নক্ষত্র_বন্দনা,পর্ব_১৫

0
616

নক্ষত্র_বন্দনা,পর্ব_১৫
লেখায়_জারিন

৭৮.

একটা আলিশান পাঁচতারা আবাসিক হোটেলের ৭ম তলার একটি রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ইরিন। রিসিপসনিস্ট মেয়েটা এই রুমটার কথাই বলেছে তাকে। ওয়াসিফ গতকাল ফোন করে তাকে এখানে আসতে ব4লেছে। হঠাৎ ওয়াসিফের দেশে আসার কথা শুনে যতটা না অবাক হয়েছিল তার থেকেও বে

    শি অবাক হয়েছিল এ ব্যাপারে বাসায় কাউকে কিছু না জানানোর কথাটা শুনে। আবার ইরিনের সাথে কি সব জরুরি কথা আছে বলে এখানে ডেকে পাঠিয়েছে।

    নক্ষত্র আজকাল ওকে বাইরে খুব একটা যেতে দেয় না। গেলেও সাথে সে যেতে না পারলেও বাড়ির কেউ না কেউ সাথে যায়। নক্ষত্রের কড়া নির্দেশ। এ সময় ইরিনকে একলা ছাড়া যাবে না। জীবনে প্রথম মা হচ্ছে, ঘরে বাইরে কখন কি অসুবিধা হয় বলা তো যায় না। তাই একলা ছাড়া যাবে না তাকে। তাদের প্রথম সন্তান আসছে জানার পর থেকে নক্ষত্রের আদর যত্নও বেড়ে গেছে অনেক। ইরিন মাঝে মাঝে অবাক হয়, একটা মানুষ এতটা যত্নশীল কি করে হতে পারে!
    তারপর আবার ভাবে, প্রথম সন্তান বলেই হয় তো এত উত্তেজন্য, এত তৎপরতা। ইরিনও কিছু বলে না এই নিয়ে। আর কয়েকটা মাসই তো। তারপর তো চলেই যাবে সে। কিন্তু, বাচ্চাটার কি করবে সেটা নিয়েই ভীষণ দোটানায় ভোগে মাঝে মাঝে।

    আজ রিতুকে স্কুলে দিয়ে মায়ের বাড়িতে যাবে বলে নক্ষত্রকে রাজি করিয়েছে ইরিন। ড্রাইভারকে সাথে নিয়ে যাবে তাই আর আপত্তি করেনি তেমন। সেই সুযোগেই রিতুকে স্কুলের সামনে নামিয়ে দিয়ে ওয়াসিফের সাথে দেখা করতে এসেছে।

    একবার বেল বাজাতেই ওয়াসিফ এসে দরজা খুলে দিল। সম্মুখে ইরিনকে দেখে তার আবেদময় হাসি হাসল। এগিয়ে এসে ইরিনকে জড়িয়ে ধরতে চাইলো সে। বাঁধা দেয় ইরিন। ওয়াসিফ অবাক হয়ে তাকায়। কিন্তু তার এই দৃষ্টিকে ইরিন বলে, ‘ভেতরে যাই আগে?’

    ‘অহ…শিওর সুইটহার্ট, কাম। ‘

    মিষ্টি হেসে দরজা থেকে সরে দাঁড়িয়ে ইরিনকে ভেতরে আসতে দিল। ইরিন পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকলো। দরজা বন্ধ করে দিয়ে ইরিনের পেছন পেছন গেল ওয়াসিফ।

    ৭৯.

    ‘কতগুলো মাস পরে তোমার সাথে দেখা। কিন্তু, আমার তো মনে হচ্ছে তুমি ঠিকমত নিজের যত্ন নাও না। কি অবস্থা করেছো শরীরের। আদৃত তোমার একদমই যত্ন নেয় না বোধয়। নিজে যেমন দেখতে বউকেও সেরকমই বানাচ্ছে দিনকে দিন। যাই হোক, একবার শুধু তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসি তারপর সব ঠিক করে দেবো। যত্নের কমতি থাকবে না তখন আর। ‘

    ‘আপনি হঠাৎ এসময় ? ‘ শ্বেতশুভ্র ঝকঝকে বিছানায় বসতে বসতে জিজ্ঞেস করলো ইরিন।

    ‘তোমার জন্য আসতে হয়েছে। ‘ ইরিনের প্রশ্নের বিপরীতে কিছুটা গম্ভীর মুখে বললো ওয়াসিফ।

    ‘কেন? ‘

    ‘আমি যেটা শুনেছি সেটা কি সত্যি ইরিন?’ কঠিন গলায় প্রশ্ন করলো ওয়াসিফ।

    ‘কি শুনেছেন?’

    ‘ইউ আর প্রেগন্যান্ট। আদৃতর বেবি ক্যারি করছো তুমি! সিরিয়াসলি ইরিন? ওয়াসিফের কন্ঠে ঈষৎ রাগ ফুঁটে উঠলো এবারে।

    ‘হ্যাঁ।’ নির্বিকার ভংগিতে জবাব দেয় ইরিন।

    ‘হাউ কুড ইউ ডু দিজ,ড্যামেট!! এই ভুল তোমার কি করে হলো?’ এবার রাগ দমাতে না পেরে চেঁচিয়ে উঠলো ওয়াসিফ। কিন্তু, এতে ইরিনের কোন ভাবান্তর হলো না।সে আগের মতই নির্বিকার স্বরে বললো,

    ‘ভাগ্যে ছিল। হয়ে গেছে।’

    ‘হোয়াট ননসেন্স! ভাগ্যে ছিল মানে? আমি তো বলেছিলাম আদৃত যাই করুক…ইউ মাস্ট স্টে প্রোটেক্টিভ। ইমার্জেন্সি পিল ইউজ করতে বলেছিলাম না তোমাকে?তাহলে কি করে হলো এটা?’

    ‘বললাম তো ভাগ্যে ছিল..হয়ে গেছে। ‘

    ‘আর ইউ কিডিং মি, ইরিন?’

    ‘নো…আ’ম নট। আর আমি নিজেও চাই এই বাচ্চাটা। ‘

    ‘মানে কি, ইরিন? তুমি আমাকে চিট করছো?

    ‘কই না তো! বাচ্চাটা যখন কন্সিভ করেই ফেলেছি তখন ও জন্মাবে এটাই তো স্বাভাবিক। ‘

    ‘কবে জেনেছো?’

    ‘১১ সপ্তাহের কাছাকাছি সময়ে। ‘

    ‘এবর্শন কেন করোনি তাহলে?’

    ‘মা হয়ে সন্তানকে খুন করতে বলছেন? মাথা ঠিক আছে আপনার?’ কিছুটা রেগে গিয়ে বললো ইরিন। এবর্শনের কথাটা ওর মোটেও পছন্দ হয়নি।

    ‘তুমি কি এটা ইচ্ছে করে করেছো ইরিন?’ বিচলিত কন্ঠে বললো ওয়াসিফ।

    ‘না। তবে, ও যখন এসেই গেছে ওকে উপেক্ষা করা আমার দ্বারা সম্ভব না। বাচ্চাটা উনার আরশ হলেও সে আমারও অংশ। ‘ দৃঢ় কন্ঠে বললো ইরিন।

    ‘আচ্ছা, ঠিক আছে। ব্যাপার না। ভুল যখন হয়ে গেছে তো গেছেই। এটা ঠিক করে নিলেই হবে। ‘ কপালে দু আঙুল দিয়ে ঘষতে ঘষতে চিন্তিত ভংগিতে বললো ওয়াসিফ।

    ‘মানে?’ কপাল কুচকে গেল ইরিনের। তা দেখে ওয়াসিফ বললো,’ মানেটা সিম্পল। তুমি আদৃতকে ডিভোর্স দিবে। তারপর আমরা বিয়ে করে লন্ডন চলে যাবো। বাচ্চাটা লন্ডনেই জন্মাবে। ‘

    ‘আপনি হয় তো জানেন না ওয়াসিফ, আমার এই অবস্থায় না ডিভোর্স হওয়া সম্ভব আর না বিয়ে। বাচ্চাটা দুনিয়াতে না আসা পর্যন্ত কোন কিছুই সম্ভব না। ‘

    ‘তুমি আমি চাইলেই সম্ভব। ‘

    ‘কিভাবে?’

    ‘তুমি আপাদত লন্ডন যাবে আমার সাথে। আমার স্ত্রীর পরিচয়ে। পেপারস যা লাগে আমি এরেঞ্জ করবো। আগে এখান থেকে বের হই, তারপর বাকি যা করার করবো।’

    ‘কিন্তু আমি চাই বাচ্চাটা ওর বাবার কাছে থাকুক। তাই আপাদত আমি কোথাও যেতে চাচ্ছি না ওয়াসিফ। এই কথাটা বেশ ক’দিন ধরেই আপনাকে বলতে চাইছিলাম। কিন্তু ঠিক বলা হয়ে উঠছিলনা।’

    ‘অসম্ভব।’ কোন অনিষ্ট হওয়ার মত আংশকায় উত্তেজিত হয়ে বললো ওয়াসিফ। ইরিন চমকালো ওয়াসিফের এমন আচরণে। বিভ্রান্তস্বরে প্রশ্ন করলো,

    ‘কি অসম্ভব?

    ‘বাচ্চাটা কোনভাবেই আদৃতর কাছে থাকতে পারে না। তুমি আমার সাথে লন্ডন যাচ্ছো। আর সেটা এই সপ্তাহেই। আমি আর কিছু শুনতে চাই না।’

    ‘আপনিএত তাড়াহুড়ো করছেন কেন ওয়াসিফ? আর, বাচ্চাটা উনার কাছে থাকতে পারে না মানে কি? কি বলতে চাইছেন কি আপনি?’

    ‘না….মানে আমি বলতে চাইছি যে তুমি তো ওর মা। তুমি কি পারবে নিজের সন্তান ছেড়ে থাকতে? আর এখানে জন্ম দেওয়ার পর দেখা যাবে তুমি ওর মায়ায় পড়ে গেছো। ওকে ছেড়ে আসতে চাইছো না। আদৃতও বাচ্চাটা দিতে চাইবে না। তখন যদি তোমার মন বদলে যায়? আমি এটা মানতে পারবো না ইরিন।’ এটুকু বলে ইরিনের সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো ওয়াসিফ।ইরিনের দু গালে হাত রেখে আঁজলা তুলে নিল মুখখানি। ইরিন অস্বস্তি হওয়া সত্ত্বেও চুপ রইলো। ওয়াসিফের পরিবর্তিত কার্যকলাপ দেখার জন্য অপেক্ষা করলো।

    ওয়াসিফ ইরিনের মুখের দিকে তাকিয়ে উতলা কন্ঠে বললো,

    ‘লুক, ইরিন…আই লাভ ইউ। এন্ড আই রিয়েলি ওয়ান্ট ইউ এজ মাইন। তোমার জন্য আমি আমার ফ্যামিলি পর্যন্ত হারানোর রিস্ক নিচ্ছি। অদ্রিজাকে ঠকাচ্ছি। নিজের পরিবার, পরিচিত সব ছেড়ে লন্ডনে সেটেল হতে চাইছি শুধু তোমার জন্য। তোমাকে পাবো বলে। সেখানে তুমি এমন করলে আমি তো পুরো শেষ হয়ে যাবো। তোমার প্রতারণা আমি মানতে পারবো না ইরিন। মরে যাবো একদম।

    প্লিজ ইরিন, ট্রাই টু আন্ডারস্যান্ড….আই কান্ট টেইক এ্যানি চান্স এ্যাবাউট ইউ। প্লিজ….সুইটহার্ট!’

    ৮০.

    এতক্ষণ ওয়াসিফের চোখের দিকে তাকিয়ে ওকে নিগূঢ়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছিল ইরিন। ওয়াসিফের মত একটা ছেলে যার কোন কিছুর অভাব নেই…অদ্রিজার মত একটা সুন্দরী, ভালো…কুমারী মেয়ের সাথে যার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে, সে কিনা ইরিনের মত একটা মেয়ের জন্য এমন উতলা হচ্ছে? এমন কি অন্যের বাচ্চাকেও নিজের করে নিতে চাইছে।

    ওয়াসিফ কি সত্যিই এতটা ভালোবাসে তাকে? তাহলে ওর স্পর্শগুলো এমন অস্বস্তি দেয় কেন তাকে? সে তো নক্ষত্র নয়। তাকে তো ইরিন নিজেই চেয়েছে, পছন্দ করেছে। তাহলে? কই নক্ষত্র যখন স্পর্শ করে তখন তো এমন লাগে না আজকাল? নাকি নক্ষত্রের স্পর্শে অভ্যস্ত হয়ে গেছে বলে এই নতুন স্পর্শ তার অচেনা লাগছে। অস্বস্তির কারণ হচ্ছে। এতশত ভেবে বিভ্রান্ত হয় ইরিন আপন মনেই। ভেতর ভেতর হাঁপিয়ে উঠে।

    একপলক ওয়াসিফের দিকে তাকায় ইরিন। আস্তে করে তার গাল ছুঁয়ে থাকা হাতগুলো সরিয়ে দিতে দিতে বলে,

    ‘আমাকে একটু সময় দিন। ভেবে জানাচ্ছি। ‘

    ‘ওকে….ফাইন। তুমি ভেবে দেখো কিভাবে কি করবে…কিন্তু চারদিন পর আমরা লন্ডন ব্যাক করছি, এটাই ফাইনাল, ওকে? ‘ একরকম চাপিয়ে দেওয়া আদেশের স্বরে বললে ওয়াসিফ।

    ‘আজ আসি। ‘ বিছানা থেকে উঠে যেতে যেতে বললো ইরিন।

    ‘এত তাড়াতাড়ি? এই তো এলে। কতগুলো মাস পরে তোমায় কাছে পেলাম। একটু সময় দিবে না আমাকে?’

    ‘উনার বাড়ি ফেরার সময় হয়ে গেছে। আজকাল এখানকার অফিসে গেলে দুপুরেই বাড়িতে চলে আসেন। ‘

    ‘তুমি ওর এত কেয়ার করো, ইরিন?’

    ‘উনার ওয়াইফ তো…করতে হয়। ‘ ভাবলেশ চোখে তাকিয়ে বললো ইরিন।

    ‘তুমি কি আদৃতকে ভালোবেসে ফেলেছো ইরিন?’

    সংশয়ভরা কন্ঠে প্রশ্ন করে ওয়াসিফ। তার এমন প্রশ্নে একটু সময় নেয় ইরিন। তারপর, নিজ মনের দোলাচলে মনের রায়কে ছাপিয়ে নিজের মস্তিষ্কের কথায় জবাব দেয়।

    ‘নাহ…ভালোবাসি না। তবে, উনার ভালোবাসার মোহে পড়েছি বোধয়। একসাথে থাকতে থাকতে যা হয় আর কি! চিন্তা করো না, দূরে গেলেই মোহ কেটে যাবে। আসছি। ‘

    ইরিনের কথায় সন্তুষ্ট হয় না ওয়াসিফ। কিন্তু এই নিয়ে কথাও বাড়ায় না আর। ইরিনকে পিছু ডেকে বলে, ‘ওয়েট, আমিও আসছি। এগিয়ে দিয়ে আসি তোমাকে। ‘

    ইরিন কথা বাড়ায় না।চুপচাপ রুমের দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এসে দাঁড়ায়। ওয়াসিফ রুম লক করতেই তারা রওনা হয়।

    ৮১.

    ‘এই…হ্যালো, এই…ইরিন…ওয়েট’

    লিফটের জন্য ওয়েট করছিল ওয়াসিফ এবং ইরিন। আচমকা পেছন থেকে শুনতে পেল একটা নারী কন্ঠস্বর। ইরিন পেছন ফিরে তাকাতেই সেই নারী কন্ঠটি প্রায় দৌঁড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো তাকে। ইরিন এবং ওয়াসিফ দুজনেই হকচকিয়ে গেল। ইরিন অপ্রস্তুত থাকায় পেছন দিকে ঝুঁকে যায় বেশ কিছুটা। ওয়াসিফ পেছন থেকে তার কোমড় ধরে সামলে নেয়। ওয়াসিফের এই স্পর্শ কাঁটার মত বিঁধে ইরিনের কাছে। ওর মনে পড়ে যায় নক্ষত্রের স্পর্শ।শক্তপোক্ত সেই পুরুষালী হাতের স্পর্শেও যেন অদৃশ্য এক ভরসা…অগাধ স্বস্তি মিশে থাকে। যেটা এই স্পর্শে নেই।

    আগুন্তক নারীটি ইরিনকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতেই ইরিন দ্রুত হাতে কোমড় থেকে ওয়াসিফের হাত সরিয়ে দেয়। একরাশ অস্বস্তি নিয়ে সম্মুখে তাকাতেই আবিষ্কার করে একটা পরিচিত মুখ। মারিয়া দাঁড়িয়ে আছে। তার কলেজ।জীবনের কাছের বান্ধুবী। ইন্টারমিডিয়েটের পর বিয়ে হয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে যায়। পরে শুনেছিল স্বামীর সাথে সিংগাপুরে চলে গেছে। আর আজ প্রায় ৬ বছর পরে দেখা হলো দুজনের।

    ইরিনকে দেখে হাস্যজ্জ্বল মুখে মারিয়া বললো, ‘কত্তগুলা বছর পরে তোর সাথে দেখা রে দোস্ত! আমি তো ভাবিই নাই এভাবে এখানে তোর সাথে দেখা হয়ে যাবে আমার।ওওও…আল্লাহ। একদম চেঞ্জ হয়ে গেছিস তো তুই। কি অবস্থা তোর?

    ‘আলহামদুলিল্লাহ। ‘ তুই কেমন আছিস? কোথায় আছিস আজকাল? ‘

    ‘ভালো আছি রে দোস্ত। হাজবেন্ডের সাথে দুই বেবি নিয়ে সিংগাপুরেই থাকি। গতমাসে দেশে আসছিলাম। আম্মাকে দেখতে। আজ ব্যাক করবো। রাতের ফ্লাইট। এখান থেকে এয়ারপোর্ট কাছে। তাই, এখানেই আছি সন্ধ্যা পর্যন্ত। ‘

    ‘অহ..আচ্ছা।’

    ‘হু। কিন্তু তোর চেহারার এই অবস্থা কেন? অসুস্থ নাকি তুই?’

    ‘না…আসলে..’

    ‘সি ইজ ফাইভ মান্থস প্রেগন্যান্ট। ফার্স্ট বেবি তো তাই চিন্তায় চিন্তায় এমন হয়ে গেছে। ‘ ইরিন কিছু বলার আগেই পাশ থেকে বললো ওয়াসিফ। মারিয়াও এবার ওয়াসিফকে খেয়াল করলো। আন্দাজে ঢিল ছুড়ার মত করে বললো, ‘ইরিন’স হাজবেন্ড, রাইট?’

    ‘ইয়াহ। হাই, আ’ম ওয়াসিফ রায়হান। ‘ তার চিরচারিত ঘায়েল করা হাসি হেসে বললো ওয়াসিফ।

    ‘হ্যালো…আমি মারিয়া। ইরিনের কলেজ ফ্রেন্ড। ‘

    ‘নাইস টু মিট ইউ, বিউটিফুল লেডি। ‘ মুচকি হেসে বললো ওয়াসিফ।

    ‘সেইম হিয়ার।’ আলতো হেসে বললো মারিয়া। তারপর একনজরে ভালোভাবে দেখলো ওয়াসিফকে। ইরিনকে বললো, ‘ভাইয়া তো ভীষণ হ্যান্ডসাম রে দোস্ত। কিভাবে পেলি তাকে? লাভ ম্যারেজ নাকি এরেঞ্জ ম্যারেজ?’

    ‘এরেঞ্জ ছিল। কিন্তু আমি তো প্রথম দেখেই ওর প্রেমে পড়ে গেছিলাম। বিয়ে পর্যন্ত যেতে যেতে ভালোবেসে ফেলেছিলাম আমি। সো, ইউ ক্যান স্যে ইট আ লাভ ম্যারেজ ‘

    ‘অঅওও…হাউ রোমান্টিক। এটুকু বলে সে হাসি মুখে ইরিনের দিকে তাকাতেই ইরিনের চুপসে যাওয়া ক্লান্ত মুখটা নজরে এলো তার। ইরিনের ব্যাপারটা খেয়াল হতেই জিহ্ব কাটলো মারিয়া। অপরাধী স্বরে বললো,

    ‘স্যরি রি দোস্ত। আমি আসলে বুঝি নাই। তাই এভাবে হুট করে হাগ করে ফেলছি। তোর লাগে নাই তো কোথাও?’

    ‘আরে না…ঠিক আছি আমি। ‘

    ‘গ্রেট। তা তোরা এখানে কি করতে?’

    ‘ও…আসলে…’ ইরিন ঠিক কি বলবে বুঝতে পারছে না। তখনই ওয়াসিফ বললো, ‘ম্যাডামকে রিফ্রেশমেন্টের জন্য নিয়ে এসেছি। আমি একচুয়্যালি লন্ডন থাকি। ওখানেই এক্সপোর্ট ইমোর্টের বিজনেস আমার। বিয়ের পর ইরিনকে নেওয়া সম্ভব হয়নি। বিজনেস রেখে ঘনঘন আসাও কঠিন হচ্ছিল আমার জন্য। তাই এবার ম্যাডামকেই নিয়ে যাচ্ছি সাথে করে। এই অবস্থায় বউ কি আর দূরে রাখা যায় বলুন? ‘ ইরিনের কোমড় জড়িয়ে তাকে কাছে টেনে এনে বললো ওয়াসিফ।

    ইরিন এবার মহাবিরক্ত ওয়াসিফের আচরণে। মারিয়ার সামনে কিছু বলতেও পারছে না। তাই তাল বাহানা করে বললো, ‘এখন যাই রে দোস্ত। বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হয়। বাড়ি যাবো। ‘

    ‘আরেএ…হ্যাঁ..হ্যাঁ। আগে বলবি তো দোস্ত।আসলে আমারই খেয়াল করা উচিৎ ছিল বিষয়টা। আচ্ছা, এক কাজ কর, তোর কন্টাক্ট নাম্বারটা দে। একবার যখন পেয়েই গেছি এবার কন্টাক্টে না থাকলেই নয়। ‘

    ইরিন অনিচ্ছা সত্ত্বে নাম্বার দিল। তারপর মারিয়ার থেকে বিদায় নিয়ে লিফটের দিকে এগিয়ে গেল দুজনেই।

    ৮২.

    লিফট বন্ধ হতেই ইরিন চাপা রাগে ওয়াসিফকে বললো,

    ‘বলেছিলাম না বিয়ের আগে এভাবে ছুঁবেন না আমাকে? আর এত আগ বাড়িয়ে কথা বলার কি দরকার ছিল আপনার? কতগুলো মিথ্যা বললেন আপনি ওকে!”

    ‘আমি তোমার হাজবেন্ড নই এটা বললে যখন প্রশ্ন করতো আমি কে, কি জবাব দিতে? তাছাড়া তুমি তো লন্ডন যাচ্ছোই আমার স্ত্রী হিসেবে। আজ হোক বা কাল পরিচয় তো এটাই হবে আমাদের। আর টাচ করার কথা বলছো? যেখানে তুমি আদৃতর বেবি ক্যারি করছো ,সেখানে এটুকু টাচ করার রাইট আমি রাখি এটলিস্ট, রাইট?’

    ‘উনি আমার হাজবেন্ড। আমাকে সবভাবে স্পর্শ করার অধিকার উনার আছে। ‘

    ‘হতে পারে….বাট ইউ ওয়ান্ট মি। এন্ড আই ডিজার্ভ দিজ রাইট টু টাচ ইউ লাইক আই ওয়ান্ট।’

    ‘নো…ইউ কান্ট। আমাদের বিয়ে হয়নি। আমি আপনার সাথে যেতে রাজি হয়েছি তার কারণ….’

    ‘কারণ তুমি আদৃতর সাথে সুখী নও। তোমার চাওয়া পাওয়া সব আমি পূরণ করতে সক্ষম। ‘

    ‘আমার কোন কিছুর কমতি নেই। উনি আমার সব প্রয়োজন পূরণ করেন। ‘

    ‘হ্যাঁ, সে তো তোমাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আফরঅল, ইউ আর ক্যারিং হিজ বেবি। ‘

    ওয়াসিফের এমন খোঁচা মারা কথায় কঠিন দৃষ্টি দিয়ে ওর দিকে তাকালো ইরিন। ইরিনের এমন প্রতিক্রিয়া দেখে ভ্রু কুচকে ফেললো ওয়াসিফ। ইরিন দৃষ্টি সরিয়ে নিল। রাগ লাগছে কেন জানি এখন ওর। ওয়াসিফের গা জ্বালানো কথাগুলো বিচ্ছিরি লাগছে ভীষণ।

    ‘ উনি একজন ভালো স্বামী ওয়াসিফ। ‘ আনমনেই বলে উঠে ইরিন।

    ‘তাহলে ওকে ছেড়ে আমার সাথে যাচ্ছো কেন? ‘ ওয়াসিফের এমন প্রশ্নে হকচকিয়ে যায় ইরিন। বিভ্রান্তিতে পড়ে যায়। মনে প্রশ্নে জাগে , সত্যিই তো নক্ষত্রকে ছেড়ে কেন যাচ্ছে সে? শুধুমাত্র নক্ষত্রকে রূপ সৌন্দর্যের দিক থেকে স্বামী হিসেবে পছন্দ নয় বলে? নয় তো ওয়াসিফ আর নক্ষত্রের মাঝে কিসের তফাৎ?অর্থ, বিত্ত, নাম যশ..কিসের কমতি? দোলাচলে দোলে ইরিনের মন।

    ওয়াসিফ ইরিনের জবাবের অপেক্ষা করে না। বরং নিজেই জবাব দেয়। ইরিনকে কাছে টেনে নিতেই ধ্যান ভাঙে ইরিনের। বিভ্রান্ত মনে ওয়াসিফের মুখ পানে চাইতেই ওয়াসিফ বলে,

    ‘ তোমার সব থেকে বড় প্রয়োজন একটা ভালোবাসার মানুষ, যাকে তুমি চাও, পছন্দ করো। সেটা আদৃত নয় বলেই তুমি আমাকে ভালোবেসেছো ইরিন। আমিও তোমাকে ভালোবাসি বলেই নিজের কাছে নিয়ে যেতে চাইছি। প্লিজ তুমি আর কিছু ভেবো না। তোমাকে আমি সব অবস্থায় গ্রহণ করতে রাজি। এমনকি এই বাচ্চাটাকে নিয়েও। ওর বাবা হওয়ার সব দায়িত্ব আমি নিবো ইরিন। তুমি শুধু আমার সাথে চলো। ইরিনের পেটের উপর হাত রেখে বলে ওয়াসিফ। ইরিন একঝটকায় হাত সরিয়ে দূরে সরে দাঁড়ায়। যেখানে নক্ষত্র ভালোবেসে, স্নেহভরে স্পর্শ করে সেখানে অন্য কারো স্পর্শ গ্রাহ্য করলো না ইরিনের মন।

    ৮৩.

    লিফট গ্রাউন্ডফ্লোরে নামতেই দ্রুত পায়ে বেরিয়ে এলো ইরিন। ওয়াসিফও দ্রুত হাত ধরে তাকে থামালো। চিন্তিত ও যত্নশীল ভাব নিয়ে বললো, ‘এভাবে চলে না ইরিন। পড়ে গেলে আমার বেবিটা হার্ট হবে। বি কেয়ারফুল ডার্লিং। এই তো আর তো মাত্র ৩/৪ দিন। তারপরেই সব টেনশন শেষ। বেবি তার যোগ্য জায়গায় পৌঁছে যাবে। সেখানে তার আদর যত্নে কোন কমতি হবে না। ‘

    ইরিন খুব একটা পাত্তা দিল না ওয়াসিফের কথায়। ঘড়িতে সময় দেখলো। নক্ষত্রের আসার সময় হয়ে গেছে। বাড়ি ফিরতে হবে তাকে। কোন মতে বললো, ‘হুম। আসছি এখন। ‘

    ‘টেইক কেয়ার সুইটহার্ট। ‘

    ইরিন আর দাঁড়ালো না। বাইরে এসে গাড়িতে উঠে বসলো। উদ্দেশ্য নক্ষত্রের কাছে যাওয়া। ‘

    ৮৪.

    বাইরে পড়ন্ত বিকেল। আকাশ তার বিদায় বেলার রঙ ধারণ করেছে। মেতে উঠেছে গোধূলি লগ্নের রঙ বদলের খেলায়। হরেক রকম রঙ নিয়ে নিজেকে সাজিয়ে তুলছে ধীরে ধীরে। গাঢ় থেকে গাঢ হচ্ছে তারা। জানান দিচ্ছে সাঁঝের আগমনী বার্তা। প্রকৃতির এই অপরূপ রংরূপের লীলাখেলায় অনলিয়ায় বুদ হয়ে যাওয়া যায়। মুগ্ধতা ছুঁয়ে যায় মন কুঠুরির কোণায় কোণায়।

    সেদিকে তাকিয়ে ক্লান্ত ভংগিতে চায়ের কাপে আবারও চুমুক দিল ইরিন। অনেকটা সময় নিঃশব্দে কেটে যাওয়ার পর, এর কারণ উদ্ধার করতেই এবার সামনে ফিরে তাকালো। সাথে সাথে কপাল কুচকে গেল তার। রাফিদ হা হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। কোন নড়চড় নেই। যে কোন অতি আশ্চর্য কিছু দেখতে পেয়ে বিষ্ময়ে বিমূঢ় হয়ে গেছে সে। কিন্তু আদতে ঘটনা কি সেসব কিছু বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করলো ইরিন।

    ‘সমস্যা কি?’

    ‘সিরিয়াসলি মিসেস. ইরিন? ‘ বিষ্ময়মাখা গলায় বললো রাফিদ।

    ‘হোয়াট?’ অপ্রস্তুত স্বরে বললো ইরিন।

    ‘এটা আপনি ছিলেন?’

    ‘কোনটা?’ বিভ্রান্ত স্বরে এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো ইরিন।

    ‘ইউ নো হোয়াট, আই ওয়াজ ফিলিং…’ বেশ টানটান উত্তেজনা ছলকে পড়লো রাফিদের গলায়। কিন্তু উত্তেজনার চোটে কথা আটকে গেল তার।

    রাফিদের বলার ধরণ দেখে চোখ বড় বড় হয়ে গেল ইরিনের। বিচলিত, বিভ্রান্ত গলায় প্রশ্ন করলো, ‘কি?’

    ‘আমার মনে হচ্ছিল কোন থ্রিলার মুভির স্টোরি শুনছি। এন্ড ইউ ওয়ার দ্যা মোস্ট মিস্ট্রিয়াস ক্যারেক্টার অফ ইট। একদম ডিটেকটিভ উইমেনদের মত রহস্যময়ী চরিত্র লাগছিল আপনার কথা আর কাজে। ওওওফহ!! ইউ আর সোওঅঅঅঅ….’

    ‘ব্যাস…মি. রাফিদ। থামুন। আপনার এক্সাইটমেন্টের ঠ্যালায় আসে পাশের সব উড়ে যাবে না হলে।’

    রাফিদের মন হলো বিশাল ফুলন্ত বেলুনে টুস করে সুই ফুঁটিয়ে তা চুপসে দেওয়ার মতই তার ফিলিংস এক্সপ্রেসের এক্সাইটমেন্টটাও ফুঁস করে দিল ইরিন। চুপসে যাওয়া মুখে গম্ভীর গলায় বললো, ‘বাট আই ওয়াজ সিরিয়াসলি ভেরি ভেরি সিরিয়াস মিসেস. ইরিন।’

    ‘হয়েছে…বুঝেছি আমি। ইউ ওয়্যার সিরিয়াস।

    ‘নট অনলি সিরিয়াস। আই অ্যাম স্টিল ভেরি ভেরি সিরিয়াস। ‘ নিজের কথার গুরুত্ব বাড়িয়ে বললো রাফিদ।

    ইরিন হেসে ফেললো তার কথায়। মূহুর্তেই আবার মিলিয়ে গেল সেই হাসিটার রেশ। নেমে আসা সাঁঝের আলোর মতই রঙ বদলে সেটা রূপ নিল তাচ্ছিল্যের বেশে ।

    ‘ওকে…ফাইন। মানলাম আপনার কথা। বাট আমার কাছে এখন এসব কিছু থার্ডক্লাস টাইপ মুভি বা ডেইলি সোপের কাহিনীর মত লাগে। ‘ চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে নির্বিকার ভংগিতে বললো ইরিন।

    ‘কেন?’ অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো রাফিদ।

    ‘নক্ষত্রের মত স্বামী থাকতেও যে মেয়ে অন্য একটা পুরুষের সাথে পালিয়ে যেতে চায় তাকে এক কথায় থার্ডক্লাস বলা চলে।টোটালি ক্যারেকটারলেস। আমিও তাই। ওই জন্যই এখন বাস্তবটা এমন লাগে। ‘

    নিজের প্রতি ইরিনের এই অবজ্ঞা, অপমান রাফিদের একটুও ভালো লাগলো না। যে ইরিনের সাথে তার পরিচয়, তার এটিটিউড দেখেই তো অবলিলায় তার প্রেমে পড়া যায়। এতটা শান্ত হাসি, বিষন্ন চোখ অথচ তীক্ষ্ণ ও সংযত আচার ব্যবহার যার সেই নারী যে কারও মন কাড়তে সক্ষম।

    অথচ, অতীতের ইরিনের সাথে এই ইরিনকে মিলাতে গেলে তা আকাশ পাতাল তফাৎকেও হার মানায়। ইরিনের এমন অবস্থার কথা ভাবতে গিয়ে মন খারাপ হয়ে গেল রাফিদের। বিষন্ন গলায় ইরিনকে প্রবোধ দিয়ে বললো ,

    ‘আপনি বিভ্রান্ত ছিলেন, ইরিন। ভুল ঠিকের বোধ ছিল না তখন। তাই বলে আপনি থার্ডক্লাস মেয়ে নন। হতেই পারেন না আপনি এমন। ‘

    ‘এত কনফিডেন্স?’

    ‘অবশ্যই। আরেএএ….আপনাকে দেখলে তো যে কেউ প্রেমে পড়তে বাধ্য। এতটা মায়াবী মুখ আপনার।’আত্মবিশ্বাসী হয়ে উত্তেজিত স্বরে বললো রাফিদ।

    রাফিদের এমন কথায় হেসে উঠলো ইরিন। মশকরা করে বললো, ‘যে কেউ প্রেমে পড়তে বাধ্য?’

    ‘হ্যাঁ, তবে আমি ছাড়া। আমি আপনাকে ভয় পাই কিঞ্চিৎ। যা তীক্ষ্ণ চাহুনিরে বাবা! ভয় লাগে খুব। তাই আপনার প্রেমে পড়ার খেয়ালও আমার মন পাড়ায় পা ফেলার আগেই পালাই পালাই করবে। ‘

    ইরিন এবার সশব্দে হেসে ফেললো। রাফিদ মুগ্ধ হয়ে দেখলে সেই হাসি। ওর এবার সত্যিই মনে হলো, এই মেয়ের হাসির ঝংকারে যে কেউ প্রেমে পড়বে। তাকে ভালোবাসতে চাইবে। এই ভাবনার মাঝেই চট করে রাফিদের মনে প্রশ্ন জাগলো, ‘ওয়াসিফ কেন এত ডেস্পারেট ছিল ইরিনের জন্য? ও কি সত্যিই ইরিনের প্রেমে পড়েছিল? ভালোবেসেছিল ওকে?’

    রাফিদ সময় নিল না। মনে উদয় হওয়া প্রশ্নটি ইরিনের সম্মুখে মেলে ধরলো। ইরিনের হাসি মুখের দিকে বিভ্রান্ত ও কৌতুহলী দৃষ্টি ছুঁড়ে দিয়ে প্রশ্ন করলো রাফিদ।

    ‘আচ্ছা…ওয়াসিফ কি সত্যি সত্যি প্রেমে পড়েছিল আপনার? ভালোবেসেছিল আপনাকে?’

    রাফিদের প্রশ্নে হাসিটুকু হাওয়াই মিঠায়ের মত নেতিয়ে গেল। পড়ে রইলো ইরিনের ঠোঁটের কোণে। কয়েক সেকেন্ডের ব্যাবধানেই বক্ররেখার মত প্রসারিত হলো ঠোঁটের কোণে নেতিয়ে পড়ে থাকা সেই হাসিটুকু। রাফিদের থেকে চোখ সরিয়ে শান্তচোখে আকাশের দিকে তাকালো ইরিন।

    শেষ বেলায় নীড়ে ফিরে যাওয়া পাখির ডানা অস্থির হয়ে ঝাপটানোর শব্দের সাথে মিশে গিয়ে রাফিদের কানে ভেসে এলো ইরিনের শান্ত…বিষন্ন কন্ঠস্বর।

    ‘নক্ষত্র ছাড়া আমায় কেউ ভালোবাসেনি।’

    চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here