জীবনসঙ্গী-৮
Chhamina_Begam
-“এভাবে লুকিয়ে দেখলে হবে ? হ্যাঁ বলে দাও । তখন একদম সামনে থেকে দেখতে পাবে ,,”
রাহাতের কন্ঠস্বরে ঘোর ভাঙে আদিলার । ঝটপট নিজেকে সামলে নিয়ে এমন ভান করে যেন খেয়ালই করেনি রাহাতকে । তা দেখে মুচকি হাসে রাহাত । ওকে হাসতে দেখে আদিলা লজ্জা পায় । মনে মনে গালি দেয় নিজেকে ।ছিঃ কেমন ক্যাবলাকান্ত মেয়ে তুই আদিলা!এমন হাঁ করে দেখছিলি যেন আগে কখনো দেখিস নি ওকে !এখন বোঝ মজা!এখন নিশ্চয়ই এই বিষয় নিয়ে মজা করবে ও ? ইস! কি বিশ্রী অবস্থাতেই না পড়া হল !
–“আমাকে কি আজকে একটু বেশিই হ্যান্ডসাম দেখাচ্ছে ? ” কপালের ওপর পড়া কয়েকটা চুলকে ঠেলে পিছনে দিতে দিতে বলল রাহাত ।
আদিলা চোখ সরু করে তাকাল । যা ভেবেছে তাই । এই লোক এখন পাক্কা ওকে নাজেহাল করবে । কিন্তু আদিলা ভাঙবে তবু মচকাবে না । খসখসে গলায় বলল,
-“আপনি কি আজ আয়না দেখেননি ?”
এই কথায় রাহাত রহস্যময় হাসি দিল । হাসতে গিয়ে ওর ঠোঁটের বাঁ দিকের কোণায় সুক্ষ্ম এক ভাঁজ পড়ল । আদিলার মনে হল বাচ্চারা ছাড়া এত সুন্দর হাসি শুধু এক রাহাতই হাসতে পারে । মুগ্ধ হল আদিলা । কিন্তু তা বেশিক্ষণ টিকল না । রাহাত আদিলার চোখে চোখ রেখে বলল,
-” দেখছি তো । পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর আয়নায় আমার জন্য মুগ্ধতা দেখতে পাচ্ছি। এর থেকে সুন্দর প্রতিচ্ছবি অন্য কোনো আয়না কি দেখাতে পারবে? ”
বিব্রত হল আদিলা । দু পা পিছিয়ে গেল সে । যার দরুন দরজাটা খুলে গেল হাট করে। মাথা নিচু করে ফেলল সে । হয়তো নিজেকে লুকোতে চায় । নিজের ওপর রাগ হচ্ছে ভীষণ । এমন হাবাগোবা কবে থেকে হয়ে গেল সে ? কেন নিজের অনুভূতিরা বাইরে এসেছে ওকে বিব্রত করছে ? বন্ধুমহলে সবাই আদিলাকে লৌহ মানবী বলে ডাকে ।শত আঘাতেও, শত চেষ্টাতেও লোকসম্মক্ষে যার অনুভূতির আলোড়ন বোঝা যায় না । অথচ আজ কি হচ্ছে এসব ? কেন হচ্ছে ? কেন রাহাত স্বচ্ছ কাচের ন্যায় ওর ভেতরটাও পড়ে ফেলছে ? এত তীক্ষ্ণ কেন সে চোখের দৃষ্টি ? এমনটা না হলেও তো পারতো ।
রাহাত আদিলাকে আর বিব্রত করতে চাইল না । হাতে ধরা একটা ভলিনীর স্প্রে এগিয়ে দিয়ে বলল,
-“এটা দিতে এসেছিলাম । বিকেলে তো তোমার পা ব্যাথা করছিল । এখন আবার প্রায় সারারাত জেগে কাটাতে হবে । পায়ের ব্যাথা বাড়তে পারে । লাগিয়ে নিও । ”
আদিলা অবাক হয়ে তাকাল । ওর যতদূর মনে আছে পায়ের ব্যাথার কথা কাউকেই বলেনি সে । তাহলে রাহাত জানল কি করে ? ওকে অবাক দৃষ্টিতে তাকাতে দেখে রাহাত আবার বলল,
-” কি হলো? ধরো ”
-“হুম ”
আদিলা স্প্রে টা হাতে নিয়ে দ্বিধান্বিত হয়ে দাড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ । অস্ফুটে বলল,
-“ধন্যবাদ ”
রাহাত মৃদু হাসল । চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালেও আবার ঘুরে দাড়াল । আপাতমস্তক আদিলাকে দেখে অগ্নিশর্মা হয়ে বলল ,
-“তুমি কি পাবলিক প্রপার্টি নাকি ? যে শোপিস এর মত সেজেগুজে সবাইকে নিজের বিউটি স্পট দেখিয়ে বেড়াচ্ছ ? ”
রাহাতের কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় । দ্বিধান্বিত স্বরে বলে,
-“বিউটি স্পট ? মানে ?”
– ” বুঝতে পারছ না তাই না ? ”
আদিলা মাথা নেড়ে না জানাল । রাহাত আঙ্গুল দিয়ে আদিলার কোমরের দিকে নির্দেশ করে । হাতের আঙ্গুল অনুসরণ করে আদিলা তাকিয়ে দেখে ওর কোমরের নাভিমূলের পাশের কালো তিলটা দেখা যাচ্ছে । প্রচণ্ড বিব্রত হয় আদিলা । যদিও বলার পরেই রাহাত অন্য দিকে চোখ ঘুরিয়েছে তবুও অস্বস্তির চরম সীমায় পৌঁছে যায় সে । ওড়নাটা যে নেটের এই কথাটা মনেই ছিল না ওর । আলগোছে শুধু গুজে দিয়েছিল কোমড়ে । আর কখন তা খুলে গেছে বুঝতেও পারেনি । আর সেখানেই চোখ পড়েছে রাহাতের । ইস! আল্লাহ ! মানুষের চোখ তো নয় যেন আস্ত একটা ঈগল !
– ” তাড়াতাড়ি সোয়েটার নিয়ে নিচে নেমে আসো। সবাই অলরেডি তৈরি হয়ে গেছে ”
– ” সোয়েটার নেব কেন ?”
– ” কেন আবার? ঠান্ডা পড়ছে তো বাইরে আর তাছাড়াও গাড়িতে এতটা রাস্তা যাবে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে ”
– ” কিন্তু এতটাও ঠান্ডা লাগছে না তো আমার “আদিলা মুখ ভার করে উত্তর দেয় ।
-” যা বলছি তাই করো …”বলেই রাহাত রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
– ” ধুর ভালো লাগে না । এত জোর খাটাচ্ছে কেন আমার উপর? কিসের এত অধিকারবোধ ওর আমার প্রতি । ”
মুখ গোমরা করে ঘরে প্রবেশ করে আদিলা । লাগেজ থেকে সোয়েটারটা বের করে হাতে নেয় । বেরিয়ে আসতে পা বাড়াতেই থমকে দাড়িয়ে পড়ে। একমিনিট । এত কথা বলার তো কোনো প্রয়োজন ছিল না ! আর বাধ্য ছাত্রীর মতো প্রতিটা কথা কেন মানতে হবে ? সে তো আমার অভিভাবক নয় । সোয়েটার টা ছুড়ে মারে বিছানায় । নিজের ওপর প্রচণ্ড বিরক্ত সে । নিজের পরিধানরত পোশাকের দিকে তাকিয়ে রাগ চড়ে যায় আদিলার । সব কিছু হয়েছে এই পোশাকের জন্য । দরজা চাপিয়ে এসে লাগেজ থেকে একটা চুরিদার বের করে পাল্টে ফেলে । ছুড়ে ফেলে বিছানার ওপর । জীবনেও আর এই পোশাক পরবে না সে । আয়নার সামনে দাড়িয়ে ঝটপট চুল টা ঠিক করে নেয় । বেরিয়ে আসার আগে সোয়েটারটার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে ।
বাইরে এসে রাহাত আদিলার গোমরা মুখটা মনে করে হেসে ওঠে ।ফাহিম সব কাজিনদের জন্য একটা লাক্সারি বাস ভাড়া করেছে আর বাকি সবার জন্য তিনটা বোলেরো নিয়েছে। ফাহিম আর রাহাত একসাথে বসে আছে বাসের সামনের দিকে । মাঝে মিতু আর পাশেই আদিলা বসেছে ।মোটামুটি এগারোটা নাগাদ ওরা শিলিগুড়ি পৌঁছে যাবে ।
গাড়ি চলতে শুরু করেছে । সবাই খুব হৈ হুল্লোড় করছে । একসময় জিসান রাহাতকে বলে ,
– ” রাহাত ভাইয়া, এই জার্ণিকে আরো ইন্টারেস্টিং করতে তুমি একটা গান করো না । প্লিজ
কিছু একটা ভাবে রাহাত । মাথা ঘুরিয়ে একবার আদিলার দিকে তাকায় । মিতুর সাথে হেসে হেসে কথা বলছে সে । আদিলা আড়চোখে তাকাতে গিয়েই দুজনেই দৃষ্টি এক হয়ে যায় । রাহাত মৃদু হাসে । আদিলা মুখ ফিরিয়ে নেয় । এক সিট পেছনে বসে মেঘনা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে । প্রচণ্ড কান্না পাচ্ছে ওর । নিজের পছন্দের মানুষটাকে এভাবে অন্যের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকাতে দেখে গলা ফাটিয়ে কান্না করতে ইচ্ছে করছে । কিন্তু রাহাতের গান শুনে আর নিজেকে আটকাতে পারে না । সবাই তখনও রাহাতের সুরেলা কন্ঠে মুগ্ধ হয়ে আছে । মেঘনা মুখে রুমাল চাপা দিয়ে ফুপিয়ে ওঠে । রাহাত গেয়ে চলেছে নচিকেতা একটি বিখ্যাত গান ……..
” তুমি আসবে বলেই…
তুমি আসবে বলেই আকাশ মেঘলা বৃষ্টি এখনো হয়নি,
তুমি আসবে বলেই কৃষ্ণচূড়ার ফুলগুলো ঝরে যায়নি ,
তুমি আসবে বলেই….”
রাহাতের গান শুনে সবাই খুশিতে হাত তালি দিয়ে ওঠে । মিতু আদিলাকে বলে ,
-“রাহাত ভাইয়া, খুব সুন্দর গান গায়, তাই না?”
আদিলা বিব্রত হাসে । মাথা উপর নিচ করে সম্মতি জানায় ।
এমন সময় জিসান টেলিভিশনের উপস্থাপকদের মতো করে বলে ওঠে ,
– “এবার আমাদের সামনে সংগীত পরিবেশন করছেন আমাদের ওয়ান অ্যান্ড অনলি আদিলা আপুউউ। ”
নিজের নাম শুনে চমকে ওঠে আদিলা ।হতভম্ব হয়ে তাকায় বাসের সবার দিকে ।
– ” না না ।আমি পারবো না ”
– “প্লিজ আপু, একটা গান ।দেখ , কত দূর যাব আমরা ! তিন ঘন্টার রাস্তা, সময় কাটছেই না । তাই প্লিজ । একটা গান , জাস্ট একটা ,,, ”
– “হ্যাঁ, আদিলা একটা গান করো ” মিতুর কথায় জিসান বলে ওঠে ,
-“ইয়েস , দ্যাটস্ লাইক মাই ভাবি ”
আদিলা বেজায় মুখে বলে ,
– “আচ্ছা, ঠিক আছে ”
“মুঝে ইসক শিখা কার কে
রুখ মোর তো না লো গে
রাখো হাত মেরে দিল পে
কাহো কাভি ছোর তো না দোগে ”
গানের প্রতিটা লাইন শুনে রাহাতের মনে হল ওকে উদ্দেশ্য করেই বলছে আদিলা ।রাহাত মনে মনে আদিলাকে কথা দেয় তুমি যদি আমাকে তোমার হাত ধরার সুযোগ দাও, ইন শা আল্লাহ ,আমি কোনদিন ছেড়ে দেবো না ।সব সময় আগলে রাখব তোমাকে। আই প্রমিস ইউ দ্যাট ।
ফাহিম সামনে বসেই চিৎকার করে বলে ,
-“আদি ,তোর গলা শুকিয়ে গেছে নাকি ? জল খাবি ? ”
-“না, লাগবে না ”
মুখে বললেও আদিলার মনে হল হাসছে ফাহিম ভাইয়া । রাহাত ও হাসছে কি ? সম্প্রতি এই গানটাই ও খুব শোনে । তাই এটাই মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেছে । আর এখন বুঝতে পারছে কি ভুলটাই না করল সে । রাহাত এটাকে সবুজ সংকেত বলে ধরে নিয়েছে কি? যদি হ্যা হয়, তাহলে খুব ভালো ভাবেই ফেসে গেছে আদিলা । নিজের কৃতকর্মের জন্য নিজের কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে করছে এখন।
জিসান যেন সদ্য ঘুম থেকে উঠল এমন ভান করে হাই তুলল ।মুখে বলল,
-“ইস আপু, তুই যে কি না ! এমন গান লোকে গায় নাকি ? আমার তো ঘুম ঘুম পাচ্ছে ।হাউউউউ,,, দর্শক মন্ডলী, চলুন এভাবে কিছু মন চাঙা করা গান শুনিয়ে দিই । তো , এবার আপনাদের সামনে গান পরিবেশন করতে চলেছে সুপারস্টার জিসান শেইইইখ ”
জিসানের কথা শুনে সবাই হাততালি দিয়ে ওকে চিয়ার আপ করে । জিসান গেয়ে ওঠে ……
..
” ওওওওওওওও
আরে টিকাটুলির মোড়ে একটা অভিসার সিনেমা হল রয়েছে ,
হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে(2)
ওওওওওওরে ভাই ….
একদিন গেলাম সিনেমা দেখতে,
রিকশা থেকে নেমে দেখি হলে একটি সুন্দরী মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ব্ল্যাক এ 10 টাকার টিকিট 20 টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে কোনরকমে ভিতরে গিয়ে বসলাম..
হঠাৎ দেখি পাশের চেয়ারে সেই মেয়েটি আমার পাশে বসেছে ..
আরে হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে..
আরে টিকাটুলির মোড়ে একটা নাকি হল রয়েছে ,
আর হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে
ওওওওওওরে ভাই ….
সিনেমা আরম্ভ হয়ে গেল রাজ্জাক-শাবানা যখন প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিল…
তখন আমার বুকের ভেতর ধুপ ধাপ শুরু হয়ে গেল..
হায় আমি যদি প্রেম করতে পারতাম ..
তখন দেখি পাশের সিটে বসা মেয়েটি আমায় চিমটি মেরেছে
আরে হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে …
আরে টিকাটুলির মোড়ে একটা নাকি হল রয়েছে ,
হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে
ওওওওওরে ভাই…
সিনেমায় একশন তখন চরম ,
রাজ্জাক ভিলেন যখন ধুপধাপ মারপিট..
আবার শাবানা এসে রাজ্জাক কে বলল ” আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না ..তুমি আমার জান ”
তখন পাশের সিটে বসা সেই মেয়েটির আমার ধাক্কা মেরেছে ,
আরে হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে,
আরে টিকাটুলির মোড়ে একটা নাকি হল রয়েছে ,
হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে ,
ওওওওওরে ভাই ……
সিনেমা শেষ হয়ে গেল….. মেয়েটি আমার রিকশায় চেপে বললো “ডার্লিং খুব ক্ষুধা পেয়েছে “,
গেলাম মোস্তফা হোটেলে.. খুব বরাকনা খাইলাম ,
হঠাৎ দেখি বয় একটা হাজার টাকার বিল এনেছে ,
বিলটা দেখে তখন আমার মাথা ঘুরেছে ,
আরে হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে …
আরে টিকাটুলির মোড়ে একটা নাকি হল রয়েছে ..
হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে ,
ওওওওওওরে ভাই ….
খাওয়া-দাওয়া শেষ মেয়েটি মিষ্টি হেসে বললো “ডার্লিং আজকের মত চলে যাই” বলে চলে গেল ,
আমি বাড়ি এসে রিকশা থেকে নেমে রিকশা ভাড়া দিতে গিয়ে দেখি মেয়েটি আমার পকেট মেরে চলে গিয়েছে ,
আরে হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে,
আরে টিকাটুলির মোড়ে একটা নাকি হল রয়েছে ,
হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে….,
(গান টা পুরো টাই দিয়ে দিলাম )
জিসানের গান শুনে সবার হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যাবার যোগাড় । তবে ওর গান শুনে সবার মন খুব চাঙ্গা হয়ে গেল । এভাবেই হইহট্টগোল করে প্রায় এগারোটার দিকে ওরা শিলিগুড়িতে পৌঁছে যায় ।
আরমানদের বাড়িতে পৌঁছে খাওয়া-দাওয়া, সবার সঙ্গে কথা বলা এসব করতে করতেই সাড়ে বারোটা বেজে যায়। সবার সঙ্গে কথা বলে একটার দিকে ওরা রায়গঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ।
মাহি আর আরমানের জন্য আলাদা একটা বোলেরো নেওয়া হয়েছিল । আসার পথে ফাহিম আর মিতু একই সিটে বসে। রাহাতকে বলে ,
-” তুই পিছনের সিটে গিয়ে বস কোথাও আমি একটু ওর সঙ্গে বসি ”
– ” ঠিক আছে ”
রাহাত পিছনে গিয়ে দেখে একটিও সিট খালি নেই শুধু আদিলার পাশের সিট বাদে ,যেখানে মিতু বসেছিল সেটাই খালি আছে। আদিলা জানালার পাশে বসে আছে । রাহাত গিয়ে ওর পাশে বসে পড়ে । আদিলা চোখ বড় বড় করে তাকায় ।
-” আপনি এখানে? মিতু আপু কোথায়? আপু এখানে বসবে তো ”
-” চিন্তা করো না ।তোমার মিতু আপু সামনে বসে আছে ”
-“সামনে ? ”
-“হ্যাঁ । ফাহিমের সাথে ,”
-“ওহ ”
আদিলা জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকে । নিজেকে যথা সম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করে । তবুও বুকের ভেতরে হৃৎস্পন্দনের গতি এত তীব্র ভাবে ছুটছে যেন আদিলার মনে হচ্ছে সে তা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে । লোকে বলে চোখ মনের আয়না হয় । তাই ধরা পড়ার ভয়ে দ্বিতীয় বার তাকাল না রাহাতের দিকে ।
গাড়ি চলতে শুরু করেছে । জানালা খোলা থাকায় শিরশির করে বাতাস ঢুকছে আর আদিলার খোলা চুলগুলো উড়ে এসে রাহাতের চোখে মুখে পড়ছে ।আদিলা সেটা বুঝতে পারছে না । সে এক দৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে আছে। ঠান্ডায় জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে সে ।
গাড়ির লাইট অফ করে দেওয়া হয়েছে ।জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আদিলা ঘুমিয়ে পড়ে । গাড়ির ঝাকুনিতে জানালার রডে আদিলার মাথা লাগতে পারে ভেবে রাহাত ওর মাথাটা নিজের কাঁধের ওপর রেখে দেয় । তারপর হালকা খোলা রেখে জানালাটা লাগিয়ে দেয় । আদিলা বুঝতে পারে না কি হচ্ছে ।সে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে রাহাতের কাঁধে মাথা রেখে ।রাহাত একদৃষ্টিতে আদিলার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে । হাওয়াতে এলোমেলো হয়ে যাওয়া চুলগুলো আদিলার মুখ থেকে সরিয়ে দেয় ও । জানালা দিয়ে চাদেঁর আলো আদিলার মুখের ওপর পড়ছে , এতো ওকে খুব মায়াবী লাগছে । রাহাত মুগ্ধ হয়ে দেখছে আদিলাকে । ও ভাবছে সময় এখানে থেমে গেলে খুব ভালো হত । ও মন ভরে দেখতে পেত আদিলাকে । কিন্তু সমর বড়ো হিসেবি কারো অনুভূতির ধার ধারে না । সে তার আপন খেয়ালে চলতে থাকে ।
ভোর সাড়ে তিন টায় ওরা রায়গঞ্জে পৌঁছে যায় । রাহাত আদিলাকে ডেকে দেয় । আদিলা ঘুম ভেঙ্গে দেখে ও রাহাতের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে ছিল । ও লজ্জা পেয়ে যায় ।
To be continue…….