রাকা (৭)

0
864

রাকা (৭)
ফারজানা রহমান তৃনা

বিশেষ কোনো অতিথী আসবে আজ।
তানিশা আপু আর আমি মিলে সব কাজ শেষ করে, বসে বসে কিছুক্ষন গল্পগুজব করছিলাম। গোসল করে এমনি সাধারণ, বাসার জামা-কাপড় পড়ে পিঠা-পায়েস খেলাম দুজন। দারুন হয়েছে!
অতিথী তখনও আসেনি।
আম্মুর ও সাজগোজ এখনো শেষ হয়নি।
মিনিটখানেকের মাথায় আম্মু আমাকে ডাকলো। আমি দরজা অবধি যেতেই তার সাথে আমার ধাক্কা লেগে যায়।
সেও এই ঘরের দিকেই আসছিলো।

ধাক্কা লেগে আম্মু শাড়ির আঁচল একটু খুলে নিচে পড়ে যায়, চুল ও খানিক এলোমেলো হয়ে গেছিলো সামনে চলে এসে।
ফলপ্রসূ কটমট করতে লাগলো আমার দিকে তাকিয়ে। ডাকার সাথে সাথে না গেলে আবার রেগে যায় সে। তাই শোনামাত্রই ভোঁ দৌঁড় দিয়েছিলাম। সেও যে এদিক পানেই আসছে, তা তো আর আমি জানতাম না। নাক ছিটকে বললো,
– দিলি তো সব নষ্ট করে!
গলা কর্কশ করে আবার বললো,
– এত খুশি কিসের তোর? বেয়াদব,আমার সব নষ্ট করে দিছে।

আমি বিমূঢ় হয়ে বললাম,
– আমি তো বুঝিনাই তুমিও যে এদিকে আসছো!
– থাপ্পড় খাবি, আবার মুখে মুখে কথা বলিস!
আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে ফেললাম।

সে কিছুক্ষন স্থির হয়ে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে। তারপর শান্ত গলায় বললো,
– কী পরে আছিস এটা? তোকে তোর বাপ জামা-কাপড় কিনে দেয়না নাকি? যা আলমারি থেকে ভালো দেখে একটা জামা পরে আয়।

আমি মাথা নাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
– আচ্ছা। আম্মু, আমরা কি আজকে কোথাও ঘুরতে যাবো উনি আসলে?

– না। সে এত জার্নি করে আসবে, আবার ঘুরতে যাবে কিভাবে। নাহ্।

আমি কিছু না বলে দাঁড়িয়ে ছিলাম।

আম্মু তখন আমার মাথার চুল ধরে নাক কুঁচকে বললো,
– কয়দিন চুল আঁচড়াস না তুই? চুলে তেল দিয়ে আবার গোসল করগে,যা। আর আমার থেকে একটা শ্যাম্পু নিয়ে যাস। ছি:! কি অবস্থা! এত বড় মেয়ে এখনো নিজেকে ঠিক রাখতে শিখেনাই! যখন আমি থাকবো না তখন কী করবি?
বাসায় একটা মানুষ আসবে… এরপরেও এইভাবে আছোস! দেখলে তো কাজের মেয়ে ভাববো তোরে।

তানিশা আপুর দিকে ইঙ্গিত দিয়ে বললো,
– ঐ দেখ, ঐটা আমার যোগ্য মেয়ে,বুঝলি? একদম আমার মত হইছে। দেখ দেখ, কি সুন্দর করে থ্রি-পিস পরে,ঠিকঠাক হয়ে বইস্যা আছে!

আমাকে আবার গোসল করতে হলো।
সুন্দর জামা পরে চুল ও আঁচড়াতে হলো।
অনেক দিন পর এরকমভাবে একটু ঠিকঠাক করলাম নিজেকে। তাই আম্মুকে দেখানোর জন্য গেলাম। আম্মু সেদিন মুখে হাসি রেখে একজন মমতাময়ী মায়ের মতই বলেছিলো,
– বাহ্! এইতো সুন্দর লাগছে রাকা। এদিকে আয় দেখি। চোখে কাজল দিবি?

আমি না করতাম। যদি অন্য সময় হতো।
সেদিন আর করতে পারিনি।
আম্মু খুব খুশি ছিলো সেদিন।
আমি দেখতে অত সুন্দর না।
একটু বেশিই মোটা। গায়ের রঙ শ্যামলা।
চুলগুলো বেশি বড় না। কাঁধে পড়ে।

কিন্তু আমার তানিশা আপু একদম আমার বিপরীত। দেখতে একদম আমার আম্মুর মত হয়েছে। ফর্সা, চিকন, লম্বা-ঘন চুল। সব ঠিকঠাক। আর আমি হয়েছি আমার আব্বুর মত দেখতে। আব্বু দেখতে কালো। আমি শ্যামবর্ণ। এইটুকুই কেবল তফাৎ। এজন্যই সবসময় আম্মু আমাকে বাপকা বেটি বলে খোঁটা দেয়।
ছোটবেলায় আব্বু আমাকে আপুর চেয়েও বেশি আদর করতো।

আম্মু বা অন্য কেউ যখন জিজ্ঞেস করতো,
– এই মেয়ের প্রতি আপনার আদর একটু বেশিই, তাইনা? কেন?
আব্বু তখন এক কথায় উত্তর দিতো,
– আমার বড় মেয়ে দেখতে ফর্সা-সুন্দর,তাই ও সবার নয়নের মণি। কিন্তু আমার ছোট মেয়ে দেখতে একটু কালো হয়েছে। তাই সে অন্য কারো নয়নের মণি না। সবাই ওকে আদর ও করেনা। এজন্য সবার আদর আমি ওকে একাই দিবো। আমার আদরে আদরেই বড় হবে আমার ছোট মেয়ে। কাউকে আর ওকে ভালোবাসতে হবেনা। আমিই আছি,আমার মেয়ের জন্য। আমার জন্য আমার দুই মেয়েই সমান।

এই কথাগুলো আমি বড় হয়েও অনেকবার শুনেছি। সবার সামনেই সবসময় এগুলো বলে আব্বু।

হয়তো আমার আম্মু আমাকে এজন্যই খুব বেশি একটা আদর করতো না। কারণ আমি তানিশা আপুর বা তার মত দেখতে হইনি। কিন্তু সেদিন আম্মুর এই সামান্য খেয়ালে,আদরে আমার বুক ধড়ফড়িয়ে উঠেছিলো। খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছিলো।
আম্মুর কাছে গিয়ে বললাম,
– দাও আম্মু। কাজল লাগিয়ে দাও।
সে লাগিয়ে দিলো।
প্রথমবার চোখে কাজল দিয়েছি। সে কি কান্না!
টপ টপ করে চোখের পানি পড়ছিলো।

তাই দেখে আম্মু বেদম হাসতেছিলো তখন।
আর বলতেছিলো, – হায়রে রাকা… কি হবে তোর..
তারপর আমাকে তার কিছু সাজগোজের জিনিসপত্র হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেছিলো,
– নে এগুলো এখন থেকে তোর। মাঝেমধ্যে একটু সাজবি। চোখে কাজল লাগাবি। ঠোঁটে রঙ ছোঁয়াবি। এই বয়সে এত নীরস হয়ে গেছিস কেন মা?

আমি কিছু বললাম না। আম্মুর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম। চোখ ছল ছল করছিলো। এই তো আমার মা। এটাই তো আমার সেই মমতাময়ী, স্বপ্নের মা।
কতদিন পর এভাবে আদরমাখা স্বরে কথা বলছে।
ইচ্ছা করছিলো জড়িয়ে ধরে চুমো দেই।
আহা আমার আম্মু!
আমি আমতা আমতা করে অনেক ভয় নিয়ে বললাম,
– আম্মু, আমি তোমাকে একটু জড়ায়ে ধরি? প্লিজ?
আম্মু ঠোঁট উল্টে বললো,
– ওমা ক্যান? এগুলা দিছি তাই? একটু হেসে বললো, লাগবেনা। তুই যা, শরবত নামা ফ্রিজ থেকে। নাস্তা রেডি কর যা। ও কাছাকাছি চলে আসছে।

আমি আবার বললাম,
– একটু দিবা না? প্লিজ?
আম্মু তখন বাধ্য হয়ে বিরক্ত নিয়ে অসূয়াপরবশ হয়ে বললো,
– আচ্ছা আয়। কিন্তু সাবধানে। আমার কিছু যেন নষ্ট না হয়। আর এইসব ঢং,আদিখ্যেতা আমার ভালো লাগেনা। মনে রাখবি।
– কিচ্ছু নষ্ট হবেনা আম্মু। আচ্ছা,মনে রাখবো।
বলেই আলতো করে জড়িয়ে ধরলাম তাকে।

কিন্তু মিনিটের মধ্যেই ছেড়ে দিতে হলো।
দরজার কলিংবেল বাজছে। মামা এসেছে হয়তো।
কলিংবেল বাজতেই আম্মুর মুখ চকচক করে উঠলো। খুশিতে যেন তার আটখানা হয়ে যাবার জোগাড়। সে খুব ব্যস্ত হয়ে গেলো আবার।
দাঁড়িয়ে আছি দেখে আমাকে ধমক দিয়ে বললো,
– দাঁড়িয়ে আছিস কেন? যা! দরজা খোল গিয়ে। নাস্তা, শরবত যা যা বানিয়েছিস তানিশাসহ সবকিছু আমার রুমে দিয়ে যাবি। হুঁ? আর টি টেবিলটা এখানে আন। আর শুন, সে এখানে আমার ঘরে আসবে। আমি ডাকা না পর্যন্ত এদিকে আর ভুলেও আসবি না তোরা। কেউ আসলে দরজা ও খুলতে হবে না। ঠিক আছে?

আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম,
– ঠিক আছে।

আপু দরজা খুলেছে। আমাকে আর খুলতে হয়নি। আপুর লজ্জ্বা একটু কম আমার থেকে।
তাই দরজায় দাঁড়িয়েই তাদের এক দফা কথা হয়ে গেলো।
আম্মুর জেঠাতো ভাই, আমার সম্পর্কে হয় মামা, উনি ভেতরে ঢুকতেই আমি পর্দার আড়াল থেকে আপুকে ডেকে বললাম, টি টেবিল যেন আম্মুর রুমে দিয়ে আসে। ওখানেই সব নাস্তা দিতে হবে। ভাত দেওয়ার কথা বলেনাই। নাস্তা আমি রেডি করছি। তুমি টি টেবিল ওখানে দিয়ে এসে, তাড়াতাড়ি রান্নাঘরে আইস্যো।

আপু তাই করলো।
দুজন মিলে সব ঠিক করলাম।
পিঠা-পায়েস, ফল,শরবত ইত্যাদি নিয়ে এখন যেতে হবে।
আপু নিলো কিছু। আমিও নিলাম কিছু।
আপু প্রথমে ঢুকলো।
ঢুকেই সালাম দিলো।
আম্মু পরিচয় করাচ্ছে, এই হলো আমার বড় মেয়ে, তানিশা। ক্লাস সেভেনে পড়ে।
আপুকে মামা এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে শুনলাম।

তারপর আমি ঢুকলাম। লজ্জ্বায় মাথা হেট হয়ে যাচ্ছে তবুও ঢুকলাম কারণ আমার হাতে গরম গরম পিঠার থালা। দেরীতে গেলে ঠান্ডা হয়ে যাবে। খেতে ভালো লাগবে না।
আমি ঢুকেই সালাম দিলাম।
তার দিকে এক পলক তাকালাম।
কিন্তু বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকতে পারলাম না।
বুকটা ধক করে উঠলো।
এটা কাকে দেখলাম আমি?

লোকটাকে তো আমি চিনি। ইনিই তো সেই আংকেল, সেই অভদ্রোচিত লোক, যার জন্য আমাদের পরিবারে এত এত অশান্তি, এত এত সমস্যা।
আমি চোখ বড় বড় করে আবার তাকালাম।
লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে বললো,
– হ্যাঁ অনু, এবার তোমার ছোট মেয়েটাকে ও পরিচিত করাও। হাহ্ হা হা। এদিকে আসো রাকা।
আম্মু ও সেই হাসিতে যোগ দিয়ে বললো,
– ধুর আজমল,কি যে বলো.. তুমি তো ওকে চেনোই।

আমি একবার আম্মুর দিকে তাকাই,
একবার তাকাই আজমল উদ্দীনের দিকে।
লোকটা আজকে বাড়ি বয়েও চলে এলো?
এত বড় সাহস!
কিন্তু আম্মু তো বলছিলো, আম্মুর জেঠাতো ভাই আসবে। তাহলে ইনি কেন আসলো?
সব তালগোল পাঁকিয়ে আমার মাথা ঘুরে গেলো। তাড়াতাড়ি ট্রে রেখে দৌঁড়ে চলে এলাম।
আমাকে এইভাবে দৌঁড় দিতে দেখে আপুও পেছন পেছন আসলো। আম্মু বলছিলো,
– এই বদমাইশ, বেয়াদব মেয়ে! তোকে ডাকলো না ও? কথা শুনে যা রাকা, এই রাকা…
তার কথার তোয়াক্কা করলাম না ইচ্ছা করেই।

আমি রুমে এসে নিথর হয়ে বসে আছি আর কাঁপছি অনবরত। না! কোনোভাবেই তার কাছে যাওয়া যাবেনা।
আপু এসে জিজ্ঞেস করলো,কেন এমন করছি। আমি তাকে বললাম,
– আপু, তোকে বলছিলাম না ঐ লোকটার কথা? ইনিই তো সেই লোক। আজমল উদ্দীন।
আপু তেমন একটা চমকালো না।
তবুও বললো,
– হায় হায়, বলিস কি! আব্বুও তো নাই ঘরে! তারপর আবার নিজে নিজেই বিড়বিড় করে বললো,
কিন্তু উনি এখন এখানে আসার সাহস করলেন কিভাবে!

আমি আপুর হাত ঝাপ্টে ধরে কেঁদেই দিলাম। বললাম,
– আপু এই লোকটা কি আজকে আমাদের সাথেই থাকবে?

আপু হ্যাঁসূচকভাবে মাথা নাড়িয়ে বললো,
– হ্যাঁ। তাই তো মনে হচ্ছে। আম্মু তো বলছিলো, এক সপ্তাহের জন্য আসবে।

আমি হা হয়ে তাজ্জব বনে গেলাম।
জিজ্ঞেস করলাম,
– তাহলে এই ইনিই আম্মুর সেই জেঠাতো ভাই? ইনাকে তুই চিনিস আপু?
– না। তবে তোর কথায় যা বোঝার বুঝছি।
বানানো জেঠাতো ভাই আরকি। দেখলি না, ঘরে নিয়ে গিয়েছে নিজেই। ইনিই সেই লোক, যার জন্য এত আয়োজন। যাক, বাদ দে।
বড়দের ব্যাপার,বড়রাই বুঝবে।

আমি ঠোঁট উল্টে ভ্রু কুঁচকে কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম,
– আম্মু এতগুলো মিথ্যা বললো আমাদের সবাইকে! আম্মু একটা মিথ্যাবাদী।
আপু থামিয়ে দিয়ে বললো,
– থাক এইভাবে বলেনা রাকা।
আমি রাগী স্বর নিয়ে বললাম,
– আব্বুকে এখন ফোন করে সব বলে দেই আপু?
আপু চোখ সরু করে বিরক্তি নিয়ে বললো,
– উনি এখন কাজে গেছে। তুই এখন অশান্তি বাড়াবি? চিন্তা করবেনা আব্বু? কে জানে,হয়তো আসলেই জেঠাতো ভাই হয় আম্মুর। হয়তো তুই,আমি জানি না। কিন্তু আব্বু চেনে।

আমি দমে গেলাম। কিছু বললাম না আর।

লোকটার সাথে আম্মুর খোশগল্প হচ্ছে।
তাদের হাসি-ঠাট্টার আওয়াজ এখানে ও ভেসে আসছে। আপু সেদিকে কর্ণপাত করছে না। সে একমনে মোবাইল চ্যাটিং নিয়ে ব্যস্ত। আমি খুব সাবধানে পা ফেলে আম্মুর রুমের দিকে গেলাম।
কি করছে / বলছে তারা, খুব জানতে ইচ্ছা করলো।

ক্লাস সিক্সে তো আর একেবারেই কচি খুকি না,
তাই হালকা সন্দেহের বীজ ও দানা বেঁধেছিলো।
রুমের সামনে গিয়ে দেখলাম রুমের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ।
আজমল উদ্দীনের সাথে আম্মু এভাবে একটা ঘরে দরজা বন্ধ করে বসে আছে! তাও আবার আমাদের বাসাতেই।
আমি সহ্য করতে পারলাম না। ইচ্ছা করছে এখনি আব্বুকে ফোন দিয়ে সব বলে দেই। এতদিন চুপ ছিলাম, শুধুমাত্র আম্মুর কথা ভেবে। আম্মুকে মারবে,ঘরে অশান্তি হবে এসব ভেবে।
কিন্তু এখন তো ঘরের মধ্যেই আস্ত একটা অশান্তি এসে পড়েছে!
সব দোষ তো দেখছি অনু চৌধুরীর ই!

আমি আবার দৌঁড়ে এসে আপুকে বলি,
– আপু দেখছিস, আম্মু আর আংকেল ঐ ঘরে দরজা লক করে কি যেন করছে। আচ্ছা,দরজা খোলা থাকলে কী হতো,বল তো?
আপু ঘাড় ঘুরিয়ে বললো,
– বড় মানুষদের অনেক পার্সোনাল কথাবার্তা থাকে। বুঝলি? তুই এত টেনশন করিস না।
বলে আমাকে তার ফোন থেকে একটা ছবি দেখিয়ে বললো,
– দেখতো এইটাকে কেমন লাগে তোর?
সে মুখ হাস্যজ্জ্বল করেই তাকিয়ে আছে আমার উত্তরের প্রত্যাশায়।

একটা ছেলের ছবি দেখা যাচ্ছে।
বাদামী কালারের মধ্যে চেক শার্ট। কলার ঠিক করেনি। বোতাম ও সবগুলো লাগায়নি। মাস্তানদের মত নিচের দিকে বটে বেঁধে রাখছে। চুলের কিছু অংশে হলুদ আর বাদামী কালার করে মাথার উপরে মোরগের ন্যায় ঝুঁটি ও করে রাখেছে,
দেখা যাচ্ছে।
কানে মেয়েদের মত দুল দিয়েছে।
হাতে শিকল আর তাবিজের মত ১০০টা পরেছে!

এসব আমার ভালো লাগেনা।
পাগল-ছাগল ও তো এত ভয়াবহ সাজ দেয়না।
আমি দেখেই কিছু না ভেবে বলে দিলাম,
– বখাটে,গুন্ডা টাইপ লাগে! কে এটা?
আপুর হাসি মুখ এক নিমিষেই অন্ধকার হয়ে গেলো, আমার মুখের এই তিক্ত কথাগুলো শুনে।
সে আর কিছু বললো না।
আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম,
– কে এইটা বল?
আপু গম্ভীর গলায় বললো,
– বন্ধু। চুপ, আর কথা বলবিনা তুই।

আমি আবার তার হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে ছবিটা দেখলাম। বেশিক্ষন দেখতে পারলাম না। আপু টান দিয়ে নিয়ে গেছে আবার।
খুব চেনা চেনা লাগছিলো ছবিটা।
মনে হচ্ছিলো, স্কুলে যেতে বা অন্য কোনো জায়গায় কয়েকবারই এই ছেলেকে দেখছিলাম আমি।
কিন্তু কিছুতেই আর মনে করতে পারলাম না।

দুই ঘন্টার বেশি হয়ে গেলো।
আমাদের এখনো কোনো ডাক পড়েনি।
ডাক পড়লে তবেই দুপুরের খাবারের আয়োজন করতে হবে।
অত:পর আড়াই ঘন্টা পর শোনা গেলো,
“তানিশা,তানিশা… রাকা… কোথায় তোরা? তানিশা মা…”

দুজনেই একছুটে চলে গেলাম।
দেরী করলেই আম্মু রেগে যাবে তাই প্রাণপণে দৌঁড় দিলাম দুজন।
এসে দেখলাম, আম্মু দরজা সবটা খুলেনি।
হালকা একটু খুলেছে। লক্ষ্য করে দেখলাম, তার চুল এলোমেলো হয়ে আছে। লিপস্টিক ও উধাও। আমাদের দিকে না তাকিয়েই উদাস গলায় বললো,
খাবার গরম করে তোরা তোদের রুমে সব নিয়ে যা,তারপর খেয়ে নে। আর আমাদের জন্য টেবিলে সব রেখে যা।
যা,তাড়াতাড়ি কর।

আমি হা করে দাঁড়িয়ে রইলাম।
ইচ্ছা করছে দরজাটা ধাক্কা দিয়ে খুলে দেই। দেখি লোকটা এখন কি করছে, অথবা পরিস্থিতি দেখে বোঝার চেষ্টা করি, ভেতরে কি হচ্ছিলো এতক্ষন।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here