সেম_এজ_রিলেশন_বিয়ে,part-05,6

0
1341

সেম_এজ_রিলেশন_বিয়ে,part-05,6
লেখিকাঃ জিহান জারা
part-05

এদিকে মিরার আপুর শাশুরি মিরাকে বলে মাহিনকে ফোন দিতে। মাহিনের দুলাভাই খুব ভাল। মিরা তাকেই ফোন দিয়ে বলে ভাইয়া ওদিকের কি খবর? তারপর তার সাথে মিরার বোন ও তার শাশুরি কথা বলে। সে মিরাকে বলে কাল মাহিনের বাসায় যেতে। মিরা রাজি হয়ে যায়। মিরা মাহিনকে ফোন দিয়ে খুব কান্নাকাটি ক। ও বুঝে না যে মাহিনের ফোন লাউড এ আছে।
পরের দিন সকালে ….
মিরার বোনঃ মিরা আমাকে মাফ করে দিস। আমি বোন হয়ে কিছুই করতে পারছি না।।
মিরাঃ আরে আপু!! কি বল এসব। তুমি টেনশন কর না। মাহিনের দুলাভাই ওর বাবা মাকে ঠিক বুঝাবে।
মিরার মনে খুব ভয় কাজ করছে। কিন্তু সে মুখ ফোটে কিছুই বলে না। কাওকে বুঝতেও দেয় না। মিরা সবার কাছে বিদায় নিয়ে বের হয়ে আসে। মাহিন তার জন্য রাস্তায় ওয়েট করছে। বেশ কিছুদিন পরেই মাহিনকে দেখে তার ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফোটে উঠে।
বেচারা মাহিনের তো কিছুই করার নেই। সে তো ইনকাম করে না যে কিছু বলে বুঝাবে তার বাবা মাকে। সে শুধু চুপ করে থাকে। মিরার কষ্টে তার ও খুব খারাপ লাগে।সে মিরাকে বলে বাবা মা না মেনে নিলে আমরা আলাদা থাকব তুমি টেনশন করো না। বেশ কিছু সময় পরে তারা বাসায় এলে কলিং বেল চাপ দিলে মাহিনের বোন দরজা খুলে দেয়৷ মিরা সালাম দিলে তাকে ভেতরে যেতে বলে। মিরা ওই পিচ্চির(সাদাফ) জন্য দুটো ডেইরি মিল্ক ও কিনে নিয়েছে এক ফাঁকে। তার সূত্র ধরেই তো রিলেশন। মাহিনের দুলাভাই মিরাকে মাহিনের রুমে নিয়ে বসায় আর বলে বাবা মায়ের কাছে মাফ চাইতে। মিরা গিয়ে মাহিনের বাবার পা ধরে। সে মিরাকে বলে তোমার শাশুড়ীকে বুঝাও। মানে সেও মেনে নিয়েছে। সে নিজে মিরাকে খেতে দেয় কিন্তু এই টাইমে কি আর খাবার গলা দিয়ে নামে। মিরা তার শাশুরির কাছে যেয়ে যেই পা ধরবে—খুব রেগে এক ঝামটাই মিরাকে সরিয়ে দেয়।
মাহিনের মাঃ এই মেয়ে তুমি আমাকে টাচ করবা না!!!
মিরাঃ মা আমি কোথায় যাব? আমার নিজের মা নেই। এখন আপনি আমার মা। আমি আপনার সব সেবা করব । আপনার মনের মত হব।
মাহিনের মা চিল্লাচিল্লি করে।
মাহিনের বাবাঃ তুমি জান মাহিন লেখাপড়া করে। ওর সব পড়ার খরচ তুমি চালাবে। পারবে?
মিরাঃ ট্রাই করব (মাহিনের দুলাভাই ইশারায় হ্যাঁ বলতে বলেছিল।)
মাহিনের মা খুব কান্নাকাটি করে। সে কিছুতেই মেনে নিবে না। ঠিকই তো একমাত্র ছেলেকে নিয়ে তার কত আশা ছিল। সব এক নিমেষেই শেষ। মিরাকে বলে তোমার বাবা বা কোন অভিবাভক ছাড়া তোমাকে আমাদের বাসায় রাখতে পারব না। কাল তাদের নিয়ে আস।

মিরাকে মাহিন তার বোনের বাসায় দিতে গেলে সে বলে আমি যেতে পারব তুমি যাও। মাহিন অনেক জোর করে কিন্তু মিরা একাই যাবে। মাহিনের কেমন সন্দেহ হয় । অগত্যা মিরাকে একাই ছেড়ে আসে। মিরা ভাবে সে তো বোনের বাসা থেকে বিদায় নিয়েছে। এখন গেলে বোনকে যদি তার শাশুরি কিছু বলে। তাই সে রাস্তায় ঘুরতে থাকে একা একা।
মিহিনের দুলাভাই ওই রাস্তা দিয়েই ঢাকা যাচ্ছে তখনি মিরাকে দেখতে পায় রাতের বেলা একা একা রাস্তায় ঘুরছে।
এদিকে মিরার বোন মাহিনকে জানায় মিরা বাসায় আসেনি। মাহিন তাকে পাগলের মত খুজছে। তখন মাহিনের দুলাভাই মাহিনকে ফোন দিয়ে জানায় মিরা কোথা। মাহিন সেখানে গিয়ে আবার মিরাকে তার বাসায় নিয়ে আসে। এবার মাহিনের বাবা মা আরও রেগে যায় মিরার এমন কাজে। মিরার বোন দুলাভাই ও এসেছে। সবাই নানান কথা বলে তারপর রাজি হয়ে যায়। কিন্তু আজ মিরাকে যেতে হবে কাল তারা গিয়ে নিয়ে আসবে মিরাকে।
মিরা আজ সারাদিন ওয়েট করে থাকে। মাহিনের বাসার কেও ফোন ধরে না। বিকেলে মাহিনের বোন ফোন করে।
মাহিনের বোনঃ মিরা?
মিরাঃ হুম?
মাহিনের বোনঃ তুমি ব্যাগ গুছিয়ে চলে আস আর তোমার ওই জন্ম সনদ টাও নিয়ে আসবে।
মিরাঃ হুম ঠিক আছে।
মিরা ভাবে ওইটা দিয়ে আবার কি হবে। বাধ্য মেয়ের মত সে সব গুছিয়ে তার বোনের সাথে মাহিনের বাসায় আছে।
মাহিনের বাবাঃ মিরা মাহিন লেখাপড়া করবে আর তুমি চাকরি করবে।
মিরাঃ হুম??
মাহিনের মাঃ দুধ কলা দিয়ে পুষব সাপ হয়ে বেড় হবে নাতো?
মিরাঃ…..
মাহিনের বোনঃ আমার মাকে কোন কষ্ট দিলে সেদিন এই বাসায় তোমার শেষ দিন হবে।
মিরার সবার সব কথায় রাজি হয়ে যায়। মিরার বোন চলে যাওয়ার পরে মাহিনের মা খুব কান্নাকাটি করে। মাহিনের বাবা তাকে ছাদে নিয়ে কি যেন বলে সে চুপ হয়ে যায়। রুমে এসে মাহিনের বাবা মিরাকে আলাদা ডেকে নিয়ে যায়। মিরার মাথায় হাত রেখে বলে —
মাহিনের বাবাঃ দেখ মা মাহিনের মায়ের মন খুব নরম। তুমি বাসার সব কাজ করবে…. আস্তে আস্তে তার মন জয় করতে পারবে। সে কখনও ঠান্ডা খাবার খেতে পারে না। সব সময় গরম খাবার দিবে।
মিরা তার শশুরের সাপোর্ট পেয়ে খুব খুশি হয়ে যায়। রাতে খাবার শেষে প্লেট ধুয়ে শুতে যায় মাহিনের বোনের সাথে।
মাহিনের বোনঃ দেখ মিরা তুমি আর মাহিন কোনো ফিজিকাল রিলেশন করবে না। যদি ভুল হয়ে যায়। তোমাদের এজ কম আর মাহিন ইনকাম ও করে না।
মিরাঃ হুম আপু। আপনি চিন্তা করবেন না।
মাহিনের বোনঃ আমি মাহিনকেও বলে দিয়েছি
মিরাঃ?
সকালে উঠে মাহিনের কাছ থেকে চা বানানো শিখে নেয়। সবাই উঠে মিরাকে রুটি বানাতে বলে। মিরা তো অবাক হয়ে যায়। রুটি তো ঢাকা টু কুমিল্লা যায় ওর???
মাহিনের বাবা মা নাস্তা খেয়ে বাইরে যায়। মাহিনের বোন রান্না করে আর মিরাকে নানান কিছু শিখিয়ে দেয় সংসারের। এভাবে চলতে থাকে। মাহিনের বোন আর মা এক রাতে বাইরে যায়। বাসায় মিরা আর মাহিন একা।
মাহিন তখন মিরাকে একা পেয়ে খুব খুশি। মাহিন মিরার কাছে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে। মিরা বলে আপু কি বলেছে মনে নেই নাকি?
মাহিনঃ বাদ দাও তো। তুমি আমার বউ। আমি তোমার স্বামী। যে যাই বলুক তাতে কি?
মাহিন মিরাকে কাছে নিতে চাইলেও মিরা যায় না। মাহিন তখন যা বলে শুনে মিরা যেন আকাশ থেকে পরে।
মাহিনঃ ঠিক আছে আমি বাইরের মেয়েদের কাছে যাব। থাক তুমি।
বলেই রাগে বাইরে চলে যায়। মিরা তখন কাদতে থেকে। তার মাহিন এই কথা কিভাবে বলে? মাহিন তো তাকে খুব ভালবাসে। তাহলে এই কথা বলার আগে তার বুক কাপে না কি? মাহিন কি সত্যিই এমন করবে? মিরা আর কিছু ভাবতে পারে না।
হঠাৎ দরজায় কলিং বেল বাজে। মিরা তারাতাড়ি যায় ভাবে মাহিন এসেছে। কিন্তু…..
চলবে….

#সেম_এজ_রিলেশন_বিয়ে
#part_-_06
লেখিকাঃ জিহান জারা

মিরা ভেবেছিল মাহিন এসেছে কিন্তু দরজা খুলে দেখল মাহিনের বোন এসেছে। মিরা তাকে মাহিনের কথা কিছু বলে না। সে মিরাকে বোনের মতোই আদর করতে থাকে। সাদাফের সাথে মিরা দুষ্টুমি করতো খুব। এভাবে মাহিনের দুলাভাই এসে মাহিনের বোনকে একদিন নিয়ে যায়।
মিরা একা হয়ে পড়ে। সারাদিন বাসায় একা থাকে। মাহিন কলেজে যায় আর ওর বাবা মা বাইরে চলে যায়।
মাহিন কিন্তু ওর অধিকার নিয়েই ছেড়েছে। মিরা ও আর না করতে পারে না। যে মিরা খুব দেরিতে ঘুম থেকে উঠত সে মিরা খুব ভোরে উঠে সবার আগে। উঠে নাস্তা বানায়। শাশুরির গোসলের পানি গরম করে। তাদের উঠার আগেই টেবিলে সব রেডি রাখে। তারা চলে গেলে মিরা একটু গিয়ে শোয়। আবার উঠে মাহিনকে খেতে দেয়। মাহিন গেলে সে ঘরের সব কাজ করে। তাদের সব জামা কাপড় ধুয়ে দেয়। রান্না শেষ করে গোসল করে টেবিলে খাবার গুছিয়ে রাখে। মিরা একদম সব নিজের হাতেই করে। সে ইউটিউব দেখে দেখে রান্না শিখে। মাছ কাটা শিখে। নানান রকমের নাস্তাও বানাত বিকেলে।
মিরার শশুর ওকে খুব আদর করত। নিজের মেয়ের মতোই।তাই মিরা একটু ভাল থাকে আরকি।
কিন্তু যেহেতু মিরা আর মাহিনের #সেম_এজ। মাহিন আর মিরার ঝগড়া লেগেই থাকে। মাহিন ঘুমালে মিরা ও ঘুমাতে চায় কিন্তু তা পারেনা। এই নিয়ে ঝগড়া। একটু কিছু হলেই মাহিন মিরাকে মারতো।
মিরা রাগ করে চলে যেতে চায় ওর আপু বলে হুম তোই চলে আয়। সবাই রাজি। মাহিন তো নিশ্চুপ হয়ে গেছে। মিরার খুব খারাপ লাগে কিন্তু বুঝতে দেয় না। যেদিন মিরার যাওয়ার কথা….
মিরার শাশুরিঃ আমরা বাসায় এসে তোকে দিয়ে আসব।
মিরাঃ হুম।
মিরার শশুর তখন কিছু বলে না।চলে যায়।
মাহিন আর মিরা একা আছে। মাহিনকে মিরা খুব করে জড়িয়ে রাখে। বুঝি আর দেখা হবে না। তাদের ভালবাসা শেষ। মাহিন মিরাকে বুঝতে চেষ্টা করে কিন্তু সে যে খুব রেগে এই ডিসিশন নিয়েছে। মাহিন ও বাইরে চলে যায়। মিরা খুব কান্না করে একা বাসায় খুব জোড়েই কান্না করতে থাকে। হঠাৎ তার শশুর ফোন দেয়…
মিরা কিছু বলার আগেই…
মিরার শশুরঃ দেখ মিরা তুই কান্না করতেছিস আমি জানি। তুই কেন চলে যাবি? তুই গেলে মাহিন খুব খারাপ হয়ে যাবে। তুই ও ভাল থাক্তে পারবি না। তুই কোথাও যাবি না ব্যাস।
মিরার খুব হালকা লাগে। সে তার বোনকে বলে আমি যাব না। আবার সব ঠিকই চলে। কিন্তু মাহিন প্রায়ই মিরাকে মারত। ওর শাশুরিও মাঝে মাঝে নানান কথা শোনাত। তবে আদর ও করত। প্রায় ৬ মাস পরে মিরা তার বাবাকে ফোন দেয় কোন আশা ছাড়াই। কিন্তু আল্লাহ এর রহমতে ওর বাবা ওকে মাফ করে দেয়। ওকে বলে বাসায় আসতে। মিরা খুব খুশি। সে ভাবে আগে রান্না পারতাম না এখন পারি। আব্বুকে সব রান্না করে খাওয়াব।
মিরার বাবা আর মাহিনের বাবা ফোনেই কথা বলে। কিন্তু মিরার বাবা না আসলে মিরাকে তারা যেতে দিবে না। মাহিনের ও একই কথা।মিরা পাগল হয়ে গেছে বাবার বাড়ি যেতে। ছোট ভাইটা ওয়েট করে আছে তো। এক রাতে….
মিরাঃ মাহিন আমি বাবার বাড়ি যাব।
মাহিনঃ আমি কিছু জানি না। আব্বু যা বলে তাই।
মিরাঃ তুমি গিয়ে বুঝাও।
বার বার মিরা এক কথা বলে তাই মাহিন খুব জোড়ে মিরাকে থাপ্পড় মারে। ও খুব কান্না করে আর মনে মনে ভাবে সে এখন যাবেই। কিছু সময় পর তার শাশুরি তাকে খাবার দিতে বলে। মিরা বলে মা আমার ভাল লাগছে না। কান্না করছিল আর বলেছিল তারাও জানে তাদের ছেলে তাকে মেরেছে। এইটাই মিরার ভুল। কেন সে খাবার বেড়ে দিল না। সে কিছু কথা শুনিয়ে চলে গেল। মিরার আর ও রাগ হল।
রাতে মাহিন ফোনের সিম ওয়াইফাই এর রাউটার খুলে রাখল। যাতে মিরা তার বাসায় কিছু বলতে না পারে। মিরা রাতে ইচ্ছে করেই মাহিনের কাছে গেল। এইটাই হয়ত শেষ বার। আর কখনও তার কাছে যাবে না সে।
সকালে মাহিন যখন ঘুমিয়ে ছিল মিরা রাউটার অন করে ইমু তে তার বাবাকে ম্যাসেজ দিয়ে বলে আমি আসব। মাহিন আমাকে খুব মেরেছে। আগেও মারত।
সেদিন ও সে নাস্তা বানিয়ে সব ঠিক রাখল। কাওকে বুঝতে দিল না। মাহিনের বাবা মা যাওয়ার পরে মাহিন তখন ও ঘুমায়। আর মিরা আস্তে আস্তে ওর ব্যাগ গুছিয়ে নেয়। বিকেলে মাহিনকে বলে আমাকে বাইরে নিয়ে যাবে? মনটা হালকা হতো। মাহিন বলে ছাদে গেলে যেতে পার। মিরা না করে। সে ভেবেছিল মাহিন যদি তাকে বাইরে নিয়ে যায় তাহলে আর সে যাবে না বাবার বাড়ি। মাহিন একাই বাইরে যায়। বাসা তখন ফাকা। মিরা গেইট খুলা রেখেই রাস্তায় এসে একটা সি এন জি নিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসে। বাসায় এসে মাহিনকে বলে গেইট খুলা বাসায় যেতে। মাহিনের সাথে আর সে যোগাযোগ করে না। মাহিন ২-৩ দিন পরে ম্যাসেজ দিয়ে বলে মিরা তুমি কি জানো তুমি প্রেগন্যান্ট???
মিরা বলে ফালতু কথা বলে লাভ নাই। আমি আর যাব না।
এভাবে মাহিন একদিন মিরার বাসার পাশে আসে। মিরা তাও কথা বলে না। মিরা শরীর খুব একটা ভাল যায় না। তাহলে কি মাহিনের কথাই ঠিক????

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here