ভৌতিকপ্রেম,পর্বঃ৩,৪
Mahfuza_Monira
পর্বঃ৩
রিনি কে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে মিলি বলে-
– সব ঠিক আছে মিলি?
– হ্যাঁ কেন?
– তোমাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে।
রিনি একটা ছোট্ট দম ফেলে বলে-
– আচ্ছা মিলি,তোমার কি মনে হয়? অদৃশ্য টাইপ কোনো মানুষ থাকতে পারে এই পৃথিবীতে?
মিলি হকচকিয়ে যায় হঠাৎ এমন বেখাপ্পা প্রশ্ন শুনে। নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে –
– এমনটা বলার কারন?
– শুধু এমনি জানতে ইচ্ছে হলো তাই। আচ্ছা বাদ দাও। কফি খাবে? নিয়ে আসবো?
– আমিই আনবোনি। এমনিও আমি বাহিরেই বের হবো এখন।
– কোথায় যাবে?
– তোহার রুমে। একা একা কি করছে কে জানে!
মিলি গায়ে ওড়না টা চাপিয়ে বের হতে নিলেই রিনি বলে-
– শোনো। আই থিংক তুমি না গেলেই ভালো হয়।
ভ্রু কুঁচকে তাকায় মিলি। বলে-
– আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না তোমার কথা টা রিনি।
– আসলে,আমি একটু আগে গিয়েছিলাম ওর রুমে। আমার মনে হয় ও একা থাকতেই পছন্দ করে। উল্টো আমরা গেলে ও হয়তো বিরক্ত ফিল করে। আমার যেটা মনে হলো সেটাই বললাম। বাকিটা তোমার ব্যাপার। তুমি গেলে যাও নয়তো না যাও।
মিলি দরজার কাছে দাঁড়িয়েই ভাবতে থাকে। কিছুক্ষণ ভেবে বলে-
– তোহা হয়তো কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তিত বা আপসেট। নয়তো এভাবে একা এক রুম নিয়ে থাকতো না! আর আমাদের উপস্থিতিতেও বিরক্ত হতো না। আচ্ছা,ওকে একা থাকতে দেই কিছুদিন। ওর মন ভালো হলে ও হয়তো নিজে থেকে এসেই শেয়ার করবে আমাদের।
রিনি ছোট্ট করে বলে-
– তাই যেন হয়।
.
.
৮ টার দিকে রুম থেকে বের হয়ে খাবার হলে চলে যায় তোহা আর লিমন। সেখানে গিয়ে দেখে বাকিরা আগে থেকেই বসে আছে। বিধান তোহাকে এগিয়ে আসতে দেখে বলে-
– তোকে কি ভূতে টূতে ধরেছে?
– কেন?
– কেমন পর পর আচরণ করিস! আগের মত কথা বলিস না,মিশিস না,দূরে দূরে একা একা থাকিস আমাদের থেকে। যেন আমরা তোর ফ্রেন্ডই না!!
মিলিও সায় দেয় বিধানের কথায়। সে বলে-
– হ্যাঁ রে,তোর হয়েছে টা কী বল তো!
তোহা চেয়ারে বসে বলে-
– তোরা যা ভাবছিস ওমন কিছুই না। তোরা ছাড়া আমার আছে কে বল! আসলে একটা বিষয় নিয়ে একটু ডিস্টার্ব আমি! তাই তোদের সাথে সেভাবে জয়েন করতে পারছিনা। বাট প্লিজ এখন সেই কারণ টা জিজ্ঞেস করিস না। সময় হলে আমিই তোদের বলবো।
মিলি হাই টেনে বলে-
– আচ্ছা। নে তাড়াতাড়ি খাবার অর্ডার দে। খুব ঘুম পাচ্ছে আমার।
সবাই তোহার কথা বিশ্বাস করলেও রিনি একদৃষ্টিতে তোহার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর কাছে তোহার কথা কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না। কারন তো একটা আছেই,তবে সেটা কী!?
তোহাকে খেয়ে রুমে আসতে বলে লিমন চলে যায়। শুধু শুধু এখানে বসে সবার গিলার দৃশ্য দেখার কোনো মানেই হয়না!!
.
.
খাওয়ার এক ফাকেই শীষ প্রশ্ন করে
– তাহলে কালকের প্ল্যান কি? কোথায় যাচ্ছি আমরা?
রিনি বলে – লালাখাল।
পরমুহূর্তেই তোহা বলে –
– উঁহু বিছানাকান্দি যাবো আমরা।
সবাই একবার রিনির দিকে আরেকবার তোহার দিকে তাকায়। রিনি মুচকি হেসে বলে-
– ওকে বিছানা কান্দিই যাচ্ছি আমরা তবে।
অস্ফুট হেসে তোহা রিনিকে উদ্দেশ্য করে বলে-
– লালাখাল পরে যাবোনি?
– আচ্ছা। তোমরা যেখানে সবাই যাবে সেখানে আমিও যাবো। আমার পারসোনালি কোনো চয়েজ নেই!
– হুম।
তারপর আবার সবাই খাওয়ায় মনোযোগ দেয়।
.
.
খাওয়া শেষ করে যে যার রুমে চলে যায়।
রুমে যেতেই মিলি একটা থ্রি কোয়াটার প্যান্ট আর টপ পড়ে ঘুমের দেশে পারি জমায়। কিন্তু রিনির ঘুম পায়না। সে সত্যিই ভীষণ চিন্তিত তোহাকে নিয়ে। আফটার অল,তোহা তার কাজিন। কাজিন কম,আপন বোন বেশি। তার জন্য চিন্তা তো হবেই…
রিনি এককাপ কফি নিয়ে এসে বেলকনিতে বসে। রাতের আকাশে চাঁদ নেই,তবে মিটিমিটি করে তারা জ্বলছে। সে দৃশ্য উপভোগ করতে করতেই কফির মগে চুমুক দেয় রিনি।
.
.
.
তোহা বিছানার উপর দু গালে হাত দিয়ে বসে আছে। লিমন কোথাও নেই। কই গেছে,তোহাকে বলেও যায়নি। আজকে আসুক সে,তার একদিন কি তোহার যতদিন লাগে…
প্রায় ৫ মিনিট পর লিমন হুট করে হাজির হয় রুমের ভেতর। তোহা লিমনের দিকে একটুও তাকায় না। লিমন একবার পেছন থেকেই উঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করে তোহার ফেস এক্সপ্রেশন।
কিন্তু সম্পূর্ণ ভাবে দেখা যাচ্ছে না বলে লিমন বলে-
– কয় নাম্বার সংকেত?
তোহা গম্ভীর মুখ করে বলে-
– কিসের কয় নাম্বার সংকেত?
– তোমার রাগের, তোমার রাগ থেকে আমার উপর যে ঘূর্ণিঝড় বয়ে যাবে,সেটার কয় নাম্বার সংকেত?
তোহা লিমন কে অবাক করে দিয়ে এক লাফ দিয়ে বিছানার উপর উঠে দাঁড়ায়। তারপর লিমনের কলার চেঁপে ধরে তাকে বিছানায় ফালিয়ে তার উপর চেঁপে বসে বলে-
– কয় নাম্বার সংকেত বলে মনে হচ্ছে?
– ১০। না না ১১।
– চুউউপ একদম চুউউউউপ। কই গেছিলা?
– একটু হাটাহাটি করতে!
– ভূতদের এত কিসের হাটাহাটি হ?? নাকি আমার থেকেও সুন্দর কাউকে খুঁজতে গেছিলা?
লিমন ঐ অবস্থায়ই হেসে ফেলে। হেসে বলে-
– জামাই ভূত হোক বা মানুষ, মেয়েদের সন্দেহ কোনোদিন যাবে না! আচ্ছা মেয়েরা এত সন্দেহ কেমনে করে বলো তো! জামাই অফিস থেকে দেড়ি করে আসলে, বউ বলে “এত দেড়ি হলো যে! অফিসে বাড়তি কাজ শুরু হয়ে গেছে বুঝি!”
আবার তাড়াতাড়ি আসলে বলে, “কারো সাথে দেখা করার জন্য আগে আগেই ছুটি নিছিলা বুঝি! সে আসেনি,তাই বাসায় চলে আসলা নাকি?”
কোনোদিন একটু সুন্দর স্মেলের পারফিউম দিয়ে বের হলে বলে, “ইদানীং ভালোই ফুস ফুস করে গায়ে ঢালো দেখছি! ঘটনা কী?”
মোট কথা, পুরুষ মানুষ যাই করতে যাক না কেন, বউদের সন্দেহ যাবে না। বাথরুমে দেড়ি হলেও বলবে, বাথরুমের ভেতর এত টাইম লাগলো! ফোন কই তোমার? বাথরুমে নিয়ে গেছিলা? অথচ বেচারার যে লুজ মোশন সেটা আর খেয়াল করে না।
তোহা চুপ করে লিমনের বকবক শুনছিল। তোহাকে চুপ থাকতে দেখে লিমন চুপ হয়ে যায়। মনে মনে ভাবে,”জোশ মে আকে যো মারজি বোল দিয়া। কিন্তু এখন বোধহয় সংকেত ১১ থেকে ডাইরেক্ট ২০ এ চলে যাবে!”
লিমন শুকনো ঢোক গিলে হাসার চেষ্টা করে তোহাকে বলে-
– তবে তুমি একদম অন্যরকম। আমাকে অনেক ভালো বাসে বলেই তো সন্দেহ করো। তাইনা? সন্দেহ করা ভালো, স্বাস্থ্য সুন্দর থাকে!
তোহা কোনো জবাব না দিয়ে লিমনের শরীরের উপর থেকে উঠে যায়। বিছানার এক পাশে বসে থাকে গাল ফুলিয়ে।
লিমন পেছন থেকে তোহাকে জড়িয়ে ধরে বলে-
– আচ্ছা তোমাকে না বলে আর কোথাও যাবো না। প্রমিস। প্লিজ রাগ করে থেকো না।প্লিজ।
তোহা লিমনের দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলে-
– ঘুম পাচ্ছে খুব। ঘুম পাড়িয়ে দাও।
লিমন মুচকি হেসে তোহার মাথা টা নিজের বুকে নিয়ে তার চুলে বিলি কেটে দিতে থাকে। আর তোহা ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকে ঘুমের রাজ্যে…
.
.
.
সকাল ৮ টার মধ্যে সবাই খেয়ে দেয়ে বেড়িয়ে পড়ে বিছানা কান্দির উদ্দেশ্যে। মাইক্রো তে করে যেতে প্রায় আড়াই ঘন্টা লাগে তাদের।
যাওয়ার পথে মাইক্রোর ভেতরে বসেই রিনি বলে-
বিছানা কান্দি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। বিছানাকান্দি হচ্ছে একটা পাথর কোয়ারী। বাংলাদেশ ভারত সীমান্তের খাসিয়া পাহাড়ের অনেকগুলো ধাপ দুই পাশ থেকে গিয়ে একটা বিন্দুতে মিলিত হয়েছে। আর পাহাড়ের খাজে রয়েছে ভারতের মেঘালয়ের সুউচ্চ ঝর্ণা। বিছানাকান্দির মূল আকর্ষণ হচ্ছে পাথরের উপর দিয়ে বয়ে চলা স্বচ্ছ জলধারা আর পাহাড়ে পাহাড়ে শুভ্র মেঘের উড়াউড়ি।
বিধান রিনির দিকে স্যালুট জানিয়ে বলে-
– এভাবে যদি পড়ালেখা মনে থাকতো, তবে আজ নিউটনের বাপ হতাম! বাই দ্য ওয়ে,তুমি কি সাবজেক্ট নিয়ে পড়ো? সাহিত্য বা জার্নাল টাইপ কিছু?
মুচকি হেসে রিনি বলে-
– আমি ডাক্তারি পড়ছি।
তোহা বাদে বাকি সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে রিনির দিকে। মিলি বলে-
– এসব ট্রাভেলস,জায়গার প্রতি তোমার নলেজ দেখে ভেবেছিলাম তুমি বাংলা,বা সাহিত্য এসব নিয়ে পড়ো!
মৃদু হেসে রিনি বলে-
– সাবজেক্ট কখনো হবির ভেতর ভেরিফিকেশন করতে পারে না। সাবজেক্ট যাইহোক,যেটা করতে ভালো লাগে সেটা নিয়েই লাইফে আগানো উচিত। অনেকেই আছে যারা সাইন্স নিয়ে পড়েও লিটারেচার এর উপর তাদের আগ্রহ বেশী। সাহিত্যে তাদের পারফোরমেন্স ভালো! সো আমি কি নিয়ে পড়ি,সেটা ফেক্ট না। আমি কি করতে ভালোবাসি,সেটাই জরুরি।
বিধান,শীষ,মিলি ও রিনির কথায় সায় মেলালো।
(চলবে)
ভৌতিকপ্রেম
পর্বঃ৪
@Mahfuza_Monira
বিছানাকান্দি নামতেই তোহা ও বাকি সবাই থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকে। তাদের সামনে বিশাল নীল রঙ এর জলরাশি। তাতে ছোট, বড়, উঁচু, নিচু নানান ধরনের বাহারি রঙের পাথরের মেলা। দুইপাশে বড় বড় পাহাড় যেন বিছানাকান্দি কে সন্তানের মতো আগলে রেখেছে। কাছের পাহাড় গুলো সবুজ আর দূরের গুলো আকাশের সাথে মিশে নীল হয়ে গেছে।
চোখের সামনে হুট করে এমন মুগ্ধতা নেমে আসলে মানুষ বোবা হয়ে যায়। তখন ইচ্ছে করে পুরো মুগ্ধতা টাকে চোখ দিয়ে গিলে খাই,মুখ দিয়ে শুষে নি।
বিধান হা হয়ে তাকিয়েই বললো-
– মিলি,আমায় একটু চিমটি কাট তো। আমার মনে হচ্ছে আমি স্বপ্নে আছি। এত সুন্দর জায়গায়ও হয়?
– হ্যাঁ হয়তো। না হলে কি আমরা সাত আসমানের উপর খাড়াইয়া আছি! বলদ! আলগা ঢং দেখাস কেন?
বিধান কপট রাগ দেখিয়ে বলে –
– দিলি তো মুড টা খারাপ করে। তোকে আনাই উচিত হয়নি। হোটেলে বেধে রেখে আসলেই ভালো হইতো।
– ওহ!? আচ্ছা? আমাকে বেধে রেখে আসবি? পারলে বাধতে আশিস! চুলের ক্লিপের গুতো মেরে সব ফুটো করে দেবো তোর।
– আজীবন এই এক ডায়লগই মারোস! নতুন কিছু শিখ। বুঝলি?
– তোকে বুঝাতে হবে না আমার ডায়লগ নতুন না পুরাতন! পুরোনো বাড়ির ভাঙা লাইট একটা…
বিধান পালটা কিছু বলতে নেওয়ার আগেই রিনি বলে-
– চুউউউপ করো তোমরা। এখানে কি ঝগড়া করতে এসেছো? ঝগড়া করতে ইচ্ছে করলে হোটেলে ফিরে যাও। আর এখানে থাকলে চুপ করে সামনের দিক টা দেখো। প্রকৃতির সৌন্দর্য ভোগ করো।
রিনির কথা শুনে বিধান আর মিলি দুজনেই চুপ হয়ে যায়। কিন্তু শীষ তখনো মুখ টিপে হেসে চলেছে। তা দেখে মিলি বলে-
– রিনি ওকে কিছু বলো। নাহলে সত্যি এবার চুলের ক্লিপ দিয়ে ওরে ফুটো করে দিবো একদম।
রিনি চোখ ঘুরিয়ে শীষের দিকে তাকাতেই শীষ গলা খাকারি দিয়ে বলে –
– আমার গলাটা একটু খারাপ। তাই গলা দিয়ে বিভিন্ন সাউন্ড করে গলা ঠিক করছিলাম। সত্যিই.. হাসছিলাম না তো…
রিনি কিছু না বলে মিষ্টি করে হেসে চোখ ফিরিয়ে নেয়।
এরপর কিছুক্ষণ নীরবতা।
নীরবতা ভেঙে তোহা বলে –
– চলো পানিতে নামা যাক। এমন পানিতে পা না ভেঝালে আজীবন কষ্ট আর আফসোস থেকে যাবে।
সবাই তোহার কথায় সায় দিলো।
আস্তে আস্তে আগাতে থাকলো বিছানাকান্দির জলরাশির দিকে।
.
.
পানিতে নামতেই তোহার শরীরে যেন কারেন্ট বয়ে গেলো একটা। ভীষণ শীতল আর পরিষ্কার সে পানি। এতই পরিষ্কার যে নিজের পায়ের নখ টা পর্যন্ত একদম স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
তোহা ওভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো কতক্ষন। তারপর পানির আরো গভীরে যেতে রইলো।
লিমন তোহার সাথেই ছিল। লিমন বলে
– বেশি গভীরে যেও না। পাথর গুলো পিচ্ছিল। পড়ে গেলে ব্যথা পাবে কিন্তু ভীষণ।
– আচ্ছা। আমি পার ধরেই আগাবো।
তোহা পার ধরে ধরে আগায়। তার হাটুর নিচ অব্দি পানি। কি যে ভালো লাগছে তা প্রকাশ করার মতন না।
তোহা লিমন কে উদ্দেশ্য করে বলে –
– লিমন, ঢাকা থেকে না আসলে হয়তো জানতেই পারতাম না যে আল্লাহ প্রকৃতি কে এত সুন্দর করে বানিয়েছে। ইচ্ছে করে সারাটা জীবন এখানেই কাটিয়ে দি। এই পানিতে। ঈশ,আমি যদি মৎস্যকন্যা হতাম। কী যে ভালো হতো।
লিমন একটু হেসে বলে-
– মৎস্যকন্যা তো গল্পে হয়। বাস্তবে না।
তোহা হাটা থামিয়ে দিয়ে লিমনের দিকে তাকায়। তারপর বলে –
– উঁহু,বড় বড় মহাসাগরে,যেখানে মানুষ বা মানুষের কোনো যন্ত্র যাওয়া অসম্ভব সেখানে থাকে তারা। শুনো যেটা আমরা কার্টুনে দেখি,সেটা কিন্তু বাস্তব থেকেই নেয়। কিছুটা বাস্তব আর কিছুটা কল্পনা থেকে সাজিয়ে এসব গল্প,কার্টুন বানায় তারা। বাস্তব হলো, মৎস্যকন্যা আছে। আর কল্পনা হলো, তারা ওত সুন্দর না দেখতে যতটা আমরা কার্টুন বা গল্পে দেখি।
– তুমি তাহলে বিশ্বাস করো এসবে?
– হ্যাঁ। করি। তাইতো বললাম,আমি যদি মৎস্যকন্যা হতাম। কি যে ভালো হতো…
লিমন কি যেন ভাবে একটু। তারপর বলে-
– ঐ যে পাহাড় টা দেখছো? হাটতে হাটতে ওটার পেছনে চলে যাও। ওদিকে পানি বেশ গভীর। সাবধানে যাবে।
– কিন্তু কেন?
– দরকার আছে তাই। যেটা বলছি সেটা করো।
তোহা আর কিছু না বলে সেই পাহাড়ের দিকে এগোতে থাকে।
পাহাড়ের কাছাকাছি যেতেই তোহা পড়ে মহাবিপদে। এখানে পানির পরিমাণ অনেক বেশি। তোহা দাঁড়িয়ে হাটতে পারছে না। সে তাই সাতার কাটা শুরু করে। সাতার কেটে কেটেই পাহাড়ের কাছে চলে যায়। তারপর লিমন কে বলে-
– আসছি এবার বলো কি দরকার তোমার এখানে?
লিমন একটু ভাব নিয়ে বলে-
– ধৈর্য্য ধরো বাছা, খুব শীঘ্রই দেখতে পারবে।
তোহা পানিতেই গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শুধু এখানে এনে এখন ঢং করা হচ্ছে!
লিমন আশেপাশে তাকিয়ে দেখে। কোথাও কাউকে দেখা যায় কিনা। কিন্তু নাহ,নেই। কোথাও কেউ নেই।
তোহাকে উদ্দেশ্য করে বলে-
– তোমার ভাগ্য ভালো। বুঝলে, দুপুরের দিকে এদিকে লোক থাকে বেশি। সকাল সকাল এসেছো বলে লোকজন খুবই কম। যাক ভালোই হলো।
– কি ভালো হলো? কি বুঝাতে চাচ্ছো? একটু বলো তো!
– বলছি বলছি৷ আগে চোখ বন্ধ করো।
তোহা নাকমুখ কুঁচকায়। কিন্তু লিমনের কথা মেনে নিয়ে চোখ বন্ধ করে দাঁড়ায়।
কিছুক্ষণ এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে। হঠাৎ তোহা অনুভব করে তার পা নেই,সে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। পানির ভেতরে ধপ করে পড়ে তোহা। চোখ মেলে তাকাতেই তার চোখ কপালে উঠে যায় ।
তার পায়ের জায়গায় মৎস্যকন্যাদের মতো লেজ। তোহা বারকয়েক ছুঁয়ে দেখে সেখানে।
অবিশ্বাসের চোখে লিমনের দিকে তাকাতেই লিমন বলে-
– কিভাবে করেছি পরে বলবো। মানুষজন আসার আগে মৎস্যকন্যা হয়ে ঘুরে আসো যাও।
তোহা আর কিছু জবাব না দিয়ে ডুব দেয় অতল গভীরে।
প্রায় ১৫ মিনিট পর তোহা নিচ থেকে উপরে উঠে লিমন কে উদ্দেশ্য করে বলে
– লিমন পানির নিচে কিছু আছে। কিছু আছে।
(চলবে)