“তৃ-তনয়া” পর্ব- ৮৬

0
2495

“তৃ-তনয়া”
পর্ব- ৮৬
(নূর নাফিসা)
.
.
বেশ কিছুক্ষণ জানালার বিপরীতে দাড়িয়ে ইমরান মশার কামড় খেয়েছে। শুধু অপেক্ষা করছিলো কখন নাফিসা একটু শান্ত হবে। তাকে কাদতে দেখতে একটুও ভালো লাগছে না! কিন্তু কি করার ছিলো! বিনা কারণে মাকে এভাবে বলা কি তার উচিত হয়েছে! এইটুকু বোধ তো তার মাঝে নিশ্চয়ই ছিলো। এভাবে কথা বললো কেন! এর কারণই বা জানবে কি করে! সে সামনে গেলেই তো জিদ্দি মেয়েটা পাগলের মতো আচরণ করে যাচ্ছে! রাগের মাঝেও রাগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে! জেদটা একটু কন্ট্রোল করে কি শান্ত ভাবে কথা বলতে পারে না!
ইমরান ভাবছে আর অন্ধকার উঠুনে পায়চারি করছে। এর মাঝে নিশাত এসে বই নিয়ে আবার বড় ঘরে চলে গেছে। এমনি ইশার আযান পড়ে গেছে। নামাজ পড়তে যেতে হবে। কিন্তু এর খেয়াল রাখবে কে! নিশাতকে ডাকবে! নিশাত এলে যদি সে সুযোগ পেয়ে বেরিয়ে যায়! না, একাই থাকুক। একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা রেখে ইমরান ওযু করে বারান্দার গেইটে তালা দিয়ে মসজিদে চলে গেলো। নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর এক ফুপাতো ভাইয়ের সাথে দেখা হলো। সেখানে আবার কথা বলে কিছুক্ষণ সময় ব্যয় করলো। ফিরে এসে জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখলো নাফিসা একই জায়গায় বসে আছে। কান্নার শব্দ থেমে গেছে কিন্তু হেচকি উঠছে। দুই হাটু মুড়ে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। বাইরে আর এখন অন্ধকার নয়। আরমান বাসায় ফিরে বাইরের লাইট জ্বালিয়ে দিয়েছে। ইমরান তালা খুলে ভেতরে প্রবেশ করতেই নাফিসা তার দিকে তাকালো। সাথে সাথেই দৃষ্টি সরিয়ে চোখ মুছতে মুছতে উঠে দাড়ালো সে। পায়ে ভেজা অনুভব করতে পেরে ইমরান ফ্লোরের দিকে লক্ষ্য করে দেখলো ঘরে থু থু ফেলেছে নাফিসা। রক্ত মিশ্রিত লালা। এদিকে নাফিসা দরজা খুলে বেরিয়ে যাচ্ছে। ইমরান জিজ্ঞেস করলো, “কোথায় যাচ্ছো?” কিন্তু নাফিসা কোন জবাব দিলো না৷ ইমরান দরজার কাছে এসে দাড়িয়ে দেখলো নাফিসা বাথরুমে যাচ্ছে। তাই সে আবার রুমে চলে এলো। পাপোশ দিয়ে ফ্লোর মুছে জানালা লাগিয়ে দিলো। নাফিসার পার্স, বোরকা তুলে আলমারিতে রাখলো। অত:পর টিশার্ট খুলে ফ্যানের নিচে বসলো। প্রায় দশ মিনিট পেরিয়ে গেছে নাফিসা এখনো রুমে আসেনি। সে নাফিসাকে খুজতে এসে বাথরুমে পেলো না! তাহলে কি বেরিয়ে গেছে! গেইট তো ভেতর থেকে লাগানো দেখা যাচ্ছে! অত:পর নিশাতের রুমের দিকে চোখ পড়তেই দেখলো ভেতর থেকে দরজা বন্ধ! ব্যর্থতার এক নিশ্বাস ছেড়ে ইমরান দরজায় নক করলো। কিন্তু এতে কোনো লাভ হলো না।
সে নিজের রুমে এসে বই নিয়ে বসে রইলো কিন্তু পড়ায় মন বসছে না। যদিও এতোক্ষণে নাফিসার প্রতি তার রাগ চলে গেছে তবুও নাফিসাকে ব্যাথা দিয়েছে যেহেতু এখন রাগ না ভাঙানো পর্যন্ত শান্তি নেই তার! কিন্তু সেই সুযোগটাই তো পাচ্ছে না! এদিকে আরমানের ডাক পড়লো ডিনার করার জন্য। ইমরান বলে দিলো পরে খাবে। একটু পর আবারও ডাক পড়লো নিশাতের, ইমরান তখন নিশাতকে এ ঘরে আসতে বললো। বইয়ের কথা বলে কৌশলে নাফিসাকে ডাকতে বললে নিশাত তা-ই করলো। বেশ কয়েকবার ডাকলো কিন্তু নাফিসা সাড়া দিলো না! নিশাত যখন বললো, “ভাবি, দরজা খুলো। বই নিবো আমি। পড়তে হবে তো!” অতপর নাফিসা দরজা খুলে দিলো। নিশাতের সাথে সাথেই ইমরানও প্রবেশ করলো রুমে। নিশাত খেতে যাওয়ার জন্য বললে নাফিসা দ্রুত এসে খাটে শুয়ে পড়লো। ইমরান তার হাত ধরে টানলো উঠার জন্য, কিন্তু সে উঠলো না। অবশেষে ইমরান বললো,
– নিশাত, তুই কিছু দেখছিস?
– কি?
– এখন তুই কিছুই দেখবি না কিন্তু।
নিশাত প্রথমে না বুঝতে পারলেও এবার কিছুটা আন্দাজ করতে পেরে মুখ চেপে হেসে টেবিলে নিজের কাজে মনযোগ দিলো। ইমরান হুট করেই নাফিসাকে শোয়া থেকে কোলে তুলে বেরিয়ে যেতে লাগলো! নাফিসা অবাক হলেও তা প্রকাশ করলো না, শুধু ছটফট করছে! ইমরান বললো,
– আরে! করছো কি! এখনই তো পড়ে যেতে!
তবুও নাফিসার ছটফট থামেনি! ইমরান যতদ্রুত সম্ভব রুমে চলে এলো। নাফিসাকে খাটে নামিয়ে দিয়ে বললো,
– ধুর, নামো! লম্বা মেয়েদের কোলে নেয়া যায় নাকি!
নাফিসা বিছানা ছেড়ে নেমে যেতে যেতে বললো,
– আমি বলেছি নাকি কাউকে কোলে নিতে!
ইমরান দরজা লাগিয়ে নাফিসার হাত ধরে বললো,
– বারবার ইগনোর করা কারোই পছন্দ হয় না। আমরা ঠান্ডা মেজাজে কথা বলি?
নাফিসা হাত ছুটানোর চেষ্টা করেই যাচ্ছে! তার চোখে অটোমেটিক পানি চলে এসেছে। ইমরান বললো,
– নাফিসা, কথা শুনো।
– কোনো কথা শুনবো না আমি। আপনাদের এ বাড়িতে থাকতেও চাইনা আর!
– কেন, কোথায় যাবে?
– যেদিকে খুশি যাবো। কারো খেলনার পুতুল হয়ে থাকতে পারবো না এ বাড়িতে, আর না পারবো একজনের হাত থেকে অন্যজনকে রক্ষা করতে। আমি কোনো মহৎ কিছু নই, যে হাতের ইশারায় সব ঠিক করে দিবো! আমিও সাধারণ একজন মানুষ।
– এসব কেন বলছো! আমি তোমাকে বউ করে নিয়ে এসেছি।
– বউ? বউ করে এনেছেন কেন? দিনরাত নির্যাতন করতে? আপনার ভালোর জন্য কাজও করে দিবো আমি আবার আপনার হাতের মাইর ও খাবো! এতোটাই অসহায় হয়ে পড়েছি পৃথিবীতে? যেন আপনি আমাকে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে এনে আশ্রয় দিয়েছেন!
– কথা কোন দিক থেকে কোন দিকে নিয়ে যচ্ছো! আমি কি বলছি আর তুমি কি বলছো এসব!
– কোনো কিছু বলতে চাই না। হাত ছাড়ুন! আমার পথে কাটা হয়ে আসবেন না।
– আমি তোমার পথের কাটা?
নাফিসা কোনো জবাব দিলো না। চুপচাপ শুধু নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। নিশাত খেতে যাওয়ার জন্য বললে ইমরান বলে দিলো খাবে না। আর যেন না ডাকে কেউ। নিশাত চলে যেতেই ইমরান বললো,
– এতো জেদ করো কেন? আমি কি শুধু শুধু তোমাকে মেরেছি? হুম? সবসময় জেদ করলে চলে?
– আমার ইচ্ছে হয়েছে জেদ করেছি, তাতে আপনি বলার কে!
ইমরান নাফিসার এক গালে ঠোঁট ছুয়ে দিতেই নাফিসা খুব জোরে তাকে ধাক্কা দিয়ে বললো,
– খবরদার, আমাকে স্পর্শ করবি না তুই! সবকিছু জেনেশুনে ওই দুশ্চরিত্রা মেয়ের জন্য আমার গায়ে হাত তুলেছিস, আবার বলছিস শুধু শুধু মারিস নি? ওই মেয়ে আমাকে চোরের অপবাদ দিয়ে যাচ্ছিলো আর তুই তাকে কিছু না বলে আমাকে মেরেছিস! কেন? আমি সবটা জানাই নি তোকে? সব কিছু শেয়ার করিনি? তাহলে কেন আমাকে চোরের অপবাদ দিয়ে মারলি! আমি ফোন চুরি করেছিলাম!
ইমরান অবাক হয়ে আছে তার কথায়! সে বিস্ময়ের সাথে বললো,
– জেরিন তোমাকে চোরের অপবাদ দিয়েছে?
– আমাকে এতোক্ষণ মেরে সাধু সাজতে আসছিস এখন আমার কাছে!
– আমি তোমাকে জেরিনের জন্য মারিনি৷ মেরেছি মায়ের ব্যাপারে তুমি এভাবে কথা বলেছিলে কেন? কি করেছে আমার মা, বলো? কি করেছে, যার ফলে তুমি মাকে বকে এলে?
– উল্টাপাল্টা কথা আমি মোটেও সহ্য করতে পারি না। আপনার মাকে আমি কখন বকেছি?
– জেরিনের সাথে তুলনা করলে কেন? যেমন ফুপু তেমন ভাতিজি! বলোনি এটা? জেরিন ভালো না মানছি, মায়ের কি দোষ ছিলো?
– আমি আপনার মাকে বলেছি, নাকি আপনার ওই ডাইনী খালাকে বলেছি!
– মুখ সামলে কথা বলো। অন্যের কর্মের জন্য নিজের মুখ খারাপ করো না। মানুষ যেমনই হোক উনারা গুরুজন।
– কিসের গুরুজন হু? যে নিজের সম্মান ধরে রাখতে পারে না, অন্যের উপর দিনরাত নির্যাতন করে কিসের গুরুজন সে! সে যদি গুরুজন হয়ে থাকে তো ছোটদের সাথে এতো বাজে আচরণ কিভাবে করতে পারে! সে তো নিজেই জানে না কাকে সম্মান করতে হয় আর কাকে স্নেহ! তাহলে তাদের গুরুজন কিভাবে মানবো! নিজের সংসার তো জ্বালিয়ে দিচ্ছেই সাথে এখানেও আগুন ধরাচ্ছে। তার ডুবলিকেট হয়ে জন্মেছে আরে পিশাচী!
ইমরান তার খালার ব্যাপারে আর কিছু বললো না। কেননা সে জানে তার খালা একটু ভিন্ন স্বভাবের মহিলা। নাজিয়াকে মানসিকভাবে যখন নির্যাতন করতো আরাফ সব শেয়ার করতো ইমরানের কাছে! নিজের মা বলে আরাফই সেই সময় গুলোতে চুপ করে থাকতো! তাই ইমরান সেই প্রসঙ্গে কিছু না বলে অন্যকথায় বললো,
– মা ও তো জেরিনের ফুপু। তুমি যে এভাবে বলেছো, মা কি কষ্ট পায়নি!
– মা কষ্ট পেয়েছে সেটা দেখলেন, আর আমাকে যে এই মায়ের সামনেই যা তা বলে যাচ্ছিলো সেটা কারো নজরে পড়লো না!
– দোষ তো তোমারই! আমি যে সেখানে গিয়ে বললাম কি হয়েছে, তার জবাব কি আমাকে দিয়েছো? তখন যদি বলতে জেরিন তোমাকে চোরের অপবাদ দিয়েছে তা হলে তো আর এতো কিছু ঘটতো না! জেরিনের স্পর্ধা দেখে নিতাম!
– হু, এতোদিন দেখে দেখে উল্টাইছেন আর এখন পাল্টাইতেন! আড়ালেই শুধু ডবডব! আর প্রকাশ্যে বউ পিটিয়ে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া!
– আমি কিন্তু জানতাম না এসব কিছু! যদি জানতাম তো কখনোই হাত তুলতাম না তোমার উপর।
– তো না জেনে শুনে আমার উপর হাত তুললেন কি করে! লজ্জা করে না আবার এরকম কথা বলতে!
– তুমি বরাবর তোমার জেদের কারণে মাইর খাও! একটা কথাও শুনো না কেন? বারবার এভয়েড করলে কার রাগ না ওঠে! বলো?
– আমি বরাবর জেদ করি, তার জন্য আমার বাবা মা আমাকে এতোবছরেও এভাবে মারেনি আর দুদিনের সম্পর্কে আপনি যুগ যুগের অধিকার নিয়ে আসছেন শাসন করতে!
কথাটা ইমরানের বুকে বিধলো। তবুও এ নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া না করে সে বললো,
– তুমি বাবামায়ের সামনে হয়তো এমন কোনো আচরণ করোনি তাই এতোটা শাসন বাবা মা করেনি তোমাকে।
নাফিসা তার কথায় পাত্তা না দিয়ে আবার বেরিয়ে যেতে লাগলো। ইমরান তাকে নিজের কাছে আটকে রেখে অপর গালে ঠোঁট ছুয়ে দিতেই নাফিসা আবারও তেড়ে বললো,
– ছাড় আমাকে! তোর ভাবির কারণে মেরেছিস আমাকে, তোর ভাবির কাছেই যা। একদম টাচ করবি না!
– বউ থাকতে ভাবির কাছে যাবো কেন, হুম! সবকিছুর মূলে তো তুমি! আগেই জানতাম কোনো না কোনো একটা গন্ডগোল ঠিকই বাধবে! বলেছিলাম না ভাইয়াকে দেখাই, দিয়েছো দেখাতে?আর ফোন আটকিয়েছো যেহেতু রিটার্ন করলে কেন? সুযোগ দিবে তুমি, দাও আরও সুযোগ! সেও সুযোগে সৎ ব্যবহার করে যাক! তারউপর তখনও জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে, আমাকে ইগনোর করে জেরিনের সাথে তর্ক করেই যাচ্ছো! তখন বললে কি আমি জেরিনকে এমন সসম্মানে রেখে আসি! লোহা গরম থাকতে না পেটালে কি কাজ হয়? যথাসময়ে কাজ কেন করতে পারো না! উল্টাপাল্টা বললে থাপ্পড় দিবো না তো কি করবো!
– সবটা না জেনে তুই ওই ফাজিলের সামনে আমাকে মারলি কেন! এখন তার কাছেই যা। কোনো কথা বলবি না আমার সাথে! ছাড়তে বলেছি, ছাড়!
ইমরান তার সাথে জড়িয়ে নিয়ে বললো,
– উহুম। আর মারবো না, সরি।
– সরি মাই ফুট! ছাড়!
নাফিসা তার বুকের উপর একটা খামচি বসিয়ে দিতেই ইমরান তার হাত ধরে বললো,
– ওফ্ফ! কি করছো! ব্যাথা পাচ্ছি তো!
– ওহ্, আমি মারাতে ব্যাথা লাগে আর আমাকে থাপ্পড় মারলে বুঝি ব্যাথা লাগে না আমার?
– অনেক ব্যাথা পেয়েছো?
– ঢং দেখাতে আসছিস! এসব ঢং আমি দেখতে পারি না। দূর হো…
– সরি। তখন মেরেছি এবার একটু আদর করে দেই হার্টবিটকে? ব্যাথা চলে যাবে। হুম?
নাফিসা নিজেকে ছাড়াতে ইমরানের পায়ে পা দিয়ে মেরে বললো,
– আদর ইজ মাই ফুট! তোর আদর তুই খা বেশি করে! আমার কাছ ঘেষবি না একদম! তোর সাথে আর এক মুহূর্তও নেই আমি। মেরেছিস না আমাকে, এর একটা কঠিন বিহিত করে ছাড়বো। দেখে নিস!
ইমরান দরজার ছিটকিনি উপর থেকে লাগিয়ে দিয়ে বললো,
– এদিকে কোথায় যাচ্ছো! ঘর থেকে বের হলে আদরের পরিবর্তে এখন বাদড় ফেস করবে তুমি। একই কথা বারবার বলতে হচ্ছে! এক পা ও বাইরে রাখবে না!
নাফিসা কান্নার সাথে জেদ নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। অসহ্য লাগছে সব! ইমরান বললো,
– খাবার এখানে নিয়ে আসি?
– তোদের খাবার তুই খা বেশি বেশি, আর তোর ভাবিকে খাওয়া গিয়ে। যা।
তার পাগলীটা ক্ষেপেছে বেশ, আজ বুঝি সে শেষ! তবুও তার লক্ষ্য এখন একটা, তা হলো নাফিসাকে শান্ত করা। যদিও জানে তার না জেনে মারাটা ঠিক হয়নি, কিন্তু একটা কথাই তো তাকে রাগিয়ে দিয়েছিলো তখন! যার জন্য সাথে সাথে হাত তুলতে বাধ্য হয়েছে।
ইমরান ছিটকিনি খুলে অল্প সময়ের জন্য বড় ঘরে গেলো এবং খালি হাতেই চলে এলো। বারান্দার গেইটে তালা লাগিয়ে রুমে এসে দেখলো নাফিসা বালিশে মুখ চেপে কান্না করছে। এই কান্না যে আর সহ্য হচ্ছে না! এতোক্ষণ কান্না বন্ধ ছিলো সেটাই ভালো ছিলো! ইমরান মশারী টানিয়ে দিলে নাফিসা লাথি দিয়ে মশারী সরিয়ে সে মশারীর বাইরে শুয়ে রইলো। এতোটা কিনারায় শুয়েছে, একটু মোড় নিলেই সরাসরি মেঝেতে! ইমরান তাকে টেনে মশারীর ভেতর নিতে চাইলে ঠিক সেটাই ঘটলো! ইমরানের খুব রাগ হচ্ছে! এভাবে পড়েছে ব্যাথা তো নিশ্চয়ই পেয়েছে!অতপর জোর করেই বিছানার মাঝামাঝিতে আনতে বাধ্য করলো! আর যা-ই হোক, একজন পুরুষ মানুষের শক্তির কাছে মেয়েদের হার মানতেই হবে, তাছাড়া নাফিসা এখন হাতে ব্যথা পেয়েছে! কিন্তু ইমরানের কাছ থেকে মুক্তি পেতে তার প্রচেষ্টা চলছেই!
– হচ্ছে কি এসব! পড়ে ব্যাথা পেয়েছো না? জেদ করে এভাবে নিজের ক্ষতি কেন করছো! আমি মেরেছি বলেই এমনটা করছো? তো আমাকেও মারো। যোগ বিয়োগে সব সমান হয়ে যাবে।
– একটা কথাও বলবি না আমার সাথে। একটুও আসবি না আমার কাছে! সকাল হতে দে, তোর বাড়িতে আর এক মুহূর্তও কাটবে না আমার।
– তুই চলে গেলে আমি থাকবো কাকে নিয়ে! ভালোবাসি তো জানপাখিটাকে!
নাফিসা একের পর এক খামছি দিয়ে যাচ্ছে ইমরানের শরীরে। আর বিপরীতে ইমরান এবার রেগে নয়, বরং আদরে রাগ ভাঙাচ্ছে। একটুও “উফফ” শব্দ করছে না প্রথম বারের মতো! বাধাও দিচ্ছে না নাফিসার হাত ধরে! ইমরানের ধৈর্য শক্তি দেখে এক পর্যায়ে নিজেই হার মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে নাফিসা! নখ এবং দাতে এতোগুলো আঘাত করলো তবুও তার উপর একটু বিরক্ত হলো না! বরং বিপরীতে আদর করে গেছে! নাফিসা আর অভিমানে থাকতে না পেরে ইমরানকে জড়িয়ে ধরেই হাউমাউ করে কেদে উঠলো! এটা দুখের কান্না নাকি অভিমান ভাঙার কান্না বুঝা দায় হয়ে পড়েছে ইমরানের কাছে! আবারও বিরতিহীন বেশ কিছুক্ষণ কাদলো নাফিসা। যখন আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে নাফিসার ঠোঁটের ছোয়া পড়লো তখন ইমরান প্রশান্তির নিশ্বাস ফেললো! অনেক প্রচেষ্টার পর অবশেষে সে সফল হলো তাহলে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here