গল্পঃবর্ষণ_মুখর_দিন,পর্বঃ০৭,০৮

0
733

গল্পঃবর্ষণ_মুখর_দিন,পর্বঃ০৭,০৮
লেখিকাঃজিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
পর্বঃ০৭

নিয়াজের বাবা মা নিয়াজকে সাথে নিয়েই জারার খালার বাসায় আসেন।জারার বাবা মায়ের নিয়াজকে বেশ মনে ধরেছে।তাই কথা এগোনোর জন্য জারার বাবা গলা ঝেড়ে বললেন,আল্লাহর রহমত থাকলে বিয়েটা হবে কিন্তু আমার কিছু শর্ত আছে।
নিয়াজের বাবা হালকা হেসে বললেন,জ্বি আপনি বলুন।
নিয়াজের বাবার কাছ থেকে সম্মতি পেয়ে জারার বাবা বললেন,আমার মেয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চায়।এখন বিয়ের পর যদি আপনারা বলেন যে বাড়ির বউ পড়ালেখা করতে পারবেনা তাহলে দুঃখিত আমরা এগোতে পারছিনা।

নিয়াজ ঝটপট উত্তর দিলো,জারা পড়ালেখা করবে এতে আমার কোনো সমস্যা নেই।ও চাকরিটাও চালিয়ে যেতে পারে।নিয়াজের বাবা ও জারার বাবাকে আস্বস্ত করলেন।জারার বাবা সন্তুষ্ট হলেন।ক্ষীণ হেসে মিষ্টির প্লেট থেকে একটা মিষ্টি তুলে নিয়াজের বাবার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,মিষ্টি মুখ করে নিন।
নিয়াজের বাবা একটু মিষ্টি মুখে নিয়ে জারার বাবাকেও খাইয়ে দিলেন।
অবশেষে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হলো।কায়া আর জারার একই দিনে বিয়ে হবে।জারা পর্দার আড়াল থেকে সবকিছুই দেখছে।নিয়াজের সাথে চোখাচোখি হতেই জারা লুকিয়ে পড়ে।নিয়াজ মুচকি মুচকি হাসছে।নিয়াজের মা পার্স থেকে একটা রিং বক্স বের করে জারার মা কে বললেন জারাকে ডেকে আনতে।জারার মা উঠে গিয়ে জারাকে নিয়ে আসলেন।জারা মাথায় ওড়না দিয়ে আড়চোখে একবার সবাইকে দেখে নিয়েছে।জারাকে নিয়াজের পাশে বসিয়ে দিলেন।জারার হৃদ স্পন্দন থেমে আসছে।মিসেস রেনু বক্স থেকে রিং নিয়ে নিয়াজের দিকে বাড়িয়ে দিলেন জারাকে পড়িয়ে দেওয়ার জন্য।আসার সময় রিংটা নিয়ে এসেছেন যদি বিয়ের কথা পাকা হয়ে যায় তাহলে জারাকে রিং পড়িয়ে যাবেন।নিয়াজ রিং নিয়ে জারার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো কিন্তু জারা নিজের হাত এগিয়ে দিচ্ছেনা।থম মেরে বসে রইলো।জারার বাবা বললেন,হাতটা এগিয়ে দাও মা।জারার কেমন কান্না পাচ্ছে হাতটা এগিয়ে দিতে।মনে হচ্ছে রিংটা পড়ালেই জারা বাবা মায়ের থেকে অনেক দূরে সরে যাবে।যদিও চার বছর ধরেই বাবা মায়ের কাছ থেকে দূরে আছে তবু এখন মনে হচ্ছে আরো দূরে সরে যাবে।

চোখে পানি চিকচিক করছে।জারার মা উঠে এসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন হাতটা এগিয়ে দে মা।কাঁপাকাঁপা হাতটা নিয়াজের দিকে বাড়িয়ে দিলো।জারার কম্পমান হাতের দিকে তাকিয়ে নিয়াজ নিশঃব্দে হাসে।নিজের বাম হাত দিয়ে জারার হাত স্পর্শ করতেই জারার কাঁপা-কাঁপি আরো বেড়ে যায়।শরীর ক্রমেই ঠান্ডা হয়ে আসছে।গতকাল ও ক্ষণিকের জন্য নিয়াজ জারার হাত ধরেছিল।কিন্তু এখন অস্বস্তি হচ্ছে বেশি।কালকে হাত ধরার সময় কেউ না থাকলেও আজ সামনে বাবা মা,খালা,খালু সবাই উপস্থিত।নিয়াজ দেরি না করেই রিংটা জারার হাতে পড়িয়ে দিয়ে দ্রুত হাত সরিয়ে নেয়।
নিয়াজ হাত সরাতেই জারা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে।মিসেস রেনু জারার গালে হাত রেখে ক্ষীণস্বরে উচ্চারণ করলেন,আমার বউমা!
কথাটা কর্ণগোচর হতেই জারা দৃষ্টি চারদিকে ঘুরাতে থাকে।বউমা কথাটা শুনতে কেমন জানি লাগছে।

নিয়াজরা চলে গেছে অনেক আগেই।জারা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে হাতের রিংটা দেখছে।আজ থেকে সে কারো বাগদত্তা।কথাটা ভাবতেই মনের মাঝে একটা ঢেউ খেলে গেলো।রিংটা খুলে রাখতে গিয়ে ও খুললোনা।হাতেই রেখে দিলো।তুহিন জারার রুমে এসেই বলল,তোর নাকি আজ এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে?কই দেখি রিংটা দেখা আমাকে।জারা হাত এগিয়ে তুহিনের সামনে ধরতেই তুহিন জারার হাত উল্টে পাল্টে দেখে বলল,রিং এর গড়ন সুন্দর।এই রিং আমাকে দিয়ে দিস ভবিষ্যতে আমি আমার বউকে দেবো।
জারা তুহিনের বাহুতে একটা চাপড় মেরে বলল,নিজের টাকায় বউকে গিফট করিস।অন্যের জিনিস নিয়া টানাটানি করিস না।আর তুই কয়জনকে বিয়ে করবি তোরতো গার্লফ্রেন্ড এর অভাব নাই।
তুহিন মুখ বাঁকিয়ে বলল,এদের একজনকেও বিয়ে করবোনা।সবাই আমার গার্লফ্রেন্ড আছে জেনেও প্রপোজ করলে রাজি হয়ে যায়।তাই আমি ও সময় কাটানোর জন্য এদের সাথে কথা বলি।

একটা লাল রঙের শাড়ি পড়ে সাথে হিজাব লাগিয়ে অফিসের জন্য তৈরি হয়ে নিয়েছে জারা।চোখে গাঢ় কাজল,ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়ে বারবার আয়নায় নিজেকে দেখছে।নিজেই নিজের গাল টেনে দিয়ে বলল আউ!আমি কি কিউট!শাড়ি পড়লে আমার নিজেই নিজেকে তুলে নিয়ে যেতে ইচ্ছা করে।গালে হাত দিয়ে ভাবনার ভঙ্গিতে বলল,আচ্ছা লোকে যদি শুনে শাড়ি পড়ে নিজেই নিজের প্রশংসা করছি তাহলে কি আমায় পাগল ভাব্বে?যেটাই ভাবুক তাতে আমার কি?
জারা অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে।
অফিসে এসে জারা খেয়াল করলো শুধু সে নয় আরো অনেকেই পার্টির জন্য রেডি হয়ে এসেছে।রিহা আজ আর অফিসে আসবে না।রাফি আর আরেকজন কলিগ মিলে জারার গায়ে একটা প্লাস্টিকের সাপ ছুড়ে মারে।জারা কিছুক্ষণ সাপটার দিকে তাকিয়ে থেকে জোরে একটা চিৎকার দিয়ে রাফির দিকে তাকিয়ে বলল,হয়েছে?

রাফি আর সাথের কলিগ একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে।জারা ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,তোমরাতো এটাই চাইছিলে আমি যেন ভয় পেয়ে চিৎকার করি তাই চিৎকার দিলাম।
রাফি চোখ কিঞ্চিৎ বড় করে বলল,তুমি ভয় পাওনি দেখে আমরাতো পুরাই অবাক!
জারা ফিক করে হেসে দিয়ে বলে,তোমরা যখন প্ল্যান করছিলে আমাকে ভয় দেখাবে তখনই আমি শুনে ফেলেছি।আগাম ধারণা না থাকলে কিন্তু সত্যিই ভয় পেতাম।রাফি ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে বলল,মিস এশা আসুক তাকে ভয় দেখাবো।তবে তোমাকে আজ পুরাই জোস লাগতেছে।শাড়িতে বেশ মানিয়েছে।
জারা মনে মনে বলল,শাড়ি পড়লে আমার নিজেরই মাথা ঠিক থাকেনা।কিন্তু হাসি মুখে বলল,ধন্যবাদ!তোমাদের দুজনকেও সুন্দর লাগছে।

সবার দৃষ্টি অফিসের দরজার দিকে দেখে জারাও সবার দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে তাকালো।এশা শাড়ী পড়ে হেলেদুলে আসছে।সবার এরকম দৃষ্টির মানে দুইটা।প্রথমত এশাকে কোনোদিন শাড়ি পড়তে দেখা যায় নি দ্বিতীয়ত এমন ভাবে শাড়ির আঁচল টেনেছে একটু বাঁকা হলেই মনে হচ্ছে আচলটা পড়ে যাবে শরীর থেকে।এশার হাটার মাঝেই রাফি প্লাস্টিকের সাপটা এশার গায়ে ছুড়ে মারে।এশা চিৎকার করে লাফিয়ে সরতে গিয়ে ডেস্কের সাথে বাড়ি লাগে।সবাই মুখ টিপে হাসছে জারা হো হো করে হেসে উঠলো।

এশা যখন দেখলো সাপটা প্লাস্টিকের তখন রাফিকে কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিয়ে জারার দিকে এগিয়ে আসে।জারা হাসি থামিয়ে ঠিক করে বসে।এশা মুখ কুচকে বললো,তুমি এভাবে হাসছো কেন?নিজের সাথে এমন হলে বুঝতে।আঙ্গুল দিয়ে কপালের চুলগুলো সরিয়ে বলল,এনিওয়ে তোমার নাকি নিয়াজ স্যারের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে?এতো ভাব নিও না নিয়াজ স্যারের চেয়েও আমার নিউ বফ আরো হ্যান্ডসাম।
জারা মুচকি হেসে দাঁতে দাঁত পিষে বলল,আমি যদি ভাব নেওয়া শুরু করি তাহলে তোমার সব ভাব হাওয়া হয়ে যাবে।লম্বা একটা হাই তুলে বলল,আমার এখন প্রচুর কাজ নিজেও কাজ করো আমাকেও কাজ করতে দাও।
এশা রাগে ফুঁসতেছে।বেশ জোরেই বলে উঠলো তোমার চেয়েও আমি বেশি সুন্দরী।সবাই জারা আর এশার দিকে তাকালো।জারা কিছু না বলে ঠোঁট টিপে হাসলো।মুখে হাসি রেখেই কাজে মন দিলো।এশা নিজের কেবিনে গিয়ে ধপ করে বসে পড়লো।জারার এশার সাথে কোনো শত্রুতা নেই কিন্তু মেয়েটার সেদিনের কথাটা জারার খুব গায়ে লেগেছে।

“এতগুলো দিন এখানে আছি নিয়াজ স্যারের পাশে ঘেষতে পারলাম না।আর তুমি কিনা আসতে না আসতেই একেবারে বুকের কাছে চলে গেলে।এই তোমার ট্রিকসটা আমাকেও একটু শিখিয়ে দিও।”
কথাটা শুনে বেশ খারাপ লাগলো জারার।সেই জন্যই এশার সাথে এরকম করলো।
নিয়াজ অফিসে এসে নিজের কেবিনে যাওয়ার আগে একপলক জারার কেবিনে তাকালো।জারার দিকে তাকাতেই নিয়াজের দৃষ্টি ওখানেই থেমে গেলো।তৃষ্ণার্ত চোখদুটো আজীবন ধরে এই মেয়েটাকেই দেখে যেতে চায়।অপরূপা লাগছে জারাকে লাল শাড়িতে।জারা সামনে তাকিয়ে নিয়াজকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে দৃষ্টি নামিয়ে নেয়।চোখাচোখি হওয়াতে নিয়াজও নিজের দৃষ্টি সরিয়ে কেবিনে চলে যায়।

নিজের কেবিনে যাওয়ার আধা ঘন্টা না যেতেই নিয়াজের কেবিনে জারার ডাক পড়লো।যারা নিয়াজের আন্ডারে কাজ করে প্রতিদিন একবার হলেও নিয়াজের কেবিনে তাদের যাওয়া হয়।তাই জারার আসা যাওয়া নিয়েও কারো তেমন মাথা ব্যথা নেই।জারা দরজায় নক করতেই নিয়াজ কিছু কাজ দিয়ে জারাকে নিজের কেবিনে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিলো।
জারা আড়ষ্টতা নিয়ে বলল,স্যার আমি আমার কেবিনে চলে যাই।
নিয়াজ শক্ত কন্ঠে জবাব দিলো,কাজটা নিখুতভাবে করতে হবে।কোনো সমস্যায় পড়লে আমাকে দেখাবে সেজন্যই এখানে বসিয়েছি।
জারা কিছু বলতে গেলেই নিয়াজ হাত উঁচিয়ে জারাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,নো মোর টক!

জারা আর কোনো কথা না বলে মাথানিচু করে কাজে মন দেয়।নিয়াজ কাজ করছে কম জারাকে দেখছে বেশি।জারাকে এখানে কাজের উদ্দেশ্য নয় মন ভরে দেখার উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছে।নিয়াজ চায়না সে ছাড়া অন্যকেউ জারাকে শাড়ীতে দেখে মোহিত হোক।
অফিস শেষে সবাই গ্রীনল্যান্ড রেস্টুরেন্টে চলে গেছে।জারা হেঁটে যাচ্ছিলো।রেস্টুরেন্ট কাছেই অফিস থেকে পাঁচমিনিটের পথ হবে।পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে মাথা ঘুরিয়ে পাশে তাকালো।নিয়াজ সামনে তাকিয়ে জারার পাশাপাশি হেঁটে চলেছে।কারো মুখে কোনো কথা নেই।নিয়াজ নিশ্চুপ থেকে পাশে ভালোবাসার মানুষটিকে অনুভব করে চলেছে।জারা একরাশ অস্বস্তির কারনে চুপ করে হেটে চলেছে।রেস্টুরেন্টের কাছাকাছি আসতেই নিয়াজ শব্দ করে বলে ওঠে,”মাশাল্লাহ”।
চকিতেই নিয়াজের দিকে চমকে তাকায় জারা।নিয়াজের দৃষ্টি জারার দিকে।অপলক সেই চাহনি।জারা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নিয়াজের থেকে আরেকটু দূরত্ব বজায় রেখে হাটে।

রিহা জারার দিকে এগিয়ে এসে বলে,আমি অনেক খুশি হয়েছি তুমি আমার বার্থডেতে এসেছো।জারা মিষ্টি হেয়ে বলল,শুভ জন্মদিন রিহুপাখি!নিজের ব্যাগ থেকে একটা ব্রেসলেট বের করে রিহার হাতে পরিয়ে দিয়ে বলে,আমার তরফ থেকে সামান্য উপহার।রিহার ব্রেসলেট অনেক পছন্দের।একদিন হাতে এক ডিজাইনের ব্রেসলেট পড়ে অফিসে আসতো তাই জারা কি কিনবে ভেবে না পেয়ে শেষে ব্রেসলেট কিনে নিলো অফিসে আসার পথেই।রিহা ব্রেসলেটটার দিকে তাকিয়ে খুশিতে আপ্লুত হয়ে বলল,ওয়াও ব্রেসলেটটা আমার অনেক পছন্দ হয়েছে।তোমাকে অনেকগুলো থাঙ্কু?।

পার্টির এক পর্যায়ে রিহা জারাকে বলল,আমার বার্থডেতে তুমি একটা গান শোনাবা।সবাই রিহার সাথে একমত হয়ে সমস্বরে বলে ওঠে জারা প্লিজ একটা গান।
জারা মুখ চেপে হাসি আটকানোর চেষ্টা করেও যখন ব্যর্থ গলার রগ গুলো বেরিয়ে আছে।এই মুহূর্তের একটা ছবি তুলে নিলো নিয়াজ।
জারা হাসি থামানোর চেষ্টা করে বলল,আমি গানের গ পারিনা।তোমরা আমাকে গান গাইতে বলছো দেখে প্রচুর হাসি পাচ্ছে।সবাই কয়েকবার বলার পরেও যখন জারা বলল,ও গান পারেনা তখন রিহা সবাইকে আর বেশি জোর করতে না করলো।এশা রিহার কাঁধে হাত রেখে বলল,আমি তোমাকে গান শোনাবো।সবার দৃষ্টি এশার দিকে।খুব সুন্দর করেই গান গাইলো।সবাই এশার কন্ঠের অনেক প্রশংসা করলো।এশা জারার দিকে তাকিয়ে ভাব নিয়ে সামনের চুলগুলো পেছনের দিকে হাত দিয়ে ছুড়ে দেয়।জারাকে বুঝিয়ে দেয় এশার সাথে টক্কর নেওয়া অতো সোজা না।জারা কিছু না বলেই মুচকি হাসে।সবার সব প্রতিভা থাকেনা।
পার্টি শেষ হওয়ার পর জারা বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে।নিয়াজ গাড়ি নিয়ে এসে জারার সামনে দাঁড়ায়।অনেক্ষণ যাবত নিয়াজকে দেখেনি জারা।মনেহয় গাড়ি আনতেই গিয়েছিলো।নিয়াজ গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে জারার উদ্দেশ্য বলল,গাড়িতে উঠো।
জারা কিছু না বলে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে।নিয়াজ গাড়ি থেকে নেমে জারার দিকে এগোতে নিলেই সামনে একটা বাইক এসে থামে।
তুহিন জারাকে বলে তাড়াতাড়ি উঠে আয়।ভাইয়া আবার বাইক নিয়ে বেরোবে।জারা গিয়ে তুহিনের পেছনে বসে পড়ে।পার্টি শেষ হতে হতে রাত হয়ে যাবে।এই সময় বাসায় একা যাওয়া সেফ না তাই জারা তুহিনকে আগেই বলে রেখেছে ওকে নিতে আসতে।
নিয়াজ মুখটা পাংশুটে করে মনে মনে বলল,এই ছেলে আসার আর সময় পেলোনা।আরো আধাঘন্টা পরে আসতো তাহলে আমি জারাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসতে পারতাম।
তুহিন নিয়াজের পাংশুটে মুখ দেখে জারার আড়ালে নিয়াজকে একটা চোখ টিপ দিয়ে বাইক স্টার্ট করে।
নিয়াজের মেজাজ গরম হয়ে গেলো।ছেলেটা সব বুঝতে পেরেও জারাকে নিয়ে যাচ্ছে।স্টুপিড ছেলে!

চলবে……।

#গল্পঃবর্ষণ_মুখর_দিন
#লেখিকাঃজিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_০৮

যথারীতি প্রতিদিনের ন্যায় আজ ও অফিস শেষ করে জারা রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছে।অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরও যখন রিকশা পেলো না তখন সামনের দিকে এগিয়ে গেলো।হঠাৎ হাতে টান পড়ায় পেছন ঘুরে তাকায়।সামনের ব্যক্তিটিকে দেখে জারা অবাক হয়ে যায়।ওর সামনে রোহান দাঁড়িয়ে আছে।জারা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল,আপনি এখানে কি করছেন?
রোহান নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে উত্তর দিলো,তোমার জন্যই এসেছি।
জারা চমকে উঠে বলে মানে?
রোহান জারার হাত ছেড়ে পকেটে হাত গুঁজে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।দৃষ্টি চারদিকে ঘুরিয়ে জারার দিকে তাকিয়ে বলে,দেখো জারা আমি তোমাকে পছন্দ করি।মাঝখান থেকে তানিশা এসে সব উলোটপালোট করে দিলো।আমি তানিশাকে ডিভোর্স দিয়ে দেবো শুধু তুমি আমার সাথে চলো।
রোহানের কথা শুনে জারার রাগ তিরতির করে বেড়ে গেলো।চোয়াল শক্ত করে নিজেকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা।

আপনার মতো এমন চিপ মাইন্ডের লোক আমি দুটো দেখিনি।ঘরে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রেখে আপনি আমাকে নিতে এসেছেন?আবার বলছেন তাকে ডিভোর্স দেবেন?আপনার লজ্জা হওয়া উচিত।আফসোস আপনার মাঝে মনুষ্যত্বের ছিটেফোঁটা ও নেই।নিজের স্ত্রী সন্তানের প্রতি অমানুষের মতো আচরণ করছেন।আপনাকে অমানুষ বললেও কম হয়ে যাবে।
রোহান রাগে কপাল চেপে ধরে বলল,হ্যাঁ আমি অমানুষ।আর তোমাকে এই অমানুষের সাথেই থাকতে হবে।জারার হাত চেপে ধরে টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো।জারা এই মুহূর্তে কি করবে বুঝতে পারছেনা।এখন যদি রোহানকে চড় মারতে যায় তাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে।রোহান আরো ক্ষেপে গিয়ে যদি জারার সাথে উল্টো-পাল্টা কিছু করার চেষ্টা করে?জারার পক্ষেতো রোহানের সাথে পেরে ওঠা সম্ভব নয়।চারপাশে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে কারো কাছ থেকে হেল্প পাবে কিনা?সবাই নিজেদের মতো ব্যস্ত।

আমার হাত ছাড়ুন বলে জারা রোহানের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি করছে।পেছন থেকে কেউ বলে উঠলো,কি হচ্ছে এখানে?পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে জারা মনে সাহস সঞ্চার করে পেছনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়।রোহান ভ্রু কুচকে বলল,নিজের কাজ করুন অন্যকে নিয়ে মাথা ঘামাতে আসবেন না।
নিয়াজ রোহানের কথায় পাত্তা না দিয়ে জারার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো লোকটি কে জানার জন্য।জারা অসহায় চোখে নিয়াজের দিকে তাকিয়ে আছে।রোহানের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়াতে চেষ্টা করছে।নিয়াজ ওদের হাতের দিকে তাকিয়ে রোহানকে উদ্দেশ্য করে বলল,ওর হাত ছাড়ুন।
রোহান ক্ষেপে গিয়ে বলল,এই কেরে তুই?হিরো সাজতে এসেছিস?এখান থেকে গিয়ে নিজের কাজ কর আর আমাকে আমার কাজ করতে দে।নিয়াজ রোহানের নাক বরাবর ঘুষি দিতেই রোহান দুপা সিটকে সরে যায়।হাত থেকে জারার হাতটি আলগা হয়ে আসে।জারা হাত দ্রুত সরিয়ে নেয়।রোহান নাকে হাত দিয়ে নিয়াজের দিকে এগিয়ে আসে।নিয়াজ জারাকে জিজ্ঞেস করছে ছেলেটা কে?জারা চুপ করে আছে দেখে নিয়াজের মেজাজ গরম হয়ে গেলো।ধমকে বলল,তোমার কথা কানে যায় না?জারা হালকা কেঁপে উঠে হরবরিয়ে বলতে থাকে,উনার সাথে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো।কোনো কারণে বিয়ে ভেঙে যায় আর উনি এখানে আমাকে নিয়ে যেতে এসেছেন।

জারার কথা শুনে নিয়াজের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে।রাগে কপালের রগ গুলো ফুলে উঠে।চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ পর চোখ খুলতেই জারা আৎকে উঠে।নিয়াজের চোখ দুটো টকটকে লাল রং ধারণ করেছে।হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে।তখনই রোহানের দিক থেকে আক্রমণ এর শিকার হয়ে নিয়াজ পাল্টা আক্রমণ করে।দুজনের মধ্যে হাতাহাতি লেগে যায়।কেউ কারো চেয়ে কোনো দিক দিয়ে কম যায় না।

জারা কি করবে বুঝতে পারছেনা।একজন আরেকজনকে মেরে রক্ত বের করে দিয়েছে।কিছুতেই ওদের থামানো যাচ্ছো না।জারা দিশেহারা হয়ে তুহিনকে কল করে তুহিন কল ধরছেনা।পরপর অনেকগুলো কল দিলো।এরপর তাসিনকে কল দিচ্ছে।কেউই কল ধরছেনা।বিপদের সময় সবাই নানা কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
রোহান নিয়াজের কলার চেপে ধরে বলল,কে তুই?জারা কি হয় তোর যে তুই ছুটে চলে এলি?
নিয়াজ রোহানের কাছ থেকে কলার ছাড়িয়ে রোহানের গলা পেঁচিয়ে ধরে পেছন থেকে।দাঁতে দাঁত চেপে বলে,জারা আমার হৃৎস্পন্দন।বিয়ে করছি আমরা কিছুদিন পর।সহজ ভাষায় জারা আমার পিয়ন্সে।
নিয়াজের কথায় জারা থমকে গেছে।নিষ্পলক চেয়ে আছে নিয়াজের দিকে।
নিয়াজের কথা শুনে রোহান জারার দিকে তাকিয়ে বলল,আমার সাথে বিয়ে ভেঙে দিয়ে নতুন নাগর জুটিয়ে ফেলেছিস?তা তোর এই নাগর কি দিতে পারবে তোকে যেটা আমি দিতে পারবোনা?আমার কি অক্ষমতা আছে বল?অক্ষম হলে নিশ্চয়ই তোর বান্ধবী প্রেগন্যান্ট হতোনা।নাকি আমার চেয়ে এই নাগরের টাকা বেশি কোনটা।
জারা চোখ বন্ধ করে নেয়।চোখের কার্ণিশ বেয়ে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে।নিয়াজ আরো রেগে গিয়ে রোহানকে মারতে থাকে।রোহানও পাল্টা মারে।কেউ কেউ তাকিয়ে দেখছে কেউবা নিজের গন্তব্যে ফিরে যাচ্ছে।এগিয়ে আসছে না কেউ।জারা মাঝখানে গিয়ে ওদেরকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।
বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে ফিরে যাওয়ার সময় তুহিন ফোন হাতে নিয়ে স্ক্রিন অন করতেই জারার নাম্বার থেকে ১৬টা কল আসতে দেখে।এসময় তো জারার অফিস থেকে ফেরার কথা এতগুলো কল এসেছে দেখে তুহিনের মনে অজানা ভয় এসে গ্রাস করে।দ্রুত জারার নাম্বারে ফোন লাগায়।তিনবারের সময় জারা রিসিভ করে কেঁদে কেঁদে বলে ভাই তুই কোথায়?অফিসের কাছে আয় রোহান এসেছে।আর কিছু বলতে পারেনা আবারো নিয়াজ আর রোহানকে থামাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।তুহিন বন্ধুদের থামিয়ে দিয়ে বলে,বাইক নিয়ে চল সবাই।সবগুলো তুহিনের দিকে একবার তাকিয়ে শুধু বলল,কোথায় যেতে হবে?

বাইক নিয়ে তুহিন ছুটে এসেছে।এদিকে নিয়াজ রোহান একে অপরকে মেরে রক্তাক্ত করে দিয়েছে।দুজনের শরীরই নিস্তেজ হয়ে এসেছে তবুও থামছেনা।তুহিন তার বন্ধুদের নিয়ে রোহানকে মারতে থাকে।জারা তুহিনকে ঝাঁকিয়ে বলে,ওদেরকে থামা।আমি তোকে ডেকেছি ওদের মারামারি থামাতে মারতে নয়।
তুহিন চোখ লাল করে বলল,ও এখানে কি করছে?
জারা হাত জোর করে বলল,বলছি আগে ওদেরকে থামা,ছেলেটা মরে যাবে আগে আমার কথা শোন।তুহিন সবাইকে থামতে বলে।রোহান ব্যথায় কাতরে ওঠে।নিয়াজের কপাল ঠোঁট কেটে গিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।জারা ব্যাগ থেকে টিস্যু আর পানির বোতল নিয়ে নিয়াজের দিকে এগিয়ে দেয়।নিয়াজ জারার দিকে একনজর তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়।কিন্তু কিছুই হাতে নেয় না।জারা তুহিনের দিকে তাকিয়ে বলল,তোকে আমি সবকিছু বাসায় গিয়ে বলবো,এখন উনাদের হসপিটালে নেওয়ার ব্যবস্থা কর।তুহিন কথা না বাড়িয়ে জারার কথামতো গাড়ি ডেকে তুহিনকে তুলে নেয়।জারা কাঁপা কাঁপা হাতে নিয়াজের কপালের রক্ত মুছে দিয়ে ঠোঁটের কাছে গিয়ে থেমে যায়।হাত গুটিয়ে নিতে গিয়েও কি মনে করে দ্রুত রক্ত মুছে দিয়ে নিয়াজকে পানি খেতে বলে।নিয়াজ পুরোটা সময় জারাকে দেখছিলো।এখনো জারার দিকে তাকিয়ে পানির বোতলের ছিপি খুলে দুই ঢোক পানি গিলে নেয়।জারা কন্ঠ খাদে ফেলে বলল,ডাক্তারের কাছে চলুন।
নিয়াজ জারার দিকে চেয়ে থেকে বলল,লাগবেনা।আ’ম ওকে।
জারা রেগে গিয়ে বলল,কতটা ওকে সেটা আমি দেখতেই পাচ্ছি।চুপচাপ ডাক্তার দেখিয়ে বাসায় যাবেন বলে নিয়াজের হাত ধরে টেনে গাড়ির সামনে নিয়ে আসে।
নিয়াজ জারা আর ওর হাতে দিকে তাকিয়ে হাটছে।জারার এই অধিকারবোধটা নিয়াজের বেশ ভালোই লাগছে।
গাড়ির কাছে এসে জারা নিয়াজের হাত ছেড়ে দিয়ে চোখে ইশারা করে বলল,গাড়িতে উঠতে।নিয়াজ আগে জারার দিকের দরজা খুলে দিয়ে দাঁড়ায়।জারা একবার নিয়াজের দিকে তাকিয়ে ফ্রন্ট সিটে বসে পড়ে।নিয়াজ ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সোজা হাসপাতালে চলে আসে।রোহানকেও তুহিন এই হাসপাতালে নিয়ে এসেছে।ডাক্তার নিয়াজের কপাল আর শরীরের কেটে যাওয়া অংশ গুলোতে মেডিসিন দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দেয়।তুহিন নিয়াজকে সাবধানে বাসায় যেতে বলে জারাকে নিয়ে বাসার জন্য বেরিয়ে পড়ে।জারা আসার আগে একবার নিয়াজের দিকে তাকিয়ে নাথা নিচু করে তুহিনের সাথে বেরিয়ে আসে।

হাসপাতালের রিসিপশন থেকে রোহানের বন্ধুকে কল দিলে সে হাসপাতালে চলে আসে।রোহানের পকেটে ফোন সহ যাবতীয় সব কিছু ছিলো।রোহান ঢাকায় এসে তার বন্ধুর বাসায় উঠে।একদিন থেকে জারার খোঁজ নিয়ে আজকে জারাকে নিয়ে যেতে আসে।
রোহানের বন্ধু দিদার রোহানকে বলে,মেয়েটার কথা ভুলে তানিশাকে নিয়ে সংসার কর।সে তার মতো আছে তুই তোর বউ বাচ্চা নিয়া থাক।এ দুদিন আমি দেখেছি তানিশা কল দিলে তুই কিভাবে মেয়েটার সাথে ব্যবহার করতি।আরেকজনের পেছনে ছুটে এখন দেখ ডান হাত ভেঙে পা মচকে বসে আছিস।সারা শরীরে জখম হয়েছিস।
রোহান কিছু না বলে মাথা নিচু করে বালিশে হেলান দিয়ে বসে থাকে।

জারার বাবা মা সকালেই গ্রামের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েছেন।মেয়ের বিয়ে বলে কথা প্রচুর কাজ সামলাতে হবে এখন থেকেই।সবাইকে দাওয়াত দিতে হবে।রাতে ঘুমাতে এসে জারা ভাবছে,মানুষটার এখন কি অবস্থা একবার কি ফোন করবো?যদি ফোন করলে বেহায়া ভাবে?কিন্তু ফোন না দিলেও তো জানতে পারবো না এখন কেমন আছে।হাজারো চিন্তা ভাবনা শেষে মনের সাথে যুদ্ধ করে জারা মনস্থির করলো নিয়াজকে ফোন করবে।ফোন হাতড়িয়ে নিয়াজকে কল দিতে গিয়ে জারা চুপ করে বসে আছে।কিভাবে কল দেবে?ওর কাছে তো নিয়াজের নাম্বারটাই নেই।মন খারাপ করে ফোন রেখে দিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।

পরেরদিন ভার্সিটিতে গিয়ে ক্যাম্পাসে পোলাপানের ভীড় দেখে জারা সেদিকে এগিয়ে যায়।ভীড় ঠেলে সামনে এগিয়ে যেতেই দেখে তুহিন আর মাহাদী মারামারি করছে।জারা ওদেরকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করলো তোরা দুজন মারামারি করছিস কেনো?তুহিন জারাকে সরিয়ে দিয়ে বলে তুই সরে যা।তুই জানিস তোর এই বন্ধু আর আমার সিনিয়র নামের কলঙ্ক কি করেছে?
জারা শান্ত কন্ঠে বলে কি করেছে?মাহাদী হেসে চলেছে।তুহিন কপালের দিকের চুলগুলো হাত দিয়ে চেপে ধরে বলে,মেয়ের আইডি দিয়ে আমার সাথে প্রেম করেছে।আজকে দেখা করতে এসে দেখি ছেলে।
জারা ফিক করে হেসে দিয়ে বলে,তোরতো আর গার্লফ্রেন্ড এর অভাব নাই।তাহলে এতো চেতস কেনো?
তুহিন পা দিয়ে মাটিতে লাথি মেরে বলে আমি সিরিয়াস ছিলাম ইয়ার!
জারা হেসে কুটিকুটি সাথে মাহাদী ও হাসছে।জারা চোখ পাকিয়ে বলছে তাই বলে তুই সিনিয়রকে মারবি?
তুহিন দাঁত কিড়মিড় করে বলল,আর সিনিয়র যে আমার হৃদয় ভেঙেছে?
জারা এবার মাহাদীকে ধরেছে।কিরে তুই এরকম করলি কেনো আমার বেচারা ভাইটার সাথে?
মাহাদী হাসি থামিয়ে বলে,তোর ভাই আমার ক্লাস টেন এ পড়া কাজিনের সাথে প্রেম করে।আমার কাজিনতো তোর ভাই বলতে পাগল।তার একাধিক গার্লফ্রেন্ডের কথা শুনে ফেইক আইডি দিয়া সেই প্রেম করেছে।কিন্তু দেখা করার জন্য আমাকে পাঠিয়েছে প্রতিশোধ নিবে বলে।
তুহিন চোখ বড় বড় করে বলল,মিমিকে আমি বাচ্চা মেয়ে ভেবেছি।এই মেয়ে আমার সাথে এতবড় গেইম খেললো?আমার সবচেয়ে ছোট গার্লফ্রেন্ড যে এতটা ডেন্জারেস তা আজ জানলাম।
জারা তুহিনের কাধে হাত দিয়ে বলে,সবগুলোকে বাদ দিয়ে আমি মিমিকেই আমার ভাবি বানাবো।তোর জীবন তেজপাতা করার জন্য তৈরি হয়ে নে ভাই।চল মেদী ক্লাসে যাই।

অফিসে এসে জারা অবাক আজ একবারের জন্যেও নিয়াজ ওকে কেবিনে ডাকলো না?অফিস টাইম যখন প্রায় শেষ তখন জারা ফাইল দেখাতে নিয়াজের কেবিনে যাওয়া ধরতেই রহিম বলল,ম্যাডাম কোথায় যাচ্ছেন?স্যার তো নাই।
জারা বলল,স্যার নাই মানে?
রহিম বলল,স্যার নাকি অসুস্থ।জ্বর আইছে তাই অফিসে আসেন নাই।
জারা চিন্তিত হয়ে বলল,ওহ।
কাল যেভাবে রোহান আর নিয়াজ একজন আরেকজনকে কেলিয়েছে জ্বর আসারই কথা।

জানালার পর্দা গুলো উড়ছে।পুরো রুমে নিস্তব্ধতা বিরাজমান।নিয়াজ বিছানায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।জ্বরে চোখগুলো কেমন ফোলা ফোলা লাগছে।বেশিক্ষণ চোখ খুলে রাখা দায় হয়ে পড়েছে তাই চোখ বুঝেই শুয়ে আছে নিয়াজ।শরীরের তাপমাত্রা রাতের চেয়ে এখন অনেকটা কম আছে।কাল রাতেই ভীষণভাবে জ্বর উঠেছে সাথে পুরো শরীরে ব্যাথা।

চলবে……।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here