“তৃ-তনয়া” পর্ব- ১০২

0
2285

“তৃ-তনয়া”
পর্ব- ১০২
(নূর নাফিসা)
.
.
– এ..! তাহলে কি এখন বিয়েটা খাওয়া হবে না আমার!
– রোজা থেকেও এতোবার খাওয়ার নাম জপো!
– ধুর! খালি বেশি বেশি।
নাফিসা রুম থেকে বের হতে গেলে ইমরান বললো,
– যাচ্ছো কোথায়? নিশাতকে রাজি করিয়ে বিয়ে ঠিক করতে!
– বেশি কথা বলবা না একদম! ইফতার কি তুমি তৈরি করবা?
– সাবধানে। আবার ভুলে যেওনা তুমি রোজা রেখেছো।
নাফিসা দরজার বাইরে এগিয়ে এসেছিলো। ইমরানের কথা শুনে আবার পিছু পথে ইমরানের সামনে এসে বললো,
– কি বললে? আবার বলো…
ইমরান হালকা কেশে খাটের দিকে যেতে যেতে বললো,
– বললাম আমার পড়া আছে, জিহান যেন এখন এসে ডিস্টার্ব না করে।
– সত্যি কথা, এখন কিছু একটা দিয়ে ঠিক মাথায় মারতাম!
কথাটা বলে নাফিসা চোখ রাঙিয়ে চলে গেলো আর ইমরান হেসে উঠলো।
আবিদা বেগম শোনা মাত্রই রাজি হয়ে গেছেন। তাছাড়া ওদিকে আয়েশা বেগম দিনকাল, ছেলেমেয়ের ব্যাপারস্যাপার, ভালোমন্দ বুঝিয়ে দিয়েছেন বোনকে। যা আবিদা বেগমের কাছে যুক্তিযুক্ত। তারও একই মতামত, মেয়ে উপযুক্ত হয়ে গেছে যেহেতু ঘরে বসিয়ে রাখবে কেন! তাছাড়া যথেষ্ট পড়াশোনা হয়েছে, এরপরও যদি করতে চায় তো জামাই করাবে এই প্রত্যাশা রেখেছিলেন তিনি। আর এখন তো জামাই হিসেবে আশিককে পেয়ে যাচ্ছে, তাহলে আর চিন্তা কি! চোখ বুজেই বিয়ে দেওয়া যায়! কিন্তু আরমান ও ইমরান উভয়েই অমত পোষণ করছে। আশিকের সাথে বিয়ে দিবে তার জন্য নয়, তাদের অমত তারা নিশাতের ভার্সিটির পড়াশোনা শেষ করিয়ে বিয়ে দিবে। প্রয়োজনে এ ব্যাপারে খালামনির সাথে কথা বলবে। তাদের ধারণা খালামনিই তারাহুরো করছে। আশিক যে সয়ং ব্যাপারটা তুলেছে সেটা তাদের ধারণার বাইরে।
আর নিশাত? যখনই তার সামনে বিয়ের কথা উঠছে তখনই নিশাত বিরক্তির সাথে বলছে সে আশিককে বিয়ে করবে না, না, না! যদি বাড়ি থেকে বিদায় করা এতো জরুরি হয় তবে অন্যত্র পাত্র দেখুক।
বড়মা নিশাতকে যেমন শান্ত রাখার চেষ্টা করছে তেমন সবার মতামত ভাবছে আর ভাবছে! আবিদার ইচ্ছেটাকেও সরাসরি রিজেক্ট করতে পারছে না বড়মা। যতই হোক, মেয়েটা তার। অবশ্যই তার মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। জেরিন নিশ্চুপ হয়ে শুনে যাচ্ছে, আর নাফিসা কনফিউশান এ আছে বিয়েটা খেতে পারবে কি পারবে না! অর্থাৎ আশিক নিশাতের বিয়েটা হবে কি হবে না! তার বাইরেও বারবার এটা ভাবছে নিশাত আশিককে পছন্দ করতো কিন্তু বিয়ের কথা শুনে কান্না কেন করছে!
বউদের কাছে কোনো মতামত চাওয়া হয়নি এ ব্যাপারে। কি আর চাইবে, তারা মূল সদস্যরাই কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না। এমনকি বেশি একটা ভাবছেও না। শুধু আয়েশা বেগম আর আবিদা বেগমই যেন মেতে আছে! দুপুর থেকে কতবার যে ফোনে কথা বললো তার হিসেব নেই। আর বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত একটু পরপরই যেন এ নিয়ে এক আসর বসিয়েছেন আবিদা বেগম!
নাফিসা আজ দিনে কথা বলতে পারেনি তাই ইফতারের পর কথা বলছিলো মা বাবা ও আপুদের সাথে। প্রথমে নাহিদা কল করেছিলো। তার সাথে কথা বলে বাবা মায়ের সাথে কথা বললো। এরপর আবার কল করলো নাজিয়ার কাছে। নাজিয়া কল কেটে দিয়ে আরাফের ফোন থেকে ডায়াল করেছে। তার সাথে কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে জানতে পারলো আশিক নাকি নিজেই বিয়ের প্রস্তাব দিতে বলেছে! এ কথা শোনার পর নাফিসার মাথায় পুরো গন্ডগোল লেগে গেছে! এমনিতেই এ বাড়িতে একটু পরপর এক এক ধরণের শুটিং দেখছে! এখন আবার আরেক ব্যাপার জেনে তার মাথায় সত্যি সত্যিই ব্যাথা উঠে গেছে! এতোদিন নিশ্চিত ছিলো নিশাত পছন্দ করে আর আশিক বোধহয় কিছু জানতোই না! আর এখন নিশাত কান্না করে বিয়ে করবে না আর আশিক নাকি সয়ং বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে!
অসহ্য লাগছে তবুও বড় ঘরেই বসে ছিলো নাফিসা! একা তার রুমে যাবে না বলে। তাদের মুখের গপ্পো শুনতে শুনতে ভোররাতের রান্না কোনো মতো শেষ করে নিয়েছে শ্বাশুড়িদের সাথে। জেরিন তো দিনরাত কামড়াবন্দি ই থাকে! ইশার নামাজ ও তারাবিহ পড়ে যখন খাওয়াদাওয়ার পর্ব শেষ হলো তখন আবার সব গুছিয়ে সে দাড়িয়ে রইলো। এমনিতেই এক মজলিস, তার উপর দুইভাই খেলা দেখতে বসেছে! কোন দেশের খেলা চলছে তা-ও বলতে পারবে না নাফিসা! তার মা ও বড়মার সাথে কথাও বলছিলো খেলাও দেখছিলো! কিভাবে পারে! অন্যান্য সদস্যরা এখানে থাকায় সে ডাকতেও পারছে না ইমরানকে! এবার সে কৌশলে ইমরানকে ডাকলো চাবি কোথায় তা জিজ্ঞেস করে! ইমরান তার দিকে তাকাতেই সে ইশারায় আসতে বললো। ইমরান উঠে এলো ড্রয়িং রুমের বাইরে।
– কি?
– ঘরে যাবো।
– বাইরে দাড়িয়ে আছো?
– ধ্যাৎ! ফাজলামো করো না। আমার খারাপ লাগছে।
– কি হয়েছে?
– মাথা ব্যাথা করছে।
– এই ম্যাচটা শেষ হোক, তারপর যাবো। এখন গিয়ে বড়মার রুমে শুয়ে থাকো।
– বড়মার রুমে গেলে আজ আর আমার রুমে যেতে পারবো না। চলো প্লিজ।
– একটু বাকি আছে।
নাফিসা রেগে বললো,
– তোমার আসতে হবে না। চাবি দাও। আমি একাই যাবো।
– চাবি তো তোমার কাছেই আছে। তো যাও…
– রুমের চাবি?
ইমরান পকেট থেকে শুধু রুমের চাবিটা বের করে দিয়ে আবার খেলা দেখতে চলে গেলো। নাফিসা বিরক্তি নিয়ে চাবি হাতে নিশাতের কাছে এলো। নিশাত বড়মার রুমে বিছানা ঝেড়ে ঘুমানোর ব্যবস্থা করছে। নাফিসা তার কাছ থেকে ওই ঘরের গেইটের চাবি নিয়ে একা একাই বের হতে যাচ্ছে। সে ড্রয়িং রুমের সামনে দিয়ে আসার সময় ইমরান লক্ষ্য করেছিলো তাকে। আর নাফিসা বড় ঘরের গেইটের সামনে এসে দাড়িয়ে গেছে! লাইট জ্বলছে বিধায় উঠুন আলোকিত। কিন্তু গেইট খুলে বের হওয়ার সাহস হচ্ছে না! দু তিন মিনিট যাবত শুধু ভাবছে আর ভাবছেই! হঠাৎই তার পেছনে ইমরান হাত রাখলে সে ভয়ে কেপে উঠলো! ইমরান বললো,
– এখানেই ভয় পেয়ে যাও, বাইরে বের হবে কিভাবে?
নাফিসা গোমড়া মুখু হয়ে দাড়িয়ে আছে। মাকে গেইট লাগাতে বলে ইমরান গেইট ঠেলে বেরিয়ে এলো। আবিদা বেগম গেইটে তালা লাগিয়ে গেলে ইমরান নাফিসাকে নিয়ে তাদের ঘরে চলে এলো। নাফিসা রুমে এসেই ধপাস করে বালিশে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো! ইমরান বললো,
– আরে এটা কি! আজ এতো তাড়া কেন ঘুমানোর! খেলাটাও দেখতে দিলে না! আবার মশারিও আমার জন্য রেখে দিলে!
– কথা বলো না তো। আরেকটু হলে আমি সত্যিই পাগল হয়ে যাবো!
ইমরান দরজা লাগিয়ে মশারী হাতে নিতে নিতে বললো,
– সে আর হবে কি! অলরেডি ডান!
নাফিসা শুনলেও তার প্রত্যুত্তর করেনি। মশারী টানিয়ে নিজেই গুজে দিয়ে আবার বেরিয়ে যাচ্ছিলো ইমরান। দরজা খোলার শব্দে নাফিসা চোখ খুলে তাকিয়ে বললো,
– আবার কই যাও তুমি!
– বাথরুমে। যাবে?
জবাবহীন নাফিসা আবার চোখ বুজে রইলো। একটু পরেই কপালের দুই কিনারায় হাতের স্পর্শ পেল। নাকেও ঝাঝ লাগছে! চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলো ইমরান তার ধারে বসে বসে ব্যাথার মলম মালিশ করে দিচ্ছে। মাথায় যন্ত্রণা থাকা সত্ত্বেও মন সহ সর্বাঙ্গে যেন প্রশান্তির সুখ ছেয়ে গেছে তার! অতি সুখে এবং মলমের ঝাঝ উভয়েই চোখ থেকে অশ্রু গড়াতে ভুমিকা রেখেছে! নাফিসা ইমরানের হাত সরিয়ে উঠে বসলো। এবং ইমরানের কপালে খুব গভীরভাবে চুমু একে দিলো।
ইমরান ঠোঁটের কোনে দুষ্টুমির হাসি ফুটিয়ে ব্রু সামান্য কুচকে বললো,
– শান্তি দিলি না তুই! একটুও শান্তি দিলি না আমায়!
নাফিসা ঝটপট শুয়ে পড়লো এবং বললো,
– এখন দুষ্টুমি করবে না বলে দিচ্ছি। সত্যিই আমার খারাপ লাগছে।
– দুষ্টুমি কেন করবো! বউ অসুস্থ হলে সেবা করা দরকার।
– সেবাও করতে হবে না। ঘুমাও, এতেই আমার সেবা হয়ে যাবে।
ইমরান লাইট অফ করে পাশে শুয়ে অল্প দুষ্টুমি করে আবার একহাতে কপালে মালিশ করে যাচ্ছে, অত:পর মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে। নাফিসা নিষেধ করলো তবুও শুনলো না। ব্যর্থ হয়ে সে পরম আবেশে চুপচাপ মিশে রইলো ইমরানের সাথে। দুমিনিটের মতো চুপ থেকে ইমরানকে বললো,
– এই?
– হুম?
– আশিকের সাথে নিশাতের বিয়েটা দিয়ে দাও। মন্দ হবে না।
– এতো বিয়ে খাওয়ার পাগল কেন! হুম? নিজের বিয়ে খেতে পারোনি বলেই কি?
– ধুর, ফাজলামো করছি না এখন। সিরিয়াসলি বলছি।
– আচ্ছা, এতো সিরিয়াস হওয়ার কারণটা কি শুনি?
– নিশাত ওবাড়িতে গেলে যতটা সুখী হতে পারবে অন্য মেয়ে তা পারবে না। বোনের মেয়ে হওয়া সত্ত্বে নিশাত নিশ্চয়ই পছন্দের বউমা হবে। তোমার খালামনির স্বভাবটাই কেমন যেন! আপনজন ছাড়া বাইরের লোককে সহ্য করতে পারে না।
– ভাবির জন্য বলছো?
– শুধু আপু কেন, আমি মনে করি যে কেউ হলেই এমনটাই করতো।
– ভাবির সাথে এমনটা হওয়ার কারণ আছে।
– কি?
– মামীর ইচ্ছাতে মারিয়া আপুর তো আরও আগেই বিয়ে হয়ে গিয়েছিলো। অত:পর খালামনি আরাফ ভাইয়ার জন্য জেরিনকে পছন্দ করেছিলো।
নাফিসা চমকে একটু সরে গিয়ে অন্ধকারেই ইমরানের দিকে তাকালো। মাথা ব্যাথা সত্ত্বেও সে এমন চমকে উঠায় ইমরান আবার তাকে আগের জায়গায় এনে বললো,
– একটা মাইর দিবো! এজন্যই বলতে ইচ্ছে করে না কিছু।
নাফিসা আবার আগের মতো মিশে থেকে বললো,
– না, বলো।
– খালামনি আরও চারপাঁচ বছর আগেই ভাইয়াকে বিয়ে করতে বলেছিলো। আত্মীয়ের মধ্যে আত্মীয় ভালো লাগে না তাই ভাইয়া নিষেধ করে দিয়েছে তখন বিয়ে করবে না। আরও পরে করবে বিয়ে। এ নিয়ে খালামনি রাগারাগি করেছে। আরাফ ভাইয়া নিষেধ করায় সুযোগ বুঝে মা ই আরমান ভাইয়ার বউ করে নিয়ে চলে এলো! এ নিয়ে আবার মায়ের সাথে খালামনির মনোমালিন্য ছিলো কিছুদিন। ভাইয়ের মেয়েকে আরাফ ভাইয়ার বউ করতে পারেনি বলেই উনার মাঝে ছেলের বউয়ের প্রতি এমন স্বভাব পরিলক্ষিত! যা ফেস করছে ভাবি।
– বাহ! বাহ! ভালোই তো তোমাদের পরিবারের কীর্তি! মজার বিষয়! শুধু শুধু অন্যত্র যাওয়ার কি প্রয়োজন ছিলো! নিজেদের মধ্যে সব আবদ্ধ থাকলেই তো তোমাদের দুনিয়াটা শান্তি থাকতো! মিল তো ছিলোই! আরাফ ভাইয়ার সাথে না হয় জেরিনের বড় বোনটার বিয়ে হতো, আরমান ভাইয়ার সাথে জেরিন, আয়াতের সাথে তুমি আর নিশাতের সাথে আশিক। বাকি তো আর কেউই থাকতো না! দারুণ মিল ছিলো তোমাদের মাঝে!
– এহ! আসছে মিল ওয়ালী! তাহলে তোকে আমার করে পেতাম কি করে শুনি! ঘুমা চুপচাপ!
নাফিসা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।
পরদিন বিকেলে নিশাত নিজেই আশিককে কল করেছে। রিসিভ হতেই সে সালাম দিলো। আশিক সালামের জবাব দিতেই সে বললো,
– খালামনি কি শুরু করেছে এসব!
– কোথায় কি শুরু করছে!
– জানো না তুমি কিছু?
– কি জানবো!
– তোমার বিয়ে ঠিক করছে সেটা জানো না তুমি?
– কই না তো! আমার বিয়ে তো আমি নিজেই ঠিক করলাম।
– হচ্ছে কি এসব!
– আশ্চর্য! ক্লিয়ার না বললে আমি কিভাবে বলবো কি হচ্ছে না হচ্ছে!
– তুমি আমার পরিবারে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছো কেন?
– তোর পরিবারের জামাই হবো বলে।
– এসব প্রস্তাব ফিরিয়ে নাও। আমি বিয়ে করবো না তোমাকে।
– কেন?
– কেন আবার! এমনি।
– এমনি কেন?
– আমার ইচ্ছে তাই।
– অনন্ত রাজকুমারী থাকবি নাকি?
– সেটা তোমার কাজ। আমার না।
– আচ্ছা? আর সেখানে আমিই বিয়ে করতে চাইছি আর তুই কেন না!
– আমি তোমাকে বিয়ে করবো না।
– কাকে করবি?
– যাকে ইচ্ছে তাকে। জাস্ট তোমাকে না।
– পরশু পর্যন্তও আমাকে চাইলি আজ কেন নয়।
– এমনি।
– এমনি কেন, শুনি একটু।
– কাজিনের মধ্যে রিলেশন আমার ভালো লাগে না।
– যখন আমি তোর পছন্দের কেউ ছিলাম তখনও কাজিনই ছিলাম। তাহলে তখন চাইতে পারলে এখন রিজেক্ট কেন!
নিশাত খুব বিরক্ত হচ্ছে আশিকের প্যাচানো কথায়। তাই এবার বলেই ফেললো,
– আমি তোমার অনন্ত রাজকুমার হওয়া দেখতে চাই। এবার হয়েছে তো!
আশিক যেন এমন কোনো জবাবের প্রত্যাশাই করছিলো। তাই সে স্বাভাবিকভাবেই জবাব দিলো,
– তোকে দেখার সেই সুযোগ আমি দিব না। বিয়েটা অবশ্যই করবো।
– একদম না। আমি এই বিয়েতে একদম রাজি না। কনের উপর জোর করে নিশ্চয়ই বিয়ে সম্পাদন সম্ভব হয় না!
আশিক ছোটখাটো এক নিশ্বাস ফেলে বললো,
– প্রয়োজনে না হয় একটু জোরই করলাম। তাই বলে তো আর অন্যের ঘরে পড়ে পড়ে সারাজীবন কাঁদতে দিতে পারি না তোকে।
– করুণা দেখাচ্ছো? এতোটা অসহায় হয়ে পরিনি যে করুণা দেখাতে হবে আমার উপর। আমি তোমার জন্য কাঁদতে যাবো কেন অযথা।
– এখন আরও কতকিছুই না বলবি। এতোসব শুনতে পারবো না আমি। তুই রোজা না থাকলেও আমি রোজা আছি। শেষ সময়ে এতো কথা আসে না পেট থেকে। তাই এক কথায়ই বলে দিচ্ছি, বিয়েটা হচ্ছে। হুম? অভিমান ভালো কিন্তু বেশি অভিমান ভালো না। তাহলে আবার আমাকে আরেকটু কষ্ট করতে হবে। এমনি এমনি কাজ না হলে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ইফতারের পরেই কাজি অফিসে বিয়ে সারবো বলে দিচ্ছি।
নিশাত কল কেটে ফোন আছড়ে ফেললো খাটের উপর! প্রচন্ড রাগ হচ্ছে আশিকের উপর! কান্নাও আসছে সাথে। ইফতার পর্যন্ত সে গোমড়া মুখুই হয়ে ছিলো। ইফতারের পরপরই আবার নিজের রুমে চলে এসেছে। নাফিসা তার রুমে পড়ছে আর নিশাত অন্ধকার রুমে একা শুয়ে আছে। একটু পরেই ফোনটা আবার বেজে উঠলো। আশিকের নম্বর থেকেই কল এসেছে। সে কল কেটে দিলো। মিনিটখানেক পরেই মেসেজ এলো, “অভিমান ভেঙেছে? জবাব আরেকবার না আসলে এখনই বল। এমন ব্যবস্থা করবো যে, তুই আর একদিনও কুমারী থাকতে পারবি না আর না থাকবো আমি কুমার!”
নিশাত বিরক্ত হয়ে ফোন সাইলেন্ট করে বালিশের নিচে রেখে দিলো। চোখ বন্ধ করে শুয়ে বিকেলে বলা কথাগুলোই আবার মনে করছে সে। কয়েকবার মনে করে এক পর্যায়ে ফিক করে হেসে উঠলো! অথচ তার চোখে পানি। আর মুখে উচ্চারিত হচ্ছে,
– স্টুপিড, নন্ সেন্স, ইদুর, তেলাপোকা, চিক চিক চিকা….
তখন রোজা থাকায় বকা দেয়নি আশিককে কিন্তু এখন বকে নিচ্ছে ইচ্ছেমতো! কিন্তু এই ছোকরাটার হঠাৎ বিয়ে নিয়ে এতো তাড়া কেন হলো সেটাই তার অজানা রয়ে গেছে! ফোনটা আবার হাত বাড়িয়ে বালিশের নিচ থেকে টেনে এনে দেখলো আরও একটা টেক্সট এসেছে,
“পারবো না আমি ছাড়তে তোকে
পারবো না আমি ভুলতে তোকে
পারবো না ছেড়ে বাঁচতে তোকে
হয়ে যা না রাজি একবার…!”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here