ভৌতিকপ্রেম,পর্বঃ ৯,১০

0
840

ভৌতিকপ্রেম,পর্বঃ ৯,১০
লেখা – Mahfuza_Monira
পর্বঃ৯

বিকেলবেলা…..
রিসোর্টের পেছনের বাগান টায় সবাই গোল হয়ে বসে আছে। সেখানে গিয়ে আবিদ হাজির হয় হুট করেই। কালো শার্ট, হাতা ফোল্ড করা, সাদা প্যান্ট, চোখে সানগ্লাস, আর চুলগুলো স্পাইক করা।
রিনি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে আবিদের দিকে। তার কাছে আবিদকে দেখে শাহরুখ খানের মতো লাগছে কেন যেন। ইচ্ছে করছে আবিদের গলায় ঝুলে পড়ুক এখনি। তার পর “জানাম জানাম” গান টা গাক তাকে উদ্দেশ্য করে।

আবিদের সকলের উদ্দেশ্যে “হাই” বলে। তারপর তোহার পাশে বসে পড়ে। বসার সময় তোহার গায়ের সাথে একটু ধাক্কা লাগে আবিদের। আবিদ সরে গিয়ে তোহাকে উদ্দেশ্য করে বলে-
– সরি।
তোহা তার আরেকপাশে থাকা লিমনের দিকে তাকায় একবার। পরে আবিদকে উদ্দেশ্য করে বলে –
– ইটস ওকে।
.
রিনির জ্বলন হয়। তার পাশে এসে বসলে এমন কি ক্ষতি হতো আবিদের! তার পাশ টাও তো খালি। উফফফ!

কিন্তু রিনির সেই জ্বলন শুধু তার মনের ভেতরেই থাকে। বাহিরে আর প্রকাশ পায়।

আবিদ বসে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে-
– তো তোমাদের নেক্সট প্ল্যান কি?

সবাই একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে। কোনো উত্তর না পাওয়ায় আবিদ বলে
– বুঝেছি। তোমরা এখনো কোনো প্ল্যান বানাও নি। ওকে নো প্রবলেম। আমি তো এসে গেছি এবার। সবাই মিলেই প্ল্যান বানাবো এবার।

আবিদের কথা বলার ধরন টা ভালো লাগে না লিমনের। সে তোহার দিকে ঝুকে ফিসফিস করে বলে –
– এমন ভাবে বলতেছে যেন সে না আসলে আমরা কেউ কোনো প্ল্যানই বানাতাম না! যত্তসব,আলগা ঢং!!
তোহা মুচকি হেসে লিমন কে বলে-
– জেলাস?
– উঁহু। আমি কেন জেলাস হবো আজব!!
– তাহলে এমনটা বলছো যে! চুপ করে বসে থাকো। আগে দেখি কি প্ল্যান বের করে।
– হুম আচ্ছা।
.
আবিদ বলে চলে।
– আগে আমাদের জানতে হবে যে ঐ পানির নিচের তারা কে এবং কি চায় ওখানে।

লিমন হাত তুলে বলে-
– আমি জানি এই বিষয়ে।
লিমন কে থামিয়ে দিয়ে আবিদ বলে-
– আমি বলছি। তুমি চুপ থাকো লিমন।
লিমনের এবার অনেক গায়ে লেগে যায়। আবিদের এত সাহস কি করে তাকে চুপ করে থাকতে বলার!!
লিমন উঠে দাঁড়ায়। তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায় সবাই। তা দেখে লিমন বলে-
– তোমরা প্ল্যান বানাও। আমি ঘরে যাচ্ছি। আমার কিছু জরুরি কাজ আছে।

এরপর তোহাকে উদ্দেশ্য করে বলে-
– তুমি চলো আমার সাথে।
তা দেখে আবিদ বলে-
– তোমার কাজ আছে তাহলে তোহাকে কেন ডাকছো? ওকে এখানে দরকার। ও অনেক বুদ্ধিমতী মেয়ে। আমাদের প্ল্যান বানানোর সময়ে ওকে আমাদের দরকার।

লিমন যেন আবিদের কথা গায়েই মাখালো না। সে তোহার দিকে তাকিয়ে বললো
– তুমি যাবে কি না?

তোহা কিছু বলতে নেওয়ার আগেই বিধান বলে-
– ভাই লিমন,ওকে কি খুব দরকার? এই মুহুর্তে এখানে ওকে দরকার বেশি। সো প্লিজ তুমি যদি কিছু মনে না করো….
– ওকে ফাইন। তোহার যেতে হবেনা। আমিই যাচ্ছি।

লিমন লম্বা লম্বা পা ফেলে রিসোর্টের দিকে এগোয়। তার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তোহা। মনে মনে ভাবে, ‘হঠাৎ কি হলো লিমনের! এমন আচরণ কেন করছে ও!?’
.
.
লিমন চলে গেলে আবিদ আবার সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলে-
– আচ্ছা,এসব বাদ দিয়ে আমরা কাজের কথা বলি। তোমাদের কে আগে জানতে হবে তারা কারা এবং কি চায়।

তোহা তখনো পিছনের দিকে তাকিয়ে লিমনের চলে যাওয়া দেখছে। তা দেখে আবিদ বলে
– আর ইউ লিসেনিং টু মি তোহা?
তোহা আবিদের দিকে চটজলদি ফিরে বলে-
– কি? ওহ, হ্যাঁ আই এম লিসেনিং টু ইউ। আমি শুনছি তোমার কথা।
– ওকে গুড। সো শুনো সবাই।

আবিদ বলে চলে…
– ওরা হলো বাংলাদেশের ভেতরে ড্রাগস সাপ্লাই করার একটা বড় গ্যাংস্টার দল। আগে চট্টগ্রাম ও কাপ্তাই বন্দর দিয়ে ড্রাগস নিয়ে আসলেও পুলিশের কড়া নজরদারিতে সেটা আর সম্ভব হচ্ছে না এখন। তাই বর্তমানে এসব ড্রাগস বিজনেসম্যান দের ব্যবসা লাটে উঠেছে। তাই কয়েকজন ড্রাগস ব্যবসায়ীরা মিলে সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা পানির ভিতর ডিনামাইট দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সেখানে গুপ্ত পথ তৈরি করবে। যেখান থেকে ড্রাগস এর সাপ্লাই হবে। তাই তারা এমন একটি নদী বেছেনিল যেখানে এমন কোনো রাস্তা বানালেও মানুষের মাঝে সন্দেহ সৃষ্টি হবে না। আর সেটিই হলো বিছানাকান্দি।

বিধান আবিদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়।
– তাহলে এবার আমাদের করণীয় কী?
– ডিনামাইট কিনতে হলে সরকারি পারমিশন লাগে। তাই সেসব ব্যবসায়ী ডিনামাইট ও কিনতে পারছেন না। তাই তারা এমন একজন কে খুঁজছেন যে ডিনামাইট বানাতে পারে। আমাদের মধ্যে থেকে কোনো একজন কে সেই ডিনামাইট তৈরিকারী হয়ে তাদের মধ্যে যেতে হবে। এবং সেখানে গিয়ে ওদের বিরুদ্ধে প্রমাণ খুঁজতে হবে। ব্যস,সেটা সরকারের কাছে পৌঁছে দিতে পারলেই আমাদের কাজ শেষ আর বিছানাকান্দিও বেঁচে যাবে।

সব শুনে মিলি বলে-
– ডিনামাইট বানানোকারী নিশ্চয়ই মেয়েমানুষ হবে না! যাক,আমাদের মেয়েদের কোনো কাজ নেই তাহলে। যা কাজ ছেলেদের৷ উফ বাবা বাঁচা গেলো।

মিলির কথা শুনে আবিদ বলে-
– দেশের জন্য কাজ করায় মেয়ে ছেলে ভেদাভেদ নেই। কেননা দেশ টা আমাদের সকলের। তাই আমাদের সাথে যদি তোমরাও কাজ করতে চাও তাহলে স্বাগতম আর যদি না চাও তো নেই। কোনো জোরাজোরি নেই।

রিনি উঠে দাঁড়িয়ে বলে-
– আমি অবশ্যই আপনার সাথে কাজ করবো আবিদ সাহেব। কেননা দেশ টা তো আমারো তাইনা৷ শুধু একটা রিকুয়েষ্ট। আমাকে আপনার পাশে পাশে রাখবেন৷ তাহলে আমার ভয় কম লাগবে।

রিনির কথাটা শুনে আবিদ বাদে বাকি সবাই তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। আবিদ একটু হেসে বলে-
– আচ্ছা, আপনাকে আমার পাশে পাশে রাখবো।
.
সন্ধ্যার দিকে তোহা নিজের রুমে ফিরে আসে। আবিদ তখনো রিসোর্টেই ছিল। অন্যদের সাথে গল্পে ব্যস্ত।

তোহা রুমে এসে লিমন কে কোথাও খুঁজে পায়না। সে ওয়াশরুমে চলে যায়। জামা চেঞ্জ করে আসে। ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখে লিমন বিছানার উপর বসে আছে।

তোহাকে দেখে বলে
– আগে রুমে এসে আমায় না পেলে চিল্লিয়ে ডাকতে৷ আর আজ ডাকার প্রয়োজন মনে করলে না নাকি!?
– না আসলে,এসেই ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম। তাই আর কি…
– হুম বুঝেছি। তো তোমাদের প্ল্যান করা শেষ?
– হুম। জানো আমরা কী কী প্ল্যান করেছি?

তোহা খাটের উপর পা উঠিয়ে উঠে বসে বলে-
– তোমায় বলছি শুনো।

তোহার ঠোঁটের উপর আঙুল তুলে লিমন বলে-
– শুনতে চাইছি আমি?
তোহা মাথা নাড়ায়।

– তো বলছো কেন? আমি চাইনা শুনতে কি প্ল্যান করছে আর কি করে নাই। জাস্ট তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে তোহা।

তোহার কপালে সূক্ষ্ম রেখার ভাজ। সে চিন্তিত গলায় বলে –
– কি কথা? বলো।

লিমন বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে বলে-
– তোমার সামনে যদি কেউ আমাকে আদেশ করে বা হুকুম করে,তখন কেমন লাগবে তোমার?
– মানে!?
– আমার সামনে অচেনা অজানা কেউ যদি তোমার কথা থামিয়ে দিয়ে তোমাকে চুপ করতে বলে,তার মুখ ছিড়ে ফেলতাম টেনে। অথচ আজ,আবিদ আমার সাথে এমন ব্যবহার করলেও তুমি কিছুই বলো নি। কোনো কাজ ছিল না আমার,তবুও উঠে আসছিলাম সেখান থেকে। জিনিসটা তোমার বোঝা উচিত ছিল। উচিত ছিল আমার সাথে তোমারও উঠে আসার কিন্তু তুমি,ওখানেই বসে ছিলে। আমি কি জানতে পারি কেন?

তোহা অবাক হয়ে যায় লিমনের কথা শুনে। সে দ্রুত উঠে লিমনের কাছে গিয়ে লিমনের কাধে হাত রেখে বলে-
– তুমি কি এসব বিষয় নিয়ে আপসেট হয়ে আছো!? আর আবিদ হয়তো তোমাকে নর্মালি চুপ করতে বলেছিল! আর আমি উঠে আসতাম বাট সবাই বললো আমাকে ওখানে দরকার তাদের তাই আমি…

লিমন জানালার ফাক দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে-
– তাদের কে তোমার দরকার সেটা তুমি বুঝলে আর আমার যে তোমাকে দরকার ছিল সেটা বুঝলে না তোহা?
– লিমন তুমি ভুল বুঝতেছো!
এবার লিমন অনেকটা রেগে গিয়ে তোহার দিকে তাকিয়ে বলে-
– ভুল আমি বুঝতেছি না। ভুল তুমি আমাকে বোঝাচ্ছো!! আমি এটা আশা করি নি তোমার থেকে তোহা। ভালোবাসায় একজন অপরজন কে বুঝবে, তার মন খারাপে সবসময় পাশে থাকবে তাইনা? অথচ তুমি….

এরপর লিমন তোহার হাত তার কাধ থেকে সরিয়ে দিয়ে বলে-
– এমন ভালোবাসা আমার চাই না। চাই না…

কথাটা বলেই লিমন অদৃশ্য হয়ে যায়। তোহা সেখানেই ধপ করে বসে পড়ে। মাথার ভেতর একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে তার। কি করে পারলো লিমন,তাকে ভুল বুঝতে?
.
.
.
লিমন আর রুমে ফিরে না। তোহা রুমেই একা একা বসে থাকে।
প্রায় রাত ১০ টার দিকে মিলি আসে তোহাকে খেতে ডাকতে। তোহা খাবেনা বললেও মিলি তাকে জোর করে নিয়ে যায়৷ খাওয়ার টেবিলে যেতেই তোহার চোখ কপালে উঠে যায়।
লিমন আগে থেকেই খাবার টেবিলে বসে আছে। কি সুন্দর হাসিখুশি ভাবে সবার সাথে কথা বলছে!

তোহা আস্তে আস্তে গিয়ে লিমনের পাশের চেয়ার টা টেনে বসে। তোহা বসতেই লিমন উঠে দাঁড়িয়ে বলে-
– আমি হাত ধুয়ে আসি। খাওয়া হয়ে গেছে আমার।

লিমন ওয়াশরুমের দিকে চলে যায়।
তার যাওয়ার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তোহা।
.
.
সবার খাওয়া দাওয়া হলে সবাই মিলে করিডোরে দাঁড়িয়ে আড্ডা দেয়। রিনি বলে,
– আবিদ সাহেব রাত তো অনেক হয়েছে। আজ না হয় আপনি শীষ আর বিধানের সাথেই তাদের রুমে থেকে যান।
– না না,আমি চলে যেতে পারবো। আমার বাসা কাছেই। বিছানাকান্দির একটু আগে।
– বাসায় কে কে থাকে আপনার?
– আমি আর আমার এক মেয়ে বন্ধু। আমার খাবার দাবার রান্না টান্না করে দেয়,ঘর দেখে শুনে রাখে। এই আর কি!

রিনি অন্যদিকে তাকিয়ে বলে-
– বুয়া রাখলেই পারেন। মেয়ে বন্ধু রাখার কি প্রয়োজন?

আবিদ কিছু উত্তর করার আগেই মিলি বলে-
– সে যা ইচ্ছে তাই রাখুক বাসায়। তাতে তোমার কি রিনি?

রিনি একটু শুকনো হাসি হেসে বলে-
– না না,আমার কিছুই না। এমনিই বললাম।
.
সবাই গল্প করতে থাকলেও তোহা আর লিমন দুজনেই চুপ করা দাঁড়িয়ে আছে।
তা দেখে আবিদ তোহা কে বলে-
– তুমি ঠিক আছো তোহা?
– হু।
– এভাবে চুপচাপ আছো তাই বললাম! কোনো সমস্যা হলে আমায় শেয়ার করতে পারো।

তোহা একবার লিমনের দিকে তাকায়। লিমন অন্যদিকে তাকিয়ে রয়েছে। তা দেখে তোহা বলে-
– নাহ,ঠিক আছি আমি। কিছুই হয়নি আমার। এমনিতেই চুপ করে আছি।

হঠাৎ আবিদ সবাইকে উদ্দেশ্য করে একটা প্রস্তাব দিয়ে বসে। সে বলে-
– তোমাদের এই রিসোর্টে থাকতে তো অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। তোমরা এক কাজ করতে পারো,যে কয়দিন আছো সিলেটে, আমার বাসায় উঠতে পারো। এমনিতেও আমার বড় বাসায় আমরা দুজন মাত্র মানুষ থাকি। এতে তোমাদের খরচ ও কমলো। আর আমারো ভালো লাগবে তোমাদের সাথে থাকতে। প্লিজ তোমরা অমত করো না!

রিনি তো সাথে সাথেই রাজি হয়ে গেলো। রিনি মনে মনে বলে-
– যাক,এই সুযোগে একটু কাছে আসা যাবে তার! ইশ! ভাবতেই লজ্জা লজ্জা লাগছে।

রিনিকে রাজি হতে দেখে শীষও রাজি। বিধান আর মিলিও অমত করলো না৷ এবার শুধু তোহা আর লিমনের পালা।
তোহা মনে মনে ভাবে, সেখানে গিয়ে কিছুটা একলা সময় পাওয়া যাবে হয়তো। রিসোর্টে তো শুধু মানুষের গিজগিজ। তখন না হয়,লিমনের রাগ ভাঙানো যাবে সুন্দর করে।

এসব ভেবে তোহাও রাজী হয়ে যায়।

লিমনের দিকে তাকিয়ে আবিদ বলে-
– তুমি রাজি না লিমন?
লিমন কিছু বলার আগেই বিধান বলে-
– তোহা যখন যাচ্ছে লিমন ও যাবে। সো আবিদ ভাই,তুমি যাওয়ার ব্যবস্থা করো। আমরা সবাই যাচ্ছি।

আবিদ খুশি হয়ে বলে
– ওকে ডান, কাল সকালেই যাচ্ছি তাহলে সবাই…
(চলবে)

ভৌতিকপ্রেম
পর্বঃ১০
লেখা – Mahfuza_Monira

পরদিন সকালে সবাই রেডি হয় আবিদের বাসায় যাওয়ার জন্য। সকলে মাইক্রোর কাছে এসে ওয়েট করলেও লিমন আর তোহা তখনো রিসোর্টের ভেতরে। খানিকবাদে লিমন চলে আসে। আর এসে মাইক্রোর একদম সামনের ড্রাইভার এর সিটের পাশে বসে। আবিদ লিমন কে উদ্দেশ্য করে বলে –
– তোমার ব্যাগ কোথায় লিমন? ব্যাগ থাকলে সেটা মাইক্রোর পেছনে ডিকি তে রাখো।
– আমার কোনো ব্যাগ ট্যাগ নেই।
– নেই মানে! ঢাকা থেকে এখানে ট্যুরে এসেছো আর বলছো ব্যাগ আনোনি কোনো! স্ট্রেঞ্জ!

লিমন একটু খুক খুক করে কেশে বলে-
– আসলে আমার ব্যাগপত্র তোহার লাগেজের ভিতর।
– ওহ! তোহা কোথায়?
– রুমে। আসছে।
– তুমি একাই চলে এলে? তাও আবার তোহার লাগেজে তোমার ব্যাগ রেখেছো! তোহা একা লাগেজ নিয়ে আসবে কি করে? সামান্য কমনসেন্স টুকুও নেই তোমার লিমন!!

আবিদ রেগে যায়। তার রাগের কি আছে সেটা লিমন বা বাকি কারোরই মাথায় ঢোকে না। আবিদ সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে-
– আমি তোহাকে নিয়ে আসছি।

তারপর আর একদন্ড দেড়ি না করে সে ভেতরে চলে যায় তোহাকে নিয়ে আসতে। আবিদের চলে যাওয়ার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে সবাই শুধু লিমন বাদে।
.
.
তোহা সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে মাত্রই রুম থেকে বের হয়েছে। লাগেজ টার হাতল টেনে বের করতে নেওয়ার আগেই সেখানে আবিদ এসে হাজির হয়। আবিদ লাগেজ টাকে টেনে তার দিকে নিয়ে বলে-
– লিমনের কোনো কমনসেন্স নেই তোহা। তোমাকে কিভাবে এখানে একা ফেলে চলে গেলো তার উপর তার ব্যাগপত্র নাকি তোমার লাগেজে! ইডিয়ট পিপল!! বাদ দাও। চলো আমি নিচ্ছি লাগেজ।

তোহার ভীষণ রাগ হয়। এই কুম্ভকর্ণের জন্যেই তার আর লিমনের ভেতরে যত ভুল বোঝাবুঝি! এখন আবার লিমন কে ইডিয়ট বলছে। সাহস কত বড়!!
তোহা চুপ করে থাকে। হাতগুলো তার মুষ্টিবদ্ধ। কোনো কথা না বলে সামনের দিকে আগাতে থাকে সে।
.
গাড়ির কাছাকাছি আসতেই বিধান বলে-
– বিয়ে খেতে যাচ্ছিস যে এত সেজেছিস!? এই ময়দা মাখতেই এত টাইম লাগলো তাইনা?
তোহা আবিদের রাগ টা বিধানের উপর ঝেড়ে ফেলে।
– সবসময় মুখে যা আসে তাই বলিস তাইনা? তোর মুখ ভেঙে দিতে ইচ্ছে করে আমার বুঝেছিস? আর কখনো কথা বলবি না আমার সাথে। আর শোন এটা ময়দা না,মেকাপ। মূর্খ!!!

তোহার এমন রিয়েকশনে সকলেই হা হয়ে যায়। কি হলো এটা! তোহা এমন রিয়েক্ট করার মেয়ে তো নয়। মিলি গাড়ি থেকে নেমে এসে তোহার কাধে হাত রেখে বলে-
– তুই ঠিক আছিস?

তোহা কিছু না বলে চুপ করে থাকে। রিনি তাচ্ছিল্যের সুরে বলে-
– ভূতের সাথে প্রেম করে যে তোহা বেয়াদব হয়ে গেছে এটারও পরিচয় দিলো আজকে! আর কত কি দেখতে হবে নতুন নতুন কে জানে!!

আবিদ বিষ্ময় ভরা চোখে প্রশ্ন করে-
– ভূতের সাথে প্রেম মানে! বুঝলাম না কথা টার মানে।
তোহা অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায় একবার রিনির দিকে।তারপর আবিদের দিকে তাকিয়ে বলে-
– আবিদ ছাড়ো এসব। দেড়ি হয়ে যাচ্ছে। যাবে না?
– ওহ হ্যাঁ চলো চলো।

ওরা ৫ জন মাইক্রো তে করে রওনা হয় আর আবিদ তার বাইক নিয়ে। প্রায় ৪০ মিনিট পর ওরা এসে পৌঁছায়।

গাড়ি থেকে নামতেই সবার চোখে তাক লেগে যায়। এ যেন কোনো বাড়ি না,এক অন্য দেশের মায়াপুরী।
.
বিশাল বড় জমির ঠিক মাঝবরাবর গড়ে উঠেছে দোতালা প্রাচীর দেওয়া বিল্ডিং। চারপাশ টা ফুলের বাগান দিয়েই ভরা। তবে এক সাইডে বিশাল বড় খাঁচার মতো খামার। সেখানে শ’খানেক কবুতর আর মুরগী রয়েছে। সবাই অবাক নয়নে চারপাশ চোখ বুলিয়ে দেখছে।

আবিদ মৃদু হেসে বলে –
– এসেছো যখন আরো অনেক কিছু দেখতে পারবে। এবার ভেতরে যাওয়া যাক?

সবাই স্মিত হেসে বলে-
– হু।
.
.
বাড়িতে ঢুকতেই লম্বা,ফর্সা বাদামী চোখের একজন নারীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সবাই। নারীর মুখে কোনো হাসি নেই। মনে হচ্ছে এরা আসায় প্রচন্ড বিরক্ত হয়েছে সে। আবিদ পরিচয় করিয়ে দেয়।

– এই হলো ক্যাটি। আমার ফ্রেন্ড। আমার এই বিশাল বাড়ির সকল দেখাশোনার দায়িত্ব তারই।

রিনি বিরবির করে বলে –
– তাহলে তো এ তোমার আয়া হয়। ফ্রেন্ড কেন বলছো তাকে!!
.
ক্যাটি এসে সকলের ব্যাগ পত্র এক এক করে নিয়ে উপরে চলে যায়। আবিদ সকলের উদ্দেশ্যে একটু হেসে বলে-
– ও আসলে সবার সাথে সহজেই মিশে উঠতে পারেনা। কিছু মনে করো না ওর এমন আচরণে।

শীষ বলে-
– না না ইটস ওকে। আমরা আমরাই তো! মনে করার কি আছে।
– ওকে তাহলে সবাই সবার রুমে যাও। ফ্রেশ হয়ে খেতে আসো। ক্যাটি তোমাদের কে রুম দেখিয়ে দিবে।
.
.
এখানে এসে তোহা পড়েছে অগাধ সমুদ্রে। কেননা লিমন আর সে এক রুমে থাকতে পারবে না। আবিদ তাদের দুজনের জন্যে দুই রুম ঠিক করেছে। অবশ্য তারই বা কি দোষ!? আবিদ তো আর জানে না এখনো যে এরা কাপল।

তোহাকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে
মিলি বলে-
– মন খারাপ? আমি আবিদকে বলে তোকে আর লিমন কে এক কামরায় থাকার ব্যবস্থা করে দি?
– না না। থাক। সে যখন ছেলে আর মেয়েদের আলাদা আলাদা রুম ঠিক করেছে দ্যান ইটস ওকে। আর কয়টা দিনই বা! আই উইল ম্যানেজ।

রিনি ওয়াশরুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে-
– আর কত যে কাহিনী দেখতে হবে আল্লাহ মালুম!!
.
তোহার আবার রাগ উঠে। হাতগুলো মুষ্টি বদ্ধ করে নেয়। তা দেখে মিলি বলে-
– জানিনা এই রিনি টার কি সমস্যা। তোর সম্পর্ক টা মানতে না পারুক,বাট এভাবে তানা মারাও তো ঠিক না!আমি ওর সাথে কথা বলবো এই ব্যাপারে।

তোহা মিলির হাতে হাত রেখে বলে-
– থাক বাদ দে। তবে দেখিস,একদিন রিনি ঠিক বুঝবে ভালোবাসা কি জিনিস।
.
.
সারাদিন টা মোটামোটি ভাবে কেটে যায় সবার। সবাই সিদ্ধান্ত নেয় দুটো দিন ঘুরাঘুরি করে এরপর তারা তাদের মিশনে নামবে।
.
রাত ১১ টা।
সবাই ঘুমিয়ে গেছে হয়তো এতক্ষণে।
তোহা ছাদের এককোনায় দাঁড়িয়ে। সে লিমন কে মিলির মাধ্যমে ম্যাসেজ পাঠিয়েছে রাত ১১ টায় ছাদে আসার জন্যে। লিমন বলেছে সে আসবে। তারই অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে তোহা।

কারো পায়ের শব্দ পেতেই তোহা শক্ত হয়ে দাড়ায়। আবছা অন্ধকার আর আবছা আলোয় একটা অবয়ব কে তোহার সামনে দাড়াতে দেখে তোহা তাকে জড়িয়ে ধরে। পরম আবেশে চোখ বুজে আসে তার। সকল অভিমান চোখের পানি হয়ে ঝরে পড়ে। তোহা নাকি নাকি স্বরে বলে-
– কত্ত ভালোবাসি তোমাকে কেন বুঝোনা? কেন কাছে আসোনা? একটু ভালোবাসো না। বলো। বলো আমায়…

অবয়ব টাও জড়িয়ে ধরে তোহাকে। ফিসফিস কন্ঠে বলে-
– আমিও যে তোমাকে বড্ড ভালোবাসি তোহা।

তোহা কথা টা শুনতেই ছেড়ে দেয় লোকটিকে। মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে সেটি লিমন না,আবিদ। তাদের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে লিমন। তোহার চোখ ঝাপসা হয়ে উঠে। লিমন কি এবারো ভুল বুঝবে তাকে?

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here