নিয়তি,পার্ট১৯ শেষ
লুৎফুন্নাহার_আজমীন(কন্ঠ)
-আচ্ছা হৃদি তুমি কি শেষ প্রেমে বিশ্বাসী?
ছাদের রেলিংয়ে বিভোরের কাঁধে মাথা রেখে বসেছিলো হৃদি।বিভোরের কথা শুনে সে কাঁধ থেকে মাথাটা উঠায়।সন্দিহান কন্ঠে বলে,,
-কেন?হঠাৎ এই প্রশ্ন!
-বলো না!
-হ্যাঁ বিশ্বাসী।প্রথম প্রেম আবেগ শেখায় আর শেষ প্রেম ভালোবাসতে।একটা পুরুষের প্রথম প্রেম হওয়া ভাগ্যের ব্যাপার হলে শেষ প্রেম হওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার
-জানো তুমি না আমার শেষ প্রেম।যা আমায় ভালোবাসতে শিখিয়েছে।
-তুমিও।আমায় বেঁধে ফেলেছো তুমি
-কিভাবে?
-সহজ তো অনেক তাই টের পাওনি।আমায় বেঁধে রাখা সহজ।সামান্য কেয়ারিং আর কিঞ্চিৎ পরিমাণ ভালোবাসলেই আঙুলে আঙুল রেখে তার সাথে পাড়ি দেবো আমি বহুদুর।
কথাটা বলে হৃদি পরম আয়েশে বিভোরের কাঁধে মাথা রাখে।বিয়ের একমাস পুর্ণ হলো। কিন্তু হৃদি বিভোরের প্রেম সেই আগের মতোই আছে। দুজনেই ষোলো বছর বয়সী প্রেমিক প্রেমিকা।ঘরোয়া ভাবেই বিয়েটা হয়েছে।মিসেস ছায়ার ইচ্ছা ছিলো বেশ ধুমধাম করে ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান করবে।কিন্তু বিভোর সায় দেয় নি।ছেলের বিয়ের জন্য মিসেস ছায়া যে সব টাকা রেখেছিলেন সেই সব টাকা দিয়ে হৃদি বিভোর শহরের ছিন্নমূল মানুষদের সাহায্য করে।
প্রিয়জনের কাঁধে মাথা রেখেও যে একটা আলাদা স্বর্গীয় সুখ পাওয়া যায়।যা আজকাল ছেলে মেয়ে জানে না।এখনকার বেশির ভাগ প্রেমেই মিশে আছে অশ্লীলতা।নষ্টামি।নব্বই দশকের প্রেম গুলো ছিলো হৃদয় ছোয়া।শুধু নব্বই দশক কেন?প্রাচীন যুগের সব প্রেমই ছিলো হৃদয় ছোঁয়া।ইতিহাসে শাহজাহান – মমতাজের প্রেমের কথা বার বার উল্লেখ করা হলেও আমি কখনোই বলবো না যে শাহজাহান মমতাজকে মন থেকে ভালোবেসেছে।যদি ভালোবাসতই তো মমতাজ বেঁচে থাকতেই ভালোবাসা দিতেন। যাকে ভালোবাসবে সে বেঁচে থাকতেই ভালোবাসা দিও।তাজমহল পুরো পৃথিবী দেখলেও মমতাজ দেখেন নি।সে জানেন না শাহজাহানের ভালোবাসা সম্পর্কে।
কখনো কারও জন্য কেঁদে বালিশ ভেজানোর দরকার নেই।ওপরওয়ালা রিজিক আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছেন।শুধু সময়ের অপেক্ষা।একটা কথা সব সময় মাথায় রাখা উচিৎ আল্লাহ কাওকে খালি হাতে ফেরান না।সময় হলে আল্লাহ তোমায় উজার করে দেবেন। ধৈর্য ধারণ করতে হবে।পবিত্র কুরআন শরীফে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,,
‘শীগ্রই তোমার রব তোমাকে এতো বেশি দিবেন
যে তুমি খুশী হয়ে যাবে।’
[ সূরা: দুহা আয়াত নং ০৫]
আল কোরআনকে দুনিয়ার সব সমস্যার সমাধান বলা হয়।হ্যাঁ ঠিকই বলা হয়।অন্ধকারে সুক্ষ্ম আশার আলো দিয়ে আল কুরআন মানুষকে পথ দেখায়।এই কিতাব পড়লে তো সওয়াবই।বুঝে পড়লে আরও লাভ।একদিকে যেমন কোরআনের কথার মানে বুঝা যায় ঠিক তেমন ভাবে জীবনের সকল সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়।আল্লাহ তায়ালা এতই মহান যে কোরআনের দিকে তাকালেও তিনি আমাদেরকে সওয়াব দেন।একটা গল্প আছে।
এক ব্যক্তি মারা যায়।তাকে কবর দিতে গিয়ে একজনের পকেট থেকে একটা দরকারি কাগজ কবরে পড়ে যায়।পরে সেই কাগজ বের করতে কবর খুড়ে দেখা যায় কবরের ভেতর ফুলে ভরা।যে ব্যক্তির কাগজ কবরে পড়ে গিয়েছিলো সেই ব্যক্তি ঐ মৃত ব্যক্তির স্ত্রীকে জিজ্ঞাস করেন যে সেই মৃত ব্যক্তি জীবিত থাকা কালে কি করতেন।জবাবে মৃত ব্যক্তির স্ত্রী বলেন তার স্বামী রাতের আঁধারে একটা বই দেখতেন আর কাঁদতেন।খোঁজ নিয়ে জানা যায় সেই ব্যক্তি পবিত্র কোরআন দেখতেন আর কাঁদতেন।ইশ!এই কিতাব পড়তে পারলে আমি আল্লাহর বলা কত আদেশ উপদেশই জানতে পারতাম!
হয়তো তার এই কাজের চোখের পানির জন্যই মহান আল্লাহ তায়ালা তার কবরকে জান্নাতের টুকরা করে দিয়েছেন।সুবহানআল্লাহ।
এইবার আসা যাক জীবনসঙ্গীর ব্যাপারে। মহান আল্লাহ তায়ালা যীনা করতে না করেছেন।পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে তুমি যেমন ঠিক তেমনই জীবনসঙ্গী পাবে।ঠিক যেমনটা সাম্য-সিঁথি, হৃদি বিভোরের সাথে হয়েছে।
সাম্যের ক্ষেত্রে অনেকটা এই রকম হয়েছে নিজের নাই চরিত্র। বউ খুঁজে পবিত্র।কিন্তু সে ভুলে গিয়েছে কোরআনের কথা। তাই সে যেমন তার জীবন সঙ্গীও পেয়েছে তেমন।
সমাপ্ত