ভৌতিকপ্রেম,পর্ব-১৯ শেষ পর্ব

0
1442

ভৌতিকপ্রেম,পর্ব-১৯ শেষ পর্ব
লেখা – Mahfuza_Monira

মিলির বাসায় নির্জন,তার মা এবং নির্জনের ছোট বোন নীরা এসেছে। তারা মিলির সাথে নির্জনের বিয়ের কথা বার্তা বলতে এসেছে।

মিলি গোলাপী পাড়ের হালকা অফহোয়াট কালারের শাড়ি পড়ে মাথায় ঘোমটা টেনে বসে আছে। চোখে মুখে লজ্জার আভা। নির্জন আঁড়চোখে বারবার দেখছে মিলিকে।
ঈশ! কি যে সুন্দর লাগছে তাকে…
.
নির্জনের মা মিলির বাবা মাকে উদ্দেশ্য করে বলে-
– তাহলে ভাইসাহেব,ছেলে মেয়েরা যখন একে অপরকে পছন্দ করেই তখন আর দেড়ি করা উচিত নয় আমাদের। আগামী মাসের একটা তারিখ নির্ধারণ করি? কি বলেন?

মিলির বাবা তোফাজ্জেল সাহেব মাথা নাড়ান।
– জ্বি জ্বি আপা। সেটাই করি আমরা।
.
.
তোহা,লিমন,শীষ,রিনি আর বিধান একই সাথে দাড়িয়ে আছে। কোনো একটা বিষয় নিয়ে তারা বিধান কে হেনস্তা করছে। মিলি এসে দাঁড়ায় সেখানে। সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে-
– কি নিয়ে ধরেছিস আজকে বিধান কে!
তোহা হাসি হাসি মুখ নিয়ে বলে-
– আমাদের সবার তো একটা হিল্লা হয়ে গেলো। কিন্তু আমাদের বেচারা বিধান…এখন পর্যন্ত কিচ্ছু করতে পারলো না। সেটা নিয়েই কথা হচ্ছিল রে।

বিধান বুক ফুলিয়ে বলে-
– আমি তো গোল দিয়ে দিয়েছি রে…সে তো তোরা জানিস না কেউ।

সবাই ভ্রু কুঁচকায়। মিলি বিধান কে উদ্দেশ্য করে বলে-
– কি গোল দিলি!? আমাদের বল। আমরাও শুনি।

বিধান আঙুল উঁচিয়ে নীরা কে দেখায়। তারপর বলে-
– ঐ যে মিষ্টি পরীটাকে দেখছিস? আমার জান চলে এসেছে ওর উপর।

মিলিসহ বাকি সকলেই অবাক হয়ে যায় বিধানের কথা শুনে। মিলি নিচু গলায় বলে-
– শেষমেশ আমার ননদের উপর! কিন্তু সে কি তোকে ভালোবাসবে? আমার তো দেখে মনে হচ্ছে সে তোকে পাত্তাই দিবে না! আর ভালোবাসা…..

বিধান হো হো করে হেসে উঠে। গলা চওড়া করে নীরা কে ডাক দেয়। নীরা তাদের দিকে এগিয়ে আসতেই বিধান বলে-
– তোমার কেমন ছেলে পছন্দ বলো তো ওদের।

নীরা লজ্জা লজ্জা মুখ করে বলে-
– ঠিক আপনার মতো।

নীরার কথা শুনে সকলের উদ্দেশ্যে চোখ টিপ মারে বিধান….
.
.
.
প্রায় ৬ মাস পর।
বিধান নীরা,মিলি নির্জন,শীষ রিনি,তোহা লিমন….সকলে মিলে সিলেট ভ্রমণের জন্য বেরিয়েছে।
শুধু বিধান আর নীরা বাদে বাকি সকলেরই বিয়ে হয়ে গেছে। বিধান অবশ্য নীরার পরিবার কে জানিয়েছে তাদের ভালোবাসার কথা। নীরার পরিবার বিধানের মতো একটি ছেলের হাতে তাদের মেয়ে তুলে দেওয়ার জন্য একদম রাজী। নীরার ডিপ্লোমা শেষ হলেই তাদের বিয়ে দিয়ে দিবে তারা।
.
.
গভীর রাত।

ধুপ করে কিছু পড়ার শব্দ হতেই তোহা পেছন ফিরে তাকায়। এই অসময়ে উপর থেকে কি পড়লো আবার!

তোহা আর লিমন একে অপরের হাত ধরে সেদিকে এগিয়ে যায়। তোহা টর্চ মারে। রাতেএ আধারে চোরের মতো বিধান কে নিচে পড়ে থাকতে দেখে দুজনেই অবাক হয়। বিধান ওদের দিকে তাকিয়ে চওড়া হাসি হাসে। গলা খেকিয়ে বলে-
– লাইট অফ কর! চোখে লাগছে তো। আমি চোর না।

তোহা লাইট অফ করে। অন্ধকারেও স্পষ্ট বিধান কে বোঝা যাচ্ছে এখন। বিধান উঠে হাত ঝাড়ে। শার্ট আর প্যান্ট টাও ঝেড়ে নেয়। ধুলো লেগেছে অনেক।

তোহা সন্দেহের সুরে বলে-
– এখানে এত রাতে কী?

বিধান তোতলায়।
– এমনি। দেখতে আসলাম আকাশ কত সুন্দর!

তোহা রহস্যময় হাসি হেসে বলে-
– সেটা তো ছাদ থেকে বা বারান্দা থেকেও দেখতে পারতি! এই এখানে,এই ঝোপের ভিতর,ধুলোয় গড়াগড়ি খেতে খেতে দেখা টা কেমন বেখাপ্পা দেখায় না?

বিধান মাথা চুলকায়। লিমন তোহা দুজনেই হোহো করে হেসে উঠে।
ওদের হাসি দেখে পিত্তি জ্বলে যায় বিধানের। রাগী গলায় বলে-
– নিজেরা বিয়ে করে রোমান্স করছো! আর আমি একটু আমার হবু বউয়ের সাথে দেখা করতে গেলেই দোষ! আর বউ টাও কেমন। রাতের অন্ধকারে সবার চোখ পালিয়ে পাইপ বেয়ে বেয়ে তার সাথে দেখা করতে এসেছি আর সে কিনা ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো আমায়!! এ যাত্রায় বড় বাঁচা বেঁচে গেছি। তওবা করতেছি তোমাদের সামনে। আর কখনো ঐ পাথর মেয়ের কাছে যাবো না লুকিয়ে দেখা করতে। আনরোমান্টিক একটা!!

তোহা হাসি থামিয়ে বিধানের দুঃখে সামিল হয়। তবে কড়া গলায় বলে-
– আবার দেখিস! বিয়ের আগেই হাত পা ভেঙে বসে থাকিস না। তখন তোর পাখি তোকে ফাকি দিয়ে দিতে পারে!

বিধান চুল ঝাড়তে ঝাড়তে বলে-
– হুউউউ….
.
.
.
পরেরদিন সকলে বিছানাকান্দির উদ্দেশ্যে বের হয়। সেখানে যেতেই তোহা আর রিনির চোখের সামনে পুরোনো সব স্মৃতি কঠিন হয়ে ভেসে উঠে। রিনির চোখ কাঁপে। ঝাপসা হয়ে পড়ে ক্রমশ। তোহা বোঝে।
রিনির পাশে দাঁড়িয়ে তার হাত শক্ত করে ধরে। চোখ দিয়ে রিনিকে আশ্বস্ত করে সব ভুলে যেতে। অতীতের সেই দিন কটা তাদের সবার কাছে অভিশাপ বৈ আর কিছুই না।
.
.
ঠান্ডা পানিতে পা ভিজিয়ে বসে আছে শীষ আর রিনি। রিনি তার মাথা টা শীষের কাধে রাখে। শীষ তার একহাত দিয়ে রিনির বাহু চেঁপে ধরে। শান্ত গলায় বলে-
– যদি আজ সেই অভিশাপ তোমার সামনে এসে দাঁড়ায় কি করবে তুমি? ভয় পাবে?
রিনি মাথা না তুলেই বলে-
– আবিদের কথা বলছো?
শীষ ছোট্ট করে উত্তর দেয়-
– হু।
রিনি মাথা তুলে শীষের দিকে তাকিয়ে বলে-

– আগে ভয় পেতাম। কারন তখন আমার কেউ ছিল না! এখন পাই না। কারন এখন আমার তুমি আছো। আমার সাহস,আমার অনুপ্রেরণা,আমার শক্তি,আমার মনোবল, আমার ভালোবাসা,আমার পরিবার…সব আমার সাথে আছে। তাহলে ভয় কিসের? আর তাকে সামনে পেলে এবার কষে দুগালে দু চড় লাগাতাম। আমার রক্ত খাওয়া? বুঝিয়ে দিতাম হুহ!

শীষ হেসে ফেলে। রিনি কে গভীর আবেশে নিজের বুকে টেনে বলে-
– পাগলী!
.
.
নির্জন হাপাতে হাপাতে দুটো নারিকেল নিয়ে এসে ধপ করে বসে পড়ে মিলির পাশে। মিলি নারিকেল দুটোর দিকে তাকিয়ে মুখ বাকিয়ে বলে-
– বাল আনছো! এত ছোট ছোট কেন? আমি খাবো না। যাও,বড় সাইজ নিয়ে আসো। গো গো..

নির্জন রেগে যায়। নারিকেল দুটো পাশে রেখে বলে-
– গোল্লায় যাক নারিকেল। এই নিয়ে ৭ বার নিয়ে এসেছি। কখনো অনেক বড়,কখনো ভোতা,কখনো নারিকেল দেখতে ভালো না। কত কী!! আর পারবো না যেতে। পারবো না। শুনেছো?

মিলি নির্জনের গালে হাত চেঁপে বলে-
– আমাল বাবুটা রাগ করছে?
নির্জন কঠিন গলায় উত্তর দেয়-
– না।
মিলি ছোট্ট খরগোশের মতন করে নির্জনের বুকের ভিতর ঢুকে যেতে যেতে বলে-
– দেখি,সরাও এই শার্ট ফার্ট। আমি আমার ঘরে যাবো। তোমার মনের ঘরে। সরাও সরাও!
নির্জন হেসে ফেলে। মেয়েটা পারে ও!
.
.
বিধান বিছানাকান্দিতে আসার পর থেকেই নীরার থেকে দূরে দূরে থাকছে। নীরা ব্যাপার টা বুঝতে পারে। সে বিধানের কাছে গিয়ে বিধানের শার্ট খামচে ধরে।
– সমস্যা কী তোমার? আমার থেকে দূরে দূরে থাকছো কেন! ও এখন নতুন পাইছো? আমাকে ভাল লাগে না? আমি পুরোনো হয়ে গেছি?
নীরা নাকি কান্না কাঁদে। বিধান ধমক মেরে বলে-
– ফ্যাচফ্যাচ করবা না। রাতের বেলা একটু কাছে আসো না,চুমো টুমো খাও না,আমি গেলেও ধাক্কা মেরে ফেলে দাও। আর আসছে এখন সোহাগ করতে! যাও সরো। বিয়ের পরেই সব উশুল করে নিবো।

নীরা বিধানের শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বলে-
– কি করলে জনাবের মন ভালো হবে?
বিধান মাথা নেড়ে বলে-
– হবে না। কিছু করলেও হবে….
বিধান কে পুরো কথা শেষ করতে দেওয়ার আগেই নীরা তার গালে টুক করে একটা চুমু খায়। ঘটনার আকস্মিকতায় বিধান থ হয়ে যায়। কয়েক সেকেন্ডে নিরব থেকে বিধান ঠেসে ধরে নীরা কে। দুলতে দুলতে বলে-
– ধন্য হলো।আমার জীবন ধন্য হলো।
নীরা হাসতে হাসতে বলে-
– আরেহ ছাগল ছাড়ো। লাগছে তো!
.
.
.
দূর থেকে সবার পাগলামি দেখছিল তোহা আর লিমন। তোহার চোখ ভিজে উঠেছে। লিমন বিষ্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করে-
– কাঁদছো কেন!?
তোহা চোখ মুছে বলে-
– এটা সুখের কান্না রে পাগল।

লিমন মুচকি হেসে বলে-
– জানি তো। এমনিই জিজ্ঞেস করলাম। নাহলে আবার বলবে তুমি কাঁদছো কিন্তু আমি তোমার দিকে খেয়াল করছি না। একটু জিজ্ঞেসও করছি না। পরে মারবে আবার! তুমি যে দজ্জাল!

মুখ ফসকে কথাটা বলে ফেলেছে লিমন। এখন ইচ্ছে করছে নিজেই নিজেকে চড় মারুক। কারন তোহা তো এবার সত্যিই তাকে মেরে ফেলবে! তাকে দজ্জাল বলা…!

লিমন অসহায়ের চোখে তোহার দিকে তাকায়। তোহা কপট রাগ দেখায়। পরমুহূর্তেই হেসে ফেলে। লিমনের কপালে চুমু খেয়ে বলে-
– আজকে একটা অন্যতম খুশির দিন। তাই আজ মাফ করলাম। কিন্তু…যদি আর বলো তবে….
লিমন তোহার হাত ধরে বলে-
– তবে তখন আরো বেশি বেশি চুমু খেও।
লিমনের কথা শুনে তোহা হেসে ফেলে।
মনে মনে বলে-
– একটু চেষ্টা আর ইচ্ছেশক্তি মেশালেই জীবন অনেক সুন্দর হয়ে যায়। অনেক সুন্দর…

(সমাপ্ত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here