গল্পঃডাবর,পর্বঃতিন

0
1651

গল্পঃডাবর,পর্বঃতিন
লেখাঃMd Tarajul Islam(Shihab)

ইরা ফ্যানের দিকে তাকিয়ে দেখে সাপের মতো অনেকগুলো সুড় বিশিষ্ট এক ভয়ংকর প্রাণী আটকে আছে।ইরা ভয় পেয়ে উঠে যাবে তার আগেই সেই প্রাণী ইরার ওপর ঝাপিয়ে পড়লো।তার সাথে থাকা সুড় দিয়ে ইরার হাত পা পেট শক্ত ভাবে বিছানার সাথে চেপে ধরলো।এরপর অদ্ভুত নীল চোখ আলা সেই প্রানী ইরার মুখের সামনে মুখ আনলো।ওর মুখ থেকে ঝরে পড়া লালা ইরার বুকের কাছে পড়তেই জলন্ত শুরু হয়ে গেলো।ইরা যন্ত্রণায় চিৎকার করতে শুরু করলো।তখন সে বলল
->তুই যতই এই সন্তানকে বাঁচানোর চেষ্টা কর না কেন?তুই ওকে কখনোই বাঁচাতে পারবিনা।
এমন সময় ইরফান রুমে এসে এরকম অবস্থা দেখে আৎকে উঠলো।সে সময় ইরফানের মা রাহেলা এসে তিনিও চমকে গেলেন।ইরফান এখন ইরাকে কি করে বাঁচাবে মাথায় আসছে না।এদিকে ইরা ওর পেটে খুব চাপ অনুভব করছে।
ইরফান অবস্থা বেগতিক দেখে কাঠের চেয়ার তুলে ইরার ওপরে থাকা প্রাণীকে জোরে আঘাত করলো।আঘাত করার কারনে সেই প্রানী ইরাকে সহ মাটিতে পড়ে যাচ্ছিলো কারনে তার সুড় ইরার হাত পা ধরেছিলো কিন্তু তার আগে ইরফান ইরার হাত টেনে ধরলো।আর লাথি দিয়ে সেটির থেকে ইরাকে ছাড়িয়ে নিলো।ইরফান ইরাকে নিয়ে বিছানা থেকে তাড়াতাড়ি নেমে এলো।ওর বাইরে আসতে যাবে তার আগে ওই প্রাণী তার সুড় দিয়ে ইরফানের হাত টেনে ধরলো।সে ক্রমশ ইরফানকে নিজের দিকে টানছে।এমন সময় এক অদৃশ্য শক্তি ওই প্রাণীটিকে এক ঝটকা মারলো।আর তখন সে ইরফানকে ছেড়ে দিলো আর মূহুর্তে অদৃশ্য হয়ে গেলো।

ইরফান মাটিতে বসে আছে।ইরা দৌড়ে এসে ওর কাছে বসে বলল
->তুমি ঠিক আছো?
ইরফান ইরার দিকে তাকিয়ে দেখলো ওর চোখে পানি টলমল করছে।সেই সাথে গলার দিকে চোখ পড়তেই চমকে উঠলো।ইরার ফর্সা গলায় ঝলসে কেমন লাল মাংস বেরিয়ে গেছে।ইরফান বলল
->এটা কি করে হলো ইরা?
ইরা যেন ওর গলার ওই ব্যথা ভুলেই গিয়েছিলো।ইরা তখন ইরফানকে বলল
->ওই প্রাণীটির লালা আমার গলায় পড়ার কারনে বোধ হয় এমন হয়েছে।
ইরফান আর কিছু না বলে তাড়াতাড়ি করে ইরাকে বিছানায় বসিয়ে কিছু পুড়ে যাওয়ার মলম বাসায় ছিলো সেটা বের করে ইরার ওই জায়গায় লাগিয়ে দিলো।ইরা বলল
->আমাদের সাথে এমন হচ্ছে কেন বলতে পারো?
ইরফান বুঝতেই পারছে কেন এমন হচ্ছে?ইরফান ওর মায়ের দিকে তাকালো।ওর মা অসহায় ভাবে ইরফানের দিকে তাকিয়ে আছে।ইরফানকে চুপ থাকতে দেখে ইরা বলল
->কি হলো চুপ করে আছো কেন?
তখন রাহেলা এসে ইরার পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ইরফানের দিকে তাকিয়ে বলল
->ইরফান তুই এক কাজ কর বউমাকে কয়েকদিনের জন্য বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দে।কেননা বুঝতেই তো পারছিস আমাদের বাড়িতে এক অশুভ ছায়া পড়েছে।
ইরফান তখন মাথা ঝাকিয়ে বলল
->হুম আমিও তাই ভাবছি।
তখন ইরা বলল
->কিন্তু আমি তোমাদের ছেড়ে যাবো না।
->চিন্তা করো না ইরা আমি প্রতিদিন তোমার কাছে যাবো কেমন?
রাহেলা বলল
->হ্যাঁ ইরফান প্রতিদিন যাবে আর আমিও তো যাবো।আমি চাই না আমার নাতির কোন ক্ষতি হোক।
ইরা ওদের কথায় আর দ্বিমত পোষণ করলো না।
পরেরদিন সকালে ইরফান ইরাকে ওর বাবার বাসায় রেখে অফিস না গিয়ে বাসায় ফিরে আসলো।ইরফান বাসায় এসে ওর মাকে জিজ্ঞেস করলো
->মা ওই কলসটা কোথায় আছে আমায় একটু দেখাও তো।
রাহেলা তখন কলস দেখাতে রাজি হলো না।কিন্তু ইরফানের অনেক জোরাজুরিতে রাজি না হয়ে পারলেন না।রাহেলা ওর রুমে নিয়ে গেলেন।সেখানে একটা আলমারি আছে।তিনি আলমারির দরজা খুললেন তখন একটা গুপ্ত দরজা বের হলো।সে দরজা খুলতেই সিড়ি দেখা গেলো যেটা নিচের দিকে চলে গেছে।রাহেলা ইরফানকে নিয়ে সেই সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসলেন।সেখানে একটা কলস রাখা।রাহেলা বেগম ইরফানকে এটা বিশ্বাস করানোর জন্য একের পর এক টাকার বান্ডিল কলস থেকে নামাতে লাগলেন।মুহুর্তের মধ্যে সেখানে টাকার বান্ডিল দ্বারা উচু হয়ে উঠলো।কিন্তু কলস যেমন তেমনই আছে।এ যেন এক অবিশ্বাস্য ব্যাপার।ইরফান কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না এটা কি করে সম্ভব?ইরফানের চোখ ছানাবড়া।এতগুলো টাকা দেখে সে যেন অন্ধ হয়ে গেছে কিন্তু তখনই ইরার কথা মনে হয়ে টাকার থেকে চোখ সরিয়ে নিলো।কারন সে এই টাকার প্রতি লোভ করে ইরা ওর জীবন থেকে হারিয়ে যাক সেটা সে চায় না।ইরফান ওর মাকে বলল
->মা এই কলস তুমি যেখানে পেয়েছিলে সে জায়গা কি আজও ওই রকমই আছে?
->হ্যাঁ ওই জায়গা এখনো আগের মতোই আছে।
->এই কলস আমি সেখানে রেখে আসবো।
এমন সময় এক গায়েবি ভাবে কেউ বলল
->তাতেও কোনো কাজ হবেনা।কারন একবার এই টাকায় স্পর্শ পড়েছে।এটা আর কেউ গ্রহন করবে না।তোর মা যেটা আমাদের কাছে ওয়াদা করেছে সেটা তোদের দিতেই হবে।
->আমি আমার সন্তানের কোন ক্ষতি হতে দিবোনা।
->যতই চেষ্টা কর না কেন তুই তোর সন্তানকে রক্ষা করতে পারবি না।ও আমাদের প্রাপ্য।আর আমাদের প্রাপ্য না পেলে আমরা সবাইকে মেরে ফেলবো।
->আমিও দেখি তুই কি করতে পারিস।
এই বলে ইরফান আর দেরি না করে বেরিয়ে এলো।রাহেলা ছেলের পিছু পিছু এসে বলল
->বাবা তুই এভাবে মাথা গরম করিস না।দ্যাখ বলছি কি তুই বরং এই বাচ্চাটা দিয়ে দে।
ইরফান অবাক হয়ে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল
->এসব কি বলছো মা?আমি আমার বাচ্চাকে দিয়ে দিবো।ও আমার কতটা প্রিয় তুমি বুঝতে পারছো?
->কিন্তু এছাড়া তো উপায় নেই।
->সমস্যা যেমন আছে সমাধানের পথও আছে।আমি যেমন তোমার কাছে প্রিয় ঠিক আমার সন্তান আমার কাছে প্রিয়।আমি এর শেষ দেখেই ছাড়বো।

ইরফান বাড়ি থেকে বের হয়ে আসার পর ভাবছে।যে করেই হোক কিছু একটা করতে হবে।এভাবে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে কাজ হবে।কিন্তু এই মূহুর্তে ওকে সাহায্য করবে কে?কিছু মাথায় আসছে না।ইরফান অফিস না গিয়ে একটা নদীর ধারে আসলো।যখন ইরফান কোন কিছু নিয়ে চিন্তিত থাকতো বা ওর মন খারাপ হতো তখন সে নদীর ধারে এসে বসে থাকতো।
ইরফান ওর গাড়ি এক সাইডে রেখে গাড়ির ওপর উঠে বসলো।আকাশ মেঘ করে আছে।সাথে হালকা মৃদুমন্দ বাতাস বইসে।নদীর পানি কুল কুল শব্দে বয়ে চলেছে।এই নদীর পাড়ে সে ইরাকে নিয়ে কত সময় কাটিয়েছে,এসব ভেবে আনমনে হেসে উঠলো।মূহুর্তে মনে একটা ফ্রেশ ভাব এসে গেলো।এমন সময় ফোন বেজে উঠলো।ইরফান ফোন হাতে নিয়ে দেখলো ইরা কল করেছে।ইরফান ফোন রিসিভ করে ইরার সাথে কথা বলছে।ইরফান কথা বলার এক পর্যায়ে খেয়াল করলো নদীর ধারে এক লোক দাড়িয়ে থেকে নদীতে কি যেন ফেলছে।লোকটার চুল বিশাল বড় বড়।কাপড় গুলো কেমন ছেড়া ফাঁটা।দেখে পাগল বলেই মনে হচ্ছে।ইরফান সেদিক খেয়াল না করে ইরার সাথে ফোনে কথা বলতে লাগলো।লোকটি ইরফানের দিকে এগিয়ে আসছে।হঠাৎ সে ইরফানের সামনে এসে বলল
->নিজের সন্তানকে বাঁচাতে চাস?
কথাটি শুনে ইরফান চমকে উঠলো।সে ইরার ফোন কেটে দিয়ে বলল
->কি বললেন আপনি?
->নিজের সন্তানকে বাঁচাতে চাস?
ইরফান অবাক হয়ে বলল
->হুম চাই কিন্তু কে আপনি আর আপনি এসব জানলেন কি করে?
->সেটা তোর না জানলেও চলবে।
->সত্যি আপনি আমায় বাঁচাতে পারবেন?
->হুম সেজন্য আমি এসেছি।তোরা দুইদল পিশাচদের হাতে পড়েছিস।একদল তোর মা-বাবার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে টাকা দেয় একটা সন্তানের আশায়।আর তোর মা-বাবা এতে রাজি হয়ে যায় কারন তাদের কাছে তখন টাকা অনেক জরুরি ছিলো।
->হুম বুঝতে পারছি কিন্তু ওরা যেহেতু সন্তান চাইছে তাহলে আবার আমার স্ত্রীর ক্ষতি করতে চাইছে কেন?
->যারা তোর সন্তান চাইছে এরা আলাদা গোত্রের পিশাচ আর যারা ক্ষতি করতে চাইছে এরা আরেক গোত্রের পিশাচ।সন্তান চাওয়া পিশাচ তোর সন্তাকে বলির মাধ্যমে শক্তিশালী হয়ে উঠবে ওদের তুলনায়।তাই ওরা চাইছে না তুই সেই সন্তান ওদের দিয়ে দিস।এজন্য ক্ষতি করার চেষ্টা করছে।আর সন্তান না পেলে ওরা আর একশত বছরেও এই কাজ করতে পারবে না।আর এই সুযোগে অন্য পিশাচ ওদের মেরে ফেলবে।
->বুঝেছি।তাহলে এখন?
তখন সেই লোক ওর প্যান্টের পকেট থেকে আকাশি রংয়ের দুটো তাবিজ বের করে ইরফানের হাতে দিয়ে বলল
->এই তাবিজ দুটো তোর বউয়ের গলায় পড়িয়ে দিবি।তারপর যখন তোর বউয়ের সন্তান ভূমিষ্ঠ হবে তখন একটা তাবিজ খুলে তোর সন্তানের গলায় পড়িয়ে দিবি।সন্তান জন্মের চল্লিশ দিন পর তুই এখানে ওই বাচ্চা আর তোর বউ সহ এসে অপেক্ষা করবি।আমি আসবো।
->আচ্ছা।
->দেরি করিস না তাড়াতাড়ি চলে যা।তোর বউয়ের বিপদ হতে পারে।
ইরফান তাবিজ দুটো নিজের পকেটে রাখতে যাবে তখন হঠাৎ তাবিজ দুটো মাটিতে পড়ে গেলো।ইরফান তাবিজ তুলে সামনে তাকিয়ে দেখলো ওই লোকটি আর নেই।এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো কোথাও তাকে দেখা গেলো না।এত তাড়াতাড়ি সে কোথায় গেলো?

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here