“তৃ-তনয়া” পর্ব- ৮৩

0
2484

“তৃ-তনয়া”
পর্ব- ৮৩
(নূর নাফিসা)
.
.
সেদিন রাতে ইমরান থেকেছিলো এবাড়িতে। পরদিন সকালে নাস্তা করে এখান থেকেই অফিস চলে গেছে। নাফিসা পরিষ্কার বলে দিয়েছে বৃহস্পতিবার বিকেলে যাবে। আর নাহিদাও মেহেদীর কাছে বলে বলে তার থাকার সময় বাড়িয়ে নিয়েছে। মেহেদী এসেছিলো বুধবার সন্ধ্যাবেলা। শ্বশুর বাড়িতে এক রাত থেকে সকালে নাস্তা করে নাহিদাকে নিয়ে চলে গেছে। নাহিদাকে বাসায় রেখে সে অফিস যাবে। আর নাফিসা বিকেলে রওনা হওয়ার জন্য গোছগাছ করে নিলো। নিশাতের ফোন থেকে কল করে রেখা বারবার বলছিলো সে যেনো গায়ে হলুদে যায়। ইচ্ছে না থাকলেও নাফিসা বলেছে তার সাথে দেখা করবে কিন্তু ছেলের বাড়িতে যাবে না। বিকেলে ইমরান এলে সে তার সাথে চলে গেলো। নাজিয়া আরও দুতিনদিন পর যাবে। এবার একটু বেশিই থাকার সুযোগ হয়েছে তার! আরাফ ট্রেনিংয়ে যাবে দুদিনের জন্য। সেখান থেকে ফিরে নাজিয়াকে নিয়ে যাবে। আর ওদিকে আয়াত এসেছে বেড়াতে। সুতরাং বাড়ি এখন ফাঁকা নয়।
নাফিসা বাসায় ফিরে সন্ধ্যায় শাড়ি পড়ে রেখার সাথে দেখা করে এলো। নিশাত, জেরিন লগনে গিয়েছে কিন্তু নাফিসাকে জোরাজুরি করেও পাঠাতে পারেনি। একদিকে নিজের ইচ্ছে নেই অন্যদিকে ইমরানও নিষেধ করেছিলো। নিশাতকেও যেতে দেওয়ার মর্জি ছিলো না কিন্তু নিশাতের আহ্লাদে আর নিষেধ করতে পারেনি। তাছাড়া আরমান অনুমতি দিয়েছে যাওয়ার, সেখানে সে নিষেধ করে কিভাবে!
রেখার বিয়ের দিন সকাল নয়টার দিকে পার্লারে চলে গেছে জেরিন। গতকালও হলুদের প্রোগ্রামে সে এবং নিশাত পার্লারে সেজেছে। কিন্তু আজ আর নিশাত যায়নি। জিহান মায়ের কাছ থেকে মুক্তি পেয়ে বারবার দৌড়ে চলে যায় বিয়ে বাড়িতে। আর বারবার নিশাত, আবিদা বেগম কিংবা আরমান গিয়ে ধরে নিয়ে আসে তাকে। কাল বাড়ি ফিরে কিছু করার সুযোগ না পেলেও আজ সকাল থেকেই কাজে লেগে গেছে নাফিসা। নিজের ঘর গুছানো, উঠুন বাড়িঘর ঝাড়ু দেওয়া, সোফার কভার, বেডশিট, বালিশের কভার, ঘরের পর্দা সব ধুয়ে দিলো। কাজের ফাঁকে নাস্তা করে নিয়েছে। পরে আবার আসবাবপত্র মুছে পরিস্কার করলো। সব যেন ময়লা হয়ে আছে! একে তো নিজের ও নিশাতের রুমের আসবাব তারউপর বড়ঘরের কাজকর্মও। যদিও এমনিতে ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করে রাখে কিন্তু যেসব ধরাছোঁয়ার বাইরে সেসব পরিষ্কার না। কাজকর্ম শেষে নিশ্বাস ফেললো এই ভেবে, সারাজীবন বাবার বাড়িতে নিজের ইচ্ছে মতো চলে কাজকর্ম হতে দূরে থেকেছে। খাওয়া, ঘুম, আর পড়াশোনা ছাড়া যেন কোনো কাজই ছিলো না! আর শ্বশুর বাড়িতে এখন দিনরাত কাজ করছে। জোরজবরদস্তি না করলেও নিজেই আত্মসম্মানের কথা ভেবে কাজে লেগে পড়ে! কখন কোন দিক থেকে তীর এসে বিদ্ধ হয় বলা তো যায় না! রানীর ন্যায় আচরণ করে নিজের মাকে এতোদিন জ্বালাতন করে এখন অন্যের মা’সহ অন্যের ঘর সামলাও। এ-ই তো সেই দুনিয়ার নীতি! বাবার বাড়ির সেই রানী হবে শ্বশুর বাড়ির বিনা বেতনের চাকরানী! এটাই সংসার, এটাই জীবন। মিলবে না এর থেকে মুক্তি, যদি না আসে মরণ।
.
যোহরের আযান পড়ে গেছে। ছেলেরা নামাজের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। ওদিকে আরমানকে ফোনে কথা বলতে শোনা গেলো। জেরিনের সাথে রাগারাগি করছে, জিহানকে বাসায় রেখে এখনো পার্লারে বসে আছে বলে! জিহান গোসলও করেনি। খেলায় মেতে আছে। কেউ টানাটানি করতে গেলে চিৎকার করে! এই প্রথম আরমানকে কারো সাথে রেগে কথা বলতে দেখলো নাফিসা। নচেৎ খুবই শান্তশিষ্ট স্বভাবের একজন মানুষ। অত:পর নাফিসা জিহানকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে গোসল করাতে নিয়ে এলো। গোসল শেষে বড় ঘরে নিয়ে এলো। আরমান ও ইমরান নামাজে গেছে। নিশাত গোসল করছে, বড় মা নামাজ পড়বে ওযু করে এসেছে। এখন জিহানের জামাকাপড় নিবে কে! সে তো ভুলেও যাবে না ওই জেরিনের ঘরে! একটু পরেই আবিদা বেগম গোসল সেড়ে বেরিয়ে এলো। নাফিসা তার ভেজা কাপড় শুকাতে দেওয়ার জন্য হাতে নিয়ে জিহানের নতুন জামার কথা বললে এনে দিলেন তিনি। অত:পর জিহানকে পোশাক পড়িয়ে তৈরি করে নিজের রুমে এনে বসিয়ে রাখলো। ইমরান বাড়ি ফিরে নাফিসাকে বসে থাকতে দেখে বললো,
– এখনো গোসল করনি!
– নিশাত গোসল করছে।
– ওই ঘরে বাথরুম নেই?
– জিহানকে রাখবে কে!
– মা কোথায়?
– আম্মা, বড় মা নামাজ পড়ছে।
– যাও এবার, দ্রুত গোসল করো। তোমাদের তো আবার আটাময়দা ঘষামাজা করতে ঘন্টার পর ঘন্টা লাগে। আরেকজন বাচ্চা রেখে কোন সকালে গেছে, এখনো ফেরার খবর নেই!
– আমি মোটেও ওসব করি না। আমার রেডি হতে দশ মিনিটই যথেষ্ট। হুহ্!
নিশাত মাত্রই বেরিয়ে এসেছে আর নাফিসা গেছে। গোসল করে নামাজ পড়ে নিয়েছে সে। এমনি আবিদা বেগম এলো, হাতে গহনার বাক্স! খাটে বসে বাক্স খুলে বললেন,
– এইগুলা পইরো। বউ মানুষ, হাত কান খালি রাইখো না। চেহারার আগে হাত কানে চোখ যায় সবার।
– কার এগুলো?
– তোমার জন্যই বানাইছি। বিয়ার মধ্যে তো সুযোগ পাইলাম না দেওয়ার। সব কাজে তাড়াহুড়া চলে! এতো তারাহুড়ার কাজ আমি করতে পারি না।
হাতের আংটি, কানের দুল, কণ্ঠহার, আর টিকলি রেখে চলে গেলেন আবিদা বেগম। তার কথায় গম্ভীর ভাব প্রকাশ পেয়েছে যার কারণ ইমরানের এমন হুটহাট বিয়ে করে বাড়িতে বউ নিয়ে আসা। এখন ইমরানও ঘরেই ছিলো কিন্তু দুজনের একজনও কোনো কথা বললো না। চুপচাপ শুধু শুনে গেলো।
নাফিসা আজ নিজের বিয়ের দিন ইমরানের দেওয়া সেই শাড়ি পড়েছে। যেটা পড়ে সে বউ সাজেনি সেটাই আজ নরমালভাবে পড়েছে। অত:পর শাড়ির সাথে হিজাব পড়েছে এবং চোখে চিকন ফ্রেমের একটা চশমা আর ঠোঁটে হালকা লাল রঙের লিপস্টিক। ইমরান এতোক্ষণ ঘরে বসেই দেখছিলো তার সাজ। শাড়ি পড়তেই শুধু যতটুকু সময় লেগেছিলো আর বাকিসব তারাতাড়িই হয়ে গেছে। পরিপূর্ণভাবে তৈরি হয়ে ইমরানের সামনে দাড়িয়ে বললো,
– ঠিক আছে সব? আর লেগেছে কি বেশি সময়?
ইমরান উঠে এসে কপালে আলতো পরশ দিয়ে বললো,
– মাশাল্লাহ, একদম পারফেক্ট। কিন্তু মায়ের দেওয়া গহনা যে পড়লে না?
– গহনা পড়ে নিজেকে অন্যের সামনে প্রদর্শন করা ভালো নাকি হিজাবে নিজেকে পর্দার আড়ালে গুটিয়ে রাখা ভালো?
– অবশ্যই হিজাব সাপোর্টার। কিন্তু মা যে ছেলের বউয়ের জন্য গড়ে রেখেছে তার কি হবে!
নাফিসা আংটি টা পড়লো এবং টিকলি টা হিজাবের ভেতরে এটে দিয়ে বললো,
– হাতে বালা, আঙুলে আংগুটি, মাথায় টিকলি আর নাকে ফুল। কান আর গলা তো দেখা ই যায় না। তো সেগুলোর আর প্রয়োজন নেই। এবার ঠিক আছে নিশ্চয়ই?
বিপরীতে ইমরান মুচকি হাসলো এবং জুতা পড়ে নিলো। নাফিসা তড়িঘড়ি করে আলমারি খুলতে খুলতে বললো,
– ভালো কথা মনে করেছো! নতুবা আমি তো এখন শাড়ির সাথে স্যান্ডেল পড়েই চলে যেতাম!
– স্যান্ডেল পড়ে চলে যাবে, আমি দেখতাম না নাকি! তাছাড়া হয়েছে নাকি এমন কখনো?
– আর বলো না, মামাতো বোনের বিয়েতে এলাহী কান্ড ঘটেছে! রিসিপশনের দিন আপুকে আনতে যাওয়ার সময় স্যান্ডেল পড়েই বেরিয়ে গেছি! পরনে লেহেঙ্গা ছিলো তাই কারো নজরে পড়িনি! গাড়িতে উঠে অর্ধেক রাস্তা অতিক্রম করার পড় চোখ পড়েছে পাশে থাকা মামীর! মামী বলার পর সেখানেই কান্না শুরু করেছি আমি যাবো না তাদের বাড়িতে। মাঝরাস্তা থেকেই খালি পায়ে বাড়ি ফিরে আসবো। সবাই হেসেছে আর আমি একা কেদেছি।
– তারপর এভাবেই চলে গেছো?
– কথা শেষ করতে দাও! তারপর মামা আমাকে নিয়ে অন্য গাড়িতে উঠে আবার বাড়ি এসেছে। জুতা পালটে পরে আমরা সবার শেষে পৌছেছি।
ইমরান হাসতে হাসতে নিজের জুতা পড়ে নিলো। কিন্তু আজ ইমরানের হাসি বিরক্ত লাগেনি নাফিসার। কেননা সেই দিনের কথা মনে হলে তার নিজেরও হাসি পায় এখন।
নিশাত এলোমেলো চুল ও হাতে চিরুনী নিয়ে এসে বললো,
– ওয়াও ভাবি, লুকিং সো গর্জিয়াছ!
– থ্যাংক ইউ। কিন্তু তোমার এই অবস্থা কেন? এখনো রেডি হওনি!
– দেখো… কন্ডিশনার দিয়ে চুল এতোটা পিচ্ছিল হয়েছে কোনোভাবেই আটকাতে পারছি না৷ কি করবো এখন? চুল খোলা রেখেও থাকতে পারবো না এই গরমে!
নাফিসা কিছু বলার আগে ইমরানই বললো,
– এতো দরকার কি মানুষকে চুল দেখানো! তোর ভাবির মতো হিজাব পড়।
– এতো সুন্দর এয়ার রিং কিনে আনলাম পড়ার জন্য, আর তুমি বলছো হিজাব পড়বো!
– হ্যাঁ, পড়বি। মেয়েদের হিজাবেই তো দারুণ স্টাইল হয়ে যায়, তাহলে শুধু শুধু বেপর্দায় থেকে পাপ কেন কামাই করবি!
নাফিসা তার চুল ধরে অবস্থা বুঝে বললো,
– হয় এই গরমে খোলা রাখো আর না হয় খোপা করে হিজাব পড়ো।
– হিজাবেও তো গরম!
– খোলা চুলের মতো এতোটা হবে না। আর খেয়ে চলেই তো আসবে। এতো ঝামেলা করে সাজুগুজুর কি প্রয়োজন!
– ওকে।
নিশাতও হিজাব পড়লো। আবিদা বেগম গহনা দিয়ে যাওয়ার পরপরই জেরিন এসেছিলো বাড়িতে। নিশাত ও নাফিসাকে হিজাবী স্টাইলে দেখে আরমান হয়তো কিছু বলেছিলো জেরিনকে আর জেরিন ভেংচি কেটে বিরক্তি নিয়ে হনহন করে চলে গেলো নিশাতের কাছে। তার শাড়ির পিনটা ভালোভাবে আটকে দেওয়ার জন্য। তাছাড়া এতো সুন্দর এয়ার রিং কিনে দিলো সেদিন, আজ আবার নাফিসা হুজুরাইনের সাথে ঢং দেখাতে হিজাব পড়লো কেন তা নিয়ে ফুসছে নিশাতকে! জেরিন তার চুলের অজুহাতে জেরিনকে থামিয়ে দিলো। বড় মা ও নিশাত প্রশংসা করলেও আবিদা বেগম নাফিসাকে বললো,
– কানের দুল আর হার পড়লা না কে? পড়ার জন্য দেই নাই?
– আম্মা, মানুষকে গহনা দেখিয়ে কি লাভ বলুন তো! তার চেয়ে কি ভালো না অন্যের দর্শন থেকে পর্দার আড়ালে থাকি?
আবিদা বেগম আর কিছু বললো না। তিনিও নামাজ কালাম পড়ে যথেষ্ট পর্দার আড়ালেই থাকে। কিন্তু নিশাত ও জেরিনকে কিছু বলেন না পর্দা করা নিয়ে। এই ভেবে তাদের স্বাধীনতা দেয় যে এখনই তাদের ফ্যাশনের উপযুক্ত বয়স। পরে ঠিক হয়ে যাবে। পাশের বাড়িতে প্রোগ্রাম হলেও বড় মা এবং আবিদা বেগম বোরকা পড়েই এসেছেন।
বিয়ে বাড়িতে সেই দাদুটা জেরিনকে বললো,
– কি গো? তুই বুড়া হইয়া এমন কড়া সাজতে গেলি কে? দেখতো ইমরানের বউডারে কত্ত সুন্দর লাগতাছে। তোরে তো চেনাই যায় না! মাইক্ষা আইছে কতদি সাদা চুনা মাডি!
কথার স্টাইলে নিশাত হেসে উঠলো আর জেরিন নাফিসার প্রতি রেগে! সে আর নাফিসার আশপাশে না থেকে দূরেই চলে গেলো! এদিকে এক ভিখারিনী এসে খাবার চাইছে। রেখার মা মহিলাকে বলে দিলো,
“এহন যান, যান। মেমান গো খাওয়াদাওয়া শেষ হোক, পরে আইবেন। এমন শুরুতেই আইয়া খাবার চায় কেউ!”
মহিলাটি চলে যেতে নিলে নাফিসা বললো,
– কাকি, এটা কেমন কথা হলো। ক্ষুধার্ত ব্যাক্তি খাবার চাইছে আর আপনি দিবেন না? আপনার মেয়ের বিয়েতে তো উনার দোয়া ই বেশি কাজে লাগবে।
– আরে, না করি নাই তো! পরে দিমু। এহন বিলাইয়া দিলে মেমান গো শট পড়তো না!
– তো, মেহমানরা খেয়ে গেলে উনার জন্য শর্ট পড়বে না? এখানে উপস্থিত মেহমানদের মধ্যে সবার চেয়ে বেশি ক্ষুধার্ত হয়তো তিনি। আর ক্ষুধার্তের জন্য আহারের ব্যবস্থা না করে আমরা বোকা মানুষেরা তাদের জন্য আহারের ব্যবস্থা করি যারা খেতে অনীহা প্রকাশ করে! কেননা তেলা মাথায় তেল দেওয়া আমাদের একটা রোগ! সব জেনে বুঝেও আমরা সচেতন সুনাগরিক হইনা! আন্টি, আপনি দাড়ান। আমি আপনার খাবারের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। আমার খাবারের অংশটুকুই না হয় উনাকে দিয়ে দেই, কি বলেন কাকি?
দাদু বলে উঠলো,
– কি লক্ষ্মী আইছে গো আবিদার ঘরে! রেখার মা, ঠিক কতা কইছে কিন্তু!
রেখার মা হেসে বললো,
– কি কও! তোমারটা দেওয়া লাগবো! যার যার রিজিক হেয় হেয়ই খাইবো। ওইযে ইমরান ডাকে, যাও। আর আপনে চেয়ার টাইনা হেনে গিয়া বহেন। আমি পেলেট দিয়া খাবার আনাইতাছি।
নাফিসা মনে মনে বললো,
“হুহ্, জানেন তবুও মানেন না! এখনই তো উনার রিজিক মেরে দিচ্ছিলেন।”
ওদিকে ইমরান ডাকছে যাওয়ার জন্য, সিট ফাঁকা আছে। নাফিসা নিশাতের সাথে চলে গেলো। আর রেখার মা মহিলাকে উঠুনের এক কোনে চেয়ার নিয়ে বসতে বলে খাবার এনে দিলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here