধু মাইশার হাত শক্ত করে ধরে আছে,,,
কাজী সাহেবঃ তুমি কি এই বিয়েতে রাজি?যদি রাজি হও তাহলে বলো কবুল,,,
মাইশা চুপসে যায় আজ তার বিয়ে কিন্তু তার মা-বাবা কেউ তার পাশে নেই,,মা-বাবার কত না স্বপ্ন ছিলো তার বিয়ে নিয়ে কিন্তু এইভাবে তাকে করতে হচ্ছে আর এইটা কি বিয়ে এইটা তো শুধু ডিল এর বেশি কিছু না,,,,
মিরাজঃ মাহি কাজি সাহেব কিছু বলছে,,,
মাইশা মিরাজের দিকে তাকায় তখন তার মনে পড়ে সে আসলে কেন এসেছে এইখানে,,,
মাইশাঃ কবুল,,কবুল,,,কবুল,,,
সবাইঃ আলহামদুলিল্লাহ
আকাশকে বলতে বলে সে মাইশার দিকে তাকিয়ে আছে
মাইশাঃ আকাশ,,,
আকাশঃ কবুল,,,কবুল,,,কবুল(অনেক খুশি হয়ে)
সবাই আনন্দে মেতে উঠে,,,,তারপর উকিল সাহেব এসে কাবিননামা দেয় মাইশা সাইন করতে যাবে তখন মিরাজ বলে উঠে
মিরাজঃ মাহি সাইন করো এইখানে(মাইশার কানের কাছে গিয়ে আসতে করে বলে)মাহি দিয়ে সাইন করবে,,,,
মাইশার বুকটা মুচড়ে উঠে,,,কবুল সে বলেছে ঠিক কিন্তু কাবিননামায় সাইন করতে হচ্ছে মাহি নাম দিয়ে,,,মাইশা সাইন করে তারপর আকাশ ও সাইন করে
বিয়ে সম্পন্ন হয়,,,আকাশ আর মাইশাকে নিজেদের রুমে নিয়ে যাওয়া হয়,,,পিছনে পিছনে মাইশার জন্য কাপড় আর আকাশের জন্য কাপড় ও নেওয়া হয়,,,,
শাহেদাঃ তোমার আর আকাশের কাপড়,,,ওর অবস্থা দেখেছো? তুমি যাওয়ার পর কি হাল হয়েছে?এখন তুমি পারো ওকে আবার আগের মতো করে তুলতে,,,
মাইশা শুধু মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানায়,,,
শাহেদা চলে যায়,,,মাইশা আকাশকে একটা শার্ট দিয়ে বলে
আকাশঃ গোসল করে এই শার্ট পড়ে নাও,,
আকাশ শুধু হা করে তাকিয়ে আছে মাইশার দিকে,,,সে বুজতে পারে আকাশ কিছু তার নিজের হাতে করতে পারবে না তাই সে বলে
মাইশাঃ আমি চেঞ্চ করে আসি তারপর তোমার টা করিয়ে দিবো কেমন?
আকাশ মাথা নাড়ায়৷
মাইশা বাথরুমে যায় চেঞ্চ করতে চেঞ্চ করছে আর ভাবছে আকাশ পাগল নয়,,পাগলরা এতো টা স্বাভাবিক আচরণ কখনও করে না,আকাশ অন্য রকম পুরো সে ভাবতে ভাবতে চেঞ্চ করে বের হয়ে এসে দেখে আকাশ বসে আছে,,মাইশা আকাশকে বাথরুমে নিয়ে যায় তারপর পানি ছেড়ে দিয়ে তাকে গোসল করিয়ে দেয়,,,
প্রথম দিনে এইসব করতে হবে সে হয়তো ভাবে নাই,,,এইভাবে তাকে কাউকে যে গোসল করিয়ে দিতে হবে তা কখনও কল্পনা করে নাই,,,
মাইশা আকাশকে গোসল করিয়ে রুমে আনে,,আকাশের চুল গুলো মুছতেছে আর রুমের চারপাশে তাকাচ্ছে,সে যেন পুরো অবাক এখন সে বুজতে পারে কেন বা তাকে সবাই মাহি ডাকছে কেন বা আকাশ তাকে মাহি বলে এতো শান্ত হয়ে আছে,,তার মত দেখতে পুরো এক মেয়ে,,,চুল গুলো কোকড়ানো আকাশের সাথে অনেক ছবি,,,পুরো রুমে যেন শুধু মাহির ছবি,,,,
মাইশাঃ(তাহলে এই কারনে স্যার আমাকে নিয়ে এসেছে,,আমাকে সাহায্য করার পিছনে তাহলে এই উদ্দেশ্য ছিলো কারণ আমার চেহারা এই মেয়ের সাথে মিলে,,,)
চলবে,,,,
❤️ #মহব্বত❤️
Writer-❤️ #Israt_Jahan_Isu❤️
Part-5
মাইশাঃ(তাহলে এই কারনে স্যার আমাকে নিয়ে এসেছে,,আমাকে সাহায্য করার পিছনে তাহলে এই উদ্দেশ্য ছিলো কারণ আমার চেহারা এই মেয়ের সাথে মিলে,,,)
জীবনটা অদ্ভুত আমরা যা চাই তা কখনও হয় না যা আমাদের তাকদিরে লেখা থাকে যেভাবেই হোক না কেন তাই হয় পরিস্থিতি যেমন হোক না কেন আমাদের তাকদিরের লেখাটাই যেন সত্যি হয়,,,হয়তো মাইশার তাকদিরে ছিলো আকাশ আর এমন পরিস্থিতিতে তাকে বিয়ে করতে হয়েছে হয়তো এই ছিলো তার তাকদিরে,,,,
মাইশা ছবির মধ্যে দেখে আকাশ অনেক টা হ্যান্ডসাম আর সুন্দর,,,তার হাসিটা খুব মায়াবী,,,অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে ছবির দিকে আকাশ কতটা হেপ্পি মাহির সাথে সেজন্য হয়তো মাহি যাওয়ায় আজ আকাশের এমন হাল,,
মাইশা এইসব ভাবতে থাকে তা ঘোর কাটে আকাশের ডাকে
আকাশঃ মাহি তুমি আমায় আর ছেড়ে যাবে না তো?
মাইশা আকাশের পাশে বসে,,আকাশ পুরো বাচ্চাদের মত হয়তো বাহানা করে,,,
মাইশাঃ যাবো না তবে আমার একটা শর্ত আছে যদি তা মানো তাহলে সব সময় তোমার পাশে থাকবো,,,
আকাশঃ আ,,মি রা,জি আমি সব কিছুতে রাজি যা বলবা তাতেই রাজি শুধু আমায় ছেড়ে যাবে না কেমন
মাইশাঃ আচ্ছা যাবো না শুধু আমার সব কথা লক্ষি ছেলের মতো শুনতে হবে,,,
আকাশঃ ওকে ওকে আমি সব শুনবো শুধু আমার মাহি আমার কাছে চাই,,,
মাইশাঃ আচ্ছা ঠিক আছে এখন এই বলো কিছু কি খাবে?
আকাশঃ হ্যাঁ তোমার প্রিয় খাবার টা খাবো,,,,
মাইশা চুপসে যায় এই ভেবে যে তার প্রিয় খাবার মানে মাহির প্রিয় খাবার আর তা তো সে জানেই না কি?
মাইশাঃ তা রাতে নয় কাল দিনে খাবে এখন চুপচাপ ভাত খেয়ে ওষুধ খেয়েই ঘুমাবে আর যদি আমার কথা না শুনো আমি চলে যাবো বলে দিলাম হুম,,,
আকাশঃ না না আমি খাবো যা বলবা তা,,,
মাইশা নিচে যায় দেখে সবাই বসে আছে সে আস্তে করে বলে
মাইশাঃশুনছেন?
শাহেদা এগিয়ে আসে
শাহেদাঃ মাহি তুমি এখানে কিছু কি লাগবে?
মাইশাঃ জ্বি আসলে উনার জন্য খাবার লাগবে,আর উনার কি ওষুধ তাও
শাহেদা মুচকি হেসে বলে
শাহেদাঃ আমি এখনই তোমাদের জন্য খাবার পাঠাচ্ছি আর আকাশের সব ওষুধ ওর বিছানার ডান পাশের টেবিলে পাবে সব লেখা আছে কখন কি খেতে হবে,,,
মাইশা মাথা নাড়িয়ে যেতে লাগে মিরাজ বলে উঠে
মিরাজঃ মাহি দাঁড়াও
মাইশা দাঁড়ায় মিরাজ গিয়ে তাকে এক পাশে নিয়ে বলে
মিরাজঃ এখন তো অবশ্যই বুজে গেলে কেন তোমাকে এই বাড়ির বউ আর আকাশের স্ত্রী করেছি,,
মাইশাঃজ্বী স্যার
মিরাজঃ আমার ছেলেটাকে সুস্থ করে তুলার দায়িত্ব এখন তোমার,,,তুমি ওকে সুস্থ করে তুলবে,,,
মাইশাঃ জ্বি স্যার
মিরাজঃ আর হ্যাঁ আমাকে স্যার বলার প্রয়োজন নেই এইখানে আমাকে পাপ্পা ডাকবে আর শাহেদাকে মাম্মা,রিমাকে ভাবি, আর আমার আম্মাকে দাদিমা বলবে
মাইশাঃ জ্বি আচ্ছা
মিরাজঃ আর হ্যাঁ কালকের মধ্যে তোমাকে আমি সব বুজিয়ে দিবো কাকে কি আর কার সাথে কি কথা বলবে?
মাইশা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানায়,,,
মাইশা খুব শান্ত সভাবের মেয়ে,সে অনেক টা নরম,,একটা কথা তার মধ্যে সব চেয়ে হচ্ছে সে হাজার টা কষ্ট পেলেও কখনও প্রকাশ করে না সব সময় চুপচাপ কষ্ট গুলো সহ্য করে নেয়,,,,
মাইশা উপরে যায় গিয়ে দেখে আকাশ পুরো বিছানায় মাহির ছবি দিয়ে ভরিয়ে রেখে মাইশা মুচকি হেসে বলে
মাইশাঃ ছবি গুলো কি এখন গুছিয়ে রাখা যাবে?
আকাশঃ হ্যাঁ হ্যাঁ তুমি তো এখন আমার কাছেই আছো আচ্ছা গুছিয়ে নাও,,,
মাইশা সব গুলো গুছিয়ে নেয়,,মাইশা একটা জিনিস খেয়াল করেছে মাহির চুল গুলো কোকড়ানো আর প্রতি টা ছবিতে মাহি জিন্স শার্ট বা গেঞ্চি বা শর্ট ড্রেস পড়া,,,এই তো বুজেছে মাইশা যে মাহি অনেক মডেল ছিলো,,,
মাইশাঃ এখন চুপচাপ খেয়েই ঘুম কেমন?
আকাশ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানায়,,,আজ আকাশ অনেক খুশি তার মুখের হাসি যেন আজ কমছেই না,,
অনেক রাত,,আকাশ মাইশার আঁচল ধরে ঘুমিয়ে আছে মাইশার চোখে যেন আজও ঘুম নেই শুধু চিন্তা করছে মা-বাবা,রাইশা মাহের এরা কেমন আছে তাদের সাথে একটুও কথা হয় নাই তারা কি চিন্তা করছে,,
মাইশা উঠে বারান্দায় যায়,,বারান্দা থেকে বাহিরের দিক গুলো বেশ সুন্দর লাগছে,,আকাশ ও মেঘলা হয়ে আছে যেকোনো সময় বৃষ্টি হতে পারে,,,
মাইশাঃ আল্লাহর সৃষ্টি অপরুপ সুন্দর,,,আল্লাহ চাইলে আসলে কি না হয়,,,মাহি যে দেখতে পুরো আমার মত একই চেহারা আমরা কিন্তু আমাদের জীবন পুরো ভিন্ন,,,, মাহি অনেক ভাগ্যবতী যে আকাশের মতো এতো ভালোবাসার মানুষ পেয়েছে,,কেউ কাউকে এতো ভালোবাসে যে দুইটি বছর একটু রুমে নিজেকে বন্দী করে রেখেছে আসলে ভালোবাসা অদ্ভুত কখন হয়ে যায় কেউ টের পায়৷
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে
মাইশাঃ একটি বছর শুধু আমাকে আকাশের মাহি হয়ে থাকতে হবে,,আকাশ সুস্থ হয়ে যাওয়ার পর আমাকে ফিরে যেতে হবে আমার পরিবারের কাছে,,জানি না আমার জীবনে আসলে কি আছে তবে এই জানি আকাশকের দায়িত্ব টুকু এখন আমার,,আল্লাহ শুধু আমাকে সাহায্য করুন আমি যে উদ্দেশ্য এইখান এসেছি তা যেন সফল করে যেতে পারি,,,
মাইশা অনেক ক্ষন একা দাঁড়িয়ে থাকে, হঠাৎ বৃষ্টিও শুরু হয়ে যায়,,,বৃষ্টিতে ভিজতে বেশ ভালোই লাগে মাইশার হাত দুটো মেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে উপভোগ করছে বৃষ্টি,,,
এইদিকে,,
শাহেদা মিরাজের পাশে গিয়ে হাতে হাত রেখে বলে
শাহেদাঃ আজ সত্যি আমি অনেক খুশি মিরাজ,, আমার আকাশের মুখের হাসি যে ফিরে এসেছে,,,মাহি যে সত্যি ফিরে এসেছে তা কল্পনার বাহিরে,,
মিরাজঃ হুম
শাহেদাঃ এতো দিন আমরা ভাবতাম মাহি এই দুনিয়ায় নেই মাহি আর কখনও ফিরবে না কিন্তু দেখো মাহি ফিরে এসেছে শুধু আকাশের জন্য,,,
মিরাজঃ(মাহি ফিরে আসে নাই শাহেদা মাহি রুপে মাইশা এসেছে,,,)
শাহেদাঃ কিন্তু যে মাহিকে আমরা জানি সে মাহি যেন নয়,,,এই মাহি যেন পুরো ভিন্ন নরম সুরে কথা বলে তার চাহনি অন্য রকম,,কথা বলার ধরন কাপড় ও পড়ার ধরন সব কিছু পুরো অমিল৷ আর যখন সে আকাশের রুমে প্রথম ঢুকে তখন আকাশ তার কপালে আঘাত করে যদি আগের মাহি হতো তাহলে এইখানে সত্যি তুফান হতো কিন্তু এই মাহি পুরো শান্ত ছিলো
মিরাজঃ কারণ এইটা আসল মাহি নয় শাহেদা
এই শুনে শাহেদা পুরো থমকে যায়,,,
মিরাজঃ সত্যি বলতে শাহেদা এই সত্যি পুরো দুনিয়ার কাছে লুকাতে পারলেও তোমার কাছে আমি পারবো না,,,
শাহেদাঃ তাহলে কে এই মেয়ে?মাহির মতো কেন সে দেখতে?
মিরাজঃ ওর নাম মাইশা৷ দরিদ্র পরিবারের মেয়ে,,,মাহির মতো দেখতে সে কিন্তু মাহির মতো নয় মাহির পুরো বিপরীত,,মাহি যদি আগুন হয় মাইশা পানি,,,
মিরাজ শাহেদার হাতে হাত রেখে বলে
মিরাজঃ আমাদের আকাশকে এইভাবে শেষ হতে দেখতে আর পারছিলাম না আমি,,যখন মাইশাকে প্রথম দেখি আমিও চমকে যাই খবর নিয়ে জানতে পারি মাইশা আর মাহি দুইজন আলাদা,,মাইশাকে মাহি সাজিয়ে এনেছি যাতে আমাদের আকাশ সুস্থ হয়,,,মাইশা মাহির মতো নয় সে অনেক শান্ত মেয়ে আর অনেক ভালো মেয়ে,,,
শাহেদাঃ যদি মাহি ফিরে আসে তখন?
মিরাজঃ মাহি কখনও ফিরতে পারবে না শাহেদা৷
শাহেদাঃ কিন্তু কেন?
মিরাজঃ মাহি মরে গেছে,,,লন্ডনে এক্সিডেন হয় মাহির আর সেখানে আমি আর আকাশ নিজ হাতে মাহিকে কবর দিয়েছি,,,আকাশ এই সহ্য করতে না পেরে তার এমন হাল,,তোমরা সবাই জানো মাহির এক্সিডেন দেশে হয়েছে তা সত্যি ছিলো না,,,
শাহেদাঃ মিরাজ এই মেয়ে কি পারবে আমাদের আকাশকে সুস্থ করে তুলতে?
মিরাজঃ আজ প্রথম দিনে সে আকাশকে রুম থেকে বের করেছে আমি সিউর যে আকাশকে সুস্থ করতে পারলে একমাত্র মাইশা পারবে ব্যস তুমি ওকে সাহায্য করবে,,মাইশার সত্যি তুমি লুকিয়ে রাখবে তুমি ওকে ঘরের মধ্যে সেভ রাখবে,,,ব্যস এই
শাহেদা মিরাজের ঘাড়ে মাথা রেখে বলে
শাহেদাঃ মাইশাকে আমাদের সাহায্য করার জন্য আল্লাহ পাঠিয়েছে,,,,
মিরাজ কিছু বলে না,,,
এইদিকে
মাইশা অনেক ক্ষন ভিজে রুমে যায় চেঞ্চ করে শুয়ে পড়ে,,,আকাশ তাকে ঘুমের মধ্যে জড়িয়ে ধরে এতে মাইশার অনেক অস্তির লাগে,,মাইশা আসতে করে হাতটা সরিয়ে দিবে কিন্তু আকাশ আরো শক্ত করে ধরে,,মাইশা বুজতে পারে এইভাবে হবে না,,
মাইশা ও ঘুমিয়ে পড়ে আর আকাশ যেন আজ শান্তিতে ঘুমাচ্ছে তার যে আজ সব চেয়ে খুশির দিন সে যে তার সব চেয়ে প্রিয় মানুষটিকে নিজের করে ফেলো,,
চলবে,,,,