মাস্টার_মাইন্ড,শেষ পর্ব
নিলাঞ্জনা রহমান
ধীরে ধীরে চোখ খুলছে তিতির।চোখগুলো খুব ভারি লাগছে।চোখ খুলে তাকাতেই তিতির খুব ব্যাথা অনুভব করলো।চোখ খুলে সামনে তাকাতেই দেখলো সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে।তিতির এর চোখ তিতাস এর দিকে গেলো।চোখগুলো লাল হয়ে রয়েছে।মনে হচ্ছে খুব কেঁদেছে।
সবার মুখে তিতির এর জ্ঞান ফিরে আসায় খুশির ঝিলিক দেখা গেলো।
তিতিরঃকি হয়েছে আপনাদের সবাইকে দেখতে এমন কেনো লাগতাসে? কেউ মরে গেছে?এক একটা পেঁচার মতো মুখ করে রাখছোস?????
সবাই অবাক তিতির এর এমন কথায়।
প্রিয়াঃকি বলতাসস তুই? তুই এখন হসপিটালে??
তিতিরঃহুমম জানি তো। তুই কি ভাবছস আমি ফিল্ম এর মতো বলমু আমি কোথায়?কে আমি? আপনারা কারা এসব?বুকে গুলি লাগছে মাথায় না। আর এতো কান্না করার কি আছে আমি তো মরতাসিনা। আপনাদের এতো সহজে ছাড়ছিনা।
তিতাস’ঃএমন অবস্থায় ও তোমার মজা আসতাসে?
তিতিরঃজি কারন আমি তিতির আমার যেকোনো টাইম মজা আসে। যেমন সবার যেকোনো টাইম বাথরুম আসে আমারও তেমন যেকোনো সময় মজা আসে???
তিতাসঃ???
সবাইঃ???????
তিতিরঃ?????
এমন সময় রুমে মৌনতা আসলো।
মৌনতাঃআসতে পারি? ??
তিতিরঃআরে মৌনতা কেমন আছো।আসো আসো।
মৌনতাঃএই তো আপু ভালো আছি।দেখি তোমার অবস্থা বলে মৌনতা তিতির এর পালস্ চেক করতে লাগলো।
মৌনতা তিতাস এর বোন।একজন ডক্টর। তিতির, আকাশ সবাই ওকে আগে থেকে চিনে।
মৌনতাঃসব মোটামোটি নরমাল। আশা করা যায় ৩/৪ দিন পর ডিসচার্জ করা যাবে।
তিতিরঃকি!!!!!!আরো ৩/৪????
মৌনতাঃআরে কি হবে দেখতে দেখতে দিন চলে যাবে।
তিতিরঃহুমমম???
মৌনতাঃওকে আমি তাহলে যায়।
তিতিরঃদাড়াও মৌনতা।
মৌনতা দাড়িয়ে গেলো।
মৌনতাঃকিছু বলবে আপু?
তিতিরঃহুমমম বলবো তবে শুধু তোমাকে না সবাইকে।
তিতাসঃকি বলবে তিতির?
তিতিরঃআজ আমি সবার সিক্রেট বলবো।
নীলঃকি সিক্রেট?
শুভঃ হুমম কিসের সিক্রেট?
তিতিরঃআরে বলছি বলছি এমন করছেন কেনো।
সবার প্রথমে আমার বেস্টু প্রিয়া।
প্রিয়াঃআ..আমার?????
তিতিরঃজি!!!তো ম্যাডাম সেদিন আপনি কি বলেছিলেন আপনি বড় আপুর বাসায় গিয়েছিলেন তাই না???
প্রিয়াঃহ…হ্যা???
তিতিরঃ????প্রিয়া তুই যে আপুর বাসায় যাস নি তা আমি জানি।আপুকে ফোন করেছিলাম
প্রিয়াঃ????
আকাশঃতাহলে কোথায় গিয়েছিলো?
তিতাসঃহুমম কোথায়?
তিতিরঃআমার প্রিয়া বান্ধবী প্রিয়া উরফে লায়লা তার মজনুর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো।
সবাইঃ??????????
প্রিয়াঃ????
শুভঃ কে সে মজনু????
তিতিরঃসে মজনু আর কেউ না আমাদের নীল ভাই।???
সবাই অবাক হয়ে নীলের দিকে তাকালো?????????
নীলঃ????????????আ….আ……মা……
শুভঃ ঐ তোতলা ঠিক করে বল।কখন থেকে এসব করতাসস?????
আকাশঃহুমম বল কাজের ফাকে কখন এসব করলি।
নীলঃআ..আসলে আমি প্রিয়াকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসতাম আর বলতে ভয় পাচ্ছিলাম। কিন্তু সেদিন আমি ঠিক করে ফেলি আমি ওকে সব বলবো আর তাই ওকে তোমাদের,মিথ্যা বলে আমরা পার্কে যায় আর ওকে আমার মনের কথা বলি?????????
প্রিয়াঃআমিও ওকে আগে থেকেই পছন্দ করতাম কিন্তু আমি চেয়েছিলাম ও আগে প্রপোজ করবে তাই আমি ওয়েট করছিলাম আর ও প্রপোজ করলে আমি মেনে যায়।
আকাশঃ হায় খোদা প্রিয়া তুমিও? ???
তিতিরঃ?????কেমন হলো?
শুভঃ দোস্ত জোস!! ফাটায় দিয়েছো??????
তিতিরঃএতো দাঁত কেলাইওনা তোমারও আছে?
শুভঃআ…আমার মানে?
তিতিরঃহুমমম শুভ তুই যে এতোদিন লুকায় লুকায় কথা বলস,চ্যাট,করস আমি কি দেখি না???
শুভঃ????????
তিতাসঃমানে?
তিতিরঃমানে আবার কি আমাদের টিমের আরেক মজনু হলো শুভ। লুকায় লুকায় চ্যাট করে।ফিসফিস করে কথা বলে। আমি কয়দিন ধরে দেখলাম কেমন সন্দেহ হলো আর একদিন ওর মোবাইল চেক করলাম এরপর সব ফাঁস!!!!।
শুভঃ????
নীলঃওর লায়লাটা কে????
তিতিরঃবলতাসি তার আগে তিতাস স্যার আপনি রাগ করবেন না তো?
তিতাসঃআমি কেনো রাগ করবো???
তিতিরঃকারন শুভ যাকে ভালোবাসে সে হলো মৌনতা।
সবাই আবার টাসকি খেলো।সবাই মৌনতার দিকে তাকালো।??????
মৌনতাঃ?????আমি মানে মানে……..
তিতাসঃমৌনতা?????
তিতিরঃস্যার!!!আপনি বলছিলেন রাগ করবেন না আর ওরা একে অপরকে ভালোবাসে আপনি খালি খালি মিশা সওদাগর কেনো হচ্ছেন?চুপচাপ ওদের মেনে নেন??
তিতাসঃওকে ওকে এতো গরম কেনো হচ্ছো।
আকাশঃএসব কি??আমি এতোদিন ভাবছি এখানে ফাইটিং সিন হচ্ছে এখন দেখি এখানে ইলু ইলু হচ্ছে। ????আমি কই ছিলাম যখন এসব হচ্ছিলো?????
তিতিরঃ????????
প্রিয়াঃঅনেক হাসছো এবার তোমার সিক্রেট বলবো?????
তিতিরঃআমার কিসের সিক্রেট? (অবাক হয়ে)
তিতাসঃ আল্লাহ ওর কোনো বফ নেই তো????
প্রিয়াঃতিতির প্রথম কারো উপর ক্রাশ খেয়েছে?
তিতিরঃ??????
তিতাসঃ?????না!!!!! এমন না হোক???
সবাইঃ????
প্রিয়াঃহুমমম তিতির একজন এর উপর ক্রাশ। এই প্রথম এমন ক্রাশ খেলো আর তাকে খুব ভালোও বাসে।
তিতিরঃপ্রিয়া চুপ কর!!???
তিতাসঃ??????কে সে?
তিতিরঃপ্রিয়া……..
প্রিয়াঃ সে হলো আমাদের তিতাস স্যার।
সবাইঃ???????????????????????
তিতাসঃএটা হতে পারে,না তিতির তিতাসকে ভালোবাসতে পারে না??????১মিনিট তিতাস তো আমি!!তার মানে??????
তিতিরঃ?????????????
আকাশঃএটা কি হলো আমি আর নিতে পারতাসি না।
তিতাসঃপ্রিয়া……?????.তিতির????
প্রিয়াঃজি স্যার তিতির প্রথম দিনই আপনার উপর ক্রাশ তারপর ধীরে ধীরে ভালোবাসা কিন্তু ভয়ে বলে নি।
তিতিরঃ??????????
তিতাসঃতুমি কি করে জানলে?
প্রিয়াঃআমিও জানতাম না কয়েকদিন আগে ওর ডায়েরী পড়ে জানলাম।
তিতিরঃ??????সব বলে দিলো রে…আমার সপ্ন শেষ।কত আশা ছিলো আআআআআআআআ????????
শুভঃ তোর কি হলো এভাবে কান্না কেনো করছিস?আর কি ইচ্ছা।
তিতিরঃআমার ইচ্ছা ছিলো আমি যাকে ভালোবাসবো সে আমাকে প্রপোজ করবে কিন্তু শাঁকচুন্নি মাইয়া সব ফাঁস কইরা দিলো এখন আমি আমার নাতি নাতনিরে কি কাহিনী কমু।???????
সবাইঃ????
নীলঃ কিন্তু স্যার তো তোৃমায় কাল প্রপোজ করলো।
তিতিরঃকখন????????
নীলঃতুমি যখন গুলি খেলে তখন।
তিতিরঃআমার মনে নাই কেনো। আমি মানি না আমি শুনি নাই।
তিতাসঃ আমি বলেছি। আই লাভ ইউ তিতির।
সবাই আরেক দফা টাসকি কেউ ভাবতে পারে নি তিতাস আবার প্রপোজ করবে।
তিতিরঃস্যার!আপনি প্রপোজ করতাসেন নাকি সংসদে বিল পাশ করতাসেন???
সবাই হেসে দিলো।
তিতাস’ঃতো কি ভাবে করতাম?
তিতিরঃফুল দিয়ে সুন্দর করে আমার খাটের পাশে হাটু গেড়ে বসে???
তিতাস ঃএখন ফুল কই পাবো?
তিতিরঃআমি কি জানি?
তিতাসঃকি করবে বুঝতে পারছিলো না। আশে পাশে খুজতে লাগলো।তখনই তার নজর পাশে থাকা ইনজেকশন এর উপর গেলো তিতাস জলদি ইনজেকশনটা নিয়ে সুচের উপর টেবিলে থাকা ক্যাপসুলের প্যাকেট থেকে ১ পিস ক্যাপসুল নিয়ে সুচের ভেতর ঢুকিয়ে তিতির এর খাটের পাশে হাটু গেড়ে বসলো-
“জানি কবে থেকে কখন থেকে
তোমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি।তোমাকে আমার অনুভবের সাথে জড়িয়েছি।তোমার সাথে ঝগড়া করতে করতে কবে তোমায় ভালোবেসেছি,তা আমি নিজেও জানি না।কিন্তু জানি কাল তোমাকে ঐ অবস্থায় দেখে আমার মনে কি হয়েছিলো তা আমি বুঝাতে পারবো না তবে তোমার কিছু হলে আমিও মৃত লাশ হয়ে যেতাম।আমি শুধু একটা কথায় জানি
আই লাভ ইউ তিতির।আই রিয়েলি লাভ ইউ।”
তিতির ঃ?????
তিতির অবাক। ওর চোখে খুশির ঝিলিক।
সবাই শক।এটা কি হলো মাথার উপর দিয়ে গেলো।
প্রিয়াঃইনজেকশন দিয়ে প্রপোজ? এ ও সম্ভব? ????
আকাশঃকিছু সময় আগে আমাকে এটা জ্ঞিজ্ঞাসা করলে কিছু বলতে পারতাম কিন্তু কিছুক্ষন ধরে যে ধরনের টাসকি খাইতাসি তা দিয়ে বলা যায় এটাও সম্ভব।
তিতাসঃতিতির কিছু বলো।
তিতিরঃ নিজেকে সামলিয়ে বললো –
ঠিকঠাক তবে ইনজেকশন?? আপনি আরো ভালো কিছু করতে পারতেন।যেমন আরাফাত করেছিলো।
তিতাসঃআরাফাত কে???
তিতিরঃআমাদের পাড়ার ছেলে উফফ কি জোসভাবে আমাকে প্রপোজ করেছিলো??????
প্রিয়াঃবইন চুপ কর তোর কাম তামাম হই যাইবো স্যার পেসার কুকারের মতো ফুসতাসে।
তিতাস রাগে ফুসছে।
সবাই একবার তিতিরকে দেখছে। একবার তিতাস,কে।
তিতির তিতাসকে দেখেনি ও তো আরাফাত এর কাহিনী বলতাসে।
তিতাসঃঅফিসার্স তোমরা সবাই বাইরে যাও।আমি তিতির এর সাথে একটু কথা বলবো।
তিতির এইমাত্র খেয়াল করলো তিতাসকে।
তিতিরঃ আল্লাহ গো স্যার তো খেপছে।(মনে মনে)স্যা…স্যার সবাই বাইরে কেনো যাবে????
তিতাসঃসবাই বাইরে যাও????
প্রিয়াঃবইন আমরা যাচ্ছি তুই বেঁচে থাকলে আবার দেখা হবে।
সবাই বের হয়ে গেলো।
তিতাস রুম এর দরজা বন্ধ করে দিলো।
তিতিরঃশালি আমাকে জমের দুয়ারে রেখে চলে গেলি। বাইর হই তোরে তেলাপোকার স্যুপ খাওয়ামু ?????
তিতাসঃতো তিতির কি যেনো বলছিলে আরাফাত….….
তিতিরঃনা,স্যার কে আরাফাত কেউ নাই স্যার। আমাদের পাড়ায় তো আরাফাত নামের কেউ নাই একজন ছিলো ইঁদুর মারার ঔষুধ খাইয়া মরছে স্যার আমি জোক মারতাসিলাম।
তিতাস আগাচ্ছে। তিতির খাটের উপর পিছাচ্ছে।
তিতিরঃস্যার আপনি আসতাসেন কেনো।
তিতাস আসতে আসতে আসতে তিতির এর কাছে চলে আসলো।
তিতাস এর শ্বাস তিতির এর গায়ে আছরে পড়ছে।
তিতিরঃস্যা….স্যা….স্যার,কি করছেন???????
তিতাস আরো কাছে আসলো
তিতাস ধীরে ধীরে তিতির এর দিকে আগাচ্ছে।
তিতির এর বুক ধুক ধুক করছে
তিতাস হুট করে তিতির এর কপালে ভালোবাসার পরশ দিলো।
তিতির কাপতে শুরু করলো।
তিতাসঃএটুকুতে এই অবস্থা পরে কি হবে(তিতাস এর মুখে দুষ্ট হাসি)
তিতাস এর কথায় তিতির এর চোখ কপালে।
???????
তিতাস তিতির এর কানের কাছে গিয়ে বললো -আই লাভ ইউ তিতির।
তিতির এর পুরো শরীরে একটা ভালো লাগা ছড়িয়ে গেলো।
তিতিরঃআই লাভ ইউ টু।?????
তিতাস তিতিরকে জড়িয়ে ধরলো।
তিতির ও জড়িয়ে ধরলো।
ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়ুক সবার মাঝে।
সবাই ভালো থাকুক তাদের ভালোবাসার মানুষগুলোর সাথে।???????
সমাপ্ত……