গজপ্রিয়া-5

0
543

গজপ্রিয়া-5
Chhamina Begam

– ” চাবি দে ..”
-“তুই চাবি দিয়ে কি করবি ? ” সম্রাট জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় রানির দিকে । পরক্ষনেই ফিচেল হেসে বলে, ” আমার ঘরের চাবি আমি নিয়ে আসছি না কি । ….তবে তুই চাইলে তোর জন্য একটা এক্সট্রা বানিয়ে দিতে পারি । লাগবে ? ”
-“ছাগল , তোর ঘরের চাবি দিয়ে আমি কি করব ? আর এসব চিফ ডায়ালোগ আর যার সাথেই মারিস না কেন আমার সাথে একদম মারবি না বলে দিচ্ছি । ”
-” আমি অন‍্য কাউকে আমার ঘরের চাবি দেব কেন ? জানিসই তো যার তার আমার রুমে ঢোকার পারমিশন নেই । …”
-“তবে আমাকে দিতে চাইছিস কেন ? তোর ঘরের চাবি দিয়ে আমি করবই বা কি । আশ্চর্য । আমি তো পারলে তোর ছায়াটাও মারাতে চাই না । তোর মতো আপদ আমার লাইফে দুটো নেই জানিস তো ! ….”
মুখের ওপর খটমট করে কথাটা বলে দিল রানি । ওর কথায় সম্রাট একটু মুসড়ে যায় । নিভে যাওয়া গলায় বলল,

-” রানি , তুই কি আমাকে এতটা খারাপ ভাবিস ..”
-“শুধু খারাপ না, চরম খারাপ ছেলে তুই একটা । এখন চাবি দে ….গাড়ির চাবি । আমি ড্রাইভ করব । ”

রানির প্রথমের কথাটায় সম্রাট হতভম্ব হলেও শেষের কথাটা শুরু বিস্মিত হয়ে গেল । বলল,
-“তুই ড্রাইভ করবি মানে ? তুই কবে ড্রাইভিং শিখলি …”
রানি জোর করে হাসার অভিনয় করে ।
-“তা শুনে তোর কাজ নেই । চাবি দে ….” রানি ডান হাতটা বাড়িয়ে দেয় । কিন্তু সম্রাটের কোন হেলদোল না দেখে সম্রাটের একদম সামনে চলে আসে । ডান হাতটা সম্রাটের জিন্সের পকেটে ডুকিয়ে চাবি বের করে নিয়ে চলে যায় পার্কিং এরিয়ায় ।

সম্রাট হতভম্ব হয়ে ঠায় দাড়িয়ে আছে । চোখের দৃষ্টি বিস্ফোরিত । শ্বাস প্রশ্বাসের গতি বেড়ে গেছে । বুকের ভিতরে দ্রীম দ্রীম শব্দ তুলে মাদল বাজছে । সম্রাট স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে সেই শব্দ । রানির নিশ্বাস যখন বুকের ওপর আছড়ে পড়ছিল সম্রাটের আজ দ্বিতীয় বারের মতো মনে হচ্ছিল এই বুঝি হৃদস্পন্দন থেমে গেল । অজান্তেই ডান হাতটা চলে যায় বুকের ওপরে হৃদয়ের কাছে । আলতো হাতে দুই-তিন বার চাপড় মারে । ঠোটের বাঁকা হাসিটা একটু প্রশস্ত হয় । বিরবির করে বলল , এই ভাবে কাছে আসিস না রানি । আমি কিছু করে বসব । তখন এই খারাপ ছেলেটা আরো খারাপ হবে তোর নজরে ”

-“ওই তুই কি যাবি নাকি এখানেই থেকে যাওয়ার ইচ্ছে আছে । ”
হর্ণের আওয়াজ শুনে সম্রাট সামনে তাকায় । রানি ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ির জানালা দিয়ে মাথা বের করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে । সম্রাট কিছু না বলে মুচকি হাসে । চুপচাপ হেটে গিয়ে রানির পাশের সিটে বসে ।

শহর থেকে রানিদের বাড়ি পয়তাল্লিশ মিনিটের পথ । বাসে গেলে অবশ্য গাড়ি পালটাতে হয় একবার । দশ মিনিট হয়ে গেল রানি ভালোভাবে ড্রাইভিং করছে । সম্রাট অবাক হয়ে দেখছে ওকে । প্রথম প্রথম একটু ভয় লাগলেও এখন আর লাগছে না । রানিকে দেখে মনে হচ্ছে সে যথেষ্ট প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ।
সম্রাট একটু আগেই নিজের মনেই প্রতিজ্ঞা করেছে আজ কোনো মতেই রানির সাথে ঝগড়া করা যাবে না । যে করেই হোক নিজের অনুভূতি গুলো রানিকে জানাতেই হবে । বলল,
-“তুই ড্রাইভিং কবে শিখেছিস ? ”
তিন সেকেন্ডের জন্য ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল রানি। বলল,
-“গতবার যখন এসেছি তখন তামিম ভাইয়া শিখিয়েছে । আপু আর আমাকে শেখাতে চেয়েছিল । কিন্তু আপু ভয় পাচ্ছিল । তাই শুধু আমাকেই শিখিয়েছে । আর লাবিব ভাইয়া আমার ড্রাইভিং লাইসেন্স ও বানিয়ে দিয়েছে । ”
-“ওয়াও । আমি সেবার ছিলাম না আর এত কাহিনী ঘটে গিয়েছিল !”
রানি বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকায় । বলে,
-“আমার সব কাজ কি তোকে বলে করতে হবে ? ”
-“আরে না না । আমি কি তাই বললাম নাকি । ….”

কিছুক্ষণ দুজনেই নিরব । রানি আপন মনে গাড়ি চালাচ্ছে । সম্রাট বারবার আড়চোখে দেখছে ওকে । রানির বোঝার আগেই আবার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিচ্ছে । পর্যায়ক্রমে চলছে এই কাজ । রানির ফোন বেজে ওঠায় রানি ইতস্তত করে । কারণ ফোনট পার্সে আছে আর পার্স পিছনের সিটে। সম্রাট বুঝতে পেরে বলল,
-“ওয়েট আমি দেখছি । ”
সম্রাট কল রিসিভ করে স্পিকারে দিয়ে দেয় । ফোনের ওপাশ থেকে বাণীর উৎকণ্ঠা মিশ্রিত স্বর ভেসে আসে ,
-“আপু কখন আসবি ? বিকেল হয়ে গেল যে !”
-“আসছি আমরা । তোরা তৈরি হয়ে থাকিস । ”
-“আচ্ছা । ..আপু কে কে আসছিস ?”
-” সম্রাট আছে সাথে ।”
-“কিইই…. সম্রাট ভাইয়াও আসছে ….” ফোনের ওপাশ থেকেই বিলকিসের উচ্ছ্বসিত স্বর ভেসে আসে । রানি একবার সম্রাটের দিকে তাকায় । হাসি হাসি মুখে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে । রানির কপালে বিরক্তির রেখা ফুটে ওঠে । ধমক দিয়ে বলে ,
-” সম্রাট আসছে জন্য কি নাচতে ইচ্ছে করছে বদ মেয়ে । ফোন রাখ এখন ।”
সাথে সাথে ওপাশ থেকে কলটা কেটে যায় । সম্রাট জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়ে মৃদু হাসে । বিকেলের হিমেল বাতাস এসে চোখে মুখে আছড়ে পড়ছে । সম্রাট আবার তাকায় রানির দিকে । ওর কপালের কয়েক গাছি চুল হাওয়ায় পাগলের মতো উড়ছে । সম্রাটের খুব ইচ্ছে করছে আলতো হাতে চুল গুলো কানের খাজে গুজে দিতে ।

-” জানিস রানি , আজ আমার মাথায় একটা ইচ্ছে খুব মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে ….”
-” আর কি সেটা ….. ” রাস্তার দিকে চোখ রেখেই বলল রানি । সম্রাট বলল,
-” আমার খুব ইচ্ছে আমার বৌ টাও যেন গাড়ি চালাতে পারে । আমরা যখন মাঝে মাঝে ঘুরতে যাব তখন সে গাড়ি চালাবে । আমি এই সিটে বসে থাকব । আমার ডান হাতটা ওর গলা জড়িয়ে থাকবে । হাওয়ায় যখন ওর কপালের চুল গুলো নাকের ওপর পরে ওকে ডিসটার্ব করবে তখন আমি যত্ন করে সেগুলো কানের কাছে গুজে দেব …… ”

এই পর্যন্ত শোনার পরেই রানি শব্দ করে হেসে ওঠে । সম্রাট ভ্রু কুচকে তাকায় । রানি বলে,
-” সম্রাট , তুই না , এমন দুঃস্বপ্ন ভুলেও দেখিস না । তোর কপালে বৌ আদেও জুটবে কিনা সে নিয়ে আমার হেব্বি ডাউট আছে বুঝলি । আর জুটলেও তোর যা স্বভাব দুই দিন ও টিকবে না । দেখে নিস ”
-“অত চিন্তা করিস না । আছে একজন ”
-“হুম সে তো দেখাই যাবে । তোকে তো চেনে না ভালো করে । যখন চিনতে পারবে তখন দেখবি জানালা দিয়ে প্রেম ভালোবাসা সব পালিয়ে যাবে । ”

রানির কথাটা না শোনার ভান করে আর একটু এগিয়ে গেল সম্রাট । ডান হাতে চুল গুলো সরিয়ে কানের কাছে গুজে দিল যত্ন করে । মুখে বলল,
-“এমন করে ভালোবাসলেও কি ছেড়ে চলে যাবে নাকি? ”
সম্রাটের কাজ আর কথায় মুহুর্তেই জন্য যেন একটু দূর্বল হয়ে গেল রানি । পরক্ষণেই নিজেকে সামলে কটমট করে তাকাল । চোয়াল শক্ত করে রাস্তায় দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেই বলল,
-” বদের হাড্ডি , হাত সরা বলছি । আমি কি তোর এক্সপেরিমেন্টের জিনিস নাকি যে তুই আমার ওপর ট্রাই করে দেখছিস । বেয়াদব কোথাকার ! ”
-“ধুর, তুই আমার এক্সপেরিমেন্টের জিনিস হতে যাবি কেন ? আর তোর এটা এক্সপেরিমেন্ট মনে হল কেন ?…….আর আমি যদি তোকে প্রপোজ করি তাহলে তুই কি ফিরিয়ে দিবি নাকি ?”

সরাসরি রানির দিকে তাকিয়ে বলল সম্রাট । ওর কথা টায় এত বেশি জোর ছিল রানির মনে হল যেন খুব কাছে কোথাও বজ্রপাত হয়েছে । অজান্তেই ব্রেক কষল গাড়ির । দুজনেই হুমড়ি খেয়ে এগিয়ে গেল সামনে । ভাগ‍্যিস এটা গ্ৰামের রাস্তা , আর সিট বেল্ট বাধা থাকায় কারো কোনো ক্ষতি হলো না । কিন্তু থম মেরে বসে রইল কতক্ষণ দুজনেই । কি ঘটেছে ভেবে সম্বিত ফিরতেই দুজনেই একে অপরের দিকে তাকাল । রানির বিস্মিত, বিস্ফোরিত চোখ দুটি জুহুরি চোখে পরখ করছে সম্রাটের চোখ দুটোকে । বোঝার চেষ্টা করছে ঠিক কি ধরনের ঠাট্টা এসব । সম্রাট নিজের হতভম্ব টা কাটিয়েই মৃদু হেসে বলল,
-“এটা কি হল । হ‍্যাঁ । তুই ভালো করে চালাতে পারিস কিনা বলতো । আর একটুর জন্য আমার হবু বাচ্চাগুলো অনাথ হয়ে যেত । আক্কেল জ্ঞান কবে হবে তোর । ..ইস, এভাবে কেউ ব্রেক কষে । ”

সম্রাটের কথায় আগুন ধরে যায় রানির মনে । প্রায় চেচিয়ে বলে,
,
-” এসব থার্ড ক্লাস মার্কা জোকস বন্ধ কর সম্রাট । তুই যদি আবার এমন ফাজলামি করিস তাহলে আই প্রমিজ আমি তোকে লাথি মেরে গাড়ি থেকে ফেলে দেব ।

To be continue..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here