রাকা (২৯)

0
768

রাকা (২৯)

রিমা খালার ভাই,রিপন সাহেব, তাকে নিউ মার্কেটের প্রথম গেইটের সামনে এনে, সবার সামনে খুব বাজেভাবে অপমান করছিলো।
খালা অবাক হচ্ছিলো এতটা বিরুদ্ধাচরণ দেখে।
সে ক্রুদ্ধ গলায় বলছে,
– রিমা শোন, আজকের পর থেকে তুই আর আমার বাসায় আসবি না। আমার বাসায় তোর আর কোনো জায়গা নাই। তুই তোর ব্যবস্থা করে নিবি। কিভাবে কী করবি আমি জানিনা। জানতেও চাইনা। আমি অনেকবার বুঝাইছি,ছাঁড় দিছি। আর না।

খালা হাত জোর করে কপাল কুঁচকে বললো,
– কি বলেন এসব ভাই? আপনার বাসা মানে কি শুধু আপনারই বাসা? আর এই বাসা তো আমার ও। কারণ এইটা আমার আব্বার বাসা।

– হ। আব্বার। আব্বার বাসা মানে আমার বাসা। তোর না। তোর বাসা হবে তোর হাসবেন্ডেরটা। কিন্তু তোর তো হাজবেন্ড ও নাই। এরপরেও তোর একটু লজ্জ্বা হয়না রে? তুই ব্যাটা নিয়া ঘুরোস রাইতের বেলায়? আরে তোর মত মেয়ে-ছেলে বাসায় রাখলেও সমস্যা। আমার বাচ্চাকাচ্চা আছে,এদের তো ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে তোর সংস্পর্শে থাকলে। কী শিখবে তোর মত ফুফির কাছ থেকে? কিছু শেখার আছে আদৌ?

– ভাই, আমি তো ইজমা আর কাঁকনকে নিয়মিত পড়াই। শিখাইনা কে বললো? আর ব্যাটা নিয়ে ঘুরি মানে? রেজা ভাই তো আমাদের আত্মীয়ই। আপনি সবসময় এত রাগেন কেন তার কাছে আসলে?
এত বেশি রাগার কারণটা আমি বুঝিনা ভাই। রাকাসহই আসছিলাম,ওর জন্য কেনাকাটা করার জন্যই মূলত আসছিলাম। কিন্তু..

কথা শেষ না হতেই রিপন সাহেব বলে উঠলেন,
– কিন্তু রাকা থাকলে তো তোমাদের নষ্টিপষ্টি
করতে অসুবিধা হবে,তাই ওরে রাইখ্যা আর ঝামেলা বাড়াসনাই। তাইনারে?

– ভাই! আপনি এইভাবে ক্যান কথা বলতেছেন! আচ্ছা আপনি চলেন। বাসায় চলেন এখনি, আমিও যাই, মা কি সিদ্ধান্ত দেয় শুনি।

– কার বাসায় যাবি? আমার বাসায় তো তোর আর জায়গা হবে না। তুই তোরটা বুঝে নে। আমি আসলাম। আর আমারে আর তুই ভাই বলে ডাকবি না। তুই নষ্ট হয়ে গেছোস,নষ্টা মেয়ে। তুই যে আমার বোন, এইটাও আমার মানতে কষ্ট লাগে।

– ভাই, আপনার পায়ে পড়ি, এগুলা এইভাবে এইখানে এত জোরে জোরে বইল্যেন না, লোকজন জড়ো হইতেছে,সবাই শুনতেছে! আমি এখন কই থাকবো তাইলে বলেন?

– কই থাকবি মানে? যা ওরে নিয়া ওর বাসায় যা। একজন তো জুটাইছোস ই।
আর লোকজনের শোনা উচিত তো এসব। তুই যে কত খারাপ একটা মহিলা ওইটা সবার জানা উচিত।
বলে সে উদ্ভ্রান্তের মত লোকজন ডেকে এনে এনে নিজের বানানো কাহিনী বলতে লাগলো।
খালা তখন নিরুপায় হয়ে পায়ে ধরে বললো,
– ভাই দোহাই লাগে। বন্ধ করেন। আপনি বাসায় চলেন।
– বাসায় তো তোরে আমি জায়গা দিমুনা।
– অল্প কিছু দিন রাখেন। আমি জব পাইছি। কিছুদিন সময় দেন। আমি নিজের খরচ নিজেই দিতে পারবো। শুধু বাসায় থাকতে দিলেই হবে।

– কোনো দরকার নাই। এরপরে তো আর চিনবিই না। এমনেও যথেষ্ট জ্বালাইছোস তুই। কত বছর অন্ন ধ্বংস করতেছোস তুই বল তো?বিয়ে শাদী ও তো দিতে পারিনা,কেউ আসেনা। এখন সেই চেষ্টা ও বৃথা,তুই রেজার বাসায় আসা-যাওয়া করোস,ওইখানে আবার থাকোস ও।

– আম্মাও তো চায়। আম্মায় বলাতেই তো গেলাম।

– ওই মহিলাই তো সব নষ্টের গোড়া। তার জন্যই তো আজ এই অবস্থা তোর। তার আস্কারা পাইয়াই তুই এখন উড়াল দিচ্ছিস এই বয়সে।
ওই আম্মা কী বোঝে? তার বয়স কত? ওই কি বুঝে বল? রেজার বউ পালাইছে, মেয়েও পালাইছে। তুই জানোস? তার উপর সে নিজেও মানুষ ভালো না। ভালো হইলে কি নিজের বউ, বেটিরে ধইর‍্যা রাখতে পারতো না? পারছে? নিশ্চয়ই তার কোনো গুরুতর সমস্যা আছে। যার জন্য বউ,মেয়ে পর পর পালাইতে বাধ্য হয়।

– আপনি বাসায় চলেন। ওখানে গিয়ে কথা হবে।

– না। আমি আমার বাসায় তোরে আর জায়গা দিবোনা।কোনোভাবেই না।
খালা এই পর্যায়ে এসে পা ধরে যখন আবার বলছিলো, ভাই আপনি আমারে জায়গা না দিলে আমি কই গিয়া উঠমু? কই থাকমু ভাই? আমার আর কে আছে কন?
তখনই লোক জড়ো হতে শুরু করলো আবার। কিন্তু তার স্বার্থপর, কঠিন মনের সেই ভাই তবুও শোনেনি তার কথা,তার মিনতি।
বাসে উঠে গেলো তারা। মিরপুরে বাসা। খালাও বাসে উঠতে চাইলো কিন্তু তার ভাই তাকে উঠার চান্স দিলো না,চলে গেলো। তাই নিরুপায় হয়ে সে আব্বুকে খুঁজে বের করে আবার আমাদের বাসায় এসেছে।

বাসায় এসে কাউকেই কিছু বুঝতে দিচ্ছেনা।
আমি খেয়াল করলাম।
তার মন খারাপ এটা সামান্য বুঝেও অতটা গুরুত্ব দিলাম না।
সে চুপচাপ গিয়ে চা বসালো।
আব্বু আর আমি খাবো দুধ চা।
আপন স্যারের ঠান্ডা লাগছে তাই তার জন্য বানানো হচ্ছে মশলা চা। আর খালা তো রাতে চা খায় ই না।


আব্বু ফোন চেক করে থ হয়ে আছে।
অনু চৌধুরী ফোন দিয়েছিলো!
এবং সেটা রিসিভ ও করা হয়েছিলো দেখাচ্ছে। আব্বু বারান্দায় গিয়ে ব্যাক করতেই কল রিসিভ হলো।
– হ্যাঁ অনু, ডিভোর্স পেপারে সাইন করছো?
– না।
– কেন??
– তার আগে বলেন কোন জায়গায় গেছিলেন। মাইয়্যাছেলের কন্ঠ আসে আজকাল আপনের ফোন থেইক্যা। ব্যাপার কী? কই যান?
– ব্যাপার যাই হোক, তোমার চিন্তার বিষয় না সেসব।
– আসলেই? তো বলা না কওয়া না, ডিভোর্স পেপার পাঠাইয়া দিলেন হঠাৎ!!

– আশ্চর্য! এখানে আর বলা কওয়ার কী আছে? অনেক আগেই তো করে ফেলা উচিত ছিলো! এখন এত কথা বলার ইচ্ছা নাই,সব কমপ্লিট কিনা বলো।

সে গলা নরম করে জিজ্ঞেস করলো,
– আচ্ছা,আপনি দেখা করতে পারবেন একবার?
– মানে! কেন? আবার কি প্ল্যান তোমার?
– আরেনা! আমার আবার কিসের প্ল্যান! আপনি আসবেন কিনা বলেন।
– না। তুমি আমাকে আগামীকালের মধ্যেই পেপার পাঠিয়ে দিবে।
– আপনি আমার ঠিকানা জানলেন কিভাবে?
– লোকেশন ট্রেস করে। মোবাইল নাম্বার দিয়ে। তুমি বুঝবা না। যাক, আগামীকাল থেকে ইনশাল্লাহ্ তোমার আর আমার জীবনের সব কিছুই শেষ হয়ে যাবে।
– শুনেন না, আপনি আসেন না একটু! দেখা করি।
– বাচ্চাদের মত আবদার করো না। আর আবদার করেও লাভ হবেনা। আমি তোমার আর কোনো আবদার রাখতেই বাধ্য নই।
– আমি তো বাচ্চাই। মনে নাই প্রথম রাতে আমি বেশি হাসায় কি বলছিলেন?
– আমি কিছুই মনে রাখতে চাইনা। পেপারে সাইন হয়ে গেলে বলো,লোক পাঠাবো।
– আমার শেষ আবদারটা রাখেন না। দেখা করবো।
– কেন? কী কাজ?
– এমনি। শত হলেও আপনি আমার দুই মেয়ের বাপ তো। ডিভোর্সের আগে একটাবার সামনাসামনি দেখতে চাই। এই..
– সরি অনু।
– আপনার পায়ে পড়ি তানিশার বাপ! আসেন না!
– আমি ফোন রাখছি। আল্লাহ হাফেজ।

সে তখনি হুড়মুড়িয়ে বলে ফেললো,
– আমি আপনার ডিভোর্স পেপার ছিঁইড়্যা ফালায়ে দিছি।
– হোয়াট!
– হ্যাঁ,ছিঁইড়্যা ফালায়ে দিছি।
– সমস্যা কী?
– আমি আপনার সাথে দেখা না করা অবধি ডিভোর্স দিমুনা।
– দেখা করে কী এমন করার ইচ্ছা তোমার? আসলে আমি এখন আর চাইলেও তোমাকে বিশ্বাস করতে পারি না।
– একবার দেখবো, একটু কথা হবে.. এই..
আপনার কাছে এই আমার শেষ চাওয়া! দোহাই লাগে আপনার! আমার কথাটা শোনেন।
আব্বু কিছুক্ষন ভেবে বললো,
– আচ্ছা ঠিক আছে। আমি দেখছি কি করা যায়।

ফোন কেটে ঘরে আসতেই দেখলো আপন স্যার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।
স্যার জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতেই তাকিয়ে আছে তার দিকে।
আব্বু অপ্রস্তুত হয়ে বললো,
– কি একটা সমস্যায় পড়ছি বলো তো… তুমি এখানে কেন? চা দেয়নি এখনো?
– হ্যাঁ। চা দিয়েছে,একসাথে খাবো বলেই তো আপনাকে ডাকতে আসছিলাম। এসে দেখি আপনি ব্যস্ত..
– ও আচ্ছা। চলো তাহলে।
– চাচা,
– হুম?

স্যার গলা ভারী করে বললো,
– আপনি কি শেয়ার করতে ইচ্ছুক? আমি জানি এটা অন্যায় তবে আমি শুনে ফেলছি অনেকটাই। আপনি আমার অপরাধ ক্ষমা করবেন। তবে আপনি তো অসুস্থ, আপনার একা কোনো দুশ্চিন্তায় যাওয়া ঠিক না। খুব খারাপ ফল হবে এর। আপনি চাইলে নির্দ্বিধায় আমার সাথে সব শেয়ার করতে পারেন। যদি আমাকে বিশ্বাস হয় তো..

– না না। কি বলো আপন! বিশ্বাস করবো না কেন! আসলে, অনু ফোন দিছিলো..

– আচ্ছা.. তারপর?

– ডিভোর্স পেপার পাঠাইছিলাম। তাই ভাবলাম এই বিশারদ কিছু বলতেই হয়তো ফোন দিয়েছিলো, তাই ব্যাক করছিলাম।

– হ্যাঁ। এটাই হওয়ার কথা। সমস্যা কী হয়েছে?

– সমস্যা হলো,ও ডিভোর্স পেপার ছিঁড়ে ফেলছে।

– কি!! এটা কি বললেন! যাকে এত বুঝিয়ে শুনিয়ে, ধরে বেঁধেও রাখা গেলো না। তাকে এখন ডিভোর্স পেপার পাঠানো হয়েছে, সে ছিঁড়ে দিলো! কেন?

– সেটাও আরেক সমস্যা। সে একবার দেখা করতে চায় ডিভোর্স দেওয়ার আগে।

আপন স্যার আর ভদ্র থাকতে পারছে না। যদি ও সে খুবই নিরিবিলি এবং ভদ্র স্বভাবেরই একজন মানুষ।

সে গলা খাকি দিয়ে বললো,
– চাচা, কিছু মনে করবেন না, মুখ খারাপ
করতে ইচ্ছা হচ্ছে, তার কি এখন আবার আজমলকে ফেলে আপনার জন্য দরদ, ভালোবাসা উতলায়ে উঠছে? নাকি আজমল ড্রাইভার আর আপনি একজন সফল ব্যবসায়ী, তাই এখন আবার তার চোখ ঘুরছে?

আব্বু কিছু না বলে একপাশে চোখ স্থির করে তাকিয়ে রইলো।

স্যার আবার কাছে এসে তীব্রভাবে বললো,
– চাচা, এটা আরেকটা ফাঁদ! আপনি সাবধান হন এবার চাচা। এইবার আপনি আর বোকামি করবেন না দয়া করে। আপনার বড় মেয়েটার লাইফ হেল হয়ে গেছে শুধুমাত্র তার জন্য। সেই গাইড লাইন দিয়ে মেয়েটাকে বিপথে চালিত করছে দেখেই আজ আপনার বড় মেয়েটাকে বস্তিতে, একটা মাতালের সাথে ঘর করতে হচ্ছে। ও কি বুঝে?
সবেমাত্র টিনেজের স্টেজ পার করা একটা বাচ্চা মেয়ে কতটুকুই বা বোঝে? আমি জানি আপনি তাকে এখনো ভালোবাসেন। তবে আপনার কাছে আমার অনুরোধ, নিজের জীবন, আচ্ছা তাও বাদ দিলাম, নিজের দুই মেয়ের দিকে তাকিয়ে, তানিশার এই পরিণতির কথা ভেবে হলেও আপনি উনাকে ভুলে যান,ভুলে যাওয়ার চেষ্টা অন্তত করেন। ওই মহিলা ভালো না চাচা। সে আবার আপনার একটা ক্ষতি করতে চায়,এজন্যই দেখা করতে চাইছে। আমি নিশ্চিত।

আব্বু চোখ তুলে বললো,
– তুমি তাহলে ফাইনালি কী বলো? দেখা করবো না?

ততক্ষনে খালা আর আমিও এসে হাজির।
খালা এতক্ষনে কত প্রশ্ন, কত তোলপাড় করতো কিন্তু আজ তার মুখ রা শব্দটিও কাটে না।

সে তো নিজের জীবন নিয়ে চিন্তা করেই কূল-কিনারা পাচ্ছে না।
সেখানে আমাদের এইসব তো…
খালার এখন মাথার উপরে ছাদ নেই।
এই কথা সে কিভাবে আব্বুকে বলবে, কিভাবে নিজের ভাইকে ম্যানেজ করতে পারবে, তার মা তাকে সাপোর্ট দিবে কিনা আগামীকাল বাসায় গেলে ইত্যাদি সব চিন্তার ভীড়ে সে আব্বুর আর আপন স্যারের কোনো কথা শুনলোই না।
অথচ সব কথাই তার সামনে হলো।
আমি সব শুনলাম আড়ালে বসে বসে।
কারণ বড়দের আলোচনার মধ্যে ছোটদের থাকা অনুচিত। মহা-অন্যায়।

আপন স্যারের কথায় আব্বু অত:পর সায় দিলো।
আব্বু স্পষ্ট ভাষায় বললো,
– হ্যাঁ তুমি ঠিকই বলছো। তুমি চিন্তা কইরো না। আমি কায়সারের সাথে আলাপ আলোচনা করে অতি শিগগির ব্যাপারটা এনসিউর করে ফেলবো।


আমরা সবাই চা, বিস্কুট পিঠা খেলাম।
শুধু একজন কিছুই মুখে তুললো না।
উদাস চোখে দৃষ্টি স্থির করে শুকনো মুখ করে বসে আছে।
কেউ কারো দিকে তাকানোর স্কোপ নেই।
আপন স্যার অসুস্থ। তার সাইনুসাইটিস,
পলিপের সমস্যা আছে, তাই ঠান্ডা লাগলেই গুরুতর হয়ে যায়।
সে কোনোমতে মশলা চা খেয়েই ঔষধ খেয়ে শুয়ে পড়েছে।
ঘুমিয়েছে ভেবে তাকে আর কেউ ডিস্টার্ব করলো না।

আব্বু চলে গেলো আব্বুর রুমে আর খালা শুয়ে পড়লো আমার রুমে।
আমাকে আপন স্যার ডেকে নিলো তার মাথা টিপে দেওয়ার জন্য।
আমি বাম লাগিয়ে স্যারের মাথা টিপে দিচ্ছিলাম। স্যার ঘুমিয়ে গেলেন অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই।
এমন সময় ফোন এলো স্যারের। স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে মেহেদী কলিং। সে স্যারের ছোট ভাই। স্যারের এই অবস্থা, স্যার কথা বলতে পারবে না,কেটে দেওয়া উচিত; এই ভেবে আমি ফোনে স্পর্শ করতেই ওটা অফ হয়ে গেলো। আবার এলো সাথে সাথেই আমি বাটন চেপে সাউন্ড কমিয়ে দিলাম। পরের বারের ফোন আসতেই ওটা টেবিল কাঁপিয়ে ভাইব্রেশন দেওয়া আরম্ভ করলো।

স্যারের পাতলা ঘুম, সে উঠে গেলো।
মোবাইল চেক করে বুঝতে পেরে আমাকে বকা দিলো বিষমভাবে। কড়া গলায় বললো,
– না বলে অন্যের ফোনে বা কোনো কিছুতে হাত দেওয়া বেয়াদবি। এইটা জানো না তুমি? ফোন হাতে নিয়ে কয়েকবার লক খোলার ও চেষ্টা করছো দেখলাম! হোয়াট ইজ দিস রাকা? কি? তোমার স্যার আমি। কি আমি?
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম, স্যার।
স্যার কঠিন গলায় বললো,
– এটা খুব খারাপ করছো তুমি। এনিওয়েজ, এখান থেকে চলে যাও এখন। লিভ দিস রুম।

তৎক্ষণাৎ উঠে গেলাম তার পাশ থেকে।
ঘুমাতে চলে আসলাম।
খুব কষ্ট লাগলো আজ, স্যারের এই আচরণ দেখে। সামান্য ফোনই তো। একটু হাতে নিয়ে দেখলে ও যে এত বড় অপরাধ হয়ে যায়,জানতাম না। জানলে তো ওই লোকের ওই দামী ফোন নিয়ে অত নাড়াচাড়া করতাম না।

রুমে এসে দেখলাম খালা পাগলের মত কান্নাকাটি করছে। তার সাথে শুধুশুধু কিছুক্ষন বকবক করলাম,কেন কাঁদছে জানতে চাইলাম, কিন্তু কোনো লাভ হলো না। সে নীরবে কেঁদেই যাচ্ছে। কোনো উত্তরই মিলছে না।

কিছুক্ষন পর স্যার হঠাৎ করে এসে খালাকে ডেকে নিয়ে কি যেন বলে গেলো। খালা আসার পর জিজ্ঞেস করতেই শুনলাম, স্যার বাড়ি চলে গেছে। জিজ্ঞেস করলাম, কেন? খালা নাক টেনে বললো, স্যারের মা খুব অসুস্থ। জ্বর আর শুধু বমি করতেছে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে কিনা তা নিয়ে সবাই দ্বিধান্বিত। তাই স্যারকে এক্ষুনি বাড়িতে যেতে হবে।

আমি কথাটা শুনতেই তাড়াতাড়ি রুমের বাইরে এসে আশেপাশে দেখতে লাগলাম।
স্যার চলে গেছে!
সে তো অসুস্থ ছিলো খুব! কিভাবে যাবে!
বারান্দায় এসে গ্রিলে হাত রেখে অপেক্ষা করতে লাগলাম, স্যারকে একবার দেখার জন্য।
ভাগ্য ভালো ছিলো আমার।

“সেদিন শেষ দেখা হয়েছিলো আমাদের।”

স্যার কাঁধে ব্যাগ চেপে হনহনিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।
আমি বারান্দায় খালি পায়ে দাঁড়িয়ে আছি।
সে বাসার সামনেই একটা অটো রিকশা পেয়ে গেছিলো।
রিকশায় উঠে একবার বাসার দিকে তাকিয়েছিলো।
অন্ধকারে স্পষ্ট বুঝলাম না কোনদিকে তাকিয়েছিলো।
কে জানে,হয়তো আমার দিকেই।
আমিও নিজেকে আড়াল করিনি সেদিন। ভাবলাম আমিই যখন স্পষ্ট করে দেখছি না, সেও দেখবেনা।

খুব খুশি হলাম তখন,
যখন দেখলাম স্যার হাত উচিয়ে টাটা দেওয়া আরম্ভ করলো। বুঝলাম, স্যার আমাকে দেখেছে! তাই ইশারায় বিদায় জানাচ্ছে হাত উচিয়ে। রিকশাটার অস্তিত্ব মিশে না যাওয়া অবধি দাঁড়িয়ে রইলাম ওভাবেই। তারপর ঘরে ফিরে আসলাম। এসে দেখলাম, খালা ঘুমাচ্ছে।
কিন্তু আব্বুর রুমে লাইট জ্বলছে।

আব্বুর রুমে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কী করো, সে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো প্রশ্ন শুনে, যেন আমার কথা সে বুঝেই নি।
তারপর জিজ্ঞেস করলো,
– তোমার রিমা খালামণির খুব মন খারাপ। দেখছো?
– হুম।
– কেন? কিছু বলছে?
– না।
– তোমার ও কি মন খারাপ নাকি?
– না।
– আচ্ছা। যাও তোমার রিমা খালামণিকে ডেকে আনো। বলো আমি ডাকছি।
– খালামণি ঘুমায়।
– তবুও ডেকে তোলো। খুব জরুরি কথা আছে।
আমি খালাকে উঠাতে চলে এলাম।
জরুরি কথার বিষয়বস্তু আগে জানতে পারলে হয়তো উঠাতাম না।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here