আমার আকাশ,Part:7,8

0
844

আমার আকাশ,Part:7,8
Ayusha Akter Usha
Part:7

আমি রেডী হয়ে বসে আছি।মা আন্টির সাথে কথা বলছে।আমার মেজাজ চরম পর্যায়ে উঠে আছে।কারন রিমি আপুকে আনতে যাওয়ার শেষ পর্যায়ে এসে আঁখি জেদ ধরে আমাকে তার সাথে যেতে হবে নয়তো সে যাবে না।এরকম একটা ও যুক্তি কর জেদের মানে আমি কিছুই বুজতে পারছি না।আমি যাবো না বলে বসে আছি আর সে বসে আছে যাবে তো আমাকে নিয়েই যাবে তার যাওয়া না যাওয়া তে আমার কিছু যায় আসে না আমি তো বাড়ি যাবো।কিন্তু সমস্যা হলো এখন আন্টিও জোর করা শুরু করে দিছে যে আমাকেও যেতে হবে।বারবার বলছি যে যাবো না যাবো না।কিন্তু কেউ কিছু শুনছে না।মেহমান বাড়ি বড়রা বলছে তাই বেশি জেদ ও দেখাতে পারছি না।শেষমেষ আমাকে রাজী হতে হলো।আঁখি খুশিতে লাফ দিয়ে রেডী হতে চলে গেল।মা বাবা ভাইয়া সবাই বাড়ি চলে গেল।আর আমি বসে রইলাম।কিছুক্ষণ পর আঁখি রেডী হয়ে বের হলো।চারজন দাদীর বয়সী মহিলা আঁখি আমি সাদিয়া আর মিলি যাবো রিমি আপু কে আনতে।একটা অটো ঠিক করা হলো।কিন্তু অটোতে দুজনের জায়গা হচ্ছে না।আমি আর আখি দাঁড়িয়ে আছি।আমার আরো মাথা গরম হয়ে গেল।আমি না থাকলে হয়তো এতক্ষনে একজনের জায়গা বের হয়ে যাইতো।এমন সময় আকাশ বাইক নিয়ে এসে আমাদের সামনে দাঁড়ায়।আকাশকে দেখে অটো ছেড়ে দেয়।কিন্তু আমরা এখনো ওখানেই দাঁড়িয়ে আছি।মূল কারন কে আগে চড়বে।আমি বলি তুমি আগে চড়ো।ও বলে তুমি আগে চড়ো।আশ্চর্য তো তোমার কাজিন তুমি আগে চড়বে তা না আমাকে বলছে।আমাদের এইসব বিড়বিড় করা শুনে আকাশ বিরক্ত হয়ে বললেন
-ঊষা উঠে বসো।
-আমি কেন বসব আঁখি বসবে।
-ঊষা বেশি কথা না বলে তাড়াতাড়ি ওঠো।
-না আমি উঠবোনা।
-আজব তো আমাকে কি তোমার চরিত্রহীন বলে মনে হয় যে আমি তোমার গা ঘেঁষে বসে থাকবো।
-হোয়াট ননসেন্স।তা কেন মনে হবে।
-তাহলে উঠছো না কেন।
আমি চরম বিরক্তি নিয়ে আঁখির দিকে তাকালাম।ও মুখ টিপে হাসছে।এই কথাতে হাসার কোনো মানেই হয় না।একরাশ বিরক্ত নিয়ে অবশেষে আমিই আগে উঠলাম।তারপর আঁখি উঠল।বাইক একটু বড় ছিলো তাই মাঝখানে একটু ফাঁকা রেখে আমার হাত ব্যাগ সেখানে রাখলাম।বাইক চলতে শুরু হলো।কিছু দূর গিয়ে বাইক একটা উচু নিচুতে পরতেই আমার হাত অটোমেটিক উনার কাধে চলে গেল।সাথে সাথে হাত সরিয়ে নিলাম।
-কি হলো তুমি কি সুযোগের অনব্যাবহার করছ।
-মানে।।
-সুযোগ বুঝে ইচ্ছে করে এইভাবে আমার শরীরে হাত দেওয়ার মানে কি।
-আমি মোটেও ইচ্ছে করে আপনার কাঁধে হাত রাখিনি।বাইক উঁচু নিচুতে পরার কারনে এরকম টা হয়েছে।
-কিন্তু আমার তো মনে হচ্ছে তুমি ইচ্ছে করে আমার গায়ে হাত দিয়েছ।
-কখনো না আমার তো মনে হয় আপনি ইচ্ছে করে বাইক উঁচু নিচু তে ফেলেছেন।
-হুহ আমার বয়েই গেছে এরকম একটা ছ্যাচড়া মেয়ের জন্য আমার বাইককে কষ্ট দেওয়ার।
-কি বললেন ছ্যাচড়া আর আমি।
-হ্যা তুমি কিভাবে সারাদিন ওই সুমনের সাথে লেগে থাকো।তুমি ছ্যাচড়া নয় তো আরকি।
-এই আপনি বাইক থামান আমি নামবো।
-কেন।
-আপনার সাথে আমি এক বাইকে কিছুতেই যাবোনা।আপনি বাইক থামান।
-না থামাবোনা।দেখি তুমি কি করো।
-আমি বলছি আপনি বাইক থামান নয়তো আমি চলন্ত গাড়ি থেকে ঝাঁপ দিব।
-আচ্ছা এতো সাহস ওকে দাও তবুও আমি বাইক থামাচ্ছি না।
-আমি কিন্তু সত্যি সত্যিই ঝাঁপ দিব।
-দিতেই তো বলছি দাও না।
-ওকে।
বলেই চুপচাপ বসে রইলাম।রাগী হতে পারি বোকা নই যে চলন্ত বাইক থেকে ঝাঁপ দিয়ে মরতে যাবো।আখির দিকে তাকিয়ে দেখি সে হাসছে।আমার রাগ কয়েকগুন বেড়ে গেল।
-কি হলো ঝাঁপ দিচ্ছো না কেন।
-তার মানে কি আপনি আমাকে সত্যিই মেরে ফেলতে চাইছেন।
এই কথাটায় না জানি কি এমন হলো।সাথে সাথে বাইক থামিয়ে বাইক থেকে নেমে সোজা দিল আমার গালে কষে একটা চড়।আমি হতভম্ব।আঁখি ভয়ে সাথে সাথে নেমে পরেছে বাইক থেকে।আমি এখনো বাইকেই বসে আছি গালে হাত দিয়ে।চোখ দিয়ে অঝোরে জল গড়িয়ে পরছে।এই ভরা রাস্তায় আমাকে এইভাবে চড় মেরে অপমান করার মানে আমি এখনো বের করতে পারলাম না।
আমার আকাশ
Ayusha Akter Usha
“”8″”
আমি শুয়ে শুয়ে চোখের জল ফেলছি।আখি আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে।মেয়ে টা সেই তখন থেকে আমাকে সান্তনা দিয়েই যাচ্ছে।কিন্তু আমি কিছুতেই শান্ত হতে পারছি না।কি করে হবো।এতগুলো মানুষের সামনে ওই চড়টা আমার হজম হয়নি।তার উপর এখনো বুঝলাম না আমার দোষটা কি ছিল।আমি জোরে জোরে ও কথা বলিনি তাহলে।চড় মারার পর আবার ধমক দিয়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়। আমাদের একটা অটো ভাড়া করে দিয়ে উনি চলে যায়।রিমি আপুর বাড়িতেও সারাদিন চুপচাপ ছিলাম।রাতে রিমি আপুকে নিয়ে এসে ওই যে বিছানায় শুয়েছি আর উঠিনি।এতক্ষণে আকাশের সাথেও আর দেখা হয় নি।আর দেখা না হলেই ভালো।কাল সকালে ঘুম থেকে উঠেই এখান থেকে চলে যাবো।আর কোনোদিন ও এখানে আসবো না।ওই আকাশের সামনে তো কখনোই না।এরই মাঝে আমার ফোনে মেসেজ টোন বেজে উঠল।আমি মেসেজ অন করে দেখি অপরিচিত এক নাম্বারে কেউ মেসেজ দিয়েছে
“ঊষা এক্ষুনি ছাদে এসো।কিছু কথা আছে।”
আজব তো কে এটা।ছাদে কেন যেতে বলছে।আমি টাইম দেখলাম বারোটা বেজে চার মিনিট।এতো রাতে আমাকে ছাদে আবার কে ডাকছে।পরক্ষণেই মনে হলো নিশ্চিত এটা আকাশ।আকাশ ই হবে।কি কথা বলবে আমি খুব ভালো করেই জানি।আর এতো রাতে ছাদে যাওয়ার তো কোনো প্রশ্ন ই ওঠেনা।কেউ দেখে নিলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে আর উনি ডাকলেই আমাকে যেতে হবে নাকি।আমি ফোন রেখে আবার শুয়ে পরলাম।কিছুক্ষণ পর আবার আমার ফোন বেজে উঠল।আমার মেসেজ দিয়েছে।
“”কি হলো এখনো আসছ না কেন”
“আমি যাবোনা”
“তুমি আসবে আর এক্ষুনি আসবে”
জোর খাটাচ্ছে তার মানে তো এটা সিওর আকাশ ই।আমি আবার ও রিপ্লাই দিলাম।
“”আমি যাবোনা মানে যাবোনা””
“”ঊষা প্লিজ শুধু একটা আর দেখা করো।তারপর নাহয় আর কখনো তোমার সামনে অসবো না আমি”
কি করব যাবো কি না।এতো রাতে আমাকে ছাদে ডাকার কারন কি।সরি বলবে।উফফ কি করি কি করি।একবার যাই বরঞ্চ।যদি সরি বলতে আসে তো দেব কয়েকটা কথা শুনিয়ে হুম।আমি উঠে বসলাম যাওয়ার জন্য।আমার ওঠা দেখে আঁখি বলতে লাগল
-কি হলো কোথায় যাচ্ছো।
-একটু বাইরে এক্ষুনি আসছি বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।ঘরে সাদিয়া মিলিও ছিল।কিন্তু তারা ঘুমিয়ে শেষ।আমি ধীরে ধীরে সিঁড়ি ঘরের দিকে যেতে লাগলাম।সিঁড়ির দরজা খোলাই আছে।হয়তো আমার জন্যই খোলা রেখেছে।বাড়ির সবাই শুয়ে পরেছে নিজ নিজ ঘরের দরজা বন্ধ করে তাই আমাকে দেখে ফেলার আশংকা কারো নেই।আমি মৃদু পায়ে ছাদে উঠলাম।ছাদে গিয়ে দেখি আকাশ অন্য দিকে মুখ করে পকেটে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে।আমি মাথায় চারশ চল্লিশ ভোল্টের আগুন জালিয়ে উনার পাশে গিয়ে দাড়ালাম।
-কি হলো এতো রাতে আমাকে ছাদে ডেকেছেন কেন।
-সরি।।।
-সরি।।।কিসের জন্য সরি।
-বিকেলে আমার ওইভাবে রিয়াক্ট করাটা উচিৎ হয়তো।
-ওহহো।।এই কমন সেন্স টা তাহলে আপনার মধ্যে আছে আমি তো ভেবেছিলাম কমন সেন্স কমন জাতীয় টা ও আপনার মাঝে নাই।তখন ওতো গুলো মানুষের সামনে আমাকে বিনা দোষে অপমান করলেন।আর এখন রাত বারোটায় আমাকে ছাদে ডেকে সরি বলা হচ্ছে।আর আপনি ভাবলেন কি করে যে আমি আপনাকে ক্ষমা করে দেব।ইম্পোসিবল।আমি আপনাকে কখনোই ক্ষমা করবনা।আর আপনিও আমাকে সরি বলে বৃথা সময় নষ্ট করবেননা।
বলেই চলে আসার জন্য ঘুরে পা বাড়ালাম তখনি উনি বলে উঠলেন।
-কাল চলে যাবে।
আমি আবার ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম।
-কোনো সন্দেহ আছে।আমি যদি পারি তো আজকেই চলে যাই।
-তোমার কি কোনো কষ্ট হচ্ছে না।
-কষ্ট আর আমার কেনো বলুন তো।আমি তো আরো এখান থেকে যেতে পারলেই বাচি।আমি পারলে এক্ষুনি এখান থেকে চলে যাই।যতই হোক আর আপনার মুখটা তো আমায় দেখতে হবে না তাই না।
বলেই চলে আসতে লাগলাম।তখন ই আমার কানে একটা কথা ভেসে এলো।যা শুনেই আমি ওখানেই থমকে গেলাম।আমার কানে বার বার ওই একটা শব্দ ই বাজছে
“I love you”
আমি কে পাগল হয়ে গেলাম কি সব শুনছি আমি।আমি সিওর হওয়ার জন্য আবার ঘুরে উনার কাছে গিয়ে বললাম
-কি বললেন আপনি।
-যা শুনেছ তাই বললাম।
-আমি বুঝতে পারিনি আপনি আবার বলুন কি বলেছেন আপনি।
এবার হয়তো উনি আমার কথা শুনে রেগে গেলেন।তাই চোখ বন্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে রাগ কামানোর চেষ্টা করতে করতে অন্যদিকে ঘুরে বললেন
-darn it…..
ওনার বিড়বিড় করা শুনে আমি রেগে বললাম
-এই আপনি আমাকে পাগল পেয়েছে হা।যখন যা ইচ্ছে তা করছেন যা ইচ্ছে তাই বলছেন।পাগল আমি।খেলনা পেয়েছেন আমাকে।দোষ করেছেন আপনি আর গালি দিচ্ছেন আমাকে।মজা করছেন আমার সাথে।আমাকে ডাম ইট বলছেন।আপনি ডাম ইট আপনার ঘাড় ডাম ইট আপনা চৌদ্দ গুষ্ট…উমমম…..
আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেছে।এ কি করছেন উনি।উনি কি সত্যিই পাগল হয়ে গেছেন।আমি প্রাণপণে নিজেকে ওনার থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি কিন্তু আমি ব্যর্থ।উনি আচমকাই এসে একহাতে আমাকে জড়িয়ে অন্য হাতে আমার মাথা চেপে ধরে আমার ঠোঁট দখল করে নিলেন।এটার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।চোখের কোন বেয়ে অঝোরে জল গড়িয়ে পরতে লাগল।ছিঃ এটা উনি কিভাবে পারলেন।আমি এখনো নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টায় ব্যস্ত।কিছুক্ষণ পর উনি নিজেই আমাকে ছেড়ে দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে একহাতে নিজের ঠোট মুছলেন।আমি ওখানেই কাঁদতে লাগলাম
-পাগল হয়ে গেছেন আপনি কি করলেন এটা।
-পাগল হয়নি।তোমাকে শুধু বোঝাতে চেয়েছি যে আমি যা বলছি তা মজা নয়।আম সিরিয়াস।আমি তোমাকে ভালোবাসি।
-ছি চুপ করুন।আপনার ভালোবাসা কি এরকম।আমার ই ভুল আমাকেই আগে থেকে বোঝা উচিৎ ছিল আমার প্রতি আপনার দৃষ্টিকোণ।ছি আপনি এতোটা নিচ আমি কখনো ভাবিনি।আমি আপনাকে কখনো ক্ষমা করব না কখনো না।
-ঊষা দেখ
-খবরদার এগোবেননা।আর এক পা এগোলে আমি কিন্তু চেচাবো।
-ঊষা আমার কথাটা শোনো।আমি সত্যি বলছি আই লাভ ইউ।
-চুপ করুন।আর একটা কথাও আমি শুনার ইচ্ছে আমার নেই।আর নাই আপনার মুখ দেখার ছি।
বলেই আমি ছাদ থেকে নেমে এলাম। ছাদে না গেলেই হতো আমার।আমিও কতো টা বেহায়া উনি বললেন আর আমি ছুটলাম।ছি কতোটা নোংরা উনি।যেই সমাজে একট্ ছেলে একটা মেয়ের হাত ধরলেই তার বদনাম হয়ে যায় সেখানে উনি আমাকে …ছি ছি ছি।।নিজের প্রতিই ঘেন্না হচ্ছে আমার।আমি টিউব ওয়েলে গিয়ে নিজের ঠোঁট ঘষতে লাগলাম।কিন্তু যা দাগ লাগার তা তো লেগেই গেছে।সেই দাগ কি আর উঠবে।প্রায় অনেক্ষন পর আমি ঘরে গিয়ে শুয়ে পরলাম।
-কি বলল আকাশ ভাইয়া।
আঁখির এমন প্রশ্নে আমি চমকে গেলাম।ও কি করে জানলো যে আমি আকাশের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম।
-কই কোথায় আকাশ।ওনার সাথে এতো রাতে আবার কোথায় দেখা হবে।
-একদম মিথ্যে বলবে না আমি জানি তুমি আকাশ ভাইয়ার সাথেই দেখা করতে গেছিলে।আরে আমি ই তো ভাইয়াকে এই প্ল্যান টা দিয়েছিলাম।নিশ্চয়ই তোমার রাগ ভেঙেছে তাইনা।
-মানে তুমি দিয়েছিলে মানে কি।
-মানে আমি সব জানি।আকাশ ভাইয়া যে তোমায় লাইক করে তা আমি জানি।আরে আজ তো তোমাকে সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য জেদ ধরেছিলাম ভাইয়ার কথাতেই।সে চাইতো আরো একটা দিন এই বাড়িতে তোমার আয়ু বারুক।
-তার মানে এসব কিছু তোমরা দুজনে জানতে।আই মিন তুমিও জানতে ।
-হুম।
এই কথাটা শোনার সাথে সাথেই আমি অন্যাদিকে ঘুরে শুয়ে পরলাম।সবাই একেকটা ধোকাবাজ।কারোর সাথেই আর কথা বলব না।কাল সকালেই এখান থেকে যেতে পারলে বাচি।

to be continue….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here