ভালোবাসি_প্রিয়তম,পর্ব_১১,১২

0
1603

ভালোবাসি_প্রিয়তম,পর্ব_১১,১২
তাসনিম তামান্না
পর্ব_১১
???

কলেজে এসে তুষারের ফেন্ডদের সাথে দেখা হতে ওরা কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো কুয়াশাদের দিকে। শুধু কেমন আছে আর কাল কেনো আসেনি এইটুকু কথা হয়েছে ওদের মধ্যে। ওরা উত্তরে ভালো আছি আর এমনি আসেনি ছাড়া কিছু বললো না। ওরাও বুঝতে পারছে ওরা কথাটা বলতে চাইছে না তাই আর কথা বাড়াই নি।

কুয়াশার আজ ক্লাস করতে একটুও ভালো লাগছে না মনোযোগ দিতে পারছে না ক্লাসে তাই ক্লাস থেকে বের হয়ে ফাঁকা করিডোর দিয়ে হাঁট ছিলো এদিকটাই তেমন কেউ-ই নেই। এদিকের ক্লাস রুমে ক্লাস হয় না ভাঙা বেঞ্চে ধুলা জমে আছে। কুয়াশা আনমনে হাট ছিলো। তখন কোথা থেকে তুষার ওর সামনে এসে বলল

-সরি (তুষার)

কুয়াশা ভুত দেখার মতো চমকে তাকিয়ে রইলো তুষারের দিকে।

-হোয়াট? এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? (তুষার)

-আব সরি কেনো? (কুয়াশা)

-আসলে আমি সেদিন ওভাবে বলতে চাইনি রাগের মাথায় কি কি বলেছি আমার নিজের ই খেয়াল নাই (তুষার)

-ওহ! ইট’স ওকে। আমিও আপনাকে অনেক কিছু বলছি আমি সরি হ্যাঁ (কুয়াশা)

তুষার কুয়াশা কথায় অবাক হলো ও ভেবেছিলো আজ কুয়াশা হয়তো ওকে অপমান করবে, রেগে যাবে। তুষার তার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলো। কুয়াশা যদি রেগেও যায় তাহলে ও কিছু বলবে না সব মুখ বুজে শুনবে। কিন্তু হলো তার উল্টোটা কুয়াশাও ওকে সরি বলল। এমেয়ে কি দিয়ে তৈরি সেটা ভাবছে তুষার। তুষার কুয়াশার পাশে দাঁড়িয়ে বলল

-চলো হাঁটি (তুষার)

কুয়াশা অবাক হয়ে বলল

-আমার সাথে আপনি? (কুয়াশা)

-হুম। এনি প্রোবলেম? (তুষার)

-রিমা আপু রাগ করবে তো আপনার ওপর? (কুয়াশা)

তুষার কুয়াশা মুখে রিমাকে আপু ডাকতে শুনে আরো অবাক হলো। অন্য মেয়ে হলে রিমার নাম শুনলে তিন/চারটা গালি দিতো আর এ মেয়ে সম্মান দিয়ে আপু ডাকছে।

-রাগ করবে কেনো? (তুষার)

-রাগ করারই কথা ভালোবাসার মানুষকে কেউ অন্য কারোর সাথে সহ্য করতে পারে না!! (কুয়াশা)

তুষার কুয়াশার কথায় চমকালো তুষারেরও তো কুয়াশার পাশে অন্য কাউকে সহ্য হয় না তাহলে কি ও….. না না এসব কি ভাবছে ও। নিজেকে সামলিয়ে বলল

-ও আমার বোন হয় নো ভালোবাসার মানুষ (তুষার)

কুয়াশা দাঁত দিয়ে জ্বী কাটে বলল

-সরি সরি ভাইয়া আমি জানতাম না (কুয়াশা)

তুষার কুয়াশার দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে বলল

-ইট’স ওকে চল হাঁটি (তুষার)

দুজনে চুপচাপ হাটতে লাগলো কেউ কোনো কথা বলছে না। তুষার বলল

-তুমি ক্লাস না করে বাইরে কি করছো (তুষার)

-আসলে ক্লাস করতে ভালো লাগছে না তাই হাঁটছিলাম (কুয়াশা)

আরো কিছুক্ষণ চুপ থেকে তুষার বলল

-মন খারাপ? (তুষার)

কুয়াশা চমকালো তুষার কেমন করে বুঝলো

-কই না তো (কুয়াশা)

-তুমি খুব চাপা (তুষার)

কুয়াশা তুষারকে দেখে আজ চমকাছে তুষার নিজে এসে সরি বলছে, তার সাথে হাটছে, আবার সেধে সেধে কথাও বলছে। যে কি না এটিটিউডের বস্তা সে এসে সরি বলছে। এটা সত্যি অবাক করার বিষয়।

কুয়াশা কিছু বললো না আরো কিছুক্ষণ হাটলো। ব্রেকটাইমে কুয়াশা কলেজ থেকে চলে গেলো আজ ক্লাস করতে কারোই মন বসছে না তাই ওরা বাসায় চলে গেলো।

.

কুয়াশা আর মেঘা কলেজ থেকে বাসায় গিয়ে দেখলো পাখির মা আসছে ওরা কুশল বিনিময় করে রুমে গেলো। পাখির মা মটেও সুবিধার না সুযোগ পেলেই অপমান করে কিন্তু পাখির বাবা অনেক সহজ-সরল। পাখির ভাই ইন্টার ১ম বর্ষে পড়ে। তারা দু’ভাই-বোন-ই ওদের বাবার মতো হয়েছে মনে কোনো প্যাচ নাই। কুয়াশা আর মেঘা ফ্রেশ হয়ে একটু রেস্ট নিয়ে নিচে আসলো একসাথে। পাখির মা তখন সোফায় বসে কুশ আর শানের খেলা দেখছিলো।

-আন্টি আপনি একা আসছেন আঙ্কেল আর সোহান (পাখির ভাই) আসেনি? (মেঘা)

-কেনো আমি একা আসতে পারি না, নাকি একা চলতে পারি না? তোমাদের তো এখনো দিয়ে আসা নিয়ে আসা করতে হয় বলে কি আমাকেও তাই করতে হবে?(পাখির মা)

কুয়াশা আর মেঘা থতমত খেয়ে গেলো কি বললো আর কিসের উত্তর দিলো।

-না না আন্টি আসলে ওটা বলতে চাই নি বলতে…. (কুয়াশা)

-থাক থাক বুঝি আমি আসছি আমার মেয়ের বাড়ি তাই তোমাদের সহ্য হচ্ছে না তাই না (পাখির মা)

কুয়াশা আর মেঘা পাখির মার কথায় কষ্ট পেলো কিন্তু কিছু বললো না চুপ করে রইলো। পাখি রান্না ঘরে থাকায় এসব কিছুই জানলো না।

বিকালে ওরা চারজন গার্ডেনে খেলে বাসায় আসলো। তখনের পর পাখির মায়ের সাথে আর তেমন কথা বলে নি প্রয়োজন ছাড়া। রাতে কুশ আর শান ঘুমিয়ে পড়ছে।

★★★

রাতে সবাই মিলে ডিনার করছে। তখন পাখির মা বলল

-কুশান বাবা বলছিলাম কি কুয়াশা আর মেঘা তো বড় হয়ে গেছে ওদের বিয়ে শাদি নিয়ে কিছু ভাবছো না? (পাখির মা)

কুয়াশা, মেঘা,মেঘের খাবা থেমে গেলো। পাখি অবাক হয়ে বলল

-এসব কি বলছো মা ওরা এখনো ছোট আ… (পাখি)

পাখির মা পাখিকে বলতে না দিয়ে বলল

-কোথায় ছোট ১৯ চলছে ওদের আমার তো ১৭ বছরে বিয়ে হয়ে ছিলো চারিদিকে যা শুনছি বিয়ের আগেই পোয়াতি হয়ে যাচ্ছে ছিঃ ছিঃ (পাখির মা)

কুশান কিছু বলছে না দেখে পাখির মার সাহস পেয়ে বলল

-আমার কাছে অনেক ছেলে আছে যদি বলো তাহলে…. (পাখির মা)

কুশান এবার মুখ খুললো

-আমার বোনদের আমি এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দিবো না ওরা নিজেরা কিছু করবে নিজের পায়ে দাড়াবে। আমার বোনেদের প্রতি আমার বিশ্বাস আছে তারা এমন কিছুই করবে না যাতে তার ভাইদের অসম্মান হবে। আর যদি ওরা কাউকে ভালোবাসে থাকে তাহলে ছেলে যদি ভালো হয় সেখানে যদি ওরা সুখে থাকে। আমার কোনো সমস্যা নাই। আমি আমার বোনদের জন্য বেষ্টটা এনে দিবো। আর মেঘ ওদের বড় মেঘের বিয়ে না দিয়ে ওদের বিয়ে কথা কেনো উঠছে আর আপনাকে এসব নিয়ে এতো না ভাবলেও চলবে ওদের ভাবার জন্য আমরা আছি। (কুশান)

কুশান আর কিছু না খেয়ে উঠে গেলো। কুশান খেলো না বলে আর কেউই খেতে পারলো না ওরা ও উঠে গেলো। পাখির মায়ের মুখটা চুপসে গেলো।পাখি রেগে ওর মাকে বলল

-এটা কি করলে মা ওরা এখনো ছোট আর তুমি ওদের বিয়ে দেওয়ার কথা কেনোই বা তুললে?(পাখি)

-আমি তো তোর ভালোর জন্যই বললাম (পাখির মা)

-মা তোমার আমার আর ভালো করতে হবে না আমি জানি আমার কিসে ভালো হবে তাই এসব আর উল্টো পাল্টা বলো না(পাখি)

কথাটা বলে পাখিও রুমে চলে গেলো। রুমে গিয়ে দেখলো কুশান বেডে মাথা নিচু করে চুপ করে বসে আছে। পাখি কুশানের কাঁধে হাত দিয়ে বলল

-কি হয়েছে মায়ের কথায় কষ্ট পাইছো জানোই তো মা কেমন প্লিজ রাগ করো না (পাখি)

কুশান কিছু বললো না ওভাবেই বসে রইলো। পাখি আবার বললো

-তুমি খাওনি বলে ওরাও কেউ খাইনি (পাখি)

কুশান এবার একটু নড়েচড়ে বসলো। তখন দরজায় নক করলো কুয়াশা আর মেঘা। ওরা ওখান থেকে উঠে দুবোন কান্না করছে।

-ভাইয়া (কুয়াশা+মেঘা)

-বাইরে দাড়িয়ে আছিস কেনো ভিতরে আই (পাখি)

ওরা দুজন ভিতরে এসে কুশানের সামনে মেঝেতে আসন পেতে বসে একসাথে বলল

-ভাইয়া আমরা বিয়ে করবো না কখনো তোমাদের ছাড়া থাকতে পারবো না আমাদের খুব কষ্ট হবে তোমাদের খুব মিস করবো প্লিজ আমাদের বিয়ে দিবা না বলো (বলতে বলতে কেঁদে দিলো ওরা দুজন)

কুশান ওদের দুজনকে জড়িয়ে ধরে বলল

-কাঁদছিস কেনো আমার বাবুইপাখিরা (কুশান)

-ভাইয়া আমরা তোমাদের ছেড়ে কোথাও যাবো না বিয়ে করবো না (মেঘা)

-খুব কষ্ট হবে তোমাদের ছাড়া থাকতে পারবো না মরে যাবো (কুয়াশা)

-মারবো টেনে এক চড় একদম মরার কথা বলবি না (কুশান)

ওরা কিছু বলল না চুপ করে বসে রইলো

-তোদের কি বিয়ে হচ্ছে নাকি এভাবে কাঁদছিস কেনো? তোদের বিয়ে দিয়ে এখানেই রেখে দিবো? চল খাবি… খাসনি কেনো?(কুশান)

-ভালো লাগছে না খাবো না (মেঘা)

-সর আমি খাবো আমার ক্ষুদা লাগছে (কুশান)

ওরা সরলো না ওভাবেই বসে রইলো কুশান পাখিকে ইশারা করলো পাখি ইশারা বুঝতে পেরে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর খাবার নিয়ে আসলো পাখি।খাবার রেখে আবার চলে গেলো। কুশান ওদের সোফায় বসিয়ে বলল

-আরেকটা ছাগল কই (কুশান)

তখন দরজার সামনে পাখি আর মেঘ দাড়িয়ে বলল

-তুই আমাকে ছাগল বললি (মেঘ)

-কই? কখন? কোথায়? কিভাবে? (কুশান)

কুশানের কথায় ওরা ফিক করে হেসে দিলো।কুশান ওদের হাসিমাখা মুখ দেখে শান্তি খুঁজে পেলো। ওদেরকে খাইয়ে দিতে লাগলো।

-আমাকে দিবা না? (পাখি)

-তুমিই বাকি ছিলা আসো তাইলে (কুশান)

-এমনে বললা কেন যাও খাবো না (পাখি)

-তুমি রাগ করলা (কুশান)

-না আ…..(পাখি)

পাখি আর কিছু বলতে পারল না তার আগে কুশান গালে ভাত দিয়ে দিলো। পাখির চোখ বড়বড় হয়ে গেলো। ওরা তিনজন হেসে গড়াগড়ি খেতে লাগলো।

★★★

চারিদিকে কৃত্রিম আলোই ভরপুর রাতেও বেলাতেও রাস্তায় গাড়ির ভির। আজ আকাশটাতে চাঁদ তাঁরা নেই মেঘর কারণে ঢেকে আছে। তুষার এগুলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখছে স্মোক করছে। তখনি ওর ফোনে কল আসলো হাতে নিয়ে দেখলো ফোনের স্কিনে ‘♥Kolixa♥’ নামটা জল জল করছে মুখে এক চিলতে হাসি ফুটলো। সিগারেটটা ফেলে দিয়ে ফোন রিসিভ করে কানে দিলো।তুষারকে কিছু বলতে না দিয়ে ওপাশ থেকে বলতে শুরু করলো

-……

-আমার এতোক্ষণই লাগে ফোন রিসিভ করতে তোর কি (তুষার)

-……..

-হ্যাঁ তুই কোন দেশের প্রসিডেন্ট যে তোকে মনে রাখতে হবে (তুষার)

-……..

-আমি আবার কি বললাম (তুষার)

-…….

-ফোন লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলছিস জানিস না এটা আমার অপছন্দ (তুষার)

-……….

-আর যদি এমন করিস তাহলে আমি তোকে আর ফোন দিবো না তুই ফোন দিলে ধরবো না(তুষার)

বলে রেগে ফোন কেটে দিলো।

#চলবে
#tasnim_tamanna

[আসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠনমূলক কমেন্ট করবেন।]

#তাসনিম_তামান্না
#ভালোবাসি_প্রিয়তম
#পর্ব_১২

???

সেদিনের পর আজ দু’দিন হয়ে গেছে। পাখির মা তার পরের দিনই চলে গেছিলো। অনেক আটকানোর পরও তিনি থাকেন নি চলে গেছিলেন।

ক্লাসে কুয়াশা, মেঘা, অনু, রাহুল, ঈশান বসে গল্প করছে। স্যাররা মিটিং করছে কোনো একটা বিষয় নিয়ে তাই আর ক্লাস হচ্ছে না সেখানে কিছু সিনিয়র রাও আছে। অনেকে কৌতূহল হয়ে সে দিকে ঘুর ঘুর করছে। আবার কেউ কেউ ওদের মতো আড্ডা দিচ্ছে, প্রেম করছে, কেউ পড়ছে, কেউ গান গাইছে।

-দূর এ সিংগেল জীবন আর ভালো লাগে না (ঈশান)

-আহারে বেচারা (অনু)

-এভাবে দুক্কু প্রকাশ না করে তো একটা গফ জুটাই দিতে পারিস (ঈশান)

-ক্যান আমাকে কি তোর ঘটক মনে হচ্ছে (অনু)

-আমার জন্য না হয় একটু ঘটকগিরি করলি (ঈশান)

-ঠেকা পড়ে নি আমার হুহ (অনু)

-ওরে ওরে দোস্ত (ঈশান)

ঈশান রাহুলকে ধাক্কা দিয়ে বলল। রাহুল বিরক্তি নিয়ে বলল

-আমারে আবার এর মধ্যে টানছিস কেনো (রাহুল)

-দোস্ত তোর না একটা বোন আছে (ঈশান)

ঈশান লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বলল।ঈশানের কথা শুনে রাহুলের চোখ বড়বড় হয়ে গেলো দাঁতে দাঁত চেপে বলল

-নজর ঠিক কর শালা আমার বোন মানে তোও বোন (রাহুল)

-সবাইরে যদি বোন ভাবি তাইলে বউ বানামু কা রে (ঈশান)

ওদের কথা শুনে কুয়াশা এতক্ষণ হাসছিলো কিন্তু ঈশানের শেষের কথারা শুনে বলল

-কেন উমা আছে তো (কুয়াশা)

উমা নাম টা শুনে ঈশানের চোখ বড়বড় হয়ে গেলো। আর ওরা তিনজন একসাথে বলল

-উমা? উমা কে?

-ঈশান বাবু তুমি বলবা নাকি আমি বলবো (কুয়াশা)

কথাটি বলে কুয়াশা বাঁকা হাসলো। ঈশান কুয়াশা দিকে তাকিয়ে একটা শুকনো ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলল

-আ আমি ককি বলবো? আর উমা কে হ্যাঁ? আর আমি কোনো উমা টুমাকে চিনি না! (ঈশান)

-আমি কখন বলাম তুই উমাকে চিনিস? হাহ কথায় আছে না ” ঠাকুর ঘরে কে রে? -আমি তো কলা খাই নি!” ব্যাপারটা ঠিক তেমন তাই না? (কুয়াশা)

ঈশান চোরের মতো এদিক ওদিক তাকাছে। মেঘা, অনু, রাহুল বেচারারা কিছু বুঝতে পারছে না শুধু বোকার মতো চেয়ে রইলো ওদের মুখ পানে। ঈশান কিছু বলছে না দেখে কুয়াশা বলল

-তুই বলবি নাকি আমি বলবো (কুয়াশা)

ঈশান জ্বী দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল

-আব তুই কি বলবি (ঈশান)

-আমি যা জানি সেটা বলবো (কুয়াশা)

-তুতুতুই কি জানিস (ঈশান)

কুয়াশা ঈশানের মতো করে বলল

-এএএএএই যে উওওওওমা তোর কি হয় (কুয়াশা)

ঈশান কাঁদো কাঁদো মুখে তাকিয়ে রইলো

-তোরা কি বলছিস একটু ক্লিয়ারলি বলতো দূর ছাতার মাথা কিছু বুঝতেছি না উমা টুমা কি? (মেঘা)

-উমা আমাদের ভাবী হয়। ক্লাস টেনের স্টুডেন্ট (কুয়াশা)

-ভাবী? (অনু)

-তুই মিঙ্গেল আর আমরা জানি না (রাহুল)

উৎতেজোয়ায় বেশ জোরে কথাটা বলে ফেললো।ঈশান কাঁদো কাঁদো মুখে বলল ।

-বিশ্বাস কর দোস্ত আমি. আহহহ…(ঈশান)

ঈশানকে কিছু বলতে না দিয়ে ওরা ওকে মারতে লাগলো।

-তুই মিঙ্গেল আর আমাদের ট্রিট দিলি না, বিয়ে তে দাওয়াত দিলি না, আমাদের আগে বললি না, আমরা তোর কেউ না

এমন কথা বলছে আর ওরা তিনজন মিলে মারছে আর কুয়াশা হাসছে বসে বসে। ক্লাসে যারা আছে তারা তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে কি হচ্ছে। কুয়াশা অবস্থা বেগতিক দেখে ওদের থামালো। থামিয়ে বলল

-আরে বিয়ে ঠিক হয়ে আছে বাসা থেকে এখনো বিয়ে হয় নাই (কুয়াশা)

-তুই কেমনে জানলি (অনু)

-আগে ও কিছু বলুক আমাদের ভাবির নামে তারপর টপ সিক্রেট বোম ফাটাবো (কুয়াশা)

ঈশান ব্যাথায় জামা টেনেটুনে চুল ঠিক করে বসে বিরক্তি নিয়ে বলল

-ঔ মেয়েরে নিয়ে কি বলবো হ্যাঁ শালা একটা ডাইনি ওরে আমি বোন ভাবতাম আর ওই মহিলা আমারে ফাঁসাইয়া ওর হবু বাবাই নিছে (ঈশান)

-মানে কেমনে কি ভালো কইরা ক নাই লে একটা মারও নিচে পড়ে না (রাহুল)

-আরে না না কইতাছি আসলে উমা আমার ফুফাতো বোন ও আমাদের বাড়ি যখন আসতো ইনফেক্ট এখনো যখন আমাদের বাড়ি আসে ভাইরে ভাই কি দুঃখের কথা কি আর কমু ও আমার ইজ্জত নিয়ে টানাটানি করে। (নেকাকান্না করে বলল ঈশান)

চারজন ওর মুখের কাছে গিয়ে বলল

-কি করে?

-জড়িয়ে ধরে, চুমু খাই, আমার শার্ট নিয়ে টানা টানি করে ভাইরে ভাই আমারে একটু শান্তি তে থাকতে দেই না। আমার আর ওকে এভাবে একদিন জড়িয়ে ধরতে দেখে নেই দাদু তখন থেকে বিয়ে ঠিক হয়ে আছে থুক্কু কাবিন করানো আছে ওর আঠারো বছর হলে অনুষ্ঠান করে আনবে (ঈশান)

-এতো কিছু ঘটে গেছে আর আমাদের বলিস নাই আবার ঘরে বউ রাইখা পরকিয়া করতে চাস ধর শালা রে ধর (অনু)

-আর মারিস না বইন এমনিতেই গা ব্যাথা করে দিছিস (ঈশান)

-আচ্ছা মারবো না কিন্তু আমাদের ট্রিট চাই সাথে ভাবীর সাথে মিট করতে চাই (মেঘা)

মেঘার সাথে তাল মিলিয়ে ওরা তিনজন ও বলল।

-আচ্ছা ও রে নিয়ে বের হবো। তার আগে কুয়াশা তুই কেমনে জানলি সেটা ক (ঈশান)

-আরে আমি তোর কাছে কিছুদিন আগে ফোন দিসিলাম তখন উমা ফোন ধরে আমাকে জেরা করতে থাকে আমি কে, ঈশানের সাথে কি সম্পর্ক, ঈশানের সাথে কি কথা, ভাভাগো ভাভা পুরাই সিআইডি (কুয়াশা)

-শালা ঐ একখান বাঁচাল মহিলা তারপর বল (ঈশান)

-সবকিছু শুনে বলল আমার কাছে ও পড়ে ফোন দিবে। যেনো আমি ফোনটা ধরি। ও ফোন দিয়ে তোর সম্পর্কে শোনে তুই ঠিক মতো খাস কিনা, ঠিক মতো পড়া শোনা করছিস কিনা, কোনো মেয়ের দিকে তাকাস কি না এসব মেয়েটা সত্যি তোকে অনেক ভালোবাসে এভাবে অবহেলা করিস না হারিয়ে গেলে ফিরে পাবি না তখন আফসোস করবি। আমি জানি তুই ও ওকে ভালোবাসিস কিন্তু প্রকাশ করতে চাস না (কুয়াশা)

ঈশান শুধু মুচকি হাসলো। ওরা চারজন হইহই করে উঠলো। ওরা আরো কিছুক্ষণ গল্প করে। বাড়ি যাবার জন্য নিচে আসলো। তুষারের ফেন্ডরা দাড়ি কি নিয়ে যেনো আলোচনা করছে ওরা ওদিকে গেলো।

-কি করছেন আলোচনা করছেন আপু আপনারা (মেঘা)

-আরে তোমরা এতোক্ষণ পর আসলে, আমরা পিকনিক নিয়ে কথা বলছিলাম তোমরা যাবে তো অনেক মজা হবে (রুকাইয়া)

ওদের মুখটা চুপসে গেলো। কারণ পাখি,কুশান জার্নি করতে দিবে না। সে এক্সিডেনের পর ওদের জার্নি করতে দেই না বেশি।

-পিকনিক? (কুয়াশা)

-হুম (তন্নি)

-কোথায় নিয়ে যাবে পিকনিকে? (ঈশান)

-জানি না তুষার আর রিদ আসুক ওরা ওখানেই ছিলো মিটিং শেষ ওরা আসলে জানা জাবে (সাদাফ)

-ওহ আচ্ছা (মেঘা)

-তোমাদের ভাইও আসছে ভিতরে আছে (হাসান)

-মেঘ ভাইয়া (রাহুল)

-হ্যাঁ (হাসান)

-ওহ তাহলে তোরা ভাইয়ার সাথে বাসায় যাস আমি যায় একটা কাজ আছে (ঈশান)

ঈশানের সাথে অনু,রাহুলও চলে গেলো।

.☆.

-মেঘ তোমরা যাচ্ছো না আমি জানি কেনো যাবে না তাও বললাম বাকিটা তোমাদের ইচ্ছে (হেডস্যার)

-জী স্যার ভাইয়া, ভাবিপু যেতে দিবে না ওতো দূরের জার্নিতে (মেঘ)

-আমি জানি তোমাদের ব্যাপাটা তাও বললাম যদি যাও ভালো হতো (হেডস্যার)

-জী স্যার (মেঘ)

-তুষার, রিদ তোমরা লিস করে নাও কে কে যাবে কাল থেকে কাজ শুরু করে দাও (হেডস্যার)

-জী স্যার (রিদ)

-আচ্ছা আমরা যায় স্যার (তুষার)

-হ্যাঁ যাও (হেডস্যার)

ওরা চলে গেলো। মেঘ আর হেডস্যার আরো কথা বলতে লাগলো।

☆☆☆

কুয়াশা আর মেঘা ওরা মেঘার জন্য ওয়েট করতে করতে কলেজের বাইরে চলে আসলো গাড়ির কাছে। কুয়াশা এদিক ওদিক হাটছিলো তখন কোথা থেকে একটা কালো গাড়ি এসে কুয়াশার মুখ চেপে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে চলে গেলো। মেঘা চিৎকার করতে লাগলো কিন্তু কোনো কাজ হলো না কিছু দূর গাড়ি পিছনে ছুটলো কিন্তু কোনো কাজ হলো না চলে গেলো গাড়ি চোখের বাইরে আর খুজে পেলো না। ঘটনাটা এতো তাড়াতাড়ি ঘটে গেলো মেঘা হতভম্ব হয়ে গেলো। কেমন রিয়াক্ট করা উচিত সেটাই বুঝতে পারছে না।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here