রাকা (১৬)
ফারজানা রহমান তৃনা
অনু চৌধুরীকে আজমল উদ্দীন আর ফোন দিলেন না। অনু চৌধুরীর প্রাণ যায় যায় অবস্থা।
কে এই মেয়ে, কেন এভাবে বললো কোনো উত্তরই পাওয়া যাচ্ছেনা।
এদিকে তানিশার ও কোনো খবর নেই।
মেয়েটার একটা খোঁজ পেলে ভালোই হতো।
আর রাকা নামে যে তার কোনো সন্তান ছিলো তা হয়তো সে ভুলেই গেছে। কয়েকবারই আব্বুর সাথে ফোনে কথা হয়েছিলো। তন্মধ্য একবার কি দুইবার আমার কথা জিজ্ঞেস করেছিলো,কথা বলতে চেয়েছিলো। কিন্তু আমি লুকিয়ে থাকি ঐ সময়। হয় বাইরে চলে যাই নতুবা বাথরুমে বসে সময় পার করি তখন। জানিনা, কেন যেন তার প্রতি আমার ঘৃণা জন্মে গেছে। ইচ্ছাই করেনা তার সাথে কথা বলতে। চাই না তার সাথে আমার আর কোনোদিন দেখা হোক।
আজমল উদ্দীন আর তানিশার কথা মনে পড়লেও আমার জন্য তার কোনো দুশ্চিন্তা হয়না। আমি স্কুলে যাই কিনা, ঠিকমত খাওয়া-দাওয়া করছি কিনা এসবেও তার কোনো আগ্রহ নেই।
অনু চৌধুরী ভাবছে,
আজমলের ফোন ধরেছে কোনো মেয়ে!
কে হতে পারে,ওর কোনো ভাবী বা পিসতুতো বোন? আমার সাথে ঠাট্টা-মস্করা করেছে নাকি?
এরকম ভেবে ভেবে কিছুদিন পার করতেই আজমল উদ্দীন ফোন দিলেন।
– হ্যালো অনু। কেমন আছো?
– ভালো। আপনি কি মানুষ? আপনি কিভাবে আমাকে এভাবে একা ফেলে চলে গেলেন? ফোন পর্যন্ত করেন না!
– আরে আর বইল্যো না। খুব ঝামেলায় আছি।
– কিসের ঝামেলা? আপনার ফোন মেয়ে মানুষ ধরে ক্যান? কার জন্য টাকা খরচ করে বাজার- সদয় করেন? আপনার নাকি টাকা-পয়সা নাই নাই! তাইলে?
– আরে আর বইল্যো না। ভাইয়ের এখানে থাকি। কিছু বাজার সদয় করা লাগে তো নাকি?
– ক্যান ওইহানে থাকা লাগবো আপনার? আপনার বউ যেখানে থাকে, আপনি ও ওখানেই থাকবেন। আপনার ঐখানে কিসের এত কাজ? দুইদিন পর পরই দৌঁড় দেন! ক্যান, বলেন তো আমারে?
– আচ্ছা শুনো, এসব বাদ দাও। ব্যস্ত ছিলাম কাজে। তাই খবর নিতে পারিনি। আমি আজকেই আসতেছি তোমার কাছে। তোমার জন্য একটা শাড়ি কিনছি ভাবিসহ। এইখানে ভালো ভালো শাড়ি কম দামে পাওয়া যায় তো তাই।
অনু চৌধুরী খুশিতে হতবিহ্বল হয়ে গেলেন শাড়ির কথা শুনে।
– ওমা! তাই! কত দাম? কী কালার? টিস্যুর মত নরম শাড়ি পরার শখ আমার। বেশি ভারী কিন্তু এখন পরতে পারমু না।
– দাম জিজ্ঞেস কইর্যো না। উপহার। নরমই।
– কিসের উপহার?
– এইযে, আমাকে বাচ্চার বাপ হতে দিবা, তাই।
এভাবে এভাবেই কথা ঘুরায়ে, অনু চৌধুরীকে মানিয়ে নিলেন আজমল উদ্দীন।
ছয় মাস পর।
অনু চৌধুরীর প্রথম বাচ্চা জন্ম নিলো।
আট মাসেই ব্যথা উঠে গেলো,বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হলো। এবারেও মেয়ে বাবু।
অনু চৌধুরীর ভাগ্য ছেলে নেই হয়তো।
পর পর তিনটাই মেয়ে হলো।
আজমল উদ্দীনের খুশির যেন সীমা নেই।
একটু বেশিই খুশি হয়েছে লোকটা।
এর পিছনের কারণটা কেউই জানেনা।
কারণ তখনো কিছুই জানানো হয়নি।
বাচ্চা নিয়ে দুজনেই ভীষণ খুশি।
অনু চৌধুরীর খুশি বলতে পুরাতন অভিজ্ঞতা, তাই অতটাও খুশি হয়নি। বাচ্চা হওয়ার ছিলো,হইছে। এই!
তাছাড়া কতবার মিস্কারেজ করা হয়েছিলো।
কম কষ্ট পোহাতে হয়নি তো তাকে।
এই মধ্যে অনু চৌধুরীর সাথে আমাদের কারোরই কোনো যোগাযোগ হয়নি।
আব্বু, আমি ভালোই আছি।
খাওয়া-দাওয়ায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
রিমা খালাই সবটা দেখছেন।
আমি তখন ভালোই ছিলাম। খুশিতে ছিলাম।
কিন্তু সেই খুশি দীর্ঘায়ু পেলো না কেন?
কেন মানুষের জীবনের সামান্য খুশিরা ও স্থায়ী হয়ে থেকে যায়না?
তানিশা আপুকে আমরা প্রায় ভুলেই যাচ্ছি।
সে ইচ্ছা করেই আব্বুর সাথে বা আমার সাথে কোনো যোগাযোগ রাখেনি।
কে জানে, হয়তো সে মনে করে, আমরাই তার জীবনের পরম শত্রু। একমাত্র অনু চৌধুরীই তার জীবনের পরম শুভাকাঙ্ক্ষী।
আমরাও আর যোগাযোগ করার চেষ্টা করিনি। আব্বু এক কথায় ধৈর্য্য হারা হয়ে গেছেন। তার আর এসব নিয়ে পড়ে থাকতে ইচ্ছা হচ্ছে না।
অনু চৌধুরীর বাচ্চা জন্ম নেওয়ার এক সপ্তাহ পরই আবার অচেনা নাম্বার থেকে ফোন এলো।
সে বুঝেই নিলো, এটা আর কেউ নয়,
তানিশাই। সেটাই হলো।
তানিশা আপু ফোন দিয়েছে অনু চৌধুরীকে।
খুব ব্যস্ত হয়ে বললো,
– হ্যালো আম্মু।
– হ্যাঁ তানিশা বল। এতদিন পর মনে হলো?
– সেইম প্রশ্ন আমারো। এতদিন পরে ও একবার মনে করলা না?
– আমি কি তোর নাম্বার জানি নাকি?
– যেগুলা জানো ওগুলাতে একবারো ট্রাই করে দেখছিলা? দেখোনি। আমিও দেখলাম। আমার আম্মু আমাকে কতটা মিস করে। নাহ্, আমাকে কেউই মিস করেনা। আমি মরে গেলেও কারো কোনো সমস্যা হবেনা।
– বড়দের মত এত পাকনা পাকনা কথা বলিস না। কেমন আছিস বল।
– ভালো।
– আসলেই? কণ্ঠস্বর শুনে তো মনে হয় না।
তানিশা আপু এবার চুপ করে গেলো।
ওপাশ থেকে নাক টেনে কাঁন্নার আওয়াজ ভেসে আসছে।
– কী হলো তানিশা? তুই কাঁদতেছোস নাকি?
সে নাক টেনে বললো,
– আম্মু, প্লিজ আমাকে কিছু বুদ্ধি দাও। আমাকে সাহায্য করো।
– কী? টাকা লাগবে?
– হুম। আর পারতেছি না আমি।
– পারতেছোস না বলতে?
– এখানে আমি উঠতে বসতে মাইর খাই আম্মু। আমার পুরা শরীরে শুধু মাইরের দাগ। আর পারছি না। আর নিতে পারছি না আমি। এখন গায়ে কেউ ধরলেও ব্যথা পাই। ঠিক করে শুতেও পারিনা। বসতে পারিনা। চোখ ব্যথা করে। সব ব্যথা হয়ে গেছে আমার আম্মু। আমি মনে হয় আর বাঁচবো না।
– তোকে রফিক এত বেশি মারে?
– শুধু ও না। ওর মা ও মারে। দুদিন তো ওর আব্বাও মারছে। ঝাড়ু দিয়ে একবার। আরেকবার চড় মারছিলো।
– ওমা কি কস! তিনজনেই মারে! ক্যান? তোরে তো আমি সব শিখাইছি। রান্নাবান্না, কাজ-কাম হতে সব। তুই তো সবই পারোস। তাইলে?
– কাজ কাম সবই তো আমি করি। কিন্তু তাদের তো শুধু কাজ কাম দিয়েই সব হবেনা। ছেলে বিয়ে দিলে মানুষ কত কিছু পায়। তাদের তো কিছুই দিলা না তোমরা। এগুলো তো আগেও বলছি তোমারে। তুমি তো কিছুই করলা না আমার জন্য।
– বার বার এক কথা বলোস। তোকে তো
আমরা বিয়ে দেইনাই। তোরা নিজেরা নিজেরা করছোস। তোর আব্বু তো তোর এই বিয়ে এখনো মানেই না। তাকে টাকার কথা বলছিলাম আমি। সব তো শুনছোস ই।
সে এক টাকাও দিবেনা। মা, আমি বলি কি,তোর আর সহ্য না হলে তুই চলে আয় না। তোর বাপের কাছে চলে যা। তোকে সে এখন আসলে এখনো ঘরে জায়গা দিবে। যতই হোক তুই তার প্রথম সন্তান তো। কী বলোস? আসবি?
– না।
– ক্যান? এমনেই ওইহানে পইড়্যা পইড়্যা মরবি ঠিক করছোস? তাইলে মর। আমারে আর ফোন দিস না।
– ঠিক আছে। আমি মরি। তোমরা ভালো থাকো।
– তানিশা!
– আমি রাখলাম। আর কখনো আমার সাথে কথা বলতে হবেনা তোমার। তোমরা সবাই আমার থেকে মুক্ত। আমি মরবো।
– তোর কী ওর কাছে ঠেকা আছে কোনো? বুঝেই তো গেছোস, ভালোবাসা টালোবাসা কিচ্ছুনা। তোর বাপের সম্পত্তি,টাকার লোভ শুধু। তুই আইস্যা পড়,তাদের মুখে ঝামা ঘষে।
– আমি আসতে পারবো না। আসলে আব্বু আর যেতে দিবেনা। আমাকে এখানেই পড়ে থাকতে হবে,যত কষ্টই হোক।
কারণ আমি প্রেগনেন্ট। আমার পেটে রফিকের বাচ্চা বড় হচ্ছে।
অনু চৌধুরী আকাশ থেকে পড়লেন।
– কি! কি বললি তুই!
– হ্যাঁ। এত চকমকানোর কিছু হয়নাই। বিয়ে হইছে, বাচ্চা তো হবেই। আচ্ছা,তোমার মনে হয় বাবু হইছে আবার,তাইনা? বাচ্চার কান্নার আওয়াজ আসতেছে।
– হ্যাঁ। তোর বোন হইছে।
– আমার? আমার বোন তো একটাই। রাকা। তোমার এখন যে মেয়ে বাবু হইছে,সে আমার কিছুই হয়না। দূর সম্পর্কের বোন বলা যায়।
মূলত তুমিও এখন আর আমার কেউ হওনা।
তুমি এখন অন্যের বউ,অন্যের মা।
– সে যাই হোক। এখন তাহলে কী করবি?
– কিছুই না। এখানেই পড়ে থাকবো কাজের বুয়ার মত। তারপর একদিন মরে যাবো।
– চুপ কর। এসব কোনো ব্যাপারই না। শুন, তুই আমার কাছে চলে আয়। কিছুদিন থেকে যা।
– রফিক যেতে দিবে না।
– রফিকের সাথে আমি কথা বলবো। তুই ওরে ফোন দে।
– না আম্মু। ওর মুখের ভাষা খুব জঘণ্য। তোমাকে অপমান করে ছাড়বে।
– করুক। তবুও দিস। আমি তার সাথে কথা বলবো।
– কী বলবা?
– তোর আব্বুর সাথে তোদের ভালো সম্পর্ক তৈরী করে দেবার রাস্তা করে দিব। এখন তো আর কিছু করার ও নাই। তুই তো ওকে ফেলে আসবিও না।
– হ্যাঁ। আসবোনা। কারণ আমি রফিককে ভালোবাসি। আচ্ছা, আব্বুর সাথে কিভাবে সম্পর্ক ভালো করে দিবা?
– তুই আর রফিক আমার কাছে একদিন আয়। সব বুঝিয়ে বলা যাবে।
– আচ্ছা আম্মু,আসবো। এটা করলে তো খুবই ভালো হবে। কিন্তু আব্বু তো মনে হয়না জীবনে ও কোনোদিন রফিককে মানবে।
– মানবে। না মাইন্যা যাইব্যো কই। পানিতে পড়লে সাঁতার না কাইট্যা যাইব্যো কই?
এসব শুনে তো তানিশা আপুর খুশির কোনো অন্ত নেই।
তার রাগের ইস্তফা ঘটতে শুরু করেছে।
সে কিছুক্ষন অন্যান্য কথা ও বললো।
অনু চৌধুরী কথার মাঝখানে ভেজা গলায় বলে ফেললেন,
– তানিশা শুন, আরেকবার কী ভেবে দ্যাখবিনা?
– কী?
– শুন, আমার জানা-শোনা আছে। তুই আমার কাছে তোর সব গুছিয়ে চলে আয়।
– আসবো তো। দেখি রফিককে বলে। ও রাজি হবে। কিন্তু কী জানা-শোনা আছে তোমার? আর সব গুছিয়ে আসবো বলতে?
– রফিককে আনতে হইব্যো না।
– কেন?
– শুন, বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেলার ব্যবস্থা করবো।
তুই আমার কাছে আয়, আমি তোকে তোর বাপের কাছে পাঠায়ে দেই। বিশ্বাস কর, তোর জীবন পাল্টে যাবে। এখনো সময় আছে।
তানিশা আপু হাপুস নয়নে আঁখি ভিজিয়ে ত্বরিতগতিতে জবাব দিলো,
– ছি:! আম্মু! তুমি এটা কী বললা? তুমি কি আমাকে তুমি মনে করো নাকি?
অনু চৌধুরী বাঁজখাই গলায় চেঁচিয়ে বললেন,
– মানে! কি বললি তুই!
সে স্তব্ধ গলায় বললো,
– তুমি যে দুদিন পর পরই তোমার অনাকাঙ্ক্ষিত বাচ্চা নষ্ট করতা,সেটা তো আমি জানতাম ই। আর তোমার খাওয়ার রুটিন ও ওরকম হতো। এসব আমাদের বইয়েই আছে। আর আমিও অনেক কিছুই জানি। তাছাড়া পাশের বাসার আন্টিদের কানাঘুষা আমার কান ছুঁয়েছিলো বহুবারই।
অনু চৌধুরী রাগে গোঙাতে গোঙাতে বললেন,
– মাইয়্যা, তোর মুখ বেশিই খ্যুইল্যা গেছে। বেশিই বুইজ্যা গেছোস এই বয়সে। আমি তোর ভালোর কথা ভাইব্যা বলি আর তুই! আচ্ছা যা,তোর জীবন তোর। আমি আর কিছুই বলমুনা। আল্লার কিরা।
– কিছু বলতে হবেনা। শুধু আব্বুর সাথে ভালো কানেকশনের পথ বলে দাও,আমার মৃত্যু না চাইলে। নইলে আমি বেশিদিন বাঁচবো না।
– বাসায় আয় জামাইসহ। একটা কিছু ভেবে বের করা যাবে। আর তোর মরণের ভয় আমারে দেখায়ে কোনো লাভ নাই। তাই আর দেখাইস না।
★
এক মাসের মাথাতেই,
তানিশা আপু কল দিয়ে জানালো,
– আম্মু আমরা আজকেই আসবো।
– চলে আয়।
– আংকেলের গাড়িটা পাঠাতে পারবা? ভাড়া নাই তো!
– আচ্ছা পাঠাবো। জায়গার নাম বল।
– টিক্কাতলী রোডে আসলেই হবে।
– আচ্ছা।
খুব উত্তেজিত কন্ঠে বললো,
– শুনো,তুমি আজকে হাঁসের মাংস, দেশী মুরগী, চিতল মাছ, বোয়াল, শিং, কৈ, লাউ পাতা, শিমের বিচির ডাল, পোলাও, গরুর ঝোল করা মাংস রান্না করবা। সাদা ভাত আর ডাল-আলুর ভর্তা একদম করবা না। এগুলা এখন আমার অসহ্য লাগে। প্রতিদিন এগুলাই খাই। প্লিজ আম্মু!
এসব শুনে অনু চৌধুরীর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।
সে নিজেও এগুলো অনেক দিন চোখে দেখে না।
কিন্তু নিজের দুঃখী মেয়েটার এমন আবদার,ফেলাও যায়না।
ঢোঁক গিলে বললো,
– আচ্ছা দেখি। তুই নিজেই নিজের ইচ্ছামত রান্না করে খাবি। আয়।
অত:পর তানিশা আপুর বর, রফিক, অধমের মত কিছু না নিয়েই অনু চৌধুরীর বাসায় আসলো।
আর এদিকে আজমল উদ্দীনকে দিয়ে অনু চৌধুরী কত রকমের বাজারই না করালেন, মেয়ে জামাইকে খাওয়াবে বলে। কিন্তু জামাই এতটা ছ্যাঁচড়া হবে,তা কে জানতো!
আজমল উদ্দীনের গাড়ি হাঁকিয়েই রাজকীয় জামাইয়ের পদার্পণ হয়েছে।
ব্যাপারটা কতটা বেমানান, শ্বশুর সমতুল্য আজমল উদ্দীন গাড়ি চালাচ্ছেন আর তার সৎ মেয়ের জামাই, পায়ের উপর পা তুলে রাজকীয় ভঙ্গিমায় আসছে।
আজমল উদ্দীনের ও রফিককে বেশি একটা ভালো লাগেনি।
তার মতে,তানিশার মত এত সুন্দর,ফুটফুটে একটা মেয়ে বিয়ে করবে রাজপুত্রের মত কোনো ছেলেকে।
মেয়েটার বাপের ও তো কাড়ি কাড়ি টাকা।
সে কিনা বিয়ে করেছে এই অসভ্য,কুলাঙ্গারকে!
কি যে রুচি…
কথাটা অনু চৌধুরীর কানে তুলতেই অনু চোখ রাঙিয়ে তাকালো আর মিনমিন করে বললো,
– এই একই ভুল তো আমিও করছি। কাড়ি কাড়ি টাকা, সম্পত্তি পালাইয়া তোমার চক্করে পইড়্যা সব হারাইছি। মেয়েও আমার পথ ধরছে এক্কেবারে।
জীবনডা এক্কেবারেই নিষ্ঠুর!
মেয়ে জামাইয়ের আদর-আপ্যায়ন অনু চৌধুরী তার সাধ্যমতই করলেন।
মেয়ের সাথে বনিবনার বিষয়টা নিয়ে জামাইকে বোঝালেন।
কিন্তু জামাই কেমন যেন অমনোযোগী।
চোখ টকটকে লাল। তাকানোই যায়না তার দিকে।
অনু চৌধুরী শুধায় একটা, সে শুনে আরেকটা, উত্তর দেয় ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
নেশা করে আসছে এই ছেলে। সারারাত মনে হয় সস্তা গাঁজা, ভদকা খেয়ে সকালে তড়িঘড়ি করে শাশুড়ির কাছে চলে এসেছে।
এই ছেলেকে তার স্বামী,রেজা চৌধুরী মরে গেলেও মেনে নিবেন না। তাই একে আগে মানুষ করতে হবে। এর আগে রেজা চৌধুরীর সামনে নেওয়া যাবেনা। নয়তো মেনে নেওয়া তো দূর, ঘরের ত্রিসীমানাতেও জায়গা দিবেনা।
★
রিমা খালা নেই।
আজকে নয় দিন খালার কোনো খোঁজ খবর নেই। খালার ফোন নষ্ট,ফোন চার্জে দিয়ে কথা বলতে হয়। এমনিতে বন্ধ হয়েই থাকে। আব্বু একটা ফোন কিনে দিতে চেয়েছিলো আমার জোরাজোরিতে।
কিন্তু খালার খুবই আত্মসম্মানবোধ।
সে কিছুতেই নিবে না।
দাদি এখন স্বাভাবিক।
বাসায় কয়েকদিন এসে থেকেও গেছে।
ফোনেও কথা বলে আব্বুর সাথে।
কিন্তু বাসায় এসে থেকে যাচ্ছেনা,কারণ তার কথা এখনো রাখেনি তার ছেলে।
আব্বু প্রতিদিনের ন্যায় আজ ও কাজে চলে গেছে।
আজ শুক্রবার, তবুও সে কাজে গেছে।
নতুন ব্যবসা শুরু করেছে।
ভালো ফিডব্যাক পাওয়া যাচ্ছে।
ব্যাংক থেকে আড়াই লাখ টাকা উঠিয়ে এনেছে কিছুদিন আগে।
অল্প অল্প করে নিচ্ছে আর ব্যবসার উন্নতি করছে। একসাথেই তুলে এনেছে কারণ কখন কত লাগতে পারে তার নিশ্চয়তা নেই। ওদিকে কাপড়ের ব্যবসাটাও উঠে দাঁড়িয়েছে। ভালো ভালো কিছু কাপড় ও দোকানে তুলতে হবে।
সব মিলিয়ে এখন টাকা হাতে থাকা ভীষণ জরুরি।
তাছাড়া ধোঁকা খাওয়ার পর থেকে আব্বুর অন্যরকম চিন্তাধারা জন্মেছে। টাকা বেশিদিন ব্যাংকে রাখতেও তার ভয় হয়,ভালো লাগেনা,রাতে ঘুম কম হয়।
তাছাড়া ব্যাংকের প্রিভিয়াস রেকর্ড ও ভালো না।
তার এখন বড় বড় কাজ-কারবারের সাথে শামিল হতে হয়। তাই কোনোভাবে টাকার হেরফের হলেই বহুত বড় লোকসান হয়ে যাবে।
দুপুরের দিকে আমি বারান্দায় বসে বসে বিস্কুট খাচ্ছিলাম আর গুনগুন করে গান গাচ্ছিলাম। আচমকা দেখলাম রিকশা এসে থেমেছে আমাদের গেইটের সামনে। ওটা কাকে দেখলাম আমি??
তানিশা আপু না!
আমি তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়ালাম।
হাতের বাটি পড়ে গেছে হাত থেকে।
আমার শরীর কাঁপছে।
বিদ্যুৎের গতিতে দরজা খুলতে গেলাম।
দরজা খুলে যা দেখলাম,
তা চোখে… দেখে বিশ্বাস করার মত নয়!
আমার বুক ধড়ফড়ানি বেড়ে গেলো।
চোখ কঁচলে আবার দেখার চেষ্টা করলাম।
আমি যা দেখছি, তা কি সত্য??
(চলবে)