মহব্বত❤️,Part-12,13,14
Writer-❤️ Israt_Jahan_Isu❤️
Part-12
মাইশা আজ এই তো জানতে পেরেছে যে আকাশ তাকে ভালোবাসি যে বলতো মাইশা ভেবেই বলতো,,,তাকে তাহলে আকাশ ভালোবাসে খুশিতে যেন আজ মন ভরে যায়,,এতো কিছু শুনে তার খারাপ লাগলো এই ভেবে যে একটা মেয়ের জীবনেসত্যিকারের ভালোবাসা হলে আর কি লাগে তবুও যে ধরে রাখতে পারে না সে কত টা হতভাগী,,,,
আকাশ মাইশার ঘাড়ে মাথা রাখে মাইশা চুপটি করে শুধু ভাবছে মাহি সত্যি নিজের লাইফ নিজেই শেষ করেছে,,,
আকাশঃ আমি ভেবেছিলাম আমার জীবন থেকে সত্যিকারের ভালোবাসা হারিয়ে গেছে,,ভেবেছিলাম সত্যিকারের ভালোবাসা বলে কিছু নেই,,কিন্তু যবে থেকে তুমি আমার জীবনে আসলে তবে থেকে আসতে আসতে ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাস জন্ম নিয়েছে,,
মাইশাঃ একটা প্রশ্ন করি?
আকাশঃ হ্যাঁ অবশ্যই
মাইশাঃ আপনি নিজেকে কেন দুই বছর এইভাবে বন্ধ করে রাখলেন আর মাহির ছবি গুলো?
আকাশঃ আমার মনে একটা প্রশ্ন ছিলো তা হচ্ছে মাহি কেন বা নিজের মৃত্যুর মিথ্যা নাটক সাজালো কেন বা সে আমাকে সত্যি বলে না দিয়ে এইভাবে নাটক টা করলো,,,আর মাইশা একটা কথা মনে রাখবে অনেক সময় আমরা যা দেখি তা অনেক সময় সত্যি না ও হতে পারে,,আমি যা দেখাতে চেয়েছিলাম তা তুমি আর আমার পরিবারের সবাই দেখেছে ব্যস সত্যি টুকু ছিলো আমার মনে যা আজ তোমার কাছে প্রকাশ করে দিলাম,,
মাইশাঃ যদি আমিও মাহির মতো চলে যাই???
আকাশ মাথা তুলে মাইশার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকায়৷
মাইশাঃ যদি কখনো আমিও তোমার জীবন থেকে হুট করে চলে যাই তাহলে কি করবে?
আকাশ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে
আকাশঃ চলে যেতে দিবো না কখনও,,কারণ মাইশা আমি তোমার সম্পর্কে সব জানি,,তুমি কেমন মেয়ে তোমার পরিবার কেমন এমন কি তুমি এখানে কেন বা আসলে
মাইশাঃ তুমি সব জানো???
আকাশঃ হ্যাঁ তুমি আমার পাপ্পার কথায় আসলে কারণ পাপ্পা চেয়েছে আমাকে সুস্থ করতে যদিও আমি কখনও অসুস্থ ছিলাম ও না,,আর তুমি আসলে তোমার পরিবারকে ভালো জীবন দিতে,,মাইশা যে মেয়ে নিজের সুখ গুলো ত্যাগ করে একজন পাগল ছেলে জেনেও বিয়ে করতে রাজি হয় শুধু তার পরিবারের সুখের জন্য তাদের মুখে দুই বেলা খাবার ঠিক মত তুলে দেওয়ার জন্য সে মেয়ে আর যাই করুক না কেন কখনও বেইমানী করতে পারে না,,
মাইশা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে,,,আকাশ তাকে এতো ভালো ভাবে বুজে সে বুজতেই পারে নাই,,,
আকাশঃ তুমি জানো আমি তোমায় কত ভালোবাসি?সত্যি বলতে মাইশা আমি নিজেও জানি না কারণ এই কয়েক মাস আমার জীবনের বেস্ট দিন গুলো ছিলো,,প্রতি টা সকাল থাকতো আমার জন্য অনেক বেশি স্পেশাল কারণ প্রতি টা সকালে আমার ঘুম ভাঙ্গতো তোমার মুখ দেখে যখন তুমি নামাজ পড়ো তোমার দিকে তাকিয়ে থাকি,,সত্যি মাইশা তুমি আমার জীবনে আলো যা আমি আজীবন খুঁজেছি,,,
মাইশাঃ আকাশ কিন্তু আমি???
আকাশঃ আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো না কারণ তুমি ভাবতে আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি তোমাকে অন্য কেউ ভেবে ভালোবাসি এইটাই তাই না?
মাইশাঃ কিন্তু এইখানে আরো কিছু কথা রয়ে গেছে
আকাশঃ কি.?
মাইশাঃ আমি আপনার জীবনে এসেছি শুধু একটি বছরের জন্য আর তাও টাকার বিনিময়ে (মাথা নথ করে)সত্যি বলতে বাধ্য হয়েছিলাম আপনার এক বছরের বউ হতে
আকাশ অট্টহাসি হাসি দিয়ে বলে
আকাশঃ পাগলি একটা,,
মাইশা আকাশের দিকে তাকায়
মাইশাঃকি?আপনি হাসছেন?
আকাশঃ তুমি কি ভাবলে আমি জানি না?
মাইশাঃ আপনি জানেন কিভাবে?
আকাশঃ মাইশা আমি সব জানি আর আমার জানতে বেশি সময় লাগে না বুজলে,,,তুমি যা কিছু করেছো তোমার পরিবারের জন্য,,অই সময় তোমাদের আর্থিক প্রবলেম ছিলো অনেক আর বাড় ভাড়া আরো অনেক প্রবলেম তাই তুমি পাপ্পার দেওয়া কথায় রাজি হলে,,
।
মাইশার চোখ থেকে টপ করে পানি গড়িয়ে গেলো সে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না,সে ভেবেছে আকাশ এই জেনে তাকেও ঘৃণা করবে কিন্তু উল্টো আকাশ তাকে কত বুজে,,,
আকাশঃ মাইশা একটা কথা বলি আজ শুনো
মাইশাঃ কি.?
আকাশঃ তুমি একবছর কেন তুমি আজীবন আমার বউ থাকবে বুজলে,,,আমার জীবনে যদি কোনো মেয়ে থেকে থাকে তা তুমি আর কেউ না,,কারণ তুমি আমার ভালোবাসা
মাইশাঃ কিন্ত কাবিন নামায় যে সাইন মাহি নামে তা?
আকাশঃ মাহি নাম থেকে মাইশা নাম করতে কত ক্ষন???
মাইশাঃ মানে?
আকাশঃ তুমি কি মনে করলে আমি আজও বসে আছি?হাহা মাইশা তুমি আইন ও ইসলাম দুই দিক থেকেই আমার স্ত্রী,,
মাইশা আজ যেন সব ভাষা হারিয়ে ফেলে সে যে এইভাবে তার ভালোবাসা পাবে কখনও কল্পনা করতে পারে নাই,,,আসলে কখনো কখনো আমাদের সিদ্ধান্ত যা আমরা ভাবি ভুল তা অনেক সময় সঠিক হয়ে যায়,,মেইন কথা যার তাকদিরে যে থাকে সে যেভাবেই হোক না কেন এসে যায়,,,,
আকাশ মাইশার হাত ধরে বলে
আকাশঃ আমি তোমায় জোর করে আমাকে ভালোবাসতে বলছি না তুমি টাইম নাও তুমি আমাকে ভালোবাসো কিনা নিজে আগে সিউর হও তারপর তুমি যা সিদ্ধান্ত নিবে আমি মেনে নিবো আর হ্যাঁ যদি তুমি আমাকে ভালো না বাসো আমার সাথে থাকতে না চাও আমি জোর করবো না তোমার জীবন যেভাবে চাইবে সুন্দর হোক সেভাবে আমি করে দিবো,,,
মাইশা আকাশকে জড়িয়ে ধরে আকাশ এমন সে ভাবতে পারে নাই সত্যি কি জীবন টা এমন??? সত্যি কি এতো সুন্দর ও হতে পারে জীবন? মাইশার মনে আজ শুধু এই প্রশ্ন,,,
অনেক ক্ষন পর
দুইজনে ঘরে যায়,,,
মাইশা ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে আকাশ ফোনে কথা বলছে তার মায়ের সাথে সে কিছু না বলে বিছানায় বসে,,,
আকাশঃ আচ্ছা আমি রাখছি
আকাশ এই বলে কল কেটে দেয় পিছনে তাকিয়ে দেখে মাইশা চুপচাপ বসে আছে,,পাশে এসে বসে
আকাশঃ মন খারাপ?
মাইশাঃ না তো কেন?
আকাশঃ আচ্ছা একটা গিফট যদি এখন আমার বউকে দেই তাহলে কি আমার বউয়ের মুখে হাসি ফুটবে???
মাইশাঃ বুজলাম না??
আকাশ তার ফোন এগিয়ে দেয় মাইশার দিকে,,
মাইশা ভ্রু কুচকে বলে
মাইশাঃ কি?
আকাশঃ এক মিনিট
আকাশ একটা নাম্বারে কল দেয়,,,রিং পড়তেই মাইশার হাতে দিয়ে বলে
আকাশঃ কথা বলো
যখন মাইশা ফোন কানে নেয় মায়ের আওয়াজ পায় খুশিতে চোখের পানি টপ করে পড়ে গালে,,আকাশ গাল থেকে চোখের পানি মুছে বলে
আকাশঃ বলে নাও কথা
মাইশাঃ আম্মু কেমন আছো?
মাইশার মাঃ মাইশা,,,কই তুই মা কত কল দিয়েছি কয়েক মাসে কোনো খবর পাই নাই তোর তুই ঠিক আছিস মা?
মাইশাঃ আম্মু আমি ঠিক আছি প্লিজ কান্না করিও না বাবা রাইশা মেহের সবাই ভালো আছে,,
মাইশার মাঃ আমার কিছু চাই না মা তুই ফিরে আয় আমরা কষ্টে দিন কাটাবো তবুও তোকে ছাড়া আর থাকতে পারবো না,,,
মাইশাঃ আমি জলদি ফিরে আসবো প্লিজ কেঁদো না,,
আকাশ মুচকি হেসে উঠে চলে যায় রুম থেকে মাইশা তার মায়ের সাথে অনেক কথা বলে,,,
অনেক টা সময় পর আকাশ খাবার নিয়ে উপরে আসে দেখে মাইশা ফোন রেখে বসে আছে,,,
আকাশঃ শেষ বলা?
মাইশাঃআজ যে খুশিটা দিলে সত্যি জীবনের সব চেয়ে বড় খুশির দিন এইটা আমার কাছে
আকাশঃ আমি জানি তুমি তোমার মাকে তোমার পরিবার কে অনেক ভালোবাসো,,,আচ্ছা এখন আসো খেয়ে নিবে
মাইশাঃ আবার এইসব??
আকাশঃ আমি তো রান্না জানি না যে রান্না করে খাওয়াবো তাই আর কি বাহিরের খাবার খেতে হচ্ছে
মাইশাঃ আচ্ছা আমি রান্না করবো
আকাশঃ এখন দোকান সব বন্ধ যেহেতু রাত কাল আমরা গিয়ে সব জিনিস কিনে আনবো তারপর না হয় করিও
মাইশাঃ আমরা এইখানে আর কত দিন থাকবো???
আকাশঃ এই তো তিন চার দিন ব্যস,,,কারণ তোমায় কাল থেকে পুরো লন্ডন ঘুরাবো যদি এই তিন চার দিন অনেক কম হবে তবে যত টুকু পারি দেখাবো
মাইশা মুচকি হাসে আকাশ মাইশাকে খাইয়ে দেয় মাইশাও আজ খায়,,আজ মাইশার মনে এই তো জানা হলো যে আকাশ তাকে ভালোবাসে অনেক৷,,,
পরের দিন সকালে,,,
আকাশ আর মাইশা দুইজনে আজ ঘুরতে বের হয়,,আকাশ মাইশার হাত ধরে আছে অনেক জায়গায় আজ মাইশাকে নিয়ে যায়,,,একটা পার্কে গিয়ে দুইজন বসে অনেক কাপেল সেখানে বসা
মাইশাঃ এরা কি পুরো জামা কাপড় পড়তে পারে না?কেমন যেন লাগে এদের দেখলে
আকাশঃ হাহা এইখানে এমন,,,,
মাইশাঃ হুম
আকাশঃ আচ্ছা বসো আসছি
মাইশাঃ কই যাও?
আকাশঃ আরে আসছি আমি
আকাশ উঠে চলে যায়,,,
আকাশ চলে যাওয়ার পর মাইশা তাকিয়ে আছে একটা কাপেলের দিকে তাদের বয়স অনেক তবুও একে অপরের আইসক্রিম খাইয়ে দিচ্ছে মুহূর্ত টা সত্যি অসাধারণ সুন্দর,,,
এইদিকে আকাশ ও আইসক্রিম নিয়ে এসে হাজির,,,মাইশার দিকে এগিয়ে বলে
আকাশঃ এই যে ম্যাডাম নেন
মাইশাঃ আইসক্রিম?
আকাশঃ আরে দূর এইটা হচ্ছে তরমুজ
মাইশা মুখ বাঁকা করে আইসক্রিম নেয় আকাশ হাসে,,,দুইজনে খেতে থাকে।।
আকাশঃ আচ্ছা একটা কথা বলি
মাইশাঃ কি?
আকাশঃ বউরা এতো ঝগড়া কেন করে?
আকাশের এমন কথায় মাইশা তাকিয়ে ভাবছে সে তো ঝগড়া করে নাই কখনও আকাশের দিকে তাহলে আকাশ এইভাবে কেন বলছে
মাইশাঃ আমি কি আপনার সাথে ঝগড়া করেছি???
আকাশঃ না করো নাই তবে করা উচিত ছোট ছোট ঝগড়াতে ভালোবাসা বাড়ে,আর এইযে বারবার আপনি আপনি করে ঝগড়া শুরু করো
মাইশাঃ জ্বি আর কিছু?
মাইশা অন্য দিকে তাকিয়ে হাসে আকাশ তাকে সব সত্যি বলার পর শুধু এইভাবে কথা বলে যা মাইশার কাছে বেশ ভালোই লাগে,,,
তাদের দুইজনের জীবন যে বেশ সুন্দর ভাবে কাটছে এই কয়েক দিনে,,,আজ দুইজন মিলে মার্কেট আসে কিনা কাটা করতে
আকাশঃ তোমার যা ভালো লাগে নাও
মাইশাঃ এইখানে সব কাপড় শর্ট একটা ও ভালো নেই
আকাশঃ আরে এইসব না আরো অনেক দোকান আছে বেশ সুন্দর সুন্দর জিনিস আচ্ছা চলো জুয়েলারি দেখবে
মাইশাঃ কিন্তু আমি নিবো না কিছু
আকাশঃ তুমি নিজের জন্য নিবে দাদির জন্য নিবে ভাবির জন্য আম্মার জন্য আর হ্যাঁ তোমার মা ও রাইশার জন্য ও নিবে ওকে
মাইশা কিছু বলার আগে আকাশ তাকে টেনে জুয়েলারি শপে নিয়ে যায় দুইজন ভালো ভালো কিছু ডিজাইন দেখছে আকাশের তখন একটা কল আসে আকাশ কল রিসিভ করতে বাহিরে চলে যায়,,
ঠিক অই সময় তারেক ও জুয়েলারি শপে থাকে সে একটা মেয়েকে নিয়ে আসে
তারেকঃ জান তোমার যা ভালো লাগে নাও আজ তোমার জন্য সব ফ্রি
ইমাঃ ওহ জান তুমি কত ভালো,,,তোমার বউ যবে থেকে দেশে গেছে তখন থেকেই এতো কিউট আর ভালো হলে ইশ যদি আর না আসে কত না ভালো হতো
তারেক হেসে দেয়,,হঠাৎ তারেকের নজর যায় আয়নায় যা দেখে সে পুরো অবাক হয়ে যায়,,,
তারেকঃ মাহি?মাহি বেঁচে আছে?
তারেক পিছনে ফিরে দেখে মাইশা হাতে চুড়ি পড়ছে,,,তারেক ভাবে এইটা মাহি সে গিয়েই মাইশাকে জড়িয়ে ধরে
হুট করে কেউ এইভাবে কেউ এসে জড়িয়ে ধরায় মাইশা ঘাবড়ে যায়,,,নিজের সব টুকু দিয়ে ধাক্কা দেয়,,,
মাইশাঃ কে আপনি?? আর সমস্যা কি আপনার??? বেয়াদবের মতো এইভাবে জড়িয়ে ধরার মানে বুজেন.?
এইভাবে চিল্লাতে দেখে তারেক অবাক হয়ে যায়,,
তারেকঃ মাহি আমায় চিনলে না?উফফ মাহি তুমি আজও রেগে আছো আই এম সরি জান,,আর সত্যি বলতে আমি পুরো অবাক তোমায় দেখে নিজের চোখে বিশ্বাস এই করতে পারছি মা তুমি বেঁচে আছো,,,
মাইশাঃ(মাহি?মানে এই লোক আমাকে মাহি ভেবেছে কিন্তু কে এই লোক?)
মাইশা চারপাশে তাকায় আকাশ যেন কোথাও নাই তার আরো ভয় ঢুকে যায় মনে এইবার,,,
তারেক মাইশার গালে হাত রাখতে যাবে মাইশা একটু পিছনে যায়,,
তারেকঃ বুজছি আজও রেগে আছো সরি জান,আর সত্যি জান তোমার অনেক বেশি সেক্সি লাগছে এই লুকে,,আগের চেয়ে ও বেশি সুন্দর হয়ে গেলে,কবে থেকে এইভাবে শাড়ি পড়া শুরু করলে হুম?
মাইশার অনেক বিরক্তি লাগে তারেকের এমন কথা শুনে,,,তার আবার রাগ ও লাগছে আকাশের উপরে এই আকাশ টা ও যেন কই গেলো,,,
তারেকঃ তো কেবে আমার সাথে আবার অইভাবে সময় কাটাবে?
মাইশাঃ প্রথমত আপনার মুখে লাগাম দেন,,,তারপর নিজের এই টাইপের ফালতু কথা গুলো লিমিট রেখে বলবেন ওকে,,,
মাইশা যেন আর পারছে না চুপ থাকতে,,,তাই সে উত্তর দিয়ে দেয়
তারেকঃ ওয়াও মাহি এই দুইবছরে দেখি অনেক বেশি চেঞ্চ হলে,,এতো সুন্দর ব্যবহার? আর এতো ভদ্র কবে হলে জান?
আকাশ রিয়াদের কি করতে হবে এই নিয়ে কথা বলছে বিদায় তা দেরি হয়,,ফোন পকেটে রেখে দোকানে ঢুকতে দেখে তারেক মাইশার সাথে কথা বলছে বারবার মাইশাকে স্পর্শ করতে চাচ্ছে কিন্তু মাইশা পিছনে যাচ্ছে,,,আকাশের প্রচুর রাগ লাগে এই দেখে যে তারেক আজও এমন রয়ে গেছে,,,
আকাশঃ তারেক,,,,
তারেক পিছনে ফিরে দেখে আকাশ,,মাইশা তাড়াতাড়ি আকাশের কাছে চলে যায় আকাশের হাত শক্ত করে ধরে রাখে,,,
তারেকঃ ওহ শালাবাবু যে,,(হুম এই জন্য মাহি এতো চুপ)
আকাশঃ কি সমস্যা তোমার?
তারেকঃ নিজের বড় বোনের জামাইয়ের নাম ধরে ডাকছো বাহা কোথায় সুন্দর করে কথা বলবে সালাম দিনে সম্মান করবে তা না উল্টো কিনা
আকাশঃ সম্মান তাকে করা উচিত যে সম্মানের যোগ্য,
তারেকঃ হুম বুজছি তুমি ও দেখি মাহির মতো রেগে আছো আমার উপরে তো মাহি যে বেঁচে আছে তা বললে না যে?তোমার বোন তাহলে এইজন্য দেশে গেছে?
আকাশ তারেকের দিকে একটু এগিয়ে এসে বলে
আকাশঃ ওর নাম মাইশা আমার বিবাহিত স্ত্রী,,ওর দিকে যদি নজর ও দাও কসম করে বলছি বড় বোনের যে জামাই হও তাও ভুলে যাবো
তারেকঃ হে রিলাক্স ইয়ার,,,এতো রাগ আর আমি কেন বা নজর দিবো সে মাহি আমি জানি
আকাশঃ মাহি আর তোমার সম্পর্কে সব জানি বাধ্য করিও না আমাকে পরিবারের সামনে আনার এই সত্যি তাহলে এই বিজনেস সব কিছু চলে যাবে হাত থেকে ওকে
আকাশের এমন কথায় একটু ঘাবড়ে যায়,,
তারেকঃ এইটা মাহি না??
আকাশঃ যা বলেছি এই মনে রাখবে ব্যস,,আমার স্ত্রী থেকে দূরে থাকবে যদি আমি বিন্দু মাত্র ওর আশেপাশে ঘুরতে দেখি অইদিন তোমার জীবনে কাল নেমে আসবে যা অনেক ভয়ানক হবে
আকাশ তারেক কে হুমকি দিয়ে মাইশার কাছে যায় মাইশার হাত ধরে বলে
আকাশঃ চলো মাইশা
আকাশ মাইশাকে নিয়ে চলে যায়,,তারেক পুরো অবাক এই ভেবে যে মাহির মতো দেখতে এই মেয়ে কিন্তু মাহি থেকেও যেন সুন্দর,,,তাকে এতো গুলো অপমান করেছে এই না ভেবে সে ভাবে এই মেয়ে মাহির মতো কেন?
চলবে,,,
❤️ #মহব্বত❤️
Writer-❤️ #Israt_Jahan_Isu❤️
Part-13
আকাশ মাইশাকে নিয়ে চলে যায়,,তারেক পুরো অবাক এই ভেবে যে মাহির মতো দেখতে এই মেয়ে কিন্তু মাহি থেকেও যেন সুন্দর,,,তাকে এতো গুলো অপমান করেছে এই না ভেবে সে ভাবে এই মেয়ে মাহির মতো কেন?
আকাশ খুব রেগে আছে,,রাগে সে ড্রাইভ অনেক স্পিডে করছে,,মাইশা আকাশের দিকে তাকায় আকাশের মুখে যেন আজ রাগ পুরো স্পষ্ট,,মাইশা এখন বুজতে পারে তারেক সে যার সাথে মাহির সম্পর্ক ছিলো যার কারনে মাহি আকাশের সাথে নাটক করেছে,,,মাইশা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বাহিরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে
মাইশাঃ জীবন টা এতো সহজ নয় যতটা আমরা ভাবি,,,,জীবনে সুখ তখনই আসে যখন আমরা দুঃখ কষ্টের সাথে লড়াই করে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারি,,,
মাইশার কথা শুনে আকাশ তাকায় তার দিকে,,,
মাইশাঃ জি অদ্ভুত জীবন তাই না?আমরা যে দিক থেকে পালাতে চাই সে দিক গুলো এক সময় এসে আমাদের ঘিরে ধরে,,,
আকাশ গাড়ি থামিয়ে দেয়,,,
আকাশঃ কি বলতে চাও ক্লিয়ার করে বলো,,,
মাইশাঃ অতীত থেকে পালাতে চাও সত্যি থেকে পালাতে চাও কিন্তু দেখো সত্যি আজ তোমার সামনে,,,হয় অতীত এমন ভাবে ভুলিয়ে দাও যা আর কখনো সামনে আসলেও কিছু যায় আসে না,,,,
আকাশঃঅতীত আমি ভুলে গেছি মাইশা,,,
মাইশাঃ হুম দেখতেই পারছি আমি তা,,আকাশ জীবনে হাজার ও বাধা আসবে তাই বলে জীবন থেমে থাকে না জীবনে যদি আগে বাড়তে চাও যদি জীবন থেকে অতীত দূর করতে চাও তাহলে এই কড়া সত্যির মুখে দাঁড়াও
আকাশঃ মাইশা কি করবো আমি সত্যি আমি বুজতেছি না,,,তারেক আমার নিজের আপন বোনের হাজাবেন্ড আমার বোনের সন্তানদের বাবা,,সেজন্য আমি চুপ না হলে ওর জীবন আমি নিয়ে নিতাম,,,
মাইশাঃ জীবন নিলেই কি সব সমাধান আকাশ???
আকাশঃ তাহলে?
মাইশাঃ অন্যায় সব সময় অন্যায় হয়,,,,অই লোকটা অনেক বাজে তা আমি অল্প সময়ে বুজেছি যে ভাষায় কথা সে বলেছে আমার সাথে তবে হ্যাঁ সে ভয় পায়
আকাশঃ কি?
মাইশাঃ হুম সে ভয় তার পরিবার হারানোর,,হয়তো তাকে কেউ তার ভুল গুলো ধরিয়ে দেয় নাই যার কারনে সে নিজের ভুল গুলো বুজতেই পারছে না,,,,
আকাশঃ ভুল ধরিয়ে দেক আর না দেক কিন্তু তাকে আমি আর আমার জীবনে চাই না,,
মাইশাঃ তাই বলে নিজের বোনের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করবে?এইখানে তোমার বোনের অপরাধ কই?
আকাশঃ আপুর অপরাধ একটাই সে মুখ বুজে সব সহ্য করছে,,,
মাইশাঃ উনি তার সন্তানদের জন্য করছে এই কি বুজতে পারছো না?
আকাশঃ মাইশা এই নিয়ে আর কথা নয় প্লিজ
মাইশাঃ একটা কথা বলি
আকাশঃ কি?
মাইশাঃ জীবনে হাজার ও বাধা আসবে আর সব বাধা পাড় করিয়ে জীবন টা এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে,,,কষ্ট দুঃখ সুখ সব মিলিয়ে জীবন এই সব সময় মনে রাখবে,,,
মাইশা আর কিছু বলে না সে চুপ করে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে,আকাশ মাইশার কথা গুলো একটু গভীর ভাবে চিন্তা করে দেখে সত্যি তো জীবন এতো সহজ ও নয় সব মিলিয়ে জীবন আর সব কিছু তাকে মেনে নিতেই হবে,,সেও আর কিছু না বলে ড্রাইভ শুরু করে,,
কিছু সময় পর দুজনে বাসায় ফিরে আসে,,মাইশা ফ্রেশ হয়ে একটা বই পড়তে থাকে আকাশ এসে শুয়ে পড়ে,,মাইশা বেশ বুঝতে পারে আজকের ঘটনার জন্য আকাশ অনেক কষ্ট পেয়েছে তাই আর সে কিছু বলে না সে নিজের মতো করে বই পড়তে ব্যস্ত হয়ে পড়ে,,,
পরের দিন,,
আকাশ আর মাইশা আজ দেশে ফিরে যায়,,
রাত অনেক হয়ে যায় তারা ফিরে আসতে আসতে,,তাদের দেখে বেশ খুশি হয় সবাই,,,
শাহেদাঃ ফ্রেশ হয়ে নাও দুইজন আমি খাবার উপরে পাঠিয়ে দিচ্ছি,,,
আকাশঃ না আমরা আজ সবার সাথে নিচে বসে খাবো আর কিছু কথাও আছে আমার সবার সাথে,,
শাহেদাঃ আচ্ছা ঠিক আছে,,,
শাহেদা ভাবে নরমাল কথা হইতো তাই সেও আর তেমন গুরুত্ব না দিয়ে চলে যায়,,
সবাই খেতে বসে এক সাথে,,,,মাইশা চুপচাপ খাচ্ছে
শাহেদাঃ আকাশ কি যেন বলবি???
আকাশঃ খেয়ে বলবো
মিরাজঃ কি কথা?
আকাশঃ কিছু কথা পাপ্পা,,,
মিরাজ মাইশার দিকে তাকায় ভাবে মাইশা কিছু জানে কিনা কিন্তু মাইশা খুব শান্ত ভাবেই আছে তাই ভাবে হয়তো তেমন কিছু না৷
খাওয়া শেষে সবাই বসে আছে এক সাথে,,
রুপাঃ তো কেমন গেলো হানিমুন???
মাইশা কি উত্তর দিবে সে ভেবে পাচ্ছে না তাই চুপ করে আছে,,,
আকাশঃ পাপ্পা দাদিমা মাম্মা আমি সবাইকে বলতেছি শুনো
সবাই তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে কি বলবে তা শুনার জন্য মাইশাও চুপচাপ তাকিয়ে আছে
আকাশঃ আমি আর অসুস্থ নয় আমি পুরো সুস্থ,,,
দাদিমাঃ তা তো দেখেই বুজা যাচ্ছে আর সব কিছু হয়েছে মাহির জন্য
আকাশঃ না মাহির জন্য কিছু হয় নাই,,
এই বলার সাথে সাথে শাহেদা আর মিরাজ ঘাবড়ে যায়,,,
আকাশ মিরাজের সমান গিয়ে দাঁড়ায়
আকাশঃ আমি জানি তোমরা আমাকে অনেক ভালোবাসো আমার কথা ভাবো আমার জন্য তোমরা সব পারো
মিরাজঃ কি হইছে আকাশ?
আকাশঃ পাপ্পা আর মিথ্যা নয় এইবার সত্যি দিয়ে সব শুরু করবো আমি আমার জীবনে
শাহেদাঃ আকাশ ক্লিয়ার করে বলবি কি হইছে?
আকাশঃ মাম্মা আমি প্রথম থেকেই জানি যে এইটা মাহি নয় মাইশা(মাইশার দিকে তাকিয়ে)
এই শুনে রিমা সিরাজ বাকিরা অবাক হয়ে যায়,,ঘাবড়ে যায় রুপা,শাহেদা আর মিরাজ
আকাশঃ পাপ্পা মাহি আর আমাদের মধ্যে নেই আর না সে কখনও আসতে পারবে এই কখনও সম্ভব ও নয় আর তার ফিরে আসা,,,
মিরাজ ভাবে মাইশা হয়তো লন্ডনে সব বলে দিয়েছে,,
মিরাজঃ তোকে কে বলেছে যে মাহি নয় সে মাইশা
আকাশঃ পাপ্পা তুমি হয়তো ভুলে গেছো যে মাহি কেমন ছিলো,,আর মাইশা সে পুরো ভিন্ন মাহি থেকে,,আমি প্রথম দিন থেকেই জানতাম যে মাহি নয় তারপর আমি নিজ থেকে খোঁজ নেই তারপর জানতে পারি বাকি সব,,
রিমাঃ আমি আগেই বলেছি কিছু একটা ঘাটতি আছে (মাঝ খান থেকে হুট করে বলে উঠে)
আকাশঃ ভাবি এক মিনিট প্লিজ,,,
আকাশ মিরাজের হাত ধরে বলে
আকাশঃ তোমরা বেস্ট মাম্মা পাপ্পা,আমার সুখের জন্য সব পারো আমি জানি,,পাপ্পা সত্যি বলতে আমি মাইশাকে এই চার মাসে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি এই জেনেও যে সে মাইশা মাহি নয়,,
মিরাজঃ সত্যি যেহেতু সামনে এসে গেছে তাহলে আর কিছু করার নেই তবে হ্যাঁ আমি চেয়েছি তুই সুখে থাক যাক এই শুনে ভালো লাগলো
।
আকাশঃ পাপ্পা আমি চাই মাইশার সাথে আজীবন থাকতে তোমাদের এতে আপত্তি নাই তো?
মাইশা পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে,
মিরাজঃ আকাশ আমি মাইশাকে তোর বউ করে এনেছি যাতে তুই সুস্থ হস,আর আমি জানি মাইশা অনেক ভালো মেয়ে তুই সুখে থাকবি অনেক
মিরাজ মাইশার কাছে যায়
মিরাজঃ আমি জানি তুমি আমায় কি ভাবছো অইদিন আমি নিজের সার্থের জন্য তোমায় জোর করেছি জানি অন্যায় করেছি কিন্তু আমার নিয়ত খারাপ ছিলো না যা কিছু করেছি সবার ভালোর জন্য,,,,
মাইশাঃ আমি জানি স্যার আপনি যা করেছেন সবার ভালোর জন্য
মিরাজঃ মাইশা আমি তোমায় রক বছরের বউ বানিয়ে এনেছি এই ঘরে কারণ আমি দেখতে চেয়েছিলাম তুমি আসলে সঠিক কিনা আমার ছেলের জন্য,,ভেবেছি যদি তুমি আমার ছেলেকে সুখে রাখো তাকে সুস্থ করে তুলো এই পরিবারের সবার জন্য ভাবো তাহলে তোমায় একবারে এইখানে রেখে দিবো
মাইশা অবাক ভাবে তাকিয়ে আছে তার মানে মিরাজ এক বছরের ডিল এমনি বলেছে
মিরাজঃ তুমি নিজের পরিবারের জন্য যে ত্যাগ করেছো এতে বুজা যায় পরিবার তোমার জন্য কত ইম্পর্ট্যান্ট,,, আমার ছেলের সুখের জন্য তার হাসির জন্য সব করেছো এতে আমি বুজেছি তুমি আর যাই করো কখনও আকাশকে কষ্ট দিবে না তাই আমি মনে মনে ভেবে রেখেছিলাম যেদিন এক বছর শেষ হবে অইদিন তোমায় বলবো যে আজীবনের জন্য আমার ছেলের বউ হয়ে থাকতে
মাইশার চোখে পানি এসে জমে যায়,,,সত্যি আকাশের পরিবার অনেক ভালো তাকে কত ভালোবাসে সবাই,,
আজ যেন এই পরিবারের খুশির বন্যা বইছে এমন,,সবার মুখে হাসি এই ভেবে যে আর কেউ কাউকে মিথ্যা বলতে হবে না এখন সবাই সত্যি টুকু জানে,,,
পরের দিন সন্ধ্যায়
আকাশ ছাদে অনেক সুন্দর করে সাজায় আজ সে মাইশাকে নিজের মনের কথা আরো বলতে চায় আজ সে চায় ভালোবাসি শব্দ টা আরো মধুর করে বলতে সম্পর্ক টা আরো বেশি গভীরে নিয়ে যেতে,,,
মাইশা আজ একটা লাল শাড়ি পড়ে যা আকাশ তাকে দেয়,,বেশ মানিয়েছে তাকে,,
আকাশ রুমে এসে পুরো থমকে যায় এই কাকে দেখছে সে.?লাল শাড়ি পড়া,চুল গুলো খোলা চোখে ঘাড়ো কাজল হাত ভরতি কাচের চুড়ি বেশি সুন্দর লাগছে আজ মাইশাকে,,
আকাশঃ অপরুপ লাগছে তোমায় প্রিয়তমা,,তোমার এই অপরুপ রুপে আমি যে মুগ্ধ হই বারবার,,যখনই শাড়িতে তোমায় দেখি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না কত না মায়াবী লাগে তোমায়,,,
মাইশা লজ্জায় মাথা নথ করে রাখে,,,আকাশ তার সামনে যায় মাইশা কিছু বুজে উঠার আগে কোলে তুলে নেয়
মাইশাঃ কি,, কি করছো কি?
আকাশঃ হুশ
আকাশ মাইশা চুপ করে দেয়,,মাইশা ও চুপ করে যায়,,আস্তে আস্তে হাঁটে আকাশ মাইশাকে নিয়ে,,,চোখ যেন সরছেই না আজ মাইশার দিক থেকে,,,সিড়ি দিয়ে উঠছে আর মাইশার দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে
মাইশাঃ পড়ে যাবে প্লিজ সামনে দেখে হাঁটো
আকাশঃ আবার কথা?
মাইশাঃ হু
আকাশ মাইশাকে নিয়ে ছাদে যায় আজ ছাদ টা অনেক সুন্দর করে সাজায়,, চারপাশের লাইট যেন আরও সুন্দর করে তুলে পরিবেশ টা,,,,
দোলনায় বসিয়ে মাইশার সামনে বসে,,,হাত টা শক্ত করে ধরে চোখের দিকে তাকিয়ে বলে
আকাশঃ সত্যি অনেক বেশি ভালোবাসি তোমায় অনেক যা কখনও ভাষায় প্রকাশ করে বুজাতে পারবো না,,আমার জীবনের সুখ,হাসি,খুশি সব কিছু এখন তোমায় ঘিরে মাইশা,,,আমার জীবনে আজীবন আমার পাশে এইভাবে থাকবে তো???
মাইশা শুধু তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে,,সে কি বলবে এই মুহূর্তে সে নিজেও জানে না,,,আকাশের চোখ জুড়ে যেন এখন শুধু মাইশা,,তার চোখ যেন বলেই দিচ্ছে সে শুধু মাইশাকে ভালোবাসে শুধু মাইশাকে,,,
চলবে,,,
❤️ #মহব্বত❤️
Writer-❤️ #Israt_Jahan_Isu❤️
Part-14
মাইশা শুধু তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে,,সে কি বলবে এই মুহূর্তে সে নিজেও জানে না,,,আকাশের চোখ জুড়ে যেন এখন শুধু মাইশা,,তার চোখ যেন বলেই দিচ্ছে সে শুধু মাইশাকে ভালোবাসে শুধু মাইশাকে,,,
মাইশা আকাশের হাত ধরে বলে
মাইশাঃ কখনও ভাবি নাই এই সুখটা আমার কপালে জুটবে,,ছোট থেকে খুব কষ্টে বড় হয়েছি তবে বাবা কখনও আমাদের সহজে কষ্ট বুজতে দিতো না,,বাবা হঠাৎ এক্সিডেন্ট করে যার কারনে ঘরের বড় মেয়ে হিসেবে সব দায়িত্ব আমার ঘাড়ে উঠে পড়েছে,,পড়াশোনা মাঝ পথে থামিয়ে দেই ইচ্ছে ছিলো এমবিএ শেষ করার কিন্তু হলো না,,আমার রেজাল্ট ভালোই ছিলো তবুও একটা চাকরি পাই নাই,,অনেক জায়গায় গিয়েছিলাম সব জায়গায় যোগ্যতা নয় সুপারিশ চাই,,
আকাশ মাইশার হাত আরো শক্ত করে ধরে,,,
মাইশাঃ অনেক রাত এমন ও গিয়েছে না খেয়ে পানি খেয়ে ঘুমিয়ে যেতাম খুব ক্ষিধে যখন লাগতো বালিশ দিয়ে চেপে ধরে রাত পাড় করতাম,,আমার বোন ভাই এরা স্কুলে যেতে চাইতো না স্কুলের বেতন দিতে পারতাম না বিদায়,,বাবা মায়ের দুশ্চিন্তা লেগে থাকতো এই ভেবে যে আমার বিয়ে কবে হবে আর কিভাবে বা দিবে,,,সব মিলিয়ে খুব কষ্টের মধ্যে জীবন চলতেছিলো,,
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মুচকি হেসে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে
মাইশাঃ তবুও আমি হতাশ হই নাই ধৈর্য ধরে রেখেছিলাম এই ভেবে যে একদিন সব কিছু ঠিক হবে আল্লাহ একদিন আমার দিকে তাকাবে আমাকে সাহায্য করবে আমার কষ্ট গুলো মুছে দিবে,,দেখো আকাশ আজ সত্যি আমি অনেক খুশি আমার জীবনে,,বাবা মা আর কষ্টে দিন কাটায় না ভাই বোন আর লজ্জায় স্কুলে যেতে হবে না এমন হয় না তারা আজ স্কুলে খুব আনন্দে মাথা উঁচু করে যাচ্ছে,,আর আমি
আকাশঃ আর তুমি?
মাইশাঃ আর আমিও আমার জীবনে অনেক সুখী,,এতো ভালোবাসা মত পরিবার পেলাম,এমন জীবন সঙ্গী পেলাম যে আমাকে এতো টা ভালোবাসে যে আমি নিজেকে অনেক বেশি ভাগ্যবতী মনে করি,,,
মাইশার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে আকাশ মুছে দিয়ে বলে
আকাশঃ তোমার জীবনে কষ্টের দিন গুলো শেষ মাইশা,,,এখন থেকে তোমার এই মায়াবী মুখে শুধু হাসি দেখতে চাই বুজলে
মাইশাঃ আমার পাশে এইভাবে থাকবে তো আজীবন??
আকাশঃ কথা দিচ্ছি কখনও তোমার হাত ছাড়বো না আজীবন আগলে রাখবো বুকে,,,আজীবন তোমায় শুধু তোমায় ভালোবেসে যাবো তোমার সুখের জন্য সব কিছু করবো,,,
মাইশাঃ অনেক ভালোবাসো তাই না???
আকাশঃ অনেক বেশি যা তোমায় বলে বুজাতে পারবো না,,
মাইশা আকাশকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়,,,
মাইশাঃ আমার কপালে সইবে তো এই সুখ?আকাশ সব কিছু আমার কাছ থেকে কেড়ে নিবে না তো কেউ
আকাশঃ এই পাগলি কে কেড়ে নিবে হুম?আমি আমার ভালোবাসার গায়ে বিন্দু মাত্র আঘাত ও আসতে দিবো না,,,আর আসছে কিছু কেড়ে নেওয়া তা কখনও আমি হতে দিবো না,,মাইশা জীবনে সত্যিকারের ভালোবাসা সবাই পায় না আমি যেহেতু এত কষ্টের পর ও পেয়েছি তা আর আমার থেকে দূরে যেতে দিবো না,,,
মাইশা আকাশকে শক্ত জড়িয়ে ধরে রাখে আজ আকাশের বুকে যে শান্তি পাচ্ছে যা সে আর কোথাও পায় নাই,,,ভালোবাসা কি অদ্ভুত তাই না?কখন কার কপালে জুটে কেউ জানেও না,,কেউ সত্যিকারের ভালোবাসা পেয়ে হারায় আর কেউ সত্যিকারের ভালোবাসা পেয়ে আগলে রাখে,,,মাহি নিজের হাতে নিজের সুন্দর জীবন টা নষ্ট করেছে,,,
পরের দিন
বিকালে সবাই এক সাথে বসে নাস্তা করছে,,শাহেদা মাইশাকে অনেক আদর করছে যেন মাইশা তার মেয়ে,,,মাইশার মন সব চেয়ে বেশি ভালো হয় এই ভেবে যে পরিবারের সবাই তাকে মাহি নয় মাইশা বলে ডাকে অন্য একজনের পরিচয়ে আর তাকে থাকতে হচ্ছে না নিজের পরিচয় নিয়ে সে আজ এই বাড়ির বউ,,,
শাহেদাঃ আচ্ছা রুপা তারেক কবে আসবে রে???
তারেকের নাম শুনে মাইশার মুখের হাসি উদাও,,বাড়ির কেউ তারেকের সত্তিটা জানে না আর যদি জানে তাহলে কি হবে?আর রুপা সব জেনেও এতো চুপচাপ যেন কিছু ই হয় নাই,,,,
রুপাঃ মাম্মা আসলে তার সেখানে অনেক ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে তাই আসবে না আপাতত পরে আসবে আমাদের নিতে,,,
শাহেদাঃ হুম,,আচ্ছা মাইশা আকাশ কই জানো কিছু???
মাইশাঃ না আমিও কল দিলাম বলেছে কাজে আছে একটু পরে কল দিবে তারপর আর কল দেয় নাই,,
শাহেদাঃ এই ছেলেটা যে কখন কি করে কিছু বুজি না,,,কই যে গেলো
দাদিমাঃ আরে ছেলেটা একটু বাহিরে গেছে ঘুরতে তোরা সবাই এতো কল এই সেই করে কেন তাকে ঘরে আটকে রাখতে চাস হ্যাঁ
শাহেদাঃ মা আসলে বলে যায় নাই তাই,,
কেউ আর কিছু বলে না,,
সন্ধ্যা হয়ে আসে এখনো আকাশ ফিরে নাই মাইশার এইবার বেশ চিন্তা হচ্ছে
মাইশাঃ কই গেলো আকাশ?অনন্ত একটা কল বা মেসেজ তো দিতে পারতো উফফফ কিছু যেন মাথায় ঢুকছেই না
মাইশা অনেক চিন্তা করতে,,শাহেদা এসে মাইশার পাশে বসে
শাহেদাঃ চিন্তা হচ্ছে বুজি?
মাইশাঃ আসলে মাম্মা সে কিছু বলে যায় নাই যে কই গিয়েছে আর না মেসেজ তাই চিন্তা হচ্ছে
শাহেদাঃ মিরাজের সাথে কথা হয়েছে আকাশ তার সাথে আছে কিছু ইম্পর্ট্যান্ট কাজে গিয়েছে দুইজন এসে যাবে একটু পরেই
শাহেদার কথা শুনে মাইশা একটু শান্তি পায়,
শাহেদাঃ এইবার আমাকে কি এক কাফ তোমার হাতের চা খাওয়াতে পারবে?সাথে কি তোমার সে টেস্টি নুডুলস ও
মাইশা মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে কিচেনে চলে যায়,,
অনেক ক্ষন মাইশা চা আর নুডুলস এনে দেয় শাহেদাকে,,আকাশ আর মিরাজ আসে মাইশা আকাশ কে দেখে সামনে এগিয়ে যায় কিছু বলতে দেখে দৌড়ে আসতে রাইশা আর মেহের কে
মাইশাঃ রাইশা মাহের?
মাইশা এদের দেখে পুরো অবাক হয়ে যায়,,পিছন থেকে তার মা ও বাবাকে দেখে আরো অবাক হয়ে যায়,,চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে এতো মাস পর মা-বাবা ভাই বোনদের দেখে,,,মাইশার মা তাড়াতাড়ি এসে মাইশাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠে
মাইশার মাঃ আমার মেয়ে আমার সোনামনিটা,,,
মাইশাঃ আম্মু তুমি ঠিক আছো?
মাইশা আর তার মা কাঁদতে থাকে,,আকাশের মুখে হাসি কারণ মা মেয়ে যে অনেক দিন পর একে অপরের সাথে দেখা করছে,,,
মাইশার মা মাইশার মুখে অনেক গুলো চুমু দেয়,,
মাইশার মাঃ আমার মেয়ে টা এতো বড় হয়ে গেছে যে তার মা বাবা পরিবারের জন্য নিজের সুখ গুলো ত্যাগ করে দেয়,,,
মাইশাঃ আম্মু তুমি কি বলছো?আর এইখানে কিভাবে?
মাইশার মাঃ আকাশ আমাদের সব বলেছে,আর মিরাজ সাহেব ও বলেছে সব প্রথম থেকে কি হয়েছে না হয়েছে সব,,,আমার মেয়ে নিজের সুখের কথা না ভেবে আমাদের জন্য এতো বড় ত্যাগ শিকার করলো যে আজ গর্বে বুকটা ভরে যাচ্ছে এইভেবে যে আমি তোর মা,,,
মাইশার বাবাঃ আমার ছেলে হলেও হয়তো আমাদের জন্য এত করতো না যত না তুই করেছিস মেয়ে হয়ে,,,
মাইশাঃ বাবা প্লিজ
রাইশা আকাশের কাছে গিয়ে বসে
রাইশাঃ ভাইয়া তুমি অনেক ভালো
আকাশঃ তাই বুজি
মাহেরঃ হ্যাঁ ভাইয়া তুমি অনেক সুন্দর ও
আকাশঃ হাহা কিন্তু তোমার থেকে কম মাহের,,,তুমি সব চেয়ে বেশি হ্যান্ডসাম
মাইশা খেয়াল করে আকাশ রাইশা আর মাহেরের সাথে অনেক গল্প করছে,,পরিবারের সবাই মাইশার মা-বাবার সাথে কথা বলছে আজ সবাই অনেক খুশি
মাইশা গিয়ে আকাশের পাশে বসে
মাইশাঃ রাইশা মাহের অই যে ওর নাম আইভি অনেক কিউট আর লক্ষি একজন মেয়ে যাও ওর সাথে পরিচিত হয়ে নাও
মাহের আর রাইশা চলে যায় মাইশা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে
মাইশাঃ ধন্যবাদ
আকাশঃ কেন?
মাইশাঃ আমার জন্য যা করলেন তা সত্যি আমার জন্য অনেক,,,আমার মা-বাবা ভাই বোন সবাই কে এখানে নিয়ে আসলেন আমার কাছে আমার সাথে দেখা করাতে
আকাশঃ কিন্তু আমি তো আমার জন্য কিছু করি নাই
মাইশাঃ কি?
আকাশঃ হ্যাঁ আমি যা কিছু করেছি সব আমার জন্য আমি আমার বউয়ের এই মিষ্টি হাসিটার জন্য করেছি,,,বুজলে
মাইশা হেসে দেয়,,,মাইশার মা ডাক দেয়
মাইশার মাঃ মাইশা একটু এইদিকে আয়
এক কোণায় নিয়ে গিয়ে বলে
মাইশার মাঃ সত্যি মা আমি বেশি খুশি তোর জন্য,,,আকাশের মতো এতো ভালো ছেলে আমরা কোথাও পেতাম না
মাইশাঃ হ্যাঁ আম্মু আকাশের মতো ভালো জীবন সঙ্গী পেয়ে আমি অনেক গর্বিত,
মিরাজ সবাই কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,,
মিরাজঃ আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি,,,
সবাই মিরাজের দিকে তাকিয়ে আছে মিরাজ কি বলতে চায়
শাহেদাঃ কিসের সিদ্ধান্ত?
মিরাজঃ মাইশা আর মিরাজের জন্য একটা পার্টি রাখবো যেখানে তাদের বিয়ের কথা জানানো হবে,,, সব ব্যবসায়ী সব আত্নীয় সবাই থাকবে,,,,অনুষ্ঠানটা খুব জলদি হবে,,,
চলবে,,,