অনুভবে তোমার ছোঁয়া?,পর্ব_০২ (অন্তিম পর্ব)
লেখিকা_আয়ানা_আরা (ছদ্মনাম)
তখনই একটা বাচ্চা ছেলে ‘চাচ্চু’ বলতে বলতে দৌড়ে এসে আজলানের গলা জড়িয়ে ধরে। আজলানও বাচ্চাটাকে জড়িয়ে ধরে বলে,’আমার আয়জান এসে পড়েছে?’
আয়রা আসতে আসতে বলে,’আর বলো না তো আজলান ও আমার এমন দৌড়ানি আজ দৌড়েছে যা আমি জন্মেও ভুলবো না একদম তোমার বাপের মতো হইছে!’
আজলান হেসে বলল,’হুম দেখতে হবে না কার রক্তের!’
আয়রা মিসেস আদিবার উদ্দেশ্যে বলে,’আরে মা আপনি রাখেন আমি খাবার বেরে দিচ্ছি।’
‘আরে বউমা তুমি যাও আয়জানকে নিয়ে রুমে। মাত্রই বাড়ি এসে কাজে লেগে পড়তে হবে না।’
আয়রাও আর কিছু না বলতে আয়জান কে কোলে নিয়ে উপরে যায়!
________
আমি মুখ ফুলিয়ে খাবার টেবিলে বসে আছি। পাশে আম্মু,আব্বু আর ভাইয়া আমার বিয়ের ব্যপারে কথা বলছে। আমি নিজের নীরবতাকে আল্লাহ হাফেজ জানিয়ে খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে বললাম,”আমি এখন বিয়ে করবো না!!”
আম্মু আমাকে বলেন,”অনেক বড়ই তো হয়েছিস এখন বিয়ে দিবো না তো কবে দিবো?”
“বড় হয়েছি বুড়া হয়ে যাইনি যে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে হবে।”
এই বলে ওই জায়গা প্রস্থান নিলাম। তারা আমার যাওয়ার পানে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে খাওয়া শুরু করলেন। আমি নিজের রুমে এসে ঠাসস করে দরজা লাগিয়ে শুয়ে পড়লাম।
______
সকালে গুড়িগুড়ি বৃষ্টির ফোঁটা জানালা গড়িয়ে আমার মুখে পড়তেই আস্তে করে চোখ খুললাম। বিছান ছেড়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে যেয়ে দেখলাম সবাই ব্রেকফাস্ট করছে আর কি বিষয়ে জানি কথা বলছে। আমাকে আসতে দেখে সবাই চুপ হয়ে যে যার মতো খেতে থাকে। আমিও নিজের মতো টেবিলে বসে নাস্তা বেরে খেতে থাকি। খাওয়া শেষে আমি ভার্সিটি যাওয়ার জন্য বের হলাম।
ভার্সিটি পৌছে ক্লাস রুমে এসে দেখি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড নাদিয়া গল্প করছে আমাকে আসতে দেখে আমার কাছে এসে বলে,”কি রে অহি কি হয়েছে এমন মন মরা হয়ে আছিস কেন?”
“কিছু না চল।”
এই বলে ওর হাত ধরে নিয়ে যে বেঞ্চে বসিয়ে দিলাম। ও আমার গালে হাত রেখে বলল,”কিছু কি হয়েছে?আমাকে বলতে পারিস!”
আমি আলতো হেসে বললাম,”কিছুই হয়নি খালি এখন আমাকে সবাই বোঝা মনে করে বিয়ে দিতে চাচ্ছে এর বেশি কিছুই না।”
আমার মন খারাপের কারণ নাদু বুঝতে পেরে বলে,’থাক না রাগ করিস না হয়তো এমনি বলেছে পরে আর বলবে না দেখিস।”
“শুন একদিন বিয়ের ব্যপারে বলল মানলাম কিন্তু প্রতিদিন বললে রাগ লাগারই কথা।”
“হুম। আচ্ছা বাদ দে সেইসব।”
“হুম।”
তখনই ক্লাসে স্যার চলে আসার কারণে আমরা মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করতে থাকি। ক্লাস শেষে আমরা যে যার মতো বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হই। আমি ভার্সিটির গেটের সামনে আসতেই একজনের সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে যেতে নেই ব্যক্তিটা আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে। আমি চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলি আর বলি,”কোমড় গেলো রে বাবা!”
পরেক্ষনই অনুভব করতে পারলাম কেউ আমাকে নিজের সাথে মিশিয়ে রেখেছে। আমি তড়িৎ চোখ খুলে নিজেকে ছাড়িয়ে দেখলাম। ওইদিনের লোকটা যে আমায় বাচিয়ে ছিলো বখাটে ছেলেদের থেকে!আমি তাকে দেখে কিছু ইতস্তত বোধ করতে লাগলাম আমার অবস্থা বুঝতে পেরে সে বলে,”আসলে এই ভার্সিটির প্রিন্সিপালের সাথে আমার কাজ ছিলো তাই এসেছিলাম।”
আমি মাথা নাড়িয়ে তাকে বিদায় দিয়ে চলে আসলাম। বাড়ি এসে কারো সাথে কোনো কথা না বলে রুমে চলে গেলাম। তখনই ভাবী হুরমুড় করে ঘরে ঢুকে বলে,”এই অহি জলদি চলো আমার সাথে আব্বা কাজে যাওয়ার পথে এক্সিডেন্ট করেছে উনাকে হস্পিটাল নিয়ে গেছে।”
ভাবীর কথায় এক প্রকার স্তব্ধ হয়ে যাই আমি। আমি যেনো নড়তে ভুলে গেছি। ভাবী আমাকে এইভাবে ঠায় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমার হাত টেনে নিয়ে বলে,”এই অবস্থায় একা আমি আম্মাকে নিয়ে যেতে পারবো না তুমিও চলো।”
অতঃপর আমি আর ভাবী আর আম্মু হসপিটালের উদ্দেশ্যে বের হলাম। হস্পিটালে পৌছে দেখলাম ভাইয়া চেয়ারে বসে আছে চোখ বন্ধ করে। আমি ভাইয়ার কাছে যেয়ে বললাম,”আব্বু কোথায়?”
ভাইয়া চোখে ইশারা করে কেবিনের দিকে দেখালো। আমি কেবিনের কাছে গিয়ে দেখলাম আব্বুকে শোয়ানো হয়েছে আর হাতে ক্যানেলা পড়ানো। সব দেখে আমার চোখ থেকে টুপ করে জল গড়িয়ে পড়লো।
_____
আব্বুকে বাসায় নিয়ে বাসায় আসা হলো ১ সপ্তাহ হলো। আব্বু এখন ভালো করে চলতে পারে না আদোও কি কখনো চলতে পারবে কিনা তা জানি না!ভাইয়া যেই কাজ করে ওইটাও এত ভালো না যে পুরা সংসার প্লাস আব্বুর ওষুধ এর খরচ চলবে তাই আমি একটা টিউশনি খুজেছি আজ থেকে যাবো।
যেই বলা সেই কাজ বের হলাম এই এলাকায় একজনকে পড়ানোর উদ্দেশ্যে। ওর বাড়ি পৌছে যেই না কলিং বেল চাপলাম একজন দরজা খুলে দিলো অপরপাশের লোকটাকে দেখে আমার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম অপর পাশের লোকটারও। কারণ এটা ওইদিনের লোকটা যার গাড়ির কাঁচ আমি ভেঙ্গেছি লোকটাকে আমাকে দেখে রেগে বলে,”এই মেয়ে তুমি এইখানে কেনো?চুরি টুরি করতে আসো নি তো?”
লোকটার কথায় বোকা বনে গেলাম আমি অতঃপ৪ রেগে বললাম,”এই খাটাশ ব্যাটা আমি চুরি করতে আসবো কেন?”
“ওয়াট?কে খাটাশ ব্যাটা?”
“আপনি!”
লোকটা তেলে বেগে রেগে গেলো আরো।
“চোরের মায়ের বড় গলা চুরি করতে এসে আবার বড় কথা বলে।”
“আমি আর চুরি!!আপনি করতে আসছেন নাকি সন্দেহ হচ্ছে।”
তখনই একটা ইয়াং মেয়ে এসে বলে,”কে এসেছে আজলান?”
“ভাবী দেখো না চোর এসেছে।”
মেয়েটা হেসে এগিয়ে আসতে আসতে বলে,”আরে অহি এসে পড়েছো আসো ভিতরে আসো।”
আমি উনাকে সালাম দিয়ে ভিতরে ঢুকলাম। লোকটা মেয়েটার উদ্দেশ্যে বলেন,”ভাবী ও কে?”
“ওকে আয়জানের জন্য রেখেছি।আয়জানকে পড়াবে ও আজ থেকে!”
“ও আচ্ছা।”
“হুম।”
এই বলে আয়জানকে ডাকতে থাকলো।
ওদের কথোপকথন শুনে যা বুঝলাম উনি মেয়েটার দেবর হোন!
______
আয়জানকে পড়াচ্ছি দুই মাস হয়ে গেছে। আজলাম নামের লোকটার সাথে ঝগড়া,খুনসুটি লেগেই থাকতো। প্রতিদিনের মতো আজও পড়িয়ে আসলাম বাসায় ঢুকতে না ঢুকতে ভাবী আমার কাছে এসে বলল,”অহি জলদি রেডি হও আজকে তোমাকে ছেলেপক্ষ দেখতে আসবে।”
আমি ভাবীকে কিছুটা শক্ত গলায় বললাম,”বললাম না আমি এখন বিয়ে করবো না কানে শুনো না তোমরা?”
“দেখ অহি তোর বাবা চায় উনার কিছু হওয়ার আগেই তোর বিয়ে দেখে যেতে।” (আম্মু)
অনেকক্ষন বুঝানোর পর অতঃপর বাবার মুখের দিকে চেয়ে রাজী হলাম আমি। আমাকে একটা কালো শাড়ি পড়িয়ে নিচে নিয়ে আসা হলো। আমি সালাম দিয়ে সোফায় বসলাম।পাত্রকে দেখে আমি ভুত দেখার মতো চমকে উঠলাম কারণ পাত্র আর কেউ না আজলান!আজলান আমাকে দেখে চোখ টিপ মারলো। আজলানের মা বললেন,”আপা মেয়ে তো আমাদের দেখাই আছে আজ নাহয় বিয়ে পাকা করে যাই!”
“আপনার যেমন ইচ্ছা আপা।”
অতঃপর আমার আংটিবদল হলো আজলানের সাথে। আয়জান বলল,’ইয়েএএ ম্যাম এখন থেকে আমার চাচী!!”
আয়রা আপু হেসে বললেন,”হুম আজলান তাই এখন থেকে ছোট মার সাথে দুষ্টুমি করো না কেমন?”
আয়জান মাথা নাড়ায়। বিয়ে পাকা করে চলে গেলেন দুই সপ্তাহ পর বিয়ে।
_____
দেখতে দেখতে দুই সপ্তাহ কেটে যায় আজ আমার আর আজলানের বিয়ে গতকাল হলুদ হয়েছিলো। আমাকে আজলানের পাশে বসানো হয়। কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করেন। এই কয়েকদিনে আমিও মন থেকে আজলানকে মেনে নিয়েছিলাম। অতঃপর আমাদের বিয়ে সম্পন্ন হলো এক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হলাম আমরা।
____
বাসর ঘরে আমি আর আজলান বসে আছি। আমি আজলানের কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছি। আজলান বলেন,’আমি #অনুভবে_তোমার_ছোঁয়া চাই অহি।”
তার কথায় চোখ বন্ধ করেই মুচকি হাসলাম আমি। তা দেখে আজলানও মুচকি হাসেন।
সমাপ্ত