নিয়তি,পার্ট ৬,৭

0
851

নিয়তি,পার্ট ৬,৭
লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
পার্ট ৬

ঘরের এক কোণায় মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে সিঁথি।পাশে হৃদি।সামনে বসে আছে সিঁথির মা বাবা আর সাম্যের মা বাবা। ঠিক ঘরের আরেক কণায় ঘৃণা ভরা দৃষ্টিতে সিঁথির দিকে অগ্নিচোখে তাকিয়ে আছে সাম্য।ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে জ্যান্ত কবর দিতে।তাতেও সিঁথির প্রতি সাম্যের রাগ মিটবে কি না সন্দেহ।

-তোর কী আদো লজ্জা বলতে কিছু আছে?শেষে ঐ নেশাখোর…

গলা আটকে আসছে সিঁথির বাবা শফিক সাহেবের।মেয়ের এইরকম কাজের জন্য তিনি চোখ তুলে তাকাতে পারছেন না।বিয়ের সময় সাড়ে পাঁচ ভরি স্বর্ণ দিয়ে সাজিয়ে আনা হয়েছিলো সিঁথিকে।সব ঐ নেশাখোর ছেলে নীরবে নিয়ে গেছে।সোফা থেকে উঠে কষিয়ে চড় বসিয়ে দেন মেয়ের গালে শফিক সাহেব।এম্নেতেই পুরো পরিবেশ থমথমে।তার ওপর এমন ঘটনা ঘটায় পুরো ড্রয়িংরুমে আরও নীরবতা ছেয়ে যায়।গালে হাত দিয়ে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকে সিঁথি।হৃদি যে কিছু বলবে সে সাহস হৃদির হচ্ছে না।পাকনামির জন্য ইতিমধ্যে সে সাম্য আর মামার কাছ থেকে বকা খেয়েছে।তাই চুপচাপ থাকাটাই শ্রেয়।

-ভাইজান তুমি তোমার মেয়েকে নিয়ে যাও।লাগবে না আমার এমন দুশ্চরিত্রা মেয়ে।এর চেয়ে ঢের গুনে ভালো মেয়ে আমি সাম্যের জন্য পাবো।

মুখে ভেংচি কেটে সোজাসুজি নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয় বিলকিস বেগম।বোনের কথা শুনে শফিক সাহেবের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েন।তিনি আদোও কী তার মেয়ের সংসার টেকাতে পারবেন?পরে ত আর বিয়েও দিতে পারবেন না।ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে গলা টিপে মেরে দিক।কিন্তু না।বিপদের সময় মাথা ঠান্ডা রাখতে হয়।তাই এই মুহুর্তে শফিক সাহেবেরও উচিৎ মাথা ঠান্ডা করে ব্যাপারটা সামাল দেওয়া।করুণ কন্ঠে বোনের কাছে আর্জি জানায় সে যাতে তার মেয়েকে মাফ করেন।কিন্তু বিলকিস বেগম নিজের সিদ্ধান্তে অটল।সে আর সিঁথিকে ঘরে রাখবেন না।শফিক সাহেব অসহায়ের মতো সালাম সাহেবের পায়ে পরেন।মেয়ের সংসার বাঁচাতে।সালাম সাহেবের করুণা হয়। আরেকটা সুযোগ দেওয়া উচিৎ। শান্ত গলায় তিনি বলেন,,

-আচ্ছা।তবে এটাই শেষ।

শফিক সাহেব হাফ ছেড়ে বাঁচেন।সিঁথি কেঁদে দেয়।ইনশাআল্লাহ ও এবার নিজেকে শুধরে নেবে।আর ভুল করবে না সে।

কিছুদিনের মধ্যেই সাম্য আর সিঁথির সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে যায়।সেই সাথে বাসার পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হয়ে যায়।একে একে হৃদির জন্য ভালো ঘর থেকে সম্বন্ধও আসে।রূপে গুণে সব দিক দিয়েই হৃদি পরিপূর্ণ। তবে বেশির ভাগ সম্বন্ধ গুলোতেই ছেলে বয়স্ক হয়ে যায়।আর বাবা মা ছাড়া। হৃদি মা নেই।তাই সে শ্বশুর শ্বাশুড়ি ছাড়া বিয়ে করবে না।বিয়ের আগে মা বাবার আদর পাইনি বিয়ের পরে অবশ্যই মা বাবার আদর পেতে হবে।হৃদির এমন কথা শুনে বিলকিস বেগম বলেন,,

-শ্বশুর শ্বাশুড়ি ছাড়া বিয়ে করবি ঝামেলা নেই।

হৃদি মুচকী হেসে তখন একটাই উত্তর দেয়,,

-শ্বশুড় শ্বাশুড়ি চাই আমায় তোমায় কে বললো মামী?আমার মা বাবা চাই।

★★
-জ্বী।৪টা মেয়ে আছে।প্রতি মেয়ে ৭০হাজার।রাজী?
-হুম,রাজি।কিন্তু ৫টা হলে ভালো হয়।
-আচ্ছা আমায় কিছুদিন সময় দিন।ব্যবস্থা করছি।

কথাটা বলেই ফোন কেটে দেয় আলভী।মেয়েদের গোঙানির শব্দে ঘরের আকাশ বাতাস ভারী হয়ে এসেছে।সবার একই আর্জি তাদের ছেড়ে দেওয়া হোক।কিন্তু আলভীর তাতে মন ভরে না।তার টাকা চাই।প্রচুর টাকা চাই।মেয়ে গুলো কে দেখে যে কারও জিভেই জল চলে আসবে।আলভীরও লালসা জাগছে মেয়ে গুলোকে দেখে।কিন্তু নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।কাস্টমার বলে দিয়েছে একেবারে খাটি ভার্জিন মেয়ে চাই।তাই ব্যবসার লাভের জন্য হলেও আলভীর নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।হ্যাঁ আলভী নারী পাচার কারী দলের লোক।ওর টার্গেটে থাকে এতিম মেয়েরা।চারটা মেয়েকে আজই এখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা ছিলো।কিন্তু একটা মেয়ে কম পড়ায় আজ আর আলভীর মেয়েগুলোকে সরানো হয়ে ওঠে না।হাতের কাছে আর কোনো মেয়ে না পাওয়ায় আলভীর হৃদির ওপর চোখ পড়ে।রূপে জান্নাতী হুর।মা মারা গেছে।বাবা তাই পর হয়ে গেছে।মামী আর মামাতো ভাইয়ের বউয়ের চোখের বালি।এই মেয়ে নিখোঁজ হলে কেউ খোঁজ খবর নেবে না।তবে আজ না।লাস্ট বারের মতো মামাকে দেখে আসুক হৃদি।

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে একটা পৈশাচিক হাসি দেয় আলভী।ঘরে থাকা মেয়েগুলো কেঁপে উঠে।এরই মধ্যে হৃদির ডাক আসে,,

-আলভী।
-যাই।

কথাটা বলেই আলভী ঘর থেকে বেরোয়।ভালো করে দরজা আটকিয়ে হৃদির কাছে যায়।হৃদি ব্যাগ গোছাতে গোছাতে বলে,,

-তোমার ভাই কিন্তু পড়াশোনায় ঢিল দিছে।হোমওয়ার্ক দুই দিন ধরে পাই না।কাল যেন পাই।
-এই বলদ।এত ভালো একটা টিউটর আনলাম তাও তুই… আজকে তোর হচ্ছে।

হৃদিকে বিদায় করে দিয়ে প্ল্যান সাজায় আলভী।সেই প্ল্যানে সাহায্য করে আলভীর মা।নারী ও শিশু পাচার কারী লোকের কাছে তিনি বিউটিআম্মা নামে পরিচিত।নারী ও শিশু পাচার করা ছাড়াও তিনি মাদক ব্যবসায়ী। জেলে গিয়েছেন বহুবার।কিন্তু কুকুরের লেজ তো আর সোজা হয় না।

যথারীতি আর পাঁচটা দিনের মতো হৃদি বিকালে অভিকে পড়াতে আসে।আলভীর মা তাকে চা খেতে দেন।সেই চায়ের মধ্যেই মিশানো ছিলো নেশাদ্রব্য। চা খাওয়ার কিছুক্ষণ পরই হৃদির মাথা ঘুরাতে শুরু করে আর ঘুম ঘুম পায়।বিউটি আম্মা ওকে নিজের ঘরে শুয়ে রেস্ট নেওয়ার জন্য বলেন।শরীর খারাপ লাগায় হৃদিও তার কথা ফেলতে পারে না।হৃদি বিউটি আম্মার ঘরে প্রবেস করতেই আলভী ওর মুখ চেপে ধরে। বিউটি আম্মার ঘরটা একটু ভেতরের দিকে।ঘরের শব্দ বাইরে খুব একটা যায় না।হৃদি চিৎকার করে।কিন্তু ঐ!বাইরে শব্দ যায় না।তাই হৃদি কোনো সাহায্য পায় না।বিউটি আম্মা এসে হৃদির হাত পা বাঁধেন।আলভী পরে হৃদির মুখ বাঁধে।পরে তাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় সেই ঘরে।যেখানে মেয়েগুলো আছে।

হৃদির নেশারঘোর কাটে প্রায় ঘন্টা তিনেক পর।নিজেকে আবিষ্কার করে তখন অন্ধকার ঘরে।আশেপাশে শুধু মেয়েদের গোঙানির শব্দ।হাত পা মুখ বাধা থাকায় কেউ কিছু করতে পারছেনা।এই মুহুর্তে হৃদি কী করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা।মাথা করছে না তার।অন্ধকারে আবছা আলোয় যা জিনিস দেখা যাচ্ছিলো এখন হৃদি তাও দেখতে পারছে না।ঝাপসা হয়ে আসছে চারপাশটা।

চলবে,,,

#নিয়তি
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট৭

-আম্মু হৃদি কই?

অফিস থেকে সবে মাত্র এসেছিলো সাম্য।ফ্রেশ হয়ে খবরের কাগজ নিয়ে বসে সেই।এই সময় হৃদির রান্না ঘরে থাকার কথা। কিন্তু সেই নেই।হৃদিকে দেখতে না পেয়েই প্রশ্নটা করে সাম্য।বিলকিস বেগম মুখ ভেংচি কেটে উত্তর দেন,,

-টিউশন করানোর নাম করে বাসা থেকে বেরিয়েছিলো।সন্ধ্যা হয়ে গেছে কোনো খোঁজ নেই।দেখ গিয়ে কোনো ছেলের সাথে ভেগে গেছে।
-উফফ আম্মু চুপ করো।হৃদি সে রকম মেয়েই না।সব মেয়েই কী তোমার ভাইঝি সরি সিঁথির মতো ক্যারেক্টারলেস হয়?

সাম্যের কথাটা যেন সিঁথির কলিজায় গিয়ে আঘাত করে।প্রতিটা কথা কলিজা ভেদ করে কলিজাটাকে ক্ষতবিক্ষত করছে।কিন্তু বিষয়টা স্বাভাবিক। সিঁথি ভুল করেছে।আর সেই ভুলের মাশুল ওকে সারাজীবন দিতে হবে।মেনে নিয়েছে সত্যটাকে সিঁথি।আবেগ মানুষকে অন্ধ করে দেয়।আর অন্ধ হয়ে মানুষ যে ভুল করে তার মাশুল তাকে সারাজীবন দিতে হয়।

হৃদির না আসায় সাম্য হৃদিকে কল দেয়।কিন্তু ফোন বন্ধ দেখায়।মেয়েটা কোথায় গেলো ফোন বন্ধ করে।আর হৃদি তো সেরকম মেয়েও না যে কাওকে না বলে বাসা থেকে বেরিয়ে যাবে এবং বাসায় ফিরতে দেরি করবে।রাস্তায় কোনো কাজে আটকে গেলে হৃদি অবশ্যই বাসায় জানায়।আলভীর ফোন নাম্বার বোধহয় সাম্যের কাছে আছে।হৃদি দিয়েছিলো।আর হৃদি তো আলভীরই বাসায় গেছে অভিকে পড়াতে।এই মুহুর্তে হৃদির সম্পর্কে যদি কেউ কিছু বলতে পারে তাহলে আলভীই পারবে।সাম্য আর দেরি করে না।সে আলভীকে ফোন লাগায়।

-জ্বী কে বলছেন?
-আলভী আমি সাম্য।হৃদি কোথায়?
-হৃদি কোথায় আমি কিভাবে বলবো?ও তো অভিকে পড়িয়ে তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে গেলো।
-কোথায় যাবে কিছু বলেছে তোমাকে?
-অদ্ভুত তো!আপনার বোন আমায় কেন বলতে যাবে যে সে কোথায় যাচ্ছে বা না যাচ্ছে!

কথাটা বলেই আলভী ফোন কেটে দেয় সাম্যকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই।আলভীর হঠাৎ এই রকম আচরণের কারণ ঠিক সাম্যের মাথায় ঢুকে না।ফোন কেটে দিতেই আলভীর চোখ ঘড়ির কাটার দিকে পড়ে।ঘড়ির কাটা নয় ছুঁই ছুঁই।মেয়েগুলোকে এখন খাবার দেওয়ার সময় হয়ে গেছে। আলভী নিজের মায়ের ঘরে যায়।গিয়ে দেখে তিনি বিছানায় রাজকীয় ভাবে বসে হুক্কা টানায় ব্যস্ত। ঠিক সেই ভাবেই তিনি বসেছেন ঠিক যেমনটা রাজা বাদশারা বসতো।

-আম্মু মেয়ে গুলোরে তো খেতে দিতে হতো।
-ফ্রীজে দেখ কিছু বাসি তরকারি আছে।আর বুয়া রুটি ভেজে রেকে রেখে দিয়ে গেছে।ঐগুলাই দে।

কথাটা বলে আলভীর মা হুক্কায় লম্বা একটা টান দেন।মায়ের কথা মতো আলভী বাসি তরকারি আর রুটি মেয়েদেরকে খাবার হিসাবে রেডি করে।এক এক করে প্লেট গুলো ঘরে নিয়ে যেতে হবে।পাঁচটা প্লেট একসাথে নেওয়া ত সম্ভব না!প্রথম প্লেটটা এক হাতে নিয়ে দরজা খুলতেই দরজা খোলার শব্দে আঁতকে উঠে মেয়ে গুলো।কেঁপে উঠে তাদের রুহ।না জানি কত মানসিক আর শারিরীক নির্যাতন নেমে আসে ওদের ওপর।সব মেয়েরা ভয়ে কাঁপলেও হৃদির মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া আলভী খুঁজে পায় না।ঘরের একটি কোণে চুপচাপ হাত পা বাঁধা অবস্থায় শুয়ে আছে সে।চোখের কার্ণিশে এক বিন্দু জল মুক্তার মতো দেখাচ্ছে।অতি শীঘ্রই তা হৃদির গাল গড়িয়ে মেঝেতে পড়ে।আলভী একে একে সব প্লেট নিয়ে আসে।তারপর মেয়েদের বাঁধন খুলে দেয় খাওয়ার জন্য।কিন্তু তার আগে সাবধান করে দেয় যদি কেউ কোনো শব্দ করে তাহলে আজই তার শেষ দিন।বাকী মেয়ে গুলো খাওয়া শুরু করলেও হৃদি করে না।সে চুপচাপ থ মেরে বসে থাকে।তা দেখে আলভী,,

-খাচ্ছিস না কেন?
-আমি খাবো না।

হৃদির মুখে এমন কথা শুনে সব মেয়ে গুলো একসাথে বলে উঠে,,

-যা দিয়েছে খেয়ে নেও। নয়তো সকালের আগে এখানে দানাপানিও জুটবে না।
-এগ্লা খাবার হলো?বাড়ির ঝি চাকররাও তো এর থেকে ভালো খাবার খায়।

মেয়েগুলোর কথার জবাবে হৃদি কথাটা বলে।তা শুনে আলভী এক পৈশাচিক হাসি দেয় আর বলে,,

-বাব্বাহ!এত দেমাগ।মামার বাড়িতে থাকতে তোর এই খাবার গুলো জুটতো কি না সন্দেহ।
-নিজের সন্তানের থেকে কোনো অংশে কম দেখেনি আমায় মামা মামি।
-বেশ তো তাহলে তোর খোঁজ খবর নিতে তো দেখলাম না।যা দিছি চুপ চাপ খেয়ে নে।

হৃদি আর কিছু বলে না।এইগ্লাস পানি খেয়ে নিজের ক্ষুদার জ্বালা মেটায়।যতই কষ্ট হোক তার। সে এইসব খাবার মুখেও তুলবে না না জানি কী মিশিয়ে দিয়েছে।পানিটা খাওয়ার সময়ও হৃদি ভরসা পাই নি।তাই নিজ চোখে চোখ থেকে ঢালা পানি সে আয়েশ করে খেয়েছে।হৃদির বিশ্বাস খুব শীঘ্রই কেঊ একজন আসবে।আর হৃদি সহ সব মেয়েদের উদ্ধার করে আপনজনদের কাছে ফিরিয়ে দেবে।আর বিউটি আম্মার আর আলভীর সাজা হবে।মেয়েগুলোর খাওয়া হয়ে গেলে আলভী একে একে সব মেয়েদের হাত পা মুখ বাঁধা শুরু করে।হৃদিও বাদ যায় না।

নিকষকালো অন্ধকার ঘরে ভোরের আলো ভেন্টিলেটর দিয়ে প্রবেশ করে সোজা হৃদির মুখে পড়ে।ঘুম ভেঙে যায় তার।শরীর ব্যথায় গোঙাতে লাগে সে।কাল রাতে তো আর হৃদির ওপর দিয়ে কম ঝড় ঝাপটা যায় নি!হৃদি বরাবরই ঘাড় ত্যাড়া আর সোজা কথার মেয়ে।তবে নিজের পরিবারের জন্য সে সব ধরণের ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত।মা মারা যাওয়ার পর মামার পরিবারই হৃদির পরিবার।তাই সর্বস্ব দিয়ে সে পরিবারকে আগলে রাখতে চেয়েছে।আলভীও বরাবর জানতো হৃদি খুবই সেন্সিটিভ মেয়ে।কিন্তু কাল রাতে সে অন্য হৃদিকে দেখতে পায়।আগের অর্ডারটা ক্যান্সেল হয়েছে।ক্রেতারা ন্যায্য মুল্য দিতে অস্বীকার করেছে।কাল রাতে ক্রেতারা মেয়েদের দেখতে এসেছিলো।ক্রেতারা মেয়েদের নিজ হাত দিয়ে পরীক্ষা করে দেখে।অন্যান্য মেয়ে চুপচাপ তা সহ্য করে নেয় কিন্তু হৃদি তা পারে না।ক্রেতারা হৃদির শরীর স্পর্শ করার জন্য হাত বাড়ালে হৃদি প্রতিবাদে জ্বলে উঠে।মা বাবা মারা গেছে তো কী হয়েছে?হৃদি নিশ্চয়ই কোনো সস্তা মেয়ে মানুষ নয় যে অন্যকে নিজের শরীর স্পর্শ করতে দেবে!আর এই সামান্য কারণেই তার ওপর নেমে আসে অমানবিক নির্যাতন।লাঠি দিয়ে পেটাতে লাগে বিউটি আম্মা।নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মা ছেলে হৃদির গায়ে সিগারেট, গরম খুন্তির ছ্যাকা দেয়।সেগুলো সহ্য করতে না পেরে হৃদি অজ্ঞান হয়ে যায়।আর তারা তাকে আগের মতো ফেলে রেখে চলে যায়।হৃদি নিখোঁজ হয়েছে প্রায় একসপ্তাহ হলো।সাম্য আর সালাম সাহেবও হৃদির খোঁজ না পেয়ে পাগল হয়ে গেছে।বিশেষ করে সালাম সাহেব।পাগল হবেন না ই বা কেন?ভাগ্নির মধ্যেই যে নিজের বোনকে খুঁজে পেতেন তিনি।

দরজার ওপাশে মা ছেলের কথোপকথন স্বষ্ট শোনা যাচ্ছে।নতুন ক্রেতা পেয়েছে মনে হয়।

-বুঝলি আলভী?কপাল আজকে খুব ভালো।একটা কাস্টমার যেতে না যেতেই আরেকটা আসলো।কিন্তু সাবধান।হৃদি নামের মেয়েটাকে বেশি লাফাতে দেওয়া যাবে না।

হৃদি আশা কিছুটা হলেও ছেড়ে দিয়েছে।কারণ এতদিন ধরে সে বন্দী অথচ কেউ তাকে বা তাদেরকে বাঁচাতে আসলো না।আইয়ামে জাহালিয়া যুগের মতোই আজ তাকে এবং বাকী মেয়েদের হয়তো আবার নিলামে দেওয়া হবে।যে যেমন দাম দেবে সে তেমন মেয়ে পাবে।কেয়ামত আর বেশি দূরে নেই।অনেক আলামতই পাওয়া গেছে।মানুষের অপরাধ প্রচণ্ড মাত্রায় বেড়ে গেছে।চারদিকে খুন খারাবি,রেশারেশি,ধর্ষণ, ব্যভিচার, মার হাতে মেয়ে খুন,মেয়ের হাতে মা খুন,বাবার হাতে ছেলে খুন,ছেলের হাতে বাবা খুন,আরও কত কী!
এইতো কয়দিন আগেই ফেইসবুক, খবরের কাগজের পাতায় মোটা অক্ষরে ছাপা হয়েছিলো নামাজরত মেয়েকে খুন করলো মা।কারণটা কিন্তু খুব ছোট এবং সামান্য।মেয়ের বিয়ে হচ্ছিলো না।তাই বোঝা কমাতে নামাজরত মেয়েকে খুন করে গর্ভধারিণী মা।কেউ কারও কাছে নিরাপদ নয়।

সন্ধ্যায় কালো শার্ট পরিহিত একদল মানুষ আলভীর বাড়িতে ঢুকে।আলভী তাদের সেই ঘরে নিয়ে যায় যেখানে মেয়ে গুলো আছে।বেশ খানিকক্ষণ যাওয়ার পর বাইরে থেকে আওয়াজ আসে।বোধহয় পুলিশ হবে।অন্ধকারে সুক্ষ্ম আলোর রেখার মতো হৃদি আশার আলো দেখতে পায়।

-আপনাদের চারপাশ থেকে ঘেরাও করা হয়েছে।চুপচাপ মেয়েগুলোকে আমাদের হাতে তুলে দিন।

আলভী আর বিউটি আম্মা বন্ধুক বের করার প্রস্তুতি নিলে লোক গুলো তাদের জাপটে ধরে ফেলে।ফলে মা ছেলের কোনো কিছু করার সুযোগ থাকে না।লোকগুলো তাদের নিয়ে গিয়ে গাড়িতে তুলে।আর বাকী যারা ছিলো তারা মেয়েগুলোর হাত পার বাঁধন খুলে দেয়।হৃদিও বাদ যায় না।অন্য মেয়ে গুলো উঠে দাঁড়ালেও হৃদি উঠে দাঁড়ানোর শক্তি পায় না।একটা লোক ফোন করে বলে,,

-স্যার এখানে একটা মেয়ে গুরুতর ভাবে অসুস্থ। মেয়েটাকে মনে হয় মারধর করা হয়েছিলো।
-আমি আসছি।

ফোনের ওপাশের লোকটা শান্ত গলায় জবাব দেয়।হৃদি নিজের সর্বস্ব দিয়ে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু সে ব্যর্থ হয়।উলটে পড়ে গিয়ে আরও ব্যাথা পায়।ঝাপসা চোখে কাওকে দরজা দিয়ে ঢুকতে দেখে।বেশ লম্বা লোকটা।সুঠাম দেহের অধিকারি লোকটা।তিনিও কালো শার্ট পরিহিত।হাতা ফোল্ডার করা।লোকটা হৃদির কাছে আসতেই হৃদি অজ্ঞান হয়ে যায়।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here