ভৌতিকপ্রেম,পর্বঃ১১,১২

0
957

ভৌতিকপ্রেম,পর্বঃ১১,১২
লেখা – Mahfuza_Monira
পর্বঃ১১

ভালোবাসা শুধু দুজন মানুষকে একে অপরের সাথে বাধে না। বরং একে অপরকে বুঝতেও শিখায়। হয়তো লিমন ও তাই তোহাকে বুঝেছিল।

লিমন এগিয়ে গিয়ে তোহার সামনে দাঁড়ায়। তোহার হাত পা থর থর কাঁপছিল তখন। লিমন কি এবার তাকে চড় মারবে?
নাকি সব কিছু শেষ করে দিয়ে চলে যাবে?
নানা প্রশ্নে তোহার মাথা টা ক্রমশই ভারি হয়ে উঠছিল।

তোহার অবস্থাটা বুঝতে পারে লিমন। সে গভীর আবেশে জড়িয়ে ধরে তোহাকে। কানের কাছে মুখ করে বলে-
– একবার না হয় ভুল বুঝেছি তাই বলে কি সবসময়ই ভুল বুঝবো? আমি পুরোটাই দেখেছি। আবিদকে আমি ভেবে জড়িয়ে ধরেছিলে,আবিদ কে বলা প্রতি টা বাক্য আমার জন্য ছিল। তাইনা?

তোহা আস্তে করে বলে –
– হু।

– তাহলে কাঁদছো কেন পাগলি? তুমি আমায় এতো ভালোবাসতে পারো আর আমি কি তোমার সেই ভালোবাসা টা বুঝতেও পারবো না? আমি ভুল বুঝিনি তোমায়। বরং গতকাল ভুল বুঝে চলে যাওয়ার জন্য আর এভয়েড করার জন্য সরি।

লিমন তোহাকে ছেড়ে দিয়ে দুহাতে দুকান ধরে কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে-
– এই যে,কান ধরেছি৷ সরিইইইইইইই। ক্ষমা করে দাও তোমার ভূতু টাকে হু?

তোহা হেসে ফেলে। লিমনের এমন পাগলামি তাকে হাসতে বাধ্য করায়।

দুহাত দূর থেকে এসব কিছু দেখছিল আবিদ। সে হঠাৎই জোরে জোরে হাতে তালি দিয়ে উঠে। তার দিকে তাকায় লিমন ও তোহা দুজনেই। আবিদ তালি থামিয়ে বলে –
– বাংলা ছায়াছবি দেখছি বোধহয়। শুধু একটু পার্থক্য আছে। বাংলা ছায়াছবি তে মানুষ হিরো থাকে আর এখানে ভূত হিরো!!
তা মিঃ লিমন,উফ সরি, মিঃ মৃত লিমন আপনার ভালোবাসার কথাকথি শেষ হলো? নাকি আরো বাকি আছে?

আবিদ লিমনের ব্যাপারে সবটা জানে দেখে তোহা চিন্তিত দৃষ্টিতে লিমনের দিকে তাকায়। কিন্তু লিমনের কপালে কোনো চিন্তার ভাজ নেই। কোনো বিষ্ময় নেই তার চোখে। লিমন শান্ত চোখে আবিদের দিকে তাকিয়ে বলে-
– জ্বি না মিঃ আবিদ সাহেব,উহু না মিঃ ভ্যাম্পায়ার আবিদ সাহেব, আমার ভালোবাসার কথা শেষ হয়নি। আর না হবে।

তোহা এবার আশ্চর্য হওয়ার চূড়ান্ত পর্যায়ে। আবিদ কে লিমন ভ্যাম্পায়ার কেন বললো? আবিদ কি তাহলে ভ্যাম্পায়ার? মানে রক্ত চোষা? যারা গভীর রাতে কোনো সুনসান রাস্তার পাশের ঝোপে বসে মানুষের রক্ত চুষে খায়?

তোহা অনবরত ঘামছে। সে ফাকা ঢোক গিলে বলে-
– লি…লিমন। কি বলছো তুমি? আবিদ ভ্যাম্পায়ার? মানে!

লিমন তোহার দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটিয়ে বলে-
– ইয়েস মাই জান,তোমার ফ্রেন্ড আবিদ ভ্যাম্পায়ার।

তারপর আবার আবিদের দিকে তাকিয়ে লিমন বলে-
আমার সেদিনি সন্দেহ হয় যেদিন আমি আবিদের সামনে অদৃশ্যমান হওয়া সত্ত্বেও আবিদ আমাকে দেখতে পায়। যখন ওর সাথে হ্যান্ডশেক করি তখন আমার মনে হয় এটা মানুষ না। আমার অন্যরকম ফিলিংস হয়। কিন্তু আমি চুপ থাকি। সেদিন থেকেই আবিদ কে সবসময় চোখে চোখে রাখতাম আমি। আর আজ যখন বিকেলে খামারে থাকা একটা কবুতর এর তাজা রক্ত খেতে দেখি ওকে তখন শিউর হয়ে যাই আমি যে আবিদ ভ্যাম্পায়ারই। অর্থাৎ রক্ত চোষা।

আবিদ অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। তোহার হঠাৎই মাথা টা চক্কর দিয়ে উঠে। ধীর কণ্ঠে তোহা বলে-
– লিমন রুমে যাবো। রুমে নিয়ে চলো আমায়।

লিমন দ্রুত তোহাকে ধরে ফেলে। তারপর আস্তে আস্তে করে ছাদের গেইটের দিকে আগায়। ছাদ থেকে নামার আগ মুহূর্তে লিমন পিছন ফিরে আবিদের দিকে তাকিয়ে বলে-
– আর হ্যাঁ মিঃ আবিদ,তোহা আমার,আমি তোহার। তাই আমাদের মধ্য না আসলেই কৃতজ্ঞ থাকবো। আর তোহার প্রতি আপনার ভালোবাসা-বাসি আপনার পকেটে ভরে রেখে দিন। নয়তো সেটাকে একটা কাগজে মরিয়ে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দিও বা পদ্মা নদীতে। কেমন?

লিমন তোহাকে নিয়ে নিচে চলে যায়।
.
.
খাটের উপর চুপচাপ বসে আছে তোহা। হাত দিয়ে বিছানার চাদর খাঁমচে ধরে আছে সে। তার কাছে কেমন কেমন লাগছে সবকিছু। আবিদ,যাকে কিনা সে একটা ভালো ফ্রেন্ড ভেবেছিল সে ভেতরে ভেতরে তোহাকে ভালোবাসতো!? সে একজন ভ্যাম্পায়ার!!

– কিরে একা একা চুপ করে বসে আছিস যে! লিমন আসে নি ছাদে?

মাত্রই একটু ঘুম পড়েছিল মিলি। তোহা রুমে এসে লাইট জ্বালিয়ে বসে আছে দেখে সে উঠে বসে। তোহাকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করে।
তোহা একটা ছোট শ্বাস ছেড়ে বলে –
– দেখা হয়েছে,কথাও হয়েছে।
– তাহলে আবার কিসের চিন্তা করছিস? এভাবে চুপ করে বসে আছিস কেন?
– নাহ এমনি। তুই ঘুমা। আমি জামা চেঞ্জ করে এসে শুয়ে পড়বো।
.
.
– উফফ,এত রাতে লাইট জ্বালিয়ে রাখছো কেন তোমরা!?

রিনি শোয়া থেকে উঠে বসে। ধমকের স্বরে তোহা আর মিলিকে উদ্দেশ্য করে বলে –
– তোমাদের কারনে আমার স্বপ্ন টা ভেঙে গেলো। ইশ! আরেকটু হলেই আবিদ আমাকে কিস করতো! উফফফ.. তোমাদের কারনে আমার কাঁচা ঘুম টা তো ভাঙলোই,স্বপ্ন টাও ভেঙে গেলো। ধুত!!

তোহা উঠে এসে রিনির পাশে বসে। কোনো জড়তা ছাড়াই বলে-
– তুই কি ভালোবাসিস আবিদ কে রিনি?

রিনি কিছুটা বিব্রতবোধ করে এমন প্রশ্নে। আর হঠাৎ তোহা নিজে থেকে যেচে এসে কথা বলছে কেন!? অদ্ভুত!!

রিনি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলে –
– নাহ,ভালোবাসা টালোবাসা আমার দ্বারা হবে না। তাই তাকে ভালোবাসিও না। শুধু একটু ক্রাশ খেয়েছি। আর কে না খাবে বল! কি সুন্দর,টল,হ্যান্ডসাম,ফর্সা,চোখ গুলো কি সুন্দর বাদামী। ইশ!! একদম দেখলেই যেন ভেতর থেকে ক্রাশ জিনিস টা এসে বলে ‘ম্যাম আমি কি আসবো বাহিরে?’

তোহা হেসে ফেলে। সাথে মিলিও। তোহা আলমারি থেকে জামা বের করতে করতে বলে-
– ক্রাশই ঠিক আছে। ভালোবাসতে যাস না। সে তোর জন্য ঠিক না রে।

রিনি ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে
– কেন?

তোহা একবার ভাবে রিনি কে সব বলে দিবে। আবার ভাবে,থাক আগেই বলার দরকার নেই।

সাতপাঁচ ভেবে বলে-
– নাহ এমনি। তেমন কিছু না। তুই তো ডাক্তার তাই ডাক্তার জামাই ই তোর জন্য ভালো হবে। তাইনা মিলি?

মিলি ঘুম জড়ানো গলায় বলে-
– হু। আমি ঘুমালাম গার্লস,গুড নাইট।

তোহা ওয়াশরুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।
মিলি বিছানায় বসেই মনে মনে বলে –
– আবিদ তোকে পছন্দ করে তোহা আর হয়তো তুইও করিস। তাই আমাকে মানা করছিস আবিদের প্রেমে যাতে না পড়ি তাইতো? কিন্তু আমি তো শুধু ক্রাশ খায়নি। গভীর ভালোবেসে ফেলেছি আমার আবিদজি কে। আর তাকেও বাধ্য করবো আমাকে ভালোবাসতে। জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ ম্যাম তোহা।
.
.
বিছানাকান্দির পানিতে পা ডুবিয়ে বসে আছে লিমন। মনে মনে ভাবছে না এখানে আসতো তারা, আর না আবিদের সাথে দেখা হতো তাদের। যদিও আবিদ কে সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে তারা একে অপরকে ভালোবাসে। কিন্তু তবুও আবিদ এত সহজে হার মানার পাত্র তো নয়। কিছু একটা তো সে করবেই…

পরমুহূর্তেই লিমন ভাবে ভূত হওয়ার মজাই আলাদা। যখন যেখানে ইচ্ছা যাওয়া যায়। যা ইচ্ছা করা যায়। কেউ দেখতে পায় না,কেউ জানতেও পারে না।

ইশ! তোহাকে নিয়ে আসা উচিত ছিল। তোহা ভীষণ ভালোবাসে রাতের বেলা পানিতে পা ভিজিয়ে বসে থাকতে। একবার কি যাবো তোহাকে নিয়ে আসবো এখানে? নাকি থাক,ওকে ঘুমাতে দেওয়াই ভালো হবে!
হ্যাঁ তাই ভালো হবে। ঘুমোক ও। সামনে যে অনেক কিছু অপেক্ষা করছে ওর জন্যে।

ভবিষ্যতের কথা ভাবতেই অস্থির হয়ে উঠে লিমনের বুক টা।

(চলবে)

ভৌতিকপ্রেম
পর্বঃ১২
লেখা – Mahfuza_Monira

পরদিন তোহার ঘুম ভাঙে সকাল ১১ টায়। মিটমিট করে চোখ খুলতেই তোহা দেখে তার পাশে লিমন বসা। আড়মোড়া ভেঙে তোহা বলে –
– গুড মর্নিং। আমাকে উঠালে না কেন!?
লিমন বিরক্তির সুরে বলে-
– না উঠেই ভালো করেছো। নয়তো কত ড্রামা দেখা লাগতো!!
তোহা ভ্রু কুঁচকে বলে –
– মানে?
লিমন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে –
– তোমার কাজিন রিনি,সে সকাল থেকে যা যা ড্রামা দেখিয়েছে তা তুমি ভাবতেই পারবে না। আবিদের সাথে জগিং করতে গেছে। আবিদ কে নিয়ে ব্রেকফাস্ট করেছে। আবিদের জন্যে স্পেশাল ঘি ওয়ালা পরোটা বানিয়েছে। পুরো সকাল থেকে এখন পর্যন্ত আবিদ আবিদ আবিদ!! যেয়ে দেখো,এখনো বোধহয় আবিদের কোলে উঠে বসে আছে। আমার কী মনে হয় জানো তোহা? মনে হয় রিনি আবিদ কে ভীষণ ভালোবাসে।

তোহা শোয়া থেকে উঠে বসে বলে-
– উঁহু না,রিনি তো কাল রাতেই আমাকে বললো যে সে আবিদকে পছন্দ করে। আবিদ তার ক্রাশ। ব্যস ওটুকুই। এমনিতে সে আবিদ কে ভালোবাসে না নাকি।
– মিথ্যা বলেছে। রিনির হাবভাব আর ওর চোখ দেখলেই আমি স্পষ্ট বলে দিতে পারি যে ও আবিদকে ভালোবাসে। আর যেমন তেমন ভালোবাসা না,একদম গভীর ভালোবাসা।

তোহা মাথা নিচু করে ভাবে কিচ্ছুক্ষণ। তারপর লিমন কে উদ্দেশ্য করে বলে –
– তাহলে রিনি কে আবিদের ব্যাপারে সবটা বলে দি? আবিদ যে ভ্যাম্পায়ার সেটা জানলে হয়তো রিনি সরে যাবে। আমি চাইনা ওর কোনো ক্ষতি হোক লিমন। আমরা আবিদ কে ওতটা চিনিও না। যদি আবিদ সত্যিকারের একজন ভালো লোক হতো,তাহলে আবিদ ভ্যাম্পায়ার হোক বা ভূত,আমি বাধা দিতাম না রিনি কে।

লিমন মাথা নেড়ে বলে –
– তোমার কথার যুক্তি আছে। কিন্তু ওকে তুমি বলবে আর ও মেনে নিবে? তুমি আমাকে ভালোবাসো বিধায় আমি তোমাকে আবিদের ব্যাপারে যা বলেছি তুমি চোখ বন্ধ করে সেটাই বিশ্বাস করেছো। কিন্তু রিনি করবে না। আর তার উপর রিনি আর তোমার ভেতর মন কালাকালি চলছে কয়েকদিন ধরেই। সে তো এখন আরো বিশ্বাস করবে না তোমার কথা।

তোহা অসহায়ের সুরে বলে-
– তাহলে এখন?
– এখন আর কি? যেভাবে যা চলছে চলতে দাও। সত্য বেশিদিন লুকায়িত থাকে না। খুব দ্রুতই বের হবে আবিদের রহস্য। দেখে নিও।
.
.
.

তোহা ফ্রেশ হয়ে বাহিরে বের হয়। কিন্তু ডায়নিং স্পেসে কাউকে দেখতে না পেয়ে সে এগোয় বাহিরের দরজার দিকে। হঠাৎ ক্যাটি কে দোতালার একটা রুম থেকে তাড়াহুড়ো করে বের হতে দেখে তোহা দাঁড়িয়ে পড়ে। ক্যাটি সেই রুমের দরজায় তালা মেরে নিচে নামে। নিচে নেমে তোহাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছুটা অপ্রস্তুত বোধ করে।

এবাড়িতে আসার আজ একদিন হয়ে গেলেও ক্যাটির সাথে তোহার এখন পর্যন্ত একটা কথাও হয়নি। ক্যাটিই ওদের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলে সবসময়। কি জানি কেন!
কিন্তু এখন ক্যাটি কে এভাবে একা পেয়ে তোহা আগ বাড়িয়ে বলে-
– হাই ক্যাটি।

ক্যাটি আরো বেশি উশখুশ করতে থাকে। বিরক্তি ভাব নিয়েই বলে
– হ্যালো।

তোহা বুঝতে পারে যে ক্যাটি তার সাথে কথা বলতে চাচ্ছে না। তবুও তোহা বলে-
– এবাড়িতে আসার পর থেকেই দেখছি তুমি আমাদের থেকে দূরে দূরে থাকো।কেন?

ক্যাটি অন্যদিকে তাকিয়ে বলে-
– তোমাদের ভালোর জন্যেই। আই মিন,আসলে আমার অনেক কাজ থাকে তাই তোমাদের সাথে এত সময় কাটাতে পারিনা। আচ্ছা বায়,অনেক কাজ পড়ে আছে আমার।

ক্যাটি পাশ কাটিয়ে যেতে নিতেই তোহা খপ করে ধরে বসে ক্যাটির হাত। পরমুহূর্তেই দ্রুত ছেড়ে দেয়। তোহার হাত লাল হয়ে গেছে গরমে। এত গরম কারো হাত হয়!!
তোহা অবাক হয়। ক্যাটি রাগীস্বরে বলে-
– আমার হাত ধরলে কেন?
তোহা স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে। ক্যাটিও যে আবিদের মতই ভ্যাম্পায়ার বুঝতে কষ্ট হয় না তোহার। কিন্তু নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রেখে বলে-
– আসলে আমার বন্ধুদের খুঁজে পাচ্ছি না। কোথায় ওরা? বলতে পারো?

ক্যাটি বিরক্তির সুরে বলে-
– বাগানে আছে।

তারপর লম্বা লম্বা পা ফেলে রান্নাঘরের দিকে চলে যায়।
তোহা ক্যাটির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। মনে মনে বলে ‘তোমাদের সবার রহস্যই একদিন সামনে আসবে ক্যাটি। জাস্ট ওয়েট করো।’
.
.
বাগানে এসে তোহা রিনির কান্ড দেখে হা হয়ে যায়। সকলের সামনে রিনি হাটু গেড়ে আবিদ কে প্রোপোজ করছে। লিমন ও আছে ওখানে তবে খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে।

তোহার হুট করেই খুব রাগ হয়। সে ভাবতেই পারছে না তার কাজিন,যে কিনা কখনো কোনো প্রেম করেনি,ছেলেদের পাত্তা দেয়নি,ডাক্তারি পড়ছে অর্থাৎ ভবিষ্যৎ ডাক্তার একজন,সে কি করে আবিদের মতো একজনের জন্য এমন ছেচড়া হয়ে যাচ্ছে!!

তোহা দ্রুত রিনির কাছে যায়। রিনিকে এক টানে দাঁড়া করায়। তারপর টানতে টানতে বাড়ির ভেতর নিয়ে আসে। তোহার হঠাৎ এমন আচরণে সবাই যারপরনাই অবাক হয়ে যায়। লিমন ও ভাবেনি তোহা এমন কিছু করবে।

সবাই দ্রুত ছোটে বাড়ির ভেতরে।
.
.
– তুই আমাকে এভাবে টেনে নিয়ে আসলি কেন?
– তুই কি পাগল হয়ে গেছিস রিনি? আসলে কি তুই রিনিই??? আমি তো এই রিনিকে চিনি না! আমার বোন রিনি তো কখনো কোনো ছেলেকে পাত্তা দেয়নি। আর আজ সে কিনা একটা ছেলে কে হাটু গেড়ে প্রোপোজ করছে? তাও সবার সামনে??

রিনি তাচ্ছিল্যের সুরে বলে-
– কেন তোর জ্বলে? তোর আগে আমি আবিদ কে প্রপোজ করেছি বিধায় কষ্ট হচ্ছে না? পুড়তেছে? কোথায় পুড়তেছে রে??

তোহার রাগ আরো বেড়ে যায়। সে রিনির হাত খামচে ধরে বলে-
– একটা কথা ভালো করে শোন, আমি আবিদ কে ভালোবাসি না!!! পছন্দই করিনা আর ভালোবাসা!! আর আমি তাকে প্রপোজ ও করতাম না জীবনেও! তুই আমাকে পুরোই ভুল ভাবতেছিস। কিন্তু আবিদ তোর জন্যে পারফেক্ট না। ওর আসল রহস্য তুই তো কিছুই জানিস না! কয়েকদিন দেখেই ভালোবেসে ফেলেছিস!? যদি ওর ভেতর টা খারাপ হয়। তখন?
– খারাপ হোক ভালো হোক সেটা আমি বুঝবো। তোকে বলতে হবে না।
– তুই বুঝবি না। তুই অন্ধ হয়ে গেছিস ওর ভালোবাসায়!!
– হলে হইছি।
– তুই তো কাল রাতেও বললি যে তুই নাকি ওকে ভালোবাসিস না,তাহলে এখন! কি হলো তোর?

এবার রিনি তোহার হাত খামচে ধরে বলে-
– আমি ওকে ভালোবাসি বা যা ইচ্ছে তাই করি তোকে বলতে হবে? তুই কে যে তোকে বলবো? জাস্ট গো। আমি কি তোর আর লিমনের মাঝে আসছি? তুই আমাদের মাঝে আসতেছিস কেন!!!
– রিনি আমি আর লিমন একে অপরকে ভালোবাসি। কিন্তু আবিদ তো তোকে ভালোবাসে না। তুই ই শুধু আবিদ কে ভালোবাসিস।
.
.
– আমি ওকে ভালোবাসি না এটা কে বলছে তোমায় তোহা?

আবিদের কথা শুনে রিনি আর তোহা দুজনেই তার দিকে তাকায়। ততক্ষণে বাকি সকলেও পৌঁছে গেছে। তারা আবিদের কথা শুনে আশ্চর্যের সপ্তম আসমানে পৌঁছায়।

..রিনির ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটে উঠে। সে তোহাকে উদ্দেশ্য করে বলে-
– শান্তি? এবার তো আবিদ ও সবাইকে বলে দিয়েছে যে সে আমাকে ভালোবাসে। তাহলে? আর কি কোনো সন্দেহ আছে? আর কি আমাদের মাঝে আসার ইচ্ছে আছে কারো!?

তোহা অসহায়ের সুরে বলে-
– রিনি বড্ড ভুল করছিস তুই। বড্ড ভুল করছিস।

রিনি দাতে দাত চেঁপে বলে-
– হ্যাঁ ভুল করেছি। তোকে নিজের কাজিন আর নিজের বোন ভেবে বড্ড ভুল করেছি। তুই একটা ভূতের সাথে প্রেম করতে পারিস সে ক্ষেত্রে কিচ্ছু না। আর আমি কাউকে ভালোবেসেছি বলে আজ এত কিছু!! নাকি আমার সুখ তোর সহ্য হয়না তোহা? আজকে থেকে তুই আর আমার কেউ না। শুনেছিস? কেউ না….
সবাই শুনে নাও। তোহা নামের আমার কোনো বোন নেই, কোনো কাজিন নেই। কোনো মানুষ নেই আর এই নামের আমার জীবনে….

কথা টা শুনে আবিদের ঠোঁটের কিনারায় হাসি ফুটে উঠলেও তোহার চোখ থেকে এক ফোটা জল পড়ে টুপ করে। লিমন কি বলবে বা কি করবে কোনো হদিস পাচ্ছে না।
মিলি ভাবে এবার তাকে কিছু একটা বলা উচিত। নয়তো ব্যাপারটা আরো বিগড়ে যাবে।

মিলি তোহার কাছে গিয়ে তোহাকে কিছু বলতে নিলেই তোহা হাতের ইশারায় তাকে চুপ থাকতে বলে।

এরপর হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে ভেজা চোখ মুছে দৌড়ে চলে যায় নিজের রুমে।
.
.
.
চোখের সামনে একসাথে কাটানো ২০ টি বছরের স্মৃতি ভাসছে। তোহা আর রিনি একই সাথে একই দিনে হয়েছিল। শুধু সময় টা ভিন্ন। তোহা সকাল ৮ টায় হয় আর রিনি বিকেল ৫ টায়। তোহার মা,আর রিনির মা খুবই খুশি ছিল তাদের দুটি মেয়ে একই দিনে হওয়ার কারনে। তোহার মা রিনির মাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিল-
– দেখিয়েন ভাবি, এরা একে অপরের প্রাণ হবে। একে অপরের বন্ধু হবে। আর আপন বোনের থেকেও ঘনিষ্ঠ হবে।

হয়েছিলও তাই। তোহা আর রিনি একই সাথে বড় হয়। ছোট বেলা থেকেই তারা মানিকরতন। সারাদিন একে অপরের সাথে জুটি বেধে থাকতো। কিন্তু আজকে, সেই রিনি তোহাকে বলছে সে তার বোন না! সে তার কেউ না!!
.
তোহা চোখ মুছে। উঠে গিয়ে তোহার জামাকাপড় বের করে আলমারি থেকে। তারপর নিজের লাগেজে ভরে সব।

লাগেজ হাতে রুম থেকে বের হয় তোহা। তখনো সবাই ডায়নিং স্পেসে দাঁড়িয়ে। রিনি একটা চেয়ারে চুপ করে বসে আছে। শীষ কে দেখা যাচ্ছে না আশেপাশে। লিমন দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে।
তোহা কে লাগেজ হাতে বের হতে দেখে বিধান বলে-
– কোথায় যাচ্ছিস?

তোহা রিনির দিকে তাকায় একবার। তারপর বলে-
– ঢাকায়।
কথা টা শুনে মিলি দৌড়ে আসে। তোহাকে উদ্দেশ্য করে বলে-
– পাগল হয়ে গেছিস? সব ঠিক হয়ে যাবে। প্লিজ এমন পাগলামি করিস না তুই।

বিধান ও এসে বলে-
– হ্যাঁ। এভাবে যাওয়া টা সমাধান না। আমরা আছি তো। সব ঠিক হয়ে যাবে। প্লিজ।

তোহা শুকনো হাসি হেসে বলে-
– মিশন টা ভালোভাবে কমপ্লিট করিস। আমার থেকেও বেশি কষ্ট পেয়েছে শীষ। ওকে সামলে রাখিস। আর নিজেদের খেয়াল রাখিস। ঢাকায় দেখা হচ্ছে।

এরপর আর একমুহূর্ত দেরি করে না তোহা। দ্রুত বের হয়ে যায় বাসা থেকে। তার পেছন পেছন লিমন ও বেরিয়ে আসে।
.
.
.
যে যার রুমে চলে গেলেও ডায়নিং রুমে একা একা বসে আছে রিনি। নিজের কাজের জন্য আফসোস হচ্ছে এখন। বেশি করে ফেলেছে আজ সে। নিজের বলা কথাগুলোর জন্য নিজেই পস্তাচ্ছে এখন।

কেউ কাধে হাত রাখলে পেছন ঘুরে তাকায় রিনি। দেখে আবিদ দাঁড়িয়ে। আবিদ কে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে দেয় রিনি। আবিদ ও রিনিকে জড়িয়ে রেখেই স্বান্তনা দিয়ে চলে।
.
.
ছাদে একা একা বসে আছে শীষ। গত ১৭ মিনিটে ১১ টা সিগারেট শেষ করেছে সে। ভেতর টা ভীষণ জ্বালাপোড়া করছে তার। কষ্ট ও গুলো বড্ড বেহায়া যেন আজ। সিগারেটের ধোয়ার সাথে কেন উড়ে যাচ্ছে না সেগুলো??

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here