“তৃ-তনয়া” পর্ব- ৮৮

0
2468

“তৃ-তনয়া”
পর্ব- ৮৮
(নূর নাফিসা)
.
.
তাদের ব্রেকফাস্টের একটু পরেই আবিদা বেগম এলেন এই ঘরে। দরজার সামনে থেকেই ইমরানের উদ্দেশ্যে বললো,
– খিচুড়ি রান্না করছি। সাথে মুরগির মাংস খাবি নাকি গরুর মাংস?
– একটা হলেই হলো।
– একটা হইলেই হয় ক্যামনে! দুইটার স্বাদ কি এক? দুই ভাইয়ের মুখে এক কথাই!
– আচ্ছা, গরুর মাংসই।
অত:পর তিনি নাফিসার উদ্দেশ্যে বললেন,
– আমরা তো খারাপ লোক। খারাপের হাতের রান্না কি আর খাইতে পারবা? যা আছে ঘরে নিজের ইচ্ছা মতো রান্না কইরা নেও।
নাফিসা আবিদার কথা শোনার পরপরই ইমরানের দিকে তাকালো। ইমরান মুখ ভঙ্গিতে ইশারা করলো কিছু না বলতে। আবিদা বেগম চলে গেলে ইমরান বললো,
– কোনো বিষয়ে মায়ের সাথে তর্কে জড়াবে না। কিছু কথা চুপচাপ শুনে যাওয়ার মতো ধৈর্য নিশ্চয়ই আমার বউয়ের আছে। আর কারো উপর জেদ করে নিজের ক্ষতিও করবে না। নিজের মতো করে চলবে, ফিরবে, খাবে। আমরা যে ব্রেকফাস্ট সেড়ে নিয়েছি এটাও জানতে দিও না মাকে। জানলে কষ্ট পাবেন। আজ খেয়েছি নেক্সট টাইম কিন্তু আর এমন কিছু হবে না। মা কিন্তু সকাল থেকেই একা একা রান্না করছে আমাদের জন্য। এখন যদি না খাই তো কষ্ট পাবে না?
নাফিসা কিছু বললো না। সে ঘর ঝাড়ু দিচ্ছিলো। চুপচাপ তা-ই শেষ করলো। ইমরান তার মুখটা মলিন দেখে বললো,
– মা কিন্তু তোমার গতকালের বিহেভিয়ারে কষ্ট পেয়ে এমন কথা বলে গেছে। তুমি কি সত্যি সত্যিই আলাদা রান্না করে খাবে?
নাফিসা তার দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকাতেই সে মৃদু হেসে বললো,
– মা একা রান্না করছে। হেল্প করো গিয়ে? যাবে না?
নাফিসা আবার স্বাভাবিক দৃষ্টিতে তাকাতেই ইমরান ফিসফিসিয়ে বললো,
– হার্টবিট, যাও।
নাফিসা বেরিয়ে গেলো বড়ঘরের উদ্দেশ্যে। গেইট দিয়ে প্রবেশ করার পরপরই দেখা পেল জেরিনের। মাত্রই ঘুম থেকে উঠে এসেছে মনে হচ্ছে! তবে তাকে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না! চোখ মুখ একটু বেশিই ফোলা ফোলা মনে হচ্ছিলো, তারউপর নাফিসাকে দেখে মুখটা হুতোম প্যাঁচার মতো হয়ে গেছে! যদিও চলার পথে সামনে পড়ায় নাফিসা এক পলক তাকিয়েছিলো তার দিকে, তবুও লক্ষ্য করেছে বিষয়টি। নাফিসা কিচেনে এসে দেখলো আবিদা বেগম গরুর মাংস রেখে মুরগির মাংস আবার প্যাকেট করে ফ্রিজে রেখে দিচ্ছে। দুইটাই নামিয়েছিলো, কোনটা রান্না করবে সেটা কনফিউশানে থাকলেও ছেলেদের পছন্দে এবার নিশ্চিত হয়ে নিলো। নাফিসা বললো,
– আম্মা, আলু দিয়ে রান্না করবেন? আলু কেটে দিবো?
– না, আমিই কাটতে পারি।
নাফিসা তার এমন ভঙ্গিতে বলা “না” আর শুনলো না। নিজেই বটি ,আলু নিয়ে কাটতে লাগলো। পরক্ষণে আবিদা বেগম তরকারি বসানোর কাজে হাত লাগালেন। জেরিন এসে মিনিট খানেক দাড়িয়ে থেকে পরে আবার চলে গেলো। আবিদা বেগম জিজ্ঞেস করেছিলো জিহান উঠেছে কি-না। উত্তরে সে বলে গেছে “না”। নাফিসা এবারও এক পলক তাকিয়েছিলো তার দিকে। আর স্পষ্টই দেখতে পেয়েছে তার ফর্সা গালে কিছুটা নীল বর্ণ ধারণ করেছে আঙুলের ছাপ!
নিশাত, জিহান উঠে পড়েছে ঘুম থেকে। আরমানও গোসল সেড়ে তৈরি অফিসের জন্য। জেরিন একদম চুপচাপ বসে আছে সোফায়। বাড়িতে আজ খুবই নীরবতা কাজ করছে! কাজকর্ম সেড়ে টেবিল গুছিয়ে নাফিসা বেরিয়ে এলো তাদের ঘরের দিকে। আসার সময়ও একবার তাকিয়েছে জেরিনের চেহারায়। এটা দেখার জন্য যে, ছাপ কি তার দুই গালেই আছে নাকি! কিন্তু না, একগালেই আছে তা-ও দুই বা তিন আঙুলের হবে। ভাবতে ভাবতে নাফিসা তাদের রুমে প্রবেশ করলো। ইমরান তাকে চিন্তিত দেখে বললো,
– আপনি কি আবিষ্কার করতে যাচ্ছেন, যার ফলে হাটতে হাটতেও ভাবছেন?
নাফিসা ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে বললো,
– তোর মাথা।
– ওহ্, আচ্ছা? তোর বরের মাথা?
– হ্যাঁ আমার বরের মাথাই।
নাফিসা হিহিহি করে হেসে উঠলো আর ইমরানের মুখেও লেগে আছে মুচকি হাসি। মাত্র গোসল করে এসেছে সে। মুখে ফেয়ার এন্ড লাভলী ক্রিম ইউজ করছে। নাফিসা দরজা চাপিয়ে এসে তার উন্মুক্ত পিঠে মাথা রেখে দাড়িয়ে বললো,
– এতো ঘষামাজার কি দরকার! এই বয়সে মেয়ে পটানোর ধান্ধায় আছিস?
– বুড়ো হয়ে গেছি নাকি!
– বিয়ে করলে তো বুড়োই হয়ে যায়।
– তাই নাকি! আচ্ছা, তাহলে তুই চাইলে নিয়ে আসবো দু একটা ধরে।
– ঠ্যাং ভেঙে ফেলবো একেবারে।
ইমরান শরীর কাপিয়ে হেসে উঠলো। নাফিসা এবার স্বাভাবিকভাবে জিজ্ঞেস করলো,
– তুমি কি জেরিনকে থাপ্পড় দিয়েছো?
ইমরানের রিয়েকশন দেখার জন্য সে আবার পেছন থেকে উঁকি দিয়ে আয়নায় তার চেহারার দিকে তাকালো। ইমরান নরমালই আছে কিন্তু কোনো জবাব দিলো না। নাফিসা আবার আগের ন্যায় পিঠের মাঝামাঝিতে মাথা রেখে বললো,
– কি জিজ্ঞেস করলাম!
– আমি কেন অন্যের বউ পেটাতে যাবো!
– তাহলে কে দিলো! তার গালে আঙুলের ছাপ নীল হয়ে আছে।
– ভালো।
– ভাইয়া কি মারে তাকে?
– জানিনা। মারতে দেখিনি এবং শুনিনি কখনো, তবে কাল দিয়েছে হয়তো দু একটা।
– কেন?
– নিশাত খাওয়ার জন্য ডেকে যাওয়ার পর ওই ঘরে গিয়েছিলাম। ভাইয়ার সামনেই তাকে জিজ্ঞেস করে এসেছি তোমাকে চোরের অপবাদ দিলো কেন? কারো উপকার করতে গেলে চোর হয়ে যায় কি-না সেটাই জানতে চেয়েছিলাম। সে তখন চুপ ছিলো। ভাইয়াকে এটাও জানিয়ে দিয়ে এসেছি সে বাথরুমে ফোন সেট করে এসেছিলো। বেরিয়ে আসার সময় ভাইয়ার গলা শুনেছিলাম। বকেছে হয়তো। সাথে জেরিনের চাপাও। এরপর কি হয়েছে জানি না। আর থাপ্পড় দিয়ে থাকলে উচিত করেছে। কিছুটা শাস্তি পাওয়া দরকার। অনেক বেড়ে গেছে।
ইমরান মাথা আঁচড়ে নিলো। নাফিসা চুপচাপ এভাবেই আছে। তাই সে জিজ্ঞেস করলো,
– ঘুমিয়ে পড়েছো নাকি!
– হুম, ঘুম ঘুম পাচ্ছে।
– আজ ভার্সিটি যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আবার খেয়ে তারপর ঘুম দাও। এলার্ম দিয়ে রাখবে। যোহরের আযান দিলে উঠে গোসল করবে।
– আহ! প্রতিদিন যদি এভাবে ভার্সিটি যেতে নিষেধ করতো আর ঘুমাতে বলতো, কতোই না ভালো লাগতো!
– প্রতিদিন এমন দিন না আসুক। যা বললাম, তা-ই করো। আবার আড্ডায় মেতে উঠো না।
– তুমিও তো ঘুমাও নি। আজ ছুটি নেওয়া যায় না?
– কেন গো, আমাকে ছাড়া প্রহর কাটে না বুঝি!
ইমরানের চোখে মুখে দুষ্টুমি ফুটে উঠেছে! নাফিসা পালাতে চাইলেও সম্ভব হলো না! ইমরানের হাতে ধরা পড়তেই হলো।
জেরিন জিহানকে সিদ্ধ ডিম খাওয়াচ্ছে। জিহান বাইরে চলে এসেছে জেরিন ডিম হাতে নিয়ে তার পিছু পিছু ঘুরছে। হঠাৎই নাফিসা এবং ইমরানের হাসির শব্দ পেল। রুমের দিকে তাকিয়ে দেখলো নাফিসা ইমরানকে ঠেলতে ঠেলতে রুম থেকে বের করছে। নাফিসাকে কিছুটা এলোমেলো অবস্থায় দেখে ভেতরটা কেমন যেনো চেপে গেছে তার! এতো সুখী কিভাবে হতে পারে তারা! কাল যা ঘটলো আজ কি এতোটা হাসিখুশি থাকার কথা ছিলো!
এদিকে নাফিসা ইমরানকে দরজার বাইরে ঠেলে দিয়ে দরজা বন্ধ করে ফেললো। ইমরান দরজায় নক করে বললো,
– দরজা খুলো।
নাফিসা ভেতর থেকে মোটামুটি উচ্চস্বরে জবাব দিলো,
– জীবনেও না, ইডিয়ট।
– অফিসের জন্য লেট হয়ে যাচ্ছে।
– হোক লেট, তবুও না।
– আর করবো না, প্রমিজ।
– তোমার গ্যারান্টি নেই।
– অফিস যাবো তো। আচ্ছা, শার্ট দাও।
নাফিসা দরজা একটু ফাঁক করে সেন্টু গেঞ্জি আর শার্ট দিয়ে হাসতে হাসতে সাথে সাথেই দরজা লাগিয়ে দিলো। যদিও ইমরান সামান্য চেষ্টা করেছিলো ঠেলে প্রবেশ করার, কিন্তু নাফিসা সেই প্রস্তুতি নিয়েই দরজা খুলেছে। ইমরান বাধ্য হয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়েই পোশাক পড়ে নিলো। এবং বললো,
– ফোন রয়ে গেছে।
– খাওয়ার পর নিবে।
– না, এখন লাগবে।
নাফিসা দরজার নিচ দিয়ে ফোন দিলো। আবার বললো ঘড়ি রয়ে গেছে। নাফিসা এবারও দরজার নিচের ফাঁকে দিলো। ইমরান নাফিসাকে বড় ঘরে আসতে বলে চলে গেলো। দু তিন মিনিট পর নাফিসা বড় ঘরে এলো। কিছুক্ষণ আগের খুনসুটি মনে করে একে অপরকে দেখে মিটিমিটি হাসছে যেটা জেরিনের চোখ এড়ায়নি।
পেট ভরা থাকলেও ইমরান অল্প খিচুড়ি নিলো। নাফিসাকে খাওয়ার জন্য বললে সে ইশারায় বললো এখন সম্ভব না। তবুও ইমরান বললো অল্প হলেও খেতে। নাফিসা জানিয়ে দিলো পরে খেয়ে নিবে। ইমরান খেয়ে চলে গেলো। বের হওয়ার সময় আবারও বলে গেলো খেয়ে তারপর ঘুমাতে। নাফিসা বাদে সবারই নাস্তা করা শেষ। নিশাতের সাথে যখন সে টিভি দেখছিলো এবং টুকটাক গল্প করছিলো ড্রয়িং রুমে তখন আবিদা বেগম এসে বললেন,
– না খাইয়া বইসা আছো কে? আমার রান্না খাইবা না যহন কই নাই নিজের যা ইচ্ছা রান্না কইরা খাও!
আবিদা বেগমের কথায় নাফিসা কোনো প্রত্যুত্তর করলো না। কি আর বলবে, সে যে পরটা ভাজি খেয়ে পেট পুড়ে নিয়েছে সেটা কি বলা যাবে! বাধ্য হয়ে চুপচাপ উঠে কিচেনে চলে এলো। নিশাতও পড়ার জন্য বেরিয়ে গেলো তার রুমের উদ্দেশ্যে। বেশি খেতে পারবে না তাই বাটিতে খাবার নিলো নাফিসা। ড্রয়িং রুমে এসে এক চামচ মুখে দিতেই নিশাতের ডাক পড়লো তার ফোন বাজছে। সে বাটি রেখে চলে গেলো ফোন আনতে। নাজিয়া নাহিদা কনফারেন্সে কল করেছে তাকে। রিসিভ করে সে বারান্দায় দাড়িয়ে কথা বলতে লাগলো আপুদের সাথে। খেয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করতেই নাফিসার খাবারের কথা মনে হলো। তাই সে কথা বলতে বলতে আবার বড় ঘরে এলো। এই কয়েক মিনিটে খিচুড়ি আগের চেয়ে কিছুটা পানসে হয়ে গেছে৷ নাফিসা কথা বলতে বলতেই খাচ্ছে। এমনিতেই খেতে ইচ্ছে করছিলো না এখন যা-ই এইটুকু নিলো তা-ও কেন জানি বিস্বাদ লাগছে কিছুটা। খাবার নষ্ট করা ঠিক হবে না ভেবে খেয়ে নিচ্ছে। এরই মাঝে জিহান এসে খেতে চাইলো কিন্তু ঝাল হওয়ায় নাফিসা তাকে আর দিলো না। খাওয়া শেষে বাটি টেবিলে রেখেই আপুদের সাথে কথা বলছে নাফিসা৷ আর এদিকে জিহান বাটি নিয়ে বেরিয়ে এসেছে ড্রয়িং রুম থেকে। সে চামচ দিয়ে বাটি বাজাতে বাজাতে জেরিনের কাছে এসে বললো,
– আম্মু, খিচুই খাবো।
জেরিন তার হাতে বাটি দেখে চমকে উঠে বললো,
– তুমি খিচুড়ি খেয়েছো?
– আমি খিচুই খাবো।
জেরিন একটু ভয়ার্ত হয়ে বললো,
– তুমি কি এই বাটি থেকে খিচুড়ি খেয়েছো?
– হু।
জেরিনের প্রায় কাদো কাদো অবস্থা! সে বাটি ফ্লোরে ফেলে হাটু ভেঙে জিহানের সামনে বসে বললো,
– খেয়েছো কেন খিচুড়ি!
বাটি ফেলে দেওয়ায় জিহান চিৎকার করে বললো,
– আমি আরও খিচুই খাবো! দাদু…
সাথে সাথেই ভেসে উঠেছে জেরিনের হাউমাউ কান্নার আওয়াজ! নাফিসা কল কেটে দ্রুত পায়ে বেরিয়ে এলো। এদিকে আবিদা বেগমও এক প্রকার দৌড়ে এসে জানতে চাইলো কি হয়েছে? কান্নার সাথে বলছে বিধায় তার কথা অস্পষ্ট! দুতিন বার বলার পর নাফিসা বুঝতে পারলো জিহান নয়টা ঘুমের টেবলেট মেশানো খিচুড়ি খেয়ে ফেলেছে! শুনতেই নাফিসার ভেতরটা ধুক করে উঠলো এবং সে স্তব্ধ হয়ে গেলো! বুঝতে বাকি নেই জেরিন তার সাথে শত্রুতা করে এমন কাজ করেছে! জেরিন কাদছে, আরমানকে কল করার জন্য দৌড়ে ফোন নিয়ে আসছে! আর আবিদা বেগম ভয়ার্ত হয়ে একের পর প্রশ্ন করে যাচ্ছে যার কোনো উত্তর পাচ্ছে না। জেরিন ফোন নিয়ে দৌড়ে আসতেই নাফিসা বললো,
– জিহান খিচুড়ি খায়নি ভাবি। খেতে চেয়েছিলো, ঝাল হওয়ায় দেইনি আমি। সবটা আমার পেটেই গেছে। আপনার উদ্দেশ্য পুরোপুরিভাবে সফল হবে এবার। কংগ্রেচ্যুলেশন। খুব মহৎ ব্যক্তিত্বের পরিচয় দিয়েছেন আপনি।
জেরিন কান্না থামিয়ে নাফিসার দিকে তাকিয়ে আছে। নাফিসা আবার বললো,
– আপনার খারাপের জন্য কি আমি আপনাকে সচেতন হতে বলেছিলাম? আমাকে যে এভাবে শত্রু বানিয়ে নিলেন একবার কি নিজের কর্মকাণ্ড গুলো ভেবে দেখলেন না, যা করছেন তা ঠিক না বেঠিক? এবার নিশ্চয়ই খুব আনন্দ হচ্ছে আপনার? মাত্র আড়াই বছর লালন পালন করে সন্তানের জন্য কি কান্নাটাই না জুড়ে দিলেন! যদি মস্তিষ্ক থেকে থাকে তাহলে একবার ভাবুন তো, আমার মা যদি আজ এখানে থাকতো তো তিনি কেমন করতেন? আড়াই বছরের মানিক হারাতে চান না অথচ বিশ বছর লালন পালন করে আমার মা কিভাবে আমাকে হারাতে চাইবেন! যা করলেন আপনি, হুহ্! আমি তো শেষই, আর কাউকে জানতে দিয়েন না এসব। তাহলে যেই সুখের জন্য করলেন সেই সুখ কাল হয়ে দাঁড়াবে। ক্ষমা নাকি মহৎ গুন, যেটা বরাবরই করার চেষ্টা করেছি। এবারও করে দিলাম। তবে একটা কথা জেনে রাখুন। ইমরানের জন্য আপনি এতোসব করলেন না? আমার সতেজ মস্তিষ্ক থেকে বলছি, জীবনেও ইমরানকে পাবেন না। আর যদি সে জানতে পারে, তো আপনার শেষ পরিনতি দেখে নিবে। ভালো থাকতে হলে চুপই থাকুন।
নাফিসা ফোন নিয়ে মুখ চেপে কান্না করতে করতে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। আবিদা বেগম জেরিনের দিকে প্রশ্ন ছুড়লো,
– কি করছস তুই?
জেরিন চাপা কান্নার সাথেই জবাব দিলো,
– বিয়ের পর থেকেই মেয়েটা আমাকে খুব জ্বালাতন করতো। কাল রাতে তার কারণে আরমান আমার উপর এই প্রথম হাত তুলেছে। তাই তাকে মেরে ফেলার জন্য খাবারের বাটিতে নয়টা ঘুমের টেবলেট মিশিয়ে দিয়েছি ফুপি!
কথাটা বলে আর এক মুহূর্তও সে এখানে দাড়িয়ে নেই। দৌড়ে বেরিয়ে গেলো নাফিসার উদ্দেশ্যে। এদিকে আবিদা বেগমও একপ্রকার বিলাপের সাথে ছুটে চললো পিছু পিছু!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here