ভালোবাসি_প্রিয়তম,পর্ব_১৮
তাসনিম_তামান্না
???
কুয়াশা চোখ পিটপিট করে তাকালো চোখে আলো লাগায় চোখ বন্ধ করে একটু পর আবার খুললো। নড়েচড়ে উঠতেই হাতে মাথায় ব্যাথায় চারিপাশ দেখে নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করে অবাক হলো তুষারকে দেখে আরও অবাক হলো। বেডের পাশে তুষার কুয়াশার কাটা হাট ধরে মাথা এলিয়ে দিয়েছিলো কখন ও নিজেও জানে না। কুয়াশা তুষারের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো তুষারের ক্লান্তি মাখা গোলাপি মুখ, শুকনো ঠোঁট, এলোমেলো চুল এতে তুষারকে কিউট লাগছে। কুয়াশা নিজ মনে মলিন হাসলো। মেঘ,কুশ,শানের কথা মনে পড়তে ওর অস্থির লাগতে লাগলো কোথায় ওরা? কুয়াশা তুষারের ঘুম ভাঙাতে চাইছে না সাবধানে আস্তে আস্তে তুষারকে না জাগিয়ে উঠতে নিলেই তুষার জেগে যায়।
-কি হচ্ছে কোথায় কষ্ট হচ্ছে তোমার? মাথা ব্যাথা করছে? দাড়াও ডক্টরকে ডাকছি? (তুষার)
কুয়াশা তুষারের দিকে চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে ছিলো ওর কথা শুনছিলো। তুষার যেতে নিলেই কুয়াশা বলে উঠলো
-না না আমার কিছু হচ্ছে না (কুয়াশা)
তুষার কুয়াশার মাথাটা নিজের বুকে রাখলো আলতো করে। কুয়াশা তুষারের হাতুড়ি পিটানো থুক্কু ধুকপুকানি শুনতে পারছে এস্পষ্ট। কিছুক্ষণ ওভাবে রেখে মাথায় চুমু দিয়ে সরে এসে বলল
-ওহ তোমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো (তুষার)
-না কুশ,শান, ভাইয়া কোথায় ওরা (কুয়াশা)
-শান্ত হও সবাই ঠিক আছে সুস্থ আছে মেঘেও সন্ধ্যার দিকে জ্ঞান ফিরছে (তুষার)
-সত্যি আমি ভাইয়ার কাছে যাবো (কুয়াশা)
-এখন মাঝরাত ওরা ঘুমাছে এখন কোথায় যাবে তাছাড়া তুমিও অসুস্থ সিলাইন চলছে কাল দেখা করো (তুষার)
-ওহ আপনি এখানে? আপনি তো…. (কুয়াশা)
-এসব প্রশ্নের উত্তর পরে দিবো তুমি বসো আমি তোমার জন্য খাবার আনছি (তুষার)
-এতোরাতে খাবার কোথায় পাবেন (কুয়াশা)
-আগে থেকে খাবার এনে রাখছি ভাবিপু (তুষার)
-ওহ ওরা কোথায় (কুয়াশা)
-ওদের বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি (তুষার)
-তাহলে ভাইয়া একা ভাইয়ার ওখানে কেউ ন…(কুয়াশা)
-কুয়াশা এতো প্রশ্ন করছো বাবা গো চুপ থাকো না হলে মাথা ব্যাথা করবে আর মেঘের ওখানে তুতুল আছে (তুষার)
-ওহ কিন্তু (কুয়াশা)
-আমি মাঝে মাঝে গিয়ে দেখে আসছি আর ভাইয়াও মাঝে মাঝে ফোন দিয়ে খবর নিচ্ছে সবার, কোনো প্রশ্ন (তুষার)
কুয়াশা দুদিকে মাথায় নাড়াতে গেলে ব্যাথায় চোখ মুখ কুচকে ফেললো। তুষার সেটা দেখেও কিছু বলল না খাবার নিয়ে কুয়াশার মুখের সামনে ধরলো। কুয়াশা অবাক হয়ে বলল
-আপনি আ..(কুয়াশা)
-নো মোর ওয়াডস (তুষার)
কুয়াশা কোনো কথা না বলে তুষারের হাতেই খেতে লাগলো কুয়াশা চাইলেও নিজের হাতে খেতে পারতো না ডান হাতে ব্যন্ডেস করা বা হাতে সেলাইন দেওয়া। দুই তিন লোকমা খেয়ে কুয়াশা তুষারকে প্রশ্ন করলো
-আপনি খাইছেন (কুয়াশা)
তুষার কুয়াশা প্রশ্নে থমকালো কুয়াশার মনে ওর জন্য চিন্তা আছে দেখে একটু হেসে বলল
-না (তুষার)
-ওমা কেনো..(কুয়াশা)
তুষার কুয়াশার দিকে তাকাতে কুয়াশা বলল
-ওমন করে তাকান কেন ভয় পাই না কি আমি? হুহ মটেও না (কুয়াশা)
-ও আচ্ছা তাই নাকি বাহ তারপর (তুষার)
-তারপর আর কিছুই না আপনি এর থেকে খান আমি তো এতোটা খেতে পারবো না (কুয়াশা)
তুষারও আর কিছু না বলে নিজে ও কুয়াশাকে খাইয়ে দিলো। খাওয়া শেষে কুয়াশাকে ঔষধ খাইয়ে দিয়ে সব গুছিয়ে রেখে এসে বলল
-শুয়ে পড় এবার (তুষার)
কুয়াশা মুখটা কাচুমাচু করে বলল
-আ..আমি আ..সলে (কুয়াশা)
-কি আআআ করছো যা বলার স্পষ্ট বলো (তুষার)
কুয়াশা কাঁদো কাঁদো মুখে বলল
-আমি ওয়াসরুম যাবো (কুয়াশা)
-হ্যাঁ তো যাবে সমস্যা কি (তুষার)
-কি ভাবে যাবো (কুয়াশা)
-কিভাবে আবার পায়ে হেঁটে (তুষার)
-আরে সেটা তো আমি জানি কিন্তু সেলাইন খুলে দিলে আমার ব্যাথা লাগবে তাই না (কুয়াশা)
কুয়াশার বাচ্চাদের মতো কথা বলা দেখে তুষার মুখ টিপে হাসলো তাদেখে কুয়াশা বলল
-আপনি হাসছেন? (কুয়াশা)
-কই না তো দাঁড়াও আমি সেলাইন খুলে দিচ্ছি ব্যাথা পাবা না (তুষার)
-না না থাক লাগবে না আমি কোথাও যাচ্ছি না আমি তো এমনি বলছিলাম ঔ আর কি (কুয়াশা)
তুষার চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে কুয়াশার দিকে এগিয়ে গেলো। সেটা দেখে কুয়াশা চোখ বড়বড় হয়ে গেলো। তুষার কুয়াশা তাকানো দেখে হাসলো মনে মনে। তুষার আস্তে করে কুয়াশার হাত থেকে সেলাইনের নলটা খুলে নিলো কুয়াশা তুষারের দিকে তাকিয়ে থাকায় এতো মগ্ন ছিলো যে ও টেরই পাই নি। সেলাইন খোলা হয়ে গেলে তুষার বলল
-ডান (তুষার)
কুয়াশা কিছু বুঝতে না পেরে বলল
-কিসের ডান (কুয়াশা)
তুষার চোখ দিয়ে ইশারা করলো হাতের দিকে কুয়াশা চোখ বড়বড় হয়ে গেলো অবাক হয়ে বলল
-খুলে দিলেন কই ব্যাথা পেলাম না তো (কুয়াশা)
-এটাই আমার টেনেল্ট (তুষার ভাব নিয়ে বলল)
কুয়াশা বোকার মতো করে চেয়ে রইলো।
-আমাকে দেখার সময় পাবেন এখন যান (তুষার)
তুষারের কথায় লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে বেড থেকে নেমে দাঁড়ালো যেই পা আগাতে যাবে সাথে সাথে চোখ মুখ কুচকে বেড ধরে বসে পড়লো। তুষার কাছে এসে বলল
-কি হইছে মাথা ঘুরছে (তুষার)
-না আমার পা (কুয়াশা)
তুষার ফ্লোরে বসে কুয়াশার পায়ে হাত দিতেই কুয়াশা চোখ মুখ কুচকেই চেচিয়ে উঠলো তুষার বোকা বনে গেলো
-আরে এভাবে চেঁচাচ্ছ কেনো কি হইছে বলবা তো (তুষার)
-আমার পা, পা ঝিঁঝিঁ পোঁকা লাগছে (কুয়াশা)
-কিহ? কি পোঁকা কই দেখি বিষাক্ত নাকি? কামড় দিচ্ছে নাকি? (তুষার)
তুষার আবার পায়ে হাত দিতেই কুয়াশা চেচিয়ে তুষারের কাঁধ খামছে ধরে বলল
-না না হাত দিয়েন না আমার পা অবাস হয়ে গেছে অনেকক্ষণ না নাড়ানোর জন্য (কুয়াশা)
তুষার ছেড়ে দিলো কুয়াশার পা আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে গেলো কুয়াশার পা এতোক্ষণ চোখ মুখ কুচকে বসে ছিলো পা ঠিক হতেই চোখ খুলে তুষারের দিকে তাকালো তুষার এখনো ফ্লোরে বসে আছে আর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কুয়াশার দিকে কুয়াশা তাকাতেই তুষার বলল
-এমন করে কেউ ভয় পেয়ে গেছিলাম (তুষার)
-আপনিও ভয় পান (কুয়াশা)
-মজা করছো (তুষার)
-কই না তো সরুন আমি যাবো (কুয়াশা)
তুষারও আর কিছু বললো না।কুয়াশা যেতেই তুষার মেঘের কেবিনে দেখে আসলো ওরা ঘুমাছে। কুয়াশা ওয়াসরুম থেকে এসে তুষারকে বলল
-আপনি বাসায় চলে যান (কুয়াশা)
-হোয়াট? (তুষার)
তুষারে ধমকে কেঁপে উঠল কুয়াশা। কুয়াশা কিছু বলছে না দেখে তুষার রেগে বলল
-কি বললে তুমি আমি বাসায় চলে যাবো? কেনো?(তুষার)
-নননা মানে আমি তো এখন সুস্থ হয়ে গেছি আপনি কোথায় থাকবেন এখানে আপনার কষ্ট হবে তাই আর কি বলছিলাম বাসায় চলে যান (কুয়াশা)
-সেটা তোমাকে ভাবতে হবে না। শুয়ে পড়ো (তুষার)
তুষারের রাগী ফেস দেখে কুয়াশার আর কিছু বলার সাহস পেলো না চুপচাপ বেডে গিয়ে শুয়ে পড়লো তুষার কুয়াশার হাতে আবার সেলাইয়ের নল লাগিয়ে দিলো। কুয়াশার কপালে চুমু খেয়ে তুষার কিছু না বলে বেডের পাশে চেয়ার দিয়ে কুয়াশা পেটের ওপরে মাথা দিলো কুয়াশা কেঁপে উঠল
-এ এ কি আপনি ক কি ক রছেন (কুয়াশা)
-চুপ একটাও কথা নই আমি আমার বউয়ের পেটে শুয়েছি তাতে তোমার কি (তুষার)
বলে কুয়াশার পেটে মুখ গুঁজে দিলো। তুষারের গরম নিঃশ্বাস কুয়াশার পেটে লাগছে। কুয়াশার শ্বাস আটকে গেলো। কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক হয়ে গেলো নিজের অজান্তেই তুষারের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ঘুমিয়ে গেলো।
★★★
সকালে তুষারে আগে ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ খুলে কুয়াশার বাচ্চাদের মতো করে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে হেসে গাল টেনে কপালে চুমু একে সেলাইন শেষ হয়ে যাওয়ায় নল খুলে ফ্রেশ হতে গেলো।
দরজায় নক করার শব্দে কুয়াশার ঘুম ভেঙে গেলো ঘুম ঘুম গলায় বলল
-কে? দরজা খোলায় আছে (কুয়াশা)
দরজা ঠেলে রুমে প্রবেশ করলো তুতুল হাসিহাসি মুখ নিয়ে কুয়াশার পাশে দাঁড়িয়ে বলল
-কেমন আছো পিচ্চি (তুতুল)
-ভালো আছি তুমি কেমন আছো (কুয়াশা)
-হুম আমিও ভালো আছি (তুতুল)
-ভাইয়া কি করছে (কুয়াশা)
-ঘুমাছেন উনি (তুতুল)
-দাড়িয়ে আছো কেনো বস আপু (কুয়াশা)
-এতো ফর্মালিটির দরকার নাই পিচ্চি এতোক্ষণ বসেই ছিলাম এখন না হয় দাড়িয়ে থাকি (তুতুল)
-আচ্ছা খাইছো কিছু (কুয়াশা)
-ওরে পিচ্চি রে পরে খাবো সবদিকে খেয়াল আর আরেটাতো অজ্ঞান হচ্ছে কাল থেকে রক্ত দেখে (তুতুল)
-মেঘা (কুয়াশা)
-হুম পিচ্চি (তুতুল)
-আপু একদম পিচ্চি পিচ্চি করবা না আমি মটেও পিচ্চি না তোমার থেকে মাত্র একবছরের ছোট বলে পিচ্চি বলে খেপাবা (কুয়াশ)
-ওরে পিচ্চি দেখি আবার রাগও করে (তুতুল)
-আপুউউ (কুয়াশা)
-আচ্ছা আচ্ছা আর বলবো না (তুতুল)
তখন ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে তুষার। তুতুলের দিকে তীক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে কারোর সাথে না বলে বাইরে চলে গেলো। তুতুল অস্পষ্ট সরে বলল
-ভা ই য়া (তুতুল)
চলবে