“তৃ-তনয়া” পর্ব- ৯৪

0
2567

“তৃ-তনয়া”
পর্ব- ৯৪
(নূর নাফিসা)
.
.
যৌথ পরিবারের আলোচনা সভা খুব ভালো লাগে নাফিসার। সন্ধ্যায় সব মহিলারা একত্রিত হয়ে চুলার পাশে বসেছে রান্না করতে। সাথে গল্পসল্পও চলছে বেশ! এখন রান্নাবান্না প্রায় শেষ পর্যায়ে। ইমরান ঘর থেকে নাফিসাকে ডাকলো,
– নাফিসা, ফোন বাজে।
– কে?
– জানিনা। আননোন নম্বর।
– রিসিভ করো।
নাফিসা আসর থেকে উঠে ঘরে যেতে যেতে ইমরান রিসিভ করলো। সে সালাম দিয়ে “হ্যালো, হ্যালো” বলে যাচ্ছে কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো জবাব আসছে না! নাফিসা এসে জিজ্ঞেস করলো,
– কে?
ইমরান ফোন এগিয়ে দিয়ে বললো,
– কি জানি! কথা বলে না!
নাফিসাও সালাম দিলো কিন্তু ওপাশে নিরব! আশপাশের কোনো শব্দও নেই যে বুঝে নিবে ভুলে এসেছে! নাফিসা বিরক্ত হয়ে বললো,
– আশ্চর্য! কথা বলবেন না যেহেতু কল দিয়েছেন কেন! যত্তসব ফাউল মার্কা!
নাফিসা টুট করে কল কেটে দিলো! ফোন ইমরানের কাছেই রেখে আবার চলে গেলো। ডিনার করে আবার কথা বললো নিশাত ও বড়মার সাথে। নিশাত জানালো আজ মা এবং চাচ্চুকে না পেয়ে অনেক কান্না করেছে জিহান। আরমানও বাসায় ফিরেছিলো একটু দেড়ি করে। এসে দেখে কাঁদতে কাঁদতে কিছুক্ষণ আগে ঘুমিয়ে পড়েছে। জিহানের অবস্থার কথা শুনে অটোমেটিক নাফিসার চোখে পানি এসে গেছে! জিহান এতোটা ছোট নয় যে দু চারদিন গেলে সে মাকে ভুলে অন্যদের সাথে অভ্যস্ত হয়ে যাবে। মাকে চেনার মতো যথেষ্ট স্মরণশক্তি আছে তার এই বয়সে। বছর পেরিয়ে গেলেও সে পরিবারকে চিনবে। তার বয়সটাই এখন এরকম।
মা-বাবা ও আপুদের সাথে নাফিসার কথা হয় সকালের দিকে। সকালে ব্যস্ত থাকলে যখন ফ্রী হয় তখন। এখন নিশাতের সাথে কয়েক মিনিট কথা বলে নাফিসা ফোন রেখে দিলো৷ ইচ্ছে করছে নিজের মতো করে সব সাজিয়ে দিতে। সবাই যাতে সুখে থাকতে পারে। কিন্তু সে চাইলেই কি হবে! তার কথায় কি জগৎ চলবে! ভিন্ন জনের ভিন্ন মত! জিহানের জন্য হলেও জেরিন ফিরে আসুক, সেটা সে চাইলেও বাকিরা চাইবে না। অবশ্য সে এমন জঘন্য কাজ করেছে, না চাওয়াটাই স্বাভাবিক!
বাকিটা সময় কাটলো বিষন্নতায়! যতক্ষণ না চোখে ঘুম নেমে এসেছে ততক্ষণ শুধু জিহানের মায়াবী চেহারাটাই চোখের সামনে ভেসেছে! মনের সাথে চোখও কেদেছে, কিন্তু অশ্রু গড়ানোর আগেই তা মুছে ফেলেছে। যাতে ইমরান বুঝতে না পারে। যদিও ইমরান তার মুখে বিষন্নতার ছাপ দেখে জিজ্ঞেস করেছিলো কিছু হয়েছে কি-না। উত্তরে নাফিসা “না” বলেছিলো।
সকালে আজ তারা নিজ এলাকায় ঘুরতে বেরিয়েছে। নাফিসা, ইমরান, শিপন এবং তার বউ, সাথে তার ছোট বাবুটাও। কথা বলতে বলতে হাটছে তারা। শিপন তাদের এক বাড়িতে নিয়ে গেলো দেশের বিলুপ্ত প্রায় প্রাণী নীলগাই দেখার জন্য! পৃথিবী থেকে অনেক জীবজন্তুই বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং এখনো হচ্ছে! এই নীলগাইও আজ বিলুপ্তির পথে। কিন্তু এর অস্তিত্ব ধরে রাখতে নীলগাই সংরক্ষণ করার প্রচেষ্টা চলছে দিনাজপুরে। কখনো দেখেনি নাফিসা, আজই প্রথম দেখা! ইমরানও নাম শুনেছে কিন্তু সামনাসামনি দেখেছে আজ প্রথম। তারা ছবি তুললো নীল গাইয়ের, যারা লালন পালন করছে তাদের সাথেও টুকটাক কথা বললো ইমরান এবং শিপন। সেখান থেকে বেরিয়ে তারা আবার এলাকার পথ ধরে হাটতে লাগলো। দুপাশে ফসলের মাঠ, মাঝে ছোট ছোট যান চলাচলের জন্য পাকা রাস্তা। পূর্বদিক থেকে মৃদু বাতাস বইছে। বেশ ভালো লাগছে পরিবেশটা। নেই কোনো যানজট আর নেই কোনো কোলাহল! আছে শুধুই প্রকৃতির স্নিগ্ধ নীলাচল!
তারা ছোট ব্রিজটার উপর দাড়িয়েছিলো। ব্রিজ আছে অথচ নিচে কোনো খাল-বিল নেই! মাটি দেখা যাচ্ছে যেখানে ঘাসে ভরপুর। হয়তো বর্ষার পানি আসা-যাওয়ার জন্যই ব্রিজটি তৈরি।
বাবুর জুতা খুলে গেছে, সেটাই ঠিক করছে তার বাবা মা। আর নাফিসা ও ইমরান রেলিংয়ে হেলান দিয়ে একপাশে দাড়িয়ে আছে। তাকিয়ে আছে সবুজ ধান ক্ষেতের দিকে। যেখানে মৃদু বাতাস ঢেউ খেলে যাচ্ছে ঘাসে ঘাসে! নাফিসা ইমরানকে বললো,
– আবারও গরুর গাড়িতে চড়তে ইচ্ছে করছে।
– এটা অটো রিকশা নয় যে এবেইলএবল পাবে! কাল কতোক্ষণব্যাপী ঘুরলে শখ মিটেনি!
– উহু।
– গরুর উপর বসানো উচিত ছিলো, তাহলে শখ মিটে যেতো!
নাফিসা ভেঙচি কেটে নিজের ফোনে গতকালের তোলা ছবি দেখতে লাগলো। ছবির দিকে তাকিয়েই বললো,
– জানো, একটা কারণে খুব আফসোস হয়েছিলো তখন। আমি যদি গ্রাম্য বধূর ন্যায় শাড়ি পড়ে গরুর গাড়িতে চড়তাম খুব ভালো দেখাতো না?
ইমরান মুখে মৃদু হাসি ফুটিয়ে ঝকঝকে দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নাফিসার দিকে! এভাবে তাকাতে দেখে নাফিসা ব্রু নাচাতেই ইমরান বললো,
– বাস্তবে তো সম্ভব নয়, তবে আমি অলরেডি কল্পনা করে ফেলেছি তোমাকে কেমন লাগতো। আর এটাও কল্পনায় এসেছে যে তুমি তখন নিশ্চয়ই আমাকে গাড়ি চালাতে বলতে আর নিজে আরামে বসে বসে গান ধরতে “তোমার গরুর গাড়িতে আমি যাবো না, না নানা নানানা না…”
নাফিসা হেসে উঠলো। ইমরান বললো,
– চলো সামনে যাই..
তারা আরও সামনে হাটতে লাগলো। হঠাৎই দেখা পেলো বৃহৎ সেই স্থলচর প্রাণীর! এখানেও সে! ঘন্টি বাজিয়ে হাতি আসছে এদিকেই। পিছু পিছু দৌড়াচ্ছে কিছু বাচ্চাকাচ্চা! নাফিসা ভয়ে ইমরানের হাত চেপে ধরলো! ইমরান বললো,
– ভয় পেও না, কিছু করবে না।
ইমরানের এই সান্ত্বনা কি কোনো কাজে লেগেছে! নাফিসা তো ভয়ে কুকড়ে যাচ্ছে! এমন জায়গায় এসেছে, আশেপাশে কোনো বাড়িঘর নেই যে টুপ করে ঢুকে পড়বে! দুপাশে শুধু ধান ক্ষেত! কেবল পেছনের রাস্তাই খোলা তাদের জন্য! কিন্তু এতোটা পথ ফিরে যাবেই কিভাবে! দৌড়ে গেলে যদি হাতিও পিছু পিছু দৌড় দেয়! তাহলে তো সে শেষ! ইমরান আর শিপন পড়লো মুশকিলে! শিপনের বউও ভয় পাচ্ছে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে! তাই তারা ভাবছে কি করা যায়! এখন কি আবার ফেলে আসা পথে ফিরে যাবে! নাকি রাস্তার একপাশে দাড়িয়ে থাকবে! এদিকে হাতি ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে। এতোক্ষণ একটা দেখা যাচ্ছিলো। এখন সাথে আরেকটা বাচ্চাও আছে! এই সরু রাস্তায় দুইটা একসাথে হাটলে তো আর জায়গাই খালি থাকে না! নাফিসা আর তাদের ভাবনার অপেক্ষায় না থেকে জুতা হাতে নিয়ে ঢালু বেয়ে ধান ক্ষেতে নেমে গেলো! ইমরান বললো,
– সাবধানে, কাটা ফুটবে!
নাফিসা আর তার সাবধানতা অবলম্বনে নেই। সে যতদ্রুত সম্ভব নেমে গেলো! তাকে দেখে শিপনের বউও বাচ্চাকে নিয়ে নেমে গেলো। নাফিসা দিকবিক না তাকিয়ে আইল ধরে হাটতে হাটতে দুই ক্ষেত পেরিয়ে গেছে। ইমরান আর শিপন রাস্তায়ই দাড়িয়ে আছে। হাতি নিকটে এলে তারা লোকের সাথে কথা বলছে। নাফিসা আর দাড়িয়ে না থেকে ভাবির সাথে কথা বলতে বলতে হাটতে লাগলো। ইমরানের জোরে হাক পড়লে সে চমকে পেছনে তাকালো। দেখলো দুজনেই হাতির উপর বসে আছে! নাফিসা অবাক হয়ে আবার রাস্তার নিকটে এলো। সে নিচ থেকেই ছবি তুললো তাদের। অত:পর হাতি চলতে লাগলো, আর তারা চড়তে। নাফিসা ছবি তুলে আবার ভাবির সাথে হাটতে লাগলো। এমনি ফোন বেজে উঠল। আরাফ কল করেছে৷ নাফিসা রিসিভ করে সালাম দিলো।
– আসসালামু আলাইকুম, ভাইয়া।
– ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছো?
– আলহামদুলিল্লাহ। আপনি?
– আমিও আলহামদুলিল্লাহ। ঘুরাঘুরি কেমন লাগছে?
– নতুন জায়গায়, বেশ ভালোই কাটছে সময়।
– কবে ফিরছো?
– কাল।
– ইমরান কোথায়?
– রাস্তায়, হাতির পিঠে।
– ভালোই তো! আর তুমি?
– আমি হাতির ভয়ে ধান ক্ষেতের আইলে!
আরাফ হেসে উঠলো। পরক্ষণে বললো,
– জেরিন কল করেছিলো তোমার কাছে?
– না তো!
– আমার কাছে প্রতিদিনই কল করে, ওবাড়ির কথা বলে বলে কান্না করে। আরমান নাকি ডিভোর্স পেপার রেডি করছে।
– ভাইয়া, আমার ভালো লাগছে না এসব! জিহানের কথা মনে হলেও একদমই ভালো লাগে না! প্রতিদিন কান্না করে ছেলেটা। ভাবিকে মারতে দেখে ভাইয়াকেও ভয় পায় সে! চাই তো সবাই ভালো থাকুক। কিন্তু তার চরিত্রের কারণে আজ সবার চোখেই নিচু হয়ে গেছে সে! আমিও পারছি না তার পক্ষ নিয়ে সাহস করে কাউকে কিছু বলতে!
– দেখি, আজ সন্ধ্যায় যাবো আমি আরমানের সাথে কথা বলতে। জেরিন তোমার ফোন নম্বর নিয়েছিলো কাল, কল দিবে বলে। তাই জানতে চাইলাম কথা হয়েছে কি-না।
নাফিসার মনে হলো সেই আননোন নম্বরের কথা! সেটা গোপন রেখেই নাফিসা বললো,
– না হয়নি। ভাইয়া একটা কাজ করলে কেমন হয়, জিহানকে যদি আপনাদের বাড়িতে নিয়ে ভাবির সাথে একটু সাক্ষাৎ করান! এতোদিন মাকে দেখে না, বাচ্চাদের তো বন্দী করে এতোটা প্রেশারে রাখা যায় না। হয়তো এতে ভালো লাগবে উভয়েরই!
– ঠিকই বলেছো। জেরিন পরশু এসেছিলো বাড়িতে।
– হ্যাঁ, আপু বলেছিলো। আপুর সাথে কথা বলে কান্নাও করেছে নাকি।
– হ্যাঁ। দেখি আশিককে পাঠিয়ে নিয়ে আসতে পারি কি-না জিহানকে। আমি তো স্কুলে। জেরিনকেও কল করে বলে দিবো আসতে।
– হুম, এটাই করুন।
– আচ্ছা, রাখি এখন। ভালো থেকো।
নাফিসা এতোক্ষণ কথা বলতে বলতে হাটছিলো। কল কেটে পেছনে ফিরে ইমরানকে দেখতে পেল তার নিকটে! রাগান্বিত হয়ে আছে চেহারা! আর শিপন ও তার বউ পানির ড্রেনের কাছে পা ধুয়ে নিচ্ছে। ইমরান বললো,
– ভাবতেই অবাক লাগে অযথা তোমাকে নিয়ে আমি এতোটা ভাবি! এতোটা স্টুপিড কি করে হতে পারো তুমি আমি সেটাই ভেবে পাই না! যে তোমাকে মারতে বসেছিলো তুমি তাকেই আবার ঘরে তুলতে চাইছো! ভাইয়ার চেয়েও বেশি দরদ তোমার? ভাইয়া নিজেই চায় না তাকে এক্সেপ্ট করতে আর তুমি!
নাফিসা মলিন স্বরে বললো,
– আমি তো তাকে বাড়ি আসতে বলিনি। জিহানের সাথে একটু দেখা করানোর কথা বলেছি শুধু! ছেলেটা মাকে ভেবে কান্না করে প্রতিদিন।
– তোমার জন্য আরও এরকম! তুমি মনে করিয়ে দেও বলেই কান্না করে সে৷
– আমি মনে করিয়ে দেই! বাচ্চা তার মাকে ছাড়া কতোক্ষণ থাকতে পারে! সেটা কি একবার ভেবেছো!
– না, প্রয়োজন নেই তো এতো ভাবার! তোমার প্রতিও ভাবনা ছাড়তে হবে দেখছি। অতি আস্কারায় সাহস বেশি বাড়ে বিধায় মাথায় উঠে যায়! যেটা অকল্যাণ বয়ে আনতে সক্ষম!
ইমরান হনহন করে উল্টো পথে হাটতে লাগলো। নাফিসা সেখানেই দাড়িয়ে আছে। ইমরান রাস্তার ধারে এসে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকিয়ে বললো,
– দাড়িয়ে আছো কেন এখানে?
নাফিসা তার কথায় পাত্তা না দিয়ে তার পথে হাটতে লাগলো। ইমরানের মেজাজ খারাপ হচ্ছে খুব! নাফিসাকে আইল ধরে একা একা হাটতে দেখে শিপন বললো,
– ভাবির আবার কি হইছে!
– কি জানি! তোরা যেতে থাক। আমরা আসছি।
তারা দুজন রাস্তায় উঠে হাটতে লাগলো। ইমরান নাফিসার কাছে এসে হাত ধরলে নাফিসা ঝটকায় হাত ছুটিয়ে নিলো। ইমরান বললো,
– এদিকে কই যাও? এখন কিন্তু মাইর খাবা!
– আস্কারায় মাথায় উঠে গেছি, মাইর তো খেতেই হবে! দিন মাইর। মাথায় যেহেতু উঠে গেছি, মাথা থেকে এবার নিচে আছড়ে ফেলুন। এতে অভ্যস্তই আমি!
– রাগ কিন্তু বাড়িয়ে দিচ্ছো!
– এতো ঠেকা পড়েনি কারো রাগ ভাঙানোর কিংংবা বাড়ানোর! আমার সাথে না এলেই তো হয়! কে বলেছে পিছু পিছু আসতে! আমি তো আমার মতোই চলছি। অযথা আমাকে নিয়ে ভাবছেন কেন! নিজেকে নিয়ে ভাবুন!
নাফিসা মোরে এসে অন্য আইলে হাটতে লাগলো! এসেছে বেড়াতে, এখন কি রাগারাগি করলে চলবে! তাই নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে ইমরান সেই সোজা আইলেই হাটতে লাগলো। নাফিসা তার বিপরীত আইলে হাটছে। ওড়নার আঁচলে চোখও মুছে নিচ্ছে বারবার। দুজন দুই আইলে, মাঝে সবুজ ধান ক্ষেত। ক্ষণে ক্ষণে বইছে মৃদু বাতাস আর ভাঙছে তাদের ক্ষীণ অভিমান! হাটতে হাটতে তারা অন্যপাশের রাস্তায় উঠলো। নাফিসা রাস্তায় উঠে দাড়িয়ে আছে নিশ্চুপ হয়ে। দুজনের মাঝে এতোক্ষণ দুরত্ব ছিলো কেবল একটি ধান ক্ষেত। আর এখন দূরত্বের সাথে অভিমান ভেঙে ইমরানই অগ্রসর হলো নাফিসার দিকে। রাস্তাটা প্রায় ফাঁকাই আছে তাদের থেকে অনেকটা দূরে শিপনরা আছে। নিরিবিলি হাটছে দুজন। ইমরান নাফিসার হাত ধরতেই নাফিসা সরিয়ে দিলো। ইমরান এবার শক্ত করে মুঠোয় ধরে শিপনদের দিকে পা বাড়ালো। কিন্তু নাফিসা এক জায়গায়ই দাড়িয়ে আছে। ইমরান তার হাত টানলো কিন্তু সে একটু এগিয়ে এলেও নড়তে অনিচ্ছা প্রকাশ করলো। ইমরান হাত ছেড়ে তার পেছনে একহাত রেখে বললো,
– এখন কি রুমে আছি, যে আদর করে রাগ ভাঙাবো!
পেছন থেকে হাত সরিয়ে নাফিসা বললো,
– একদম টাচ করবেন না আমাকে!
– কেন?
– আপনি হাতির উপর উঠেছেন, হাতি স্পর্শ করেছে, হাতসহ জামাকাপড়ে হাতির ময়লা লেগে আছে! আমার ঘিনঘিন লাগছে এখন আপনাকে! আপনি হাতটা পর্যন্ত ধুয়ে আসেননি!
ইমরান তার কথা শুনে এবং বাচ্চাদের মতো তার মুখ ভঙ্গি দেখে বিস্মিত! পরক্ষণে হাসতে হাসতে ঢালুতে নেমে এলো। সেচের পানির ড্রেনে হাত ধুয়ে আবার উঠে এলো। নাফিসার ওড়নায় হাত মুছে বললো,
– এবার ঠিক আছে তো!
নাফিসা ঠোঁটের এক কোনে দুষ্টুমির হাসি ফুটিয়ে বললো,
– হাতে স্পর্শ করতে পারবেন কিন্তু দুরত্ব বজায় রাখবেন। গোসলের পূর্ব পর্যন্ত আমার সাথে ঘেষবেন না একদম! ইমরান ডান পাশে থেকে নাফিসার বাম কাধে ধরে কাছে টেনে বললো,
– এতো নিয়মকানুন আবার আমি মানতে পারি না।
দুজন দুষ্টুমি করতে করতেই হাটতে লাগলো সেদিকে, যেদিকে শিপনরা এগিয়ে যাচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here