“তৃ-তনয়া”
পর্ব- ১১৩
(নূর নাফিসা)
.
.
সাড়ে এগারোটা বেজে গেলে তাদের এদিকে থাকা নিষিদ্ধ হয়ে গেলো! দুজনের বেশি থাকা যাবে না কেবিনে। বাকিদের চলে যেতে হবে নতুবা ওয়েটিংরুমে অবস্থান করতে হবে। রুমানা থাকবে আর নাফিসাও থাকতে পারে কিন্তু নাফিসা থাকবে না৷ এখানে ঘুমানোর ব্যবস্থা নেই। আর যতটুকু প্রয়োজন পড়তে পারে মা-ই সামলে নিতে পারবে। শুধু শুধু সারারাত এখানে বসে বসে বোর হওয়ার চেয়ে ভালো তাদের সাথে গিয়ে সময় কাটানো। তাই চলে গেলো। যাওয়ার পথে উপর তলায় মেয়ে বাবুটাকে দেখতে চেয়েছিলো। কিন্তু সেই সুযোগ হলো না এখন। ইমরান বাইরে গিয়ে খাবার নিয়ে এসেছিলো। মায়ের জন্য কেবিনে পাঠিয়ে দিয়ে তারা ওয়েটিং রুমে বসে খেয়ে নিলো। সবাই কথা বলছে আর নাফিসা ঝিমাচ্ছে। ইমরান নিচু স্বরে বললো,
– বাসায় চলে যাবে?
– না, এতো রাতে বাসায় যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
– ঘুমে তো একটু পর দেখবো মেঝেতে পড়ে আছো!
নাফিসা ঠোঁটের এক কোনে হাসি ফুটিয়ে বললো,
– চলো একটু ওদিক থেকে ঘুরে আসি৷
ইমরান উঠে পড়লো। বাইরের দিকে হাটছে দুজন। হঠাৎই নাফিসার মনে পড়লো জিহানের ভাইয়ের কথা! দুদিন আগে পরিপূর্ণ বয়সে জিহানের ভাই হয়েছিলো। মা বাচ্চা উভয়েই সুস্থ আছে। দুদিন হসপিটালে কাটিয়ে আজ তাদের নানাবাড়ি যাওয়ার কথা ছিলো। নাফিসা ইমরানকে বললো,
– ফোনটা দাও তো, ভাবির সাথে কথা বলি।
– কেন?
– জিজ্ঞেস করি, তারা হসপিটাল থেকে চলে গেছে নাকি!
– সারাদিন খবর নেই, এতোক্ষণে আসছে খবর নিতে!
– সারাদিন কি অবস্থায় ছিলাম তুমি জানো না?
– তো এখন কল করতে হবে! সকালে করা যাবে না?
– এখন মনে হয়েছে তো জানবো না!
– চলে গেছে তারা বিকেলেই।
– আম্মা গেছেন সাথে?
– না, বাড়ি ফাঁকা তাই মা আমাদের বাড়ি চলে গেছে।
– দাও, বাবুর কথা জিজ্ঞেস করি।
– সবাই ভালো আছে। এতো রাতে বিরক্ত করার প্রয়োজন নেই। সকালে কথা বলো।
– ওকে। এই, তুমি কিসের অতীতের কথা বলছিলে তখন?
ইমরান বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
– কোনো একটা কিছু মাথায় সাড়া দিলে তার শেষ না জানা পর্যন্ত শান্তি নেই! সারাদিন মাথায় ঘুরপাক খায়! তুমি ওকালতি পড়লে না কেন?
– ধুর! বলো না…
– না, চুপ। এসবে আর ঘাটাঘাটি করবে না। মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল।
– এটা ঢুকছে যেহেতু এখন আর বের হবে না। বলো..
– কফি খাবে?
– ধুর! আমি তোমাকে কি বলছি! বলো.. কারো কাছে কিছু বলবো না। তোমার কাছেও তুলবো না, নিজেও ভাববো না। শুধু জানবো।
তার জোরাজুরিতে এবার ইমরান বলে দিলো,
– আশিক নাহিদা আপুকে পছন্দ করতো। এটা জানতে তুমি?
নাফিসা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে! ইমরান আবার বললো,
– এখানেই পার্থক্য তোমাদের সাথে তার আচরণের। নতুবা আশিক সবার সাথেই কমবেশি দুষ্টুমি করে।
নাফিসা এবার চুপচাপ হাটছে! আর ভাবছে এমন কিছু তার নজরে পড়েছে কি-না! সে তো তার আপু সম্পর্কে বেশ ভালো জানে। বলা যায় একসাথে চলাফেরা, খাওয়াদাওয়া, ঘুমানো সব আর সব! তাহলে সে কিছু জানতো না কেন! তার নজরে তেমন কিছু পড়েনি কেন! ইমরান কি সত্যি বলছে! মিথ্যেই বা বলবে কোন স্বার্থে! সে তো অন্যের ব্যাপারে এতো মাথা ঘামায়ও না, মিথ্যেও বলে না। একটু পর নাফিসা বললো,
– এখনো কি পছন্দ করে?
– পছন্দ তো পছন্দের জায়গাতেই আছে। এখন সে নিজেও বিয়ে করে নিয়েছে অন্যদিকে আপুরও সংসার আছে। ওসব ভেবে লাভ আছে!
– আমি আমার আপুকে যতদূর চিনি, আপু এসব রিলেশন পছন্দ করে না।
– হ্যাঁ, আশিক পছন্দ করতো কিন্তু আপু না। এক পাক্ষিক ছিলো ব্যাপারটা।
– ওহ! তাহলে তো হতেও পারে মেহেদী ভাইয়া জানতো আর আশিক ভাইয়াকে দেখেই সেদিন ভার্সিটিতে এমন রাগারাগি করেছে।
– হুম, হতেও পারে। কিন্তু আমিও তো ছিলাম সেখানে। ওটা একটু লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন ছিলো যে, ছোট বোনের হাসব্যান্ডের সামনে এভাবে বললে তার ওয়াইফ লজ্জায় পড়বে।
– হুম। কিন্তু জানো তো, ভাইয়া একটু এলোমেলো টাইপের। প্রথম প্রথম দেখে মনে হয়েছিলো অহংকারী! কিছুদিন যেতেই মনে হয়েছিলো একেবারে বাচ্চা টাইপের! মানে তোমাদের বয়সে বড় হলেও তোমাদের মতো এতো ম্যাচিউর মনে হয়নি। এমনিতে অনেক দুষ্টুমি করতো আর বাবামায়ের সামনে যেন ভেজা বিড়াল! লজ্জায় যেন মুখ থেকে কথা ই বের হয় না! এখনো কিন্তু বাবামায়ের সাথে তোমাদের মতো তেমনভাবে মিশুক না। তবে তার পরিবারের সাথে অনেক দুষ্টুমি করতে দেখা যায়৷ তাজ আসার পর তো কেমন একটা দায়িত্বশীল ভাব চলে এসেছে যা চেহারাতেই প্রকাশ পায়। কিন্তু দুষ্টুমি বোধহয় আগের মতোই আছে। আর আপুর কাছে জেনেছি ভাইয়া বাচ্চাদের অনেক ভালোবাসে। তো এখন নিজের মেয়ে আছে, কতোটা কেয়ারিংয়ে থাকে বুঝো এবার। আজই দেখো, এই সন্ধ্যায়ই তাজকেসহ আপুকে নিয়ে চলে এসেছে। এতোক্ষণ যাবত থেকে এই রাতেই আবার নিজ দায়িত্বে নিয়ে গেলো। এখানে কি আপুর প্রতিও কেয়ারিং প্রকাশ হয়নি? বাচ্চাকে নিয়ে এতোক্ষণ থাকা অব্দি রাগও তো দেখাতে পারতো। আর আশিক ভাইয়া যেহেতু আপুকে পছন্দ করতো সেহেতু আমার মনে হয় আপু সব জানিয়ে দিয়েছে। যেমনটা আমি তোমাকে সবটা জানাই বা তুমি তোমার সম্পর্কে আমাকে সবটা জানাও। তাইতো আজ আশিক ভাইয়ার সাথে কথা বলার সময়ও কোনো পার্শপ্রতিক্রিয়া নজরে পড়লো না! সেদিন ইফতারের দাওয়াতে আপুদের বাসায় কি যায়নি তারা?
– হ্যাঁ, গিয়েছিলো।
– তো! কোনো প্রব্লেম থাকলে নিশ্চয়ই যেতো না।
– হুম। আগে থাকলেও হয়তো তখন ছিলো না। আর আমি তো নিশ্চিত ভাবে বলিনি কিছু। তুমি যতটুকু জানো সেটা থেকেই তোমাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কে বেশি সুখী, আর আমি যতটুকু জেনেছি ততটুকু থেকেই বলেছিলাম। এখানে তো তাদের কাউকে সামিল করার প্রয়োজন নেই। সবাই যার যার জায়গায় ভালো থাকুক। তোমাকে ভালো রাখতে পারলেই কেবল আমি স্বামী হিসেবে সার্থক। এখন পারি কি পারিনা সেটা অবশ্যই তুমি বিচার করবে। আর আমার মতে, তেমনই হওয়া উচিত প্রত্যেকটা মানুষের।
ইমরানের কথার বিপরীতে নাফিসা মুচকি হাসলো। ইমরান বললো,
– এমন পেচিয়ে হিজাব পড়ে আছো, খারাপ লাগছে না?
– সত্যি বলবো? মাথাটা একটু ব্যথা করছে। খুলে ফেলি?
ইমরান আশেপাশে তাকিয়ে মানুষের আনাগোনা কম দেখে বললো,
– ওকে।
নাফিসা হিজাব খুলে নরমাল ওড়নার মতো মাথায় ঘোমটা দিয়ে হাটতে লাগলো। ইমরান দুই কাপ কফি নিয়ে এসেছে পাশের কফিশপ থেকে। প্লাস্টিকের কফি কাপে তারা চুমুক দিতে দিতে এই রাতের শহরের দৃশ্য উপভোগ করে নিলো। খাওয়া শেষে আবার চলে এলো বাকিদের কাছে। সারারাত আর ঘুম হয়নি কারো। নাফিসা পেছনের সিটে বসে ইমরানের কাধে মাথা রেখে হেলান দিয়ে দুই ঘন্টার মতো ঘুমিয়েছিলো। ইমরান তাকে ঘুমানোর সুযোগ করে দেওয়ার জন্যই পেছনের সিটে বসেছিলো।
সকাল হতেই আয়েশা বেগম চলে এসেছে নাতি নাতনিকে দেখতে। দুইটা বাচ্চা হওয়ায় তিনি যেন খুশিতে আপ্লুত! কাল বাড়ি জনশূন্য থাকায় তিনি এবং আলফাজ সাহেব আসেননি। তবে আজ চলে এসেছে কিছু নাস্তা নিয়ে। ওদিকে নাহিদাও মেহেরুনের সাথে হসপিটালে এসেছে নাস্তা নিয়ে। তারা বাবা ছেলে অফিস গেছে আর ড্রাইভারকে গাড়ি দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে তাদের। দশটার পর তারা মেয়ে বাবুকে দেখতে পেয়েছে কিন্তু দূর থেকে। অত:পর নাফিসাকে নিয়ে ইমরান বাসায় চলে গিয়েছিলো। ইমরানকে অফিস যেতে হবে। আরমান হসপিটাল এসে দেখা করে গেছে তাদের সাথে।
আজ আর ইমরান নাফিসা কেউই যায়নি হসপিটাল। জেরিন যেহেতু তার বাবার বাড়িতে আছে সেহেতু নাফিসা নাজিয়ার কথা বলে শ্বাশুড়িদের কাছ থেকে এক মাসের ছুটি নিয়ে নিলো। ইমরানের কাছে গত রাতেই বলেছিল, ইমরান আপত্তি করেনি। কেননা নাজিয়া দুই বাচ্চা নিয়ে সেখানে যাবে, তার মা নিশ্চয়ই একা তিনজনের দেখাশোনা করতে পারবে না! সংসারের টানাটানিও তো আছে বেশ! বড়মা যেহেতু নাফিসাকে অনুমতি দিয়ে দিলো আবিদা বেগম আর নিষেধ করেনি। বোনের আপদে বিপদে যাবেই সেটা স্বাভাবিক মনে করেছেন তিনি। কেননা তিনি নিজেও যান তার বোনের কাছে। তবে কয়েকবার একটা কথাই বলেছেন যে, রুমানা বেগম পারবে না যখন তো আরাফের বাড়িতে রাখলেই পারতো। তার বোন আয়েশা বেগমও তো বারবার বলেছিলো নিজের কাছেই রাখবে! তো শুধু শুধু নিজের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কি প্রয়োজন ছিলো তার বাবামায়ের!
আবিদার এ ধরনের কথা পছন্দ হয়নি নাফিসার কাছে। কেননা তার মা তো আর তাকে ডেকে নিচ্ছে না। সে না গেলেই কি নাজিয়ার যত্নাদি কম করবে তার মা! সে তো নিজ থেকেই মায়ের কষ্টটা বুঝতে পেরে যেতে চাইছে। আর আয়েশা বেগমই বা কেমন যত্ন নিবে! তিনিও তো একা মানুষ! যদি নাতি নাতনি নিয়ে পড়ে থাকে তো বাকি কাজে তো নাজিয়াকেই নজর দিতে হবে! আর নাজিয়া কি পারবে অসুস্থ শরীর নিয়ে এসব করতে, সে দিকটা একবার ভাবলো না আবিদা বেগম! তাছাড়া মাঝে মাঝে দেখে আসার জন্য নাফিসাও তো যাবে না নাজিয়ার শ্বশুর বাড়িতে। আবিদা বেগমের উক্ত কথাটুকু একাধিকবার উল্লেখ হলেও নাফিসা তা নিয়ে কিছু বলেনি। কেননা এখন এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই। তার যাওয়াটা প্রয়োজন, তাকে যেতে দিলেই হয়।
হসপিটালে ছয়দিন কাটিয়ে নাজিয়া বাড়ি ফিরেছে। সাথে আয়েশা বেগমও এসেছেন নাজিয়ার বাড়িতে। কিন্তু মেয়ে বাবুকে হসপিটালে রাখা হয়েছে বিশেষ ট্রিটমেন্টের জন্য। আরাফ দিনে দুইবার যাচ্ছে মেয়েকে দেখতে। রাতে তার এদিকেও থাকাটা প্রয়োজন সেদিকেও থাকাটা প্রয়োজন! একা মানুষ থাকবে কি করে দু জায়গায়! আর হসপিটালে বাবুর পাশে একটা মেয়েলোক থাকলে বেশি ভালো হয়। তাই ইমরান নিজেই ঠিক করলো নাফিসাকে সেখানে থাকতে হবে। তারা চলে যাওয়ার পর প্রথমদিন আশিক একা থেকেছিলো। পরদিন থেকে নাফিসা আছে সেখানে। দিনে আশিক ও আরাফের আসাযাওয়া আছে। আর রাতে ইমরান আর নাফিসা থাকে। মেয়েটার অবস্থার কোনো উন্নতি দেখছে না! তা নিয়ে ভীষণ চিন্তিত আরাফ! আর নাজিয়াও এখন পর্যন্ত এক বারের জন্য তার মেয়েকে কাছে পেল না! হসপিটাল থেকে আসার সময় কাছ থেকে একবার দেখে এসেছে কিন্তু কোলে নেওয়ার সুযোগ হয়নি। বাসায় বসে বসেও সে প্রতিক্ষণ চিন্তায় থাকে। তার মেয়েটা সুস্থভাবে ফিরবে তো তার কাছে!
বউ বাচ্চাদের নিয়ে হসপিটালে থেকে সঞ্চিত টাকা ব্যয় করে হাতটান পড়ে গেছে আরাফের! যা সঞ্চয় ছিলো, সবাই যদি সুস্থ থাকতো তবে তাতেই পুষিয়ে নেওয়া যেতো। কিন্তু মেয়েটার কন্ডিশন ও এক্সট্রা ট্রিটমেন্টের জন্য তার সঞ্চয় নেই আপাতত! তাই সে আশিকের কাছ থেকে কিছু নিয়েছে আর ইমরানের কাছে ধার চেয়েছিলো। ইমরান তার সঞ্চিত অর্থ ব্যাংক থেকে তোলার আগেই নিয়াজ উদ্দিন এগিয়ে এসেছেন আরাফের হাতটান দূর করতে। তার পেনশনের টাকা থেকে তিনি নাতনির সকল খরচের ভার বহন করতে চাইলেন। এমনিতে আরাফ নিতে চায়নি। কিন্তু নিয়াজ উদ্দিন এমনভাবে আবদার রাখলেন ছেলের কাছে, যা আরাফ উপেক্ষা করতে পারেনি। আরাফ নিয়াজ উদ্দিনকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিয়েছিল তখন। শ্বশুরের সাথে বোধহয় তার মতো বন্ধুত্ব জমাতে পারেনি কেউ! একদিকে তার বাবার চেয়েও কম না অন্যদিকে বন্ধুর চেয়েও কম না! নিয়াজ উদ্দিন নিজেও জানেন নাজিয়া ও ছেলেকে নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকলেও মেয়েকে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছে আরাফ৷ যথাসম্ভব সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। কেউই চায় না তার সন্তানকে ছেড়ে দিতে! মেয়ের অবস্থার উন্নতি না দেখলেও সে আপ্রাণ চেষ্টায় আছে এবং আল্লাহর উপর ভরসা রেখে প্রার্থনা করে যাচ্ছে দিনরাত! যে কেউ তার চেহারায় লক্ষ্য করতে গেলে নিজেই ব্যথিত হয়ে যায়! নিজেকে নিয়ে ভাবার জন্য যেন একটা মিনিটও নেই তার কাছে!
অষ্টম দিন দুপুরে আরাফ হসপিটাল থেকে বাসায় এসেছে। নাজিয়া বসে আছে আর বাচ্চা ঘুমাচ্ছে দোলনায়। রুমের মধ্যে আপাতত আর কেউ নেই। আরাফ তার পাশে এসে বসলো। নাজিয়া হাত বাড়িয়ে তার চুলে নাড়াচাড়া করে বললো,
– গোসল করবে না?
– হুম।
– হসপিটালে নাফিসার সাথে কে আছে এখন?
– বাবা আছে। একটু পর আশিক যাবে তখন বাবা চলে আসবে। সন্ধ্যায় আবার ইমরান যাবে।
– দেখেছো, কতগুলো মানুষ কষ্ট করে যাচ্ছে আমাদের জন্য!
আরাফ ঠোঁটের এক কোনে জোরপূর্বক হাসি ফুটানোর চেষ্টা করে নাজিয়ার সামনে আসা চুল কানের পেছনে গুজে দিলো। নাজিয়া আবার বললো,
– মেয়েটা কেমন আছে?
– আলহামদুলিল্লাহ।
– তাহলে হসপিটাল থেকে ছাড়ছে না কেন এখনো?
– এতো টেনশন করছো কেন তুমি? ছেড়ে দিবে দু এক দিনের মধ্যে।
– সেদিনই না বললো দু একদিনের মধ্যে ছাড়বে! তাহলে এখনো কেন দুএক দিন বাকি!
ইতোমধ্যে নাজিয়ার চোখ ভেজা হয়ে গেছে। আরাফ এগিয়ে এসে আলতোভাবে তাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– এতো টেনশন করছো কেন তুমি! ডাক্তার সব বুঝেই তো রাখছেন।
নাজিয়া আরাফকে যথাসম্ভব ঝাপটে ধরে কান্নার সাথে বললো,
– টেনশন তুমিই কম করছো কোনদিক থেকে! আমার ভীষণ ভয় করছে আরাফ! আর ভালো লাগছে না! কত সহ্য করা যায়! আল্লাহ আর কতদিন ধৈর্যের পরীক্ষা নিবে!
আরাফ বলার মতো কিছুই খুজে পাচ্ছে না! তার ভেতরটায়ও ভয় চেপে আছে। নাজিয়ার কান্নার শব্দ আন্দাজ করতে পেরে রুমানা বেগম এসেছিলো দরজার কাছে। আরাফকে পাশে দেখতে পেয়ে আবার চলে গেছেন। কিছুক্ষণ চুপ থেকে আরাফ নাজিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
– কাদছো কেন তুমি! সব ঠিক আছে। আল্লাহ ভালো রেখেছেন আমাদেরকে। আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি আমরা। নিরাশ হয়ে যেয়ো না কভু৷ আল্লাহর উপর ভরসা রাখো। বাবুদের আম্মু, সোজা হও। এমন করলে প্রব্লেম হবে তোমার। বাথরুমে কেউ আছে?
নাজিয়া আরাফকে ছেড়ে চোখ মুছে বললো,
– আম্মা, গোসল করতে গিয়েছিলেন।
– বাবু কখন ঘুমিয়েছে?
– দশ পনেরো মিনিট হবে।
এমনি আয়েশা বেগম রুমে এলেন। আরাফকে দেখে বললো,
– মাইয়ারে দেইখা আইছস?
আরাফ বসা থেকে উঠে জবাব দিলো,
– হ্যাঁ, মা।
– ভালো আছে?
– আছে, আলহামদুলিল্লাহ।
– বাড়িতে আনবি কবে?
– দুএক দিনের মধ্যেই।
– যা, গোসল কর। আর বিকালে সময় পাইলে বাড়িতে গিয়া ঘুইরা আইছ। আয়াত একা আছে। জামাই নাকি আসবো, আসে কি-না কে জানে! তোর বাপেই আর কতক্ষণ বইসা থাকে ঘরে!
– আচ্ছা।