নিয়তি,পার্ট১২,১৩,১৪
লুৎফুন্নাহার_আজমীন
পার্ট১২
রাত দুটো। শুনশান নিরবতা বিরাজ করছে।ব্যস্ত শহরটাও খানিকটা হলেও শান্ত হয়েছে।হৃদির ঘরে এখনো লাইট জ্বলছে।কী দরকার ছিলো ঘর গুছানোর?এখন রাত জেগে নোট তুলতে হচ্ছে।বিভোর উঠে হৃদির ঘরে যায়।দরজায় হেলান দিয়ে বলে,,
-খুব দরকার ছিলো দিনে ঘর পরিষ্কার করার?
হৃদি অপ্রস্তুত হয়ে যায়।পেছন ফিরে বিভোরকে দেখতে পায়।সারাদিন ডিউটি করে এত রাত পর্যন্ত লোকটা জেগে আছে?অন্যকেউ হলে এতক্ষণে মরার মতো ঘুমোতো।তোতলাতে তোতলাতে বলে,,,
-আপনি জেগে আছেন?
-হু ঘুম আসছিলো না।
-সারাদিন ডিউটি করে এসে বলছেন ঘুম আসছিলো না?লাইক সিরিয়াসলি?আপনি মানুষ না এলিয়েন।
-যেটা ধরে নেন।
হৃদি আর কিছু বলে না।মুচকী হেসে নোট তুলতে লাগে।বিভোর কিছুক্ষণ যাওয়ার পর হৃদিকে বলে,,
-আচ্ছা এত রাত জেগে নোট তুলছেন আপনার ক্ষুধা লাগে নাই?
বিভোর কথা শুনে হৃদি ভ্রু কুঁচকে বিভোরের দিকে তাকায়।
-এক মিনিট!
কথাটা বলেই বিভোর নিজের ঘরের দিকে যায়।কিছুক্ষণ পরে একটা বড় ডিব্বা নিয়ে আসে।ল্যাম্পের আবছা আলোয় হৃদি ডিব্বার মধ্যে কিছু প্যাকেটজাত খাবার দেখতে পায়।বিভোর ডিব্বার ঢাকনা খুলতে খুলতে বলে,,,
-চিপস না বিস্কিট?
-অ্যাহ!
-আরেহ বলেন না কী খাবেন!অনেক ধরণের চিপস বিস্কিট পাবেন এখানে।
-হ্যাঁ তা তো কিচেনেও আছে বিস্কিট।তবে এত বড় ডিব্বায় আলাদা ভাবে চিপস বিস্কিট রাখার কারণটা কী জানতে পারি?
-হাসবেন না তো?
-অদ্ভুত!হাসির কথা হলে অবশ্যই হাসবো।
কথাটা বলে হৃদি হাসতে লাগে।বিভোর শান্ত গলায় বলে,,
-থাক শুনতে হবে না।
-আরেহ ভাই রাগ করছেন কেন?আচ্ছা হাসবো না।আপনি বলেন।
-আসলে আমার ভাত খাইতে ভাল্লাগে না।কিন্তু আম্মু জোর করে ভাত খাওয়ায়।মাঝে মাঝে রাগ করে না খেয়ে শুয়ে পড়তাম।রাত্রে ক্ষুধা লাগতো।একদিন রাত্রি বেলা বিস্কিট খেতে গিয়ে আম্মু দেখে ফেলছিলো।তার পর থেকে সেই ঘটনা নিয়ে আম্মু ক্ষেপায়।আর যাতে কিচেনে না যেতে হয় তার জন্য একটা বড় ডিব্বা কিনে এনে বিস্কিট চিপস রাখি।
-ভাইরে ভাই তাই বলে আলমারিতে রাখবেন ডিব্বা?
-আম্মু দেখে ফেললে আবার ক্ষেপাতো
-স্বাভাবিক।
কথাটা বলেই হৃদি হাসতে লাগে।বিভোরের কথা শুনে হৃদির হাসতে হাসতে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা হচ্ছে।কিছুতেই হৃদি হাসি থামাতে পারছে না।অনেকদিন পর মনে হয় মেয়েটা প্রাণ খুলে হাসলো।হৃদির হাসি দেখতে বিভোরের বেশ ভালোই লাগছে।
দেখতে দেখতে কিভাবে দিন কেটে যায়।সেদিনই হৃদিকে বিউটি আম্মার ডেরা থেকে অজ্ঞান অবস্থায় আনলো।হাসপাতালে এত জোরাজোরির পর যার মুখ থেকে টু শব্দ পর্যন্ত বিভোর বের করতে পারে নি আজ সে বিভোরের সাথে এতটা ক্লোজ!মানুষ পরিবর্তনশীল। সময়ই মানুষকে পালটে দেয়।
সিঁথির অনুপস্থিতিও হয়তো একটা সময় বিভোরকে সাময়িক ভাবে পরিবর্তন করে দিয়েছিলো।সে ধাক্কা বিভোর সামলেও নিয়েছিল।ভুলে গিয়েছিলো সিঁথিকে।কিন্তু হৃদির প্রশ্নে….
যাক গে যা হওয়ার হয়ে গেছে।সে তো আর জেনে বুঝে এমন করে নি।আর বিভোরও সিঁথির ঘটনাটাকে বয়সন্ধিকালের নষ্ট আবেগ হিসাবে উড়িয়ে দিয়েছে।আর সিঁথি যদি বিয়ে করে সুখে থাকতে পারে তো বিভোর কেন থাকতে পারবে না।হ্যা সিঁথি বিভোরের প্রথম প্রেম।আর কৈশরের। যা যে কেউ আবেগ হিসাবে উড়িয়ে দিতে পারে।এম্নেতেও টিনেজার এইজে ছেলেমেয়েরা বেশি আবেগী হয়।
-কী খাবেন বললেন না!
বিভোরের কথা শুনে হৃদি পেছন ফিরে তাকায়।মুচকী হেসে বলে,,
-আপনি যা দেন
বিভোর ডিব্বা থেকে ওরিও বিস্কিট বের করে দেয়।এই বিস্কিটটা বিভোরের খুব পছন্দের।বিভোরের জানামতে ছোট বড় সবাই এই ওরিও বিস্কিটটা পছন্দ করে।হৃদিও অবশ্যই করে।বিভোরের আন্দাজ ভুল হয় নি।ওরিও বিস্কিটটা হৃদিরও খুব পছন্দের।হৃদি প্যাকেট থেকে একটা বিস্কিট নিয়ে কামড় দেয়।
-এই দেখছেন!দুধই আনা হয় নাই।
-আরেহ,লাগবে না।
-না না ওরিও দুধ ছাড়া জমেই না।
কথাটা বলে বিভোর কিচেনের দিকে যায়।ফ্রিজ থেকে দুধ বের করে গরম করে দুই গ্লাস দুধ নিয়ে এসে হাজির হয়।টুকটাক কথা বলতে বলতে যে কখন দুজনে আড্ডায় চলে গেছে কেউ খেয়াল করেনি।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত সাড়ে তিনটা বাজে। এত রাত হয়ে গেলো!
-সাড়ে তিনটা বাজে।ঘুমাবেন না?সকালে তো ডিউটি আছে না আপনার?
-হ্যাঁ।আচ্ছা গুড নাইট।ঘুমিয়ে পড়ুন আপনিও
কথাটা বলে বিভোর গ্লাস দুটো নিয়ে কিচেনের দিকে যায়।তা দেখে হৃদি,,
-আপনি যান ঘুমান।আমি গ্লাস পরিষ্কার করছি।
-আমিই করি!
-নাহ।আপনি যান
চলবে,,,,
#নিয়তি
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন
#পার্ট১৩
-আচ্ছা আপনি তো বললেন না যে আপনি সিঁথিদিকে কিভাবে চিনলেন।
হৃদির ক্যাম্পাসে কোনো কাজের জন্য এসেছিলো বিভোর। মনে হলো হৃদির সাথে দেখা করে যাক।ক্লাস রুমের সামনে বারান্দার এক কোণায় হৃদির আর বিভোর দাঁড়িয়ে কথা বলে।কথার মাঝখানে হঠাৎ করেই হৃদি সিঁথির কথা জিজ্ঞেস করে বসে বিভোরকে।যেহেতু হৃদি আর বিভোরের মাঝে বন্ধুত্বের মতো একটা মিষ্টি সম্পর্ক হয়েছে তাই কোনো কিছু গোপন রাখা হয়তো ঠিক হবে না।কিন্তু কিভাবে হৃদিকে কথা গুলো বলবে তা বিভোর বুঝতে পারছে না।
-আচ্ছা আপনার কী আরও ক্লাস আছে?
-নাহ নাই তবে কিছু নোট তুলতে হতো।
-যা বলতাম মনে হয় এখানে বলা ঠিক হতো না।
-আপনি একটু ওয়েট করুন।আমি পিক তুলে আনছি।
কথাটা বলে হৃদি দৌড়ে ক্লাসের ভিতর যায়।ক্লাসমেটের খাতার কয়েকটা পিক তুলেই আবার বিভোরের কাছে চলে আসে।
-চলুন।
বিভোর আর কিছু বলে না।হাঁটা লাগায়। দোতলা থেকে হৃদি আর বিভোর যখন এক সাথে নীচে নামছিলো অন্যান্য স্টুডেন্টরা হা করে তাকিয়ে ছিলো।বিশেষ করে মেয়েরা,বিভোরের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।মেয়েরা বরাবরই এখন লম্বা ছেলে পছন্দ করে।বিভোরও বেশ ভালোই লম্বা আছে।উচ্চতা মোটা মুটি পাঁচ ফিট নয়-দশের মতো হবে।তার মধ্যে পুলিশ ইউনিফর্ম পড়া। যে কোনো মেয়ের রাতের ঘুম কাড়ার জন্য এই টুকুই যথেষ্ট।মেয়েরা যে বিভোরের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে তা হৃদির চোখ এড়ায় না।সে মুখ টিপে হাসতে লাগে।তা দেখে বিভোর,,,
-কী হলো মুখ টিপে হাসতেছেন কেন?
-কিছু না।
বিভোর শ্যাম বর্ণের।ছেলেদের শ্যাম বর্ণেই মানায় ভালো।সাম্যের গায়ের রঙ আবার ছিলো ধবধবে ফর্সা।দেখতেই ভালো দেখা গিয়েছে শুধু।বাহিরে ফিটফাট ভেতরে সদর ঘাট।বাহিরটা সাদা।কিন্তু ভেতটা কালো।ঠিক যেম৷ মাক্কাল ফল।হৃদি নানির কাছ থেকে শুনেছিলো এ ফলের বাহিরটা সুন্দর হলেও ভেতরটা নাকি খুবই বিশ্রী।তার নাতিও হয়েছে তেমন।ভেতটা বিশ্রী।এক দিক দিয়ে ভালোই হয়েছে সাম্যের সাথে হৃদির জোড়া করে দেন নি ওপর ওয়ালা।ফর্সা ছেলে হৃদির কাছে বর হিসাবে পার্ফেক্ট না।ফর্সা ছেলে মানেই বদ।আলভীও তো বেশ ফর্সা ছিলো।পরে তো দেখিয়েই দিয়েছে নিজের রূপ।এখন জেলে আছে।বেশ হয়েছে।না জানি কতগুলো মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে মা ছেলে।
বিভোর বাইক চালাচ্ছে।আর হৃদি পেছনে বসে আছে।দুরত্ব বজায় রেখেই বসেছে হৃদি।কিন্তু আশে পাশের লোকজনের চাহনীতে মনে হচ্ছে সদ্য প্রেমে পড়া যুবক যুবতী ডেটে বেরিয়েছে।বর্তমান ছেলেমেয়েদের ভাষায় যাকে বলে নিব্বা নিব্বি!
-তখন জানেন কেন মুখ টিপে হাসছিলাম?
-জিজ্ঞাস করলাম তো কারণ বললেন না।তো কিভাবে বলবো আপনি কেন হাসছিলেন!
-মেয়েরা আপনার দিকে টাস্কিত দৃষ্টিতে তাকায় ছিলো।তাই হাসছিলাম
-টাস্কিত মিন্স?
-মানে সাহিত্যিক ভাষায় যাকে বলে মুগ্ধ দৃষ্টিতে।
-তাকায় ছিলো কেন?
-আমি কিভাবে জানবো?মেয়ে গুলো জানে ওরা কি জন্য আপনার দিকে টাস্কিত দৃষ্টিতে তাকায় ছিলো।
বিভোর বাইক একটা পার্কের সামনে দাঁড়ায়।হৃদিকে একটা ব্রেঞ্চে বসতে দিয়ে ফুচকার অর্ডার দিতে যায়।কিছুক্ষণ পর দুই প্লেট ফুচকা নিয়ে হাজির হয় বিভোর।
-হঠাৎ ফুচকা!
-লম্বা আর হাসির কাহিনী তো। ফুচকা সাথে থাকলে মজাটা ডাবল হবে।
কথাটা বলে বিভোর ব্রেঞ্চে বসে।এ টু যেড সব বলে দেয় হৃদিকে।সবটা শোনার পর হৃদি বলে,,
-কষ্ট লাগতেছে না আপনার?
-কষ্ট কিসের?ঐ সব ঘটনার কথা মনে পড়লে আমার আরও হাসি পায়।সব নষ্ট আবেগ।
-আমিও না নষ্ট আবেগের পাল্লায় পড়েছিলাম।
-মানে?
-সিঁথিদির বর মানে সাম্যদা আমার নষ্ট আবেগ। We are same broo…
কথাটা বলে হৃদি হেসে দেয় সাথে বিভোরও।হাসতে হাসতে বিভোর বলে,,
-আমার কাহিনী তো শুনলেন।তো আপনারটা কী শুনতে পারি?
-প্রায় সেইমই। আপনাকে যেমন সিঁথিদি আপনাকে আগে প্রপোজ করেছিলো সাম্যদাও আমায় আগে প্রপোজ করেছিলো।আর সেইম কাহিনি দুর্বলতা থাকায় আমিও ফিরিয়ে দিতে পাই নি।শুধু পার্থক্য হলো সিঁথি দি আপনাকে অনেক আগে ছেড়ে গেছে আর সাম্যদা আমায় কয়েকদিন আগে।
★
কাজের চাপ কম থাকায় এখন প্রায়ই হৃদিকে ক্যাম্পাস থেকে বিভোর নিয়ে আসে।স্টুডেন্টরা তো ধরেই নিয়েছে হৃদি আর বিভোর একেওপরকে ভালোবাসে।হ্যাঁ ভালোবাসে তবে তা বন্ধু হিসাবে।বিভোর এম্নেতে সব সময় ক্লিন শেইভে থাকে।তবে ইদানীং বিভোরের খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি হয়েছে।তাতে অবশ্য বিভোরকে মন্দ লাগছে না।বিভোর বাইক চালাচ্ছিলো আর হৃদি পেছনে বসে ছিলো।বাইকের আয়নায় বিভোরের মুখ পড়েছে।হৃদি প্রথমে খেয়াল না করলেও পরে ঠিকই খেয়াল করে।
-এক্টা কথা বলবো?
-কী কথা?
-কিছু মনে করবেন না তো?
-উমমম,,,নাহ।বলেন।
-আপনি না এইরকম হালকা খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি রাখিয়েন।ভালো লাগবে দেখতে আপনাকে!
-তাতে কী মেয়েরা টাস্কিত দৃষ্টিতে তাকায় থাকবে?
কথাটা বলে বিভোর হেসে দেয়।বিভোরের কথা শুনে হৃদিও হাসি আটকাতে পায় না।সেও হেসে দেয়।
বাসায় পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে হৃদি বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।এরই মধ্যে বিলকিস বেগমের ফোন আসে।
-হ্যাঁ মামি বলো।
-সুখবর আছেরে হৃদি।
-কী সুখবর।
-তোর সাম্যদা বাবা হতে চলেছে।
চলবে,,,
#নিয়তি
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(কন্ঠ)
#পার্ট১৪
আজ সিঁথির সাধ।সাধারণত গর্ভধারণের পাঁচ বা সাত মাসে বাঙালি সমাজে সাধ নামে একটা উৎসব পালিত হয়।এই উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু থাকে গর্ভধারিণী মা।তার পছন্দ মতো খাবারের পদ রান্না করা হয়।আমন্ত্রিত অতিথিরা গর্ভবতী মায়ের জন্য বিভিন্ন রকমের উপহার সামগ্রী আনে।হৃদি সকাল সকালই এসে পড়েছে সব আয়োজন করতে।সিঁথি সাম্যের বিয়ের কাজ সব হৃদি করেছে তো এটা কেন বাদ যাব?
হৃদি আর সাম্যের যে সামনাসামনি দেখা হয় নি তা কিন্তু নয়!কিন্তু হৃদি সাম্যকে এড়িয়ে চলে গেছে।মামা মামি ছাড়া কারও সাথে খুব একটা কথাও বলে নি।থানায় যাওয়ার আগ দিয়ে বিভোর হৃদিকে রেখে যায়।মিসেস ছায়া দুপুরের দিকে আসবেন।হৃদিকে সালাম সাহেবের বাসায় নিয়ে আসার সময় পথে হৃদিকে বিভোর বলে,,
-আচ্ছা আপনি সিঁথির বরের সামনা সামনি পড়বেন।তো তখন কষ্ট হবে না?
-আপনাদের সাথে কতদিন ধরে থাকছি বলতে পারবেন?
-ছয় মাস তো হলোই।
-এই ছয়মাসে সাম্যদার প্রতি যত মায়া ছিলো সব কাটায় উঠছি।একটা কথা কী জানেন?মানুষ বলে না যে তোমায় ছাড়া আমি বাঁচবো না!এটা সম্পুর্ন মিথ্যা।ছেড়ে চলে গেলে কেউ মরে যায় না।শুধু মায়া কাটাতে একটু সময় লেগে যায়। ঠিক যেমনটা আমার আপনার সাথে হয়েছে।
হৃদির কথা শুনে বিভোর হেসে দেয়।এই মুহুর্তে বিভোরের খুব হাসি পাচ্ছে কারণ একসময় বিভোর আর সিঁথিও বলেছিলো যে তারা একেঅপরকে ছাড়া বাঁঁচবে না।অথচ এখন দুজনেই দিব্বি ভালো দিন কাটাচ্ছে।
-জানেন আমি আর সিঁথিও না একসময় একেঅপরকে বলেছি যে আমরা একেঅপরকে ছাড়া বাঁচবো না।অথচ আমরা দুজনেই এখন সুস্থ স্বাভাবিক জীবন কাটাচ্ছি।
বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে যাওয়ার আগে হৃদি বিভোরকে জিজ্ঞেস করে সে সিঁথির সাধে আসবে কি না।জবাবে সে বলে যে সে চেষ্টা করবে।অনেক দিন ধরে বিভোর সিঁথিকে দেখে না।আজ না হয় সাধের অনুষ্ঠানের বাহানায় প্রথম প্রেমকে চোখের দেখা দেখবে।
সালাম সাহেব ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে ছিলেন।হৃদি এই ঘর থেকে ঐ ঘর দৌড়াচ্ছে।এই বাসায় আসলে কাজ যেন হৃদির পিছু ছাড়ে না।ঠিক মায়ের মতোই হয়েছে।
দুপুরের দিকে বিভোর আর মিসেস ছায়া আসেন।প্রথম দেখায়ই বিভোর সিঁথিকে চিনে ফেলেছে।গ্রামীন বধুর মতো শাড়ী পড়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে।কৈশোরের চেহারা আর বর্তমান চেহারার সাথে বিভোরের চেহারার কোনো মিল নেই।খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। শ্যাম গায়ের রঙ। বলিষ্ঠ চেহারা।সব মিলিয়ে আগেকার হেংলা পাতলা বিভোরের আর এখনকার অফিসার বিভোরের অনেক পার্থক্য।
বিভোর নিজে পছন্দ করে এক জোড়া ঝুমকো কিনে এনেছে সিঁথির জন্য।ঝুমকো সিঁথির খুব পছন্দ ছিলো স্কুল জীবনে।এখন হয়তো তার পছন্দেরও পরিবর্তন হতে পারে।যেহেতু মানুষ পরিবর্তনশীল।
-শুভকামনা এবং দোয়া রইলো আপনার নতুন জীবনের জন্য আর ভালোবাসা ও দোয়া রইলো নতুন সদস্যের জন্য।
কথাটা বলে বিভোর সিঁথির হাতে বক্সটা দেয়। সিঁথি বক্সটা ওর মায়ের হাতে দিয়ে বিভোরকে ধন্যবাদ জানায়।
সালাম সাহেব হৃদিকে জোর করেই বিভোর আর মিসেস ছায়ার সাথে খেতে বসিয়ে দেন।তাদের সাথেই হৃদি বেরিয়ে যাবে নি।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হৃদিকে তিনি বিদেয় করবেন।এম্নেতেই মেয়েটা বেশ কয়েকবার সাম্যের মুখোমুখি হয়েছে।সালাম সাহেব চাননা হৃদির কষ্ট আরও বাড়ুক।তিনি কখনোই হৃদিকে এই অনুষ্ঠান সম্পর্কে জানাতেন না।কিন্তু তার স্ত্রী…!যাক গে ওসব কথা বাদ দেয়া যাক।সালাম সাহেব হৃদিকে ডাক দিয়ে খেতে বললে হৃদি বলে,,,
-মামা সবাই খেয়ে নিক।তারপর না হয় আমি।
-এখনই যাবি তুই।বিভোর তুমি ওকে নিয়ে যাও তো!এম্নেতে যাবে না।মেয়েটা বড্ড জেদি।
বিভোর বিনয়ীর সাথে হৃদিকে খেতে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। কিন্তু হৃদি সেই এক কথা।সবার খাওয়া হলে সে খাবে।
-হ্যাঁচকা টান দিয়ে মেয়েটাকে নিয়ে যাও তো বিভোর।আমি অসুস্থ। তা না হলে আমিই করতাম।
বিভোর কী করবে বুঝতে পারছে না।হাত বাড়িয়ে আবার ফিরিয়ে নেয়।হঠাৎ করে বিভোরের কী হলো সে নিজেও বুঝতে পারলো না।হ্যাঁচকা টানে হৃদিকে খাবারের জায়গায় নিয়ে যায়।বিশাল আয়োজন করেছেন বিলকিস বেগম সিঁথির সাধ উপলক্ষে। সাম্যের কাজিন আর সাম্য খাবার পরিবেশনের দায়িত্বে আছে।খেতে খেতে একসময় হৃদির গলায় খাবার আটকে যায়। সে কাশতে লাগে।সাম্য দৌড়ে পানি নিয়ে আসে।কিন্তু তার আগেই দেখে বিভোর হৃদিকে পানি এগিয়ে দিয়েছে।সাম্যের পানি আনা আবার হৃদির চোখ এড়ায়নি।সাম্যের হয়তো ধারণা হৃদি কিছুই জানে না।তাই হয়তো আলগা দরদ দেখাতে এসেছিলো।
★
রাত তখন প্রায় ১টা। হৃদির ঘুম আসছে না।কি জন্যে হৃদিও জানেনা।বেলকনিতে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে কানে ইয়ারফোন গুজে আনমনে চেয়ে আছে আকাশের পানে।মাঝে মাঝে চোখ বুঝছে তখন চোখের কার্ণিশ থেকে দু ফোটা জল গাল বেয়ে মেঝেতে পড়ছে।এমনিতে হৃদির ইমোশনাল গান ভাল্লাগে না।তবে ইদানীং তানভীর ইভাবের অভিমান গানটা খুব শুনছে।সোশ্যাল মিডিয়াতেও বেশ ঝড় তুলেছে গানটা।অজান্তেই হৃদি গানের সাথে গলা মিলিয়ে বসে।
“কখনো যদি আনমনে চেয়ে আকাশের পানে,, আমাকে খুঁজো,,কখনো যদি হঠাৎ এসে জড়িয়ে ধরে বলো ভালোবাসো,,,,আমি প্রতিরাত হ্যাঁ প্রতিক্ষণ খুব অজানায় খুব অভিনয়,,,করে বসি তো তোমায় ভেবে,,,”
পাশের বেলকনি থেকে বিভোরও ওর গলার সাথে গলা মেলায়।সেও আনমনে আকাশের পানে চেয়েছিলো।বিভোরের গলা শুনে হৃদি গান থামায়।
-থামলেন কেন? গান!খারাপ তো গান না।
চলবে,,,